মেয়েটাকে আমি বিশেষ পছন্দ করি না। এমনিতে সে খারাপ কিছু নয় - কথাবার্তায় ভদ্র , বন্ধুভাবাপন্ন, কিছুটা হাসি খুশিও। কিন্তু তবু মেয়েটাকে আমি পছন্দ করি না। আমার সাথে তার এক অদ্ভূত রেষারেষি। যা যা আমার ভালো লাগার, যা যা আমার কষ্ট পাওয়ার, যা যা আমাকে ছেঁড়া কাগজের মতো ছিটকে ফেলার ক্ষমতা রাখে - কি করে কি করে যেন তাতে সে ভাগ বসায়! আমার পছন্দের বইগুলো সে পড়বেই পড়বে। ভালো লাগার গানগুলো না শুনে ছাড়বেই না। তার চাইতেও অসহনীয় - আমার পছন্দের মানুষগুলোকে নিয়ে তার কি যে উৎসাহ!!
ঈর্ষায় আমি স্তব্ধ হয়ে যাই, যখন দেখি আমার প্রিয়জনেরা ওকেও ভালবাসছে ! মাঝে মাঝে মনে হয় আমার চাইতে বেশীই। কি ভাবে যেন ও ঠিক ঠিক টের পেয়ে যায় আমার সবচাইতে কোমল না বলা কথাগুলো, কিভাবে যেন জেনে যায় আমার দূর্বলতম অনুভূতিগুলো -
আর তারপর - ওই যে, ওই কেমন একরকম করে যে তাকায় আমার দিকে, ‘বুঝি, আমি বুঝি’ দৃষ্টি নিয়ে মুচকি হাসে, কেমন এক ধরনের পিঠ চাপড়ানোর সুরে আমাকে সান্ত্বনা দিতে আসে, “জীবন তো এরকমই “ ধরনের কিছু আপ্তবাক্য শোনাতে আসে - আমার তখন অসহ্য লাগে! আমার তখন ভয়ঙ্কর, ভয়ঙ্কর রাগ হয়!
তার সাথে আমার মিল অনেক। আমার রুচি, দৃষ্টিভঙ্গি, জীবনকে দেখার চোখ - অনেক কিছুতেই আমরা একে অপরের সম্পূরক। তাকে আমার ভালোও লাগে অনেক - অস্বীকার করি না। কিন্তু তবুও মেয়েটাকে আমি বিশেষ পছন্দ করি না!
মেয়েটার সাথে পরিচয় আমার বেশীদিনের নয়। কিন্তু এই অল্পদিনেই আমি বুঝেছি, আমি চাই বা না চাই আমার নিয়তি ওর সাথে বাঁধা। আমি চাই বা না চাই, ওকে আমার সহ্য অন্ততঃ করে যেতেই হবে। এবার দেশে গিয়ে সেটা আরো ভালো বুঝতে পারলাম।
ঢাকা তো আমার জন্য শুধু একটা জায়গা নয়, এখনও রয়ে যাওয়া বহু প্রিয়জনদের দেখা পাওয়া নয়, শুধু নষ্টালজিয়ায় আক্রান্ত হবার একটা উপলক্ষ্যই নয় - ঢাকাতে যে কেটেছে আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময় - আমার আকৈশোর প্রেমের, আমার সবচাইতে কাছের বন্ধুর সাথে পরিচয় হওয়া আর একসাথে বেড়ে ওঠা। একটা বই বা গান বা মজার একটা ঘটনা কিংবা নাহয় হলোই অহেতুক কোন ছেলেমানুষী অভিমান বা আবেগী কথা - দিনের শেষে তার সাথে ভাগ না করে নিলে তো চলতো না আমার। চলতো না তারও। মার কড়া শাসনের ফলে বাড়ি থেকে বেশী বেরুতে পারতাম না সেই অল্পবয়সে, ইচ্ছে থাকলেও একসাথে ঘোরাঘুরি করতে পারতাম না সাধ মিটিয়ে। কিন্তু তারপরও কিছু কি আটকাতো? ফরাসী সিনেমার মহাভক্ত ছিলো সে। আঁলিয়াস ফ্রাসেজ এ সিনেমা দেখে তাই রাতে ফোনে আমাকে সেটার গল্প শোনাতো। বইমেলা, বটমূল, রিক্সায় ঘোরা, আর কথা আর কথা আর কথা ...... অন্তহীন কথার স্রোত। বয়ঃসন্ধির সেই একসাথে বেড়ে ওঠা, স্বপ্ন দেখা, জীবন নিয়ে অজস্র পরিকল্পনা, আর ঝগড়া, আর পারস্পরিক নির্ভরতা, আর বন্ধুতা , আর প্রেম, আর ...... আর, আরো যে কত কিছু নিয়ে আমার সেই ঢাকা, এই ঢাকা।
কিন্তু, আমার সেই তীব্রস্মৃতিময়তার শহরও দেখলাম আর শুধু আমার নেই। আবিষ্কার করলাম মেয়েটা ভাগ বসিয়েছে তাতেও। ও নাকি ভালোবাসত তাকেও! যা কিছু তার ছিলো আমার সাথে, যা কিছু এতদিন আমি ভেবে এসেছি শুধু আমাদের দুজনের, আসলে তা ছিলো না। মেয়েটা ছিলোই, শুধু আমিই জানতাম না! আমি মেয়েটার অস্তিত্বের কথাই জানতাম না। জেনেছি অনেক, অনেক পরে - এই অল্প কিছুদিন হলো। কত হবে? বছর দুয়েক।
আর এই দু’বছরে বুঝেছি - মেয়েটা ভয়ঙ্কর হ্যাংলা! শত চেষ্টা করেও আমার পিছু তাকে ছাড়াতে পারি নি। মাঝে মাঝে যখন মনে হয় কষ্টগুলো আক্ষরিক অর্থেই তীক্ষ্ণ বর্শার মতো আমাকে ক্রমাগত বিঁধছে আর বিঁধছে, মন খারাপের একাকী মুহূর্তগুলোতে কুঁকড়ে গোল হয়ে শুয়ে যখন সময়টা পার করার প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকি - মেয়েটা আসে। অনাহুতের মতো, অনধিকারীর মতো, নির্লজ্জের মতো, বন্ধুর মতো - সে আসে।
কিছুই করে না - শুধু আমার হাতে হাত রেখে চুপ করে বসে থাকে।
কিছুই বলে না - শুধু তার ধরে থাকা হাতের উত্তাপ থেকে আমি বুঝতে পারি জীবন কি প্রবল একটা ব্যাপার।
কি বিশাল ব্যাপ্তি তার! কোন কিছুর পরেই তাই - ভালো থাকার, আনন্দে থাকার দূর্নিবার, অদম্য পিপাসা আমার আর যায় না।
অবশেষে আমি বুঝতে পারি - আমিও ওই মেয়েটার মতোনই হ্যাংলা। সে আমাকে ছাড়ে না আর আমি ছাড়ি না জীবন। আমি আর সে - খুব কি আলাদা?
মন্তব্য
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
এত চিন্তিত হয়ে পড়লেন কেন?
কার কথা বললেন বুঝতে পারলাম কিনা সেটা বুঝতে পারলাম না তাই আরকি
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
আপনি কি বুঝতে পারলেন, সেটা বুঝতে পারলাম না, তাই বোঝাতে পারলাম না আপনি ঠিক না ভুল
একটা লেখাকে অনেক মাত্রা থেকেই হয়তো বিচার করা যায়।
মন বিষণ্ণ বলেই হয়তো, লেখাটার বিষণ্ণ মাত্রাটাকেই খুঁজে পেলাম। অনেক খারাপ হয়ে থাকা মনটা আরো একটু খারাপ হয়ে গেলো।
লেখায় জাঝা
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
সেটা একদমই চাই নাই, সবজান্তা । ভালো থাকো।
আপনার লেখায় এর আগে কখনও 'বিষন্নতা' শব্দটার দেখা পাইনি । এ লেখায় সেটা পেলাম বেশ তীব্রভাবে । তাই হয়তো মন একটু বেশীই ছূঁয়ে গেলো। তারপর ও বলছি আপনাকে বোধ হয় সব সময় হাসি-খুশী ইমেজের একটা মানুষ হিসেবেই বেশী মানায় । এর আগে কখনও বলা হয়নি , তাই এই সুযোগে বলছি আমি আপনার সদা খুশীতে উচ্ছল ইমেজের ভক্ত হয়ে গেছি । আর হ্যা অন্য মেয়েটি কি আপনারই আরেকটা সত্ত্বা ?ভালো থাকুন আপনি ।
নন্দিনী
ভালো আছি, নন্দিনী সুমন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!
হুমম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হুমম ...... (??)
হমম ... (আমিও বুঝসি !)
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
হুমম ...... (তাই??)
সম্প্রতিই,সচলায়তনে আমার একটা কবিতা পড়ে আপনি যেমন মন্তব্য করেছিলেন , এই কবিতাটা আপনার আর সব কবিতা থেকে আলাদা অন্য রকম ,আপনার এই লেখা পড়ে আমার ও তাই মনে হলো ! আপনার আর সব পোস্টের নিবিড় পাঠক আমি; টের পাচ্ছি এই লেখা অন্যমাত্রার । ভিন্ন তার প্রবাহ ।
ভালো লাগলো স্নিগ্ধা, ভীষণ ।
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
ধন্যবাদ, সুপান্থ !
হুমম ...... (??)
মেয়েটা আপনারই বনলতা সেন।
পুরো পাঁচতারা!
.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...
.......................................................................................
Simply joking around...
তাই? হবে হয়তো
হুমম! বুঝি নাই!!!
হুমম ...... (বুঝতেই হবে কেন?)
হুমমমম্ । বুঝছি কিন্তু কমু না।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
হুমম...... কইলেও কিন্তু শুনুম না!
সাপ নিজের খোলশকে আরেকটা সাপ ভাবে না। এরা পিছন পানে চলতে পারে না, অনুভবে শীতল, প্রয়োজনের বাইরে একাকী ও সাবলম্বী।
আপনি সাবলম্বী, তবে সাপ হয়ে যাননি এখনো। পূরনো খোলশটা তাই আরেকটা মেয়ে। আপনি হাঁটছেন পেছনে, নিজের হাত ধরে।
====
il faisait beau de connaître une autre personne qui aime des films français.
আমি সবসময়ই সামনে হাঁটি, তবে আগেরটুকু সঙ্গে নিয়েই
আপু অসাধারন লাগল, প্রচন্ড রকম
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
ধন্যবাদ, মুমু
বা: রে "মেয়েটা' !
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
মানুষ মাত্রই দুই স্বত্ত্বা-------একই সাথে --------- একই রকম। না চাইলেও ঐ দু'জনই হাতে হাত রেখে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে পথ চলায়-------।
আপনার লেখাটা চমৎকার।
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
ধন্যবাদ, ক্যামেলিয়া
খুব সুন্দর।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
ধন্যবাদ
বুঝলাম যে, কিছু একটা বুঝলাম না।
তবে কী বুঝলাম না, তা এখনও বুঝলাম না
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
আমি বুঝেছি যে, আপনি বুঝতে পারেন নি।
তবে যা বুঝলেন না, তা সুখী মানুষেরা বোঝেও না
তবে তাই হোক।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
আমি তো সুখী মানুষ নই স্নিগ্ধা, আমিও বুঝলাম না কেনো?
তার মানে হয়তো আপনি জানেন না, কিন্তু আসলে আপনি একজন সুখী মানুষ?
অবশ্য, এটা বলছি না যে, যারা বুঝেছে তারা অ-সুখী, কিন্তু যারা বোঝেনি তারা নির্ঘাৎ সুখী। অন্ততঃ আমার সন্দেহ তাইই
আমি তো বুঝলাম।
কিন্তু আমি তো একজন সুখী মানুষ।
তার মানে আমি কি আসলে বুঝি নাই?
নাকি ভুল বুঝলাম?
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আরে না না, যারা বুঝেছে তারা সুখী অথবা অ-সুখী দুইই হতে পারে, কিন্তু যারা বোঝেনি তারা নিশ্চিত সুখী ।
আপনি যে একজন সুখী মানুষ, সেটা আমি বরাবরই সন্দেহ করি
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
অভিজিৎরে দরকার এন্টিহিউম্যানঘটিত কোন ব্যাপার হবে।
যা বুঝতে পারলাম, নিজেরে নিয়াই লিখছেন। ঢাকায় গিয়া মাথার সব তার, কানেকশন ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেছে, এই জন্য সর্বনামগুলো উল্টাপাল্টা। এও হইতে পারে আমারে কবিতা লেখতে দেইখা সেই যে মাথা ঘুরান দিছে, এখনও থামে নাই।
যদি ঠিক না বুঝি তাইলে ধরতে হবে আমার মাথার তারই উল্টাপাল্টা হয়ে আছে
বুঝি নাই -
এই তো আপনি একদম ঠিক বুঝেছেন
অসম্ভবের বিজ্ঞান লিখতেছে না? সব কিছুরই নাকি একটা করে এন্টি আছে। যেমন, এন্টিম্যাটার, এন্টিগল্প ইত্যাদি। ওই মেয়েটা এন্টিস্নিগ্ধা হওয়ার কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
বুঝছি বললেন বলে, আপনে যেইটা বুঝেন নাই সেইটাও বুঝানোর বিস্তারিত চেষ্টা করলাম।
পুনশ্চ: কোন দেশে আছেন এখন? এ না বি?
এ তে আসছি ফেরৎ।
নিজে 'সুখী মানুষ' না জন্যই বুঝতে পারলাম লেখাটা, বেশ ভাল ভাবেই! দারুন লিখসেন আপু
সুন্দর লেখা
এই লেখাটায় আপনাকে যতটা জানলাম, ততটা আগে আর হয়নি। শঙ্খ ঘোষের একটি কবিতার পংক্তি খুব মনে পড়ে মাঝে মাঝে, এতদিন ওটাকে নিজের করে ভাবার স্বত্ব আমার ছিল, আপনাকে কি তার থেকে ভাগ দিতে পারি? আমার কথা হয় না, এটা বোঝাতে ওটা বুঝিয়ে ফেলি। তারপরও বলি,
'একদিন আমার দুঃখের কাছে তোমাকেও নত হতে হবে'
সেটাই হল আমার।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
নতুন মন্তব্য করুন