পূর্বপুরুষের যাহা পশ্চাতদেশে ঘটিয়াছিলো; আমার ক্ষেত্রে তাহা উল্টো হইতেছে

শেখ নজরুল এর ছবি
লিখেছেন শেখ নজরুল [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ১২/০১/২০১০ - ৩:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চারপাশে গুঁতোগুতির হাবভাব দেখিয়া আমারও দুইটি শিং গজাইবার সম্ভবনা জাগিয়া উঠিয়াছে। আমিও মস্তকের সম্মুখে কিঞ্চিত উঁচু এবং গোলাকার বস্তুর অস্তিত্ব বেশ টের পাইতেছি। তবে পূর্বপুরুষের যাহা পশ্চাতদেশে ঘটিয়াছিলো তাহা আমার ক্ষেত্রে কেন যে উল্টো হইতে যাইতেছে ইহাতে আবার শংকিতও হইতেছি। তাই পশ্চাতদেশে হাত রাখিয়া এক মধ্যপুরুষের কুরসিনামা পড়িয়া সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করিতেছি। সেখানে তিনি যাহা যাহা লিখিয়া আমাদেরকে ধন্য করিয়াছেন তাহা অবিকল আকারে প্রকাশ করিতেছি।

অনেক অনেক আগের সেই কথা দিয়া শুরু করিতেছি। তখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হইয়া পশ্চিমেই অস্ত যাইতো। পাখিরা আটচালা ঘর গড়িয়া বসবাস করিত। মহা ধূমধামে তাহাদের বিবাহ উতসব হইতো। ঘোড়াদৌঁড় দেখিবার জন্য তাহারা আতর পাউডার মাখিয়া খোলা ময়দানে সমবেত হইতো। মানুষকে পথে দাঁড় করাইয়া বৃরা ছায়ায় আমোদিত হইতো। তখন আকাশের তারাগুলো এতো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র থাকিত না। চাঁদের শরীর লইয়া তাহারা একত্রে পৃথিবীর দিকে ফ্যালফ্যাল করিয়া তাকাইয়া থাকিত। তখন বেলুনের মধ্যে বাতাস থাকিত না; বাতাসের মধ্যে ফানুস থাকিত। তখন পাথরে পাথরে পুষ্প ফুটিত। গাছেরা পাখির জন্য দুই হাত বাড়াইয়া আকুল হইয়া বসিয়া থাকিত।

অনেক আগের কথা বলিতেছি আমি। কারণ তখন আমার জন্মাইবার সৌভাগ্য হইয়াছিলো। কী ভাবে ঘটনাটা ঘটিয়া ছিলো আমার স্মরণে নাই। কিন্তু ঘটিয়াছিলো এটি সত্যি বলিতেছি। আমি দ্রুত বাড়িয়া আরো কিছু বাড়ন্ত মানুষ দেখিয়াছিলাম- এটি বেশ মনে পড়িতেছে। কিছু সুন্দরী ললনার সৌন্দর্য উপভোগ করিবার সুযোগ হইয়াছিলো আমার- ইহাও আমার মহা সৌভাগ্য বলিয়া আজো আনন্দ প্রকাশ করিতে পারিতেছি।

আমি বড় হইতেছিলাম আর দেখিতেছিলাম সূর্য পূর্বে উদিত হইয়া কিছুটা বাঁক লইয়া পশ্চিমে ঢলিয়া পড়িতেছে। পাখিরা গাছের প্রতি ঝুঁকিয়া পড়িতেছে। কিছু পাতা ধার করিয়া বাসা তৈয়ারী শিখিতেছে। আবার ঘর ছাড়িয়া ঝড়ের কবলে পড়িতেছে। ঘোড়দৌঁড়ের ঘোড়াগুলো লইয়া মানুষ চড়িয়া চড়িয়া যুদ্ধে যাইতেছে। বৃক্ষরা বাঁচিবার জন্য মানুষের দিকে হাত পাতিয়া রহিয়াছে। কুড়ালের আঘাতে আহ উহ করিতেছে।

আমি আরও কিছু পরের কথা বলিতেছি। তবে বর্তমানের সঙ্গে তাহার মিল খুজিয়া হয়রান হইয়া লাভ হইবে না। কারণ তখন ছয়-বেহারার পালকি চলিত। ঘরে ঘরে ধুমধাম পিঠার উতসব হইতো। কৃষকরা আলোর মুখ দেখিবার আগে শস্যের মুখ দেখিয়া ফেলিত। নদীর সঙ্গে গল্প করিয়া বাড়িতে আসিয়া বউকে শুনাইতো। সাগরের সঙ্গে বুক মিলাইতো। গাছ ধরিয়া ভালোবাসার মন্ত্র পাঠ করিত। পাখির পায়ে পত্র বাধিয়া ঘরে বসিয়া ভালোবাসা অনুভব করিত।

আমি আরও কিছু পরের কথা বলিতেছি। অতিবর্তমানের সঙ্গে তাহার মিল খুঁজিয়া পাওয়া সম্ভব নহে। তখন পালকিতে বধূ তার মাটিতে বর হাঁটিতে হাঁটিতে বাড়িতে পৌঁছাইতো। তখন নতুন সন্তানের আগমন ঘটিলে পাড়ায় পাড়ায় আনন্দবার্তা ঘোষিত হইতো। তাহার শরীরে ঘানিতে ভাঙানো সরিসার তৈল মর্দন করা হইতো। তাহাকে খোলা উঠোনের পাটিতে রাখিয়া মায়েরা গেরস্থালীর কর্ম সারিতেন। কাঁদিতে কাঁদিতে তাহারা হাসিয়া ওঠার ক্ষমতা অর্জন করিত। শস্যের মতো তাহারা সোনালী আর বৃক্ষের মতো সবুজ হইয়া একদিন ঘর থেকে মাঠে নামিয়া পড়িত।

আমি বর্তমানের কথা বলিতেছি না। বর্তমানে পড়িবার মতো গল্প লিখিবার সাধ্যি আমার নাই। তবু বিরাট বটবৃক্ষ হইবার লোভ সংবরণ করিতে না পারিয়া চেষ্টাও করিয়া দেখিয়াছি কিন্তু গণতান্ত্রিকভাবে যারপরনাই ব্যর্থ হইয়াছি। তাহার সাথে অতিবেশির গুঁতোগুতির ঠেলা সামলাইতে না পারিয়া একটি ভূয়া মামলা ঠুকিয়া অবসর জীবনে গমন করিতেছি।


মন্তব্য

শান্ত [অতিথি] এর ছবি

সুন্দর লেখা। ভালো লাগলো পড়ে।

শেখ নজরুল এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

শেখ নজরুল

শেখ নজরুল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।