আদিবাসী দিবসের ভাবনা
মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে কোন নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠী বৈষম্যের শিকারে পরিণত হবেন না- এ কথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান একাধিবার দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছিলেন। তিনি সময় পাননি। তারপর বহু জল গড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রায় ৭ বছর রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা পরিচালনা করেছেন। তার সরকার শান্তিচুক্তির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজও করেছেন কিন্তু আদিবাসীদের শান্তি ফিরছে না।
আদিবাসীরা কিছু চেয়ে বারবার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে-এই চাওয়াগুলো পুরণ হলে-পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে-হাসবে বাংলাদেশের পাহাড়ী জনপদের সমৃদ্ধ সবুজাভাঙ্গন।
এই সেই চাওয়াগুলো------------
*তাদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের আইনগত স্বীকৃতি প্রদানসহ ভূমি অধিকার রক্ষায় সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন এবং নির্বিচারে আদিবাসীদের ভূমি অধিগ্রহণ বন্ধ করা।
সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা।
*১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনতিবিলম্বে কার্যকর করা এবং সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা নিরসনের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা।
*পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের পাহাড়ী আদিবাসীদের প্রতি অসহিষ্ণু আচরণ বন্ধ করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির পরই ভূমি জরিপের ব্যবস্থা করা।
*পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ী -বাঙালি বিরোধের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং যেসব বাঙালি সেটেলার স্বেচ্ছায় অন্যত্র চলে যেতে চান তাদের দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
*আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় আইএলও কনভেনশন ১০৭ বাস্তবায়ন, আইএলও কনভেনশন ১৬৯ এবং আদিবাসী অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র অনুস্বাক্ষরের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।
*পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ, ভূমিগ্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং ভূমি অফিসের এক শ্রেণীর অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্র্তৃক আদিবাসীদের হয়রানি বন্ধ করা।
*১৯২৭ সালের বন আইনের সংশোধন এবং বর্তমান বন আইনের অপব্যবহার করে বন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক আদিবাসীদের হয়রানি বন্ধ করা।
*আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রবেশাধিকারসহ সকল ক্ষেত্রে আদিবাসীদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করা।
*আদিবাসীদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও তাদের সন্তানদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
*আদিবাসীদের যে সব সম্পত্তি অন্যায়ভাবে অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, তা অবিলম্বে অবমুক্ত করে আদিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করা।
*পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অন্যান্য আদিবাসী এলাকায় নারী, কিশোরীসহ সকলের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা প্রদান করা এবং পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশের আদিবাসী বিদ্বেষী পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ বন্ধ করা।
*মধুপুরসহ বন এলাকায় গারোসহ সব আদিবাসী বিরোধী হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা।
*খাসজমি বন্দোবস্ত নীতিমালার অগ্রধিকার তালিকায় সমতলের ভূমিহীন আদিবাসীদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা ।
*রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাসত্ত্ব আইন-১৯৫০ এর ৯৭ ধারায় উল্লেখিত আদিবাসীদের অসম্পূর্ণ তালিকায় বাংলাদেশে বসবাসরত সকল আদিবাসী গোষ্ঠীর নাম অন্তর্ভূক্ত করা।
বর্তমান বাংলাদেশ তার মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ পুণ:প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রত। সুপ্রীমকোর্ট সম্প্রতি তার এক রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছেন যার মাধ্যমে বাংলাদেশ তার মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক নীতি অবস্থানে ফিরে যাবে বলে দেশের আদিবাসীসহ সর্বস্তরের মানুষ আশা করছেন। এমন অবস্থায় সরকার বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতি ও অবস্থানের উপর ভিত্তি করে আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন নয়; বরং আরও জোরদার করবেন এটাই আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর প্রত্যাশা।
মন্তব্য
"আমরা" কী চাই হে?
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
নতুন মন্তব্য করুন