"কোন স্বত্বাধিকার নয়, এই ইতিহাস আমাদের জাতীয় গৌরব ও সম্পদ"

থার্ড আই এর ছবি
লিখেছেন থার্ড আই (তারিখ: শুক্র, ২৮/০৩/২০০৮ - ৯:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের জালাল ভাইকোন স্বত্বাধিকার নয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের জাতীয় গৌরব ও সম্পদ এমনটাই মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের চলমান বিশ্বকোষ এম আর আর জালাল। সারা দেশের মানুষর জন্য যেমন তিনি তার মুক্তিযুদ্ধের অফুরন্ত সংগ্রহ ভান্ডারের দুয়ার খুলে দিয়েছেন, তেমনি আবেগ উজার করেছেন সচলায়তনের জন্যও। সম্প্রতি অর্ন্তজাল ভিত্তিক বাংলা সংবাদ পত্র নিউজ বাংলার পক্ষ থেকে আমাদের প্রিয় জালাল ভাইয়ের একটি একান্ত সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে। সচল ভক্তদের জন্য সেই সাক্ষাতকারটি তুলে দিলাম।

---------------------------------------------------------

দু:খজনক হলেও সত্য যে স্বাধীনতার ৩৭ বছর পর আমরা এখনও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ চিত্র খুঁজে পাচ্ছি না। ইতিহাস সংরক্ষণের আমাদের প্রচেস্টা পরিকল্পিত এবং সংগঠিত নয়। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য তথ্যগুলোর ইলেকট্রনিক সংরক্ষণে সফল দৃস্টান্ত স্থাপন করেছেন টেক্সাস প্রবাসী এম এম আর জালাল। নিউজ বাংলার পক্ষ থেকে আমরা তার একান্ত সাক্ষাতকার গ্রহণ করি। এন ওয়াই বাংলার নিউজ সাইটে এ সপ্তাহ ১৯৭১ হচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের তার অবদানের প্রামাণ্য দলিল। এই আত্মপ্রচারবিমূখ মানুষটি নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গৌরবময় পাতাগুলোকে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করে রাখতে।

নিউজ বাংলা: কিভাবে শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রহে আপনার উদ্যোগ?
এম এম আর জালাল: মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি তরুণ। ছিলাম রাজবাড়ীর পানশা উপজেলায়। যুদ্ধের স্মৃতি ছিল একান্ত গ্রামের সীমার মধ্যে। বড়ো তিন ভাই চলে গিয়েছিল রণাঙ্গণে। তখন থেকে ভাবনা চেপে বসল এদেশের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবজনক ইতিহাস কিভাবে সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা যায়।

নিউজ বাংলা: শুরুটা কেমন ছিল?
এম এম আর জালাল: শুরুতে দেশের পত্র পত্রিকার পুরনো কপি সংগ্রহ শুরু করি। তারপর বড়ো ভাইয়েরা সাহায্য করেন বাইরের থেকে নিউজ উইক, টাইমসের কপি সংগ্রহ করতে। এটা শুধু আমার নিজের জানার জন্য ছিল না। আমি জানাতে চাচ্ছিলাম আর সবাইকে একেবারে মূল সংগ্রহকপি থেকে। কোন ভাষান্তর নয়, কোন বিকৃতি নয়। পরিবর্তনহীনভাবে সকল দলিলগুলো সবার কাছে তুলে ধরার আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছে প্রবল হতে থাকল।

নিউজ বাংলা: আপনার সংগ্রহে সবচেয়ে বড়ো সাফল্য শুরু হলো কখন থেকে?
এম এম আর জালাল: আমার সবচেয়ে সাফল্য শুরু হলো ১৯৮৮ সাল থেকে। আমি আমেরিকায় চরে আসি। আমার সংগ্রহের প্রচেস্টা নতুন মোমেন্টাম পায়। দেশের নামকরা লাইব্রেরীতে গেলে যেখানে ৭১এর পত্রিকার পাতাগুলো সব হারিয়ে গেছে। অনেক সময় দেখা যায়, নির্দিস্ট খবরগুলো কেটে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আমেরিকায় আমি বিনা বাধায় সবগুলো বড়ো নিউজ মিডিয়ার আর্কাইভে ৭১ সম্পর্কে খবরগুলো সংগ্রহ শুরু করি।

নিউজ বাংলা: আপনার সংগ্রহে কি ধরণের ডকুমেন্ট আছে?
এম এম আর জালাল: নিউইয়র্ক টাইমস, শিকাগো ট্রিবিউন, ওয়াশিংটন পোস্ট, এলএটাইমস, বাল্টিমোর সান, নিউজ উইক, টাইম, ফার ইস্টার্ন ইকনোমিক রিভিউ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নিয়ে সকল রিপোর্টিং আমার সংগ্রহে আছে। পাকিস্তানের ডন পত্রিকাও আমার সংগ্রহে আছে। আছে তখনকার কংগ্রেশনাল হেয়ারিং-এর কপি। মুক্তিযুদ্ধের উপর নিজের সংগ্রহে বাংলা বই আছে ১৫০টি। ইংরেজী বই আছে প্রায় আড়াইশত। কিছু উর্দু বই আছে। বিভিন্ন বই নিউজ আইটেম সংগ্রহে আমি আমার শ্বশুর পক্ষের আত্মীয়দের কাছে ঋণী। লাইব্রেরী অব কংগ্রেস থেকে পাকিস্তানী পত্রিকার সংগ্রহে মাশুকুর রহমান অনেক সাহায্য করেছে।

নিউজ বাংলা: সংগ্রহগুলোর মাধ্যমে আপনি কি জানাতে চান?
এম এম আর জালাল : মুক্তিযুদ্ধের এসব প্রামাণ্য তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে আমি প্রকৃত ইতিহাসকে অবিকৃতভাবে তুলে ধরতে চাই। আমরা শুধু বীরত্বের কথা শুনতে চাই না। আমরা জানতে চাই কারা এই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। জানাতে চাই ৭১ সালে পীস কমিটি, রাজাকার, আল বদল, আল শামস, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামীর নেতারা কি বলেছিল আর কি করেছিল।

নিউজ বাংলা: আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
এম এম আর জালাল: আমি চাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সকলের হাতের নাগালে নিয়ে আসতে। এই গৌরবজনক ইতিহাসের ডিজিটাল কপি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই। কোন স্বত্বাধিকার নয়, এই ইতিহাস আমাদের জাতীয় গৌরব ও সম্পদ। এতে সবার অংশ ও অধিকার রয়েছে। "সেন্টার ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড রিসার্চ" নামে একটি ননপ্রফিট স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে আমার ব্যক্তিগত প্রচেস্টাকে সাংগঠনিকভাবে সফল করতে সাহায্য করবে।


মন্তব্য

তানভীর এর ছবি

আরে ছবিতে জালাল ভাইকে তো হেভি ইয়াং লাগছে হাসি
স্যালুট বস।

=============
"কথা বল আমার ভাষায়, আমার রক্তে।"

থার্ড আই এর ছবি

ইর্ন্টাভ্যু দেওনের আগে ওনি এট্টু মেকাপ নিছিলেন।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

বিপ্লব রহমান এর ছবি

জালাল ভাইয়ের ইমেইলের লিঙ্ক থেকে সাক্ষাৎকারটি গত রাতে পড়েছিলাম। আজ এই পোস্টে সেটা আবারো পড়লাম।...

শাবাশ জালাল ভাই! আপনার সর্বাত্নক সাফল্য কামনা!


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

তারেক এর ছবি

পড়লাম হাসি
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ছবি দেখে মনে হচ্ছে ভদ্রলোককে চিনি। চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

জাহিদ হোসেন এর ছবি

জালাল ভাইকে অভিনন্দন। একদিন সত্য প্রকাশ পাবেই।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

আড্ডাবাজ এর ছবি

জালাল ভাই,
আপনি এরকম চমতকার একটা সাক্ষাতকার দিয়ে সুশীল হয়ে গেলেন। এখনতো আপনাকে নিয়ে শুরু হবে টানাটানি। তবে আপনাকে ক্লোন করে আরও ক'টা জালাল ভাই বের করা যায় কি না তা ভেবে দেখার ভার সাইনটিস্টদের হাতে ছেড়ে দিলাম। আপনি ঢাকায় আসলে আওয়াজ দেবেন। নিজের হাতে টাঙাইলের চমচম কিনে খাওয়াব।

আপনার সুদীর্ঘ জীবন কামনা করি।

অন্ধকারের উতস হতে উতসারিত আলো

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কোনো সত্বাধিকার নয়
এ ইতিহাস আমাদের জাতীয় গৌরব ও সম্পদ

যারা এ নিয়ে কাজ করছেন তারাও

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।