পূর্ব লণ্ডনের সেন্ট মেরিজ পার্কটি কেন আলতাব আলী পার্ক-এ রূপ নিল সেই প্রশ্ন খুঁজতে গেলে ২৯ বছর পিছনে ফিরে যেতে হবে ।
১৯৭৮ ইংরেজী, প্রধানমন্ত্রী জিম কালাহানের শেষ সময়, লৌহ মানবী মার্গারেট থ্রেচারের তর্জন গর্জনে রাজনীতির মাঠ তখন বেশ উত্তপ্ত। বর্ণবাদী হামলার সেই চির চেনা রূপ তখনও স্পষ্ট। তবে হামলার পরিমাণ যতোটা প্রকট গণমাধ্যমে তার ছিঁটেফোটাও প্রকাশ পেতো না।
৫ মে সন্ধ্যা। প্রতিদিনের মতো আলতাব আলী কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। বৃকলেনের অসবোর্ণ স্ট্রিটের সামনে সেন্ট মেরিজ পার্কের পোস্ট অফিস সংলগ্ন মাঠের পাশ দিয়ে যাবার সময় একদল বর্ণবাদী তার উপর আকস্মিক হামলা চালায়। মারাত্মক আহত অবস্থায় আলতাব আলীকে হাসপাতালে নেয়ার পথে সে প্রাণ হারায়।
পেশাগত জীবনে আলতাব আলী দর্জির কাজ করতেন। তার প্রতিবেশী তৎকালীন বৃকলেন জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফার কল্যাণে বাংলাদেশী কমিউনিটি একটি সামগ্রিক আন্দোলনে নামে। বর্ণবাদী বিরোধী সংগঠন এ্যান্টি নাজি লীগ, গ্রেটার লণ্ডন কাউন্সিল, বামপন্থী লেবার কাউন্সিলর কেন লিভিংস্টোন (বর্তমানে লণ্ডনের মেয়র) সহ সহস্রাধীক লোক এক যোগে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট ঘেরাও করে স্মারক লিপি দেয় । নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে, মাত্র তিন মাসের মাথায় পুরো কমিউনিটিতে পালিত হয় হরতাল। ব্রিটেনের ইতিহাসে সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের সমন্বয়ে এটিই ছিলো সবচেয়ে বৃহৎ প্রতিবাদ ।
তারপর সেন্ট মেরিজ নামফলক তুলে সেখানে লেখা হলো আলতাব আলী পার্ক। এখন বিশাল পার্কের মাঝখানে যে অংশে শহীদ মিনার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে, সেখানে আলতাব আলীর রক্ত মিশে আছে । বৃটেনের ইতিহাসে যতদিন বর্ণবাদের ইতিহাস লেখা হবে ততদিন আলতাব আলীর কথা উচ্চারিত হবে।
----- -----
আলতাব আলীর মৃত্যুর তারিখটা আমার জানা ছিলো না, তাই দেরিতে হলেও তার স্মরণে এ লেখা। বর্ণবাদী হামলায় ইতিপূর্বে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের উদ্দেশ্য লেখাটি উৎসর্গ করা হলো।
মন্তব্য
আজ গ্রেট বৃটেনে বাঙ্গালীদের নিজের শহর,সেই শহরে বাংলাভাষায় সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে স্কুল,বাংগালী মেয়র, লর্ড সভার মেম্বার(এবার এমপি ও হবে),প্রায় ১৪ হাজার রেষ্টুরেন্ট টেকওয়ে নিয়ে ফুড ইন্ড্রাস্ট্রি,টিভি চ্যানেল থেকে শুরু এয়ারওয়েজ---- পেছনের গল্পগুলো কিন্তু কয়েকশতকের বর্নবাদের মোকাবেলা ।
এখনো অনেক ষাটসত্তোরোর্ধ মানুষজন পাওয়া যায় যারা ৫০-৬০ এর দশকে এ দেশে এসেছিলেন,বর্নবাদী হামলায় কেউ চোখ, কেউ হাত পা খুঁইয়েছেন সে সময় ।
সেই সব মানুষজনের জন্য শ্রদ্ধা ।
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
লেখার মাঝখানে শহীদ মিনারের ছবিটি জুড়ে দেয়ার জন্য অলৌকিক হাসানকে ধন্যবাদ।
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
ধন্যবাদ।
প্রশ্নটা প্রায়ই মনে হতো ।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
থার্ড আই, অনেক ধন্যবাদ। আরেকটু ডিটেইলে কি জিনিসটা লেখা যায়? খুব খুব দরকারি জিনিস!
মডুবৃন্দ, ব্লগে পড়ার পর কোনো লেখা যদি আমি শহর উপাখ্যানের জন্য জরুরি বিবেচনা করি, সেটা আমি মার্ক করে রেখে দিতে পারব, এমন একটা অপশন উদ্ভাবন করেন না, প্লিজ!
...................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
সময়, তুমি বৃদ্ধ যাযাবর।
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
নাকি সবুজ ডাইনী! দালি সাহেবের ঘড়িটা ধার নিলে কেমন হয়!
...................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
বাহ্। এ ব্যাপারগুলো জানা ছিল না। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
নতুন মন্তব্য করুন