[সামহোয়্যারইনব্লগ এ প্রকাশিত...০৭ ই জুলাই, ২০০৬]
আমাদের সিঁড়িকোঠায় একটা বিড়াল থাকতো।একবার বিড়ালটা বেশ কয়েকটা বাচ্চা বিয়ালো;বাচ্চাগুলো সারাদিন ট্যাঁট্যাঁ করে কাঁদে,অবিকল মানুষের বাচ্চার মতন স্বর।মা বিড়ালটা আমাদের খাওয়ার সময় কার্নিশে অপেক্ষায় থাকে;মাছের কাঁটাটা,খাবারের এঁটোটা সযত্নেকুড়ায়ে নিয়ে যায়..বাচ্চাগুলোও মায়ের স্তনে আর এঁটো-কাঁটা খেয়ে কয়েকদিনেই দিব্যি পুষ্ট হয়ে ওঠে,ওদের কান্নার শব্দ আর শোনা যায়না..
কি আশ্চর্য!কয়েকদিন বাদেই আবার অবিকল ট্যাঁ ট্যাঁ কান্না শুনে একটু চমকে উঠলাম।আমাদের সীমানার ওপারেই কয়েকঘর বস্তি; জানলাম, সেখানেই নাকি এসেছে এক নবজাতক-"সুতীব্র চিৎকারে" তাই সে আমাদের জানাতে চায় তার পদার্পণের সংবাদ..(হায়রে অবোধ শিশু! আরেকটু বড় হলেই বুঝতা,তোমার জন্ম অথবা মৃত্যুর সংবাদে আমরা ভদ্রলোকদের কিছুই আসে যায়না)..
মাসখানেক গত হয়ে গেল,'মানুষের বাচ্চা' টার ট্যাঁট্যাঁ আওয়াজ আর থামেনা..থামবেই বা কি করে?অপুষ্ট মা'র মুখেও পথ্য নাই,বুকেও দুধ নাই-দুধের শিশু কি আর তা বুঝে?আস্তে আস্তেহয়তোবা চ্যাঁচানোর জোরটা ক্ষীণ হয়ে আসছিলো,আমার কানে অবশ্য ধরা পড়ে নাই..বস্তি থেকে তো কত রকম চেঁচামেচি ই কানে আসে-আমি তখন আস্তে করে স্টেরিও'র ভল্যুম বাড়ায় দিতাম..
তারপর একদিন আওয়াজটা একদম থেমে গেল।না,আমি নিজে থেকে উৎসাহী হয়ে খবর নিতে যাই নাই,শুনতে পেলাম যে-বাচ্চাটা নাকি পৃথিবীর মায়া কাটায়ে ফেলছে(সামনে না জানি আরো কত সাঙ্ঘাতিক মায়া অপেক্ষা করছিল!!)..কিভাবে মায়া কাটালো-অতদূর পর্যন্ত অবশ্য আমি আর খোঁজ নিতে যাই নাই।মারি ও মড়ক,এবং আরো কতভাবেই না এইসব ছোটলোক মানুষের বাচ্চারা পৃথিবীর মায়া কাটায়!!আমরা ভদ্রলোকরা শুধু গান শুনি,গান গাই,কবিতা লিখি-এইভাবে পৃথিবীর মায়া বাড়াই..
বেচারা!! বিড়ালের বাচ্চাগুলো পর্যন্ত এঁটো-কাঁটা খেয়ে টিকে গেল,আর তুই কিনা মানুষের বাচ্চা হয়ে টেঁসে গেলি?
পাদটীকা:দুইটা হাদীস জানতাম( আমার জানায়ভুল ও থাকতে পারে..)
১."তোমাদের সামনে,পিছনে,ডানে,বাঁয়ে চল্লিশ ঘর পর্যন্ত তোমাদের প্রতিবেশী।"
২."যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে নিদ্রা যায়,সে ব্যক্তি আমার উপর ঈমান আনে নাই।"
দোয়া করি,হাদীস দুইটা যেন সহীহ হাদীস না হয়!!!
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন