অগতির গতি অথবা বিকলের আবেদন - একটি ‘সম্পূর্ণ’ কাল্পনিক ও কাকতৈলিক কাহিনী

স্নিগ্ধা এর ছবি
লিখেছেন স্নিগ্ধা (তারিখ: মঙ্গল, ২৫/১২/২০০৭ - ৭:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“আমার আর সহ্য হচ্ছে না, আপনাকে এইবেলা আমি সাবধান করে দিলাম পরে একটা কিছু হয়ে গেলে আমাকে দূষবেন না! হাবার মতো হাঁ করে তাকিয়ে দেখছেন টা কি? এক কথা বলে বলে তো মুখে ফেকো উঠে গেল মশাই, তারপরও কানে কিছু ঢুকছে না ওই কর্ণ কি লম্বকর্ণের নাকি?” কথা বলবেন কি, হাঁ করে সামনের ওই অপরূপ দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকেন গোয়েন্দা বাঁকানাকা (নাকটি একটু ব্যাকা বিধায় পাঠকদত্ত ঐ নাম) । সামনে, সামনে - মানে কি আর বলবেন গোয়েন্দাপ্রবর, সামনে দাঁড়িয়ে আছে যে তাকে কি যে বলা যায় তা কিছুতেই ভেবে উঠতে পারছেন না বাঁকানাকা। সে কি থিরবিজূরী, নাকি ঝাঁসীর রাণী, নাকি এঞ্জেলিনা জোলী, মানে সে যে কি তা আর কিছুতেই তিনি নির্ধারন করে উঠতে পারেন না। তাই হ্নদকম্পন সামলে কোনমতে জিজ্ঞেস করেন “ আ আপনি যেন ক্কে?” আগন্তক মুচকি হেসে তিরছিয়া নজরবাণে বিদ্ধ করে উত্তর দেন “ আমি? আমি হচ্ছি গোয়েন্দা ঝিকিমিকি। আমি প্রায়ই সত্যি মিথ্যা গুলিয়ে ফেলি কিনা তাই অনেকে আবার আমায় ভালোবেসে সত্যান্বেষী ব্যোমকেশী বলেও ডাকে।” তা ডাকতেই পারে, অস্বীকার করতে পারেন না বাঁকানাকা। ওই ভ্রমরকৃষ্ণ কেশরাশির দিকে তাকিয়ে তাঁর ইচছে হতে থাকে গোয়েন্দাগিরি তুচ্ছ করে, সমাজ সংসার চুলোয় দিয়ে শুধু ব্যোম ভোলানাথ হয়ে বসে থাকতে, হাতে গাঁজার কল্কেটি ছাড়াই। “কি, ব্যাপার কি? বাক্যি যে হরে গেলো দেখছি।” বিরক্তিতিক্ত তীক্ষ্ণ কন্ঠে শুধায় ঝিকিমিকি। মুহূর্তে নিজেকে সামলে নেন বাঁকানাকা। যতোই হোক, তিনি হলেন গিয়ে ইয়ে মানে বাঁকানাকা। বাংলার গৌরব, ব্লগকূলের বিপ্লব, যদুবংশের তান্ডব - ভূটানী রদ্দায় পারদর্শী শ্রীল শ্রীযুক্ত বাঁকানাকা, তাঁর কি মানায় এক ‘মহিলা’ গোয়েন্দা দেখে মুষড়ে পড়া? কাজেই মেঘমন্দ্র স্বরে তিনি শুরু করেন “তা ম্যাডাম, আপনার সমস্যাটা যেন কি?” কথাটি মাটিতে পড়তেও পায় না পালটা ঝাপটা ছুটে আসে, “ খবরদার, ম্যাডাম ট্যাডাম বলবেন না” । বাঁকানাকার তো একগাল মাছি! “সে কি, কেন ম্যাডাম?” ব্যোমকেশী তার লিপষ্টিক রঞ্জিত রক্তিম অধর টুশ করে উলটে বলে, “স্যার ম্যাডাম এসব জেন্ডারাইজড সম্বোধনে কি দরকার? ফলেন পরিচয়তে?” বাঁকানাকা বিষয়টি ঠিক হজম করে উঠতে পারেন না। গম্ভীর স্বরে বলেন, “ঠিকাছে, ওকে, আপনাকে নাহয় ম্যাডাম ডাকবো না, আর তা ছাড়া আপনাকে দেখায়ও একেবারে চ্যাংড়া পোলাপানদের মতো। কিন্তু সমাজে আমার একটা প্রেষ্টিজও আছে আবার আমার ভূড়ি এবং বয়সও আছে, কাজেই আপনিই নাহয় আমাকে বাঁকানাকা বাঁকানাকা না করে বাঁকানাকা ভাই বলুন?” এ কথা শুনে বিস্ময়ে ঝিকিমিকির পটলচেড়া চোখ প্রায় ঠিকড়ে বেরিয়ে আসতে চায়। “আপনাকে আমি ভাই ডাকতে যাব কি দুঃখে? আপনি আমার কোন বাবাকেলে ভাই, শুনি?” শুনে বাঁকানাকা কেমন যেন হয়ে যান। ধরাধরা কন্ঠে ভয়ে ভয়ে তিনি বলেন, “তবে কি, তবে কি ঝিকিমিকি আমায় অন্য চোখে দেখছেন?” “আ মোলো যা, হায়য়য়য়রে আমার পোড়া কপাল!!!!” উপযুক্ত পোষ্টমডার্ণ কোন আক্ষেপোক্তির অভাবে ঐ গ্রাম্য ভাষাতেই কাৎরে ওঠে ঝিকিমিকি- “ভাই বলতে না চাওয়া মানে কি প্রেম করতে চাওয়া নাকি রে অলম্বুস? আর তা ছাড়া এসেছি কাজ করতে এখানে আবার ভাই বোন , চাচা ফুফু, টেবিল চেয়ার এসব কি?” আবার বাঁকানাকা একটা ঝাঁকি খান। বাপ রে বাপ এ তো মেয়ে থুড়ি গোয়েন্দা নয় সাক্ষাৎ মিস মার্পেল এর ঠাকমা। “আচ্ছা, আচ্ছা, বুঝলাম আপনি বিরাট নারীবাদী, এখন ফ্যাদা প্যাঁচাল রেখে বলুন দেখি আপনি কি কাজে এসেছেন?” জানতে চান বাঁকানাকা, কোনরকম রাখঢাক না করেই। ফিকফিকিয়ে হেসে ওঠে ঝিকিমিকি- “সেটাই তো এতক্ষণ ধরে বলছি রে দাদা? আমার ক্লায়েন্ট, তার জন্যেই মাঠে নেমেছি আমি।” “ক্লায়েন্ট! এ পোড়া দেশে গোয়েন্দাদের আবার ক্লায়েন্টও হয়?” বুক যেন ভেঙ্গে যায় বাঁকানাকার। “হবে না কেন, আমি তো আর আপনার মতো বিনা পয়সায় বেগার খেটে বেড়াই না? আমার দস্তুরমত একটা অফিস আছে মতিঝিলে - নাম “ঢালী’স এঞ্জেলস””।
“অ, আচ্ছা, ভালো ভালো।” বেজার গলায় বলেন বাঁকানাকা, “তা আমার কাছে কি? কয়টা খুন অথবা গুমখুন অথবা মূর্তি পাচার কিসের কিনারা করতে আপনাকে সাহায্য করতে পারি বলুন?” “ইসসস, ছেলে হলেই কি মাথা মোটা হতে হবে? জগতে ঐসবের চেয়েও জরূরী কিছু থাকতে পারে তা জানেন না?” ধিক্কারে ধিক্কারে গলা চিড়ে আসে ঝিকিমিকির। “Like what? একটু ঝেড়ে কাশুন না প্লীজ, জানেন ই তো প্রকৃতির অভিশাপে আমি পুরুষ অর্থাৎ আমি ইট্টু……”। একটু নরম হয় ব্যোমকেশী। বলে “শুনুন, আমার ক্লায়েন্ট এক গুরুতর, জীবন্মরণ সমস্যায় পড়েছে। তার ব্লগে ‘সাম্প্রতিক মন্তব্য’ এই কলামের নীচে কোন মন্তব্যই দেখাচ্ছে না ।” “তা আপনার ক্লায়েন্ট মডারেটরদের সাথে যোগাযোগ করলেই পারেন” বাৎলে দেন বাঁকানাকা। “আরে তা কি আর করে নি নাকি? করেছে করেছে এবং অভয় পেয়েছে যে হয়ে যাবে একসময় চিন্তার কিছু নেই।” “তো? তাহলে? আপনার ক্লায়েন্ট এতো অধৈর্য্য কেন?” এবার যারপরনাই বিরক্ত হন বাঁকানাকা। “ব্যাপারটা মোটেই ধৈর্য্যের না। দুঃখু, দুঃখু। আমার ক্লায়েন্টের মনে দুষ্কু হয়েছে। প্রথমে তার নিবন্ধনের ডেটা গেলো হারিয়ে ফলে সচল হতে তার লাগলো বিশ বছর। তারপর কিনা আবার এটা। আমার ক্লায়েন্ট নাহয় মানুষও ভালো না, লিখতেও ভালো পারে না - তাই বলে কি সে বানের জলে ভেসে এসেছে? এই ভাবে তাকে বিকল করা? জানেন সে পোষ্ট ট্রম্যাটিক ডিসওর্ডারে ভুগছে? সাইকিয়াট্রিষ্টের বিল দিতে দিতে ফতুর হয়ে এখন আমার ফীজ দেয় কি না দেয়!” এইবার এতোক্ষণে ভেঙ্গে পড়ে ঝাঁসীর রাণী ভীম ভবাণী। পড়বে না? টাকার শোক বলে কথা! এলোকেশের বোঝা ছড়িয়ে টেবিলের ওপর মাথা রেখে সে - না কাঁদতে থাকে না - কু হি হি হি করে মিষ্টি হেসে বলে “তাই তো আপনার কাছে এসেছি গোয়েন্দা বাঁকানাকা। আমার ক্লায়েন্ট এই হলি ডে সীজনে কেমন যেন একটু ক্ষেপে উঠেছে। তাকে কষষষষে একটা ঝাড়ি লাগালে মনে হয় সে ঠিক হবে। চলুন দুজনে মিলে দলে ভারী হয়ে তাইইই করি গিয়ে?” সূধীন দত্তের একটা কবিতার লাইন মনে পড়ে পড়েও পড়ে না। মন্দাক্রান্তা বা শক্তি কি আবুল হাসান কি মান্নাণ সৈয়দ - নাহ তাও না। শেষমেষ সেই অগতির গতি নিরানন্দ জীবনানন্দই কোট করতে থাকে বাঁকানাকা “চুল তার কবেকার ...... “ ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ

এবং দুজনে মিলে সেই অর্বাচীন , অদম্য, অসহ্য সচলকে বিকলতর করতে হাসতে হাসতে এগিয়ে যায়......।

বিঃ দ্রঃ শিরোনামেই তো একবার বললাম যে এই কাহিনী সম্পূর্ণ কাল্পনিক? কেউ এর কোন কিছুর সাথে কোন জনপ্রাণী কি গাছ পাথর কি টেবিল চেয়ার কি গোয়েন্দা তস্কর কারো কোন মিল খূঁজে পেলে - সেটা ভাই আপনার প্রব্লেম, আমার না।


মন্তব্য

অনিকেত এর ছবি

স্নিগ্ধা'পু,

আপনার এ লেখার 'প্রথম' মন্তব্যকারী হবার আনন্দের পাশাপাশি, আরো একবার আপনাকে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে মনে করিয়ে দিতে চাই----আপনি 'বিশ্রী রকমের' ভালো লেখেন।

চালিয়ে যান,বস।

স্নিগ্ধা এর ছবি

চালাবো দাদা ? বুইলচেন হাসি ?

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ !

অনিন্দ্য এর ছবি

ভালো লেখা...

স্নিগ্ধা এর ছবি

এবং যথেষ্ট করুণ ও কি নয় ? আমার তো ঝিকিমিকির ক্লায়েনটের দু:খে ............

ধন্যবাদ !

অভিজিৎ এর ছবি

হেঃ হেঃ,

বোমকেশ বক্সীর মত 'সুক্ষদর্শী' না হলেও, কিংবা ফেলুমিত্তিরের মত 'প্রখর' বুদ্ধিমপন্ন না হলেও, কিংবা ঝাঁকানাকার মত তীব্বতী প্যাচ না জানলেও, আমার মোটা মাথায় উপরের রহস্যগল্পের সারমর্ম ধরা পড়েছে এই তিন -চার লাইনে ......

শুনুন, আমার ক্লায়েন্ট এক গুরুতর, জীবন্মরণ সমস্যায় পড়েছে। তার ব্লগে 'সাম্প্রতিক মন্তব্য' এই কলামের নীচে কোন মন্তব্যই দেখাচ্ছে না ।”
...

প্রথমে তার নিবন্ধনের ডেটা গেলো হারিয়ে ফলে সচল হতে তার লাগলো বিশ বছর। তারপর কিনা আবার এটা। আমার ক্লায়েন্ট নাহয় মানুষও ভালো না, লিখতেও ভালো পারে না - তাই বলে কি সে বানের জলে ভেসে এসেছে?

হুমম... খুবই চিন্তার ব্যাপার। লালমোহন বাবুর চাঁদির টাক মনে হয় আরো বীঘৎখানেক বেড়ে গেল... কিন্তু কি আর করা!

(বিদ্রঃ বিশ বছর আগে বোধ হয় একটা লেখা এক জায়গায় পাঠাতে বলা হয়েছিল, আর্কাইভের প্রয়োজনে। সেই রহস্য ত্রিশ বছরেও সমাধান হল না। ... কিন্তু অই যে বলেছি ...কি আর করা! গরীবের কথা কে শুনে?)

======================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

স্নিগ্ধা এর ছবি

মাফ চাই, মাফ চাই হাসি

আগামী কাল সকালের মধ্যে অবশ্যই করা হবে।

(আর ইয়ে, কি বলে, ঝিকিমিকির জন্যই হোক কি যাই হোক, এখন দেখি দু একটা মন্তব্য দেখাচ্ছে !)

কেমিকেল আলী এর ছবি

সাবলীল লেখা।
একসাথে পুরা লেখাটা না লিখে প্যারা প্যারা করে লিখলে আমার মত কানা পাঠকের একটু পড়তে সুবিধা হয়।

জাঝা

স্নিগ্ধা এর ছবি

ঠিক আছে, এরপর থেকে তাই করা হবে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।