ড. জেকিল এবং মি. হাইড

সবজান্তা এর ছবি
লিখেছেন সবজান্তা (তারিখ: সোম, ২৭/১০/২০০৮ - ১:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

০১


বেশ কিছু দিন আগের কথা। পরিচিত একজন জানালেন, তিনি আজকাল ব্লগে লেখালেখি করছেন। তিনি তখনো জানেন না যে, ব্লগ শব্দটার সাথে আমি বেশ আগের থেকেই পরিচিত। জানার পরই বার বার বললেন, উনার লেখাগুলি পড়তে। মাঝে মাঝে অনলাইনে আসলে লিঙ্ক দিয়েও মনে করিয়ে দেন। উনি অবশ্য সচলায়তনে লিখেন না, লিখেন ভিন্ন পাড়ায়। সে পাড়ায় বহু আগে এক টা আই ডি ছিলো যার নাম, পাসওয়ার্ড সবই ভুলে গিয়েছি। এখন আর রেজিস্ট্রেশন করতেও ইচ্ছা করে না। তাই তাঁর লেখাতেও আর মন্তব্য করা হয় না। তবে লেখাগুলি পড়ি, আর পড়তে পড়তেই মনের মধ্যে কিছু প্রশ্ন মাথা চাড়া দিয়ে উঠে...

০২


উনার লেখার হাত ভালো। শুধু ভালো না, বেশ ভালো। লেখাতে অনেক বিদগ্ধ লোকজন মন্তব্য করেন, যাদের সাহিত্যরুচির উপর আমার ভরসা আছে। তবু আমার মনের মধ্যে খচখচ করে। তাঁর লেখার মধ্যে নিরন্তর জীবন যন্ত্রনা, কষ্টর গাঢ় ছাপ দেখতে পাই, দেখতে পাই শেকল ভেঙ্গে ফেলার তীব্র প্রতিজ্ঞা - আর বিভ্রান্ত হই তখুনি। লেখককে চিনি আজ বেশ ক’বছর ধরেই, বেশ ভালো মতোই। কখনোই তাঁকে এরকম মন হয়নি, বরং বিভিন্ন সংকটের সময় তাঁকেই দৃষ্টিকটু রকমের নীরব দেখেছি। তবু এ নিয়ে কোন স্থির সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারি না, কারণ আমি তাঁকে কতটুকুই বা দেখেছি যা দেখে কোন সিদ্ধান্তে পৌছানো যায়! তবে শেষ কুঠারের আঘাত করেন তাঁরই এক বহুকালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, যিনি এক ঘরোয়া আড্ডায় আমাকে বলে বসেন, “ওর লেখার অনুভূতি আসলে ইম্পোজড। ও লেখায় যে চিন্তার কথা বলে, সে চিন্তা ও নিজে লালন করে না”। সে আড্ডায় মূলত তাঁরই বন্ধুস্থানীয় লোক বেশি ছিল, তাঁরা সবাই এক বাক্যে এর সত্যতা স্বীকার করেন। আমার সন্দেহ একটা পাঁকাপোক্ত রূপ নেয়।

০৩


আমার সেই পরিচিত ব্লগারের অনুভূতি আরোপিত কি না সেটা নিয়ে সন্দেহ হয়তো আছে, তবে সন্দেহ নেই আরো অনেককে নিয়েই। নিজেই দেখেছি মানুষের আরোপিত ব্যক্তিত্ব। ইন্টারনেটে যেহেতু মানুষ নিজের প্রকৃত পরিচয় লুকিয়ে লেখার সুযোগ পাচ্ছে, তাই নিজেকে “অন্যভাবে” প্রকাশ করার সুযোগও অনেকে হাতছাড়া করছেন না। আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজের সবধরণের ব্যক্তিত্বকে এক রকম রাখার পক্ষপাতী অর্থাৎ কি না, আমার সাথে অনলাইনে কথা বলে কিংবা আমার লেখা পড়ে আমাকে যে রকম মনে হয়, বাস্তবের কেউ দেখলে যাতে সেরকমই ভাবে। চেনা জানা অনেক মানুষই এরকম একক সত্বার পথেই হাঁটেন, তবে ব্যতিক্রমের সংখ্যাও কম নয়। আমার ব্যাচমেট এক ছেলে, আর্কিটেকচারের ছাত্র, পরিচয় হলো আই আর সি র বুয়েট চ্যানেলে। কয়েকদিন কথা বলার পর সবার আক্কেল গুড়ুম। সিনিয়ররা ক্ষেপে ভূত, কারণ ওর কথা বার্তা খুবই অভদ্র রকমের, কাউকে সম্মানও করে না একদম। আমিও বিরক্ত কারণ ও নিজেকে খুবই আহামরি কেউ বলে মনে করে। অথচ এই ছেলের সাথে যখন পরিচয় হলো অনেক দিন পর, আমি বিস্ময়ে হা হয়ে গেলাম। ছেলেটা রীতিমত মিতভাষী এবং ব্যবহারও সংযত। ও কেন অনলাইনে এরকম ব্যবহার করতো, তা এখনো রহস্য। আমি অবশ্য পরে ভেবে এর একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছি, যাতে সব দোষ পড়েছে অবচেতন মনের ঘাড়ে। আমার দৃষ্টিতে, মানুষ যেরকম হতে চায়, কিন্তু বাস্তবে হতে পারেনি, তাঁর প্রতিফলন ঘটে তাঁর ভার্চুয়াল আইডেন্টিটিতে। তবে এ থিয়োরি নিতান্তই আমার মন গড়া, দায় দায়িত্ব কিছুই নিতে পারবো না।

যাই হোক, ফিরে আসি আমার সেই পরিচিত ব্লগারের কথায়। তিনি আমাকে একটা ধন্দের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। কারণ উনার লেখা থেকে যেই মানুষটাকে রি-কন্সট্রাক্ট করতে পারি, তার সাথে বাস্তবের মানুষটাকে কোনমতেই মেলাতে পারি না। যুক্তিবাদী মন বলে ,সেটা তো একদম অস্বাভাবিক কিছু না। শুনেছি ( পড়েছি) অনেক বিখ্যাত কবিই বাস্তবিক জীবনে অস্বাভাবিক রকমের চুপচাপ ছিলেন, সে ক্ষেত্রে উনাদেরও লেখা থেকে রিকন্সট্রাক্ট করা যায় না। এইদিকে নিজের দেখার অভিজ্ঞতা বলে, আর যাই হোক এই লোক এমন হতে পারে না। বিভ্রান্তিতে পড়েই আরো লক্ষ্য করি, উত্তরাধুনিক লেখা প্রসবের জন্য মননে তাঁদের ধারণ করাটাও কিছু মাত্র জরুরী নয়। সামান্য কিছু ব্যঞ্জনাময় শব্দের ব্যবহারই ভাব গাম্ভীর্যপূর্ণ উত্তরাধুনিক লেখার জন্ম দেয়। সংবেদনশীলতা, মিথষ্ক্রিয়া, রসায়ণ কিংবা আরো কিছু বাহারি শব্দের সুবিধামত প্রয়োগেই লেখা ভিন্ন মাত্রা পায়।

সন্দেহ খুব খারাপ রোগ। সেই রোগে আপাদমস্তক আক্রান্ত হয়ে পরিচিত সেই ব্লগারের সাথে একদিন বাস্তবের পৃথিবীতে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দেই। কৌশলে তুলে আনি সেই সব প্রসংগ, বুঝতে চেষ্টা করি তাঁর চিন্তার ধারা। নাহ, তিনি বোঝাতে পারেন না। কঠিন কঠিন শব্দে যে সব দীর্ঘ উত্তরাধুনিক বাক্য তিনি রচনা করেন, তার অর্থ তিনি দৈনন্দিন দিনের বাংলা দিয়ে আমাকে বোঝাতে ব্যর্থ হন - আর আমি চমৎকৃত হই মানুষের দ্বৈত সত্বা দেখে।

০৪


এই লেখাটা কেন লিখলাম আমি নিজেও জানি না। শেষ পর্যায়ে এসে আবিষ্কার করলাম আমার বলার মত কোন বক্তব্য নেই। একজন মানুষের দুই কেন দুইশত সত্বা থাকতে পারে। এক সত্বায় তিনি জলিল ব্যাপারী হয়ে মাছ বেঁচে আরেক সত্বায় তিনি "প্রকৃষ্ট প্রশান্ত" নিকে উত্তরাধুনিক কাব্য কিংবা জীবন দর্শন নিয়ে বলতেই পারেন। তাতে বাগড়া দেওয়ার আমি কেউ না।

আমার মত অভাজন শুধু বলতে চায়, মানুষ চেনা বড় দায় !


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কঠিন লেখা। মানুষের সত্বার এই রূপ নিয়ে লেখা ও পড়ার আমার খুবই ইচ্ছে। মনোজাগতিক বিশ্লেষণ করার মতো কেউ কি আছেন এখানে?

সবজান্তা এর ছবি

আমারও লেখাটা এখানে দেওয়ার উদ্দেশ্য একটাই। যদি মনস্তাত্বিক বিশেষজ্ঞ কেউ এই ব্যাপারটা নিয়ে আরো একটু ডিটেইল ডিসকাস করেন।


অলমিতি বিস্তারেণ

রণদীপম বসু এর ছবি

হা হা হা ! সবজান্তার কি এখনও এটা জানার বাকি রয়ে গেছে যে, একটা মানুষের আসলে একটা মাত্র চেহারা নয় !

বিচিত্র দুনিয়া, বিচিত্র দুনিয়ার মানুষ, আরো বিচিত্র মানুষের মন। এতোসব বিচিত্রতা রয়েছে বলেই হয়তো মানুষের চেহারায় এতো বৈচিত্র্য ! অদ্ভুত, এবং অসহ্যও !

একটা ভালোমানের এবং সমকালীন পোস্টের জন্য অভিনন্দন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সবজান্তা এর ছবি

সমস্যা কিন্তু মানুষের একাধিক সত্বা নিয়েও না। একাধিক সত্বা কিন্তু আমরা সচেতন ভাবেই ব্যবহার করি। যেমন ধরা যাক আমি যেই সত্বায় আমার বাবা-মা র সাথে কথা বলি, যে সত্বায় আমার থিসিস সুপারভাইজারের সাথে কথা বলি, আর যে সত্বায় বন্ধুদের সাথে কথা বলি, তার কোনটাই বোধকরি এক না।

সমস্যা হচ্ছে আরোপিত সত্বায়। ধরা যাক আমি মূল চেতনায় সমাজতন্ত্রী না, কিন্তু ব্লগে এসে শ্রেনীহীন সমাজ ব্যবস্থার জন্য মরা কান্না জুড়লাম, তাহলে ব্যাপারটা যেমন অসত্য হয়, তেমন ব্যাপার নিয়েই সমস্যা।


অলমিতি বিস্তারেণ

হিমু এর ছবি

আমি কিন্তু সত্যিই সুন্দরী বালিকাদের যত্ন করে কামড়াতে ভালোবাসি। আর ধূসর গোধূলিও লোকজনের শালি আছে শুনলে এক্সট্রা খাতির শুরু করে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমার ব্লগিং অভিজ্ঞতায় অবশ্য ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। মানুষ যতোই চেষ্টা করুক, জেকিল-হাইডের অভিনয়টা অতো সহজ নয়। আপনার দেখাটা ঠিক আছে। এবং মানুষ প্রাথমিকভাবে এতে বিভ্রান্ত হয়। তবে লেখার শব্দের পিছনে হাত দিলে আসল চেহারা বেরিয়ে পড়ে। এই প্রক্রিয়াটা খুব সিম্পল। কোনো লেখা থেকে 'অসম্ভব'গুলো ছেঁটে ফেলবেন, আবেগের অংশটা হাত দিয়ে ঢেকে রাখবেন; এরপর বাকি যেটা থাকে, সেটাই 'লেখক', তিনি হাইড হোন আর জেকিল হোন।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সবজান্তা এর ছবি

পদ্ধতিটা চমৎকার, কিন্তু ব্লগটি যদি আলোচনাধর্মী না হয়ে অন্য রকম (ধরা যাক কবিতা কিংবা নিছক ব্লগর ব্লগর) হয়ে উঠে, তাহলে আপনার পদ্ধতিতে ধরা আমার জন্য বেশ কষ্টকর হয়ে উঠে।


অলমিতি বিস্তারেণ

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

চিন্তা কম করেন। ঘুম ভালো হবে হো হো হো

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
Life is what happens to you
While you're busy making other plans...
- JOHN LENNON

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সবজান্তা এর ছবি

হায় ! এ কথা আগে কেন বলেন নি ! আক্ষরিক অর্থেই গতকাল রাতে এক ফোটাও ঘুমাতে পারি নি, যদিও সারা রাত তুমুল বৃষ্টি হয়েছে, আর বাইরে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা।


অলমিতি বিস্তারেণ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

মানুষ তো খুব একরৈখিক প্রানীবিশেষ নয় । কোন একটি নির্দিষ্ট স্বত্বা নয়, সবগুলো স্বত্বার মিশেলেই একটা পুরো মানুষ । এই স্বত্বাগুলো যদি একটা আরেকটার সাথে রেডিক্যালি কনফ্লিক্ট না করে তাহলে বোধকরি এই বহুস্বত্বা ব্যাপারটা দোষনীয় কিছু নয় ।

যেমন লেখালেখিতে দেখা গেলো কেউ নিজেকে খুব প্রগতিশীল ভাবনার মানুষ হিসেবে প্রকাশ করেন কিন্তু বাস্তব জীবনে সেই মানুষ দেখা গেলো তীব্র প্রতিক্রিয়াশীল । এরকম হলে সমস্যা।

যাপিত জীবনে খুব কম মানুষই সেরকম আচরন করতে পারে, আসলে সে যেমন চায় । লেখালেখির ক্ষেত্রে এই স্বাধীনতা অনেকটাই থাকে। কেউ কেউ সেই স্বাধীনতাটুকু গ্রহন করেন ।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সবজান্তা এর ছবি

হা হা ! আপনার এই মন্তব্য লেখতে লেখতে আমি রণদীপম বসুর মন্তব্যের উত্তরে এই কথা গুলিই বলেছি।

ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।


অলমিতি বিস্তারেণ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এহ হে, তাই তো দেখি ।
আমি কিন্তু সবজান্তার অন্যস্বত্বা নই হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

তাও তো ভালো... বাংলা ব্লগ জগতে এমন লোকের সন্ধানও কম পাবেন না যাদের একাধিক নিক-এ একাধিক সত্ত্বা...
কোনো নিক নিয়ে সে প্রচণ্ডরকম দেশপ্রেমিক, আবার তিনিই অন্য নিক নিয়ে প্রচণ্ডরকম রাজাকার...
নিজের দুই নিকে নিজে নিজেই মারামারি কাটাকাটি করে আসর জমিয়ে তোলেন...

বড় তাজ্জব দুনিয়া... তারচেয়ে ভালো ঘুমটা জরুরী...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সবজান্তা এর ছবি

ব্লগে আইসারে ভাই কত যে বিচিত্র প্রাণীর দেখা পাইলাম রে !

কেউ শোকে পলিটিকস পান, কেউ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে থেকে নিজেই ফ্যাসিবাদের উদ্বোধন করেন, আরও কত কী !

এর চেয়ে আসলেই ভালো ঘুম জরুরী !


অলমিতি বিস্তারেণ

সবজান্তা এর ছবি
শামীম এর ছবি

ভালৈছে .... ....

শিরোনামের সাহিত্যের লেখকও কাহিনীর মাধ্যমে এই দ্বৈতসত্ত্বার কথাই বুঝাতে চেয়েছিল বলে মনে হয়।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সবজান্তা এর ছবি
খেকশিয়াল এর ছবি

এইটা একটা মজার জিনিস । আমিও কয়েকটারে চিনি, এরকম একজন বাস্তব জীবনে খুবই ভদ্রলোক, টু ফা করে না, অনলাইনে দেখি মুখ ডাস্টবিন কইরা রাখে ।

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

সবজান্তা এর ছবি

এইটা তো আই আর সি র কমন কাহিনী ! নতুন কি আর ......তাই না ?


অলমিতি বিস্তারেণ

স্নিগ্ধা এর ছবি

আর আমি চমৎকৃত হই মানুষের দ্বৈত সত্বা দেখে।

আমিও হই, শুধু চমৎকৃতই নয় - বলা উচিত স্তম্ভিত হই!

দ্বৈত সত্ত্বা আর ব্যক্তিত্বের নানামুখিনতা বোধহয় এক না। হয়তো জলিল মাছব্যবসায়ী উত্তরাধুনিক কবিতা শুধু লিখতেই পারে না, সে এমনকি রোডিনের ছবিও সাদা ল্যাটিনে ব্যাখ্য করতে পারে - তাতে বিস্ময়ের চমক থাকতে পারে, কিন্তু অসততা থাকে না।

কিন্তু, তোমার সেই পরিচিত ব্লগার যা করে সেটা সজ্ঞানে মিথ্যাচার ।

(প্রায় অন্যপ্রসঙ্গঃ ইয়ে, জনগণ তো শুনলাম আমাকেও কি কি যেন ভেবেছিলো, আর তারপর দেখে কিনা সারাক্ষণ চেঁচামেচি করা, খ্যাক খ্যাকে, মহা বাচাল একজন! আর নজরুলের বাসায় গিয়ে যেভাবে আমি আমাকে দাওয়াত দেয়ার জন্য ঘ্যানঘ্যান করতে লাগলাম, তাতে নিজেই নিজেকে আমি 'প্রফেশনাল চশমখোর' উপাধি দিতে বাধ্য হয়েছি মন খারাপ )

সবজান্তা এর ছবি

হাহা...

আপনার এই স্বঘোষিত রূপের ব্যাখ্যা কী ? দ্বৈত সত্বা নাকি ব্যক্তিত্বের নানামুখিতা ? চোখ টিপি


অলমিতি বিস্তারেণ

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

০১.
দিন কয়েক আগে এক উপলক্ষে কয়েক বিপ্লবী সচলের সাথে দেখা। কয়েকজনের সাথে সেবারই প্রথম দেখা। তাদের ভাষ্যমতে, ব্লগের আমি, বাস্তবের আমি একই রকম। আলহামদুলিল্লাহ!!!

০২.
মানুষের মন নিয়ে আমারও জানার তুমুল আগ্রহ। তাই পোস্টের দিকে কড়া নজর রাখতেছি।

সবজান্তা এর ছবি

আমার দেখা অধিকাংশ মানুষই আসলে একই সত্বা মেইনটেইন করে।

তব নজর রাইখেন, তবে কড়া রাইখেন না, ডর লাগে !


অলমিতি বিস্তারেণ

কীর্তিনাশা এর ছবি

অতিব জরুরী পোস্ট। কিন্তু মনোবিশ্লেষক কই?
আমারো অনেক জানার ইচ্ছা।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সবজান্তা এর ছবি

সে কই তা আমিও খুঁজতেছি ...


অলমিতি বিস্তারেণ

রাফি এর ছবি

আমি বিশ্বাস করি যারা মুখের কথায় নিজেকে খুব বেশি প্রকাশ করতে পারেন না তারাই লেখালেখিটা বেছে নেন; তাই ভার্চুয়াল লেখালেখি জগতের অধিকাংশ মানুষ নিজের স্বকীয়তা নিয়েই লিখে যাবেন এটাই স্বাভাবিক হওয়ার কথা। কিন্তু তোমার পর্যবেক্ষণে আমার বিশ্বাস অনেকটাই নাড়া খেয়ে যাচ্ছে। তবে হ্যা বাংলায় সব্যসাচী বলে একটা শব্দ আছে তাই ভার্চুয়ালী সক্রিয় ব্যক্তি বাস্তব জীবনে নিষ্ক্রিয় এই নিয়মের ব্যতিক্রম থাকবেই; আছেও।

প্রবল যুক্তিবাদী কেউ এই জেকিল এন্ড হাইডের খেলাটা খেলবেন না; যিনি নিজের যুক্তিকে বিশ্বাস করেন তিনিও না। যারা নিজের অস্তিত্ব নিয়ে বিভ্রান্ত তারা এই পথে হাঁটতে পারেন নিজেকে যাচাই এর স্বার্থেই।

তবে এই সব ব্যাপারে মনোবিজ্ঞান মনে হয় একটা সমাধানই দেয় সেটা হল অবচেতন মনের বিচিত্রতা। সামাজিক অবস্থান, মর্যাদা অথবা সাহসের অভাবের কারণে যিনি বাস্তবজগতে নিজেকে সচেতনভাবে অন্যরূপে তুলে ধরছেন; তিনি অবচেতন মনে লালন করছেন আরেক ধরণের সত্তা আর সেটাই উঠে আসছে ভার্চুয়াল জগতে তার লেখা আর আচরণের মাধ্যমে। এবং আমার মনে হয় সেক্ষেত্রে এই ভার্চুয়াল জগতের সত্তাটিই ঐ ব্যক্তির আসল সত্তা । কারণ ঐ সত্তাটিই স্বতঃস্ফুর্ত। অন্যদিকে বাস্তব জীবনের সত্তাটি সামাজিক, ধর্মীয় এবং নানা স্বার্থের কারণে আরোপিত।

তোমার এই লেখা পড়ে একটা পুরনো উক্তি মনে পড়ে গেল-

যারা টেলিফোনে হুমকি দেয় তারা আসলে ভীতু হয়; আর যারা মোবাইলে মেয়েদের উত্যক্ত করে বাস্তব জীবনে তারা মেয়েদের সাথে খুব কমই মিশতে পারে।

আমিও এমন এক মনোবিশ্লেষকের অপেক্ষায় রইলাম যিনি এর সমাধানে অবচেতন মনের কচকচানি না এনেই যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখা দিবেন

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

সবজান্তা এর ছবি

মন্তব্যটা চমৎকার। যুক্তিবাদী কেউ জেকিলের খেলা খেলতে পারে, তবে সে ক্ষেত্রে তা হবে আরো ভয়াবহ। জ্ঞান পাপের ( এটা অবশ্য পাপ বলে চালানো একটু বেশি হচ্ছে ) মাত্রা সবসময়ই একটু বেশি হয়।

মোবাইলের কথাটাও মনে ধরলো।


অলমিতি বিস্তারেণ

অভ্রনীল এর ছবি

মারহাবা! মারহাবা!! কী থিওরী ঝারলেন! এইবার একটা পেচগি দেই... এইটারে একটু ম্যাথমেটিকালি মোটাফাই করার চান্স নেই...

ধরি একজন মানুষের তিনটা সত্ত্বা, এই ব্যাপারটাকে লেখা যায় একটা ডাইমেনশনে তিনটা ভ্যালু; ধরি দুইটা মানুষের তিনটা সত্ত্বা, তাহইলে ব্যাপারটা দাঁড়ায় একটা ডাইমেনশনে তিন দুগুনে ছয়টা ভ্যালু... দারুন! এইবার এন সংখ্যক ডাইমেনশন হিসাব করি, তাহইলে দাঁড়ায় গিয়া এন ইন্টু পি সংখ্যক সত্ত্বার ভ্যালু যেগুলা আবার এন সংখ্যক ডাইমেনশনে ছড়ায় আছে। এইবার চিন্তা করেন প্রত্যেক মানুষ আবার এম সংখ্যক নিক ব্যবহার করে... ব্যাপারটা তাহইলে কী দাঁড়াইলো?

যাই-ই দাঁড়াক, এইটাতে কেবল দুইটা ক্যারেক্টার জেকিল আর হাইড থাকেনা, টম-জেরি-নন্টে-ফন্টে-আটুল-বাটুল কইরা সবই তো দেখি ঢুইকা পড়ে। আমিও আমার এই মোটাফাইড কেসে সব্জান্তার মত মনস্তাত্বিক বিশেষজ্ঞদের হস্তক্ষেপ আশা করতেছি... আর এই ম্যাথমেটিকাল থিওরি নিয়া কেউ সিরিয়াস্লি ফাল মারলে আমারে ফলাফল জানায়া দিয়েন!

_________________________________
| সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরনঃ উড়াধুড়া ব্লগ পড়া বিপজ্জনক। | বাংলা ব্লগস্ফিয়ার

সবজান্তা এর ছবি

ভাইরে , আপনি তো আমার সেই পুরানো দিনের লিনিয়ার এলজেব্রার কথা মনে পড়ায় দিলেন। অসংখ্য চলক, অসংখ্য সমীকরণ... ভাই ছাইড়া দিলে হয় না দেঁতো হাসি


অলমিতি বিস্তারেণ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আরেকটু প্যাঁচ দিয়ে দেই-- সমীকরণগুলা যদি নন-লিনিয়ার হয় তাহলে কী অবস্থা??

অভ্রনীল এর ছবি

... সাথে পুরা সিস্টেমকে ননহোমোজিনিয়াস চিন্তা কইরেন কইলাম... দেঁতো হাসি
_________________________________
| সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরনঃ উড়াধুড়া ব্লগ পড়া বিপজ্জনক। | বাংলা ব্লগস্ফিয়ার

রানা মেহের এর ছবি

চমতকার লেখা সবজান্তা
দ্বৈত সত্তা থাকতেই পারে।
তবে কেউ বাস্তব জীবনে মিঃ হাইড হয়ে লেখালেখিতে ডঃ জেকিল হলেই সমস্যা।
তবে তার নিজস্ব ব্যাখ্যাও থাকতে পারে। পেশা - সমাজ ব্লা ব্লা র জন্য তিনি হয়তো বাস্তবে জেকিল হতে পারেননি তাই লেখাই ভরসা।
একেকজনের জন্য আসলে একেকরকম ব্যাপার।
তবে কিছু ভন্ড সব জায়গাতেই থাকবে।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সবজান্তা এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।


অলমিতি বিস্তারেণ

নিঘাত তিথি এর ছবি

চমৎকার লেখা।
দ্বৈতস্বত্ত্বা থাকতেই পারে মানুষের মধ্যে। কিন্তু মিথ্যাচারীতা হয়ে গেলেই ব্যাপারটা হয়ে যায় দুঃখজনক। যেমনটা রণদীপম বসুর মন্তব্যর প্রতিমন্তব্যে সবজান্তা বলেছে, বা হাসান ভাইও বলেছে।
তবে বাস্তব জীবনের অপূর্ণতা পূরণে ইন্টারনেটের আশ্রয় নেয়ার ব্যাপারটা সত্যি ইন্টারেস্টিং!
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

সবজান্তা এর ছবি

ধন্যবাদ তিথি আপু। অনেক দিন পর আপনাকে দেখলাম। ব্যস্ততা ?


অলমিতি বিস্তারেণ

পরিবর্তনশীল এর ছবি

ইনটারেশটিং।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

সবজান্তা এর ছবি
লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

চমৎকার! তবে এরকম বিশ্লেষণের কোনও গন্তব্য নেই। মানুষকে নিয়ে গবেষণা হতে পারে, মানসিকতা নিয়ে মনে হয় না সেটা সম্ভব ... ...

আপনার লেখাটা ঝরঝরে সুন্দর!

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

সবজান্তা এর ছবি

আমি একটু কনফিউজড ! মানসিকতা নিয়ে কেন গবেষণা সম্ভব না, ব্যাখ্যা করা যাবে ?


অলমিতি বিস্তারেণ

রায়হান আবীর এর ছবি

আপনার বিষয় নির্বাচন আসলেই জটিল।

নিজের স্বত্তা নিয়া সন্দেহে পইড়া গেলাম। ওরে তোরা কে আছিস, একটু বলে যা না আমার কথা।

=============================
তু লাল পাহাড়ীর দেশে যা!
রাঙ্গা মাটির দেশে যা!
ইতাক তুরে মানাইছে না গ!
ইক্কেবারে মানাইসে না গ!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আর দুই রতন কোথায়? তারা হয়তো ভালো বলতে পারবে।

সবজান্তা এর ছবি

জটিল মানুষদের নিয়ে লেখা জটিল তো হবেই !

তোমার খবর কি মিয়া। তুমি তো দেখি কর্পোরেট হয়া গেছ !


অলমিতি বিস্তারেণ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।