জাতীয় সংসদ। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের কেন্দ্রস্থল। কিন্তু কতটুকু পূরণ হচ্ছে সেই সব স্বপ্নের? ভোট আসে, জনগণ আনন্দে তাদের নেতা অথ্যাৎ সাংসদ নির্বাচনের পক্ষে মূল্যবান ভোট প্রদান করে। জেতার পর নেতাকে কোলপাজা করে মাথায় তুলে নাচায়। বংলাদেশই সম্ভবত একমাত্র দেশ যেখানে অর্ধেকের বেশি স্বাক্ষরজ্ঞানহীন জনগণের গণতান্ত্রিক সরকার পদ্ধতি প্রচলিত। কথায় আছে, সুশিক্ষা ছাড়া গণতন্ত্র টেকসই হয় না। আমরা অনেকটা এর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যেমন গণতন্ত্র-গণতন্ত্র চিতকারে আকাশ কাঁপাচ্ছি; তেমনি তার ফলাফলও টের পাচ্ছি হাড়ে হাড়ে।
গণতন্ত্রের রীতিতে বিরোধিদল সরকারের সহযোগি হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু এখানকার চিত্র উল্টো। সরকারী দল যেমন বিরোধিদলকে কোনঠাসা করে রাখতে চায়; তেমনি বিরোধি দলও সরকারের সংগে বিরোধপূর্ণ আচরণে লিপ্ত হয়। মোদ্দাকথায় বলা যায়, বাংলাদেশে সরকার এবং বিরোধিদের সম্পর্ক অনেকটা সাপে-নেউলের মতো। সাপেকে আড়াআড়ি ডিঙিয়ে কোন বেজি যেতে পারলেই ওই সাপ নাকি চলতশক্তি হারিয়ে ফেলে। যদিও ঘটনাটি মুখে মুখে প্রচলিত। কিন্তু বাস্তব রূপ আছে আমাদের দেশের বড় দুটি দলের আচরণ সমষ্টিতে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, গল্পটি তারাই ভালো জানেন। আর সবচেয়ে বেশি বোঝেন ওই সব নেতারা যারা মেধা-মননে যথেষ্ট পক্ক নয়। কিন্তু এভাবে তো একটি দেশের উন্নয়ন হতে পারে না। সব দলই; বিশেষ করে বড় দুটি দল যেমন প্রার্থী নির্বাচনে কখনই সততার পরিচয় দিতে পারেননি, তেমনি পারেননি যথাযোগ্য নের্তৃত্ব বেছে নিতে। তাই সংসদ অধিবেশনে হরহামেশাই আমাদের দেখতে হয়, শুনতে হয়- সেই সব অযোগ্য, অর্ধশিক্ষিত নেতাদের ভারসাম্যহীন কথাবার্তা।
এই তো কদিন আগেই প্রশ্ন উঠেছিলো, অধিকাংশ মাননীয় সাংসদগন কি সংসদদের আচরণ জানেন? রীতিনীতি বোঝেন? নাকি বোঝার চেষ্টা করেন? বোঝেন না, জানেন না- তাইতো ভারতের গত স্পিকার শ্রী সোমনাথের নের্তৃতে একটি সংসদীয় দল এসে আমাদের সাংসদদের ট্রেনিং দিয়ে গেছেন। তাতে কি অবস্থার উন্নতি হয়েছে? হয়নি; আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।
চলতি সংসদের এক অধিবেশনের কথা বলছি, মাননীয় এক সাংসদ ফ্লোর নিয়ে বক্তব্য দিতে উঠেছেন; বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বললেন, মাননীয় ব্রিজ আমার একলায় দুটি স্পিকার চাই। মাননীয় স্পিকার তাকে ঠিকঠাক বক্তব্য তুলেধরার জন্য বলেন, কিন্তু তিনি কী ভাবলেন? ভাবলেন- চাওয়া মনে হয় বেশি হচ্ছে, তাই আর একটু বিনীতভাবে বললেন, মাননীয় কালভার্ট আমার এলাকায় একটি স্পিকার চাই।
বলা বাহুল্য, মাননীয় স্পিকার বাধ্য হয়ে তাকে তিনটি অধিবেশনে বক্তব্য নিষিদ্ধ করেন।
আরো আগের মান্যবর একজন সাংসদের কথা তুলে ধরছি। তিনি এলাকার মঞ্চে বক্তব্য প্রদানকালে, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একটি নৈশ বিদ্যালয়ের দাবী করা হয়। তিনি নৈশ শব্দের অর্থ না বুঝে উচ্চস্বরে বলে উঠলেন, না, না আমার পক্ষে নয়শ' বিদ্যালয় পাশকরানো সম্ভব নয়; আমি একটি বিদ্যালয় করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
কথায় কথায় আরো এক মাননীয় সাংসদের কথা মনে পড়ে গেলো। তিনিও এলাকার একটি স্কুলে বক্তব্য রাখছিলেন। বক্তব্যের ফাঁকে ছাত্রদের পক্ষ থেকে স্কুলটিতে সাইন্স ডিপার্টমেন্টে চালুর জন্য দাবী তোলা হয়। তিনি সাথে সাথে তার একজন সর্বসঙ্গী সমর্থককে আদেশ দেন, কালকের মধ্যে যেখান থেকে হোক সাইন্স কিনে বিদ্যালয়ে প্রদান করতে।
এমন ঘটনা অনেক বলা যাবে। যা বলতে চাওয়া বক্তব্যকে আরও জোরালোও করতে পারে। কিন্তু লাভ যে খুব বেশি হবে না; তা অনুমেয়। কারণ ভোটে জেতার জন্য যত না বেশি যোগ্যতার দরকার তার চেয়ে বেশি দরকার অর্থ আর প্রতিপত্তির। আর দলের তৈলাক্ত চামচা হতে পারলে তো কথাই নেই। ভোটের টিকেট কনফার্ম। জেতার বিষয়টি যদিও স্ব-স্ব দলের প্রতীকের ওপর নির্ভর করে।
তাই তো এখনও শোনা যায়, ভোট দিলাম নৌকায়, ভোট দিলাম ধানের শীষে; কিন্তু অমুক পাশ করলো ক্যামনে?
মন্তব্য
আমি এস এ খালেকের ব্যপারে শুনেছিলাম যে একটা মেডিকেল কলেজের অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, "আশা করি এখান থেকে অনেক ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বেরুবে..."
আমার লেখায়ও তার আরো একটি বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে। নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
শুনেছি ডক্টর কামাল হোসেন মীরপুরের হারুন মোল্লার কাছে হেরে গিয়েছিলেন কেননা বড় ডাক্তার হয়ে তিনি মীরপুরের একটা রুগীও দেখেন নি। শিক্ষা নাকি জাতির মেরুদন্ড, আমাদের মেরুদন্ডহীনতার কারণ মনে হয় এটাই...
--------------------------------------
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
এটাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
সংসদের অধিবেশন দেখা এসব কারণে খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
কেউ কেউ আবার মজা উপভোগ করে।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
রম্য মনে করেছিলাম, পরে দেখি ঘটনা সত্য।
অনেক ধন্যবাদ।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
মজা পাইলাম!
দুঃখ লাগে। এক ভারতীয় চ্যানেলে বহু আগে শেখর সুমন বলছিলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লোকসভা/রাজ্যসভার সব সদস্যকে কম্পিউটার শেখানো হবে। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়! কারণ সরকার ভুলেই গেছে যে তাদেরকে অক্ষর জ্ঞান দিতে হবে আগে!
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
অনেকটা স্বশিক্ষিত শিল্পী হওয়ার মতো কথা। যা কেবলমাত্র ঈশ্বরপ্রদত্ত।
ধন্যবাদ আপনাকে।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
আমরা কতটুকু পেছালে সামনে যেতে পারবো
কতটুকু .....?
এই উত্তর আমার জানা নেই। ধন্যবাদ আপনারে মন্তব্যের জন্য।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
গণতন্ত্র খুবই পিছলা জিনিস; কিন্তু তারপরেও গণতন্ত্রকেই মুক্তি হিসেবে দেখা হয়; বাংলাদেশের মতো স্বল্প শিক্ষার হারের দেশেও 'অশিক্ষিত' নেতারাই নির্বাচিত হয়; কারণ, তথাকথিত শিক্ষিতরাও সুযোগ পেলে চুরি করতে ছাড়ে না। সুযোগ পেলে নেতাদেরকে আমিও একহাত দেখে নিতে ছাড়ি না; কিন্তু তারা আসলে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকেই প্রতিফলিত করে। মাস লেভেলে আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ ক্ষেত্রেই আমরা দুই নাম্বারীকে সহজভাবে মেনে নেই, ইনডিভিজুয়াল হিসেবে দুই নাম্বারীর সুযোগ পেয়েও যারা নেয় না, তারা এখনো আমাদের মধ্যে সংখ্যালঘু।
আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হলে আমরা আরো ভালো নেতা পাবো নিশ্চয়ই। তবে সেটা রাতারাতি হবে না। প্রত্যেকে যদি উন্নতির জন্য তার শ্রমটা দেয়, তাহলে ধীরে ধীরে হলেও সামনের দিকেই এগিয়ে যাওয়া হবে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
দেখে নিও! আমিও একদিন য়্যাম্পি/মন্ত্রী হবো! তার্পর মাননীয় ব্রিজের কাছে আমার এলাকার জন্য দুটি স্পিকার চাইবো!!!!!!!! হুহুহুহুহু.......
আমাকে স্পিকার মনোনীত করলে বিষয়টি আরও সহজ হবে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
পড়ে মনে হল, এইটা বাঙালীদের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যও হতে পারে৷ কারণ ভারতের লোকসভায় অন্যান্য রাজ্যের দলগুলো, নিজেদের মধ্যে যত শত্রুতা, রাজনৈতিক বিরোধিতাই থাক, রাজ্যের ইস্যুতে এক হয়ে কথা বলে৷ কিন্তু অভাগা পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় সদস্যবৃন্দ কেবল এই দল ঐ দলকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করে, পশ্চিমবঙ্গের নাক কেটে হলেও৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
ওখানে নেতারা কিছুটা হলেও ক্ষমতার লোভ সংবরণ করতে পারে। অন্তত একে অপরকে দোষারোপ করার রাজনীতি করে ক্ষমতায় যেতে চায় না। তাছাড়া দেশপ্রেম শব্দটি ওদের মগজে ভালোবাসার মতো নিরেট।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
আপনার মন্তব্য ঠিক। তবে তথাকথিত শিক্ষার কথা বলিনি আমি। সুশিক্ষার কথা বলতে চেয়েছি। ধন্যবাদ আপনাকে।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
দেশে থাকতে সংসদ অধিবেশন হলে আমার বর কাজকর্ম বাদ দিয়ে টিভির সামনে বসে যেত। তার মতে এরকম বিনা খর্চার বিনোদন আর কোথাও পাওয়া যায় না!
____________________________
শান্তিও যদি সিংহের মত গর্জায়, তাকে ডরাই।
--নরেশ গুহ
----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand
এই নির্মল বিনোদন প্রাপ্তির জন্য আবার দেশে আসার জন্য অনুরোধ জানাতে চাই। যেখানে থাকুন ভালো থাকুন।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
আপনার এই পোষ্টটি আসলে রম্য ক্যাটাগরীতে আসার দরকার ছিল ঃ), নির্মল বিনোদন বলে কথা
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
নতুন মন্তব্য করুন