প্রথমদিকে প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবারে ইলোরার সাথে আমার দেখা হতো। দেখা করতাম ঠিক সন্ধ্যা ৭টায়। ঘড়ি ধরে কাঁটায় কাঁটায় ২ ঘন্টা আমরা একসাথে। তারপর আবার একটি মাসের জন্য আলাদা হয়ে যাওয়া। ঘড়ির সাথে চলতে হবে; ছোট বেলার স্থিরকৃত এ লক্ষ্যে সে ছিল অটল!
- যদি জ্যামে আটকে যাও? বা অন্য কেউ আটকে দেয়?
- সে কারনেই তো আমি গাড়ি চড়ি না, বাসেও না। সময় একটা বড় ব্যাপার।
- সেটাই, হাটাও খুব ভালো। ডায়বেটিস কন্ট্রোলে থাকবে তোমার। ব্লাড প্রেশার, বুক ধরফর... একটা বেমক্কা চাঁটি খেয়ে থেমে যেতাম।
হাতের শিঙ্গারায় একটি কামড় বসালাম। 'আউচ!' পাশের কিউবিকালিয়ানরা একনজর দেখলো, আবার নিজ নিজ ল্যাপি/পিসিতে মনোযোগ ফেরানো। ঝালের চেয়ে ঝাল লাগার ভয় বেশি আমার। তাই মরিচে কামড় পড়লেই মাথা দিয়ে ধোঁয়া আর চোখ দি্যে পানি পড়া তো বটেই, জিহ্বা বের করে হুহু করাটাও স্বাভাবিক।
- গবেট! ঝাল খেয়ে কেউ এমন করে?
- হ্যা। ঝাল এতোই খাও যে অন্যান্য খাওয়ার টেস্- ও বুঝতেও পারোনা। এই আমি, আমার মত যারা স্বাভাবিক মানুষ, তারা স্বাদ বুঝে, তাই তাদের জিভ ঝালে জ্বলে আর মিষ্টিতে লালায়। তোমার জন্য দুঃখ হয়। বুঝলানা, জীবনে স্বাদ কি সেইটাই বুঝলানা, শুধুই ঝালে ঝালাপালা... আবার চাঁটি! আউচ!
সন্ধ্যার রাস্তায় এত্তো গাড়ি দেখতে ভালোই লাগে। সারি সারি জ্যামবদ্ধ গাড়ি, লাল-কালো-সবুজ-সাদা রঙ, লাল ব্রেকলাইট, মৃদু হেডলাইট- শব্দটা স্তব্ধ হলেই যেন এক জীবন্ত কম্পোজিশন! রাস্তা দিয়ে হনহন করে হাঁটতে থাকা ঘরকুনো বা ঘরপ্রেমীদের জন্য রাস্তায় একটু জায়গা করে দেই। রাস্তা পার হয়ে বনানী মাঠের পাশের রাস্তা দিয়ে টুপ করে ঢুকে যাই। ধীর পদক্ষেপে রাস্তায় অনেকবার হেটেছিলাম আমরা।
- আচ্ছা, এ রাস্তার মাঝে যদি হঠাৎ কুমির আসে?
- কুমির? কেন? কীভাবে আসবে, পানি কোথায়?
- তাহলে বাঘ?
- বাঘশুমারীতে বাঘের সংখ্যা দশহাজারী হয়নি এখনো। আর এটা ঢাকা শহর, খুলনা না যে বাঘ এসে লাফ দিবে।
- ধ্যাৎ! একটু কল্পনা করো না বাবা! নাকি বিল্ডার্সে থাকতে থাকতে খালি সিমেন্ট-ইট নিয়েই ভাবো।
- আসে না। ভূমিকম্পে বিল্ডিং ধ্বসে যাচ্ছে মাটির নীচে 'প্লাস্টিক কনসেন্ট্রিক রিং' না বসানোয়, এইটা ভাবতে পারি।
- গবেট। আস্ত গবেট তুমি একটা!
- হইতে পারি। কিন্তু নিশ্চিত থাকো, বাঘ-ভাল্লুক, সন্ত্রাসী কিংবা ভূমিকম্পের ভাঙ্গা বিল্ডিং, কোনোটাতেই তোমার সমস্যা নাই। আমি আছি না!
- আহা, আইছে আমার হিরো! প্রশ্রয়ের ব্যাঙ্গের সাথে ভেংচি। চাঁটের বিপরীতে এবার হ্যাচকা টানে কাছে নিয়ে আসলাম শুনশান রাস্তার ফায়দা লুটে।
মাথায় এসব টুকরো টুকরো ঘটনা জট পাকায় সবসময়। মাথা থেকে নামাতে পারছি না। ইলোরাকে খুঁজছি প্রায় দু'বছর। দুঃখ প্রকাশ করবো স্যরি বলে। অনেক কিছু থেকেই সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি ছিলো। শুধু গাড়ি ধাক্কার অ্যাক্সিডেন্ট-টা বাদ পড়ে গ্যালো!
মন্তব্য
লেখার ধরনটা খুব ভাল লাগল।
---------------------------------------------
ল্যাসিক করাতে ভয় পাই আর লেন্স ভাল লাগে না।
---------------------------------------------
ল্যাসিক করাতে ভয় পাই আর লেন্স ভাল লাগে না।
বাজেগল্পের প্রতি আপনার ভালোলাগা দেখে ভালো লাগলো
শেষের তিনটা লাইন পড়ে মন খারাপ হলো।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আমারো মন খারাপ হয়েছিল।
ভালো লাগ্লো। টুকরো ঘটনাগুলো গল্পাকারে আরও লিখুন।
মূল ঘটনা টুকরোর চেয়েও ছোট। ওটাকেই ফেনিয়ে বড় করে একটা বাজেগল্প লেখা। হঠাৎ-ই হয়তো আরেকটা ঘটনা মনে উঁকি দিয়ে যাবে, তখন হয়তোবা আরেকটা বাজেগল্প আসবে।
হুমম... ট্যাগিং দেখে বুঝলাম আপনি সৎ মানুষ।
শেষে এসে ভালোই ধাক্কা খেলাম। শেষটা এরকম হবে, ভাবিনি। বাজেগল্পটা ভালো লাগল।
শেষটা এমন হবে আমিও ভাবিনি কখনো
ভালো লাগলো
জুয়েইরিযাহ মউ
ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ইলোরা-রে তো হারাইছেন আগেই। এহন অ্যাম্নে বেমক্কা ধাক্কা দিয়া আমগোরেও তো মারবেন দেহি! এইর'ম ক'রে হর্ন টর্ন না বাজায়া এইর'ম জোরে ধাক্কা দিতে আছে না কি?!
আর, এত যে স্টাইলিশ এক্সপেরিমেন্টশন চলে গল্প বলার প্যাটার্ন নিয়ে, তো গল্পের হেডলাইটে সবসময় এইর'ম "বাজে" ডিসক্লেইমার-টা না জ্বালায়া রাখলে চলে না বুঝি?!
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
নটরডেমিয়ানরা জুনিয়রদের যে সবসময়ই ভালা বলে তা আবারো প্রমান হইলো
ঐটা অণুগল্পের মত একটা ট্যাগ আরকী । আর গোমরের কথা হলো, যদি বাজে লেখা হয়েই যায়, তাহলে বলা তো যাবে যে এইটা বাজে গল্প
হুউম।
চিন্তাযুক্ত।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
ভাল্লাগলো!
........................................
......সবটুকু বুঝতে কে চায়!
----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand
ধন্যবাদ!
ভালো লাগলোনা একদম... গল্প ভীষণ বাজে... নামকরণ সার্থক... দুঃখ আর চাইনা...
---------------------
নামে কি'বা আসে যায়...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
অভিযোগ মাথা পেতে নিলাম।
শেষে এসে বেমক্কা ধাক্কায় একফোঁটা দিলাম চোখের জলের শিশির!
............................................................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
গদ্যকার স্বার্থক।
গল্পটা ভালো লেগেছে।
আরো কয়েকটা প্যারা করে দিলে পাঠকের পড়তে আরাম হতো। বিশেষ করে সংলাপের অংশগুলো।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফ্লিকার | ইমেইল
পরেরটায় দিবো সেভাবে।
ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগলো ব্রো
বাজেগল্পের সেরা লেখক, ওরফে শব্দশিল্পী বলে উচ্চ করে শির,
সিমন ভাই, একফোঁটা দিলেন মন খ্রাপের শিশির ...
ভাই, আপনার 'বাজে গল্প' সিরিজ আমার মনে ধরসে...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
বাজেগল্পের সেরা লেখক, ওরফে শব্দশিল্পী বলে উচ্চ করে শির,
সিমন ভাই, একফোঁটা দিলেন মন খ্রাপের শিশির ...
ভাই, আপনার 'বাজে গল্প' সিরিজ আমার মনে ধরসে...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
নিশ্চিত হয়ে বলছো ?
আপনার লেখার এই এক্সপেরিমেন্টাল ধরণটা কিন্তু চমৎকার লাগলো। চটজলদি আরো কিছু বাজে গল্প ছাড়ুন।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
এইতো দিলেন চিন্তায় ফেলে!
বাজে গল্প বাদ দেন সিমন। আপনার এই স্টাইলের মধ্যে চমক/ঠমক দুইটাই আছে।
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
বাজেগল্প-ই ইষ্টাইল
আপনার "বাজে গল্প" নামকরণটি সার্থক। গল্পটি পড়বার পর হারিয়ে যায়না মন থেকে। বরং হৃদয়ের ভিতরে গিয়ে কোমল একটি মন্দিরাধ্বনি হয়ে বাজে। বাজতেই থাকে।
আরো লিখুন!
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
আমার কোনো লেখায় বোধহয় এই প্রথম কমেন্ট করলেন! ভালো লাগলো খুব, আপনাকে সামান্য হলেও কোনো অনুভূতি দিতে পেরেছি বলে
এই আউচ জিনিসটা কি? বেশি বেশি স্মার্ট শব্দ মনে হয় এইটা...
তুমি দিন দিন ভালো লিখে যাইতেছো মিয়া।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আউচ একখানা উত্তরাধুনিক শব্দ। ইহা অ্যাাউ এর অন্য এক সংস্করন
সব-ই আপ্নের লাঠি নিয়া দৌড়ানির ফল গো ভাইজান।
খুব ভালো লাগল সিমন। বাজে গল্প আরও আসুক, খাইস্টা গল্পও ওয়েলকাম
খাইষ্টা গপ্পে তো আপ্নে গুরু
হুম, গল্পটা আসলেই বাজে ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
একদম সত্যি কথা
আপনি কি দয়া করে একটাকিছু আনব্লক করবেন?? প্রতিটা মানুষের কিছু না কিছু ব্যাখা থাকে... সেটা শোনাটাও খুব জরুরি...আমি ঠিক জানিনা এটা আপনার চোখে পড়বে কিনা কিন্তু তারপরও আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, ভিষণভাবে অনুশোচনা হচ্ছে...ফাসীর আসামির কাছ থেকেও তার বয়ান শোনা হয়,আপনি কি দয়া করে সেই সুযোগটুকু দেবেন প্লিজ??? খুব ভয়াবহভাবে একটা মানুষ মনের কষ্টে প্রায় মারা যাচ্ছে,একটু কথা কিন্তু শোনাই যায়...প্লিজ প্লিজ প্লিজ...
নতুন মন্তব্য করুন