১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের এশিয়ান সাংবাদিকদের এত ভীর গত নয় বছরে দেখেনি নিরাপত্তা রক্ষীরা। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হলো তাদের তথ্য যাচাইয়ের জন্য। কি চাই , কেন ভেতরে যেতে চাই ইত্যাদি প্রশ্নের ফাঁকে ফাঁকে ভয়ে ভয়ে এম ১৬ বন্দুকটি নজরে আসছে বারে বারে। ডাউনিং স্ট্রিটের দরজায় ২০ মিনিট অপেক্ষার পর সাংবাদিকদের তালিকা আসলো। নিরাপত্তা তল্লাসীর পর সেই কাঙ্খিত দরজার সামনে অপেক্ষা। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ডঃ ফখরুদ্দীন আহমেদ ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের সাথে সাক্ষাত করবেন। তাই এতো আয়োজন আমাদের। বেলা তিনটায় মাননীয় উপদেষ্টার বৈঠকের নির্ধারিত সময় নির্ধারন করা ছিলো বিধায় বাড়তি আধ ঘন্টা সময় কেটেছে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের ফটকের ছবি তুলে নিজের স্বরনীয় মূহুর্তকে ফ্রেম বন্ধী করে রাখতে। এর আগে বহু বার এই ফটকের সামনে আসা হয়েছে কিন্তু এবারের অপেক্ষা খানিকটা ভিন্ন। সয়ং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা আসছেন, বিগত নয় বছর যেখানে বাংলাদেশের কোন রাষ্ট্রনায়কের পদচিহ্ন পড়েনি। তাই প্রত্যাশার পাল্লাটা বেশ ভারী হবারই কথা। কালো রঙ্গের মার্সিডিস কারে করে উপদেষ্টা ও বিএম ডব্লিউতে করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইফতেষার চৌধুরী , উপদেষ্টার প্রেস সচিব ফাহিম মুনায়েম, বৃটেনে নিযুক্ত হাই কমিশনার সফি ইউ আহমেদ, হাই কমিশনের প্রেস ও পলিটিক্যাল সেক্রেটারী সাঈদা মুনা ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে প্রবেশ করলেন।
দরজা বন্ধ হলো, দুই দেশের রাষ্ট্র প্রধানদ্বয় আলাপ করলেন প্রায় আধ ঘন্টা। এর মধ্যে অনেক কিছূ পেয়েছে বাংলাদেশ এরমধ্যে ৫০ মিলিয়ন অর্থ সাহায্য অন্যতম। প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরের তিন দিনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির পাল্লাটা কতখানি ভারি সেই দিকে বেশী নজর দেবো আজ। প্রথম দিনেই প্রধান উপদেষ্টা লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল মিলনায়তনে প্রবাসী বাংলাদেশীদেও সাথে আলোচনা কালে প্রবাসীরা যে বিষয়গুলোর প্রতি উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন তার একটি উপদেষ্টা লন্ডনে থাকা অবস্থায় বাস্তবায়নের প্রজ্ঞাপন চলে এসেছে। সাধুবাদ দিতেই হয়। প্রবাসীদেও দীর্ঘ দিনের প্রানের দাবী দ্বৈত নাগরিকত্বে বিয়য়ে এতদিনে অনিশ্চয়তা কাটলো। যুক্তরাজ্যেও নাগরিকত্ব পেলেও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বহাল থাকবে। সব কিছু বাদ দিলে এই অর্জনটিকেই প্রবাসীরা অনেক বড় করে দেখছে। তবে প্রবাসীদের ভোটাধীকারের ব্যপারে সরকারের সিদ্ধান্ত নির্বাচনের আগেই ঘোষনা শুনতে চায় প্রবাসীরা। ইতিপর্বে সেনা প্রধান মঈন ইউ আহমেদেও সফর কালে বিলেত প্রবাসীদের অন্যতম দাবী ছিলো সুরোত হত্যা মামলার সুরাহা করা। সেনা প্রধান এবিষয়ে আশ্বাস দিলের কার্যত তার কোন ফলাফল বিগত দিনে দেখতে পায়নি প্রবাসীরা। গত কয়েক বছরে বিলেতে বাঙালিদের মালিকানাধীন রেষ্টুওরেন্ট গুলো প্রচুর স্টাফ সংকটে ভুগছে, অনেক রেষ্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন ইমিগ্রেশন আইনে ব্রিটিশ সরকার ইংরেজী জানা দক্ষ স্টাফ ও ইউরোপিয়া ইউনিয়নভূক্ত দেশের নাগরিকদেও চাকুরি দিতে বিধি নিষেধ আরোপ করায় রেষ্টুরেণ্ট ব্যবসা প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। ব্রাউনের সঙ্গে আলোচনায় উপদেষ্টা এই বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়েছেন , এবং সিলেটে পূর্ণাঙ্গ ক্যাটারিং ইষ্টটিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের কথা ও জানা গেছে, এটাও অনেক আশার কথা। জলবায়ুগত পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দূর্যোগের কথাও আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো।
কিন্তু কিছু হতাশার কথা আমি যুক্ত করবো। আশা করি সরকার এই বিষয়গুলোকে ও তালিকাভুক্ত করে গুরত্বের সাথে বিবেচনা করবেন।
নতুন পয়েণ্ট ভিত্তিক ইমিগ্রেশন নীতিমালায় অনেক বাংলাদেশীই ব্রিটেনে কাজের সুবিধা হারাবে। প্রথমত ইংরেজী জ্ঞানের অভাব. দ্বিতীয়ত নিদিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব। রেষ্টুরেন্ট শেফ হতে হলে ইংরেজী জানতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা মানতে না রাজ রেষ্টুওরেন্ট ব্যবসায়ীরা, এখানে কাজের দক্ষতাটাই জরুরী, অন্যদিকে সরকার বলছে ব্রিটেনে আসতে হলে ইংরেজী জানতেই হবে। অতি শিঘ্রই কেটারিং ইন্টষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন তরান্বিত করতে হবে।
ছাত্রদেও কথা বলবো, প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে ব্রিটেনে আসছে, উচ্চ হারে ফিস দিয়ে বিশ্ববিদ্যলয়ে ভর্তি হ্ওয়া শতকরা ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী তার স্বপ্নের ডিগ্রী টি নিতে পারেনা। পড়াশুনা শেষ করতে পারেনা। ১০-১২ লাখ টাকা খরচ করে বিলেতে ডিগ্রী অর্জনের চেয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামটাই তার কাছে মূখ্য হয়ে দ্বাড়ায়। তাই সেসকল শিক্ষাথীরা স্টুডেন্ট ভিসা পাবে তাদের কে সহজ শর্তে কিংবা সুদ মুক্ত ঋণ দেয়া গেলে এই শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে ৬০-৭০ শতাংশকে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী অর্জন করতে সহায়তা করা সম্ভব। ৫ কিংবা ১০ বছরে পড়াশুনা করে সেসব শিক্ষার্থীরা সরকারের সেই অর্থ ফেরত দিতে পারবে অনায়াসে । অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় হতে গ্রাজুয়েট ডিগ্রী অর্জন করলেই ব্রিটিশ সরকার ওয়ার্ক পারমিট ও দিয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ পাশ করলেই ভালো চাকুরি। এই বিষয়ে বেসরকারী ব্যংক গুলো সহজ শর্তে ঋন সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারে। যেমনটা ব্রিটেনের ব্যাংকগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য ঋন উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
আর গোড়াতেই যেই অসামঞ্জস্যতা এই সমস্যার মুল , সেটি সমাধানের উদ্যোগ নিলেও সরকারের ঋনেরও প্রয়োজন হবেনা। ব্রিটেনে যেখানে হোম স্টুডেন্টদের বেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী ৩ হাজার পাউন্ড সেই ডিগ্রী নিতে আন্তজার্তিক শিক্ষার্থীদের বেলায় ৭/৮ হাজার পাউন্ড ! উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক সামর্থেও উপর বিবেচনা করে যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিউশন ফি নির্ধারণ করে তবে শিক্ষার্থীদের ঋণ করে পড়তে হবেনা। হাই স্কিল্ড মাইগ্রেশনের বেলায় বাংলাদেশী কোন আবেদন কারীর ৫ বছরের কাজের দক্ষতার পাশাপাশি মাসিক বেতন হতে হবে প্রায় ১ লক্ষ টাকা !! বাংলাদেশের বেতন কাঠামো অনুযায়ী ৫ বছরে কাজের দক্ষতায় ১ লক্ষ টাকা বেতন অর্জন অনেকটাই স্বপ্ন ! তাহলে কি হাই স্কিল্ড মাইগ্রেশনে ভিসা হচ্ছেনা! হচ্ছে বটে , তবে সেই বেতন কাঠামো আমাদের নীলক্ষেতে তৈরী হচ্ছে। এই যোগ্যতা অর্জনের জন্য দূনীতির ডালপালাও প্রসারিত হবার সুযোগ থাকে।
তাই দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা আলোচনা করে যদি একটি সমঝোতায় আসা যায় , আমাদের দক্ষতা আছে কিনা সেটি তোমরা যাচাই করো, কিন্তু বেতন কাঠামোর উপরে বিধি নিষেধ উঠাতে হবে। ব্যক্তির কাজের দক্ষতা কখনই বেতনের উপর নির্ভর করেনা। বরং দক্ষতার উপরই বেতন কাঠামো নিধারণ হওয়া উচিত। আর বেতন কাঠামো সেই দেশের প্রচালিত নিয়মের বাইরে হবে কেন ?
তরুন প্রজন্মেও ব্রিটিশ বাংলাদেশীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী, তাদের পেশাগত দক্ষতা বাংলাদেশে কাজে লাগানোর জন্য উৎসাহী। তাদের কে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে অংশগ্রহনের সুযোগ দিলে প্রবাসীদের সাথে বাংলাদেশের দুরত্ব অনেকটাই কমে আসবে, এতে উভয়েই লাভবান হবে।
মন্তব্য
গ্রাজুয়েশেন করলে 2 বছর না ১ বছরের পারমিট দিচ্ছে। আর স্কটল্যান্ডে ফ্রেশ টেলেন্ট স্কীমে ২ বছর।
ভাল পোস্ট। কর্তাদের নজর পড়লে হয়।
একটা ভাবনা; এরকম নিউজ ব্লগগুলো অডিও করে দিলে কেমন হয়?
সচলের অডিও অপশনগুলো এখনও আমার কাছে অতটা সহজ মনে হয়না। কতৃপক্ষ অডিও পোস্ট এর বিষয়গুলো আরো সহজ করলে আমার আপত্তি নাই।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
থার্ড আইয়ের তথ্যবহুল পোস্টগুলি কিছুটা মলিন হয়ে যায় টাইপিঙের তাড়াহুড়োয়। স্মরণ, সাক্ষাৎ, দরজা ... শব্দগুলির বানান যদি দয়া করেন শুধরে নিতেন, আমরা সকলে উপকৃত হতাম।
হাঁটুপানির জলদস্যু
বানান বিভ্রাটের জন্য পোস্ট মলিন হয় এই কথা আমি ততীতে অনেক শুনেছি, দায়ও স্বীকার করছি।
তোফাজ্জ্বল হোসেন মানিক মিয়া জানতেন , যুগে যুগে তার মতোন সাংবাদিকরা জন্ম নেবেন এবং বানান ভুল করবেন। তখন থেকেই তিনি প্রুফ রিডারের কথা ভাবছিলেন।
সচলায়তন এই ব্যবস্থা কবে রাখবে যেদিন বানান শুধরানোর জন্য একটা বাটন ক্লিক করলেই সঠিক বানান নির্দেশ করবে ?? সেই দিনের অপেক্ষায় থাকলাম।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
নতুন মন্তব্য করুন