[সামহোয়্যারইনব্লগ এ প্রকাশিত...১৫ ই জানুয়ারি, ২০০৭]
আমার বৌভাতের দিনের গল্প বলি।ঝলমলে শহুরে কমিউনিটি সেন্টার, লহরে লহরে টুনিবাতির আলোয় চোখ ধাঁধানো..নেপথ্যে সানাইয়ের সুর, ভারী অলঙ্কার আর দামী পরিচ্ছদের যতসব অতিথিদের আনাগোনা।আমি যথাসম্ভব বিগলিত চেহারা নিয়ে অভ্যাগতদের সমাদর আর আপ্যায়নে ব্যস্ত,ব্যাতিব্যস্ত।শ্বশুরকুলের অচেনা সব আত্মীয় দের সাথে তেলতেলে হাসি দেয়ার চেষ্টা করছি আর তাদের প্লেটে জোর করে দ্বিতীয় মুরগীর রোস্ট তুলে দিচ্ছি।মাঝেমাঝেই আবার ততোধিক তেলতেলে চেহারা করে ক্যামেরাম্যানদের সামনেও পোজ দিতে হচ্ছে;বিভিন্ন অতিথিদের সাথে..
প্রীচিভোজের পাট চুকায়ে ম্যানেজারের সাথে গেলাম বাবুর্চিদের হিসাব বুঝে নিতে।মাংস-পোলাও বেঁচে গেছে অঢেল, বেঁচে যাওয়া রোস্ট এর সংখ্যাও নেহাত মন্দ নয়।আমার অযাচিত অতি-আপ্যায়নের ফলে অতিথিরা খাবার নষ্ট করেছেন প্রচুর, এখানে-সেখানে এঁটো খাবার জমে আছে স্তূপের আকারে।
হঠাৎ চোখ পড়ল প্যান্ডেলের বাইরে বসে থাকা জনা-তিরিশেক কালো কালো মানুষের দিকে। বিয়েবাড়ির আলোর ছটায় জমাট অন্ধকারটা সেখানে কিছুটা ফিকে হয়ে আসা;সেই অদ্ভুত আলোয় কালো মানুষগুলোকে আরো নিকষ কালো দ্যাখায়। কালো কালো শিশু;আদুল গা,নাক দিয়ে শিকনি পড়ছে গড়ায়ে গড়ায়ে।কালো কালো নারী; ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি পরনে, সেই শাড়ির তালিগুলো অন্ধকারেও চোখ এড়ায় না।কালো কালো বৃদ্ধ-বৃদ্ধা; হাতের লাঠি মাটিতে শোওয়ায়ে অপেক্ষা করছে তীর্থের কাকের মত।এক পলক তাকায়েই আমি চোখ ফিরায়ে নিই মাংস আর পোলাও এর দিকে।
বেঁচে যাওয়া পোলাও-মাংস আর রোস্টগুলো আগামীকাল সকালের নাস্তার জন্য গাড়িতে তুলে ফেলতে বলি।ঠিক তখনি আমার খুব মহানুভব হতে ইচ্ছে করে।গলায় যথেষ্ট মমতা মিশিয়ে ম্যানেজারকে বলি-"এই এঁটো খাবারগুলো ফেলে না দিয়ে বরং ঐ ফকিরনীদেরকে দিয়ে দেন।কিন্তু দেখবেন, ফকিরনীরা যেন গেটের সামনে ভীড় করতে না পারে।" তারপর,নিজের ঔদার্যে নিজেই সন্তুষ্ট হয়ে প্রসন্নচিত্তে রওনা দেই গাড়ির দিকে।
গাড়িতে উঠে মনটা একটু খুঁতখুঁত করছিলো-বেঁচে যাওয়া খাবারগুলা ঐ কালো মানুষদের দিয়ে আসলে খারাপ হতোনা।আবার নিজেকেই সান্তনা দিলাম-থাক,ভালোই হয়েছে;'কুত্তার পেটে ঘি সয়না'।ঐসব ফকিরনীর পেট আর কুত্তার পেটে আর এমন কি তফাত!তাই ঘিয়ে রান্না করা পোলাও ওদের পেটে সহ্য হতোনা বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।যাক,আজকের এই শুভদিনে যথেষ্ট ভালো কাজ করা হয়েছে,আপাতত আর ঐসব ফকিরনীদের কথা না ভাবলেও চলবে।আমি বরং প্রগলভ শ্যালক-শ্যালিকাদের সাথে করণীয় স্থূল রসিকতা নিয়ে ভাবতে থাকি,আমি বরং বউয়ের সাথে ফুলশয্যার মৈথুন নিয়ে ভাবতে থাকি..
পাদটীকা:কানাডা প্রবাসীমরিয়ম আক্তার ও নুর মাহমুদ খান বিয়ে করে আমাকে বিষম লজ্জায় ফেলে দিয়েছে।মরিয়মের বাবা আত্মীয়-স্বজনদের অনুরোধ জানান,"বর-কনের ইচ্ছা,তারা বিয়ের সব উপহার এসিডদগ্ধ নারীদের জন্য প্রথম আলো সহায়ক তহবিলে দান করবে।তাই উপহার দিলে যেন নগদ টাকা দেয়া হয়।"বেশির ভাগ আত্মীয়-স্বজন নবদম্পতির ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানান।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন