০১
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে অলসভাবে স্ক্রল করে যাচ্ছি বাংলা অনলাইন পত্রিকাগুলি। আজ পাঁচই জানুয়ারি, কোথাও কি কিছু হচ্ছে? দেশ কিংবা জাতি নিয়ে চিন্তার চেয়েও বড় চিন্তা, বাবা-মা এবং স্বজনদের যারা দেশে আছেন, তাদের নিয়ে। চোখে দেখে বিচার করার ক্ষমতা যেহেতু নেই, পত্রিকা দেখেই পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। পত্রিকার আর ফেসবুকের হোমফীডে চোখ বুলাতে বুলাতে মনে হলো, আজ ঢাকার পরিস্থিতি বেশ ভালোই গুরুতর। বাসায় ফোন করে বার বার করে বাবা'কে বললাম, কিছুতেই যেন আজ বের না হয়। কথা শেষ করে বেশ নিশ্চিন্ত বোধ করলাম। দেশের বাইরে আমি নিরাপদ আছি- যদি আমার কথামতো বাবা-মা কেউ বাসা থেকে বের না হয়, হয়তো তারাও নিরাপদ থাকবে। বাকিদের কী হবে, তা অবশ্য জানি না।
০২
গত কিছুদিনের মধ্যে সামাজিক এবং অসামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত দু'টি লাইন আমার চোখে পড়েছে। এর একটি অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের। তার একটি বক্তব্যের সারমর্ম এই যে, তিনি নিজে প্রবাসী অবস্থায় দেশের কোনোকিছুর সমালোচনা করেননি, এবং তিনি বোধ করেন যে, প্রবাসের নিশ্চিন্ত, নিরাপদ জীবনের ছায়াতলে থেকে দেশের সমালোচনা করাটা অনুচিত। অপর বক্তব্যটি, গায়ক/সংগীত পরিচালক ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের ফেসবুক স্ট্যাটাস। গতকাল তার গাড়িতে আক্রমণ হয়েছে, কাঁচ ভেঙ্গে গেছে, তারা সামান্য আহত, আতংকিত। দেশকে গালিগালাজ করে তিনি নিজের রাগ ঝেড়েছেন। দু'টি বক্তব্য নিয়েই কম-বেশি সমালোচনা দেখতে পেয়েছি।
মুহাম্মদ জাফর ইকবালের কথাটা প্রবাসীদের আঘাত করেছে। তারা দেশের বাইরে থাকেন, শুধুমাত্র এই জন্যেই দেশের ব্যাপারে তাদের দেশ নিয়ে কোনো চিন্তা থাকতে পারবে না, কথাটা আসলেই যৌক্তিক না। বাংলাদেশের মতো অতি ঘনবসতির দেশে কিছু মানুষের প্রবাসী হওয়াটা শুধু স্বাভাবিক নয়, জরুরীও বটে। প্রবাসীদের এক অংশ রেমিট্যান্সের মাধ্যমে অবদানও রাখছেন নিয়মিত। তাই দেশ নিয়ে তাদের বলবার অধিকার নেই, এটা অতি আবেগী বক্তব্য বলেই মনে করি। সামান্য প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, কিছু মানুষ তাচ্ছিল্যের সাথে দেশের সমালোচনা করেন। তাতে উদ্বেগের চেয়ে বেশি থাকে বিরক্তি। মুহাম্মদ জাফর ইকবালের বক্তব্য হয়তো এই অংশটিকে উদ্দেশ্য করেই, কিন্তু তাতে বাকিদের প্রতি অবিচার করা হয়।
ফুয়াদ আল মুক্তাদিরকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না, ফেসবুক/টুইটারেও ফলো করিনা। তাই, তার চিন্তার ঘরানা কিংবা রাজনৈতিক সচেতনতা বিষয়ে তেমন কিছু জানি না। যতটুকু বুঝতে পেরেছি, ব্যক্তিগতভাবে আক্রান্ত হওয়াতে সে বিরক্ত। বিরক্তির চূড়ান্ত প্রকাশ হিসেবে দেশকে কুৎসিতভাবে অপমান করে, বলেছেন ব্লাডি হেল হোল। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনার শিকার হয়ে, দায়ী রাজনৈতিক দলের বদলে দেশকে গালি দিয়ে ফুয়াদ আল মুক্তাদির কী অর্জন করলেন জানি না। হয়তো দেশ নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ এই পর্যায়েরই, হয়তো তীব্র ক্ষোভে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে তিনি যা মনে আসে, তাই লিখে ফেলেছেন। কিন্তু নিজের দেশকে নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য বেদনাদায়ক, অপমানজনক। সেই স্ট্যাটাসের নিচে বেশ কিছু মন্তব্য পড়ার দুর্ভাগ্য আমার হয়েছিলো- কেউ কেউ বিরক্তির সাথে বলেছেন যে, এই কারণেই তারা দেশ ছেড়ে এসেছেন, এবং আর ফিরেও যেতে চান না। ফুয়াদেরও উচিত যত দ্রুত সম্ভব দেশ ছেড়ে চলে আসা। পড়ে কেন জানি না, রাগের চেয়েও বেশি হলো মন খারাপ।
০৩
দু'টি বক্তব্য নিয়ে আমার সাধারণ পর্যবেক্ষণ উপরেই বললাম। কিন্তু সেটা এরকম একতরফা সাদা বা কালো নয়। অতিসরলীকরণের ঝুঁকি নিয়ে আরো কিছু কথা বলি।
আমি দেশের মানুষের হতাশাটা তাদের মতো করেই বোঝার চেষ্টা করি। আমি দেশ ছেড়ে এসেছি মাত্র কয়েক বছর। এখনো ভুলে যাইনি, প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় একটা সিএনজি যোগাড় করার সে প্রাণান্তকর যুদ্ধ, কিংবা ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে বসে ঘেমে স্নান করার অসহায় দিনগুলি। ভুলে যাইনি দেশ ছেড়ে আসার আগের কয়েকমাস জুড়ে গুলশান বনানী এলাকাতে ল্যাপটপ ছিনতাই, কিংবা রিকশার পিছনে দাঁড়িয়ে ব্যাগ খুলে ল্যাপটপ নিয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলি। প্রতিদিন এই যুদ্ধ করে চলতে হয় তাদের, যারা দেশে আছেন, আমাকে কিংবা আমার মতো বহু প্রবাসীকেই না। প্রবাসীদের জীবনে ভিন্ন রকমের সংগ্রাম রয়েছে, যার তীব্রতা সম্ভবত দেশের অনেকেরই চিন্তার বাইরে- কিন্তু সেগুলি অন্তত প্রতিকারহীন কোনো অন্যায় বা অরাজকতা নয়। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল কিংবা ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের বক্তব্যে আমি তাই অযৌক্তিকতা কিংবা ঔদ্ধত্যের পাশাপাশি দেখতে পাই অসহায়ত্ব। স্বদেশের মঙ্গলচিন্তা আমি যতোই করি, একজন প্রবাসী হিসেবে বহু সামাজিক এবং নাগরিক সুবিধার 'উন্নত বিশ্বে' থেকে, দেশের মানুষের অসহায়ত্ব আমি অনুভব করতে পারি না। আজ আমি যদি বলি, ক্যান্সার আক্রান্ত একজন ব্যক্তির কষ্ট আমি পুরোপুরি অনুভব করতে পারি, তবে যেমন মিথ্যা বলা হবে, তেমনি দেশের সমস্যা আমি দেশের মানুষের মতোই উপলব্ধি করতে পারি, সেটাও তেমনি সত্য বলা হবে না। খুব সামান্য কিছু মানুষ বাদ দিলে, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, যারাই দেশে আছেন, তারা এক প্রকারের যুদ্ধ করেই টিকে আছেন। প্রতিবার রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনার কারণে কিংবা কারো গাফিলতিতে একজন মানুষের মৃত্যু হয়, আমি একধরনের অপরাধবোধে ভুগি। দেশের থেকে সমস্ত সুবিধা নিয়ে, বাইরে এসে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে, আমি যতোই দেশকে কিছুটা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি- তবুও, আমি মূলত পলাতক একজন ব্যক্তি। আজ যে লোক বিএনপি-জামাতের দেওয়া আগুনে পুড়ে ঝলসে গেলো, আমি কখনো তার জায়গায় থাকবো না। আমি নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে স্বার্থপরের মতো নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। যখনই এই অপরাধবোধের কথা কোনো প্রবাসী বাংলাদেশীর সঙ্গে আলাপ করেছি, অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদে, তারা ব্যাখ্যা করেছেন, কীভাবে আমাদের দেশ ছেড়ে চলে আসা ভুল কিছু না, কিংবা কীভাবে দেশের বাইরে থেকেও দেশের জন্য কাজ করা যায়। আমি তাদের সঙ্গে একমত। আমার ব্যর্থতা এখানেই যে, আমি এখনো অহেতুক, এবং অযৌক্তিক ভাবালুতা ত্যাগ করতে পারিনি। আজও যখন হরতালে একজন নিরীহ কিশোর পুড়ে মারা যায় কিংবা আমার কোনো বন্ধু ফেসবুকে জানায়, জীবন হাতে নিয়ে বাসায় ফেরার কথা- নিজেকে মারাত্মক অপরাধী মনে হয়। আমি খুব সামান্য, সাধারণ একজন মানুষ, যে সুযোগ পাওয়া মাত্র নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে- এই অপরাধবোধ থেকে মুক্তির কোনো পথ আজ অবধি খুঁজে পাইনি।
প্রতিটা মুহূর্ত যায়- অনুভব করি, ফিরে যাওয়ার পথটা আস্তে আস্তে কতোটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বাস্তবতা, আর নিজের স্বার্থবোধকে একেবারে দূরে ঠেলে না দিলে, এ পথ আরো কঠিন হতে থাকবে। অথচ, এখন যেখান আছি, সেটাও তো আমার দেশ না। কাগজে কলমে কোনোদিন হয়ে উঠলেও, সে কি কোনদিন আসলেই আমার দেশ হয়ে উঠবে? এর উত্তর অনাগত কাল ছাড়া কেউ দিতে পারে না। মাঝে মাঝে কিছুদিন আসে, মনে হয় সবকিছু ছুড়ে ফেলে ফিরে যাই। একটা দামী ডিগ্রী, মোটামুটি বেতনের চাকরি, ভবিষ্যত প্রজন্মের নিরাপত্তাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে ইচ্ছা হয় কোনো এক বিকালে শাহবাগে বসে আড্ডা দিতে, মা'র হাতের রান্না খেতে, কিংবা হঠাৎ ঝড় নেমে আসা অন্ধকার ঢাকা শহরের দিকে তাকিয়ে থাকতে। ছিন্নমূল এই জীবনের চেয়ে বড় অভিশাপ আর কিছু নেই। বাকি জীবনের সারাংশ শুধু এই অভিশাপকেই টেনে নিয়ে যাওয়া।
মন্তব্য
সবজান্তা'দা
জাফর স্যারের ঐ লেখার অনেক দূর্বলতা থাকতে পারে, কিন্তু উদ্ধৃত প্রসঙ্গে সমস্যা নেই বলেই মনে হয়েছে। (বিভ্রান্তি নিরসনে লিঙ্ক দিয়ে দিলাম।) জাফর ইকবাল একবারও সেখানে সকল প্রবাসীকে টেনে আনেননি। নিজের অবস্থান প্রকাশ করেছেন। ঐ প্যারাটি ছিলঃ
দুঃখের বিষয়, এই অংশকে টুইস্ট করে ফেসবুকে কাটপিস বেড়িয়েছে (বরাবরের মতই), আবাল-বৃদ্ধবনিতা সোনামুখ করে সেটুকু শেয়ার করেছে। প্রফেসর কামরুল হাসানের মত প্রথমালো-স্ট্যান্ডার্ড নিরপেক্ষ বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা সেটি আড়াল করে হা-রে-রে-রে করে উঠেছেন। জাফর স্যারের ঐ লেখাটির শেষাংশ ছিলঃ
জানিনা, এইটুকু আড়াল করাই, অনেকের হা-রে-রে-রে করে ওঠার মূল কারন কিনা।
পুনশ্চঃ মন খারাপ করা একটা পোস্ট, শেষাংশটুকু ধাক্কা দেয়।
পুনঃ পুনশ্চঃ ফুয়াদ সম্পর্কে মন্তব্য করতে আগ্রহী নই।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ সাক্ষী সত্যানন্দ।
আমি দুঃখিত, কারণ মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখার অংশটুকু আসলে স্মৃতি থেকে লিখা। লিখবার আগে তার কলামটা আরেকবার পড়ে নিলে সম্ভবত নিজের বক্তব্যটা আরো সহজ এবং সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারতাম। প্রবাসে থেকে দেশের সমালোচনা করাটা অনুচিত, সেটা সরাসরি মুহাম্মদ জাফর ইকবাল কোথাও বলেননি। সেই অর্থে, আমি তার মুখে একটা বক্তব্য গুঁজে দিয়েছি। কিন্তু আপনি যদি তার নিজের বক্তব্যটাই আবার পড়েন, সেখানে টোন সেটিং-এর একটা রেশ আছে। তিনি নিজে কখনো সমালোচনা করেননি, এই লাইনটির মাধ্যমে তিনি উচিত এবং অনুচিতের একটা পরোক্ষ লাইন টেনে দিতে চেয়েছেন। অন্তত আমি সেরকমটাই অনুভব করেছি। ব্যাপারটা সাবজেকটিভ, সবাই একরকম অনুভব নাও করতে পারেন। সবচে ভালো হতো, যদি আমি ব্যাপারটা একটু অন্যভাবে লিখতাম। যেহেতু আপনি একটা মন্তব্য করে ফেলেছেন, তাই লেখাতে আর কোনো পরিবর্তন আনছি না।
অলমিতি বিস্তারেণ
সবজান্তা'দা,
আপনার দুঃখ পাবার কিংবা লেখাটা অন্যভাবে লেখবার কারন দেখছি না। আদতে, আপনি যথেষ্ট পরিষ্কার করেই বলেছেনঃ
ফেসবুক সেলিবৃটিদের একটা বিশাল (অপ)কৃতিত্ব আছে এই বক্তব্য কাটপিস করে
এই পারসেপশন তৈরি করায়, এটি দেখতে দেখতে হয়রান হয়ে গেছি। সেই সূত্রেই কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়া, অন্য কিছু নয়।
এবং,
এবং,
এই কথাগুলোর সাথে দ্বিমত নেই বিন্দুমাত্র।
ভাল থাকুন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
লেখা ভাল লাগলো। বাংলাদেশ’কে ভিনদেশের সাথে যখন-তখন তুলনা করা, যেমন-তেমন গালি দেয়া একটা উচ্চিংড়ে ফ্যাশন।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমাকে একবার প্রবাসী সমবয়েসী এক ছেলে বিরক্ত হয়ে বলেছিলো, বাংলাদেশের যা অবস্থা, এরচে আমেরিকা যদি বাংলাদেশ দখল করে নিতো, তবু ভালো ছিলো। দেশের কিছু উন্নতি হতো। অনেক কিছু বলতে পারতাম, কিন্তু অধিক বিস্ময়ে পাথর হয়ে কী বলা যায়, সেটা বুঝে উঠতে পারিনি।
অলমিতি বিস্তারেণ
এই রকম একটা কিছু আমি একবার লিখতে চেয়েছিলাম। এই দেশটা আমার হয়নি, সেই সাথে নিজের দেশটাও কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। এতোগুলো বছর পর নিজেকে সত্যি সত্যি গৃহহীন মনে হয়। দেশের খারাপ জিনিসগুলো যেমন আমাকে বিচলিত করে - ঠিক তেমনি নিজের ফেলে আসা দেশকে নিয়ে গর্ব করার মতো অনেক কিছুই খুঁজে পাই।
পৃথিবীর সব মানুষকে যদি আমেরিকাতে নিয়ে আসা হয় তাহলে আমেরিকার জনসংখ্যার ঘনত্ব যা হবে বাংলাদেশের বর্তমান ঘনত্ব তার চেয়ে বেশি। এই প্রবল ঘনবসতিপূর্ণ দেশটিতে মানুষ খেয়ে পরে বেঁচে আছে, এবং সত্যি কথা বলতে ক্রমান্বয়ে ভালোর দিকে যাচ্ছে, এই ব্যাপার তুচ্ছ করার মতো অর্জন নয়। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের যুদ্ধকে সম্মান জানাই।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আমার পর্যবেক্ষণ হলো- জনসংখ্যা একটা বিশাল ফ্যাক্টর। আমি যে এলাকাতে থাকি, সেটা মূলত গরিব লোকজনের এলাকা। রাস্তার পাশে সাইড ওয়াক কিংবা মাঠের কোনায় অনেকেই অনেক কিছু ফেলে যায়। তফাৎ হচ্ছে, প্রতিদিন সকালে সেটা এসে পরিষ্কার করে ফেলে। কিন্তু একই কাজ যখন এরচে কয়েকশ বা কয়েক হাজার গুন বেশি লোক করবে, তখন সেটা আর পরিষ্কার করা যাবে না।
অলমিতি বিস্তারেণ
হ। আমার প্রায়ই মনেহয়, একটাই তো জীবন। চলে যাই সব ফেলে দেশ গ্রামে। হয়না। জীবন মাঝে মধ্যে একটা কুৎসিত রসিকতা।
প্রসঙ্গত, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে কী জানি বলতেছিলি, পরিষ্কার করে বল দেখি আরেকবার!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
এই বয়সে ভবিষ্যত প্রজন্ম নিয়ে বলার কী আছে? এখন বয়স করে দেখানোর
অলমিতি বিস্তারেণ
লেখাটা ভাল্লাগলো খুব।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ধন্যবাদ!
অলমিতি বিস্তারেণ
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
ধন্যবাদ!
অলমিতি বিস্তারেণ
শেষের অংশ বড় বেশি বিষন্নতার চাদরে মোড়ানো
আমাদের দেশের অনেক মানুষ আছে যারা ভাবে, বাসে আগুন দিয়ে মানুষ মারলে আমার কি? রেললাইন উপড়ে দিয়ে মানুষ মরলে আমার কি? পিকেটারদের ছুঁড়ে দেওয়া পাথরে শিশু কিংবা স্কুল শিক্ষিকা মরলে তাতে আমার কি ক্ষতি? এগুলো সব রাজনীতি, আর আই হেট পলিটিক্স। কিন্তু সেই ঘটনাটি যখন নিজের সাথে কিংবা নিজের পরিবার/পরিচিত জনের সাথ ঘটে তখন দেশের গোষ্ঠি উদ্ধার করে! এর চেয়ে নরক ভালো বলে ক্ষোভ ঝাড়ে! এভাবে আত্নকেন্দ্রিকতায় ডুবে থাকার জন্যেই, অন্যায়ের প্রতিবাদ না করায় সেই অন্যায় একদিন নিজের সাথেই ঘটে যায়। এটাই নিয়তি নয় এটা অবধারিত। তেমন একটা বিষয়ে অনেক দিন আগে একখান গপ্পো লিখেছিলাম।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। বিষণ্ণ কোনো লেখার পরিকল্পনা ছিলো না। তবে একধরনের অস্থিরতা ছিলো। সেই থেকেই লেখাটা এমন হয়ে গেলো!
অলমিতি বিস্তারেণ
এমন অকপট কথা শুনলে মন খারাপ করে না, বরং মনটা সহমর্মী পাওয়ার আনন্দ পায় খানিক।
এখানে উদ্বাস্তু জীবনেই আছি। তবে শেষ ঘুমটা দেশের মাটিতে ঘুমানোর ইচ্ছা আমি রাখি!
একটা খুব খুব প্রিয় কবিতা দিলাম শুনতে ইচ্ছে হলে শুনবেন
দারুণ সংযোজনগো আয়নামতি! দারুণ একটা আবৃত্তি শোনা হলো আপনার সুবাদে। আর সাথে কৃতজ্ঞতা জানাই সবজান্তাকেও, এমন লেখা না লিখলে এমন একটা আবৃত্তি এ জীবনে শোনা হতোনা!
দেশের মাটিতে শেষ ঘুম ঘুমানোর মধ্যে একটা রোমান্টিসিজম আছে, স্বীকার করি। কিন্তু আমি অবিশ্বাসী- মৃত্যু আমার কাছে জাস্ট শাট ডাউন, ইন্দ্রিয়ের অতীত অবস্থান। তাই মৃত্যুর পর কই থাকলাম, কীভাবে থাকলাম আমার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না। মৃত্যুর আগে কিছু করা যায় নাকি ভাবছি।
আমি এমনিতে আবৃত্তির তেমন শ্রোতা নই, কিন্তু মন্তব্য পড়ে মনে হচ্ছে বেশ ভালো। বুকমার্ক করে রাখছি- শুনে জানাবো। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকবেন।
অলমিতি বিস্তারেণ
"খ্যাতিই বল, কীর্তি বল, মৃত্যু-পরে কিছু নেই,
যদিই আমি না থাকি তো মাজার তোলার অর্থ কি?
আলোর দেখা ততক্ষণই, লন্ঠনে তেল যতক্ষণ
নিভবে বাতি, রইবে আলো - এই প্রলাপের অর্থ কি?"
লেখা আর আয়নামতির মন্তব্য পড়ে মনটা কেমন করছে।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
পড়ার জন্য ধন্যবাদ!
অলমিতি বিস্তারেণ
কবিতাটা শুনে এলাম। অশেষ ধন্যবাদ আয়নামতি।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
আমার দাদার পূর্বপুরুষেরা এসেছিলেন বাংলার বাইরে থেকে। আমার নানা-দাদারা থাকতেন গ্রামে। মাঝেমধ্যে তাঁরা শহরেও থাকতেন বটে। আমার বাবা উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে শিক্ষাজীবনের বেশ কিছুকাল কাটিয়েছেন বৃটিশ ভারতের বড় দু-একটি শহরে। বাকি জীবনটা চাকুরীসূত্রে কখনও মহকুমা শহরে কখনওবা জেলা শহরে। আমার জীবনের শুরুটা দু-একটা মহকুমা শহরে পরে জেলা শহরে এবং জীবনের অধিকংশ সময়টাই ঢাকা শহরে। গ্রামে এককালে ঘনঘন যাওয়া হতো এখন কালেভদ্রে। আমার সন্তান, জীবনের ১৯টা বছর ঢাকায় কাটিয়ে এখন আমেরিকায়। ধারনা করছি, বাকি জীবনটা তার বাংলাদেশের বাইরেই কাটবে। যাহোক, যা বলতে চাইছি, আমার দাদা,আমার বাবা, আমি এবং আমার সন্তান, আমরা সবাইকি বাস্তুহারা নই! হ্যাঁ, সেই যুবক বয়স থেকেই আমার আমেরিকা, কানাডা বা অস্ট্রলিয়ায় অভিবাসী হওয়ার সুযোগ ছিল তবে আমি বড্ড অলস ও আড্ডাবাজ বলে যাওয়া হয়নি। দেশপ্রেম? জানিনা।
আপনার মর্মপীড়াটা আমায় ছুঁয়ে গিয়েছে।
মানুষের ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় যে, মানুষ কখনোই এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকেনি। কম আর বেশি, মানুষ নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। দেশ ত্যাগ নিয়ে তাই আমার একান্ত ব্যক্তিগত কিছু বেদনা আছে, কিন্তু অপরাধবোধে ভুগি যখন দেখি নির্বিচারে মানুষ পুড়ে যাচ্ছে। দেশপ্রেম বোধহয় এটা না, নিতান্তই অপরাধবোধ।
অলমিতি বিস্তারেণ
ব্যক্তিগতভাবে "ব্যক্তি" ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের বিশেষ ভক্ত নই। কিন্তু আজকে ফেসবুকে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তার দেয়া স্ট্যাটাস দেখে লোকটার জন্য মায়াই লাগলো। প্রাসঙ্গিক মনে করে স্ট্যাটাসখানা তুলে দিলাম।
আমার বন্ধু রাশেদ
লেখাটা পড়েছি দুইদিন আগেই। খুবই ভালো লেগেছে। এতটাই ভালো যে লগইন করলাম এটা জানাতে।
প্রায় কোটিখানেক মানুষ দেশের বাইরে থাকায়, এবং বাইরে পড়তে/কাজ করতে যেতে বা চলে যেতে আগ্রহী লোকের সংখ্যা আরো কয়েক কোটি হওয়ায় খালের এইপাড় আর ঐপাড় সংক্রান্ত কিছু দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠছে। খাল পাড়ি দেয়াটা বাস্তবতা। খালের ঐপাড়ের লোকের দেশ নিয়ে হতাশা, নিজেকে নিয়ে হতাশা, আত্মপরিচয় সংকট, ভবিষ্যত প্রজন্ম নিয়ে সংশয় সবই বাস্তবতা। যেমন খালের এই পাড়ের লোকের দেশ নিয়ে হতাশা, নিজেকে নিয়ে হতাশা, আগামী দিন নিয়ে ভীতি, ভবিষ্যত প্রজন্ম নিয়ে সংশয় সবই বাস্তবতা। বুঝতে হবে, খালের এইপাড় আর ঐপাড়ের মানুষের বাইরে বা ভেতরে আসলে কোন পার্থক্য নেই।
লম্বা মন্তব্য করার ইচ্ছে ছিল। পরে ভাবলাম, লম্বা মন্তব্য না করে সম্ভব হলে পর কখনো নিজের ভাবনাটা পোস্ট আকারেই লিখে ফেলবোখন। আপাতত পুরনো একটা লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে যাইঃ
"যে রেণু ফুল থেকে মৌমাছির ডানায় লেগে দূরে চলে গেছে; সে এই ফুল নয়, অন্য কোথাও অন্য কোন ফুলকে নিষিক্ত করে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্ম দেবে। হারানো রেণুর জন্য ফুলের যেমন কোন সন্তাপ থাকে না, হারিয়ে যাওয়া রেণুও তেমন মাতৃফুলের জন্য আফসোস করে না। সৃষ্টির নিয়মই এই, সৃষ্ট প্রাণের নির্বন্ধ এই। মানুষকে ক্রমাগত হাঁটতে হবে। কখনো চড়াই বেয়ে ওঠা, কখনো উতরাই বেয়ে নামা। এই হাঁটাপথে কোনভাবে খোদাই শিরনীর ডেগচিতে পড়ে গেলে, ফিরে যাবার কোন উপায় যদি আর অবশিষ্ট না থাকে, তাহলে খোদাই শিরনী হয়ে যাওয়াটাই ঠিক। সেক্ষেত্রে ফেলে আসা হালখাতা-নওরোজ-চিঙ মিঙ জায়ে’র জন্য দীর্ঘশ্বাস না ফেলে থ্যাঙ্কস গিভিং ডে’র টার্কি রোস্ট, ইস্টারের ডিম, হ্যালোইনের কুমড়া আর বক্সিং ডে’র মূল্যহ্রাসকে উপভোগ করতে শেখাটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা যারা মেনে নিতে পারেন তাদের কষ্টটা অন্যদের চেয়ে কিছুটা কম। তবু কখনো কখনো তাদের আচার-আচরণ-আশা-স্বপ্নে হারিয়ে যাওয়া জল-মাটি-হাওয়া-উৎসবের সুবাস যে ফিরে আসে না তা নয়। ঐটুকু ‘ন হন্যতে’।"
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
অনেক ঝামেলা দেশে। ব্লগে কোঞ্চিপায় রাজা উজির মারছি, আবার অবরোধের জন্যে বাড়ি যাবার বাস না পেয়ে একা একা মন খারাপ করছি।
তবু তো বেঁচে আছি। ভালোই তো আছি। উই আর আওয়ার চয়েসেস
লেখা ভালো লাগছে বস্।
মন ছোঁয়া লেখা।
বাবা-মা উৎখাত হয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের জন্মভূমি থেকে। সে দেশকে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন আমার মাথার ভিতরে। নিজের জন্মভূমিতে থেকেও আমি ছিলাম জন্ম-উদ্বাস্তু। বাবা-র ক্রমাগত বদলীর চাকরী আমাদের ছুটিয়ে নিয়েছে আমার শৈশব আর কৈশোর এখান থেকে ওখানে। কোথাও কোন শিকড় নেই। বড় হয়ে দেখলাম ফুটো পকেট সেলাই করে আর চালাতে পারা যাচ্ছে না। তারপর থেকে অর্ধেকের বেশী জীবন কেটে গেছে নিজে থেকে বেছে নেওয়া দেশে। নিজের জন্মভূমিতেও আমি কেউ ছিলাম না, এখানেও কেউ না। তাই হয়ত আপনার মত করে দেশছাড়ার বেদনাটা আমার নেই। অধিক শোকে পাথরের দশা আর কি।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
"প্রতিটা মুহূর্ত যায়- অনুভব করি, ফিরে যাওয়ার পথটা আস্তে আস্তে কতোটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বাস্তবতা, আর নিজের স্বার্থবোধকে একেবারে দূরে ঠেলে না দিলে, এ পথ আরো কঠিন হতে থাকবে। অথচ, এখন যেখান আছি, সেটাও তো আমার দেশ না। কাগজে কলমে কোনোদিন হয়ে উঠলেও, সে কি কোনদিন আসলেই আমার দেশ হয়ে উঠবে? এর উত্তর অনাগত কাল ছাড়া কেউ দিতে পারে না। মাঝে মাঝে কিছুদিন আসে, মনে হয় সবকিছু ছুড়ে ফেলে ফিরে যাই। একটা দামী ডিগ্রী, মোটামুটি বেতনের চাকরি, ভবিষ্যত প্রজন্মের নিরাপত্তাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে ইচ্ছা হয় কোনো এক বিকালে শাহবাগে বসে আড্ডা দিতে, মা'র হাতের রান্না খেতে, কিংবা হঠাৎ ঝড় নেমে আসা অন্ধকার ঢাকা শহরের দিকে তাকিয়ে থাকতে। ছিন্নমূল এই জীবনের চেয়ে বড় অভিশাপ আর কিছু নেই। বাকি জীবনের সারাংশ শুধু এই অভিশাপকেই টেনে নিয়ে যাওয়া।"
সদ্য প্রবাসী তো, অন্তরের একেবারে মর্মমূলে গিয়ে বিঁধলো লাইনক'টা। মন্তব্য লম্বা হয়ে যাচ্ছে বলে মুছে দিলাম বাকীটা - যে কথাগুলো লেখার ছিল, তার বেশীরভাগটাই আপনি লিখে দিয়েছেন। বাকিগুলো নিয়ে পোস্ট দেয়ার ইচ্ছে রইলো - অবশ্য যদি সময় পাই লেখার।
____________________________
মাত্র দেশ থেকে ফিরলাম। এইবার দেশে গিয়ে মনে হয়েছে, সব গেঞ্জামের মাঝেও দেশে অপার সম্ভাবনা। পাততাড়ি গুটিয়ে দেশে চলে যাবার পরিকল্পনা আরও চাগিয়ে উঠলো। বিদেশের আরাম আয়েস পুরা দমে উপভোগ করছি, কিন্তু সেটার লোভ কাটাতে পারব বলে মনে হচ্ছে। এখন খালি অর্ধাঙ্গীকে কনভিন্স করতে পারলেই হয়।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
নতুন মন্তব্য করুন