পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ শাহাদুজ্জামানের ‘কয়েকটি বিহবল গল্প’

সবজান্তা এর ছবি
লিখেছেন সবজান্তা (তারিখ: শুক্র, ১৩/০২/২০০৯ - ৬:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যে কোন ধরণের প্রতিক্রিয়া কিংবা মতামত জানানোর জন্যই বোধ করি নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখাটা খুব জরুরী। কিন্তু শাহাদুজ্জামানের “কয়েকটি বিহবল গল্প” বইটির ক্ষেত্রে আমি শুরুতেই কিছুটা প্রভাবিত হয়ে পড়ি, যখন প্রচ্ছদে লাল রঙের বক্সে দেখি, “মাওলা ব্রাদার্স কথা সাহিত্য পুরস্কার ১৯৯৬”। পুরস্কার পাওয়া মানেই সে'টা সুপাঠ্য কিছু (অন্তত ব্যক্তিগত রুচিতে) হবে, এ ধারণা থেকে বের হয়ে এসেছি অনেকদিন আগেই। তাই বইয়ের পাতা উল্টাতেই সে পুরস্কারের কথা বেমালুম উড়ে যায় মাথা থেকে।

বইটির ক’পাতা উল্টাতেই ‘উৎসর্গ’ দেখে চমৎকৃত হই, উৎসর্গঃ পাপড়ীন, নিত্য স্মরণ রাখি তোমার সেই উচ্চারণ, ‘যে আমার নীরবতা বোঝে না, সে আমার ভাষাও বুঝবে না’। উৎসর্গের এই ক’টি লাইন আমাকে গভীরভাবে আন্দোলিত করে। চিন্তার রেশ নিয়েই চলে আসি প্রথম গল্পে।

“এক কাঁঠাল পাতা আর মাটির ঢেলার গল্প” গল্পটির বুনটে কিছুটা কাব্যের ধাঁচ রয়েছে। অবলীলায় বর্ণনা করে যাওয়া গল্পের প্যাটার্নে ঠিক ফেলা যায় না এই গল্পটিকে। প্রথম পাতাটি পড়তে পড়তে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে থাকি - প্রতিটি বর্ণনায় নিঁখুত যত্নের ছাপ, ভাষার ব্যবহার কাব্যিক হলেও কোথাও বাহুল্য নেই, বুঝতে পারি গল্পকার সোজাসাপ্টা গল্প বলার পদ্ধতিটিকে বেছে নেন নি। দেড় পাতার এই গল্পের প্রায় সবটুকু জুড়েই লেখক বলেছেন, এ গল্পটি মূলত কাদের জন্য। শেষের পাতায় পাঁচ-ছয় লাইনে অবশেষে তিনি এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলেন সেই গল্পটি। এক ধরণের ভালোলাগা নিয়েই শেষ হয় প্রথম গল্প পাঠ, যার রেশ নিয়ে নিশ্চিন্তে চলে যাই দ্বিতীয় গল্পে।

এ বইয়ের দ্বিতীয় গল্পটি সম্ভবত এই বইয়ের গল্পগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বে অন্যতম। ‘অগল্প’ নামের এই গল্পটির বুনট খুব চমৎকার। উত্তম পুরুষে লেখা এই গল্পের প্রতিপাদ্য হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখকের একটি গল্প লেখার প্রচেষ্টা। লেখক একটি প্লট চিন্তা করেন, আবার নিজেই পরক্ষণে সে’টিকে ছুড়ে ফেলে দেন। আবার একটি প্লট নিয়ে এগুতে থাকেন, প্রাথমিক চিন্তার পর ছুড়ে ফেলে দেন সে’টিকেও। লেখকের এই আপাত প্লট নির্ধারণ আর বাতিল করার অন্তরালেও সম্ভবত লুকিয়ে আছে এক তীব্র বিদ্রুপ। বাতিল হয়ে যাওয়া প্লটগুলির প্রত্যেকটিই খুব চটকদার প্লট, মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এসব প্লটের উপর গল্প আমাদের সাহিত্যে নেহায়েত অপ্রতুল নয়। তবু লেখক চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখান, এগুলিই মুক্তিযুদ্ধ নয় - এ নেহায়েতই বাহবা কুড়ানোর জন্য চমকজাগানো কিছু প্লট। মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকারের মাত্রাগুলি এ গল্পগুলিতে উঠে আসে নি। এভাবে একে’র পর এক প্লট বাতিল হয়ে, লেখক শেষ পর্যন্ত যে প্লটটি স্বপ্নে দেখলেন, সে’টাই হয়তো আমাদের স্বাধীনতার স্বরূপ। এই গল্পটির বর্ণনা, ভাষারীতি সবকিছুই এতো হৃদয়গ্রাহী, চমৎকার যে মন্ত্রমুগ্ধের পড়ে গিয়েছি। এ গল্পের শেষের অংশটুকুতে লেখকের চিন্তার যে গভীরতা ধরা পরে, তা’তে আমার মত আমপাঠক মুগ্ধ হয়ে যায়।

‘অগল্পের’ পর যে গল্পটির কথা বলা যেতে পারে তার নাম, ‘মৌলিক’। একাকী লঞ্চে ভ্রমনরত এক তরুণের কথা বলা হয়েছে গল্পটিতে। গল্পের শুরুতে নিছকই নিসর্গের বর্ণনা, লঞ্চের সবিস্তার বিবরণ। গল্পটির মূল ঘটনাসূত্র শুরু হয় যখন কেবিনের বারান্দায় মা সহ এক চমৎকার তন্বী মেয়ে এসে দাঁড়ায়। এ পর্যায়ে মেয়েটির বক্ষসৌন্দর্য নিয়েও কিছুটা প্রচ্ছন্ন ইংগিত ছিলো লেখকের ভাষ্যে। এরপরের অংশটুকুতেই অবশ্য গল্প-এর মূল Twist শুরু, যখন লঞ্চ চরে আটকে যায় এবং পেটের সমস্যার ভয়ে লঞ্চের কোন প্রকার খাওয়া খেতে অস্বীকৃতি জানানো যুবকটি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে। এ অংশে লেখকের বর্ণনা চমৎকার - কীভাবে একজন যুবকের দৃষ্টি মেয়েটির ঠোট, চোখ কিংবা স্তনের থেকে সরে গিয়ে আবদ্ধ হয় মেয়েটির চিবুকে কিংবা মেয়েটির মুখের ভিতর ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া পরোটার টুকরার দিকে। গল্পটির শেষ পর্যন্ত তাই বেশ খানিকটা হাস্যরসের উদ্রেককারী, এবং একই সাথে এর নামকরণও সার্থক কারণ যৌনানুভূতির চেয়ে যে উদরের আগুন অনেক বেশি তীব্র এবং মৌলিক, তা শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়।

বইয়ের বাকি গল্পগুলিও চমৎকার, তবে আমার ব্যক্তিগত বিচারে তা অবশ্য উপরের বর্ণিত গল্পগুলির সমান পর্যায়ের নয়। ‘কতিপয় ভাবুক’ কিংবা ‘কিছু শিরনামা’ গল্পগুলির বলার ভঙ্গি অনবদ্য। বিশেষত ‘কিছু শিরনামা’ গল্পটিতে যে কয়েকটি দৃশ্যকল্প বর্ণনা করে হয়েছে,তার প্রতিটি চমৎকার। শেষ দৃশ্যকল্পটি এতোই চমৎকার যে, যতোবারই পড়ছি ততোবারই কল্পনা করে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি।

সম্ভবত শাহাদুজ্জামানের গল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য (অন্তত এই বইটিতে) হচ্ছে, বিদ্রুপের ছলে কোন সিরিয়াস মেসেজ দেওয়া। বেশ ক’টি গল্পের মধ্যেই তিনি বিদ্রুপের ছলে সিরিয়াস কিছু মেসেজ পাঠকের উদ্দেশ্যে দিয়েছেন এবং কোনটিতেই গল্পের শেষাংশে সারা গল্পে প্রবাহমান ইমোশন কিংবা স্পিরিটের ধারাকে তিনি ব্যাহত করেন নি। তিনি তাঁর মতো গল্প বলে গিয়েছেন, যতটুকু ধাক্কা লাগার তা লেগেছে পাঠকের প্রান্তে। বাড়তি শব্দ খরচ করেন নি একদমই, শুধু প্রচ্ছন্ন বিদ্রুপেই নিজের কাজটুকু করে দিয়েছেন। এমনি কয়েকটি গল্প হচ্ছে, ‘স্যুট টাই অথবা নক্ষত্রের দোষ’, ‘কারা যেন বলছে’, ‘ক্যালাইডোস্কোপ’ আর ‘হারুনের মঙ্গল হোক’।
প্রতিটি গল্পেই রয়েছে বিদ্রুপের ছোয়া, একটি গুরুতর বক্তব্য কিন্তু সারাটি লেখাই জুড়েই হয়তো পাঠক মুচকি হাসবেন।

‘মারাত্মক নিরুপম আনন্দ’ নামে বইয়ের শেষগল্পটির মধ্যে এক ধরণের দার্শনিকতার ছাপ রয়েছে। সচলায়তনের যারা ‘জেনগল্প’ পড়ে অভস্ত্য, তারা হয়তো কিছুটা সাদৃশ্য খুঁজে পাবেন। এই গল্পটিতে লেখক প্রচ্ছন্নতর উপায়ে একটি বক্তব্যের বাঁধন আলগা করে, তাকে পাঠকের মাঝে ছেড়ে দিয়েছেন।গল্পটি বার দু’য়েক পড়ার পরও সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে পার নি, লেখকের ভাবকে বুঝতে পেরেছি কী না, তবে নিজের মতো যেটুকুই বুঝতে পেরেছি সে’টিও চমৎকৃত হওয়ার মতোই।

এই গ্রন্থের সবচেয়ে ফ্ল্যাট যে গল্প দু’টিকে লেগেছে, “ মিথ্যা তুমি দশ পিঁপড়া” আর “ক্ষত যত ক্ষতি যত”। গল্প দু’টিই খুব প্রচলিত দু’টি প্লটের উপর করা। লেখক বাদবাকি গল্পগুলিতে যতোটা মুন্সীয়ানার সাথে সাধারণ প্লটে অসাধারণ গল্প গেঁথে তুলেছেন, এ’ দুই ক্ষেত্রে তা অনুপস্থিত ছিলো। তবে এ’টাও স্বীকার করা উচিত যে, গল্প দুটির কিছুটা ফ্ল্যাট কিংবা ক্লিশে মনে হওয়াটা মূলত আপেক্ষিক এবং লেখকের নিজেরই দায়। তিনি বাদ বাকি গল্পগুলি এত চমৎকারভাবে লিখেছেন যে তুলনার মানদন্ডে পরে এ’দুটি লেখা কিছুটা কম স্বীকৃতি পেল - হয়তো বিচ্ছিন্নভাবে পঠিত হলে পরম বিচারের স্কেলে এ গল্পদুটিও ভালো নম্বর পেয়ে উৎরে যেত।

মোটামুটিভাবে, শাহাদুজ্জামানের প্রথমপাঠে আমার ভালো লাগার অংশই বেশি। তাঁর গল্প বলার ভঙ্গিমা এবং সাধারণ প্লটের উপর বর্ণনার জোরে অসাধারণ গল্প দাঁড় করানোর প্রতিভাটুকু আমাকে মুগ্ধ করেছে সর্বাধিক। এই বইটি পড়ে ভালো লাগার পরই কিনে এনেছি তার আরো দু’টি বই। আশা করি, লেখক আমাকে নিরাশ করবেন না।

শাহাদুজ্জামান নামটির সঙ্গে পরিচয় আরো কয়েকবছর আগে হলেও, এ যাবৎকালে তাঁর কোন লেখা পড়া হয়ে উঠে নি। কিছুদিন আগে সচলায়তনে নজরুল ভাইয়ের এক মন্তব্যে শাহাদুজ্জামানের ‘ঃতে দুঃখ” উপন্যাসের প্রশংসা শুনে সিদ্ধান্ত নেই, এবার বইমেলায় শাহাদুজ্জামানের কিছু বই কিনবো। তারই ফলশ্রুতিতে এবার মোট তিনটা বই কিনেছি তাঁর। এর মধ্যে প্রথম যে’টা কিনেছি - “কয়েকটি বিহবল গল্প” নিয়েই এই পাঠ প্রতিক্রিয়া।


মন্তব্য

তানিয়া এর ছবি

আপনার পাঠ-প্রতিক্রিয়ার মুগ্ধতা স্পর্শ করেছে আমাকেও । সাগ্রহে ভবিষ্যতের সংগ্রহের তালিকার শাহাদুজ্জামানের বই অন্তর্ভুক্ত করলাম। চমৎকার আলোচনার জন্যে ধন্যবাদ

সবজান্তা এর ছবি

ধন্যবাদ গৃহীত হইলো !

লেখা পড়ে মন্তব্য করার জন্য পালটা ধন্যবাদ।


অলমিতি বিস্তারেণ

কনফুসিয়াস এর ছবি

ঃ-তে দুঃখ কি এবারের মেলায় পাওয়া যাচ্ছে? এটা অনেকদিন আউট অব প্রিন্ট ছিলো।

আপনার আলোচনা চমৎকার লাগলো। গল্পগুলো এখনি গরমাগরম পড়তে পারছি না ভেবে আফসোস বেড়ে গেলো!

-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সবজান্তা এর ছবি

আলাদা বই হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু পাঠক সমাবেশ থেকে বের হওয়া শাহাদুজ্জামানের "গ্রন্থিত অগ্রন্থিত গল্পসমূহ" ( নামটা হুবহু ঠিক না সম্ভবত, আগাম দুঃখিত) নামের বইটিতে এ'টি রয়েছে।

এদিকে আমি আগেই মাওলা থেকে তাঁর তিনটা বই কিনে ফেলার পর পাঠক সমাবেশে যেয়ে দেখি এই সমগ্র। চারশ' বিশ টাকা দিয়ে এখন এই বইটা শুধু মাত্র "ঃতে দুঃখ"-এর জন্য কেনাটা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। মন খারাপ

মতামত জানানোর জন্য ধন্যবাদ।


অলমিতি বিস্তারেণ

তারেক এর ছবি

চলো নজরুল ভাইরে ধরি, ঃ তে দুঃখ আমারও পড়া হয় নাই। কথা পরম্পরা'টা নিও। অসাধারণ !!
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

সুমন সুপান্থ এর ছবি

পাঠক সমাবেশ থেকে প্রকাশিত শাহাদুজ্জামান'র এবারের বইয়ের নাম ' শাহাদুজ্জামানের গল্প,অ-গল্প,না-গল্প' !

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

পরিবর্তনশীল এর ছবি

রিভিউ পড়ে তৃষ্ণা পেয়ে গেল।
কই পাই?
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

তারেক এর ছবি

মাওলা ব্রাদার্সে পাওয়া যাবে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

সবজান্তা এর ছবি

প্রথমদিন উনার তিন'টা বই থেকে বাইছা এই বইটা কিনা দেওনে লাইগা তুমিও একটা ধন্যবাদ পাইবা তারেক চোখ টিপি


অলমিতি বিস্তারেণ

সবজান্তা এর ছবি

শুধু এ'টা কিনতে চাইলে মাওলা ব্রাদার্স।

আর যদি রচনা সমগ্র কিনতে চাও তা'হলে পাঠক সমাবেশ। টাকা পয়সার বিশেষ কড়াকড়ি না থাকলে আমি সমগ্রটারই পক্ষে, ওখানে "ঃতে দুঃখ" টাও পাওয়া যাচ্ছে।


অলমিতি বিস্তারেণ

পরিবর্তনশীল এর ছবি

কিনতাছি।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

আরিফ জেবতিক এর ছবি

শাহাদুজ্জামানের লেখার সাথে আমার প্রথম পরিচয় ৯৮ সালে । তাঁর লেখার সংখ্যা বোধহয় খুব একটা বেশি নয় ।
তার গল্প নিয়ে আপনার মূল্যায়নের সাথে আমার মোটামুটি মিলে গেল ।
আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে , "মিথ্যা তুমি দশটি পিপড়া" গল্পটিই তাকে বিখ্যাত করেছে মনে হয় , সবার কাছে এই গল্পটির প্রশংসা শুনি ।
আমার কাছে গল্পটা আলাদা কিছু মনে হয়নি ।

সবজান্তা এর ছবি

লেখাতেই বলেছি, "মিথ্যা তুমি দশটা পিঁপড়া" হয়তো বিচ্ছিন্ন একটা গল্প হিসেবে, লেখকের সম্পর্কে কোন ধারণাবিহীনভাবে পড়লে মোটামুটি চলনসই ভালো একটা গল্প।

কিন্তু শাহাদুজ্জামান তাঁর নিজের যে স্ট্যান্ডার্ড সেট করেছেন বাদ বাকি গল্পগুলিতে, সে তুলনায় এ গল্পটা বেশ সাদামাটা লেগেছে আমার কাছে।


অলমিতি বিস্তারেণ

আরিফ জেবতিক এর ছবি

সেটাই । কিন্তু যারা শাহাদুজ্জামান পড়েছেন ,তাদের অনেককেই বলতে শুনেছি যে এটা তার অন্যতম সেরা কাজ । কেম্নে কী , কে জানে ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আহ্ শাহাদুজ্জামান...
গত বেশ অনেকগুলো বছর ধরে আমি পাঠককে শাহাদুজ্জামান পড়তে এতো করে বলি... লোকজন প্রায় বিরক্ত হয়ে যায়। কিন্তু এই পর্যন্ত যারাই পড়েছে তারাই খুশি হয়েছে।

আর শাহাদুজ্জামান পড়ার জন্য আমি প্রথম ধন্যবাদ দেই আজকের বিখ্যাত বিজ্ঞাপন নির্মাতা অমিতাভ রেজাকে। অমিতাভই আমার এক জন্মদিনে প্রথম উপহার দেয় শাহাদুজ্জামানের 'কয়েকটি বিহ্বল গল্প'। পড়ে হা করে তাকিয়েছিলাম। তারপর পৃথিবীতে যেখানেই শাহাদুজ্জামানের নাম দেখেছি সেগুলোও গোগ্রাসে গিলেছি। এমনকি প্রথম আলোতে কিছু আন্তর্জাতিক কলামের অনুবাদও...

বছর পাঁচেক আগে একটা দল... যারা মূলত ৮০'র দশকে লিটলম্যাগ আন্দোলনটা করেছিলো ঢাকায়... তারা সবাই যাবে সুন্দরবনে। কবি সাজ্জাদ শরীফ প্রথমবারের মতো যাচ্ছেন শ্বশুড়বাড়ি। সঙ্গে সবাই দলবেধে। সেই দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হয়ে আমি ভীড়ে যাই। আর সেখানেই চমক হয়ে আসেন শাহাদুজ্জামান, আমাদের মুন্না ভাই। তার সঙ্গে আড্ডার স্মৃতি আমি এই জীবনে ভুলবো না। ভুলবোনা ব্যাপক চাঁদের রাতে তার কণ্ঠে একের পর এক কিশোর কুমার শোনার কথা। ভুলবোনা আমার অতিরিক্ত পানাসক্তির কারনে তার বকুনিগুলোর কথা। আমার মুগ্ধতার একটা বড় জায়গা জুড়ে তিনি আছেন।

তার বই বা লেখা সম্পর্কে আমি বলতেই চাই না। বিরাট ভাষণ হয়ে যাবে। এবার থামি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সবজান্তা এর ছবি

শাহাদুজ্জামানের সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে আপনার শাস্তি হচ্ছে আমাকে আর তারেককে "ঃতে দুঃখ" কিনা গিফট দিতে হবে চোখ টিপি


অলমিতি বিস্তারেণ

s-s এর ছবি

আশ্চর্য যে এই বইটা অমিতাভের সূত্রেই আমার পড়া - একটা জন্মদিনের উপহার ছিলো যদ্দূর মনে পড়ে। শাহাদুজ্জামানের লেখার হাত ভালো। পড়ে ভালো লাগে।

আদৌ কি পরিপাটি হয় কোনো ক্লেদ?ঋণ শুধু শরীরেরই, মন ঋণহীন??

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দারুন রিভিউ। সমগ্রটাই কিনব বলে ঠিক করলাম। আগে কখনও এই লেখকের বই পড়া হয়নি, তবে আগ্রহ ছিল।

আচ্ছা, মেলায় কি শহীদুল জহিরের কোনো সমগ্র পাওয়া যাচ্ছে?

সবজান্তা এর ছবি

দিলেন তো ভাই দুঃখের জায়গায় খোঁচা। প্রায় অদৃশ্য পাঠক সমাবেশের স্টল খুঁজে বের করে যখন ওদের "শহীদুল জহির রচনাসমগ্র" দিতে বললাম, ওরা বিরস মুখে জানালো, বই শেষ হয়ে গিয়েছে। মেলায় আর না আসার চান্সই বেশী।

অপেক্ষায় থাকেন, মেলার পরে পাবেন পাঠক সমাবেশে। আর যদি শুধু "ডলু নদীর হাওয়া" কিনতে চান, পেয়ে যাবেন মাওলা ব্রাদার্সে।


অলমিতি বিস্তারেণ

খেকশিয়াল এর ছবি

তাইলে তো সমগ্রটাই কিনুম

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

সবজান্তা এর ছবি

হু কিনেন । আপনার থিকা নিয়াই পড়া লাগবো চোখ টিপি


অলমিতি বিস্তারেণ

হিমু এর ছবি

রিভিউটা চমৎকার হয়েছে। প্রথম আলোয় শাহাদুজ্জামান একটি অনিয়মিত (?) কলাম লেখেন। তার কয়েকটা বেশ ভালো লেগেছে পড়ে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সুমন সুপান্থ এর ছবি

প্রথমেই অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, সবজান্তা, আমাদের কথা সাহিত্যের এক শক্তিমান প্রতিনিধি ও তাঁর বই নিয়ে আলোচনা করার জন্য ।
আমি প্রথম শাহাদুজ্জামান'র লেখা পড়ি সম্ভবতঃ মঈন চৌধুরী'র ছোটকাগজ 'প্রান্ত'তে, আরেক গুণী কথাকার আকমল হোসেন নিপু'র সৌজন্যে।
পরে, তাঁর ' কয়েকটি বিহ্বল গল্প' বেরুলে, মাওলা ব্রাদার্স পুরস্কার পেলে, এক সময়ের ছোট কাগজ কর্মী শাহাদুজ্জামান ভালোই মনোযোগ পান পাঠকের । এই বইটি পড়ার সময় আমারো আপনার মতোই প্রতিক্রিয়া হয়েছিলো ।
হুম, আপনার সঙ্গে সহমতই পোষন করছি । ( যদিও আরিফের কথাও মিথ্যে নয়- চলতি পাঠকেরা তাঁর মিথ্যা তুমি দশটা পিঁপড়া কে অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন ) এই গল্পটা তাঁর মানের বিচারে বাহির বাড়ির আত্মীয় বলেই মনে হয় ।

আমার মতে, তাঁর উল্লেখযোগ্য আরেকটা কাজ, তাঁর ২য় বই - 'পশ্চিমের মেঘে সোনার সিংহ''কলতলায় ক্লারা লিন্ডেন', 'লাল জেল, সিং মাছ, এইসব' অসাধারণ গল্পগুলো আছে এটায় ।

নজরুলেরই একটা পোস্টে জেনেছিলাম সাজ্জাদ (শরীফ) ভাই, মুন্না ভাই ( শাহাদুজ্জামান)দের সঙ্গে ওঁর নদীবিহারের কথা । নজরুলের প্রতি ঈর্ষাও হয়েছিলো বেশ ।
পাপড়ীন আপা, আর তাঁর এক বান্ধবী, আমাদের আরেক বড় বোনের সুত্র ধরে মুন্না ভাইর সঙ্গে কথা হয় মাঝে মাঝে । কখনো লেখালেখি নিয়ে নয় । তবু একবার কি প্রশংগে জানি বলেছিলেন,“এক কাঁঠাল পাতা আর মাটির ঢেলার গল্প” তাঁর অন্যতম প্রিয় গল্প !

আমি ভাই শাহাদুজ্জামানের অন্ধপাঠক । শহীদুল জহির, মামুন হুসাইনের পর তাঁকেই আমি ষাটোত্তর সময়ের সেরা কথাকার বলে বিবেচনা করি ।
তাঁকে নিয়ে আপনার এই আলোচনার জন্য আবারো ধন্যবাদ ।

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

সবজান্তা এর ছবি

চমৎকার মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

পশ্চিমের মেঘে সোনার সিংহ-টাও আমি কিনেছি। দেখি, ধীরে সুস্থে পড়ে।


অলমিতি বিস্তারেণ

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

সবজান্তাকে অজস্র ধন্যবাদ দুর্দান্ত এই রিভিউ'র জন্য ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

রাফি এর ছবি

আমার পড়া শাহাদুজ্জামানের প্রথম বই "একটি হাসপাতাল, একজন নৃবিজ্ঞানী, কয়েকটি ভাঙ্গা হাড়"। বইটি গবেষণাধর্মী হলেও উপস্থাপনার অভিনবত্বে মুগ্ধ হয়েছিলাম।

এরপর পড়ি "কয়েকটি বিহবল গল্প"। শাহাদুজ্জামানের সৃষ্টি বর্ণনা করার মত দুঃসাহস আমার নেই। তবে এই রিভিউটা পড়ে মনে হল বইটা আবার পড়া দরকার।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

স্নিগ্ধা এর ছবি

সবজান্তা - নাহ্‌, শেষ পর্যন্ত তোমার মত পাব্লিক্কেও আমার কৃতজ্ঞতা জানাতে হচ্ছে!!

বইমেলা থেকে আমার জন্য যে সব বই কিনবা তার লিস্টে শাহাদুজ্জামানের যতগুলা পাও, যোগ করো।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হু... তারপর সেই বইগুলা আমার বাড়িতে পাঠায়া দিবেন... আমি পড়ে বিবেচনা করে দেখবো কোনটা কোনটা স্নিগ্ধাদির পড়া উচিত আর কোনটা পড়া উচিত না... চোখ টিপি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

স্নিগ্ধা এর ছবি

নইজ্যা, বাড়াবাড়ি দেখি বেড়েই যাচ্ছে রেগে টং
চাঁদনী রাতে নৌবিহারও করবেন, কিশোর কুমারও শুনবেন, সুরাপানের অনুপান হিসাবে 'মিষ্টি মিষ্টি' বকুনীও পাবেন - আবার অন্যের 'বিদেশে মাছি মারা' পয়সায় শাহাদুজ্জামান সমগ্র পড়েও ফেলবেন????

বাহ, বাহ, বাহা - বল মা তারা দাঁড়াই কোথা ?!

তানবীরা এর ছবি

জীবন এতো ছোট, তাও কামে কাজে যার বেশীটা ক্ষয় হয়, এতো এতো ভালো ভালো বই কখন পড়বো?

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আমার ভালো লেগেছে ‌পশ্চিমের মেঘে সোনার সিংহ' বইটি।
আর ঃ তে দুঃখ খুঁজতে গিয়ে কিনে ফেললাম শাহাদুজ্জামানের গল্প, অগল্প, না গল্প সংগ্রহটি। আর সেখানেই দেখি ঃ তে দুঃখ উপন্যাসখানা। এতে আরো কিছু অগ্রন্থিত গল্পও আছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।