ওফরা হাযা আর রিম বানা অথবা ইজরায়েলী আর প্যালেস্টিনীয় অথবা আমি আর আপনি .........

স্নিগ্ধা এর ছবি
লিখেছেন স্নিগ্ধা (তারিখ: সোম, ১৬/০৬/২০০৮ - ১২:১৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“Nothing can stay bound or be imprisoned.
You say, ‘End this poem here and
Wait for what’s next. ‘ I will. Poems
Are rough notations for the music we are.” (from The Music We Are by Rumi, translated by Coleman Barks)

আসলেই কি আমরা প্রত্যেকে একেকটা গানের মত নই? কখনো সুরে বাজি আর কখনো অ - সুরে - কখনো লয়ে আর তালে আর কখনো ক্রোধে , অসহায়তায় , হতাশায় শুধু শব্দের চিৎকারে? অথবা - প্রেমে আর ক্ষমায় আর স্বপ্নে আর আশায়?

ঙ্কিছুদিন আগে common dreams এর একটা খবরে দেখেছিলাম গাযা’র বিস্তৃত অঞ্চল ইজরায়েলীদের পয়ঃ নিষ্কাশনের বিশাল নালা হিসেবে ব্যবহ্নত হচ্ছে। যেখানটায় কিছুদিন আগেও ছিলো - ব্যবহারিক এবং আক্ষরিক উভয় অর্থেই- হাজার হাজার প্যানেষ্টিনীয়দের জীবন ধারনের জন্য অপরিহার্য্য, অবশ্যপ্রয়োজনীয় পথ, তাঁদের প্রতিদিনকার চেনা জীবনের একটা অংশ, সেখানে এখন মানুষ এবং পশুর বর্জ্য পদার্থের দূর্গন্ধে তারা অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা আশংকা করছেন এভাবে পরিবেশ দূষিত হতে থাকলে অচিরেই কলেরা এবং অন্যান্য রোগ ছড়িয়ে পড়বে। এর চাইতে যখন ইজরায়েলী মিযাইল বা ট্যাঙ্ক প্যালেষ্টাইনিদের বসতিসহ সবকিছু দ্বিধাহীন ভাবে গুড়িয়ে দেয় - অমানুষিক, বর্বর অবশ্যই - কিন্তু সেটাতেও বোধহয় কিছু দার্ঢ্য থাকে। হয়তো আমার নিজেকে এর মুখোমুখি হতে হচ্ছে না বলেই মনে হয়, তবুও মনে হয়, যেন সেখানে নিষ্ঠুরতার পাশাপাশি শত্রু হিসেবে, ‘মানুষ’ হিসেবে একটা স্বীকৃতিও থাকে, এরকম অবজ্ঞা মিশ্রিত অত্যাচার নয়। বইতে পড়েছি আগেকার দিনে রাণীরা নাকি হাবসী খোজাদের সামনেই কাপড় বদলাতেন কারণ তারা তো আর ‘পুরুষ’ নয়! এই ব্যাপারটাও কেন যেন আমার কাছেএকই রকম অপমানজনক মনে হয়।

ভাবছেন, গানের কথা থেকে বিষাদগ্রস্ত রাজনীতির কড়চায় এলাম কি করে? কেন? দূর তো নয়! ঐ যে, নির্মলেন্দু গুণ যে বলেন -
“মৃত্যুতেও থামেনা উৎসব,
জীবন এমনই প্রকান্ড প্রচুর”
(সচল হাসান মোর্শেদের সিগনেচার থেকে পাওয়া)
সেইতো সেখানেই তো আসল কথাটা বলে দেয়া আছে। সেটাই বার বার প্রমাণিত হয় যখন দেখি এত কিছুর পরেও, এসবকিছু নিয়েও মানুষ গান হয়ে বাজে আর গান গায়, এবং সুরেই গায়। অন্তত ওফরা হাযা আর রিম বানা গায় - যে যে যার যার জীবনের, অভিজ্ঞতার, আদর্শের অবস্থান থেকে।

ওফরা ইজরায়েলী গাইয়ে আর রিম বানা প্যালেষ্টাইনের। এপর্য্যন্ত (যতদূর জানি) ওফরা হাযা একমাত্র ইজারায়েলীয় ইহুদী শিল্পী যার গান সমভাবে জনপ্রিয় প্যালেষ্টাইনেও এবং বৃহত্তর আরবী জনগোষ্ঠীতেও। ওফরা হচ্ছে প্রথম ইজরায়েলী শিল্পী যে আন্তর্জাতিক মাত্রায় জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার গানের আবেদন বা প্রসার ছাড়িয়ে গিয়েছিলো ভৌগোলিক সীমা আর জাতিগত বিভেদ। তার কারণ বোধহয় শুধু তার অপূর্ব সুরেলা গলা আর গায়কীই নয়, তার কারণ হয়ে থাকতে পারে ওফরার পূর্বসূরী বাস্তচ্যুত, মূলোৎপাটিত, আপন গৃহে পরবাসী - তাই ওফরাও জানতো ভুল সময়ে ভুল জায়গায় জন্মানোর খেসারত দিয়ে যেতে হয় কি নিদারুণ ভাবে - অনেকসময় সারাজীবন ধরে।

ওফরা জন্মেছিলো ইজরায়েলে ঠিকই কিন্তু তার পূর্বপুরষ আসলে ইয়েমেনাইট ইহুদী, মুসলিম অধ্যুষিত ইয়েমেন থেকে উদ্বাস্ত হিসেবে ইজ্রায়েলে এসে বসবাস শুরু করে।
তেল আভিবে নির্ভেজাল দারিদ্র্যের মধ্যে জন্মানো নয় ভাইবোনের সবচেয়ে ছোট ওফরা বারো বছর বয়সেই অসাধারন সুকন্ঠী হিসেবে সমজদারদের নজর কাড়ে। আর উনিশে পৌছতে পৌছতে হয়ে যায় ইজরায়েলের প্রথম পপ সম্রাজ্ঞী। হিব্রু, এরামিক, আরবী আর ইংরেজী - এই চার ভাষায় গান গেয়েছে সে। বেশীরভাগ গানের মূল বিষয় উৎসে ফেরা অথবা শেকড় খোঁজা অথবা ‘শান্তি’ ছড়ানো। ওফরার অনেক গানই এসেছে প্রাচীন ইয়েমেনাইট র‌্যাবাঈদের লেখা প্রার্থনা সঙ্গীত থেকে। যেমন, তার সবচেয়ে জনপ্রিয় গানগুলোর একট হলো “ইম নিন আল্যু” যা আসলে একটি প্রার্থনা সঙ্গীত, ওফরার গলায় যা রূপ বদলে হয়ে গেছে চমৎকার তাল ও সুরের একটি আধুনিক গান আর ছড়িয়ে গেছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।

তবে জনপ্রিয় গাইয়ে অনেকেই হয়, খ্যাতির দেবতা বরদান করে অনেককেই, কিন্তু কালের বিচারে সবাই উত্তীর্ণ হয় না মোটেই। মাত্র বেয়াল্লিশ বছরে মারা গেলেও ওফরা হাযা কে এখনও একইরকম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সাথে যে মনে করা হয় তার কারণ সে ছুঁয়ে যেতে পেরেছে মানুষের হ্নদয় - কি ইহুদী, কি মুসলিম, কি ইজরায়েলী, কি প্যালেষ্টিনীয়।

স্বদেশ বলে ইজ্রায়েলের প্রতি ওফরার আনুগত্য যে ছিলো না তা নয়, কিন্তু তা ছিলো না কখনই এতটা প্রগাঢ় যে ‘মানুষ’ হিসেবে তার বিবেক, মনুষ্যত্ব আর জীবনবোধ আচ্ছন্ন করে তাকে পরিণত করবে শুধুমাত্র একজন ‘ইজ্রায়েলী নাগরিকে’ এ। নিজের ঐতিহ্যের প্রতি যতখানি মমতাময়ই সে থাকুক না কেন বা ইহুদী ধর্মের প্রতিও যত বিশ্বস্ততাই তার থাকুক না কেন, সেগুলোর কোনটিই ছিলো না এতখানি অন্ধ ও বধির যা ওফরাকে মুস্লিমদের প্রতি বিদ্বিষ্ট করে তুলবে, বা প্যালেষ্টিনীয়দের প্রতি অসহানুভূতিশীল করে তুলবে। বিল ক্লিন্টনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ইজ্রায়েল-প্যালেষ্টিনীয় শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তাই সবার মধ্য থেকে গান গাইবার মত সম্মানজনক আমন্ত্রণ ওফরা হাযাই পায়, আর কেউ নয়। তার গড়ে যাওয়া সঙ্গীত সংগঠনের মূলমন্ত্র - শান্তি, এখনও কাজ করে যাচ্ছে ওফরার আদর্শ অনুযায়ী।

তেমনি আরেকজন হলো রিম বানা। নাযারেথে জন্ম নেয়া রিম গাইতে শুরু করে দশ বছর বয়স থেকে। রিমের সব গানের মূল উপজীব্য একটাই - তার দেশের মানুষ। প্যালেষ্টিনীয়দের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, জীবনযাপন আর অবশ্যই তাদের নিরন্তর সংগ্রাম। তার গানের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার সুরে প্রকৃতির অমোঘ উপস্থিতি। তার গান শুনলে মরু আর সাগর, ঝর্ণা আর পাহাড়ের আবহধ্বনি জানিয়ে দেয় যে প্যালেষ্টিনীয়দের জীবনে, সংস্কৃতিতে প্রকৃতির ভূমিকা কতখানি।
ওফরার মত তার অনেক গানও এসেছে প্রাচীন প্রার্থনা সংগীত থেকে - বিশেষ করে কাআনাইট প্রার্থনা সংগীত থেকে। কিন্তু আবার একইসাথে রিমের গানকে বলা হয় ‘উত্তরাধুনিক’ আরবী গান, যেখানে ঐতিহ্য আর আধুনিকতা মিশেছে অনায়াসে।

ওফরার যেমন উদ্দেশ্য ছিলো নানা কারণে গড়ে ওঠা পারস্পরিক বিভেদের প্রাচীরটিকে সরিয়ে দেয়া, রিমের তেমনি মূল লক্ষ্য হলো প্যালিষ্টিনীয়দের দৈনন্দিন লড়াই আর আদর্শের যুদ্ধটাকে বাইরের পৃথিবীর কাছে তুলে ধরা। মুস্লিমদের নিয়ে, আরবী সংস্কৃতি নিয়ে যে সব ভুল স্টেরিওটিপিক্যাল ধারনা গেড়ে বসে আছে , তাকে হটিয়ে একটা অন্যতর দৃষ্টিতে আমাদের দেখতে সাহায্য করা। বাচ্চাদের নিয়েও অনেক গান গেয়েছে রিম, বিভিন্ন শিশু দিবসে তো বটেই এমনকি খৃষ্টমাস উপলক্ষ্যেও। প্যালেষ্টিনীয় নারী, শিশু, যুদ্ধে শহীদ তরুণ কাউকেই রিম ভুলে যায় নি, কোন স্বপ্নই সুরে বেঁধে ছড়িয়ে দিতে দ্বিধা করে নি।

কি বৈপরীত্যে সমাচ্ছন্ন ব্যক্তিগত শেকড়ের ইতিহাস এই দু'জনের। কিন্তু তবুও ওফরা হাযা আর রিম বানা শেষ পর্য্যন্ত তুচ্ছতাকে ছাড়িয়ে গিয়ে ‘মানুষ’ হয়ে উঠতে পেরেছে। গান হয়ে বেজেছে আর গান দিয়েই বেঁধেছে।

এরপরও সুরের শক্তিকে অস্বীকার কি করা যায়?

(নীচে দু'জনের গানের দু'টো লিঙ্ক দেয়া হলো।)


মন্তব্য

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

যখন ইজরায়েলী মিযাইল বা ট্যাঙ্ক প্যালেষ্টাইনিদের বসতিসহ সবকিছু দ্বিধাহীন ভাবে গুড়িয়ে দেয় - অমানুষিক, বর্বর অবশ্যই - কিন্তু সেটাতেও বোধহয় কিছু দার্ঢ্য থাকে। হয়তো আমার নিজেকে এর মুখোমুখি হতে হচ্ছে না বলেই মনে হয়, তবুও মনে হয়, যেন সেখানে নিষ্ঠুরতার পাশাপাশি শত্রু হিসেবে, ‘মানুষ’ হিসেবে একটা স্বীকৃতিও থাকে, এরকম অবজ্ঞা মিশ্রিত অত্যাচার নয়।

দুর্দান্ত!

ওফরা হাযা ও রিম বানা সম্পর্কে জানা ছিলো না। জানা হলো। অসংখ্য ধন্যবাদ।

যাক, অনেকদিন পর তোমার একটা লেখা তাহলে পাওয়া গেলো!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

স্নিগ্ধা এর ছবি

ধন্যবাদ মুজুদা ...... হাসি

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

দুই নির্বাসিতের গান.......।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

স্নিগ্ধা এর ছবি

এবং দুজনেরই নির্বাসনের কারণ পরস্পরের পূর্বপুরুষ !

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

পরস্পরের পূর্বপুরুষেরা পরস্পরের বিরুদ্ধে যা করেছে, তারই ফলে এদের পরভূমে আবাসন আর স্বভূমে নির্বাসন! উভয় পূর্বপুরুষের দায়টা কি সমান? পরভূমে আবাসন আর স্বভূমে নির্বাসন কি এক? এটা প্রশ্ন, মন্তব্য নয়।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

স্নিগ্ধা এর ছবি

আমি মনে করি না প্যালেষ্টিনীয় আর ইজরায়েলীয়দের ক্ষেত্রে দায়টা কোনভাবেই সমানবা এমনকি কাছাকাছিও। ইজ্রায়েলের অত্যাচারী এবং আগ্রাসী ভূমিকা এতখানিই যে তা শুধু প্যালেষ্টিনীয়দের জীবনকেই যে দূর্বিষহ করে তোলে তা না, বিশ্ব রাজনীতিকেও দুমড়ে মুচড়ে নিজের ইচ্ছেমত আকার দিতে পারে। কিন্তু, আপনি যদি এই বিশেষ ঐতিহাসিক পটভূমিটা বাদ দিয়ে শুধু তাত্ত্বিক ভাবে প্রশ্ন তোলেন যে পরভূমে আবাসন আর স্বভূমে নির্বাসনের ক্ষেত্রে কোনটা অধিকতর সহনীয় - আমার উত্তর হবে, আমি সত্যিই তা জানি না!

স্বভূমে নির্বাসিত হওয়াটা যদি হয় একটা ভূখন্ডে জন্মসূত্রে পাওয়া মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া এবং নির্বাসিতের দিক থেকে সেই অধিকার আদায়ের নিরন্তর লড়াই, তাহলে পরভূমে আবাসনের ক্ষেত্রে জন্মসুত্রে না হোক, রাজনৈতিক সূত্রে পাওয়া অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, সম্পূর্ন নতুন একটা অচেনা পরিবেশে আস্তে আস্তে শেকড় ছড়িয়ে নিজেকে স্থাপিত করার অতিদীর্ঘ এক প্রক্রিয়া। দুক্ষেত্রেই তো দেখি যুদ্ধই যুদ্ধ!

তাহলে?

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

তাহলে দাঁড়ায় যে_আমার বুঝে_ইতিহাসের রাজনৈতিকতা থেকে দেখার পরও ব্যক্তির নিজস্ব বেদনের সবটা তাতে ধরা পড়ে না। ব্যক্তির প্রতিকার অযোগ্য ক্ষতি কখনো বিনিময়যোগ্যও হয় না। তাই ইতিহাস আর পরিচয়ের রাজনীতির ভেতরেও ব্যক্তির সার্বভৌম সংবেদনের একটা পরিসর থাকে। একে কখনো মোটাদাগে মাপা যায় না।

পরভূমে আবাসন আর স্বভূমে নির্বাসনের ক্ষেত্রে কোনটা অধিকতর সহনীয়

এই প্রশ্ন আমি করব না। এর উত্তর হয় না বলে নয়, এ প্রশ্ন আসে না বলেই মরমে মরমে বারবার কথা হয়। বারবার কথা বলে যাওয়া ছাড়া এর আর কোনো নিদান নাই।
তা-ই বোধহয় এক নির্বাসিত আরেক নির্বাসিত'র জন্য কাঁদতে পারে। এক আহত আরেক আহতের শুষ্রূষা করতে পারে, এক অন্ধ আলো দিতে পারে আরেক অন্ধকে। মানুষ এটা পারে...আর এভাবেই যুদ্ধের ময়দানের বাইরে এসে দুই নারী ইতিহাস খূঁড়ে 'রাশি রাশি দুঃখের খনি ভেদ করে' জাগাতে পারে 'অবিরল শুশ্রুষার মতো শতজলঝর্ণার ধ্বনি'। সেই ঝর্নার মাতমই পেলাম দুটি গানে। হয়তো সঙ্গীতই কেবল এই বিমূর্ততাকে ছঁতে পারে বলে....
কিন্তু আপনার প্রশ্নের 'তাহলে?' ছাড়া আমার এই 'তাহলে'-তে পৌঁছতাম না বোধহয়।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

স্নিগ্ধা এর ছবি

ধন্যবাদ ! একটা ডকুমেন্টারী দেখেছিলাম - ইজরায়েলী আর প্যালেষ্টিনীয় বাচ্চাদের নিয়ে তৈরী একটা অর্কেষ্ট্রা, শান্তিময় সহাবস্থানের বাণী ছড়িয়ে দেয়াটাই ছিলো উদ্দেশ্য। কতরকমের কত চেষ্টাই তো হলো, হচ্ছে - কতটুকু সফল সেগুলো তা তো দূর্ভাগ্যবশতঃ সবাই দেখতেই পাচ্ছি ......

রেজওয়ান এর ছবি

ধন্যবাদ এদের দুজনকে তুলে ধরার জন্যে।

তার গানের আবেদন বা প্রসার ছাড়িয়ে গিয়েছিলো ভৌগোলিক সীমা আর জাতিগত বিভেদ।

আমার মনে হয় শিল্পের এবং শিল্পীর এই শক্তি আছে যা ঘৃণা বিদ্বেষ দুর করে মানুষকে একটি অন্য স্তরে নিয়ে যায়।

বার্লিন স্টেট অপেরার মিউজিক ডিরেক্টর ইজরায়েলের নাগরিক ডানিয়েল বারেনবইমের কথাই ধরুন। ওনার একটি লেখা পড়লাম যেখানে উনি প্যালেস্টাইন ও ইজরায়েলের মধ্যকার বিভেদকে অত্যন্ত পক্ষপাতিত্ববিহীন ভাবে দেখেছেন। জানা ছিল না উনি প্যালেস্টাইনি আন্দোলনের সমর্থক বিশিষ্ট লেখক ও চিন্তাবিদ এডওয়ার্ড সাঈদের সাথে মিলে আরব ও ইজরায়েলী মিউজিশিয়ানদের এক করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন।

শিল্পীরাই মনে হয় এমন পারে।

আমি কিছু মানুষের মধ্যে ইহুদীদের প্রতি ঘৃণা দেখি। হয়ত ইজরায়েলের কার্যকারণ এজন্যে দায়ী। তারা যদি ইহুদী গায়িকা ইয়েল নাঈমের গান শুনে তাহলে মনে হয় তাদের মনও একটু টলবে। আপনার জন্যে রইল তার একটি গান উপহার হিসেবে:

তৃতীয় বিশ্বের চোখে

স্নিগ্ধা এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, বারেনবইমের লিঙ্কের জন্য ধন্যবাদ - এসব তো রইলোই, কিন্তু সবচাইতে বড় ধন্যবাদটা দিচ্ছি ইয়েল নাঈমের সাথে আমাকে পরিচিত করানোর জন্য !

আমার জন্য গানের চাইতে বড় উপহার আর কিছুই হয় না!

সুমন সুপান্থ এর ছবি

গানের তো বিন্দু-বিসর্গ বুঝি নি ! যা বুঝেছি, তা হলো শেষ বিচারে 'মানুষ' এসে জায়গা করে নেয়,করেই নেয়, সেখানে, যেখানে তার থাকবার কথা ছিলো - তবু কেন জানি তার ইতিহাস নিচে পড়ে যাবার; একই সঙ্গে, পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাঁড়াবার ।

রিম বানা'র কথা জানা ছিলো না ! ওফরা 'র কথা প্রথম শুনি মিলানে জন্ম নেয়া আমার ইহূদি কলিগ ব্যান সলোমনের কাছে । তবে এইটুকু ছাড়া যে, ওফারা ইজরায়েলী নৃশংসতার বিপরীতে প্রতিবাদি এক কন্ঠস্বর !
আপনার লেখা পড়তে পড়তে মহান শিল্পী জর্জ হ্যারিসনের কথা মনে পড়ে গেলো ! ১৯৭১' এ নিজ শাসকগোষ্টির রক্তচক্ষু উপেক্ষা যিনি এসে দাঁড়ালেন নিপীড়িত এক জাতির পাশে । সকল শিল্পী ও তাদের শিল্প মাধ্যমগুলোর এটাই সবচেয়ে বড়ো শক্তি বোধকরি , মানুষ কে নিচে ফেলে দেবার কালে তারা বলে দিতে পারেন '..... তাহার উপরে নাই'

লেখাটা উপহার দেবার জন্য আপনাকে নিরঙ্কুশ অভিবাদন ।

---------------------------------------------------------
নীল সার্ট নেই বলে কেউ আমাকে নাবিক বলেনি !
অথচ সমুদ্রে-ই ছিলাম আমি

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

স্নিগ্ধা এর ছবি

পড়া এবং মন্তব্যের জন্য আপনাকেও নিরঙ্কুশ ধন্যবাদ!

নুশেরা তাজরীন এর ছবি

স্নিগ্ধার লেখার ভঙ্গী অনবদ্য, বিষয়ও সুনির্বাচিত। (তবু মন খারাপ হয়)

স্নিগ্ধা এর ছবি

ছিহ্‌ নুশেরা, চুরি করতে হয় না ! আপনার "বাচনভঙ্গি অনবদ্য" একথাটা আমিই আগে আপনাকে বলে ফেলেছি - অতএব, হলো না, হলো না ..... হাসি

মন খারাপের ব্যাপারটা কি প্যালেষ্টিনীয়দের জন্য বললেন?

নুশেরা তাজরীন এর ছবি

ওহ্ হো তাই বুঝি? স্নিগ্ধা তাহলে অনবদ্য হোল স্কোয়ার। হলো?
আর মন খারাপ... হুঁ, পৃথিবীর সব উৎপীড়িতের জন্যই খারাপ লাগেরে ভাই... স্যাডিস্টরাই শক্তিশালী

তানভীর এর ছবি

ওফরা হাযা আর রিম বানার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

প্যালেস্টাইনের মহিলা কবি জিহাদ আলি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির কারণে প্যালেস্টিনীয়রা কিভাবে ভুগছে তা বর্ণনা করে কিশোর বয়সে একটা কবিতা লিখেছিলেন। ডেনমার্কের ব্যান্ড আউটল্যান্ডিশ এ কবিতাকে কেন্দ্র করে তাদের সবচেয়ে বিখ্যাত গান " Look into my eyes" - লিখেছিল। গানের ভিডিওটাও মজার। রূপকথার গল্প লিটল রেড রাইডিং হুডের আদলে এটা করা হয়েছে- যেখানে একটা ইসরায়েলী সৈন্যকে নেকড়ে এবং একটা প্যালেস্টাইনী মেয়েশিশুকে লিটল রেড রাইডিং হুড দেখানো হয়েছে।

আপনার জন্য এটাও রইল উপহার হিসেবে হাসি

= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙ্গা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।

স্নিগ্ধা এর ছবি

তানভীর - অনেক, অনেক ধন্যবাদ .... হাসি

দিগন্ত এর ছবি

এটা দারুণ লাগল, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। শেষের দিকে বলছিল আমেরিকানদের ট্যাক্সের টাকায় এসব হয় ... আমারো গায়ে লাগে, আমিও এখন এখানেই ট্যাক্স দিই তো ...


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

মুশফিকা মুমু এর ছবি

স্নিগ্ধা আপু আপনার লেখা পড়ে খুব ভাল লাগল, অনেক কিছু জানতে পারলাম। ওফরা হাযা কিভাবে মারা যান এত অল্প বয়সে? গানগুলোও ভাল লাগল, ধন্যবাদ।
-------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

স্নিগ্ধা এর ছবি

ধন্যবাদ মুমু! ওফ্‌রার মারা যাবার অফিসিয়াল কারণ বলা হয় নিউমোনিয়া, কিন্তু অনেকে সন্দেহ করে যে তার মাদকাসক্ত স্বামীর কারণে তার এইডস হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গান সবগুলো শোনা হলো না... নেটের স্পিড বলে কথা... তবে জানানোর জন্য ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

স্নিগ্ধা এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ ! তবে গানগুলো, বিশেষ করে রেজওয়ান আর তানভীরের দেয়া গানগুলো পারলে শুনে দেখবেন - সত্যিই সুন্দর।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍মানবতাবাদী দুই গায়িকা সম্পর্কে জানা হলো আপনার সুবাদে। শোনা হলো দুর্দান্ত দুটি গান। জাতি-ধর্ম-গোত্র-সম্প্রদায়ের সংকীর্ণতা কাটিয়ে উঠতে পারে যারা, তারাই সত্যিকারের মানুষ।

আপনার লেখার সূত্র ধরেই আরও দুটি চমত্কার গান শোনা হলো রেজওয়ান আর তানভীরের সৌজন্যে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

স্নিগ্ধা এর ছবি

ধন্যবাদ পড়া ও মন্তব্যের জন্য!

স্পর্শ এর ছবি

সবার উপর মানুষ সত্য
কথাটা কবে শিখবো আমরা ! মন খারাপ

ইসরায়েলি শুনলেই আজকাল ঘৃনা হয়। আর ইহুদী শুনলে হয় ভয়...

....................................................................................
অতঃপর ফুটে যাবার ঠিক আগে হীরক খন্ডটা বুঝলো, সে আসলে ছিল একটা মামুলি বুদবুদ!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।