সে হৃদয়বান ছিলো বলিয়া চোক্ষে কিছু ঠাহর করিতে পারে নাই। বিজ্ঞানে আলোচিত হইলে ইহা আরও স্পষ্ট হইয়া উঠিবে। আদম সন্তানের এতো বড়ো হৃদয় কত ছোট্ট খাঁচায় লাফালাফি করিতেছে। অনুভব করিতে পারিতেছে কিন্তু কিছুই দেখিতে পাইতেছে না। ইহাদের নিজেদের মইধ্যে কোন যোগাযোগ স্থাপিত হইতেছে না। আত্মীকরণের সূত্রও অধিকতর উম্মোচিত হইতেছে না। বরং সুযোগ পাইলেই চোখ আর আত্মা একে অপরকে দোষারোপ করিতেছে।
যিনি চক্ষুমান তাহার আবার হৃদয়ঘটিত সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করিতেছে। চক্ষুমান বহু দূরের জিনিষ দেখিতে পাইলেও হৃদয় স্পর্শ করিতে চাহিতেছে না। অথচ হৃদয়ের দোহাই বিলাইয়া বড় বড় ঘর উঠিতেছে। দুজন কাছাকাছি হইয়া তিন জনের গল্প করিতেছে। গল্পটি যখন ঘটিতেছে তখন চক্ষুর প্রয়োজন হইতেছে না। এবং তখন হৃদয় হামাগুড়ি দিয়া নিভু নিভু আলোর কাছে আসিয়া নড়নচড়ন মুখস্ত করিতেছে।
গল্পটি যাখন কান্নাকাটি করিতেছে তখন কালক্ষেপন না করিয়া চক্ষু দৌঁড়াইয়া আসিতেছে। গল্পটি নিজে দৌঁড়াইতে পারিতেছে না কিন্তু দৃষ্টিনন্দন চক্ষুসমাজকে স্পষ্টত দেখিতেছে । কৈশোর অতিক্রম করিতে করিতে গল্পটি অনেককিছু দেখিয়া রাখিতেছে কিন্তু তাহাতে বিশেষ কাজ হইতেছে না বরং যৌবন হাতড়াইয়া পূর্ব পুরুষের ভুলগুলো পুনর্রাবৃত্তি করিতেছে।
তাহা হইলে পূর্বপুরুল কী ভুল করিয়া ছিলো? হ্যাঁ করিয়াছিলো, বিস্তর ভুল করিয়াছিল। প্রথম ভূলটি হইতেছে আত্মা তাহাদের নিজেদের আনন্দ ঘটাইয়া আরেকটি পুরুষ বাড়াইয়া তৃতীয় পুরুষের দিকে ঠেলিয়া দিয়াছে যাহা চক্ষুর জন্য লজ্জাজনক হইয়াছে। কারণ সেই তৃতীয় পুরুষ এখন রাজারের ওপর উপুড় হইয়া পিছনে পা দাপাইয়া হাহাকার করিতেছে।
দ্বিতীয় ভূলটি হইতেছে দূরে ঠেলিয়া দিয়াও তাহারা হাতে তৈল মাখিয়া কাছা ধরিয়া রাখিয়াছে, যাহা চক্ষু দেখিতেছে কিন্তু আত্মার জন্য বাইপাসে আসিয়া ঠেকিয়াছে। অদৃশ্য এক বজ্রআটুনি বারবার পিছু ডাকিয়া বলিতেছে, বাছা, তৈলের দিকে তাকাইয়া হাতটা ধরিয়া রাখিও। হাতটি ভূগোল অতিক্রম করিয়া কিন্তু দ্রুত গগিতে ইতিহাসের দিকে অগ্রসর হইতেছে।
তৃতীয় ভূলটি হইতেছে আত্মার ওপর অতিশয় বিশ্বাস করিয়া চক্ষু পরবর্তী জীবন কাটাইয়া দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়াছে। অথচ চক্ষুর কোনা-কানছায় অশ্রু আনিয়া বলিয়াছে, হে আদম বালক, মাতা আকুল হইয়া তোমার পথ চাহিয়া থাকিবে। পিছনের দিকে একটু নজর রাখিও। এই পিছন সূর্য অতিক্রম করিয়া গোধূলি মাখিয়া লাল হইয়াছে। চতুর্থ ভূলটি হইতেছে আড়স্ট দৃষ্টির ললিত কলার খোসা সরাইয়া তাহাতে দুগ্ধ মিশ্রিত করিয়া চটকাইয়া চটকাইয়া পুষ্ট হইবার বাসনা জাগ্রত করিয়াছে।
কিন্তু সে হৃদয়বান বলিয়া চার-চারটি ভুলসমগ্র চক্ষু দিয়া পড়িতে পারে নাই। আর চক্ষু যখন যারপরনাই চেষ্টা করিতেছিলো হৃদয় তখন আর্টারী ব্লকে উবুস্তু হইয়া লাব-ডাব, লাড-ডাব শব্দে নাচিতেছিলো, খেলিতেছিলো। চক্ষু তখন বাঁশি বাঁজাইয়া দেখাদেখির খেলা শেষ করিয়া কাগুজিনেবু মুখে ভরিয়া ঠোঁট নাড়িতেছিলো।
মন্তব্য
পূর্বপুরুষকে অভি্যুক্ত করিয়া কী লাভ? চক্ষু এবং হৃদয় আজন্মই দু'টি বিপরীত মতাদর্শের অনুসারী। পরস্পরকে বুঝিতে পারেনা বলিয়াই দোষারোপ করে। গল্পকে পথনির্দেশ করিবে কোন উপায়ে? গল্প বেচারা তাই নিজের অজান্তেই গোলকধাঁধাঁয় ঘুরিয়া মরে।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
সেটাই ঠিক। একটি বিষয় বলতে চেয়েছিলাম, তৃতীয় পুরুষ প্রতিদিনই পূর্বপুরুষ হয়ে যাচ্ছে। তাই হৃদয় আর চোখের যে ব্যবধান তা কেবল বাড়ছে। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
হৃদয় বনাম চক্ষুর চমৎকার খেলা দেখালেনতো শেখ ভায়া।
এস হোসাইন
---------------------------------
"মোর মনো মাঝে মায়ের মুখ।"
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকবেন।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
হে আদম তোমার জন্য একটি সুসংবাদ এবং একটি দুঃসংবাদ আছে। ঈশ্বর ঘোষণা করিলেন।
আদম জিগায় সুখবরটা কি?
ঈশ্বর কহিলেন; তোমাকে একটি নুনু এবং চিন্তার করার জন্য একটি মস্তিষ্ক দেওয়া হইল।
শুনিয়া আদম কয় খুসীর খবর। এলা বেড নিউজটা কন দেহি।
তাচ্ছিল্য মুখে এনে ঈশ্বর ঘোষণা করলেন;
দুটো কখনো একসাথে কাজ করবে না।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
নতুন মন্তব্য করুন