সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে শোন শোন পিতা

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি
লিখেছেন সাক্ষী সত্যানন্দ [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ১৫/০৮/২০১৭ - ১:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

০। সংবিধানে বঙ্গবন্ধু

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বঙ্গবন্ধু সন্নিবেশিত হয়েছেন মোট চারবার। (এটি ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর গৃহীত আদি সংবিধান নয়, বর্তমানের সংশোধিত রূপ।) তন্মধ্যে প্রথমটি ‘জাতির পিতার প্রতিকৃতি’ শীর্ষক ৪ক ধারায় যার ভাষ্য হল-

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার ও প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারী ও আধা-সরকারী অফিস, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে সংরক্ষণ করিতে হইবে।

সাদাচোখে এই ধারার মূলকথা হল ‘প্রতিকৃতি সংরক্ষণ’। একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখলাম, আসলে এই ধারার প্রথম অংশেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ হিসাবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এর বাইরে সংবিধানে বঙ্গবন্ধু সন্নিবেশিত হয়েছেন ‘পঞ্চম তফসিল’ এবং ‘ষষ্ঠ তফসিল’ অংশে যা মূলত ৭ মার্চ, ১৯৭১ এর ঐতিহাসিক ভাষণ এবং ২৬ মার্চ, ১৯৭১ এর স্বাধীনতার ঘোষণা লিপিবদ্ধ রেখেছে। এছাড়া ‘সপ্তম তফসিল’ অংশে সন্নিবেশিত হয়েছে ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ এ জারিকৃত ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’, যার ৬ষ্ঠ, ১৩শ ও ১৪শ অনুচ্ছেদে আছেন বঙ্গবন্ধু। জলপাই সবুজ অন্ধকারে যত অপচেষ্টাই হোক না কেন, এই চারটি অংশের প্রেক্ষিতে বর্তমান বাংলাদেশে ‘সাংবিধানিকভাবে’ বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। এবং, সেই ধারা বা অংশগুলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি গঠিত হবার মৌলিক ভিত্তির সাথে জড়িত। ধারা ২ক এর মতন কোনও অলংকারিক ধারায় তিনি অংশীদার নন। সেই ‘সাংবিধানিক অধিকার’ নিয়েই আজকের এই লেখায় বঙ্গবন্ধুর পুনর্পাঠ করতে বসেছি। আলোচ্য পক্ষসমূহ নিশ্চয় সংবিধান অস্বীকার বা অবমাননা করার আইনী অধিকার রাখেন না।

১। সাংবাদিকদের প্রতি বঙ্গবন্ধু

আমি আরো একটা প্রবণতা লক্ষ্য করছি। এটা বাংলাদেশে আগে ছিল না। আমি এটা দেখেছি করাচীতে আর পিণ্ডিতে। এটা হল ভীতি প্রদর্শন। কোনও সাপ্তাহিক বা সান্ধ্য দৈনিকে কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা লিখে তাকে বলা হত টাকা দাও, নইলে তোমার বিরুদ্ধে আবার লেখা হবে। তখন সত্যি সত্যি টাকা দিয়ে সে কাগজের মুখ বন্ধ করা হত। আমি লক্ষ্য করছি এখানেও এই ধরণের একটা প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

আরো দেখা যাচ্ছে, যার আয়ের প্রকাশ্য কোনও উৎস নাই, সেও দৈনিক কাগজ বের করছে। রাতারাতি কাগজটা বের হয় কোথা থেকে? পয়সা দেয় কে? .. ... ... আমি যদি এসবের তদন্ত করি তবে আপনারা নিশ্চয় আমাকে দোষ দেবেন না আশা করি। এটাও আইন।

আপনারা সাংবাদিক। আপনাদের স্বার্থরক্ষা করতে হলে আপনারা নিজেরাও আত্মসমালোচনা করুন। আপনারা শিক্ষিত, আপনারা লেখক, আপনারা ভাল মানুষ। আপনারাই বলুন কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ। আমরা নিশ্চয় আপনাদের সাথে সহযোগিতা করবো।

১৬ জুলাই, ১৯৭২ জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণ থেকে উদ্ধৃত

আছেন কোনও অনুভূতিপ্রবণ ব্যারিস্টার সাহেব যিনি বিভিন্ন সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা ইত্যাদির দ্বারা হৃদয়ে চোট পেয়ে আদালতে রিট ইত্যাদি করে ‘সাংবাদিক মহোদয়’ দের যথেচ্ছাচারের ব্যাপারে মামলা ঠুকবেন?

২। আমলাদের প্রতি বঙ্গবন্ধু

কারখানা চালাতে হবে আবার বেতনও বাড়াতে হবে। টাকা আসবে কোথা থেকে? ট্যাক্স করে? কাকে ট্যাক্স করব? এদেশের দুঃখী মানুষের উপর? যাদের পরনে কাপড় নেই, পেটে খাবার নেই তাদের উপর? প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিব তবু ঐ গরীবের হাড়ের উপর ট্যাক্স বসাতে আমি পারব না। যা আছে ভাগ করে খান। এসব সত্বেও গরীব কর্মচারীদের যে বেতন সুপারিশ করা হয়েছে তাই দিয়েছি। কিন্তু এসব সত্বেও অফিসে মনে হয় একেবারে ফ্রিস্টাইল চলছে, যখন খুশি আসেন যখন খুশি যান। মনে করেছে সরকার কিছু কয় না। বঙ্গবন্ধু আছে কেঁদেকেটে পড়লে মাফ করে দেবে। অনেকবার দিয়েছিও, কিন্তু তারও একটা সীমা আছে। তাঁদের মনে রাখতে হবে জনগণের পয়সা আপনারা খাচ্ছেন। আর জনগনের পয়সাই যখন খান, তখন জনগনের একটু উপকার করেই খাওয়া উচিৎ।

১৯ আগস্ট, ১৯৭২ ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণ থেকে উদ্ধৃত

কেউ কেউ বলছেন যে সরকারী কর্মচারীদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। তাঁরা অন্যান্য দেশের শাসনতন্ত্রও পড়ুন। সরকারী কর্মচারীরা একটা আলাদা জাতি নয়। তাঁরা আমাদের বাপ, আমাদের ভাই। তাঁরা কোনও ভিন্ন শ্রেণী নন ... ... ... আইনের চোখে সাড়ে সাত কোটি মানুষের যে অধিকার, সরকারী কর্মচারীদেরও সেই অধিকার। মজদুর কৃষকের টাকা দিয়ে সরকারী কর্মচারীদের মাইনে, খাওয়া-পরার ব্যাবস্থা করা হয়। মজদুর কৃষকের যে অধিকার, সরকারী কর্মচারীরও সেই অধিকার থাকবে। এর চেয়ে বেশি অধিকার তাঁরা পেতে পারেন না। সরকারী কর্মচারীদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে যে তাঁরা শাসক নন, সেবক।

৪ নভেম্বর ১৯৭২ গণপরিষদের অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণ থেকে উদ্ধৃত

আছেন কোনও অনুভূতিপ্রবণ এডভোকেট যিনি এর বাত্যয় দেখলে হৃদয়ে চোট পেয়ে আদালতে রিট ইত্যাদি করে ‘কোটপরা সাহেব’দের ‘সকলেই সমান, তবে কেউ কেউ একটু বেশি সমান’ ধরণের অরওয়েলীয় ব্যাপারে মামলা ঠুকবেন?

৩। পুলিশের প্রতি বঙ্গবন্ধু

একটা কথা আপনাদের ভুললে চলবে না, আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশী শোষকদের পুলিশ নন, জনগণের পুলিশ। আপনাদের কর্তব্য জনগণের সেবা করা, জনগণকে ভালবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা। আপনাদের বাহিনী এমন যে এর লোক বাংলাদেশের গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। আপনাদের কাছে বাংলাদেশের মানুষ এখন একটি জিনিষ চায়, তারা যেন শান্তিতে ঘুমাতে পারে।

১৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ প্রথম পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণ থেকে উদ্ধৃত

আছেন কোনও অনুভূতিপ্রবণ বারের নেতা যিনি দুর্দিনে চাঁদাবাজি ইত্যাদির দ্বারা হৃদয়ে চোট পেয়ে আদালতে রিট ইত্যাদি করে শান্তিতে ঘুমের আশায় মামলা ঠুকবেন?

৪। সেনাবাহিনীর প্রতি বঙ্গবন্ধু

আমি তোমাদের আবার বলছি, তোমরা সৎপথে থাকবে। মাতৃভূমিকে ভালবাসবে। মনে রেখো, তোমাদের মধ্যে পাকিস্তানী মনোভাব যেন না আসে। তোমরা পাকিস্তানের সৈনিক নও, বাংলাদেশের সৈনিক। তোমরা হবে আমাদের জনগণের, তোমরা পেশাদার বাহিনীও নও, কেবল সামরিক বাহিনীও নও। দরকার হলে তোমাদের আপন হাতে উৎপাদন করে খেয়ে বাঁচতে হবে।

১১ জানুয়ারি ১৯৭৫ বিএমএ প্রথম ব্যাচের সমাপনী অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণ থেকে উদ্ধৃত

আছেন কোনও অনুভূতিপ্রবণ ব্যারিস্টার-এট-ল, যিনি বিভিন্ন জলপাই সবুজ আমলে নানাবিধ কুকর্মের দ্বারা হৃদয়ে চোট পেয়ে আদালতে রিট ইত্যাদি করে ‘পাকিস্তানী মনোভাব’ ইত্যাদির ব্যাপারে মামলা ঠুকবেন?

৫। ডাক্তারদের প্রতি বঙ্গবন্ধু

আপনারা যারা বড় ডাক্তার আছেন, স্পেশালিষ্ট আছেন তাঁরা গ্রামের দিকে কেন যাবেন না? গ্রামে তো শতকরা ৯৫ জন লোক বাস করে, তারাই সম্পদ দিয়ে আপনাদের সবকিছু বজায় রেখেছে। নতুন শহর দেখেন, আপনাদের দোতলা অফিস দেখেন, পোস্ট-গ্রাজুয়েট মেডিকেল ভবন দেখেন, যেখানেই যান দেখবেন সবকিছু বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের পয়সায় গড়া। তাঁদের দিকে কেন নজর দিবেন না? সাদা কাপর-চোপর দেখলেই কেন তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেন? আর দুঃখী মানুষ আসলেই কেন তাকে রাস্তায় বের করে দেন, বয় বলে চিৎকার করেন? এই মনোভাবের পরিবর্তন কবে আপনাদের হবে! আমি শুধু ডাক্তার সাহেবদের বলছি না। এ যেন আমাদের জাতীয় চরিত্রের মধ্যে এসে গেছে। এ জাতীয় চরিত্রের প্রতি চরম আঘাতের প্রয়োজন আছে।

৮ অক্টোবর ১৯৭২ পিজি হাসপাতালের নবনির্মিত অংশের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণ থেকে উদ্ধৃত

আছেন কোনও অনুভূতিপ্রবণ উকিল সাহেব যিনি বিভিন্ন দুর্গম থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হৃদয়ে চোট পেয়ে আদালতে রিট ইত্যাদি এ ব্যাপারে মামলা ঠুকবেন?

৬। শিক্ষকদের প্রতি বঙ্গবন্ধু

আপনাদের কর্তব্য পালন করুন। খালি ফেল করিয়ে বাহাদুরি নেবেন তা হয় না। তাঁদের মানুষ করুন। আমি তো শিক্ষকদের বেতন দিব। আমরা সব আদায় করব। আপনারা তাদের লেখাপড়া শিখান, তাদের একটু মানুষ করুন। একটু সংখ্যা বাড়ান, শুধু ১% ২% ৫% দিয়ে বাহাদুরি দেখিয়ে বলবেন খুব স্ট্রিক্ট হয়েছি। আমি স্ট্রিক্ট চাই নকল করতে দিবেন না। তবে আপনাদের কাছে আবেদন, মেহেরবানী করে আপনাদের কর্তব্য পালন করুন। ছেলেদের মানুষ করার চেষ্টা করুন।

২৬ মার্চ ১৯৭৫ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় প্রদত্ত ভাষণ থেকে উদ্ধৃত

আছেন কোনও অনুভূতিপ্রবণ ধর্ম-সম্পাদক, যিনি বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় শতকরা হিসাবের ঝনঝনানিতে হৃদয়ে চোট পেয়ে আদালতে রিট ইত্যাদি করে ‘আই এম জিপিয়ে ফাইভ ছাত্রদের মানুষ করা’ প্রসঙ্গে মামলা ঠুকবেন?

৭। ছাত্রলীগের প্রতি বঙ্গবন্ধু

দুঃখের কথা এই যে পুলিশ দিয়ে ছাত্রদের পরীক্ষার নকল বন্ধ করাতে হয়। এ কথা কার কাছে বলব। এই দুঃখ বলার জায়গা আছে আমার? দোহাই আল্লার, নকল বন্ধ করার জন্য যেন আমার পুলিশ দিতে না হয়। তোমরাই মিলেমিশে নকল বন্ধ কর। ছাত্রলীগ-ছাত্রইউনিয়ন মিলেমিশে যেমন সংগ্রাম পরিষদ করেছ, তেমনি মিলেমিশে এই সমস্যার সুরাহা কর। তোমাদের আমি সাহায্য করব।

বাবারা একটু লেখাপড়া শিখ। যতই জিন্দাবাদ আর মুর্দাবাদ কর, ঠিকমত লেখাপড়া না শিখলে কোনও লাভ নাই। আর লেখাপড়া শিখে যে সময়টুকু থাকে, বাপ-মাকে সাহায্য কর। প্যান্ট পরা শিখেছ বলে বাবার সঙ্গে হাল ধরতে লজ্জা করোনা, কোদাল মারতে লজ্জা করোনা। দুনিয়ার দিকে চেয়ে দেখ। কানাডায় দেখলাম ছাত্ররা ছুটির সময় লিফট চালায়। ছুটির সময় দু’পয়সা উপার্জন করতে চায়। আর আমাদের ছেলেরা বড় আরামে খান, আর তাস নিয়ে ফটাফট খেলতে বসে পড়েন।

১৯ আগস্ট, ১৯৭২ ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণ থেকে উদ্ধৃত

আছেন কোনও অনুভূতিপ্রবণ নব্য নেতা যিনি বিভিন্ন পরীক্ষায় ‘পার্টি করি- এই রুমে ইনভিজিলেশন হালকা চাই’ ইত্যাদির দ্বারা হৃদয়ে চোট পেয়ে আদালতে রিট ইত্যাদি করে ‘ছাত্র মহোদয়’ দের নকলাধিকারের ব্যাপারে মামলা ঠুকবেন?

৮। বিপ্লবীদের প্রতি বঙ্গবন্ধু

এরা রাতের অন্ধকারে গুলি ক্করে মারে আর বলে রাজনীতি করে। রাত্রে একজন লোক শুয়ে আছে তাকে জানালা দিয়ে গুলি করে মারল। বলে আমি বিপ্লবী! তুমি বিপ্লবী, না দাগী চোর? ... ... ... হাটবাজার, চিনির দোকান, মুরগির দোকান, সব্জীর দোকানে ডাকাতি করে বিপ্লব হয় না। ঐ রণদীভের থিওরী ইট মারো, সেপাইর আস্তানায় ইট মারো, ওয়ালে একটা পাথর মারো- এতে বিপ্লব হয় না। সেই জন্যই আমি বলতে চাই যে, তাকে বিপ্লব বলে না। তাকে বলে পার্ভার্সন- বিপ্লবের বিকৃতি। এই যত বিপ্লবীরা, সমাজতান্ত্রিক দেশের প্রতিনিধিরা আমার পাশে বসে আছেন, বহু বিপ্লব করেছেন এঁরা। ফাউন্ডার্স অব দি বিপ্লব! সেটা এঁদের কাছে জেনে নাও। জনগণকে ছাড়া, গণবিপ্লব ছাড়া বিপ্লব হয় না। রাতের অন্ধকারে গুলি মাইরা কোনদিন বিপ্লব হয়নাই। পড়, জান, শেখ, বোঝ।

১৮ জানুয়ারি, ১৯৭৪ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণ থেকে উদ্ধৃত

আছেন কোনও অনুভূতিপ্রবণ ডক্টরেট সাহেব যিনি বিভিন্ন কোপাকুপি-চাপাতি ইত্যাদির দ্বারা হৃদয়ে চোট পেয়ে আদালতে রিট ইত্যাদি করে ‘শাপলা বিপ্লবী’দের অনাচারের ব্যাপারে মামলা ঠুকবেন?

৯। বামপন্থার প্রতি বঙ্গবন্ধু

আমাদের সমাজতন্ত্র মানে শোষনহীন সমাজ। সমাজতন্ত্র আমরা দুনিয়া থেকে হাওলাত করে আনতে চাই না। সমাজতন্ত্রের মূলকথা হল শোষণহীন সমাজ। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে সেই দেশের কি আবহাওয়া, কি ধরণের অবস্থা, কি মনোভাব, কি ধরণের আর্থিক অবস্থা সব কিছু বিবেচনা করে ক্রমশ এগিয়ে যেতে হয় সমাজতন্ত্রের দিকে এবং তা আজকে স্বীকৃত হয়েছে। রাশিয়া যে পন্থা অবলম্বন করেছে চীন তা করেনি, সে অন্য দিকে চলেছে। রাশিয়ার পাশে বাস করেও যুগোস্লাভিয়া, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া নিজ দেশের পরিবেশ নিয়ে, নিজ জাতির পটভূমি নিয়ে সমাজতন্ত্রের পথে চলেছে। মধ্যপ্রাচ্যে যান, ইরাক একদিকে এগিয়ে চলেছে আবার নাসেরের মিশর অন্যদিকে চলেছে। বিদেশ থেকে হাওলাত করে এনে তাঁরা কোনও দিন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নাই। কারন, লাইন-কমা-সেমিকোলন পড়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়না- যেমন তা পড়ে আন্দোলন হয় না।

৪ নভেম্বর ১৯৭২ গণপরিষদের অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণ থেকে উদ্ধৃত

আছেন কোনও অনুভূতিপ্রবণ কমরেড (অবঃ) যিনি বদরুদ্দিন উমর প্রমুখের দ্বারা সম্প্রতি সংঘটিত প্লেজিয়ারিজমে হৃদয়ে চোট পেয়ে আদালতে রিট ইত্যাদি করে ‘সমাজবিচ্ছিন্ন তান্ত্রিক’দের ত্তত্বাঘাতের ব্যাপারে মামলা ঠুকবেন?

১০। আইনজীবিদের প্রতি বঙ্গবন্ধু

আর একটা কথা বলতে চাই- বিচার। বাংলাদেশের বিচার ইংরাজ আমলের বিচার। আল্লাহর মর্জি যদি সিভিল কোর্টে কেস পরে সেই মামলা শেষ হতেই লাগে প্রায় বিশ বছর। আমি যদি উকিল হই, আমার জামাইকেও উকিল বানিয়ে কেস দিয়ে যাই। ঐ মামলার ফায়সালা হয় না। আর যদি ক্রিমিনাল কেস হয়, তিন বা চার বছরের আগে শেষ হয় না।

২৬ মার্চ ১৯৭৫ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় প্রদত্ত ভাষণ থেকে উদ্ধৃত

আছেন শ্রী কাক্কেশ্বর কুচকুচের মতন সম্ভ্রান্ত বংশীয় কোনও অনুভূতিপ্রবণ কুলীন দাঁড়কাক, যিনি হৃদয়ে চোট পেয়ে আদালতে রিট ইত্যাদি করে কাকের মাংস খাবেন?

১১। আওয়ামী লীগের প্রতি বঙ্গবন্ধু

কিন্তু কিছু কিছু লোক যখন মধু-মক্ষিকার গন্ধ পায় তখন আওয়ামী লীগে এসে ভিড় জমায়। আওয়ামিল লীগের নামে লুটতরাজ করে। পারমিট নিয়ে ব্যাবসা করার চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগ কর্মীর, আওয়ামী লীগ থেকে এদের উৎখাত করে দিতে হবে। আওয়ামী লীগে থাকার তাদের অধিকার নাই। তাই বলছি আত্মসমালোচনার প্রয়োজন আছে, আত্মসংযমের প্রয়োজন আছে, আত্মশুদ্ধির প্রয়োজন আছে। তোমরা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলার যারা আজ এখানে বসেছ তারা মনে মনে চিন্তা কর।

১৮ জানুয়ারি, ১৯৭৪ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণ থেকে উদ্ধৃত

আত্মসমালোচনা-আত্মশুদ্ধি-আত্মসংযম ইত্যাদি কথা বলতে চাইলে না জানি স্বামী পটলানন্দের অপমানে শেষে পটলানন্দের ওপরই আক্রমণ এসে পড়ে! পালাই।

সকল ভাষণের উদ্ধৃতি নিম্নোক্ত সূত্র হতে গৃহীতঃ
১। বাংলাদেশের সমাজ বিপ্লবে বঙ্গবন্ধুর দর্শন/ বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ১৯৭৯
২। বাঙালির কণ্ঠ/ আগামী প্রকাশনী, ২০১৫


মন্তব্য

মুস্তাফিজ এর ছবি

সবার জন্যই বঙ্গবন্ধুর উপদেশ/পরামর্শ ছিল। নিজের নিরাপত্তার জন্য কিছুই ছিলো না। উনি বাংলাদেশের মানুষকে বিশ্বাস করেছিলেন।

...........................
Every Picture Tells a Story

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

সোহেল ইমাম এর ছবি

বলছি আত্মসমালোচনার প্রয়োজন আছে, আত্মসংযমের প্রয়োজন আছে, আত্মশুদ্ধির প্রয়োজন আছে।

মন খারাপ

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

অচিরেই ব্যারিস্টারী পাশ কইরা আপনের নামে দুই চারটা মামলা ঠুকে দেওয়ার ইচ্ছা করতাছে।

তিথীডোর এর ছবি

চলুক

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

দেবদ্যুতি এর ছবি

চলুক

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।