আঞ্জুমা'র সাথে আমার প্রথম দেখা হয় নীলক্ষেতে। 'মামা, লাগবো' বা 'দেসি মাল আচে, ফাসকেলাস' এর ভীড় ঠেলে ইউনিক স্টোরের পাশের চিপা গলি দিয়ে ঢুকতেই অকস্মাৎ আমার হাতে তীব্র জ্বলুনি হলো। খুব ভয় পেয়েছিলাম, সেসময় দেশে হঠাৎ করেই কয়েকজন 'এইডসের ভুবনে স্বাগতম' জানাতে উঠেপড়ে লেগেছিল। জ্বলুনি থেকে রক্ত না বেরিয়ে তা ফোস্কায় রূপান্তর হওয়ায় একটু অন্যরকম আনন্দের সাথে সাথে চরম মেজাজ খারাপ। আর তখনই আঞ্জুমাকে দেখি আমি। ঢাকা শহরের নীলক্ষেতের চিপায় বনানীবাসিনী'র মত উত্তেজক পোশাক আমার জ্বলুনির তীব্রতা কমিয়ে হৃদয়ে অশান্ত ঝড় বইয়ে দিল যেন! আর তাঁর হাতের জ্বলন্ত সিগারেট দেখে দাপানো আনন্দ পেলাম, যেন কোনো এক অজানা প্রত্যাশার অনলে ঘৃতাহুতি হলো।
আঞ্জুমা'র কথা কেন উঠলো সেটা'র জন্য আসলে কিঞ্চিৎ শানে-নুযূল প্রয়োজন। আজ সকালে অন্যান্য দিনের মত বাসের ভিড়পিষ্ট হয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলাম, সেসময় এক 'পেলাস্টিক' বাসাক্রান্ত হয়। আক্রান্ত মালকিন হুড়মুড় করে বেরিয়ে এসে তুমুল খিস্তি শুরু করে দেন। খিস্তির বেশীরভাগ-ই অবশ্য বোধগম্য হলোনা। তখনই আসলে আঞ্জুমা'র কথা মনে পড়লো। এমন-ই সাবলীল খিস্তি করত মেয়েটা। এমন-ই একটা 'বেইজ' রঙা গাড়ির স্বপ্ন দেখত সে।
চরম খিস্তিখেউড়ের মাধ্যমে পরিচয় ও নাম্বার বিনিময়। সেসময়টা ছিল অদ্ভুত। রিকশাভাড়া বা রেস্তোঁরা'র খরচ তুলনামুলক কম হলেও মোবাইলের কলরেট ছিল জ্বর আনার মত। তারচেয়ে বড় কথা, আঞ্জুমা বাংলায় একদম-ই পক্ক ছিলনা। সে ইংরেজি ও সিলেটি খুব ভাল বলতে পারত। আর পারত খিস্তি। তবুও সাত টাকা প্রতিমিনিট খরচা করে প্রতিদিন কথা হতো। শুনেছিলাম যে সে নটিংহ্যামের কোন এক জায়গা থেকে এখানে এসেছে 'আব্বুর দেশ' টা ঘুরে দেখবে। এর আগে গিয়েছিল 'আম্মি'র দেশ' পাকিস্থানে। ওখানকার কয়েকটা ঘটনা শুনে আমি খুব-ই আমোদ পেয়েছিলাম। একদিন বলছিল যে ওর এক বোন নাকী খুব-ই ভাল ছাত্রী আর বইপ্রিয়। ওর প্রিয় বই হলো 'ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্য কাক্কু'স নেস্ট'আর এটাই তাঁর একমাত্র পড়া বই! (বর্তমানে আমার এক সচলবন্ধু'র সাথে নাকী এরকম-ই এক সাংবাদিকের বেশ ভাল সম্পর্ক হয়েছে, যে পাকিস্থানেই থাকে ।)
গাড়ি'র মালকিনের সাথে বাসওয়ালার রফা হয়েছে। গাড়িটা চলার অবস্থায় নেই আর। আমি নেমে গেলাম বাস থেকে। 'খুব খারাপ অবস্থা দেখছি গাড়িটার।' 'আর বলবেন না, এভাবে কী াের রাস্তায় চলা যায়!' সকালে বেশী রেস্তোঁরা খোলা থাকে না। তবে ধানমন্ডির 'বাবুর্চী'টা খোলা পেয়ে আমরা বসলাম।
নটিংহ্যামে ফেরৎ যাবার দিন আঞ্জুমা'র সাথে বসেছিলাম এয়ারপোর্টের 'বলাকা'য়। ততদিনে সে বেশ ভাল বাংলা বলতে শিখেছে আমার কাছ থেকে। সিগারেট খেতে খেতে বলছিল 'বেইজ' রঙা গাড়ির কথা, খুব কাছের মানুষদের ধোঁকার কথা। আর বলেছিল 'বি জেন্টল, বাট ডোন্ট বি হাম্বল'। বেসিক্যালি মধ্যবিত্ততার কারণে অন্ধকার ঘরের অসাড়তার দরুন যে খিস্তিগুলো হজম করেছিলাম, তাই ঘুরিয়ে সামাজিকভাবে বল্ল হয়তো।
হাতের ধাক্কায় কাপ পড়ে যাওয়ায় চরম খিস্তি করে উঠলো মহিলাটা। খুক খুক করে হেসে উঠলাম। টুকটাক কথা চলছে এর মাঝেই। তার একাকীত্বের কথা না বল্লেও কিছুটা অনুভব করা যায়। তৃতীয় কাপ চা খেয়ে বিল চুকানোর পালাও শেষ। এতোক্ষণ ধরে চলা আলোচনা বা আড্ডাটা বিস্বাদ লাগছিল কেনজানি। একসাথে নামতে নামতে মনে হলো তাঁর নামটাই তো জানা হলো না! এর নামও কী তবে আঞ্জুমা?
'আমি নওশীন। থ্যাঙ্কস সময় আর আমার বকবক শোনার জন্য। আপনার নাম্বারটা দিন প্লিজ, পরে যোগাযোগ করব আর আপনার সময় খাবো, হেহেহে।'
একটুখানি ঢেউ ওঠার পর আবারো নিস্তরঙ্গ জীবনে প্রবেশ। আঞ্জুমা, তোমার জন্য আজকের সকালের এই কিয়ৎক্ষণ উৎসর্গ করলাম।
মন্তব্য
শুধু উড়ে উড়ে চোখ বুলিয়ে গেলাম। পরে পড়ে নেবো। আপনার গদ্য তো চমৎকার!
বলছেন?
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
জটিলস্য জটিল, আমারে আবার খিস্তি খেউড় দিয়েন না
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
জিন্দেগীটাই তো জটিল!
খিস্তি! সেটা তো নটরডেম থেকে বের হওয়ার সময়েই রেখে এসেছি
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
আঞ্জুমার কথা ভাবতে ভাবতেই একদিন আমাদের সবার আঞ্জুমানে মফিদুলের সময় এসে যাবে...
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
ফটুতো জোশ লাগাইছেন। আপ্নের কানাডা পৌছানো নিয়া এক্টা লেখা দিয়ে দেন।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
বাঃ, চমৎকার লাগলো। এরকম অগোছালো উদ্দেশ্যহীন গল্প লেখা সোজা নয়।
'এইডসের ভুবনে স্বাগতম' বা 'বনানীবাসিনীর মত উত্তেজক পোশাক' দেখে ট্যাগে কিশোর ব্যাপারটা মজার লাগলো। আজকাল কিশোররাও এই সব উত্তেজনা উপভোগ করছে না কি?
"সেসময় এক 'পেলাস্টিক' বাসাক্রান্ত হয়": এইটার মানে বুঝলাম না, কোনো বিশেষ গাড়ির কথা বলছেন?
অফটপিক প্রশ্ন: আপনি কি ম্যাক ব্যবহার করেন? আমার লেখার মতোই আপনার লেখাতেও ড় আর য়-তে ফুটকিগুলো অক্ষর ছেড়ে পালানোর তাল করছে, তাছাড়া ঐ দুটি অক্ষরে ি - কার বা ে- কার লাগালে আমার ম্যাকযন্ত্রে সেগুলো আগেপরে হয়ে যাচ্ছে (উইন্ডোজে ঠিক আসবে বলেই মনে হয় এইটা)।
নাহ! আপনারা আসলেই মহান। বাজেগল্পকেও ভালো বলেন! আর উপভোগ করা কিনা তা জানি না, তবে তাদের ভাষ্যমতে ব্যাপারটা 'আধুনিকতার'।
বাসের হেল্পাররা প্রাইভেট কার কে 'পেলাসটিক' বলে। অ্যাক্সিডেন্টকেই 'বাসাক্রান্ত' বল্লাম আসলে।
আমি তো আইবিএম ক্লোন (পেন্টিয়াম ৩ ) একটা ব্যবহার করি মূলোদা! আর আমার এখানে তো ঠিকই দেখাচ্ছে
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
আসল ঘটনা তো চাইপা গেলেন বলেই মনে হচ্ছে! তারপর কী হয়েছিলো খুইলা কন।
নওশীন খেয়েছিলো? সময়?
হুমম
আসল ঘটনাই তো সেইটা। সেইটা কন, সিমন।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
কে জানে
গপ্পো হলো দারূণ...
তয় ভাই কাহিনী ঝিরঝির- পরের পর্ব দিয়েন কইলাম... !!!
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
বাজে গল্পে তো ঝিরিঝিরি তো থাকবেই
এসব প্রশ্নের উত্তর নেই বলেই তো এটা বাজে গল্প
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
দ্রোহীদার মন্তব্যে ঐ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপনার সাথে দুএকদিন বাসে চড়তে হবে। নিবেনতো সাথে?
ফোনায়েন
আচ্ছা! বেশ বেশ...
____________
অল্পকথা গল্পকথা
বেশ সাবলীল।
----------------------------------------
শুধু শরীরে জেগে থাকে শরীরঘর
মধ্যবর্তী চরকায় খেয়ালী রোদের হাড়
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
গল্পটা ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
নীলক্ষেতের সেই চিপা, ঘটনা কী?
ঘটনা নাই কোন, সবই মায়া।
পড়তে দেরি হয়ে গেল । লেখা ভাল লেগেছে । আপনার লেখা গুলোর মধ্যে একটু উদাস উদাস ভাব সবসময় দেখি । একবার স্বাদ বদলালে কেমন হয় ?
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ভাগ্য বদলালে স্বাদ ও বদলাবে নিশ্চিত।
আপনি কি এক্ষুণি আমার জিমেইলে একটু টোকা দিতে পারবেন? আপনার মেইল অ্যাড্রেস কোথাও পাচ্ছি না।
নতুন মন্তব্য করুন