০১
দেশ ছেড়েছি আজ একান্নো দিন হয়ে গেলো।
সব রঙ মিলে যেমন সাদা হয়, তেমনি অনেকরকম অনুভূতির এক বিচিত্র মিশেলে, বলতে গেলে অনুভূতিশূন্য অবস্থাতেই দেশ ছেড়েছিলাম। মাথার জট খোলার জন্য প্লেনে দুইদফা জ্যাক ড্যানিয়েলস খেয়েও বিশেষ উন্নতি করতে না পেরে পাশের সিটের আফ্রিকান ভদ্রলোকের সাথে মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তন নিয়ে জ্ঞানী আলাপ শুরু করলাম- এরপর কিছুক্ষণ সামনের সিটের চৈনিক বালিকার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে চলতে থাকা ক্যান্টোনিজ ভাষার সিনেমা গভীর মনোযোগের সাথে দেখার চেষ্টা করলাম। দুঃস্বপ্নের মতো দীর্ঘ পথ তবু শেষ হয় না। শেষে ব্যাগ থেকে পথে পড়ার জন্য নিয়ে আসা বইটা বের করলাম।
আমার অনেকদিন ধরেই অনেক প্ল্যান ছিলো দেশ ছাড়ার আগে কী কী গল্পের বই নিবো সেটা নিয়ে। কার্যক্ষেত্রে পুরো ব্যাপারটা এতোটাই দ্রুত ঘটে গেলো যে, অনেকটা হাতের সামনে যা পেয়েছি তা-ই নিয়েছি। তবে একটা চিন্তা ছিলো- গল্পের বই সাধারণত আমি বারবার পড়তে পারি না, কবিতার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তেমন না। তাই কবিতার বই-ই বেশি নিয়েছি। এখানে অবশ্য একটা অবর্থ্য চোথা ছিলো শীতনিদ্রায় থাকা ব্লগার সুবিনয় মুস্তফীর- উনি দেশ ছাড়ার সময় একটা বই-ই সুটকেসে নিয়েছিলেন, জীবনানন্দের কবিতা সমগ্র (অবশ্য তার ছদ্মনাম থেকে এটা আন্দাজ করা সহজ)। আমিও ওই বইটাই আগে ব্যাগে ভরলাম। সাথে বিনয় মজুমদারের কবিতা আর মণীন্দ্র গুপ্তের কবিতাসংগ্রহ। মিলান কুন্ডেরার ইমমর্টালিটি আগে পড়া থাকলেও ব্যাগে চালান করলাম, এই বইটা আমি আবার পড়ার ব্যাপারে আগ্রহী। অনন্য জীবনানন্দ কিনেছি আগেই, পড়া হয়নি- কাজেই সেটাও গেলো ব্যাগে; সাথে গেলো বিজয় দত্তের হিমালয়কথা বইটাও। ভ্রমণের আরেকটা বই সাথে নিলাম, ডাক্তার সাহেবের কিনে দেওয়া ইন জানাডু (সেটা পড়া হয়নি আগে)। এসবই তো গেলো বাকি জীবনের জন্য, কিন্তু পথে কী পড়বো ? সেজন্য নিলাম বহুকাল আগে পড়া সুনীলের, ছবির দেশে কবিতার দেশে।
এমনিতে আমি যাত্রাপথে বই পড়তে পারলেও, প্লেনে বই পড়া যে খুব সহজ কাজ না সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে গেছি। ইকোনমি ক্লাসের দরিদ্র যাত্রী হিসেবে মোটামুটি মানবেতরভাবে পুরো রাস্তা অনেকটা পাটিসাপটার মতোই কুণ্ডলী পাকিয়ে আসতে হয়েছে। এর মধ্যে গুপ্ত স্যারের লেখা কোন অভিসন্দর্ভ পড়তেও বিশাল ধৈর্য্য লাগবে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে আমি ছবির দেশে কবিতার দেশে পড়তে শুরু করার পর থেকে সময় যে কীভাবে কেটে গিয়েছে, নিজেও বুঝিনি। বহুদিন পরে বইটা পড়ার কারণে, বলতে গেলে অনেকটা প্রথম পাঠের আনন্দই পাওয়া গেলো। সুনীলের প্রথম বিদেশ যাত্রা- আমারটাও বলতে গেলে এক অর্থে প্রথমই, তাও আবার একই দেশে। সুনীলের আয়ওয়াবাসের কাহিনী, মার্গারিটের সাথে চমৎকার বন্ধুত্ব (নিজের জীবনেও এমন সম্ভাবনা আসতে পারে এইটা অনুভব করে যে আনন্দ হচ্ছিলো, তাতে অবশ্য মাঝে পড়ার একটু ব্যাঘাত ঘটেছিলো) এবং তারপর সুনীলের সাথে ফ্রান্সের রাস্তায় ঘোরার অভিজ্ঞতা। প্লেন থেকে নামার সময় মনে হচ্ছিলো, ভাগ্যিস বইটা এনেছিলাম !
০২
মার্কিন মুল্লুকে পা দেওয়ার আগেই সবার কাছে শুনেছি, জীবন এখানে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে ছোটে। কয়েক দিনের মধ্যে নিজেকেও এমন উর্ধ্বশ্বাস দৌড় শুরু করে দিতে হলো যে কথাটা আর অবিশ্বাস করা গেলো না। ক্লাস-পরীক্ষা-বাজারসদাই-রান্না এবং নানাবিধ ইতংবিতং এর মধ্যে আমার মতো ফাঁকিবাজ মানুষের রীতিমতো হাফ ধরে গেলো। মাঝে মাঝেই নিজের দৌড় থামিয়ে আশে পাশের মানুষদের লক্ষ্য করি, কোথাও কী স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ? নাহ, এই একান্নদিনে এমন একজনকেও পাইনি যে দৌড়াচ্ছে না। বুঝলাম, আমেরিকাই ফরেস্ট গাম্পের আদর্শ দেশ।
অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি, তবু মাঝে মাঝে সন্ধ্যা হই হই বিকালে বাস থেকে নেমে হেঁটে যখন বাসার দিকে আসি, তখন বিষণ্ণ লাগে। কী অদ্ভুত রকমের নির্জন, বিষণ্ণ এই শহর... বন্ধুহীণ। একই গ্রহে তবু এই শহর কতোটা আলাদা আমার শহর থেকে। ঢাকায় এমন সন্ধ্যাগুলিতে আমি ঝড়ের বেগে অফিসের কাজ শেষ করতাম, দ্রুত বের হয়ে নিয়মিত সান্ধ্যকালীন আড্ডায় যাতে তাড়াতাড়ি যেতে পারি। অথচ এই শহরে আমার কোন তাড়া নেই, কোথাও কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করে নেই। আমি একা একাই এই শহরের রাস্তায় হেঁটে বেড়াই কোন এক পরিচিত মুখের আশায়। সঙ্গী বলতে আমার অতি পুরাতন আইপড শাফল যার ভিতর থেকে ভেসে আসে মার্ক নফলারের বিষণ্ণ গলা- ... and it's your face I'm looking for on every street
মন্তব্য
এই যে নিজের "বাসা" হলো একটা, এটাই শুরু।
তোমার এ দেশে থাকা ভালো হোক। লেখা ভালো লাগলো।
হা হা হা... এই দেশে ভালো থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে ! ঘটনাক্রমে অলমোস্ট ড্রাইকাউন্টিতে এসে পড়েছি- আনন্দ ফূর্তির সকল উপকরণই মিসিং এই মোল্লা শহরে
অলমিতি বিস্তারেণ
১১০% একমত।
ইমা
ওয়েলকাম টু দ্য - বিষণ্ণতার শহর। মার্কিন দেশের সব শহর সম্বন্ধেই আমার এই কথা মনে হয়। এখানে সান্ধ্যকালীন আড্ডা মনে হয় নিষিদ্ধ।
চিন্তা নেই সবই সহ্য হয়ে যাবে, মানুষের সহনশীলতা অসীম।
ঘুমাতে যাই - কাল থেকে দৌড় শুরু হবে আবার।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
হ। সহ্য করতে শিখে ফেলবো একসময়, এইটা আমিও বুঝতেছি। তাই লিখে রাখলাম আর কী... যাতে ভবিষ্যতে কোন একসময় এইটা পড়ে নিজেরে নিয়ে হাসাহাসি করতে পারি
অলমিতি বিস্তারেণ
সমস্যা হচ্ছে নিত্যনতুন জিনিস সহ্য করতে হবে। আমি কখনো সকালে উঠতাম না। অফিসে ফ্লেক্স টাইম। এখন সাড়ে ছয়টা উঠতে হয়, বাচ্চাদের স্কুলে নামানোর জন্য। রাতে তাড়াতাড়ি শুতে হয়। জীবন একটু একটু করে তেজপাতা হয়ে যায়।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
জীবন মানেই ক্রমাগত যুদ্ধ করে যাওয়া
অলমিতি বিস্তারেণ
দুই বছর ধরে এখানে থেকে কী কী করা যাবেনা শুধু সেটাই শিখেছি।
আর সেটা হলো, পূবের দিকে সব সময় মুখ ফিরিয়ে থাকলে হবে না, অ্যামেরিকার জীবনে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করো জোর করে হলেও।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
সত্যি বলতে কী, এমনটা আমি দেশ থেকেই প্ল্যান করে এসেছিলাম। যতো খারাপই লাগুক, এখানের জীবনের সঙ্গে দ্রুত মিশে যাবো। যাচ্ছিও তাই।
সমস্যা হয় শুধু সন্ধ্যাতে- ঢাকাতে আমার সান্ধ্যকালীন জীবন খুবই কালারফুল ছিলো। মাঝে মাঝে সন্ধ্যা বেলাতেই না চাইলেও মাথাতে ঢাকার কথাই ঘোরে।
অলমিতি বিস্তারেণ
নিজের দেশকে না ভুলে নতুন দেশকে কিভাবে উপভোগ করতে হয় এই ব্যালান্স মুজতবা আলী সাহেব ভালো বলতে পারবেন।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
হা হা হা... সেইটা ঠিক। তবে কীনা দেখার চোখ তো আর সবার এক হয় না, আর মাঝে মধ্যে মুজতবা আলীরও যে খারাপ লাগতো না, সেইটাই বা কে বলতে পারে
অলমিতি বিস্তারেণ
তা আবার লাগতো না, সেটা তো তার সব লেখাতেই বুঝা যায়। সর্বখানেতেই একটা নাইটলাইফ থাকে, ঢাকায় সেটা হলো আড্ডা। ঐখানেতে কি সেইটা খুঁজে বের করো।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
জ্যাক ড্যানিয়েল , বরফ ছাড়া! বিমান বন্দরে বসে আছি, বড্ড তেষ্টা পেয়ে গেল
facebook
বরফ ছাড়া কেন ! আমাকে তো দিব্যি বরফ দিলো !
তেষ্টা পেলে পানি খান, মিষ্টি সুপেয় পানি। মাদককে না বলুন
অলমিতি বিস্তারেণ
মাদক নয় মাদক নয়, বলুন সোমরস !!
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আমার কাছে তো মনে হয়, ইউরোপ কিংবা আমেরিকা সব জাইগাতেই সন্ধ্যাটা ঠিক এক রকম।
থম ধরে থাকা, খুব বিষণ্ণ, কোথাও কেউ নেই!!!
ভালো থেকুন তার মাঝেও।
এই গানটা আপনার জন্য। কথাগুলো আমার খুব ভালো লাগে।
ঘরে ফেরার গান
ঘরে ফেরার গান
আমার নামটা দিতে ভুলে গেছি। :
সাফিনাজ আরজু
পড়ার জন্য এবং মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ
গানটা আমার খব পছন্দের গান- সত্যি হবে নিশ্চয়ই কোনো একদিন।
অলমিতি বিস্তারেণ
ভ্যাঙ্কুভার চইলা আস বন্ধু। একলগে বইসা রোমান্টিসিজম করুমনে।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ভ্যাঙ্কুভার না হয় গেলাম, কিন্তু তোর যা মতিগতি দেখি, তাতে তোর কি ছেলেদের সাথে (কিংবা কারো সাথেই) "বইসা" রোমান্টিসিজন করার সময় আছে ? মনে তো হয় না !
অলমিতি বিস্তারেণ
আমার কী অবস্থা দেখলি? আমার তো প্রচুর সময়। আইসা পড়।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
না, মানে কইলাম তুই তো আর 'বইসা' রোমান্টিসিজম করার স্টেজে নাই... নানা মুখে নানা কথা শুনি।
অলমিতি বিস্তারেণ
হা হা হা, সেম হেয়ায়র, একই কাহিনি, নিজের কাহিনি টা লিখতে গেলেও মনে হয় একই হবে
হ্যাঁ, এই অনুভূতি অনেকটা কপিপেস্ট টাইপের। এক হলো তবুও, যার যারটা তার মতো করেই স্বকীয়- কাজেই আপনারটাও লিখে ফেলেন, আমরা সবাই পড়ি
অলমিতি বিস্তারেণ
বিষন্নতা একটি রোগ, এর চিকিৎসা করুন - সিবা গাইগী
সব রোগেরই কি চিকিৎসার দরকার আছে ?
অলমিতি বিস্তারেণ
সুন্দর! ঝরঝরে গদ্য। দিনলিপিটা নিয়মিত চালিয়ে যেতে পারেন।
খারাপ হবে না।
ম্যালা ধন্যবাদ বস, পড়া আর মন্তব্যের জন্য।
নিয়মিত চালানোর কমিটমেন্ট দেওয়া তো কঠিন ব্যাপার- আমার মতো অলসের পক্ষে। দেখি তবু, মাঝে মধ্যে বলার কিছু থাকলে হয়তো হাজির হওয়া যাবে আর কী।
অলমিতি বিস্তারেণ
তোমার কোঞ্চিপা - ভ্যাঞ্চিপা ছাড়া ভাল্লাগতেসে?
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
অফকোর্স ! চিপা টিপা কোনো জায়গা হইলো ? এইখানে উন্মুক্ত, প্রশস্ত রাস্তা দেখলেই তো মন ভালো হয়ে যায়
অলমিতি বিস্তারেণ
সন্ধ্যাবেলায় আমার নিজের বাসায়ও একা থাকলে খুব বিষণ্ন লাগে।দিনলিপিটা চালিয়ে যান,অনেক দিন পরে পড়লে নিজের অচেনা প্রতিবিম্ব মনে হবে।
দিনলিপি চালানো তো বড় কঠিন কাজ ভাই... দেখি, মাঝে মধ্যে বলার মতো কিছু থাকলে হাজির হওয়া যাবে আর কী। পড়া আর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
অলমিতি বিস্তারেণ
জন্মভূমি ও প্রিয়জনদের ছেড়ে আসার বেদনা অনেক ভীষণ। তবে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়। একাকীত্বও কেটে যায়। নতুন নতুন মানুশের সাথে বন্ধুত্ব হয়। আপনিও খুব তাড়াতাড়ি কাটিয়ে উঠুন একাকী ও বিষণ্ন ভাব, এই কামনা করছি।
তামান্না ঝুমু
শুভকামনা, পড়া এবং মন্তব্য- এই তিনের জন্য আপনাকে বিশাল ধন্যবাদ
অলমিতি বিস্তারেণ
ভালো লাগলো। বিষণ্ণতা কাটিয়ে নতুন দেশে মানিয়ে নিতে থাকুন। সেই কামনায় করছি।
অমি_বন্যা
শুভকামনা, পড়া এবং মন্তব্য- এই তিনের জন্য আপনাকে বিশাল ধন্যবাদ
অলমিতি বিস্তারেণ
ব্যাপারনা, ঝুলে থাকো। আমি তো এখানে মহা আনন্দেই আছি , তবে এইখানের আনন্দও দৌড়ের উপর থেকেই করতে হয়। দৌড়াতে দৌড়াতে এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।
গুড- আপনার থেকেই তবে নেক্সটদিন দেখা হলে দৌড়ের উপর আনন্দ করার মাসালা জাইনা নিতে হবে। কিন্তু আপনার লগে তো দেখা হওয়াই কঠিন হয়ে যাইতেছে !
অলমিতি বিস্তারেণ
কিছু অনুভূতি মিল পেলাম।
ডেইলি মেইল নিয়মিত হোক!
পড়ার জন্য ধন্যবাদ শিমুল ভাই। অনুভূতির মিল থাকাই বোধহয় স্বাভাবিক। কুন্ডেরার একটা লেখাতে সে বলছিলো, কোন মানুষেরই আসলে মৌলিক কোন জেশ্চার নাই। কিছু কমন জেশ্চারই মানুষের ব্যবহার সাপেক্ষে স্বতন্ত্র হয়। অনুভূতির ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা খাটে বইলা আমার অনেকদিন ধরেই মনে হয়।
ডেইলি মেইল নিয়মিত করা কঠিন কাজ, আমার মতো অলস মানুষের জন্য। তবে মাঝে মধ্যে লেখার চেষ্টা করবো।
অলমিতি বিস্তারেণ
আমি এসেছি আজ ৫৯ দিন হল। আমারও একই অবস্থা। মানুষ এত দৌড়ের উপর থাকে মাঝে মাঝে মনে এরা কখনো এটা ভাবে না যে "It's kind of nice to slow down every once in a while." আর সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে বন্ধুদের জন্য। সারাক্ষন ১০০ মাইল স্পিডে দৌড়ের উপর থাকা এই মানুষ গুলোর অনেকেই জানেই না বন্ধুত্বের আসল মানে কি। যাই হোক তারপরও হয়তো অনেক কিছু করার আছে। কিছু করাটাই আসল কথা।
আপনি কোন শহরে আছেন?
ইমা
কী করার আছে সেটা খুঁজে বের করাটাই এখন আসলে একমাত্র চ্যালেঞ্জ
আমি আছি ডালাসে।
অলমিতি বিস্তারেণ
নিজ দেশের বাইরে, নিজ ঘরের বাইরে আর সব জায়গাই বিষন্ন মনে হয় প্রথম প্রথম, পরে এই বিষন্নতাতেই অভ্যাস হয়ে যায়। দৌড়াতে দৌড়াতে তখন আর বিষন্ন হওয়ার সময় থাকেনা।
[জ্ঞানী জ্ঞানী ভাবে মাথা নাড়ার ইমো।]
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আমি অবশ্য এখনই খুব একটা সময় পাচ্ছি না বিষণ্ণ হওয়ার। আর আসলে বিষণ্ণ হওয়ার দরকারই পড়তো না যদি অত্র এলাকার বালিকাদের সাথে একটু আলাপ আলোচনা করতে পারতাম। তাদের অ্যাবসেন্সেই বিষণ্নতা প্রকট হয়ে যাচ্ছে আর কী
অলমিতি বিস্তারেণ
বালিকাদের হৃদয় পাত্থর দিয়া তৈরী।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
হ, সেইখানে মাথা কুটে মরলে শুধু মাথা ফেটে রক্ত বের হয়, তবু হৃদয় গলে না
অলমিতি বিস্তারেণ
হে ব্যবসায়ী ভাই,
পরসমাচার এই যে কোনচিপা এবং ভ্যানচিপার সবাই ভাল আছে, এমন কী কানকাটা কাল কুকুরটাও। শুধু মহান স্যান্যাল স্যারের সাইকেলে একটু ডিস্টার্ব দেখা দিছে, মাঝে মাঝে বেল বাজে না আর চেন টা কটকট শব্দ করে। আপনার গমনের ৫১ দিনের মাঝে কোনচিপা আর ভ্যানচিপায় কিছু জিনিসের পরিবর্তন হইছে আবার কিছু জিনিস ঠিক আগের মতই আছে। পুরানো কমরেড হিসেবে আপনাকে এইসব ঘটনার সামান্য বর্ণনা পাঠাইলাম।
অবিশ্বাস্য হইলেও সত্য পাগল কবি আজকাল রাস্তায় কোডিং করে এবং খান সাহেবের সাথে দেখা হইলে বালিকা বাদ দিয়া কোডিং লইয়া আলোচনা করে। মহান স্যার স্যান্যাল সাইকেল চালানোই জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায় জাতীয় মহান তত্ত্ব দিয়ে আমাদের প্রতিদিন মুগ্দ্ধ করে রাখছেন আগের মতই। সুহান খেলা এবং বালিকা লইয়া আগের মতই কবি সাব ও স্যার স্যান্যালের সাথে সাতটা টু সাড়ে নয়টা আলোচনা করছে নিয়মিত। জনাব বরফ পানি অনিয়মিত আজকাল, ডাক্তার কৈরি আর বাংলার ডিকশনারীখ্যাত আদিল ভাই এসেছেন একবার করে। আশু ভাই আশরাফুলের ভাল ইনিংসের মত দেখাদেন হঠাত হঠাত। আর বাকি থাকল খান সাহেব। উনারে নিয়া অবশ্য বেশি কিছু বলার নাই, শুধু এইটুকুই জেনে রাখেন উনি প্রতিদিন আর হ্যান্ডসাম হয়ে যাচ্ছেন
আর আমাদের আদি আড্ডাস্থল কোনচিপার আজ ঘোর দূর্দিন। বুর্জোয়া সমাজের সমাজতান্ত্রীক প্রতিনিধি জনাব রাশেদ খান মেননের আদেশে চাচীর পাংখা মামার টি স্টলের উপর হামলা হয়েছে দুই দুইবার। আজকে সন্ধ্যায়ো একবার চাচীর দোকানের উপর ভাংচুর করা হয়েছে। তবে চাচী প্রলেতারিয়েত সমাজের চিরন্তন লাড়াকু মনোভাব নিয়ে টিকে আছেন এখনো, উনার ভাষায়- কোন হাওয়ার পোলা আমারে এখান থাইক্কা সরাইতে পারব না।
আজ আর না। বাকি খবর লইয়া হাজির হইব ডেইলি মেইল ০৩ এর সাথে।
ইতি
গুগলের একনিষ্ঠ এক ভক্ত
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
হা হা হা... তোমার কমেন্টটা দারুন হইছে নিবিড়। একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, তুমি চামে দিয়া সবার নামে বললা, কিন্তু নিজের কথা টথা তো কিছু লেখলা না? তোমার পাক্ষিক, সান্ধ্যকালীন প্রেমের কী অবস্থা, সেইটা অন্তত বলতা !
অলমিতি বিস্তারেণ
এই খান সাহেবটা কে? চাচীর দোকান ভাঙা পড়ায় আমি তো ভেবেছিলাম কোঞ্চিপা আর ভ্যাঞ্চিপা দুইটাই বিলুপ্ত হয়েছে। যাকগে, প্রতি সন্ধ্যায় তোমরা নিয়মিত আসো তো? নাকি আমলা হবার মহান পরিকল্পনায় কোঞ্চিপা-ভ্যাঞ্চিপাকে টা-টা বলে দিয়েছো?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
খান সাহেব= মেহদী ভাই
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ভ্যাঙ্কুভার চইলা আস বন্ধু। একলগে বইসা রোমান্টিসিজম করুমনে।
...........................
Every Picture Tells a Story
হে হে হে... মুস্তাফিজ ভাই দেখি আজকাল প্রায়ই মন্তব্যে ফাঁকিবাজি করতেছেন
দাঁড়ান, সত্যি সত্যি ভ্যাঙ্কুভার আসুম একবার। ওই শহরটায় যাওয়ার আমার বিশেষ ইচ্ছা আছে।
অলমিতি বিস্তারেণ
চইলা আসো, এই সুবাদে ঠাইসা গরুর মাংস খামু।
...........................
Every Picture Tells a Story
খুব আগ্রহ নিয়ে পড়লাম
বিদেশে যারাই নতুন আসে তাদের সবাইকে আমি খুব আগ্রহ নিয়ে দেখি
খুব আগ্রহ নিয়ে তাদের কথা শুনি
খুব আগ্রহ নিয়ে তাদের চোখের মাঝে, তাদের কথার ফাঁকে ছোট্ট করে চেপে যাওয়া দীর্ঘশ্বাসের মাঝে
তাদের বার বার করে বলা ব্যস্ততার মাঝে--আজ থেকে প্রায় এগারো বছর আগে হারিয়ে যাওয়া এক মানুষ খুঁজি
তোমার লেখাটার মাঝে সেই মানুষটাকে একবার টুক করে উঁকি মেরে যেতে দেখলাম---
ভাল থাকো!
হা হা হা... ফ্রীতে এগারো বছর আগের হারানো মানুষ দেইখা যাবেন তা তো হয় না... ! এই মানুষ দেখানোর পারিশ্রমিক বাবদ এগারশ ডলার আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠায় দেন। ডিটেইলস মেইল করে দিচ্ছি
অলমিতি বিস্তারেণ
দিন গোনা বাদ দাও। ওসবে শুধু মনোকষ্ট বাড়ে। যে মেল্টিং পটে পড়েছ সেখানে যত দ্রুত সম্ভব মূলধারায় মিশে যাও। তাহলে কিছুটা শান্তি পাবে।
এক কালে হিমু, কিংকু এরা চমৎকার সব দিনপঞ্জী লিখতো। তুমি যখন এটা শুরু করেছো তখন যতদিন সম্ভব হয় চালিয়ে যাও। এই একটা জায়গায় তুমি বিভূঁইয়ে আছো এমনটা কখনো মনে হবে না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মেল্টিং পট কথাটা আক্ষরিক অর্থেই সত্যি- এইখানে যে গরম, কোনদিন যে সত্যি সত্যি গইলা যাই
অলমিতি বিস্তারেণ
লাল লাল মেমগো লগে খাতির কর। ধুর ব্যাডা!
তুই দেশে নাই, কোঞ্চিপার আড্ডা ও নাই
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
মেমের কথা বলে মনে দুঃখ দিয়েন না আর ... যেদিকে তাকাই ইন্ডিয়ান আর চাইনিজ। মাঝে মধ্যেই ভাবি, ঠিক জায়গায় আসছি তো ?
অলমিতি বিস্তারেণ
নাম কিন্তু ডেইলি মেইল - অন্তত উইকলি আসুক
শুভকামনা ।
হা হা হা... বাংলাদেশের ডাকবিভাগের উপ্রে আপনার আস্থা দেখি সীমাহীন... দৈনিক মেইল আবার সাপ্তাহিক দাবি করতেছেন
অলমিতি বিস্তারেণ
মানুষের অভিযোজন ক্ষমতা অসামান্য - কিছুদিন দাঁতে দাঁত চেপে কাটিয়ে দিতে পারলে সব ঠিক হয়ে যাবে। যদিও আমার প্রবাসজীবনের অভিজ্ঞতা নেই, তবু কাছাকাছি আছে প্রথম যখন ঢাকায় আসি জীবিকার তাগিদে। আজীবন ছায়াঢাকা পাখিডাকা মফস্বলে বড় হওয়া ছেলের কাছে হঠাৎ ঢাকার দৌড়ানে জীবন এই রকমই মনে হয়েছিল।
আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইলো যেন দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন।
-অয়ন
পড়া এবং মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ
অলমিতি বিস্তারেণ
শুভেচ্ছা রইল।
ধন্যবাদ
অলমিতি বিস্তারেণ
আপনি আমার সাথে দেখা না করেই চলে গেছেন!!!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
বিশ্বাস করেন- আপনার খোমাখানা দেখার আশাতেই দেশে ছিলাম। শেষকালে আপনি ওই কক্সবাজারের ছবি যখন দিলেন, সেইখানেও দেখি আপনার খোমা দেখা যায় না। হতাশ হয়া অ্যাম্বেসিতে গেলাম গা
অলমিতি বিস্তারেণ
বৈদেশ গেলে নাকি মানুষ ক্যালকুলেটার হয়ে খালি হিসাব করে কত ডলারে কত টাকা
তোমার ক্যালকুলেটার দেখি পুরা এনালগ; রোজাদার মানুষদের মতো খালি আঙুলে দিন গোনে... কয়টা গেলো- কয়টা বাকি...
ডলার যেহেতু কামাইতে পারতেছি না, তাই আপাতত দিন গুইনাই গোনাগুনির প্র্যাকটিস বজায় রাখতেছি। টাকা আসলে যাতে গুনতে কোনো ভুল না হয়
অলমিতি বিস্তারেণ
আদর্শ দিনলিপি। পড়তে ভালো লাগল খুব। চলুক।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অলমিতি বিস্তারেণ
আপনি বিদেশ চলে গেছেন... আমার পিসিঘটিত কোনো সমস্যা হইলে কার কাছে গিয়া জিগামু সে দুঃখ দেয় কেন?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপনার 'পিসি' কি শুধু দুঃখই দেয়,নাকি তপ্ত কথাও কয় ?
অলমিতি বিস্তারেণ
কেটে যাবে কিছুদিন পরেই
বিভূঁইয়ে বিষন্নতা কেটে যাবে কিছুদিন পর।
ভাল লাগল লেখা।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
নতুন মন্তব্য করুন