নো ওয়ান রাইটস টু দ্য কর্নেল - নিঃসঙ্গতার বিস্তৃত ক্যানভাসে

সবজান্তা এর ছবি
লিখেছেন সবজান্তা (তারিখ: শুক্র, ০৫/০৯/২০০৮ - ২:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ - নামটা শুনলেই যেন চোখের সামনে ভেসে উঠে দক্ষিন আমেরিকা, বিপ্লব, জাদু বাস্তবতা আর নিঃসঙ্গতা। জাদু-বাস্তবতা বাদে আর বাকি সবকটি উপাদান নিয়েই গড়ে উঠেছে “নো ওয়ান রাইটস টু দ্য কর্নেল” উপন্যাসিকা( Novella )টি। এই গল্পের পটভূমি হিসেবে মার্কেজ ব্যবহার করেছেন কলম্বিয়ার “লা ভায়োলেন্সিয়ার” দিনগুলিকে, যখন সেনাশাসন আর নানা ধরণের সেন্সরশিপ আরোপ করা হচ্ছে সমাজের সর্বত্র।

গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র একজন বৃদ্ধ কর্নেল, যিনি মাত্র বিশ বছর বয়েসেই কর্নেল উপাধি পেয়েছিলেন কর্নেল অরলিয়েনো বুয়েন্দিয়ার ০১ সাথে বিপ্লবে অংশ নিয়ে। কাহিনী মূলত এগিয়ে চলে বৃদ্ধ কর্নেল, তাঁর হাঁপানি আক্রান্ত স্ত্রী এবং তাঁদের দারিদ্র্যক্লিষ্ট জীবনের নানা অনুষঙ্গকে নিয়ে। কর্নেল প্রায় পনের বছর ধরে অপেক্ষা করে আছেন প্রতিশ্রুত পেনশন পাবার আশায়। প্রতি শুক্রবারই তিনি লঞ্চঘাটে যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন পেনশনের চিঠির অপেক্ষায়। সদ্যপ্রয়াত ছেলের রেখে যাওয়া মোরগটিকে তিনি সযত্নে লালন করেন মোরগ লড়াই এ অংশ নেওয়ানোর জন্য, নিজে অভুক্ত থাকেন শুধু মাত্র মোরগটিকে এক বেলা খাওয়ানোর জন্য।

অনুবাদ-প্রচ্ছদ
এরকম বহুমাত্রিক টানাপোড়েনের সমান্তরালে লেখক নিখুঁত রেখায় একেঁছেন সমাজের চিত্র, আর ব্যক্তি কর্নেলের সার্বক্ষণিক লড়াই, নিজের সাথে নিজের। যিনি প্রতিনিয়ত অনুভব করেন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে।কর্নেলের দারিদ্র্যটুকু বেশ প্রকটভাবেই ফুটে উঠে প্রথম লাইনে যখন লেখক বলেন,

……… একটি চাকুর সরু মাথা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কফির সর্বশেষ দানাটা পর্যন্ত কেতলির সাথে মেশালেন। কফি টিনের কিছু মরচের গুড়াও হয়তো তাতে মিশে গেল………

কিন্তু দারিদ্র্যের চরমতম কষাঘাতেও কর্নেল তার আভিজাত্যবোধ কিংবা আত্মাভিমানে বিন্দুমাত্র আঁচড় লাগতে দেননি। তাই উপন্যাসিকটা মূলত একজন বৃদ্ধ, নিঃসংগ পরাজিতের সৈনিকের মনঃস্তাত্বিক দ্বন্দ্বের কাহিনী। একদিকে যখন দিনে কীভাবে খাবার জোটাবেন সেই চিন্তা করেছেন, সেই একই লোকই আবার তার পোষা নধর কান্তি মোরগটি বিক্রি করেও, পরবর্তীতে মত পালটে অগ্রিম নেওয়া টাকাটুকু ফেরত দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।

মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্বের পাশাপাশি সমস্ত উপন্যাসটিই কলম্বিয়ার তৎকালীন সময়ের চিত্রকে ধারণ করে। দুর্নীতিগ্রস্ত সামরিক শাসনাধীন, ধর্ম প্রভাবান্বিত এক সমাজকেই আমরা দেখতে পাই, যখন কর্নেলের ছেলেকে হত্যা করা হয় মোরগ লড়াই এর আসরে কিংবা গির্জার যাজক ঘন্টাধ্বণি বাজিয়ে সিনেমার সেন্সরশিপ ঘোষণা করেন এবং দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করেন কারা সেই সিনেমা দেখতে যাচ্ছে। এ উপন্যাসিকাতেই আমরা তৎকালীন কলম্বিয়াতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার এক কুটিল রূপ এর দেখা পাই , যখন কর্নেলের উকিল তাঁকে জানান যে, ফাইল এখন কোন দপ্তরে আটকা পড়ে আছে তা জানা প্রায় অসম্ভব এক ব্যাপার। এসব অনিয়মের সমান্তরলেই লেখক একেঁছেন সামন্ততান্ত্রিক সমাজের চিরায়ত রূপ। ‘শাবাস’ নামের যে লোক একসময় কর্নেলের গ্রামে এসেছিলো গলায় সাপ জড়িয়ে ঔষধ বিক্রি করতে, নানা রকম কারসাজিতে সেই বনে যায় সমাজের সবচেয়ে বড় মহাজন - লোক ঠকানোতে যিনি সিদ্ধহস্ত। তৎকালীন সমাজের অসঙ্গতি আর বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের প্রকট রূপের কথা জানতে পারি যখন গল্পের প্রথম ভাগেই লেখক জানান, বহুদিন পর সে গ্রামে একজন লোক সুস্থ-স্বাভাবিক নিয়মে মারা গিয়েছেন।

এত সব অনাচার, অবিচার আর হাহাকারের মধ্যেও টানটান হয়ে থাকে কর্নেলের আত্মাভিমান। এ কথা আমরা আরো স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি যখন কর্নেলের স্ত্রী বলেন,

………আমরা অনেক দিন চুলায় হাড়ি উঠাই নি। এটা প্রতিবেশিরা যাতে বুঝতে না পারে সে জন্য কত দিন আমি পাথর কুড়িয়ে হাড়িতে সিদ্ধ করেছি ………

প্রতিনিয়ত কর্নেলের মধ্যে দুটি বিপরীত সত্বা কাজ করেছে, একটি চেয়েছে মোরগটিকে বিক্রি করে নিজেদের উদরপূর্তি করতে, একই সাথে অপরটি চেয়েছে যেই ‘শাবাস’ নামক মহাজনের কাছে বিক্রি করবে, তার দেখা যেন আজকে না পাওয়া যায়। প্রচ্ছন্নভাবে বোঝা যায়, এত দারিদ্র্যের মধ্যেও কর্নেল স্বপ্ন দেখেছেন - স্বপ্ন দেখেছেন তাঁর পেনশনের টাকা ফেরত পাবার কিংবা মোরগ লড়াইয়ে জিতে নিজের দিন বদলের , হয়তোবা নতুন কোন বিপ্লবেরও। এই স্বপ্নের সবকিছুই অনিশ্চিত হয়ে যায়, যখন পোস্টমাস্টারের নিঃস্পৃহ কন্ঠে শোনা যায়ঃ

কর্নেল, নিশ্চিত করে মানুষের জীবনে যা আসে তার নাম মৃত্যু

সেই মৃত্যুকে নিশ্চিত জেনেও কর্নেল লড়াই করে চলেন মোরগটাকে বিক্রি না করার জন্য। উপন্যাসিকাটির শেষ তাই অনেক বেশি আকর্ষনীয়, যখন কর্নেল পচাত্তর বছরে দেনা-পাওনার হিসেব মিটিয়ে নিস্পৃহ ভঙ্গিতে জীবনের মৌলিক সমস্যার সমাধান করেন।

এভাবেই লেখক বিস্তৃত ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন নিঃসঙ্গতাকে। দারিদ্র্য আর আত্মাভিমান সবকিছু ছাপিয়ে অন্তরালের নিঃসঙ্গতাই এ গল্পে মুখ্য হয়ে উঠে। গল্পের প্রতিটি ক্ষণ পাঠক, কর্নেলের চরিত্রের সাথে মিশে যান, অনুভব করেন সেই তীক্ষ্ণ জীবন যন্ত্রনা, শতবর্ষের বয়ে চলা নিরন্তর নিঃসঙ্গতাকে। আর এভাবেই নো ওয়ান রাইটস টু দ্য কর্নেল হয়ে উঠে একটি সার্থক মার্কেজীয় রচনা।


ছবিঃ উইকিপিডিয়া

০১* কর্নেল অরলিয়েনো বুয়েন্দিয়া - মার্কেজ রচিত নিঃসঙ্গতার শতবর্ষ উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র। এই উপন্যাসের জন্য মার্কেজ সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন।


মন্তব্য

সবজান্তা এর ছবি

কিছুদিন আগেই শেষ হলো ঐতিহ্য প্রকাশনীর মাসব্যাপী বাৎসরিক সেল, সেখান থেকেই কিনেছিলাম গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের “নো ওয়ান রাইটস টু দ্য কর্নেল” , যার অনুবাদ করেছেন অশোক দাশগুপ্ত। মার্কেজের শতবর্ষের নিঃসঙ্গতা পড়েছিলাম জি এইচ হাবীবের অনুবাদে। প্রচন্ড বিরক্তিকর সেই অনুবাদ পড়ার পর থেকেই খুব সাবধানী হয়ে গিয়েছিলাম অনুবাদ পড়ার ক্ষেত্রে, বিশেষত মার্কেজের লেখার অনুবাদগুলি। কিন্তু সেই ভয় অনেকটাই দূর করে দিয়েছেন অনুবাদক , চমৎকার ঝরঝরে একটি অনুবাদ উপহার দিয়ে। মূলত তাঁর চমৎকার অনুবাদের কারণেই বইটি অনেকাংশে সুখপাঠ্য হয়েছে ( অবশ্যই সবার আগে প্রধান কৃতিত্ব মূল লেখকের ), এবং আমি বইটি নিয়ে দুটি কথা বলার সাহস যোগাতে পেরেছি।


অলমিতি বিস্তারেণ

জাহেদ সরওয়ার এর ছবি

এ বইটির সবচাইতে বিশ্বস্ত ও ঝরঝরে অনুবাদটি মনে হয় মানবেন্দ্র বন্দোপাধ্যায় কৃত।
এই নভেলেটের এক্কবারে শেষের লাইনগুলো মনে হয় সে কোন শাষকদের বিরুদ্ধে শানিত মারনাস্ত্রের মতো।
মোরগ বিক্রি করার জন্য কর্নেল যখন বউকে সাধাসাধি করছিলো তখন বই জানতে চাইছিল এরপর তারা কি খাবে
বুড়ো কর্নেল তখন উচ্চারণ করছিলো শুধো একটি শব্দ শিট অথবা গু। আপনাকে ধন্যবাদ সবজান্তা। যদি ইতিমধ্যে না পড়ে থাকেন মানবেন্দ্রর অনুবাদে ইনোসেন্ট ইরিন্দিরা বইটা পড়ার অনুরোধ রইল। কবীর চৌধুরী অনুবাদকৃত লভ ইন দা টাইম অব কলেরা( কলেরার সময়ে প্রেম) বইটা ভাল হয়েছে।

*********************************************

সবজান্তা এর ছবি

মানবেন্দ্র বন্দোপাধ্যায় এর অনুবাদ পড়া হয়নি। তবে অশোক দাশগুপ্ত এর অনুবাদটি ভালোই লেগেছে। ইনোসেন্ট ইরেন্দিরার অনুবাদ পড়েছিলাম সুরেশ রঞ্জন বসাকের করা একটি অনুবাদ।

মানবেন্দ্র'র অনুবাদটি কোন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত, তা কি জানাতে পারবেন ? সেই সাথে আরেকটা অনুরোধ, শতবর্ষের নিঃসঙ্গতার ভালো কোন অনুবাদ কি সন্ধান দিতে পারেন ?

কবীর চৌধুরির লাভ ইন দ্য টাইম অভ কলেরা পড়া হয় নি, ( পাইপলাইনে আছে আপাতত ) তবে উনার অনুদিত ক্রনিকেল অভ আ ডেথ ফোরটোল্ড পড়েছি। দুঃখজনকভাবে সেই অনুবাদ ততোটা টানেনি।

ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।


অলমিতি বিস্তারেণ

জাহেদ সরওয়ার এর ছবি

সরি বই এর জায়গায় বউ হবে।

*********************************************

জাহেদ সরওয়ার এর ছবি

ওয়ান হানড্রেড ইয়ার্স অব সলিসিউড ইংরেজিটাই ভাল। তবে বাংলা অনুবাদে অপেক্ষাকৃতভাবে শরীফুজজামান ভুইয়াকৃত অনুবাদটা ভাল। আর মানবেন্দ্রর বই গুলো কলকাতার কোন একটা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত।

*********************************************

সৌরভ এর ছবি

অ্যামাজনে অর্ডার দিয়া আইলাম।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

সবজান্তা এর ছবি

খাইছে, আসলেই ??

তয় বইটা আমার খুব ভালো লাগছে।


অলমিতি বিস্তারেণ

সৌরভ এর ছবি

হ। এইটা দিলাম।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

সবজান্তা এর ছবি

লীফ স্টর্মটা পড়া হয় নাই, তবে ক্রনিকেল অভ আ ডেথ ফোরটোল্ড টা পড়ছিলাম, এইটাও চমৎকার বিশেষত বর্ণনার ভঙ্গি।


অলমিতি বিস্তারেণ

জিফরান খালেদ এর ছবি

মার্কেজের এযাবত প্রকাশিত বইগুলার আংরেজী ভার্সন দেখবার সুযোগ পাইসি, কিন্তু এই বইয়ের অনুবাদ পড়ি নাই। অনুবাদ কি সাম্প্রতিক সময়ে হইসে? মানে, গত দুই বছরে?

পক্ষান্তরে শরীফ, মানব ও হাবীব ভাই প্রত্যেকের অনুবাদি দেখার সুযোগ হইসিলো 'সলিচিউড' এ... আমি অনুরোধ করবো, মার্কেজের ভাষার যে কারুকার্য, সেইটা আংরেজীতে পইড়া আরেকবার যদি হাবীব ভাইয়ের অনুবাদটা হাতে লন এবং মিলায়া দেখেন, আমার মতে আপনি আপনার মত পুনর্বার বিবেচনা করতে লইবেন ... আমি এত ভাল অনুবাদ বহু বহু দিন দেখি নাই...

জাদু বাস্তবতার প্রাথমিক অনুষঙ্গই হইলো টেক্সটে এর যে বুনন, তা। শেইটা আমার হাবীব ভাই ছাড়া কেউ ধইরা রাখতে পারসেন বইলা মনে হয় নাই।

প্রখ্যাত লেখকের বই হইলেই বেশ কিছু বাজারী অনুবাদ বাইর হওয়ার একটা চল আছে আমাগো দেশে। মূল পাঠ করলে হয়তো বোঝা যায় কে কদ্দূর যাইতে পারলো। সহায়ক হয়।

আর, এই বুইড়া কর্ণেল সাহেব মার্কেজের আরো অন্যান্য বইয়েও আসেন।

মার্কেজের আত্মজীবনি বাইর হইসে একটা, পারলে পইরেন। ভাল্লাগবো।

ভাল থাকেন।

সবজান্তা এর ছবি

০১
নাহ ! এই অনুবাদ ম্যালাদিন আগের, ২০০৪ সালের।

০২

সলিচিউডের ইংরেজীটা পড়ছিলাম, যদিও শেষ করা হয় নাই।

জাদু-বাস্তবতার যুক্তিটা মানলাম, কিন্তু ভাই পুরা বই তো আর জাদু-বাস্তবতা না। মূল ভাষারীতি অর্থাৎ, সে ভাষার নিয়মানুযায়ী সর্বনাম-ক্রিয়া ইত্যাদি পদের সংস্থান না করে যদি অনুবাদে কেউ বাংলা ভাষারীতি অনুসরণ করে, তাহলে ব্যক্তিগত বিচারে আমার পড়তে খুব ভালো লাগে। এইটা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে জানি, তবু আমি বাংলা ঘেষা অনুবাদগুলাই বেশি পছন্দ করি। জনাব হাবীবের করা অনুবাদটা পড়তে আমার কিছুটা কষ্ট হয়েছে সে কারণেই।

০৩

হ, এই কর্নেল রে নিয়া আরেকটা গল্প পড়সিলাম। নামটা ঠিক খেয়াল নাই। "ইন ইভিল আওয়ার" ও কি এই কর্নেল রে নিয়াই ?

এই কর্নেল খুব সম্ভবত মার্কেজের মাতামহ এর ছায়া অবলম্বনে তৈরি। তাঁর মাতামহ ছিলেন রিটায়ার্ড কর্নেল, যিনি পেনশনে আশায় অনেক দিন বইসা ছিলেন।

০৪ মার্কেজ এর জীবনী পড়ার আগ্রহ বোধ করতেছি। খুঁজতে হবে।

০৫

মন্তব্য করার জন্য আপনেরেও ধন্যবাদ। ভালো থাইকেন।


অলমিতি বিস্তারেণ

হিমু এর ছবি

বইটার প্রচ্ছদ দেখে ভালো লাগলো না। বিশেষ করে বইটার নাম ইংরেজিতে দেখে। মূল স্প্যানিশ নাম ছিলো এল কোলোনেল নো তিয়েনে কিয়েন লে এস্ক্রিবা, কর্ণেলকে চিঠি লেখার কেউ নেই। বইটার নামের কোন না কোন সুন্দর অনুবাদ সম্ভব ছিলো।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সবজান্তা এর ছবি

কোন প্রচ্ছদটা ভালো লাগলো না ? বাংলা না ইংরেজী ? বাংলাটা আমার নিজেরই একদম একটা ভালো লাগে নি।

ইংরেজীর অনেকগুলি প্রচ্ছদ আছে। একটা প্রচ্ছদ আমার পোস্টেই আছে. আরো একটা পাবেন সৌরভ ভাই এর পোস্টে, আরো একটা এখানে।

হয়তো ভালো অনুবাদ সম্ভব হতো নামের, তবে অ্যাট লিস্ট এই জন্য বাংলা লেখককে ধন্যবাদ যে তিনি ইংরেজী নামটাই রেখেছেন, এটাকে টেনে হিঁচড়ে বাংলা বানাতে যাননি।


অলমিতি বিস্তারেণ

কনফুসিয়াস এর ছবি

মার্কেজের লেখার সাথে পরিচয়ই ঘটছে প্রবাসে এসে, তাই একটা বাদে আর কোন অনুবাদের সাথে পরিচয় ঘটে নাই। সেই অনুবাদও পুরাটা হাতে পাইনি, অংশবিশেষ। মেমোরিজ অব মাই মেলানকলি হোরস- এর অনুবাদ করছিলেন রফিক উম মুনীর, নাম ছিলো - আমার দুঃখভারাতুর বেশ্যাদের স্মৃতি। অনুবাদে আসলে যে কি পছন্দ করি, আমি নিজেও জানি না, মানে ঠিক কোন বৈশিষ্ঠ পেলে যে খুশি হই, ডিফাইন করা মুশকিল। তবে এই অনুবাদটা খুব ভাল লাগছিলো, মার্কেজ পড়ার আগ্রহ জাগিয়ে দিছিলো। একটা কারণ সম্ভবত, লেখকের ভাষ্য অনুযায়ী- অনুবাদটা ছিলো মূল স্প্যানিশ থেকে, ইংরেজি থেকে নয়। যাদের সুযোগ আছে, বইটা পড়ে দেখতে পারেন।

অনুবাদ না পেয়ে একদিকে অবশ্য ভালই হয়েছে, অনেকটা জোর করেই ইংরেজিগুলো পড়তে হয়েছে (এবং হচ্ছে। ) কদিন আগে ঝুম্পার বই নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, বলেছিলাম, অন্য একটা বই পড়তে গিয়ে মাথায় চাপ পড়ায় সেটা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ঝুম্পা পড়ে ফেলেছি। সেই অন্য বইটা হলো লাভ ইন দ্য টাইম অব কলেরা! হাসি দারুণ বই!
পড়ার আগে, মনে হচ্ছিলো যে সুর ধরতে আমার একটু ঝামেলা হতে পারে, এ জন্যে ছোট গল্পগুলো আগে পড়ে নিয়েছি ইচ্ছে করে, তারপরে উপন্যাস ধরেছি।
গল্পগুলোর বর্ণনা বাদেও বিষয় নির্বাচনের বৈচিত্র টাশকি খাওয়ার মতন। গল্পের নাম মনে নেই, একটা গল্প আছে এরকম- একটা মেয়ের গাড়ি নষ্ট হয়ে যায় মাঝ রাস্তায়, সে একটা ফোন খুঁজতে গিয়ে মানসিক হাসপাতালে গিয়ে পড়ে, সেখানে তাকে রোগী হিসেবে আটকে ফেলা হয়। ছোট্ট পরিসরে লেখা দুর্দান্ত একটা গল্প! অথবা ভবিষ্যৎ বলতে পারা সেই মহিলার গল্প, যে একটা ঝড় বা জলোচ্ছ্বাসে মারা যায় অবশেষে। এইরকম লিস্ট বাড়তেই থাকবে।

জিফরান যে আত্মজীবনীর কথা বললেন, আমি জানি না এখন যেটা পড়ছি সেটাই কি না (তেমন একটা খোঁজ খবর রাখা হয় না, লাইব্রেরীতে গিয়ে জাস্ট বই তুলে নিয়ে আসি), লিভিং টু টেল আ টেইল- পড়তে খুবই ভাল লাগছে।

সবজান্তা, আমি বেশ কিছু বইয়ের পিডিএফ নামিয়েছিলাম ইস্নিপ্স থেকে, আপনি ইংরেজিটা পড়তে আগ্রহী হলে ওখানে খুঁজলেই পেয়ে যাবেন। (ব্যাপারটা ঠিক নৈতিক কি না, এই নিয়ে চিরদিনই কনফিউজ্ড থাকি!) একই কথা সৌরভকেও, এবং এখানে এখনো অনুপস্থিত, কিন্তু শিঘ্রী হাজির হয়ে যাবেন, সেই অতন্দ্র প্রহরীকেও। হাসি

সুন্দর একটা পোস্টের জন্যে সবজান্তাকে ধন্যবাদ।

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সবজান্তা এর ছবি

এখানে আসলে একটা ট্রেড-অফের ব্যাপার কাজ করে। আমি নিতান্ত ঠ্যাকায় না পড়লে ই-বুক পড়তে চাই না। পড়ালেখার জিনিশপত্র কিংবা কম্পিউটার রিলেটেড কিছু ইবুকে পড়তে পারি কিন্তু শখের গল্পের বই বা কোন বই ইবুকে পড়ার নাম শুনলেই জ্বর আসে। এজন্য অনেকেই বই না কিনে গুটেনবার্গ কিংবা অন্য কোন সাইট থেকে ইবুক নামিয়ে পড়ে, কিন্তু আমি হার্ডকপির খোঁজে থাকি।

মার্কেজের বই এর ইংরেজী ভার্সন দেখেছি আজিজেই, তবে দাম বেশ চড়া। আর খাটি বাঙ্গালির ছেলে হিসেবে ইংরেজীতে বই পড়াতেও 'পচুর' অনীহা। তবুও মাঝে মাঝে পড়ি। তবে সবাই যেভাবে মার্কেজের ইংরেজীর কথা বলছেন, নীলক্ষেত কিংবা নিউমার্কেটে অপারেশন সার্চলাইট চালিয়ে দেখতে হবে দুই নম্বুরি কপি আছে কি না।

মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।


অলমিতি বিস্তারেণ

রণদীপম বসু এর ছবি

পোস্টের সাথে সাথে মন্তব্রগুলানও ভালো লাগলো।
সবাইকে ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বইটা পড়িনি, তবে পড়ব অবশ্যই। ইংরেজি প্রচ্ছদটা মোটামুটি, বাংলাটা যাচ্ছেতাই। তবে সৌরভ ভাইয়ের অ্যামাজনের প্রচ্ছদটা ভালো লেগেছে সবচেয়ে।
সেদিন হিমু ভাইয়ের 'সিয়েন আনিয়োস দে সোলিদাদ' লেখাটা পড়ার পর মূল বইটা ই-স্নিপ্স থেকে নামিয়ে নিয়েছিলাম। শুরু করেছি মাত্র।
কনফু ভাইয়ের উল্লেখ করা বইগুলোও ভাবছি ই-স্নিপ্স থেকে নামিয়ে ফেলব। ব্যাপারটা আসলেই নৈতিক কিনা জানি না, মাঝে মাঝে আমিও কনফিউজড থাকি, কিন্তু হাতের কাছে এভাবে অতি সহজেই পেয়ে যাওয়ায় লোভটা ঠিক সামলাতে পারি না। আর সেইসব মুহুর্তে চিন্তা করি 'বই চুরি-তে পাপ নেই'-এর সেই মহান বাক্য! দেঁতো হাসি
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ইংরেজিটা কাজ চালানো গোছের, তাই সেভাষায় সাহিত্য পড়তে ভয় পাই। না জানি কি বুঝলাম না। আর ইংরেজিতে পড়তে আমার একটু সময় লাগে। বাংলার মতো তরতরিয়ে পড়তে পারিনা। তাই অনুবাদই ভরসা।
আর সেজন্যই খুব জটিলতায় থাকি, ভালো একটা অনুবাদের জন্য। মার্কেজ এবং অন্য অন্য ল্যাটিন সাহিত্যের জন্য মানবেন্দ্রই ভরসা... কাগজ প্রকাশনী মানবেন্দ্র'র অনুবাদে বেশ কিছু ল্যাটিন সাহিত্য বাজারে ছাড়লেও এই বইটা কাগজ বের করে নাই। তবে ভারতীয় সংস্করণ পাওয়া যাবে। তক্ষশীলায় খোঁজ লাগাইতে পারেন।

ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত অধিকাংশ অনুবাদই পছন্দ হয় না। তাই এখন ঐতিহ্য থেকে বই কেনার ব্যাপারে একটু সাবধান হইছি।

সবজান্তাকে ধন্যবাদ।

***
এবাদুর রহমান প্রণীত পূর্ববঙ্গের ভাষা বইটা খুঁজতেছি। একবন্ধু গিফট করবো বইলা পয়লা কিস্তিতে কিনি নাই। গিফট না কইরাই সে মৃত্যুবরণ করলো। তারপরে তো সে বই বাজারছাড়া। এখন হাপিত্যেশ করি। কারো সন্ধানে আছে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সবজান্তা এর ছবি

নজরুল ভাই, ঐতিহ্যের অনুবাদের উপর আমারো তেমন ভরসা ছিলো না, কিন্তু এইবার কেনা বইগুলির অনুবাদ কিন্তু মন্দ না ! আর.কে.নারায়ণের লেখা মালগুড়ি ডেজ, আজিমভের সায়েন্সফিকশন গল্প সমগ্র কিংবা রাসোমন কিংবা এডিথ হ্যামিলটনের মিথোলজি কোনটাই মন্দ লাগে নি।

আর মার্কেজের এই বইটা কেনার কাহিনী একটু মজার। আমি ২টা বই কিনলাম, কেনার পর দেখি দাম হয় মাত্র ১০০টাকা, তো এর জন্য ৫০০ টাকার নোটের ভাংতি চাইতে লজ্জা করছিলো, তাই শস্তায় মার্কেজের এই বইটা কিনে ফেলেছলাম দেঁতো হাসি

মানবেন্দ্রের বই তক্ষশিলায় পাওয়া যাবে ? এর মধ্যে ওই দোকানে গিয়েছেন ? নতুন এত বই এসেছে যে দোকানে পা ফেলা যায় না, এখনো কয়েক কার্টন খোলা বাকি। কোন বই এর দরকার থাকলে জলদি খোঁজ লাগান।


অলমিতি বিস্তারেণ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভারতীয় বই এখন গায়ের দামেরে দ্বিগুণ টাকায় কিনতে হয়... দেশী বই ছাড়া আর বুঝি কিছু কেনার রাস্তা থাকলো না।
তক্ষশিলায় যাইনা বেশ কিছুদিন। তবে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন, পাইতে পারেন।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

মানবেন্দ্রের অনুবাদটা আমার কাছে ভাল লাগছিল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।