০১
ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারতাম অনেক ছোট বয়সেই। যাদের বড় বোন রয়েছে, সম্ভবত তাঁরা সবাইই জিনিসটার তিক্ত স্বাদ কিছুটা হলেও পেয়েছেন। সেই ছোট বয়সে খুব বিরক্ত আর অসহায় লাগতো, কিন্তু কিছুই করার ছিলো না। এই বড় বেলাতে এসেও চুপচাপ বসে থাকি আর দেখি, কারণ আমরা ভাবি আমাদের কিছু করার নেই।
ভাবছিলাম ইভ টিজিং নিয়ে। বাংলাদেশে একজন মেয়েকে কী অসহনীয় পরিমাণ যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তা হয়তো অনেকে ছেলেই জানেন না। রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলার সময় বাঁকা মন্তব্য ছুড়ে দেওয়া, ভীড় বাস কিংবা রাস্তায় অতর্কিতে শরীর ছুয়ে যাওয়া কিংবা অশ্লীল বিভিন্ন অংগভঙ্গি করা - এইসব দিয়েই আমরা মেয়েদের হাঁটার রাস্তাটাকে রীতিমত নোংরা, দুর্গন্ধময় করে রেখেছি। লেখার শুরুতেই যেমন বলেছি, নিজের বড় বোন থাকার কারণেই হয়তো কিছুটা বুঝতে পারি রাস্তায় একজন মেয়ের হেঁটে যাওয়াটা কতোটা বিড়ম্বনাপূর্ণ। সেই সাথে চিন্তা করে আঁতকে উঠি, একজন গার্মেন্টসকর্মী কিংবা নিত্যদিনের গৃহসহায়িকা মেয়েকে ঠিক কতোটা যন্ত্রনার শিকার হতে হয়।
মাঝে মাঝে ভাবি, শুধু মাত্র বখাটে ছেলেদের অত্যাচারে যখন একটা স্কুল কিংবা কলেজগামী মেয়ে পড়াশোনায় ইতি টেনে দেয় কিংবা সিমির মতো মেয়েরা যখন আত্মহত্যা করে, তখন তাঁরা আসলে ঠিক কতোটা অসহায় হয়ে পড়ে।
আমরা এ'সব পড়লে ব্যথিত হই, ভাবি এর একটা শক্ত প্রতিবাদ হওয়া দরকার। ব্যস, অতোটুকুই, এরপর নিত্যদিনের নানা ঝঞ্ঝাটে আমাদের আর সময় কোথায় এই উটকো বিষয় নিয়ে ঝামেলা করার !
০২
দৃষ্টিপাতের উদ্যোগে আসছে এগারোই এপ্রিল অর্থাৎ সামনের শনিবার নারীদের রাজপথে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি পদ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে । শব্দটা একটু খটমটে শোনালেও মূল কাজটা বেশ সহজ। শনিবার বিকাল ৪টার সময় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে সবাই হাঁটতে শুরু করবে। হাঁটা বললে অবশ্য ভুল হবে, কেউ চাইলে দৌড়াতে পারবেন কিংবা সাইকেল নিয়েও অংশ নিতে পারবেন। এই হেঁটে চলা শেষ হবে ধানমন্ডি আট নম্বরের রবীন্দ্র সরোবর অর্থাৎ মুক্ত মঞ্চে। সন্ধ্যার সময় সেখানে রয়েছে গানের অনুষ্ঠান যাতে গাইবেন আনুশেহ এবং কৃষ্ণকলি।
হেঁটেই আমরা একদিনে মেয়েদের জন্য নিরাপদ রাজপথ গড়ে ফেলবো, এমনটা আমরা কেউই ভাবি না, এমনটা হওয়ারও না। তবু আমরা কোথাও থেকে শুরু করতে চাই। আমরা চাই মানুষ একবার হলেও ভাবুক। একদিনে না হোক, এক দিন না এক দিন নিশ্চয়ই আমরা মেয়েদের জন্যও নিরাপদ রাজপথ গড়ে তুলতে পারবো।
অনেকেই হয়তো ব্যস্ত থাকবেন নানা কাজে, তবু কেউ যদি পারেন কিছুটা সময় বের করতে তবে আহবান থাকলো আমাদের সাথে কিছুটা পথ হেঁটে এই প্রতিবাদে শামিল হতে।
মন্তব্য
চমতকার উদ্যোগ। দৃষ্টিপাতের লোকজন কি শুধুই ঢাকায় থাকেন? এই আয়োজনটা তারা সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছেন না কেনো? অন্তত বড় শহরগুলোতে এটা আয়োজন করতেই পারেন।
সফলতার প্রত্যাশায় শুভকামনা।
----------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ভালো একটা প্রস্তাব করেছেন।
আমার জানা মতে ঢাকার বাইরে তেমনভাবে দৃষ্টিপাতের সদস্য নেই সম্ভবত। যদি এই হাঁটা সফলভাবে শেষ হয়, তবে আমার ধারণা ঢাকার বাইরেও এমন করা যেতে পারে।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
দারুণ উদ্যোগ। থাকার চেষ্টা করবো আমার মেয়ে, মেয়ের মা সহ।
আড্ডাবাজির সুযোগ তৈরি হয়ে গেলে আমি থাকুম।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
শুভ উদ্যোগ, সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করি।
আমি যখনই গৌসিয়া এলাকায় (বিশেষত ঈদের বাজারের সময়ে) আত্মীয়া নিয়ে গিয়েছি, কিছুক্ষণ পরেই ভীড়ের মধ্যে তার অস্ফুট আর্তনাদ শুনতে হয়েছে। কোন বদমাস তার গায়ে হাত দিয়েছে। অথচ আমার কিছুই করার থাকে না তখন, শুধু বকে বলি, এখানে কেন এলে?
জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজো, সাভার স্মৃতিসৌধে বিজয় বা স্বাধীনতা দিবস, সবখানেই এই অবস্থা। আনন্দের জায়গায় আসে চরম বিরক্তি আর ক্ষোভের অনুভুতি।
পোশাককর্মী বা গৃহসহায়িকা অবশ্য কর্মক্ষেত্রেই শিকার হয় বেশী। অর্থাভাবে চূড়ান্ত আত্মসমর্পন করতে হয় অনেক সময়।
আমাদের মনে এখনো রাজপথ তৈরী হয়নি। শুধুই নর্দমার গন্ধময় চিপা গলি। কিছু বুলডোজারের প্রয়োজন।
একটু খেয়াল রাখবেন যাতে আপনাদের এই সুন্দর উদ্যোগও কোন বিকৃত মনের বিচরণক্ষেত্র না হয় ।
সর্বাত্বক চেষ্টা থাকবে উপস্থিত থাকার।
সবজান্তাকে ধন্যবাদ এই উদ্যোগের প্রচারের জন্যে।
-------------------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
শুভ উদ্যোগ। ঢাকায় থাকলে অবশ্যই থাকবো।
ভালো চিন্তা।
সাফল্য কামনা করি সর্বাঙ্গীন।
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
দেশ আবারও শিক্ষিত, মার্জিত আন্দোলনের পথে হাটছে, ভাবতেই আশা জাগে! আপনারা সামনে থেকে পথ তৈরি করছেন।
দোয়া করি, যেন সবার ঘরে একটা করে বোন থাকে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
___________________________
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ
আমি তো দোয়া করি যেন প্রতিটি বোনের পথে একজন ভাই থাকে, প্রয়োজনে পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য।
ধন্যবাদ সবজান্তা । আশা করি সবাই আসবেন। হাটাতে না হলেও, সন্ধ্যাবেলা বাংলা আর ৃষনকলির গান শুনতে। ফ্রি। ঃ)
সফল হতেই হবে।
প্রথম আলোর এই লেখাটা দেখেন।
http://prothom-alo.com/fcat.news.details.php?issuedate=2009-04-08&nid=Mzc2MDA=&fid=MTE=
হ্যাঁ, সবজান্তা, অবশেষে আপনার আর আমার একসাথে কাজ করাই হল...
আপনাদের এই পোস্টারের প্রুফ আউটপুট যাওয়ার আগে আমিই দেখে দিয়েছি... স্পটলাইট থেকে ওটা আমার কাছেই এসেছিল শেষপর্যন্ত।
যদিও 'লক্ষে' শব্দটাতে একটি য-ফলা লাগিয়েছিলাম, সেটা আবার কোন পণ্ডিত ফেলল, বুঝতে পারছি না!
তবে আমি ঐদিন থাকব ঢাকার বাইরে।
সেটা অবশ্য একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। ঐদিন ঢাকায় থাকলেও অফিস আমাকে ছাড়ত না নিশ্চয়। সেক্ষেত্রে লজ্জা রাখতাম কই?
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
সবচেয়ে দুঃখের কথা হলো, ওইদিন থাকতে পারছি না আমি নিজেও
তবে আমার অনেক বন্ধুবান্ধব ওইদিন উপস্থিত থাকবে, তারা দারুনভাবে সবকিছু সামলাবে, এটা আমি নিশ্চিত। কাজেই আমি আশা করি, আমি না থাকলেও সচলের লেখক পাঠক সকলেই উপস্থিত থাকবেন, প্রতিবাদ ব্যক্ত করবেন।
@ মৃদুলদা, ওই ভুলটা আমিও প্রিন্টের পরই লক্ষ্য করেছি, কারণ আমাকে সরাসরি আউটপুটের সিডিটা দেওয়া হয়েছিলো এবং আমার দেখার মত অবস্থাও ছিলো না। আশা করি, লক্ষ্য বানানে ভুল থাকলেও, এই প্রতিবাদ তার লক্ষ্যভেদ করবে নিশ্চিত ভাবেই।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
- উদ্যোগ চমৎকার সন্দেহ হনেই। কিন্তু কথা হলো এইটা কতোটা ফলপ্রসূ আর কতোটা সময় সাপেক্ষ!
আমরা রাজনীতি করি ওয়েস্টার্নাইজড, আমরা খাই পশ্চিমা, আমরা পরি ইউরোপীয়, আমরা ব্যবসা করি বিলেতি- কিন্তু রাজপথ, অফিস, সমাজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মেয়েদেরকে করে রাখি মধ্যযুগীয়! হোয়াট এ ব্লাডি শেইম!
এইসব শোভাযাত্রায় কাজ হবে নারে ভাই। ডান্ডা দরকার। পিডাইয়া লাইনে না আনা ছাড়া আমাদেরকে "সভ্য" করা যাবে না। টপ টু বটম, কোনো কথা নাই খালি পিডা। মাইর না খাইলে কোনো শালাই ইশটার্ট নিবে না। আর তখন মাইরের ভয়ে সবাই বাপ বাপ করে সব আইন মেনে চলবে। ইভ টিজিং স্থান পাবে শাহবাগে, জাতীয় যাদুঘরে। এইটা কেবল আমার বিশ্বাস না, এইটা ফ্যাক্ট!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
সফল হোক।
মেয়েদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলো?
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলিতে পৌছে দিতে পেরেছি, কিন্তু কতজন মেয়ে আদৌ অংশ গ্রহণ করবেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছি না।
সবার কাছে অনুরোধ রইলো, সম্ভব হলে সবান্ধব যোগদানের।
পুনশ্চঃ যদিও এই প্রতিবাদ ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবার, তবু মেয়েদের অংশ গ্রহণের অনুপাত যতোটা বাড়ে, ততোই ভালো। কাজেই সবাইকে অনুরোধ আপনার পরিচিত সকল নারীকেই সম্ভব হলে যোগ দিতে উৎসাহিত করুন।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
শুরুটা যখন হয়েছে একটা জায়গায় দাঁড়াবে একদিন
খুবি ভালো, দেশে থাকলে আসা যেত। এওয়ারনেস টাই বড় কথা, ছোট বড় যাই করা হয়।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
দারুণ উদ্যোগ। উপস্থিত থাকার চেষ্টা করব। সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।
চমৎকার ও অসাধারণ উদ্যোগ।
১। একজন রাজনীতিবিদ (নাম ভুলে গেছি) বলেছিলেন, আমার শহরের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত যখন একজন নারী নির্বিঘ্নে রাত্রিকালে যেতে পারবেন তখন বুঝব এখানে সভ্য গণতন্ত্রআছে।
২। কোটারী স্বার্থ নিয়ে একদল অতি উচ্চ শিক্ষিত নারী ও পুরুষ রাত্রিতে মিটিং করলেন। তাদের দল তখন ক্ষমতায়। সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করলেন; নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ। এরপর মিটিং শেষ হলে নেতামত একজন এটা নিশ্চিত করলেন যে প্রত্যেক নারী সদস্যের সাথে একজন পুরুষ আছে কিনা!
যদিও ঘটনাটা মনে পড়লে এখনও হাসি পায়, এটাই আমাদের মনোজাগতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
৩। বন্ধুদের কাছে শুনেছি, কলকাতার ঘটনা কয়েক বছর আগের। এক ছেলে এক মেয়েকে টিজ করছে। তখন পাশের এক দোকানদার বলছে, দাদা কি হয়েছে?
কাজেই সচেতনতার তৈরির জন্য এটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এরপর, এই আন্দোলন গতি পাবার পর "ডান্ডা ওষুধের" কথাও ভাবতে হবে।
নদী
উদ্যোগ সফল হোক।
তবে ধুগো'র ডান্ডা পদ্ধতিটাই উত্তম।
এই পথ আমাদেরও............সাথে আছি।
কি অদ্ভুত! ২০০৯ সাল, এরপরেও একটা মেয়ে বাংলাদেশের রাস্তায় নিরাপদে হাঁটতে পারেনা। সত্যিই অদ্ভুত। অন্তত: এই একটা কারণেও পশ্চিমা দেশে বসবাসরত বলে নিজেকে করুণাভরে নিরাপদ মনে করি, যদিও নিরাপত্তা আদতে কোথাও নেই। কিন্তু তারপরও এখানে রাত বারোটার পর বাইসাইকেল চালিয়ে একাকী আমার ঘরে ফেরাটা এক সময় বাস্তবতা ছিলো , এখনও বাংলাদেশে সেটা অবাস্তব, সাইকেল আর একাকী দু'টোই। আমরা আসলেই অশিক্ষিত একটা জাতি, এরকম মাঝে মাঝে খুব তীব্রভাবেই মনে হয়।
আদৌ কি পরিপাটি হয় কোনো ক্লেদ?ঋণ শুধু শরীরেরই, মন ঋণহীন??
নতুন মন্তব্য করুন