মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলা তুলে নেয়া হোক !!

থার্ড আই এর ছবি
লিখেছেন থার্ড আই (তারিখ: মঙ্গল, ১৮/১২/২০০৭ - ৭:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনি ও গোলাম মোস্তফাকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করার অভিযোগে জামায়েত ইসলামীর আমির মোহাম্মদ মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারী জেনারেল আলী হাসান মোহাম্মদ মুজাহিদ সহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মুক্তি যুদ্ধা হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঢাকা জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার মোজাফ্ফর আহমেদ খান ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল মেজিষ্ট্রেটের আদালতে এই মামলা দায়ের করেন।
রাজাকার- আলবদর বাহিনীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর নির্দেশেই ঐমুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়।

এটি কোন যুদ্ধাপরাধী মামলা নয় !! খেয়াল করতে হবে এটি মুক্তিযুদ্ধা হত্যা মামলা মাত্র !!
এটিই প্রথম মামলা নয় , ইতিপূর্বে মুজাহিদ- কাদের ও হান্নানের বিরুদ্ধেও তাঁতী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা মহ্নগর আওয়ামীলীগের সাবেক তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক ফজলুর রহমান আরেকটি মামলা দায়ের করেছিলেন, ঐমামলার অভিযুক্তরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বির্তকিত বক্তব্য রাখায় তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা করা হয়েছে।

এতটুকু পর্যন্ত খবর। এখন আসেন বাবার দরবারে। একটু গনকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হই। জোর্তিবিদ্যায় আমার কোন পারদর্শিতা নেই,কিংবা হস্তরেখা বিদ্যায় ও আমার অতীত রেকর্ড নেই। তবুও আমার মনে হচ্ছে, এই মামলা দুইটা হয় স্থবির হয়ে যাবে ,অন্যথায় মামলায় যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ প্রমানকরা যাবেনা!! হত্যা মামলা আর যুদ্ধ অপরাধ এক কথা নয় ।

যদি এই দুটি সম্ভাবনার প্রথমটি সত্য হয় তাহলে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীরা আবার তর্জণ গর্জন শুরু করবে। মামলাটি যেহেতু বিচারাধীন তাই তাদেরকে অপরাধী বলা যাবেনা। যেহেতু অপরাধীদের দৃষ্টিতে যুদ্ধ অপরাধ বিষয়টি এখন্ও প্রমানিত নয় তার মানে তারা ধোঁয়া তুলসি পাতা !!

অন্যদিকে যদি মামলাগুলোতে যদি নিজামী-মুজাহিদ গংরা জিতে যায় তবে আর কোন দিন্ও আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এই দেশে করতে পারবো না। বদর বদর বলে তারা তাকবির দিয়ে যুদ্ধাপরাধকে যায়েজ করে ফেলবে। বলবে, আমরা আদালত থেকে নির্দোষ প্রমানিত হয়েছি !!

এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে কেন আমার মনে হচ্ছে মামলা বিলম্বিত হবে?? ইতিপুর্বে আইন উপদেষ্টা মইনুল হোসেন, পূর্ববর্তী সরকার গুলোর যারা এর বিচার করে নাই তাদের বিচারের প্রশ্ন তুলেছেন এবং বর্তমান সরকারের কোন সদিচ্ছা আছে বলে তার প্রমান এখনও পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না তাই সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে!!

সবচে’ বড় কিন্তু টা হচ্ছে, যখন বাংলাদেশের সব কটি রাজণৈতিক দল, মুক্তিযোদ্ধ, সুশিল সমাজ, বুদ্ধিজীবী সব শ্রেনী পেশার মানুষ বলছে যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার বিশেষ ট্রাইবুনালে করতে হবে এবং সরকারকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে। তখন একটি মাত্র রাজনৈতিক দল -জামায়েত ইসলামীকে রক্ষা করতে গিয়ে মইন উ আহমেদের সরকার কোন টু শব্দ করছেনা !!!

মতলবটা আসলে কি ??

তার অর্থ হলো বিচার বিভাগ স্বাধীন হলেও সরকার এই মামলাকে প্ররোচিত করবে।

এ মামলার রায় নিশ্চিতভাবে রাজাকারদের পক্ষে যাবে। এই মামলা ফলপ্রসূ করতে হলে রাষ্ট্রকেই করতে হবে। তুলে নিতে হবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে করা মামলাগুলো অথবা ব্যক্তিগত মামলার পাশাপাশি রাষ্ট্রকে মামলা করতে বাধ্যকরাটাই হবে এখনকার সবচেয়ে বড় যুদ্ধ।
তাই দেশ জুড়ে মামলা হবে একটি এবং অবশ্যই সেটি হতে হবে রাষ্ট্রীয় উদ্যেগে। সকল রাজাকাররা একই অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন।

সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের সাথে বেশ কয়েকটি আলোচনা ফলপ্রসু হয়েছে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন আলোচনার মাধ্যমে ফলাফল এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মুক্তির বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা হয়েছে। সবক’টি রাজনৈতিক দল একজোট হয়ে, মুক্তি যোদ্ধারা সমন্বিত ভাবে সোচ্চার হয়ে , লেখক, বুদ্ধিজীবী সংস্কৃতিকর্মীদের একটা বলিষ্ট ভুমিকা নিয়ে সরকারকে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলাটির দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রয়োজনে আলোচনা হতেই পাবে । যথা শ্রীঘ্র এই উদ্যোগ নিয়ে সরকারকে বাধ্য করতেই হবে।

তবেই ’৭১ এর যুদ্ধঅপরাধীদের বিচার করা সম্ভব। অন্যথায় গভীর রাতে কোন একদিন এসে হয়তো ঘাতকেরা মোজাফ্ফর আহমেদের রগকেটে ফেলে রেখে যাবে...

তখন হয়তো মোজাফ্ফর আহমেদের উত্তরসূরীদের তার পিতা হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে আরো ৩৬ বছর কেটে যাবে...


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

শুধুই দীর্ঘশ্বাস - - -

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

রাজাকাররা আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার মত প্রহসন ঘটলেও সেটা বাঙালি কখনো মেনে নিবে না। তাদের কুকীর্তি সবার চোখের সামনেই ঘটেছে। আদালতের সার্টিফিকেট দিয়ে সেই কুকীর্তির কথা ভুলিয়ে দেয়া যাবে না। তাদেরকে বিচারের সম্মুখীন করতেই হবে এবং সে দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অয়ন এর ছবি

আদালতের সার্টিফিকেট দিয়ে সেই কুকীর্তির কথা ভুলিয়ে দেয়া যাবে না।
বলাইদা , রাজাকারদের কুকীর্তি আমার বাবার চোখের সামনে ঘটেছে, আমার সামনে ঘটে নি। আমার বাবার পক্ষে ৭১ এর ঘটনাগুলো আমাকে বিশ্বাস করানো যতটা সহজ আমার পক্ষে আমার পরবর্তী প্রজন্মকে তা বিশ্বাস করানোটা ততটা সহজ হবে না। ন্যূরেমবার্গে ইহুদী হত্যার জন্য অনেক নাজীর বিচার এবং শাস্তি হচ্ছে তারপরও কিন্তু অনেক গবেষক নানারকম গবেষণা করে প্রমাণ করেন যে কোন ইহুদী নিধন হয়নি। যুদ্ধাপরাধ নিয়ে কোন মামলা হওয়ার আগেই নাগরিকত্ব বিষয়ক মামলার রায় নিয়ে বাংলাদেশে রাজাকারদের আর তার ছানাপোনাদের যে পরিমাণ ফালাফালি দেখা যায়, যদি কোনভাবে যুদ্ধাপরাধের কোন মামলায় খালাস পায় তাহলে এদের দৌরাত্ম কোথায় যাবে সেটা চিন্তা করাই কঠিন এবং তাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে আমাদের পরের প্রজন্ম ।

থার্ড আই এর ছবি

অয়ন আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার সাথে আমিও একমত ।তবে আরো একটু্ যোগ করতে চাই ,গোলাম আজমকে নাগরিকত্ব দেয়ার ব্যপারে আমারদের বিরোধীতা ছিলো। গোলাম আজম স্বাধীনতার বিরোধীতা করে স্বাধীণ দেশে নাগরিকত্ব পেয়েছে । এখন ধীরে ধীরে আমরা সেই ইতিহাস ভুলতে বসেছি............ আমাদের আর এখন আক্ষেপ হয় না তাকে কেন নাগরিকত্ব দেয়া হলো!!!!
এভাবে আজকে যদি সেই গোলাম আজম গংরাই আদালত থেকে খালাস পেয়ে যায় তাহলে আমাদের নতুন প্রজন্ম আদালতের সেই প্রহসনের রায় নিয়ে নতুন করে ভুল ইতিহাস শিখবে।
----------------------------------
জল ভরো সুন্দরী কইন্যা, জলে দিছ ঢেউ।
হাসি মুখে কওনা কথা সঙ্গে নাই মোর কেউ।

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

অতিথি লেখক এর ছবি

মাঝে মাঝে মনে হয় এসব মামলা করে মূল ঘটনাকে অন্য দিকে নিয়ে যাবার একটা প্রচেষ্টা! মামলা একটাই হবে, সেটা রাষ্ট্র করবে বিশেষ ট্রাইবুনালে এবং সব 'বিগ গানস' (রাজাকার) রা এর আসামী হতে হবে!

পুতুল এর ছবি

আমিও ভরসা পাইনা, আপনার আশংকা যে অমূলক নয়, তা তো দেখলাম। হায়রে প্রহশণ...!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

দূর্বল ১০টা অভিযোগের চে' ১টা শক্তিশালী মামলার আমিও পক্ষপাতি।

থার্ড আই এর ছবি

এখন আমাদের আন্দোলন একটাই হওয়া উচিত।
দেশ জুড়ে এক মামলা। সেটি অবশ্যই রাষ্ট্রীয় উদ্যেগে। সংগঠিত হয়ে জলপাই মামারে সেই মামলা করতে বাধ্য করতে হবে।
---------------------------------
জল ভরো সুন্দরী কইন্যা, জলে দিছ ঢেউ।
হাসি মুখে কওনা কথা সঙ্গে নাই মোর কেউ।

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

আড্ডাবাজ এর ছবি

ঠিকই, মামলা তুলে নেওয়া হোক। আর্মী জানে, পলিটিক্যাল পাবলিকরে কিছুদিন ব্যস্ত রাখা দরকার। বিচার টিচার কিছু হবে না, বছর ঘুরে দেখা যাবে (অব:) জেনারেলরা ক্ষমতার চেয়ারে বসে হাসছে, আর দুর্মুখা মুজাহিদ পানের বাটা এগিয়ে দিচ্ছে। সময় বদলায়, কিন্তু শুধু বদলায় না জলপাই মামাদের নকশা। সেই নকশায় এগোচ্ছে স্বদেশ। ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।