কর্মক্ষেত্র আর শহর বদলে ব্লগব্লগানোর সুযোগ বিরল হয়ে গেছে। আহা, বিজ্ঞান নিয়ে বকবকানো হয় না কত দিন! মুঠোফোন একটা অভিশাপ। যাত্রাপথে আর ট্রাফিক জ্যামের সুযোগে সচল দেখা হয় ঠিকই, মন্তব্য করা আর হয়ে ওঠে না। ব্লগরব্লগর তো দূর অস্ত। সেদিন স্ট্যাটাতে গিয়ে টের পেলাম জ্যেষ্ঠ হাচল থেকে পদাবনতি পেয়ে আবার সদ্য হাচল হয়ে গেছি! মন্তব্য মডুদের দফতরে জমা হয়, তারপর প্রকাশ। এই কি জীবন, কালীদা। ২০২০ আসুক, হুমম। একদিন আবার।
২০১৯ একটা ঘটনাবহুল বছর বটে। কোটাছাগুদের ডাকসু বিজয় থেকে ভাইরালজাদাদের এক রমরমা বছর গেল এটি। নুসরাত থেকে শুরু করে জোড়া-আবরারের (দ্বিতীয়জনের কোনো কিউ-আর কোড নেই) প্রাণহানির ঘটনা শেষমেশ ফেসবুকের ওম বাড়িয়েছে কেবল। বিজয় দিবসে বিজয় কীবোর্ডে টাইপ করা রাজাকারের তালিকা দিয়ে হাস্যাস্পদ হয়েছেন জনৈক ভাঁড়। ওদিকে পেঁয়াজের মজুতদারি নিয়ে কারো শক্তপোক্ত ইমান না টললেও বছরশেষে মুমূর্ষু গ্যাদাবাচ্চাদের জন্য দুধ জমিয়ে রাখার খবরে নুনূর্ষু বিয়েকাতরেরা তেড়ে এসেছেন তাঁদের নড়বড়ে ইমান বাগিয়ে। এই বছরের প্রথমার্ধে বিদায় নিয়েছেন মারে গেল-ম্যান! শেষাংশে নীরবে চলে গেছেন অজয় স্যার সহ আরো অনেকে। সালতামামি লিখতে অবশ্য বসি নি, সেজন্য তো অনলাইন নিউজসাইটের বেতনভুক্ত কাট-পেস্ট অপারেটরেরা আছেনই। বলতে চেয়েছিলাম বিজ্ঞান অথবা বই নিয়ে। বিজ্ঞান অনেক কঠিন ব্যপার, ভালমত বুঝি না। তাই বছরশেষে বইই থাক।
এবছরের নতুন বইগুলোর মাঝে নজর কেড়েছে বেশ (চিত্র দ্রষ্টব্য) কটিই। ইতিহাস না বিজ্ঞান না কল্পকাহিনী এই নিয়ে মানসিক টানাটানি থামিয়ে, আজকের জন্য তাক থেকে “মেঘে ঢাকা তারা” নামিয়ে নিলাম। মনে করবেন না যেন এইই সব, আইনখুড়োর কীর্তিকলাপ নিয়েও বেশ কিছু বই (চিত্র দ্রষ্টব্য) জড়ো করে ফেলেছি। আপেক্ষিকতা নিয়ে সিরিজটা শুরু করে থেমে গিয়েছিলাম, সেই পুরানো বোতলে নতুন লেখা ঢালব শিগগীর, বইগুলো বেশ করে পড়ে নিই। ভাববেন না যেন কেবল আলতুফালতু বই পড়েই সময় কাটাই। ইসলামি ছাত্র শিবিরের সাথী ভাইদের অনলাইন দুকানপাট ঝকমারি ডট কমের ‘বেস্টসেলার’ বইগুলোও (চিত্র দ্রষ্টব্য) কিনে পড়ি। দুনিয়াতে বিনোদনেরও তো দরকার আছে, তাই না?
চিত্রঃ নতুন বই-২০১৯
চিত্রঃ আইনখুড়োর কীর্তিকলাপ
চিত্রঃ বেস্টসেলার বই-২০১৯
অতনু চক্রবর্ত্তী নবীন লেখক। মলাটের উত্তরভাঁজে ছাপা অনুসারে এটিই তার প্রথম বই। (আমার কাছে লেখকের অটোগ্রাফসমেত বই আছে, আপনার কাছে কি আছে? হুমমমম!) মলাটের পূর্বভাঁজে মুহম্মদ জাফর ইকবাল কি লিখেছেন ভিডিও ছাড়াই দেখে নিনঃ
আগ্রহী পাঠকের ঔৎসুক্য বাড়াতে সূচীপত্রের একখানা ছবিও কিউয়ার-কোড ছাড়াই জুড়ে দিলাম।
বিজ্ঞান আর বিজ্ঞানী নিয়ে এত বকবক করেও বড় লজ্জায় পড়েছিলাম, ১১ জনের মাঝে চিনেছি মাত্র ৩ জনকে। অর্থাৎ কি না ২৭.২৭%, সুকুদার শ্রী কাক্কেশ্বর কুচকুচের ভাষায় “হয় নি, হয় নি, ফেল!” সে যাই হোক, অতনুর লেখা অত্যন্ত ঝরঝরে। আশা করি তিনি আরো লিখবেন। বইটিতে প্রতি অধ্যায়ের শেষে তথ্যসূত্র দেয়া আছে। এতে লেখকের পরিশ্রমের ইঙ্গিত যেমন পাওয়া যায়, আগ্রহী পাঠকেরও সুযোগ বাড়ে।
তালিকার প্রথম মানুষটি গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য, কীটপতঙ্গ বিশারদ। ১৯৪৮ সালে বাঙালি বিজ্ঞান পরিষদ গঠনে সত্যেন বসুর সহযাত্রীদের একজন। পরেরজন মধুসূদন দত্ত, উপমহাদেশের প্রথম শবব্যাবচ্ছেদকারী। সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেও সেকালে তিনি লাশকাটার মত ‘মহাপাপ’ করেছিলেন। পরের জন রাধানাথ শিকদার, হ্যাঁ এভারেস্টের উচ্চতা মেপেছিলেন যিনি, তিনিই। এরপরে আছেন স্বশিক্ষিত জোতির্বিজ্ঞানী রাধাগোবিন্দ চন্দ্র। আছেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র। একাধারে এই তিনিটে নামই কেবল চিনতে পেরেছিলাম। তাঁর পরের জন অসীমা চট্টোপাধ্যায়, রসায়নবিদ! এ যেন বাংলার মেরিকুরি! লেখকের জবানীতে জানলাম, ১৯৪৭-১৯৫০ তিনি গবেষণা করেছেন জুরিখ আর ক্যালটেকে, লিনাস পলিং ছিলেন সহ-গবেষক, ভাবা যায়! পরেরজন উপেন্দ্রনাথ ব্রম্মচারী, চিকিৎসাবিজ্ঞানী। বর্তমানের ঢাকা মেডিকেল কলেজে (তৎকালীন স্কুল) কর্মজীবন শুরু করা এই গবেষক রুখেছেন কালাজ্বর। তালিকায় পরের নামটি মৃণাল কুমার দাশগুপ্ত, পদার্থবিজ্ঞানী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যেন বসুর সান্নিধ্যে শিক্ষালাভ করলেও দেশভাঙ্গনের অমানবিক রাহুগ্রাস তাঁকে ঠেলে দেয় কাঁটাতারের ওপারে। সূচিপত্র দেখে বলেছিলাম তালিকার ৩ জন মাত্র মানুষকে চিনি। বই খুলে বুঝলাম হবিবুর রহমানকেও আসলে চিনি, অন্তত নাম শুনেছি। তিনি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক। পঞ্চাশের দশকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে ট্রাইপোস করা এই মেধাবী পরে কাজ করেছেন ‘ফার্মার শেষ উপপাদ্য’ কিংবা ‘গোল্ডবাক কনজেকচার’ এমন ধ্রুপদী সমস্যা নিয়ে, এই বাংলাদেশে! ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর নানান যুদ্ধাপরাধের একটি হল এপ্রিলে এই গণিতজ্ঞকে ঠাণ্ডা মাথায় মেরে ফেলা। (কোটাছাগু কিংবা মঞ্চডাকু কিংবা তালিকাভাঁড়েরা সম্ভবত বুঝবে না, মুক্তিযুদ্ধ কত বিশাল আবেগময় একটা অর্জন!) বইতে এরপরে আছেন শম্ভুনাথ দে, কলেরাবিশেষজ্ঞ। তালিকার সবশেষে আছেন ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় হত্যাযজ্ঞ থেকে ভাগ্যজোরে বেঁচে যাওয়া এক মেধাবী সন্তান আব্দুস সাত্তার খান, সংকর ধাতু গবেষক। বিস্তারিত জানার জন্য বই পড়ুন। এই বিস্মৃতপ্রায় বিজ্ঞানীদের শ্রদ্ধা জানানোর সেটা একটা উপায় হতে পারে। নবীন এই লেখককে উৎসাহ যোগাতেও বইটি সংগ্রহে রাখা প্রয়োজন। কাজ খুবই সহজ, বই কিনুন, পড়ে ফেলুন। শুভ পঠন। আসন্ন ২০২০ শুভ হোক।
৩১-১২-২০১৯
বাংলাদেশ
মন্তব্য
আরো বড় লেখা পাওয়ার আশায় থেকে কিছু না পাওয়ার থেকে নিয়মিত ছোট লেখা পাওয়া ভালো। বছর শেষে এই লেখায় যে নিয়মিত হওয়ার আশাটি দিয়েছ সেইটে বড় আনন্দের।
বইটা পড়বার ইচ্ছে হল - হয়ত ইচ্ছা পূরণ হবে একদিন।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
সুযোগ পেলেই পড়ে ফেলবেন, চমৎকার বই!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
অনেকদিন পরে আপনার পদধূলি পেয়ে আনন্দিত হলুম বটে, এবং তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি বটে, তবে বলতে বাধ্য হচ্ছি, সার্বিক বিচারে এটা একটা ফাঁকিবাজি পোষ্ট।
আপনার বিচারের সাথে আমিও একমত।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এগিলি ছাড়েন, প্যারাডক্সিকাল সাজিদের বুক্রিভ্যু দেন। এই বই পড়ে নাছতিকেরা পলাইতেছে শুনলাম, অবিশ্বাসের অন্ধকার দূর হয়ে যাইতেছে।
..................................................................
#Banshibir.
প্রথমবার বইটা পড়ার সময় পেনসিল দিয়ে দাগিয়ে-টাগিয়ে হুলুস্থুল করেছিলুম বটে, শেষমেশ সাত দুগুণে চৌদ্দোর চার, হাতে রইল পেনসিল... ধইজ্জে কুলায় না! এরচে আপেক্ষিকতার সিরিজে আবার ঠ্যালা দিমু, দুয়া কইরেন য্যান গাড়ি স্টার্ট ন্যায়!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
তালিকা ত পেলাম। এবার বড় রিভিউ দেন । অবিশ্বাসী কাঠগড়ায় এটা কি প্যরাডক্সিকাল সাজিদ মার্কা বই না অন্যকিছু জানতে ইচ্ছে করছে।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
ওই একহালি বই একই গোত্রীয় ভাই! প্যারাডক্সিক্যাল মজিদ, প্যারাডক্সিক্যাল এজিদ, প্যারাডক্সিক্যাল বায়জিদ, প্যারাডক্সিক্যাল তাজিদ!
বইমেলা ঘুরে আসি, তারপর ভ্রমণবৃত্তান্ত পোস্টাবো।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন