হয়তো শুধুই বর্ণনা কিংবা রচনা হলো। হয়তো প্রবন্ধটির শিল্পগুণে সমৃদ্ধ হলো না। তবু কিছু লিখলাম তাঁকে নিয়ে। জীবন থেকে তিনি কী নিয়েছেন জানি না, তবে আমাদের দিয়ে গেছেন অনেক অনেক কিছু। ’আসছে ফাল্গুন আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হবো’ 'আরেক ফাল্গুন' উপন্যাসটি এমনই প্রত্যয় ঘোষণার মধ্যদিয়ে কী ভেবে শেষ করেছিলেন জহির রায়হান?-জানি না। তবে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক, অবিস্মরণীয় চলচ্চিত্রকার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির রায়হানের সেই ভবিষ্যতবাণী একদিন সত্যিও হয়েছিল।
ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই পরবর্তীকালে সংঘটিত হয় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। আর আমাদের জাতীয় জীবনে ঘটে যাওয়া এ দু’টি মহোত্তম ঘটনার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে ছিলেন তিনি।
জহির রায়হানের জন্ম ১৯৩৫ সালে ১৯ আগস্ট। ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন অবসানপরবর্তী তিনি তাঁর পরিবারের সাথে ঢাকায় আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর ১৯৫০ সালে ‘যুগের আলো’ পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা পেশায় যোগ দেন। ‘খাপছাড়া’ ‘যান্ত্রিক’ ও সিনেমা’ পত্রিকায়ও কাজ করেন তিনি। ১৯৫৬ সালে ‘প্রবাহ’ পত্রিকার সম্পাদনার মধ্যদিয়ে তাঁর সক্রিয় সাংবাদিক জীবনের ইতি ঘটে।
১৯৫৭ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার এ জে কারদারের ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ ছবিতে সহকারীর দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় তাঁর চলচ্চিত্রজীবন। পাশাপশি সালাউদ্দিনের ’যে নদী মরু পথে’ এহতেশামের ‘এদেশ তোমার আমার’ ছবিতেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৬১ সালে ‘কখনো আসেনি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চিত্রপরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন জহির রায়হান। এরপর একে একে মুক্তি পায় তার পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘কখনো আসিনি’ (১৯৬১), ‘কাচের দেয়াল’ (১৯৬৩), ‘সঙ্গম’ (১৯৬৪), ‘আনোয়ারা’ (১৯৬৬), ‘জীবন থেকে নেয়া’ (১৯৭০)।
এদেশের মানুষের জীবন, সংগ্রাম ও স্বাধীনতার চেতনায় সমৃদ্ধ ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটি অমর করেছে জহির রায়হানকে। ১৯৭০ সালে মুক্তির আগেই ছবিটি রাজরোষের শিকার হয়। পশ্চিম পাকিস্তান সরকার এটি প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে প্রবল জনমতের কাছে অসহায় ইয়াহিয়া সরকার শেষ পর্যন্ত ছবিটি মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
মহান ভাষা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রাণ-রসায়ন ছিলো ‘জীবন থেকে নেয়া’। সেই রসায়ন বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে তীব্র গতিবেগ সঞ্চার করেছিল। এরপর তিনি ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নির্মাণ শুরু করেন। কিন্তু শেষ না হতেই যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে।
পাকিস্তানী শাসকের বর্বর গণহত্যার বিরুদ্ধে এ সময় তিনি নির্মাণ করেন ‘স্টপ জেনোসাইড’ আর ‘ব্যর্থ অব এ নেশন’ ‘লিবালেশন ফাইটাস’ এবং ‘ইনোসেন্ট মিলিয়নস’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্যচিত্র।
কথাশিল্পী হিসেবেও জহির রায়হানের অবদান চিরস্মরণীয়। ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ ‘হাজার বছর ধরে’ ‘বরফ গলা নদী’ ‘আরেক ফাল্গুন, ‘আর কত দিন’, ‘কয়েকটি মৃত্যু এবং তৃষ্ণা’ প্রভৃতি গ্রন্থে আজও তার উপস্থিতি উজ্জ্বল ।
অথচ জহির রায়হান নিখোঁজ। মুক্ত, স্বাধীন স্বদেশে অগ্রজ, কথাশিল্পী শহীদুল্লা কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে ১৯৭২ সালের ৩০ ডিসেম্বর চিরতরে হারিয়ে যান তিনি। তাঁর অন্তর্ধানের ৩৮ বছর পার হলেও সেই রহস্য ভেদ করতে পারিনি স্বয়ং রাষ্ট্রযন্ত্র।
বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী জহির রায়হান মাত্র ৩৬ বছর জীবিত ছিলেন। জীবনের এ স্বল্পতম সময়ে তিনি আমাদের চলচ্চিত্র ও সাহিত্যকে যে সমৃদ্ধি দিয়েছেন তা জাতি চিরদিন স্মরণ করবে।
মন্তব্য
'হাজার বছর ধরে' বয়ে চলেছে যে 'বরফ গলা নদী' ,
তার পাড়ে বসে 'শেষ বিকেলের মেয়ে' কি
'আরেক ফাল্গুনের' অপেক্ষা করবে ?
লেখা ভাল লেগেছে ।
আপনার মন্তব্য ভীষণ ভালো লেগেছে। অনেক কৃতজ্ঞতা আপনাকে।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
লেখাটা খুবই ভালো লেগেছে। আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখক।
ভাইয়া 'ব্যর্থ' টাকে 'বার্থ' করে দিলে মনে হয় ভাল হতো। দৃষ্টিকটু লাগতেছে।
---নীল ভূত।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ঠিকই বলেছেন। কিন্তু বানান আমি নিজে সংশোধন করতে পারছি না। ভীষণ দুঃখিত। ভালো থাকবেন।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
জহির রায়হানের জীবনী লিখে ফেলেছেন। একটা তথ্য যোগ করে দিন। বিজয়ের ঠিক পরপর, ১৮ ডিসেম্বর গঠন করা হয় 'বুদ্ধিজীবী নিধন তদন্ত কমিশন'। জহির রায়হান এর আহ্বায়ক হন।
তার নেতৃত্বেই রাজাকার আল বদরদের ব্যাপার তদন্ত শুরু হয়েছিলো। এবং এই কাজ করতে গিয়েই তিনি নিখোঁজ হন। ধারণা করা হয় তিনি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পুরো নীল নকশা এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত, সবটুকুই জেনে গিয়েছিলেন। এজন্যই তাকে সরিয়ে ফেলা হয়।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অনেক ধন্যবাদ মিতা। শেয়ারিংয়ের জন্য কৃতজ্ঞ। আমি আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি যোগ করে নিলাম। ভালো থাকবেন।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
খুব ভালো লাগলো। আরেক নজরুল ভাই আগে এঁর একটি সিনেমা নিয়ে লিখেছিলেন। তার কোনো অংশও যদি অনলাইনে থাকে ইউটিউবে, কেউ দয়া করে দিলে বাধিত হই।
নাই। আমার কাছে ডিভিডি আছে। আপনি যদি আমাকে শিখিয়ে দেন ইউটরেন্টে মুভি আপলোড করে কীভাবে? তাহলে আমি এটা আপলোড করে দিতে পারবো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
জহির রায়হানের 'জীবন থেকে নেয়া' অনলাইনে দেখা যাবে এইখানে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
খুব ভালো লাগলো নজরুল ভাই।
মধুবন্তী মেঘ
নতুন মন্তব্য করুন