টি এন্ড টি ফোন যাকে কী না শুদ্ধভাষায় বলা হয় ল্যান্ডফোন, আমাদের বাসার তার আগমন অনেক পরে, ২০০৩ এর দিকে। ব্যাপারটা ঠিক এমন না যে আমাদের ফোনের প্রয়োজন কম ছিলো, বরং যথেষ্ট বেশিই ছিলো এবং দিন দিন সে'টা বেড়েই যাচ্ছিলো - তবু আমরা কোন মতেই একটা লাইনের ব্যবস্থা করতে পারছিলাম না। লাইনম্যানদের দাবি, এরশাদের আমলের পর এলাকায় আর নতুন কোন ক্যাবল টানা হয় নি, বক্স বসানো হয় নি, ফলে নতুন লাইন দেওয়া সম্ভব না - অথচ এইদিকে আশেপাশের অনেকের বাসাতেই দেখি কীভাবে যেন টেলিফোনের লাইন লেগে যাচ্ছে।
এইসব প্রচেষ্টার অধিকাংশের সময়ই বেজায় ছোট বাচ্চা, কাজেই তেমন ভূমিকা রাখার সুযোগও ছিলো না। কিন্তু ২০০১ সালের পর, যখন আমি কলেজে পড়ি, বেশ লায়েক হয়েছি - ভাবলাম পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত এই সমস্যার একটা সমাধান করে নিজের একটা "ছেলে বড় হয়েছে" ধরনের ভাবমূর্তি বানানো যাক।
কলেজে আমার এক বন্ধু ছিলো, নাম মিশু। ওর বাবা ছিলেন টি এন্ড টির প্রভাবশালী একজন ডিরেক্টর। ওকে ধরতেই ও জানালো সাধ্যমত চেষ্টা করবে। শেষ পর্যন্ত মিশুর চেষ্টাতেই ৬ মাস পর আমাদের বাসায় এসে লাইন লাগলো। লাইনম্যান এসে লাগিয়ে দিয়ে যাওয়ার ঘন্টা দু'য়েকের মধ্যেই কোন এক অজ্ঞাত কারণে ফোন ডেড হয়ে গেলো। সাথে সাথে লোকাল ক্যাম্পে অভিযোগ করতেই জানালো লাইনম্যানরা সবাই বিএনপির কোন এক 'বাধ্যতামূলক' মিছিলে যোগ দিতে গিয়েছে, কাজেই আগামীকালের আগে কোন কিছু করা সম্ভব না।
সেই থেকে শুরু। এরপর কয়েকমাসের ব্যবধানেই লাইন ডেড হলো কয়েকবার। সে সময় দেশে মোবাইল বিপ্লব ঘটে নি, কাজেই ফোন ডেড হওয়া মানেই পুরোপুরি কানা হয়ে বসে থাকা। ফোন ডেড হওয়া মানেই সেদিন যেয়ে লোকাল অফিসে অভিযোগ জানিয়ে আসতাম। সেদিন ঠিক হবে এমনটা স্বপ্নেও ভাবতাম না। পরের দিন আবার যেয়ে সকাল থেকে বসে থাকতাম। ধীরে ধীরে লাইনম্যানরা অফিসে আসতো - আমাদের ফোনে যে বক্স থেকে লাইন এসেছে, সে'টার লাইনম্যান আসলে তাকে নানারকমের খাতির যত্ন করে বক্স অবধি নিয়ে যেতাম, এরপর ফোন ঠিক হয়েছে নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল সেখান থেকে নড়তাম। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, মোটামুটি দুই-তিন দিন হত্যে দিয়ে পড়ে থাকার পর কাজ উদ্ধার হত।
আস্তে আস্তে দেশ আরো উন্নত হল। গাজী প্লাস্টিক ট্যাংকের পাশাপাশি দেশে মোবাইলেরও সরব বিপ্লব হয়ে গেল। ধীরে ধীরে আমাদের বাসাতেও সবার জনপ্রতি একটা করে মোবাইল হয়ে গেল। এত শস্তা কলরেট, সারাদিন সবাই জরুরী কথাবার্তা নিজের মোবাইলেই সারি। এখন টি এন্ড টির ফোন বাসার অলংকার, দরকারী, অদরকারী, খাজুরালাপ, প্রেমালাপ সবই মোবাইলেই হয়। মাঝে মাঝে মোবাইলে টাকা না থাকলে টি এন্ডটি দিয়ে ফোন দেই, আর কদাচিৎ বন্ধু কিংবা আত্মীয়দের ফোন দেই টি এন্ড টি'র ফোন থেকে। যে ফোন বিল আগে ১০০০ টাকার নিচে রাখা সৌভাগ্যের ব্যাপার ছিলো, সেই ফোনের বিল এখন দুইশ' পার করতেই বহু কষ্ট হয়।
কয়েক মাস আগে, হঠাৎ একদিন জরুরী একটা কল করতে টিন এন্ড টি ফোন তুলতেই দেখি ফোন ডেড। এবার আর আগের মত দিশেহারা লাগলো না, ধীরে সুস্থে অফিসে ফোন করে জানালাম। আমি ভাবলাম নিজের থেকে তো আর ঠিক করবে না, আমাকে যেতে হবেই আগের মতো... দেখি ধীরে সুস্থে যাই আর কী একদিন...
পরের দিন সকাল দশটায় ফোন বেজে উঠলো। টি এন্ড টি থেকে রীতিমত কোকিল কন্ঠে একজন ভদ্রলোক জানতে চাইলেন, "গতকাল আপনারা অভিযোগ করেছিলেন, আমরা ঠিক করেছি। এখন কি ঠিক মত শুনতে পাচ্ছেন ?"
পুরো ঘটনা দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম। পরে বুঝলাম বেসরকারীকরণের ফলেই এই উন্নতি। এছাড়া টি এন্ড টি ফোনের উপর থেকে মানুষের নির্ভরতা অনেক কমেছে আগের থেকে, কাজেই লাইনম্যানদের সেই রমরমা দিনও আর নেই।
যাই হোক, যে ঘটনা বলার জন্য এত কথা খরচ করা, সে'টা এখন বলি। গত সপ্তাহে হঠাৎ আবিষ্কার করলাম, ফোন ডেড। বাসায় আমি ছাড়া এ'সব অভিযোগ জানানোর কেউ নেই, এ'দিকে আমার জীবন মরণ পরীক্ষা চলছে আর এ ছাড়া সবার মোবাইল তো আছেই, কাজেই ঠিক করলাম সপ্তাহখানিক পরেই অভিযোগ জানাবো।
এর পরদিন দেখি ফোন বেজে উঠলো,
- হ্যালো
- হ্যালো, জ্বী আমি টি এন টি অফিস থেকে বলছিলাম। আপনাদের এই ফোনটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। আমরা ঠিক করে দিয়েছি। আপনারা ঠিক মতো শুনতে পাচ্ছেন ? ...
-
মন্তব্য
এইটা কি সত্যি বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে
*********************************************************
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
গল্প হলেও সত্যি !
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
কস্কি মমিন! ছাড়া আর কিছু বলতে পারলাম না।
এইটা কস্কী মমীন ক্যাটাগরীতে দিয়া দেন
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
দিলাম দিয়া !
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
কস্কি মমিন ! তোদের বাড়িতে এখনো ল্যান্ড-ফোন আছে ?
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
হু, সুন্দর করে সাজায়ে রাখছি।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
বিচারপতি সাহাবুদ্দিন সাহেবের তদারকী সরকারের সময় অ্যাপ্লাই করে বিচারপতি লতিফুর রহমান সাহেবের আমলে একটা ল্যাণ্ডফোন পেয়েছিলাম। মাঝখানে অবশ্য বড়বোন একটা বড়সড় অংক বিটিটিবির হুজুরদেরকে স্পীডমানি হিসাবে দিয়েছিলেন। তার পরের গল্প বলার কোন দরকারই নেই। কারন, অমন গল্প সবার ঝুলিতেই আছে। তবে এখন আমাদের বাসা বিটিটিবিমুক্ত। তিন বছর বয়সী ভাস্তেটা ছাড়া আর সবার নানা অপারেটরের মোবাইল আছে। যতদূর জানি মোবাইল ফোনকে পিএবিএক্স-এর সাথে যুক্ত করা যায়। কিন্তু একে ফ্যাক্স মেশিনের সাথে লাগানো যায় কিনা জানি না। লাগানো গেলে মনে হয় গোটা দেশটাকেই বিটিটিবি/বিটিসিএল-এর ফোনমুক্ত করা যায়। এতে মনে হয় না বিশেষ কোন ক্ষতি হবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
BTCL- এর এই অবস্থার জন্য তারাই দায়ী। যে সময়টায় তারা হতে পারতো দেশের চূড়ান্তরকমের লাভজনক প্রতিষ্ঠান, তখন তারা করেছে চূড়ান্তরকমের গ্রাহক হয়রানি। এখন আর সার্ভিস ঠিক করে লাভ কী ?
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
অভিজিৎ দা ডারউইন ডের জন্য লেখা আহবান করছেন। এই লেখাটা পাঠিয়ে দিন।
=============================
তোমার চিন্তার লাইন ঠিকাছে। আমি এই আশাতেই এই নাম দিছি
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
সাবাশ!!!
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
হ আমিও তাই কই সাবাশ। শুধু সময়কালে কইতা পারলাম না আর কী...
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
নস্ট নস্টালজিয়া-তে ডুবে গেলাম...
হায়, টিএনটি- এক সময় তোর উপর আমি কতই না নির্ভর করতাম...!!!
কস্কিরে মমিন্ন্যা ???!!!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
হা হা। বিশাল মজা পেলাম। বহু বহুকাল আগে আমাদের টিএন্ডটি ফোন ছিল, যেটা কিছুদিন পরপর নষ্ট হয়ে যেত। তবে ঠিকও হয়ে যেত, বলতে গেলে, অভিযোগ জানানোর একদিনের মধ্যেই। ঢাকায় আসার বেশ অনেকদিন পর আরেকটা টিএন্ডটি ফোন নেয়া হয় কয়েক মাস আগে। এটা দিয়ে আজ পর্যন্ত আমি একটাই কল করেছি। ফোনটা বাজেও হঠাৎ হঠাৎ করে। তবে আমার কাছে কখনই কল আসে না, কারণ নাম্বারটা জানেই না কেউ। কথা এমনিতেই কম হয়, তার উপর আবার মোবাইল আছে এখন। তাই নিজের ঘরেই টিএন্ডটি ফোনটা থাকলেও, সেটা শুধু ঘরের শোভা বর্ধনই করে যাচ্ছে।
পোস্টের কাহিনী বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হলো। এ-ও কী সম্ভব!
.. truth is stranger than fiction ..
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
তবে আমার জীবনে ল্যান্ড ফোনের গুরুত্ব অপরিসীম। একটা এক্সটেনশন লাইন আমার ঘরে সবসময় থাকতো। এবং সেইটা সারারাত ব্যস্ত থাকতো। সেলফোনের প্রথম যুগেও এটা ছাড়া আমার চলতো না, কারন ৮ টাকা মিনিট মোবাইল বিল ছিলো।
আহারে সেইসব সোনালী দিন...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
- প্রাগৈতিহাসিক কালে একবার এক বালিকা ল্যাণ্ডফোনে ডিশটাব মারতো আমারে। সেই দিনগুলার কথা মনে করাইয়া দিলেনরে ভাই।
পোস্টে ইয়া হাবিবি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
লেখার নাম ঠিকই দিসেন! আসিলো বান্দর, হইসে মানুষ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
ফোনের জন্য লাইনম্যানদের সাথে আমি ম্যালা ঝগড়া করসি একসময়। ঝগড়া বাঁধায়া ব্যাপারটা আরো ঘোলাটে করে দিতাম আরকি তারপর আম্মু গিয়ে ব্যাটাদের তেল দিয়া ফোন ঠিক করাতেন। আমি তো মুখের উপর ঘুষখোড়, সুবিধাবাদী এসব বলে গালি দিতাম। এখন তাহলে অনেক উন্নতি হয়েছে দেখা যাচ্ছে !!! ভাবতেই অবাক লাগে সত্যিই।
-----------------------------------
--------------------------------------------------------
নতুন মন্তব্য করুন