অন্তর মম বিকশিত কর

স্নিগ্ধা এর ছবি
লিখেছেন স্নিগ্ধা (তারিখ: বুধ, ১৩/০৮/২০০৮ - ১২:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সচলায়তন প্রগ্রতিশীল বাঙালিদের একটি অনলাইন সমাবেশ - ধারণাটি, আমার ধারণা ভ্রান্ত নয়। কিন্তু, সত্যিকার অর্থে কতটা প্রগ্রতিশীল ’ব্যক্তি’ আমরা? আমরা, সচলেরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে?

০১
"আচ্ছা, 'তোমাদের'ও কি এরকম কার্ড হয়?" - একটি বিয়ের কার্ড বা নিমন্ত্রণপত্র হাতে আমার কোলকাতা থেকে আগত বাঙালি প্রতিবেশিনী এই প্রশ্নটি আমাকে করেন, আন্তরিকভাবেই।

"কোলকাতার মানুষ তো একটা মিষ্টি খেতে দিয়ে আবার বলে -"পুরোটা খেতে হবে কিন্তু ..."" - আমারই বয়সী আমার বাংলাদেশী বাঙালি বন্ধু আমাকে এই খবরটি দেয়, স্বাভাবিকভাবেই।

০২
দোকানের চেক আউট লাইনে অপেক্ষারত অবস্থায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি, ক্যাশ রেজিস্টারে কার্যরত মেয়েটি কি মিষ্টি হেসে আমার আগে দাম দিতে থাকা ককেশিয়ান মানুষটির সাথে জিনিষপত্র স্ক্যান করার ফাঁকে ফাঁকে বন্ধুসুলভ আলাপচারিতা চালিয়ে যাচ্ছে।
আমার পালা এলে আমার দিকে তাকায় না পর্যন্ত, কোন মিষ্টি হাসি বা সম্ভাষণ বা আলাপ তো দূরস্থান।

দোকানের পার্কিং লটে গাড়িটা পার্ক করার সময় আমার বাংলাদেশী বন্ধুর চোখে পড়ে সামনেই এক আফ্রিকান আমেরিকান ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন, আমার বন্ধুর মুখ থেকে নির্দ্বিধায় বেরিয়ে আসে - "আমার গাড়িটা কিছু করিস না বাবা"।

০৩
"কিন্তু, মুসলিমদের কালচারেই তো সন্ত্রাস আছে?" - এক আমেরিকান বন্ধুর উক্তি। তাকে আমি বহু চেষ্টাতেও বোঝাতে পারিনি, 'মুসলিম কালচার' বলে কোন কালচার নেই - ইসলাম কোথায় কি চেহারা নেবে তা সে জায়গার ইতিহাস আর বর্তমানের অনেকগুলো শর্ত বা বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে।

"আমার মেয়েদের স্কুলে সবসময় চেষ্টা করে কিভাবে বাচ্চাদের ইহুদীধর্মের দিকে, 'জু'-দের সংস্কৃতির দিকে ঠেলে দেয় যায়" - ষড়যন্ত্রের আভাসে উত্যক্ত এক বাংলাদেশীর হতাশা প্রকাশ। কি কি প্রমাণ তিনি পেয়েছেন জিজ্ঞেস করাতে যুৎসই কোন জবাব দিতে না পারলেও মনোভাব তার একটুও বদলায় নি।

০৪
"ছেলেরা তো ওইরকমই। ওদের সাথে তাই মিথ্যা বললে বা চীট করলে দোষ কি? তুমি না করলেও ওরা কি আর বসে থাকবে নাকি?" পুরুষজাতি সম্পর্কে এই অতি "সম্মানজনক" অনুভূতিটি আমার চেনা এক উচ্চশিক্ষিত মেয়ের, যে তার পুরুষবন্ধুদের দেয়া উপহারের ভারে প্রায় ন্যুব্জ।

“আরে, এর চেয়ে বেশী আর কি করবে, মেয়েমানুষের যা বুদ্ধি! / ও তো ভাল রেজাল্ট করবেই, মেয়েমানুষ হলে আমিও করতাম, তার উপর চেহারা সুন্দর!/ মেয়েটা ওভারকোয়ালিফাইড হয়ে গেছে, এখন কে ওই মেয়েকে বিয়ে করতে যাবে?” বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষিত, শহরবাসী বন্ধু এবং আত্মীয়দের মুখে শোনা এরকম মূল্যবান উক্তির ভান্ডারটি আমার বিশাল।

০৫
আমার চেনা এক মুসলমান ছেলে বিয়ে করেছে এক হিন্দু মেয়েকে। বিয়ে করবে বলে যখন তার পরিবারকে জানানো হয়- অনেক আত্মীয়স্বজনই অসন্তোষ প্রকাশ করে। আর তার খুব খুব ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয়া সরাসরি বলেন, এ বিয়ে হলে তিনি তার শ্বশুর বাড়িতে মুখ দেখাতে পারবেন না।

আর মেয়ের বাড়ির ঘোর অমতের কারণে বিয়ের দুবছর পর পর্যন্ত তারা জানেইনি যে মেয়ে সেই মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করে ফেলেছে বহু আগেই।

০৬
আমি নিজে কখনও কখনও অবাংলাদেশী কোন নিমন্ত্রণে গিয়ে বিরক্ত হয়েছি কারণ অতিথিদের বেশীরভাগ পরস্পরের পূর্বপরিচিত হওয়ায় নিজেদের মধ্যেই গল্প করেছে, আমাকে তেমন পাত্তা টাত্তা দেয় নি।

বাঙালিদের নিমন্ত্রণ অনুষ্ঠানে আসা অবাঙলাভাষী অতিথিকে নির্বাক বসে থাকতে দেখে নিজে দু'একবার ইংরেজিতে পুরো কথোপকথন চালানোর চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিয়েছি, অন্যান্য বাঙালি অতিথিরা পাত্তা দেয় নি।

ওপরের প্রত্যেকটা কথা আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা।

শুধু আমিই বা কেন, আপনাদেরও কি পরিচিত ঠেকেনি এগুলো? কোন তত্ত্ব, উপাত্ত কিছুর দরকার নেই। কে কাকে কি করেছে, কবে 'আসল' সমস্যার উৎপত্তি হয়েছিলো, 'প্রকৃত' দোষী কোনপক্ষ, এখনও 'তলে তলে' কারা কি কি করছে - অনেক কিছুই তো বলাও হলো, জানাও হলো, আবার তার প্রতিবাদও হলো। এবার? এবার কি? অতঃ কিম??

বেশ কয়েক বছর আগে ভারতীয় লেখক নজরুল ইসলামের লেখা একটি প্রবন্ধ পড়েছিলাম, বিষয় ছিলো হিন্দু ও মুসলিম বাঙালিদের একে অপরের সম্বন্ধে প্রচলিত কিছু স্টেরিওটিপিক্যাল ধারনাসম্পর্কে আলোচনা। লেখক একজন কোলকাতাবাসী ভারতীয় মুসলিম এবং তিনি ভারতীয় পুলিশ বিভাগে চাকুরীরত ছিলেন (অন্ততঃতখন)। তাঁর নিজের পেশাগত এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে লেখা ঐ আলোচনা পড়ে অনেকদিন পর্যন্ত মন ভারাক্রান্তহয়ে ছিলো। মনে হয়েছিলো , পৃথিবী এতো দিকে এতো দ্রুত বদলে যাচ্ছে, অথচ কতগুলো দিকে এমন বিন্ধ্যপর্বতের মত স্থবিরতা কি করে সম্ভব? দোষ ছুঁড়োছুড়ির এই খেলা কোনদিন কি থামবে না? বালখিল্য আত্মম্ভরিতার যে মানসিক অচলায়তন ( আমাদের পূর্বপুরুষেরা এবং) আমরা গড়ে তুলেছি তা থেকে বেরিয়ে আসার সচেতন চেষ্টা না থাকলে, এর শেষ কোথায় ?

আমি বাংলাদেশী, আমি বাঙালি, আমি বাঙালি মুসলিম, কি আমি বাংলাদেশী, বাঙালি মুসলিম, কি আমি আন্তর্জাতিক, কি আমি কিছুই না হয়ে ত্রিশঙ্কুতে ঝুলে আছি - কিছুতেই কিছু লাভ নেই। হয়তো এগুলোর কোন একটা আমরা হয়ে বা রয়ে যেতে পারবো, কিন্তু ঐ ওটুকুই। জাতি, ধর্ম, ভাষা দিয়ে তৈরী ঐ লক্ষ্মণ রেখার বাইরে বেরিয়ে নিঃশ্বাস নেয়া আর হবে না।
মানুষ হিসেবে আমি খুব সাধারণমাপের, সাধারণ মানের। আমি আমার অনেক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে পারি নি, হয়তো কখনও পারবোও না। কিন্তু তবুও জীবনে কিছু জিনিষ আমি মেনে চলার চেষ্টা করি, করেই যাই - আমি যেন কোনদিন আরো সংকীর্ণ, আরো বদ্ধ, আরো অন্ধকার মনের অধিকারী না হয়ে পড়ি।

এটুকুই আমার চাওয়া - অন্তর যেন হয় বিকশিত, সততই।


মন্তব্য

অনিন্দিতা এর ছবি

আপনার সাথে একমত।
আমার আশেপাশে এমন অনেক প্রগতিশীল, শিক্ষিত মানুষ দেখি যারা সময়ে প্রচন্ড সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেন।
খুব অসহায় লাগে তখন।

স্নিগ্ধা এর ছবি

এটা আরো দুঃখজনক যে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে অনেকসময়ই প্রগতির কোন সম্পর্ক থাকে না। শিক্ষার প্রয়োগটা খালি খাতাকলমেই রয়ে যায়। পড়ার জন্য ধন্যবাদ, অনিন্দিতা।

ফারুক হাসান এর ছবি

ভালো একটি লেখা।

স্নিগ্ধা এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

জিফরান খালেদ এর ছবি

আমি নিজে ভয়ঙ্কর সঙ্কীর্ণ... আমি আর কি বলবো...

আপা চমতকার লিখসেন...

স্নিগ্ধা এর ছবি

ফাজলামি কোরো না জিফরান - যে বলে 'মানুষ' তার সবচেয়ে পছন্দের বিষয়গুলোর একটা, সে সংকীর্ণ? বিশ্বাস করলাম না হাসি

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

durbol jaygay aghat korlen ekdom. dorkari post. (bangla likhle elomelo ashchhe keno jani. juktakkhor nichchhe na.)

স্নিগ্ধা এর ছবি

ধন্যবাদ! কিন্তু, আসলে আঘাত ঠিক করতে চাইনি। কিছুদিন যাবৎ নানা কিছু পড়ে টড়ে একটা অস্থিরতায় ভুগছিলাম, তাই এই স্বগতোক্তি হাসি

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

তোমার বর্ণনা করা প্রতিটি ঘটনা/পরিস্থিতি আমার প্রত্যক্ষ জানা। লিখবো ভেবেছি, হয়নি। এখন মনে হচ্ছে, তোমার মতো করে গুছিয়ে হয়তো লিখতে পারতামও না।

প্রত্যেকটি ঘটনাই পীড়িত করে, নিজের দীনতা/ক্ষুদ্রতায়, অন্যের অহেতুক নীচতায় আত্মা ছোটো হয়ে আসতে থাকে। নিজেকে মনুষ্যজন্মের উপযুক্তও আর লাগে না। ঘুরেফিরে সেই প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায়: "কতোদূর এগোলো মানুষ?"

কার উদ্দেশে জানি না, গেয়ে উঠতে ইচ্ছে করে : "তুমি নির্মল করো মঙ্গলকরে, মলিন মর্ম মুছায়ে..."

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

স্নিগ্ধা এর ছবি

লিখলেই কিন্তু পারতে - তোমার অভিজ্ঞতা বোধহয় আমার চাইতে বেশী, অন্তর্দৃষ্টিও গভীরতর, আর লেখার ক্ষমতা নিয়ে তো কিছু বলাই বাহুল্য!

"নির্মল কর, উজ্জ্বল কর, সুন্দর কর হে
জাগ্রত কর, উদ্যত কর, নির্ভয় কর হে ......"

অনিকেত এর ছবি

স্নিগ্ধা'পু,

আবারো চমতকার একটি পোষ্ট।

দারুন লাগল।

স্নিগ্ধা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, অনিকেত!!

নিঝুম এর ছবি

আমি আমার নিজের সংকীর্ণতা দেখেই মাঝে মাঝে এত লজ্জা পাই তাই এসব আলোচনার ক্ষেত্রে চুপ করে থাকাটাই বোধহয় শ্রেয় । নিজেকে প্রায়ই সান্তনা দেই... দোষ গুণ নিয়েই মানুষ... জানি মিথ্যে... তবুও... ওই যে... সান্তনা ।
--------------------------------------------------------
... বাড়িতে বউ ছেলেমেয়ের গালি খাবেন, 'কীসের মুক্তিযোদ্ধা তুমি, কী দিয়েছ আমাদের'? তিনি তখন আবারো বাড়ির বাইরে যাবেন, আবারো কান পাতবেন, মা জননী কি ডাক দিল?

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

স্নিগ্ধা এর ছবি

আমিও নিজের জন্য প্রায়শই লজ্জিত হই, কি আর করা......

জল এর ছবি

অতি ভালো লেখা।

স্নিগ্ধা এর ছবি

ধন্যবাদ, জল!

আলমগীর এর ছবি

কী দরকার বদলের? মানুষ বলেই তো সংকীর্ণতা নাকি?
+৫× তারা

স্নিগ্ধা এর ছবি

ঠিক, ঠিক! তাও যে পাঁচতারা দিলেন (নাকি দিলেন না?) !

সুমন সুপান্থ এর ছবি

হু, অন্তর বিকশিত হোক.... ।
ভালো লাগলো,লাগার মতোই লেখা - অভিবাদন স্নিগ্ধা ।

---------------------------------------------------------

আমার কোন ঘর নেই !
আছে শুধু ঘরের দিকে যাওয়া

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

স্নিগ্ধা এর ছবি

অভিবাদন সানন্দে গ্রহন করলাম, ধন্যবাদ হাসি

মুশফিকা মুমু এর ছবি

অসাধারণ লিখেছেন আপু, আসলেই, আপনার মত করে যদি সবাই ভাবত .... মন খারাপ
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

স্নিগ্ধা এর ছবি

আরে ধূর মুমু - আমি নিজে কোনদিকেই উন্নততর কিছু
নই মন খারাপ

অবাঞ্ছিত এর ছবি

মানসিক সংকীর্তনতার কথা বললে প্রথমেই মনে পড়ে আমার এক পরিচিত ব্যক্তির কথা যার হবি হল নারীসঙ্গ । কিন্তু প্রায়ই বলেন যে তিনি বাঙালী কুমারী মেয়ে ছাড়া বিয়ে করবেন না। দুঃখজনক।

মানসিক সংকীর্ণতা ওয়েস্ট এও কম নেই। কালোদের প্রতি নেতীবাচক মনোভাব তো সেখান থেকেই ধার করা। যেমন ওবামার প্রতি মানুষের সন্দিহান দৃষ্টি।

আমার এক পরিচিত (কলিগ) বাঙালী মুসলিম ভদ্রলোক সবিনয়ে আমাদের বাসায় দাওয়াত প্রত্যাখান করেন কারন উনি হালাল মাংস ছাড়া খান না। বিধর্মীদের বাসায় সেকারনেই উনার যেতে আপত্তি।

বলতে শুরু করলে যুগ পার হয়ে যাবে.... সংকীর্ণতা আর ভণ্ডামি মনে হয় বেশ সম্পর্কিত।

I think , therefore i am - Descartes

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

স্নিগ্ধা এর ছবি

মানসিক সঙ্কীর্ণতা পশ্চিমে কম থাকবেই বা কেন। এটাই বলতে চেয়েছিলাম - সবখানেই মানুষ এক হতে পারে, সবখানেই কিছু ভালো মানুষ থাকে।

পড়ার জন্য ধন্যবাদ!

রাফি এর ছবি

সমস্যা হল এই অবস্থাটা চলে আসছে বছরের পর বছর; অনেকেই এ বিষয়টা নিয়ে ভাবছেন। কিন্তু বিষয়গুলোর মূল এত গভীরে যে কেউ নিজ থেকে অনুভব না করলে এ থেকে বের হয়ে আসা কঠিন।
আমার নিজের কথা যদি বলতে হয়, আপনার উল্লেখিত ঘটনাগুলোর সমপর্যায়ের পাপ আমিও মাঝে মাঝে করি , শুধু ঘটনার পর মনে হয় ভুল করেছি, ভুল করেছি।
সময়োপযোগী লেখা...

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

স্নিগ্ধা এর ছবি

ভুল করেছেন যে মনে করেন, সেটাই তো একসময় আরো ভুল করতে বাধা দেবে। সেটাই তো কাম্য!

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

মানুষ হিসেবে আমি খুব সাধারণমাপের, সাধারণ মানের। আমি আমার অনেক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে পারি নি, হয়তো কখনও পারবোও না। কিন্তু তবুও জীবনে কিছু জিনিষ আমি মেনে চলার চেষ্টা করি, করেই যাই - আমি যেন কোনদিন আরো সংকীর্ণ, আরো বদ্ধ, আরো অন্ধকার মনের অধিকারী না হয়ে পড়ি।
এটুকুই আমার চাওয়া - অন্তর যেন হয় বিকশিত, সততই।

নুরুজ্জামান মানিক
************************************

বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

স্নিগ্ধা এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

তারেক এর ছবি

চমৎকার লেখা। চলুক
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

স্নিগ্ধা এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

প্রতিটা সমস্যা নিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনা করা যায়। স্টেরিওটাইপিং, বর্ণবৈষম্য এসব তো সমাজেরই একটা অংশ হয়ে গেছে। আমিও এর বাইরে নই। তবে একটা পর্যায় পর্যন্ত একে হয়ত সহনীয় গণ্য করা যায়।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

স্নিগ্ধা এর ছবি

তবে একটা পর্যায় পর্যন্ত একে হয়ত সহনীয় গণ্য করা যায়।

যে এই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, আর যে ওরকম ব্যবহার করছে, তাদের মধ্যে পর্যায়ের স্তর নিয়ে মতবিরোধ থাকতে পারে, তখন আমরা কোনটাকে সহনীয় স্তর ধরবো ?

সুরভি এর ছবি

সুরভি
গঠনমূলক লেখার জন্য ধন্যবাদ ॥

সুরভি

স্নিগ্ধা এর ছবি

ধন্যবাদ, সুরভি হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রিয় স্নিগ্ধা, ‘ব্যক্তি’ আমাকে (আমাদের প্রত্যেককে অর্থে) এমন নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে দেবার জন্য ধণ্যবাদ। সংকীর্নতা বলুন, সংস্কার বলুন, এনলাইটেনমেন্টের ঘাটতি বলুন, ভুল শিক্ষা বলুন, দুর্বল পরিবেশ বলুন এদের প্রত্যেকটাই আমাদের জীবনে বিদ্যমান। আমরা সাধারণ মানুষ বলেই এই সীমাবদ্ধতাটা থেকেই যায়। প্রায়ই সেই কুৎসিৎ মুখ উঁকি দেয়।

তারপরও আমরা “প্রগতিশীল” এই অর্থে যে, আমরা গভীরভাবে চিন্তা করলে বা অন্য কেউ ধরিয়ে দিলে ভুলগুলো বা অসংগত আচরনগুলো বুঝতে পারি। এনিয়ে আমাদের লজ্জাবোধ আছে, অনুশোচনা আছে, ক্ষমা চাইবার সাহস আছে, সংশোধনের প্রয়াস আছে। এরপরও যে পদস্খলন হয় না তা নয়। প্রতিনিয়ত হয়, আবার প্রতিনিয়তই প্রায়শ্চিত্ত করি। আমাদের আশার জায়গাটা এইখানে।

কিন্তু আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির এই বিষয়গুলোর পরিবর্তন হয় না কেন? কেন সত্যিকারের সমাজ-প্রগতি তৈরী হয় না? একটা বড় কারন হচ্ছে এশিয়াতে রেনেসাঁ সংগঠিত না হওয়া। এর বাইরে চিন্তার জগতে সামন্ততান্ত্রিক অবশেষ থেকে যাওয়া, জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক আমলে চর্চিত মুৎসুদ্দী সংস্কৃতিকে ধরে রাখা, ইণ্ডিভিজ্যুয়ালিজমকে অবজ্ঞা করা এসব কারনও আছে। এই সীমাবদ্ধতাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একা, অঞ্চলগতভাবে বা দেশগতভাবে দূর করা সম্ভব নয়। এর জন্য যে সম্মিলিত প্রয়াস দরকার সে রকম দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ বা জাতি এশিয়াতে চোখে পড়ে না বললেই চলে।

তারপরও আপনি যে প্রার্থনা করেছেন তা আমদের সবার জন্য সত্যি হবে। কেননা আমরা চোখের পাতা না কাঁপিয়ে অপরাধ করতে পারি না। সংস্কারগুলো নিয়ে কখনো কখনো স্থান-কাল-পাত্র বুঝে এঁড়ে তর্কও করি তবু নিজের কাছে নিজে বুঝি যে ঠিক করছিনা।

================================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

সংস্কারগুলো নিয়ে কখনো কখনো স্থান-কাল-পাত্র বুঝে এঁড়ে তর্কও করি তবু নিজের কাছে নিজে বুঝি যে ঠিক করছিনা।

আমরা বুঝে না বোঝার ভান করি

------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

স্নিগ্ধা এর ছবি

একটা বড় কারন হচ্ছে এশিয়াতে রেনেসাঁ সংগঠিত না হওয়া। এর বাইরে চিন্তার জগতে সামন্ততান্ত্রিক অবশেষ থেকে যাওয়া, জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক আমলে চর্চিত মুৎসুদ্দী সংস্কৃতিকে ধরে রাখা, ইণ্ডিভিজ্যুয়ালিজমকে অবজ্ঞা করা এসব কারনও আছে। এই সীমাবদ্ধতাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একা, অঞ্চলগতভাবে বা দেশগতভাবে দূর করা সম্ভব নয়। এর জন্য যে সম্মিলিত প্রয়াস দরকার সে রকম দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ বা জাতি এশিয়াতে চোখে পড়ে না বললেই চলে।

প্রিয় ষষ্ঠপান্ডব,

আপনার বক্তব্যের সাথে অনেকাংশে একমত, কিন্তু পুরোটা নই। রেঁনেসা ব্যাপারটাই একটা বেশ এলিট, এক্সক্লুডিং প্রসেস ছিলো না? আর শ্রেণিচেতনা বা বলা ভালো শ্রেণীসংকীর্ণতা কারণ অবশ্যই কিন্তু প্রধান কারণ বলে আমি মনে করি না। উচ্চতর শ্রেনীতে অবস্থিত ব্যক্তিও কিন্তু বৈষম্যের শিকার হয়, হতে পারে। আমার মতে, কারো সামাজিক অবস্থান বা স্ট্যাটাসের সবচাইতে বড় নির্ণায়ক শ্রেণী ঠিকই কিন্তু তার সাথে সমান্তরালে এবং অনেকসময় আরো প্রবলভাবেই বর্ণ বা ধর্ম বা জাতিগত পরিচয় বিরাট ভূমিকা রাখে। এ ব্যাপারটা সব জায়গায় ঠিক একইভাবে বোঝা যাবে না। যেখানে ইতোমধ্যেই কোন ধরণের বৈষম্য বা সোশ্যাল টেনশন বিদ্যমান - সেখানে এই ব্যাপারটা প্রকটভাবে বেরিয়ে আসে।

আর তেমন দূরদর্শী একজন ব্যক্তি এশিয়াতে নাই বা থাকলো, এককের দরকারই বা কি? আমরা সবাই যে যে যার যার মত করে সচেতন হয়ে, সচেতন করবার চেষ্টাটা রাখলেও কাজ হতে পারে?

অনেক ধন্যবাদ, আপনাকে। আবার লেখা পাচ্ছি কবে?

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

দারুণ বলেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব! একদম... একদম ঠিক!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধণ্যবাদ মৃদুল। আরো ধণ্যবাদ প্রতিপোস্ট লেখার জন্য। আমার ইচ্ছে ছিল এক রকম প্রতিপোস্ট লেখার, লিখতে গিয়ে নিজেকে সংযত করলাম এবং অল্পের উপর মন্তব্য করলাম। তাতেও মন্তব্য লম্বা হয়ে গেছে। আপনি আরেক রকম ভাবে নিজেকে ব্যক্ত করেছেন। আপনার আত্নোপলদ্ধি প্রকাশের সৎ সাহসকে সাধুবাদ জানাই।

=================================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কনফুসিয়াস এর ছবি

খুব ভাল পোস্ট। একদম যেন প্রতিদিনকার আমি, আমার প্রতিবেশ।
খুব বেশি রকম সত্যি কথা সব।

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

স্নিগ্ধা এর ছবি

ধন্যবাদ, কনফুসিয়াস! যে, যে দেশেই থাকি না কেন, আমাদের সবারই তো সেই একই পরিবেশ, প্রতিবেশ।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

ইয়া হাবিবি।
স্নিগ্ধাপু, লেখা সেরম হইছে। পড়ে আরো অনেককিছু জানলাম।

স্নিগ্ধা এর ছবি

ধন্যবাদটাও তাইলে সেরম ই দিলাম হাসি

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

নিঝুম লিখেছেন:
আমি আমার নিজের সংকীর্ণতা দেখেই মাঝে মাঝে এত লজ্জা পাই তাই এসব আলোচনার ক্ষেত্রে চুপ করে থাকাটাই বোধহয় শ্রেয় । নিজেকে প্রায়ই সান্তনা দেই... দোষ গুণ নিয়েই মানুষ... জানি মিথ্যে... তবুও... ওই যে... সান্তনা ।
--------------------------------------------------------
... বাড়িতে বউ ছেলেমেয়ের গালি খাবেন, 'কীসের মুক্তিযোদ্ধা তুমি, কী দিয়েছ আমাদের'? তিনি তখন আবারো বাড়ির বাইরে যাবেন, আবারো কান পাতবেন, মা জননী কি ডাক দিল?

আমার মনের কথা

------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

স্নিগ্ধা এর ছবি

হাসি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

চমৎকার এবং ভীষন সত্যনির্ভর একটা লেখা, স্নিগ্ধা।
অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ঝাড়ি দেয়ামূলক কথাগুলো আমি কখনোই গুছিয়ে বলতে পারি না।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

স্নিগ্ধা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, শিমুল হাসি

আরে, আগে বলবেন তো?! আমি খুব ভালো ঝাড়ি দিতে পারি, দরকার হলে একটা অনলাইন কোর্স অফার করবো চোখ টিপি

নিঘাত তিথি এর ছবি

সত্যিই, এই রকম সব সংকীর্ণতা নিয়েই আমাদের চারপাশের জগৎ , আমি নিজে সহ। তবু, আত্মোপলব্ধির সুযোগটুকু যদি নিজেকে করে দেয়া যায় তাহলে অনেক ভুল শুধরে নেয়া যায়- সেইখানেই মনুষ্যত্বের সার্থকতা। একটা বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ, প্রত্যেকটা মানুষের আলাদা স্বত্তাকে স্বীকার করে নেয়া, তুলনা না করা। জানি না, কতটা পারি...তবু চেষ্টা তো থাকেই।
ধন্যবাদ স্নিগ্ধা'দি, চমৎকার পোস্টের জন্য।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

স্নিগ্ধা এর ছবি

আত্মোপলব্ধি আর চেষ্টাই তো, সবাই যদি করতো ......

ধন্যবাদ তিথি, পড়ার জন্য হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অসাধারণ একটা পোস্ট। খুবই ভালো লাগল লেখাটা। সত্যিই, নিজের সাথেই যুদ্ধ করি প্রতিদিন, অসংখ্যবার। কখনো জয়ী হই, কখনো ব্যর্থ। .......

স্নিগ্ধা এর ছবি

চেষ্টাটাই বাকি কাজ করে দেবে।

ধন্যবাদ, পড়ার জন্য !

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমি সীমা অতিক্রম সম্ভব না মনে করে, সীমাকে এমন ভাবে বাড়াতে চাই যাতে তাতে সব মানুষ এঁটে যায়। কোনো মানুষকেই যেখানে আর 'পর' ভাববার প্রয়োজন না থাকে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

স্নিগ্ধা এর ছবি

আপনার এই চমৎকার মন্তব্যের পর, আর কি বলার থাকতে পারে? হাসি

মনজুরাউল এর ছবি

মানুষ আজন্মই সংকীর্ণ। গুহা যুগ থেকে পেন্টিয়াম যুগে উত্তরণের যতগুলো অনুপান ছিল_সংকীর্ণতা তার একটা। মানুষ যখন মঙ্গলে অবকাশ যাপনে যাবে, তখনো কম-বেশি সংকীর্ণই থাকবে।

ভাল পোস্ট। চিন্তার ঘা খুঁচিয়ে তাজা করে।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

স্নিগ্ধা এর ছবি

তাই কি? মানুষের অনেক উদারতার পরিচয় পেয়ে যে প্রতিনিয়তই মুগ্ধ হই, কৃতজ্ঞ হই?

আসলে আমরা সবরকমই হতে পারি, কোনরকম হবো কথাটা সেখানেই......

ধন্যবাদ, পড়ার জন্য!

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍অন্যের কপালে "সংকীর্ণমনা" তিলকটি লটকে দেয়ার আগে নিজের অন্তরমহলটি সাফ-সুতরো করাটা অপরিহার্য।

খুবই ঝাঁকুনি-দেয়া একটি লেখা।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও। - হুমায়ুন আজাদ

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

স্নিগ্ধা এর ছবি

সেটাই তো .........

ধন্যবাদ, ঝাঁকুনি-খাওয়া মন্তব্যের জন্য! হাসি

সচেতনা এর ছবি

প্রতিটি কথার সাথে সহমত হলাম। সত্যি কথা বলতে কি, একটা বিশেষ গন্ডীর বাইরে চিন্তা করার জন্য যে সাহস দরকার সেই সাহসই হারিয়ে ফেলেছি বুঝি আমরা। তবু যে কম হলেও কেউ না কেউ অন্যরকম ভাবেন এইটেই আশার কথা। এরকম অভিজ্ঞতা আমাদের সবারই আছে কম বেশি। শুধু যেটা নেই তা হলো মেনে না নেওয়ার মত মানসিকতা। সচেতন মানুষ নেই আমাদের চারপাশে তাও হয়তো নয়, আসলে সামাজিকভাবে চাপমুক্ত হতে পারার ক্ষমতার অভাবই এইসবের জন্য দায়ী। যা হয়তো অসম্ভব বলেই মনে হয় আপাতদৃষ্টিতে, আর তারই ফলশ্রুতি এই রকম বদ্ধ মানসিকতা। সমাজের অনুশাসনের দায় আসলেই বড় দায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। ব্যক্তি মানুষের প্রতি রেস্পেক্ট আমাদের সমাজে প্রায় দুর্লভ, তার ওপর সেই মানুষ যদি অন্যান্যদের থেকে কোনভাবে আলাদা হন তাহলে তো আর কথায় নেই। আমরাও সামাজিক পরিবেশের বা চিন্তাভাবনার বাইরে আসতে পারিনা। তবুতো বিদেশের সমাজ অনেক বেশি স্বচ্ছ চিন্তাভাবনায়, অনেক বেশি উদার আমাদের হিন্দু বা মুসলিম সমাজের তুলনায়। বহু উচ্চ শিক্ষিত মানুষকেও দেখেছি, হিন্দু বা মুসলিম যেই হোননা কেন, সামাজিক মেলামেশায় ধর্মীয় সীমারেখার বাইরে আসতে পারেন না। ব্যক্তিগত আচার ব্যবহারে মানুষ এত বেশি সংবেদনশীল যে প্রায়ই ভদ্রতাবোধের সীমা ছাড়াতে দ্বিধা করেনা। জন্মগত কারণে আমরা আলাদা, সে যেভাবেই আলাদা হই না কেন, কালো, সাদা, হিন্দু, মুসলিম, খ্রীষ্টান, এতে আমাদের নিজস্ব কোন ক্রেডিট নেই। নিজস্ব জীবনযাত্রার ধরণ ধারণের বাইরে আলাদা কিছুর মানেই যে তার মধ্যে সন্দেহজনক ব্যাপার আছে এই ভাবনায় বোধহয় আমাদের মানবিকমুখগুলোকে ওপরে উঠতে দেয় না।
এই যে চেক আউট অপারেটরের কথা লিখেছেন, এতো রোজই দেখছি। এইসব খুবই ভাবায়। যখন দেখি যে সাদারা আমাদের মত কালোদের উপেক্ষা করছে যেমন সেই একইভাবে কালোরাও নিজের মানুষদের উপেক্ষা করছে। আমার নিজের মনে হয় অবচেতন মনে হয়তো একধরণের ভয় বা হীনমন্যতা কাজ করে। ঔপনিবেশিক মানসিকতা এখনও ঝেড়ে ফেলতে পারিনি আমরা। শ্রেনীসচেতনতা অবশ্যই বড় কারণ, সবক্ষেত্রেই। এই মানসিকতা যে আমাদের নিজেদেরই কতটা ছোট করে দেয় নিজেদের কাছে, সে কে বোঝাবে।
আপনার প্রতিটি অভিজ্ঞতা আমাদের সবারই অভিজ্ঞতা আসলে। স্টিরিওটাইপিং, প্যাট্রোনাইশিং সহজে যাওয়ার নয়। নিজেদের ব্যক্তিগত কারণের জন্যই শুধুমাত্র নয় এই নিয়ে সত্যিই কিন্তু ভাবা দরকার আমাদের সবারই। আপনি খুব সুন্দরভাবে গুছিয়ে লিখেছেন, স্নিগ্ধা। আপনার দেখার চোখ ও অনুভব যে কিছু মানুষকে ভাবালো, তার জন্য আপনার যথেষ্ঠ প্রশংসা প্রাপ্য। আপনার লেখার জন্য আগ্রহে থাকবো। আমার নিজের ত্রুটিও যে কত, এও বোঝা দরকার। ভাল লাগলো।

স্নিগ্ধা এর ছবি

ধন্যবাদ, সচেতনা, অনেক অনেক হাসি

পলাশ দত্ত এর ছবি

এইরকম সত্যি কথা এইভাবে!

নিজেদের জন্য নিজেরই খারাপ লাগতেছ।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

স্নিগ্ধা এর ছবি

আমারও মন খারাপ

রূপক কর্মকার এর ছবি

রবীন্দ্রনাথও একই মানবিকতা জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন তার ‌গোরা' উপন্যাসে, যা স্নিগ্ধা তার লেখায়। স্নিগ্ধার কাঙ্ক্ষিত পৃথিবীই আমাদের চাওয়া। আবার এর বিপরীত চাওয়াও আছে। না থাকলে শামসুর রাহমানকে 'উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ'কবিতাটি লিখতে হত না। হুমায়ুন আজাদের বুকও চাপাতির আঘাতে রক্তাক্ত হত না।

.................................................................................
"নোবেল-বুকার নিয়ে এত কেন ফুর্তি করে বোকা পাঠকেরা?/মিডিয়ার উলুবনে সবই যেনতেনপ্রকারেণ।/প্রাচ্যের পদক হাতে স্নানে যায় বনলতা সেন।" -আবু হাসান শাহরিয়ার

____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

অতিথি লেখক এর ছবি

আপুনি, সচলে নুতন নাক গলিয়েছি ...তোমার ,তোমাদের সব লেখা খুঁজে খুঁজে পড়ছি....*তিথীডোর

নৈষাদ এর ছবি

আগে পড়া হয়নি। চমৎকার লেখা।

স্নিগ্ধা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।