“...which does not kill us makes us stronger.”
দার্শনিক ফ্রেডরিক নীৎশের এই বিখ্যাত উদ্ধৃতিটি আমি মাঝে মাঝেই নানা জায়গায় পড়ি আর ভাবি, কথাটা কি আসলেই সত্যি? সত্যিই কি আঘাত আমাদের এতোটা শক্ত করে তোলে? অনেক ভেবে উত্তর পেয়েছি- হয়তো তোলে। তবে কিছু আঘাত আছে, যা আমাদের শক্ত করে তোলে না- বরং এতোটাই বিধ্বস্ত করে দেয় যে, মরে যাওয়াটাকে অনেক কাঙ্ক্ষিত মনে হয়। ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা এমনই এক আঘাত।
আশ্চর্যজনকভাবে ইংরেজি এবং বাংলা দুই ভাষাতেই ডিপ্রেশন কিংবা বিষণ্ণতা শব্দটি প্রায়ই তার প্রকৃত অর্থ বোঝাতে পারে না। পরীক্ষায় খারাপ করলে, বাবা-মা’র মৃত্যুতে কিংবা অন্য কোনো কষ্টে তীব্র আঘাত পেয়ে আমরা বলি যে, আমরা বিষণ্ণ, ডিপ্রেসড। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের শুধুই মন খারাপ। এই তীব্র মন খারাপ কিংবা ইংরেজিতে যাকে বলা যায়, Sadness , আর বিষণ্ণতা কোনোভাবেই এক না। মন খারাপ আমাদের জীবনের অংশ- স্বাভাবিকভাবেই সময়ের সাথে তা দূর হয়ে যায়। কিন্তু ডিপ্রেশন যায় না। আমি অনেকদিন আগে টেড ডট কমে ডিপ্রেসড এক কিশোরের বক্তৃতা শুনেছিলাম- যেখানে সে বলেছিলো, “ডিপ্রেশন এমন এক রুমমেট, যাকে আপনি লাথি দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিতে পারবেন না”। ডিপ্রেশন আর ব্যক্তিত্ব (personality) এতো গভীরভাবে জড়িয়ে থাকে যে, দুটোকে আলাদা করাটা প্রায় অসম্ভব এক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। বিষণ্ণতা শব্দটার মাধ্যমে কোনোভাবেই আমি এই মানসিক অবস্থাটাকে অনুভব করতে পারি না। তাই পুরো লেখাজুড়েই আমি বিষণ্নতার বদলে তার ইংরেজি প্রতিশব্দ ডিপ্রেশন ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা আসলে কী?
এই প্রশ্নের কোনো ছোটো কিংবা এক কথার উত্তর নেই। বিশদ আলোচনা এই লেখাতে করা সম্ভব না। তবে ইন্টারনেটে অসংখ্য তথ্য ছড়িয়ে আছে- আগ্রহী পাঠক সেগুলি পড়ে দেখতে পারেন। আমি চেষ্টা করবো, মানুষের কিছু ভুল ধারণার ব্যাপারে- যেগুলি ভাঙতে পারলে আপনি হয়তো ডিপ্রেশনের স্বরূপ কিছুটা ধরতে পারবেন।
ডিপ্রেশনের স্বরূপ সম্পর্কে চমৎকার একটি বক্তব্য আছে- , “The opposite of depression is not happiness, it’s vitality” অর্থাৎ, ডিপ্রেশন কিংবা বিষণ্ণতার বিপরীত কখনোই আনন্দ নয়, বরং সক্ষমতা। কথাটা বাংলায় হয়তো একটু জটিল শোনাচ্ছে, আরেকটু ভেঙে বলি- আপনি ডিপ্রেসড নন, তার মানে এই না যে, আপনি সারাদিনই খুব ফূর্তিতে আছে, আনন্দে আছেন। বরং আপনি ডিপ্রেসড নন, তার মানে হচ্ছে আপনি স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠছেন, প্রাত্যহিক কাজ শেষে বাসা থেকে বের হয়ে অফিসে যাচ্ছেন। সেখানে সহকর্মীদের সাথে কথা বলছেন, বসের সাথে মিটিং করছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। দিনশেষে বাসায় এসে আপনার স্বামী কিংবা স্ত্রীর সাথে কথা বলছেন, বাচ্চাদের সাথে খেলছেন। ডিপ্রেশন আপনার এই দৈনন্দিন সক্ষমতাকে শেষ করে দেয়। অধিকাংশ ডিপ্রেসড মানুষই তাদের বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। তাদের শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলেও, তাদের পক্ষে রোজ বিছানা থেকে উঠতে পারাটাই প্রায় অসম্ভব একটা কাজ। খুব তীব্র ডিপ্রেশন না হলে তারা উঠেন। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তারা শরীরটাকে নিয়ে অফিসে যান, মিটিং করেন। বাসায় এসে তার দায়িত্ব পালন করেন। তারপর একদিন আর সম্ভব হয় না। আমরা জানতে পারি যে অমুক ভদ্রলোক বা ভদ্রমহিলা অত্যন্ত অসামাজিক কিংবা তার মাথায় ‘সমস্যা’ দেখা দিচ্ছে।
ডিপ্রেশনের একটা কী-ফিচার (key feature) হচ্ছে, শূন্যতা। ডিপ্রেশনে ভুগছেন এমন অনেকেই জানিয়েছেন যে, তারা বুকের মধ্যে এক ধরনের শূন্যতা অনুভব করেন। নিরন্তর শূন্যতা। এই শূন্যতার অনুভূতিই সবচে ভয়ংকর। এই শূন্যতাই মানুষকে প্ররোচিত করে আত্মহত্যা করতে। দীর্ঘসময় ধরে এই শূন্যতাকে বুকের মাঝে আটকে রাখার পর, একজন ডিপ্রেসড মানুষ একদিন কনভিন্সড হন যে, তার এই জীবন সম্পূর্ণ অর্থহীন, এবং আত্মহত্যার মাধ্যমে তার এই যন্ত্রণা একবারে বন্ধ করে ফেলা সম্ভব। ডিপ্রেশন এবং আত্মহত্যা প্রবণতা বা সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি তাই খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এই ব্লগটি মূলত দু’টি বিষয়কেই মাথায় রেখে লেখা।
নানা অষুধ কোম্পানি মস্তিষ্কের নানা ধরনের রাসায়নিক অসমতা (chemical imbalance) কে ডিপ্রেশনের প্রধান কারণ হিসেবে দাবি করলেও, ডিপ্রেশনের প্রকৃত কারণ এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, ডিপ্রেশন কিংবা যেকোনো ধরনের মানসিক অসুস্থতার ক্ষেত্রেই আমাদের জ্ঞান বহুলাংশে সীমিত, এখন পর্যন্ত। ধারণা করা হয়, ব্রেইনের কেমিক্যাল ইমব্যালেন্স, বংশগতি, ব্যক্তিজীবনের নানা ঘটনাপ্রবাহ ইত্যাদির সমন্বয়েই মানুষ ডিপ্রেশন আক্রান্ত হন। ডিপ্রেশন একটা রোগ হলেও, এর প্রকৃতি অন্যান্য রোগ থেকে কিছুটা ভিন্ন। আপনি জ্বরে ভুগতে থাকলে জানবেন যে, শরীরের এই তাপমাত্রা স্বাভাবিক না। আপনি ক্যান্সার আক্রান্ত হলে জানবেন যে এই টিউমার এক ধরনের অস্বাভাবিকতা। অথচ ডিপ্রেশন আক্রান্ত হলে আপনার কখনোই মনে হবে না যে আপনার চিন্তাটা ভুল। কারণ, বস্তুত ঠিক ভুল বলে কিছু নেই। একজন ডিপ্রেসড মানুষ জীবনের যে অর্থহীণতা আবিষ্কার করে জীবন যাপনে অনীহা বোধ করেন, তা কিন্তু ঠিক বা ভুলে মাপার যোগ্য না। যারা ডিপ্রেসড নন, তারা স্রেফ জীবনকে নির্দিষ্ট কিছু ফিল্টারের নিচে ফেলে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে যান। যে ফিল্টার আমাদেরকে আশ্বস্ত করে যে বেঁচে থাকাই পরমার্থ এবং জীবনের যেকোনো সমস্যার ক্ষেত্রেই জীবনকে ছুঁড়ে ফেলা বাদে অন্যান্য যেসব সমাধান আছে, সেগুলির থেকেই আমাদের একটি বেছে নিতে হবে। ডিপ্রেসড মানুষেরা শুধু সে ফিল্টারটা হারিয়ে ফেলেন। জীবন তাদের কাছে এতো অর্থহীন মনে হয়ে যে, তারা প্রায়ই অবাক হয়ে ভাবেন- তবুও কেনো বেঁচে আছি?
ডিপ্রেশন শুরুতে মানুষকে একধরনের দ্বৈত জীবনযাপনের দিকে ঠেলে দেয়। বাকি পৃথিবীর সামনে একজন সুস্থ, সামাজিক মানুষের অভিনয়, আর একান্ত নিজের কাছে এমন এক জীবন, যেখানে সবকিছুই অর্থহীন। এই দ্বন্দ্ব, টানাপোড়েনে একসময় দুই জীবনের মধ্যের সেই সেতুটি ধ্বংস হয়ে যায়, আর একজন বিষণ্ণ মানুষ আটকা পড়ে যান তার নিজের আপাত অর্থহীন জীবনে।
ডিপ্রেশন সম্পর্কে আমরা কী ভাবি?
এই লেখার ভাবনাটা শুরু হয়েছিলো মূলত এই বিন্দুকে কেন্দ্র করেই। বেশ কয়েক বছর আগে ফেসবুকে একটি আলোচনা চোখে পড়ে যেখানে ভার্চুয়াল স্পেসের মোটামুটি পরিচিত এক নামকে আমি খুব রূঢ় মন্তব্য করতে দেখি, যারা আত্মহত্যা করেন তাদের সম্পর্কে। এমন মন্তব্য নতুন কিছু না, কিন্তু সেই আলোচনা পড়ে আমি আবিষ্কার করি যে, আপাতদৃষ্টিতে অত্যন্ত বিজ্ঞানমনস্ক একজন মানুষও ডিপ্রেশন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ থেকে তার মতামত চাপিয়ে দিতে পারেন। সেই মুহূর্তে প্রথম মনে হয়, ডিপ্রেশন সম্পর্কে এই সামাজিক তাচ্ছিল্য (Stigma) দূর করা প্রয়োজন।
ডিপ্রেশন এবং আত্মহত্যা সংক্রান্ত যেকোনো আলোচনায় সবচে বেশি স্টেরিওটাইপড মন্তব্য হচ্ছে, “অমুক মানুষের জীবনে কতো কষ্ট, তবু সে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। সে তুলনায় এই লোকের জীবন কত আরামের, তবু কেন সে এমন সিদ্ধান্ত নিলো?” কিংবা “আত্মহত্যা এক ধরনের কাপুরুষতা”। অনেকে আড়েঠারে জানান যে, “ডিপ্রেশন এক ধরনের শৌখিনতা। কই কোনো রিকশাওয়ালার তো ডিপ্রেশন হয় না” কিংবা “যে আত্মহত্যা করতে চায়, তার মরাই উচিত। এদের ব্যাপারে কোনো সিম্প্যাথি নাই”- এমন আরো বহু কথা। একটু ভালো করলে ভাবলেই বোঝা যাবে যে, প্রতিটা কথাই আসলে অজ্ঞতাপ্রসূত, এক ধরনের জাজমেন্টাল বক্তব্য। আমরা সবকিছুই বিচার করার চেষ্টা করি আমাদের অভিজ্ঞতার আলোতে। যা কিছু আমাদের অভিজ্ঞতার বাইরে, তার ব্যাপারে রূঢ় জাজমেন্ট দিতে আমাদের দেরি হয় না। অন্যের জুতোয় পা না গলিয়েই আমরা তার ব্যাপারে চটজলদি সিদ্ধান্তে চলে আসি।
প্রতিটা মানুষের সংগ্রামই তার নিজস্ব, এবং তার ইউনিক। শুধু খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার স্ট্রাগলই একমাত্র স্ট্রাগল না। একজন মানুষ প্রাচুর্যে বেঁচে আছে, তার অর্থ কখনোই এই না যে সে সুখে আছে, ভালো আছে। হয়তো তার পরিবার কিংবা কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক তাকে অসুখী করে তুলেছে। কিংবা সবকিছু ঠিক থাকার পরও শুধুমাত্র মস্তিষ্কের রাসায়নিক সামঞ্জস্যের অভাবে সে অসুখী। কারণ যাই হোক, একজন মানুষ ডিপ্রেসড হতে পারে, এবং তার কষ্টটুকু পুরোপুরি সত্যি। আপনার-আমার যতোই মেকি মনে হোক, তাতে তার কষ্টের তীব্রতাটুকু কমে না। আরেকটা স্টেরিওটাইপড চিন্তা- গরিব মানুষ কখনো ডিপ্রেশনে ভুগে না। শুধু কষ্ট করে একটু ইন্টারনেটে খুঁজলেই এই দাবির অসারতা পাওয়া যাবে। যাদের বড় কোনো শারীরিক সমস্যাতেই ডাক্তার দেখানোর সামর্থ্য থাকে না, তারা ডিপ্রেশনকে চিকিৎসা দরকার এমন সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে ডাক্তারের কাছে যাবে, এমনটা আশা করা কিছুটা অবাস্তব। তাই ডাক্তারের চেম্বারে দরিদ্র ডিপ্রেশনের রোগী কম দেখা যাওয়াকে কোনোভাবেই “ডিপ্রেশন শুধু বড়লোকের শৌখিনতা” হিসেবে অনুবাদ করার সুযোগ নেই।
যারা গুরুতর মানসিক রোগে ভুগছেন, এবং তার লক্ষণগুলিকে আমরা সাধারণভাবে চিনতে সক্ষম, তাদের ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই সহানুভূতিশীল হলেও, ডিপ্রেশনের ব্যাপারে আমরা বেশ নির্দয়। আমরা অধিকাংশ মানুষই একে একটা মানসিক রোগ হিসেবে বুঝতে শিখি না। দেশে থাকাকালীন সময়ে এক বন্ধুর সঙ্গে একজন মনরোগ বিশেষজ্ঞের চেম্বারে গিয়েছিলাম দুইবার। যিনি গিয়েছিলেন তিনি নিজেও ডিপ্রেশনে ভুগছেন। সেই চেম্বারে ঢুকে আমার অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিলো। সে এক ভিন্ন পৃথিবী। আপাতদৃষ্টিতে যাদের দেখলে স্বাভাবিক, সফল জীবনের অধিকারী মনে হবে, এমন বহু মানুষের ভিড় সেই চেম্বারে। আমি উপলব্ধি করেছিলাম ডিপ্রেশন এমন এক গোপন, গভীর অসুখ, যা আমরা অনেকেই সবার অলক্ষ্যে বয়ে চলি। এমনকি হয়তো পরিবারের মানুষেরা পর্যন্ত জানে না যে তাদেরই একজন কী কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের সমাজ ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগে আপনার পাশে সহানুভূতির হাত বাড়াবে, অথচ ডিপ্রেশনের কথা শুনলে, যা কিনা ক্যান্সার কিংবা হৃদরোগের মতোই প্রাণঘাতী, এবং প্রতিবছর বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ, আপনাকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা শুরু করবে। একজন ডিপ্রেসড মানুষের যুদ্ধটা তাই শুধু রোগের সঙ্গেই নয়, তার চারপাশের সঙ্গেও। মূলত সেই ডাক্তারের চেম্বার থেকে ফিরে আসবার পরই আমি ডিপ্রেশন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠি, এবং আবিষ্কার করি, আমাদের চারপাশে বহু মানুষ, যাদের আমরা “মেন্টাল”, “আধা পাগল”, “অসামাজিক”, “অলস”, “বেকুব” ইত্যাদি বলে ক্লাসিফাই করে এসেছি, তারা হয়তো শুধুই ডিপ্রেশনের স্বীকার। গোটা বিশ্বেই ডিপ্রেশন সম্পর্কে মানুষের লুকোছাপার প্রবণতা আছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল, এবং রক্ষনশীল দেশে সেই প্রবণতা, ট্যাবু আরো বহুগুণে শক্তিশালী। এ কারণে আমাদের সমাজে একজন ডিপ্রেসড মানুষের স্ট্রাগলটাও তুলনামূলকভাবে তীব্র।
তবে আমাদের কেমন ব্যবহার করা উচিত?
এর উত্তর এক কথায় হচ্ছে, সমানুভূতিশীল বা ইংরেজিতে যাকে বলে এমপ্যাথেটিক (empathetic)। সমানুভূতি শব্দটা অনেকটাই অচেনা। আমরা চারপাশে খুব একটা ব্যবহার হতে দেখি না, এর কারণ হয়তো আমাদের আচরণের মধ্যে এই গুণের অভাব। সমানুভূতি হচ্ছে অনেকটা অন্যের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে তার দুঃখ অনুভব করার মতো। সমানুভূতি আর সহানুভূতির মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। সহানুভূতির মধ্যে কিছুটা করুণার আভাস থাকে, পক্ষান্তরে সমানুভুতি জাজমেন্টশূন্য এক অবস্থান, যেখানে আপনি প্রকৃত অর্থেই অন্যের মানসিক অবস্থার একটা অনুমান পাবেন। সমানুভূতি বা এম্প্যাথি সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে পারেন এখান থেকে। সহজভাবে বললে, একজন ডিপ্রেসড মানুষকে দুম করে জাজ করে ফেলবেন না। তাকে বোঝাতে যাবেন না কেন তার জীবন আরো অনেকের চেয়ে ভালো, কিংবা তার এই ধরনের চিন্তার কোনো মানে নেই। আপনি যদি ভালো মনেও কথাগুলি বলে থাকেন, তবুও আপনি আসলে তার উপকার করছেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডিপ্রেসড একজন মানুষ মূলত একজন মানুষকে চায় যার কাছে সে তার কথাগুলি বলে কিছুটা নির্ভার হতে পারে, এবং অবশ্যই যে মানুষটি জাজমেন্টাল না। আপনি একজন ক্যান্সার রোগীকে কি কখনো বলবেন যে, অন্য কারো জীবন কতো ভালো, কিংবা অন্য কেউ কষ্টে থেকেও কীভাবে মানিয়ে নিচ্ছে? যদি না বলেন, তবে কেন একজন ডিপ্রেশনের রোগীকে আপনি এই কথাগুলি বলবেন, যেখানে ডিপ্রেশন ক্যান্সারের মতোই প্রাণঘাতী একটি অসুখ? কাজেই ডিপ্রেসড মানুষের প্রতি কোনো কথা কিংবা আচরণেই যেন জাজমেন্ট প্রকাশ না পায়, সেই ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা জরুরি।
কয়েকমাস আগে যখন অভিনেতা রবিন উইলিয়ামস আত্মহত্যা করেন, তখন সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখেছি মানুষের জাজেমেন্টাল কমেন্টের ঝড়। কেউ কেউ বিস্মিত হলো যে এমন বিখ্যাত একজন অভিনেতা কেন আত্মহত্যা করবেন। কেউ কেউ বিশেষজ্ঞ মতামত দিলো, “স্টারদের জীবন এমনই হয়।” কেউ কেউ আরো এক কাঠি সরেস- দাবি করলেন,” যতো বড় অভিনেতাই হোক, আত্মহত্যা যে করে সে কাপুরুষ। তাকে নিয়ে আফসোসের কিছু নেই।” কেউ একবারও ভাবলো না, কতোখানি অসহায় হলে একজন মানুষ এতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে? যে আজ আত্মহত্যা করলো, তার কাছে জীবন কতোটা অর্থহীন ছিলো? সবটুকু আবরণ সরালে নিজেকে ছাড়া তো আমাদের আর কিছু নেই। সেই নিজেকেই মুছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় একটা মানুষের কতোটা শূন্য, কতোটা অসহায় লাগে? না, আমরা কেউই এসব ভাবি না। রবিন উইলিয়ামসের ক্ষেত্রে ভাবি না, নাম না জানা কোনো মধ্যবয়েসী মানুষের ক্ষেত্রেও ভাবি না। আমরা যারা মানসিকভাবে সুস্থ আছি (সুস্থতা শব্দটা এই ক্ষেত্রে একটা আয়রনি), তারা আসলে একটা নির্দয় জাজমেন্ট মেশিন। আমাদের চিন্তার স্কোপের বাইরে যা কিছু, তাকেই আমরা বাতিল করে দেই। যে মানুষটা আজ ঝরে গেলো, সে যদি আমাদের মধ্যে কাউকে পেতো, যে বিনা জাজমেন্টে তার কথাগুলি শুনতো, তাকে নিরর্থক জ্ঞান না দিয়ে, অনুরোধ করতো জীবনকে আরেকটা সুযোগ দেওয়ার জন্য, হয়তো একটা জীবনকে আমরা বাঁচাতে পারতাম।
সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে যদি পাশে দাঁড়াতে চান, তবে এম্প্যাথি নিয়ে একজন ডিপ্রেসড কিংবা সুইসাইডাল মানুষের কথাগুলি শুনুন। এমনকি বলবার দরকার নেই যে, আপনি তার কষ্ট অনুভব করতে পারেন (যেটা সম্ভবত আসলেই পারেন না)। আপনি শুধু শুনুন- বলবার দরকার নেই কে ভুল, কে ঠিক, কিংবা জীবন কতো চমৎকার। ডিপ্রেসড মানুষের রিকভারি অনেক সহজ হয়ে যায় যখন তার পরিবার, বন্ধু, আপনজনেরা তার ডিপ্রেশন দিয়ে তাকে জাজ করে না।
আশার কথা হচ্ছে বাংলাদেশে ছোটো স্কেলে হলেও আত্মহত্যা-প্রবণতা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। হাত বাড়িয়ে দাও উদ্যোগটি এরই মধ্যে বিখ্যাত হয়েছে। তবে এ কেবলই শুরু। আমি এমন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি, যেখানে ডিপ্রেশন কিংবা অন্যান্য মানসিক ব্যাধিকে আর অন্যান্য শারীরিক রোগের মতোই গুরুত্ব সহকারে, কোনো জাজমেন্ট ছাড়াই ট্রিট করা হবে। যে পৃথিবীতে আর কোনো মানুষ তার ডিপ্রেশনের জন্য সংকোচে ভুগবে না, কাউকে আর ‘সুস্থ মানুষের’ অভিনয় করতে হবে না। শুধু মাত্র জাজমেন্টশূন্য, এম্প্যাথিপূর্ণ হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমেই এ স্বপ্ন কোনোদিন সত্যি হতে পারে।
লেখাটা শেষ করবো আমার অত্যন্ত প্রিয় একটা টেড টকের লিঙ্ক দিয়ে। এই লেখাটা পড়ার ধৈর্য্য যদি কারো না থাকে, তবু অন্তত টক-টা শুনুন। বক্তা নিজে ডিপ্রেশনের শিকার ছিলেন- দীর্ঘ যুদ্ধের পর তিনি ফিরে এসেছেন সাধারণ জীবনে। তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে শুনুন ডিপ্রেশনের কথা।
যারা ডিপ্রেশন সম্পর্কে জানতেন না, কিংবা আত্মহত্যাপ্রবণ একজন মানুষকে তাচ্ছিল্য করতেন, আশা করি ডিপ্রেশনের সূক্ষ্মতা, এবং ভয়াবহতা কিছুটা অনুভব করতে পেরেছেন। আপনার আমার চারপাশে অগণিত জনস্রোতে যে ডিপ্রেসড মানুষগুলি আছেন, তারা যেন অন্তত এইটুকু নির্ভরতা পান যে, তাদের পাশে আমরা আছি। বরাবরই থাকবো। এ অসম্ভব যুদ্ধটাকে অন্তত জেতার যোগ্য করার সম্ভব এভাবেই।
মন্তব্য
"ডিপ্রেশন না ঢং", "সবাই পারলে তুমি পারবা না কেন?" - এ জাতীয় জাজমেন্টাল কথাবার্তাগুলো একজন ডিপ্রেসড মানুষের জন্য আরো ক্ষতিকর। দুঃখজনক হলেও সত্যি জাতিগত ভাবে আমরা মোটেই এমপ্যাথি প্রদর্শন করিনা বরং অনেকখানি জাজমেন্টাল। তার উপরে আমাদের মাঝে মানসিক স্বাস্থ নিয়ে ধারণার অনেকখানি ই অভাব। আমার মনে হয়, একজন ডিপ্রেসড মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকর এই ব্যাপারটাই যে সুস্থ মানুষেরা তাদের সমস্যাটাকে একেবারেই বুঝতে পারেনা।
সমস্যা না বুঝতে পারা'র চেয়েও বিপজ্জনক হচ্ছে ভুল বুঝতে পারা, কিংবা 'বুঝতে পেরেছি' এই ইম্প্রেশনে থাকা। ডিপ্রেশন সম্পর্কে ভুল বোঝার ব্যাপারটাই বেশি ঝামেলার। সুস্থ মানুষেরা মনে করেন যে, তারা জানেন ডিপ্রেশন আসলে কী। আদতে ডিপ্রেশন সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই নেই।
অলমিতি বিস্তারেণ
ডিপ্রেশনের সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধটা মনে হয় লুকোচুরি খেলাটা। একজন ডিপ্রেসড মানুষ তার অসুখটা সবার কাছ থেকেই লুকাতে চেষ্টা করে, এমন কি মাঝে মাঝে নিজের কাছ থেকেও। অনেক কারণ থাকে এর পিছনে, জাজড হওয়ার ভয়, কাছের মানুষদের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল (আমরা থাকতে তুমি ডিপ্রেসড কেন?) - লোকে বুঝতে চায় না এটার পিছনে ডিপ্রেসড মানুষটার কোন হাত নেই। কেউ নিজে শখ করে ডিপ্রেশন পোষে না, ইট ইজ নো ফান।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
ডিপ্রেসড মানুষদের সঙ্গে কথা বলে আমারও একই অনুভূতি হয়েছে। যেখানে ডিপ্রেশনের মতো মারাত্মক ডিজেবলিং একটা রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করার সাথে সাথে চারপাশের যুদ্ধটাও খুব ক্লান্তিকর তাদের জন্য। আমাদের সচেতনতা অন্তত তাদের একটা বোঝাকে কমাতে পারে।
অলমিতি বিস্তারেণ
গুরুত্ববহ লেখা। এভাবে ভাবিনি বা জানার চেষ্টা করিনি। তীব্র আর দীর্ঘায়িত দু:খবোধ কে ডিপ্রেশন ভাবতাম।
ডিপ্রেসড লোকজন কে আরেক্টা খুব কমন উপদেশ দেওয়া হয় যে ধর্মকর্মে, মুস্লিম হলে নামাজে মন দিতে। অনেক কে বলতে শুনেছি নামাজ নিয়মিত হওয়ার পর তাদের মনে শান্তি এসেছে। এখন বুঝতে পারছিনা তারা আসলেই ডিপ্রেসড ছিল কিনা।
এই ব্যাপারে মানে ধর্ম কর্মের ইফেক্টের উপর কোন ধারণা আছে?
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
ধর্মকর্মের সঙ্গে ডিপ্রেশনের সম্পর্ক নিয়ে কিছু অ্যাকাডেমিক পেপার চোখে পড়েছিলো। খুব ভালোমতো পড়া হয়নি। তবে আমার যে বন্ধু ডিপ্রেসড ছিলেন(ব্যক্তিজীবনে অজ্ঞেয়বাদী) , তার কাছে শুনেছি যে তার চিকিৎসক তাকে বলতেন ধর্মে বিশ্বাস আনার জন্য।
আমার নিজস্ব একটা অনুমান আছে, যেটা ঠিক না ভুল, আমি আসলে জানি না। ডিপ্রেশন মূলত মানুষের মধ্যে এক ধরনের অস্তিত্ববাদী (existential) সংকট সৃষ্টি করে, মানে একজন ডিপ্রেসড মানুষের মনে সবকিছুর অর্থহীনতা নিয়ে যে প্রশ্ন জাগে, সেগুলি এক ধরনের এগজিসটেনশিয়াল ক্রাইসিসের ইন্ডিকেশন। কারো চিন্তা যদি ধর্মের গণ্ডীতে সীমাবদ্ধ হয়, তাহলে সে প্রশ্নগুলিকে "হয়তো" সহজভাবে হ্যান্ডেল করতে পারে। ব্যাপারটা অনেকটা পালিয়ে বেড়ানোর মতো। ধর্মের ভিত্তিই প্রশ্নহীন আনুগত্য- হয়তো এজন্যেই লোকজন ধর্মে কর্মে মন দিতে বলে।
অলমিতি বিস্তারেণ
সব ডিপ্রেসড মানুষের মধ্যেই "সবকিছুর অর্থহীনতা" নিয়ে মনে হয় প্রশ্ন জাগে না। এটা একটা লক্ষণ বটে এবং অনেকের হয়, তবে অন্য লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্যও আছে।
তবে হ্যাঁ, অর্থহীণতাবোধে ভোগা এগজিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিসে আক্রান্ত মেজর ডিপ্রেশনের রোগী্দের জন্য ধর্মবিশ্বাস, ইশ্বরবিশ্বাস বা যে কোন ধরণের আধ্যাত্নিক বিশ্বাস একটা সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে হয়তো। তবে আপনি যেভাবে বললেন - "ধর্মের গন্ডীতে সীমাবদ্ধ চিন্তা" বা "এস্কেপিজম" - এই সহায়তার মেকানিজম ঠিক সেরকম নাও হতে পারে হয়তো। আমার ধারণা বিশ্বাসটা এক্ষেত্রে অনেকটা একটা খুঁটি, বাট্রেস বা ক্রেনের মত কাজ করে। ডিপ্রেশনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্যগুলির একটা বোধহয় নিয়ন্ত্রনহীণতা। রোগী অনেকক্ষেত্রেই বাস্তব জীবনে এই ডিপ্রেসিভ অনুভূতির সম্পূর্ণ নিস্ফলতা ও অসারতা পুরোপুরি বুঝেও এর হাত থেকে বেরুতে পারেন না। অর্থহীণতাবোধে আক্রান্তের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে - অর্থহীণতাবোধের অর্থহীণতা বুঝেও! একটা চক্রে আটকে যান তিনি বা এটা একটা গুরুভারের মত তার উপর চেপে বসে - যে ভার তিনি হাজার চেষ্টাতেও নিজের উপর থেকে সরাতে পারেন না বা তার হাত থেকে মুক্তি পান না। অর্থাৎ এটা তার ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। এজন্যেই এটা একটা রোগ। নয়তো সাময়িক বিষন্নতা হত অন্য স্বাভাবিক মানুষদের মত। অর্থহীণতা, উদ্দেশ্যহীণতা (পার্পাজলেসনেস), শুন্যতাবোধ - ইত্যাদিতে আক্রান্ত ডিপ্রেশনের এরকম রোগীদের, যাদের ক্ষেত্রে অন্য কিছু কাজ করছে না চট করে, তাদেরকে অর্থবোধ বা সবকিছুই চূড়ান্তভাবে ও চিরতরে নিরর্থক নয় এই বোধের যোগান দিয়ে ধর্ম বা অন্য কোন আধ্যাত্নিক বা অনাধ্যাত্নিক বিশ্বাস অনেক সময় এই নাছোড়বান্দা শ্বাসরুদ্ধকর গুরুভারকে যেন নিজের কাঁধে নিয়ে নেয় - খুঁটি, বাট্রেস বা ক্রেনের মত - এবং রোগীকে হাল্কা আর ভারমুক্ত করে দেয়। ফলতঃ ডিপ্রেশনমুক্তির পথে এগিয়ে দেয়। অন্তত সেই রাস্তায় কিছুটা শক্তি যোগাতে বা এগিয়ে দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে হয়তো।
ডিপ্রেশনমুক্তির এই পদ্ধতির কথা যারা (প্রোফেশনালরা) বলেন, তারা সম্ভবত রিচুয়ালিস্টিক ধর্মের মেকানিস্টিক বা নেগেটিভ চর্চার কথা বলেন না। তারা ধর্মের আধ্যাত্নিকতা, ট্রান্সিডেন্সের অনুভূতি ও মূল্যায়ন, আশাবাদিতা, সমবিশ্বাসী অন্য মানুষের সাথে কানেক্টিভিটি ও কমিউনিটিবোধ সৃষ্টির মাধ্যমে নিঃসঙ্গতা ও বিচ্ছিন্নতা অতিক্রম - এইসব ডাইমেনশনগুলিকেই হাইলাইট করেন। কারন এই ডাইমেনশনগুলিই অর্থহীণতাবোধ / শুন্যতাবোধ সংশ্লিষ্ট ডিপ্রেশনে থেরাপি হিসেবে কাজ করতে পারে বলে মনে করেন তারা, ধর্মের অন্যান্য কূটকচালের নেগেটিভ বা রিচুয়ালের মেকানিস্টিক চর্চা না। এই অর্থে তারা আসলে এক ধরণের কাস্টমাইজড ধর্ম বা বিশ্বাসের কথা বলেন মনে হয় - যা বর্তমান যুগে পশ্চিমে বা বিশ্বের অনেক দেশে এখন সম্ভব হলেও, আরও অনেক দেশেই - অন্তত প্রকাশ্যে কতটা সম্ভব সেটা সন্দেহজনক। এই সংক্রান্ত অল্প কয়েকটা লেখা পড়তে গিয়ে আরও যেটা মনে হয়েছে তা হলো - এই পদ্ধতির প্রবক্তারা ধর্মবিশ্বাস বা আধ্যাত্নিকতাকে এক্ষেত্রে যেন একটা "টুল" হিসেবে ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। স্বাভাবিক পন্থায় বিশ্বাসীদের সাথে এর পার্থক্য হলো, স্বাভাবিক বিশ্বাসীরা নিজেদেরকেই সাধারণত তাদের বিশ্বাসের "টুল" বা "এজেন্ট" মনে করেন, অথচ থেরাপি হিসেবে দেখলে রোগীদের ক্ষেত্রে বিষয়টা কেমন যেন উল্টো হয়ে যাচ্ছে।
এই পুরো বিষয়টাতে আমার যেটা পর্যবেক্ষণ, তা হলো - যারা "অলরেডি কনভার্টেড", অর্থাৎ যারা আগে থেকেই বিশ্বাসী - অন্তত থিউরিটিকালি; অথবা প্রিডিস্পোজড, নিদেনপক্ষে যারা ধর্মবিশ্বাসের প্রতি নেতি-ভাবাপন্ন না এবং কিছু মাত্রায় হলেও ইম্প্রেশনেবল -- তাদের ক্ষেত্রে এই ফেইথ-থেরাপি হয়তো কাজ করলেও করতে পারে। আমি জানি না। কিন্তু যারা তা নন, বিশেষ করে শুন্যতা বা অর্থহীণতাবোধে তাড়িত যেসব ডিপ্রেশনের রোগী নাস্তিক্যবাদী, অজ্ঞেয়বাদী বা সংশয়বাদী - তাদের কি হবে? এই পন্থার থেরাপিতে তাদের কি নিজের উপরে জোর খাটিয়ে বিশ্বাস আনতে হবে - সমস্ত যুক্তিবোধ ধাপাচাপা দিয়ে? সেটা কি সম্ভব? সেটা কি সাস্টেনেবল হবে? সচেতন আত্নপ্রতারণা হয়ে যাবে না? শেষমেশ এরকম চেষ্টা কি আরো মানসিক জটিলতা আর ডিপ্রেশন সৃষ্টি করবে না?
এ বিষয়ে আমার নিজের কিছু কঠিন অথচ মজার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে, আনফর্চুনেটলি অসংবেদনশীল বা আপনার (পোস্টলেখকের) ভাষায় আন-"এম্প্যাথেটিক" কূপপণ্ডিতদের ভয়ে সেটা নিয়ে এখানে লেখা গেল না।
****************************************
আপনার ব্যাখ্যাটা ভালো লেগেছে। আজকে একটু এই বিষয়ে ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করছিলাম- দেখলাম অধিকাংশ লিটারেচার আপনার প্রেডিকশনটাই সাপোর্ট করে।
অলমিতি বিস্তারেণ
লিখলে ভালো হত। সবাই নিতে না পারলেও জানতে পারত।
কচু, ডিপ্রেশনের চোটে নাস্তিক হয়ে গেলাম।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
এরকম একটা সিরিয়াস মানবিক বিষয়ে এই রসিকতা বা বিদ্রুপটাকে সস্তা আর অত্যন্ত অসংবেদনশীল মনে হলো থ্রি-ডি ভাই। আপত্তি জানিয়ে গেলাম।
****************************************
এই বিষয় নিয়ে বিদ্রুপ করি নি তো! ভুল বুঝেছেন। বিদ্রুপ করেছি যারা এসব নিয়েও আস্তিকতা নাস্তিকতার স্টেরিওটাইপের বাইরে বের হতে পারে না তাদের নিয়ে। উপরের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দেখেন, ডিপ্রেশনে ভুগছে একজন সেই সুযোগেও কেউ কেউ দ্বীনের পথের দাওয়াত দিয়ে দু-চারটা নেকি কামানোর সুযোগ মিস করেন না। বিদ্রুপের টার্গেট কে একটু খেয়াল করে দেখলেই বুঝতে পারবেন আশা করছি।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ঠিকাছে, তয় সাফি ভাই'র প্রশ্নের জবাব চাই!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বেকন তো শুনছি ইসলামে হারাম, তার কথায় বিশ্বাস রাখা কি ঠিক হবে?
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
অলমিতি বিস্তারেণ
খুব ভালো লেখা হয়েছে। আমি অনেকবার ডিপ্রেশন নিয়ে লিখতে চেয়েছি। ড্রাফট পড়ে আছে চার বছর ধরে। বেশি গুছিয়ে লিখব বলে আর কিছুই লেখা হয় না। অনেক কিছু বলার আছে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আমি নিজেই এই লেখাটার ড্রাফট ফেলে রেখেছিলাম বহু মাস। গতকাল মনে হলো, এই লেখাটা অন্তত শেষ করা উচিত।
ডিপ্রেশন সম্পর্কে সাইলেন্সটা ভাঙ্গা খুব জরুরী। যদি পুরো লেখাটা পোস্ট করার এনার্জি না থাকে, অন্তত এই লেখার মন্তব্যের ঘরে পোস্ট করতে পারেন মূল অংশটা। আলোচনা হওয়াটাই আসল।
অলমিতি বিস্তারেণ
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
পড়ার জন্য ধন্যবাদ
অলমিতি বিস্তারেণ
অসাধারণ একটি লেখা।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
পড়ার জন্য ধন্যবাদ
অলমিতি বিস্তারেণ
ডিপ্রেশানের কাছাকাছি সঠিক বাংলা শব্দ কি বিষন্নতা? বহুকাল আগে টিভিতে একটা বিজ্ঞাপন দেখানো হতো বিষন্নতা একটি রোগ। বিজ্ঞাপনচিত্রে এই জাতীয় সমস্যাকেই বোঝানো হয়েছিল। ওটা দেখে আমরা বলতাম বড়লোকি রোগ। আরো বহুবছর পর বুঝতে পেরেছি এটা তার চেয়ে অনেক জটিল ব্যাপার এবং যাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নেই, তারা এটা বুঝতে সক্ষম না।
সচরাচর একজন সাধারণ মানুষ নিজস্ব ফিল্টারের বাইরে অন্য কোনভাবে আরেকজন মানুষের সমস্যাকে বুঝতে চেষ্টা করে না। 'সমানুভুতি' ব্যাপারটা এমন একটা আর্ট যা অধিকাংশ মানুষের আয়ত্বে নেই। ফলে এরকম সমস্যাক্রান্ত মানুষের সাথে অনুচিত আচরণ করে ফেলে সহানুভুতি দেখাতে গিয়ে। সহানুভুতি বিষয়টা তো কোন কোন ক্ষেত্রে রীতিমত মানসিক নির্যাতন হয়ে দাঁড়ায়।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ডিপ্রেশনের বাংলা বিষণ্ণতাই। শব্দটার বহুমাত্রিক ব্যবহারে, কেন যেন অনেকটা মন খারাপের সমার্থক হয়ে গেছে। এটা যে একটা মেডিক্যাল কন্ডিশন, এই শব্দ থেকে সেটা অনুভব করি না। তাই ডিপ্রেশন ব্যবহার করলাম।
আপনি যে বিজ্ঞাপনটার কথা বলছেন, সেটার কথা আমারও মনে আছে। সিবা-গেইগীর অ্যাড ছিলো সম্ভবত। সে বয়সে তো বটেই, অনেক বড় হয়ে যাওয়ার পরও আসলে বিষণ্ণতা তো বটেই, কোনো মানসিক রোগ সম্পর্কেই কিছু জানতাম না। ইউনিভার্সিটির শেষ দিকে এসে এক বন্ধুর বাবা'র বাই পোলার ডিজঅর্ডারের কথা শুনে অবাক হই। রোগটার বর্ণনা ভীতিকর ছিলো। তারপর ইন্টারনেট ঘেটে পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার, মুড ডিজঅর্ডার, ডিপ্রেশন এগুলি সম্পর্কে আরো জানতে পারি।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা না থাকলেও যেন একজন মানুষ ডিপ্রেশনকে এম্প্যাথির সাথে ট্রিট করতে পারেন, সেটাই আল্টিমেট লক্ষ্য। অন্যকোন প্রাণঘাতী রোগের চেয়ে ডিপ্রেশন খুব আলাদা কিছু না, এই সত্যটা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
অলমিতি বিস্তারেণ
এই লেখাটা আমার অনেক আগে লেখার কথা ছিল।
সবজান্তাকে ধন্যবাদ--লেখাটা আমার হয়ে, আমার চেয়েও ভাল করে পাঠকদের কাছে তুলে ধরার জন্যে।
আমি এইখানে কেবল কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা যোগ করতে চাই।
আমি দীর্ঘদিন ধরে এই অসুখে ভুগছি। সচলে যারা আমার লেখা পড়েন তাদের অনেকেই হয়ত মুচকি হেসে ভাবছেন এইটা আর নতুন কী---আমরা আগেই বুঝেছিলাম! সচলে আমার অধিকাংশ লেখা গুলো আমার নিজের জীবনের কাহিনী--অনেক কাহিনীর জন্ম হয়েছে কেবল বিষন্নতার হাত ধরেই। আমার সব লেখাতে যে বিষন্ন আবহ থাকে বলে অনেকে অভিযোগ করেন--সেইটাও এরই কারণে হয়ত।
আমার ধারণা--আমি খুব ছোট বেলা থেকেই বিষন্নতায় ভুগছি। তখন জানতাম না বিষন্নতা আসলে কী। শুধু জানতাম--আমার অকারণেই মন খারাপ হয়ে যায়। অকারণেই আমার শুধু একলা হয়ে যেতে ইচ্ছে করত। খুব ছোট বেলাতেই আমি যেন দ্রুত বুড়িয়ে যাচ্ছিলাম। আমার মন কেন খারাপ হয়--সেইটা আমি নিজে বের না করতে পারার কষ্ট--সেই সাথে আশে-পাশের সবার 'অন্য চোখে' আমার দিকে তাকানো--সবকিছু আমাকে বাহ্যিক ও মানসিক ভাবে এক ঘরে করে ফেলেছিল। জীবনানন্দের ভাষায়ঃ
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে আমার বড় হওয়া। আজো খুঁজে চলছি।
বিষন্নতা আক্রান্ত হওয়ায় অসংখ্যবার অসংখ্য 'শুভানুধ্যায়ীদের' নানান মন্তব্য/উপদেশ/পরামর্শের 'শিকার' হতে হয়েছে। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য গুলো হলঃ
--এই গুলা সুখের ব্যারাম।
-- এইসব হল দুঃখবিলাস!
-- একদিন ভাল কইরা মাইর দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে (এইটা আমার বিশেষ প্রিয়)
-- তোর চেয়ে কত খারাপ অবস্থায় মানুষ আছে, তারা তো এমন করে না!
--তোর পাগলের ডাক্তারের কাছে যাবার সময় হয়েছে
এবং আরো অনেক আত্মসন্তুষ্টিতে ভোগার মত কথামালা!
অনেক অনেক পরে যখন আমি দেশের বাইরে পড়তে এসেছি তখন বিষন্নতা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছিল আমার জন্যে। এমনিতেই আমি ঘর কুনো মানুষ, পশ্চিমে এসে পূর্ব দিকে মুখ করে থাকি সর্বক্ষণ--দেশের বাইরে এসে দেশের জন্যে মন খারাপ, দেশে ফেলে আসা প্রেমিকার জন্যে মন খারাপ, মা-বাবার জন্যে মন খারাপ---মন খারাপ--মন খারাপ-- আর মন খারাপ! দেখা গেল আমি পড়া শুনা বাদ দিয়ে সারা রাত আমার বাসার কাছের একটা পার্কের দোলনায় বসে রইতাম। এর প্রাথমিক ধাক্কা লাগল আমার গ্রেডে।এসিস্ট্যান্টশীপ যায় যায় অবস্থা।
বিষন্নতার রোগীদের যেটা খুব কমন সমস্যা---সাধারণ কাজ গুলো করাও তাদের জন্যে পাহাড় প্রমান দুঃসাধ্য মনে হতে থাকে! রোজ সকালে ঘুম থেকে নিজেকে টেনে তোলা--ক্লাসে নিয়ে যাওয়া, রিসার্চে সময় ব্যয় করা---এক জন ভীষন ভীষন বিষন্ন মানুষের জন্যে এইগুলো যে কত কষ্টের সেটা বলে বোঝানো সম্ভব না।
আমি তারপরেও টিকে রইলাম--নাই নাই করে হলেও, প্রচন্ড ঘাড়ত্যাড়া বলে। এর মাঝে জিনিসটাকে আরো গুরুতর করার জন্যে রইল আমার সাবজেক্ট--পদার্থবিজ্ঞান। গর্ব করা বা নিজেকে বিশেষায়িত করার জন্য বলছি না--- গ্রাজুয়েট লেভেলে অন্য যে কোন সাবজেক্টের চেয়ে পদার্থবিজ্ঞান অন্তত দেড় গুন (কম করেই বললাম) কঠিন। আপনারা যারা নিজেদের সাবজেক্টকে কঠিন মনে করেন--সেটাকে দেড় গুন বেশি কঠিন মনে করুণ--তখন পদার্থবিজ্ঞানের 'মাহাত্ম্য' বুঝতে পারবেন কিছু! আমার জন্যে সহজ ছিল--পদার্থবিজ্ঞান ছেড়ে কোন কম 'স্ট্রেসফুল' সাবজেক্টে চলে যাওয়া। সেটাও করা হল না---ঘাড় ত্যাড়ামির জন্যে।
আমি মরতে মরতে বেঁচে রইলাম। এর মাঝে মাস্টার্স শেষ করে পি এইচডি তে ঢুকলাম। অবস্থা আরো ঘোরালো হয়ে উঠল। আমার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিও অতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। আম্রিকানদের কাছে লন ডিসট্যান্স রিলেশন কখনোই কাজ করে না। এইটা শুধু আম্রিকানদের জন্যে নয়--যে কোন প্রেমের সম্পর্কই কেবল দূরত্বের কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আমারটাও তাই হয়ে যাচ্ছিল---আমি টের পাচ্ছিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম আমার হাতের আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে ক্রমশ বালির মত ঝরে পড়ে যাচ্ছিল আমার স্বপ্নগুলো।
আমি কিছুই করতে পারছিলাম না। আমি কেবল ডুবছিলাম---আর ডুবছিলাম।
আমার রেজাল্ট ক্রমাগত খারাপ হচ্ছিল। আমি নিজে যত না খারাপ তারচেয়েও খারা রেজাল্ট করে করে নিজেকেই তাজ্জব করে দিচ্ছিলাম। এসিস্ট্যান্ঠশীপ কেবল চিকন এক সুতার উপরে ঝুলছিল। ততদিনে আমার সুপারভাইজার--যার সাথে আমার তিন বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করা হয়ে গেছে--তার চাকরি স্থায়ী হবার সময় ঘনিয়ে এসেছে। আম্রিকাতে যেকোন প্রফেসরদের জন্যে এইটা খুব টাফ সময়---এই সাঁকো পেরোতে পারলে বাকী জীবনের জন্যে তুমি মোটামুটি নিশ্চিন্ত। খুব ভয়াবহ রকমের যৌন অপরাধ বা দেশ-জাতি বিরোধী কিছু না করলে চাকরি যাওয়া নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। আমার প্রফেসর খুবই যোগ্য লোক (তখনই বিখ্যাত সায়েন্স জার্নালে তার দুইটি পাব্লিকেশান---যারা জানেন না তাদের জন্যে বলি, একাডেমিয়াতে যারা কাজ করেন তাদের কাছে চরম রকগ্নিশানের একটা হল 'নেচার'-পত্রিকাতে কিছু পাব্লিশ করা--অনেকে বলেন 'সায়েন্স' এ পাব্লিশ করা তারচেয়েও কঠিন)। সেই যোগ্য লোকের চাকরি হল না। দুম করে উনি বিদায় হলেন। সাথে গেল আমার তিন তিনটি বছরের কষ্টের ফসল। যখন যাওয়া শুরু হয় তখন এক সাথে সব কিছু যাওয়া শুরু হয়। ঐ বছরের শেষে (২০০৭) আমার বিয়ে করার কথা। আমার পরিবারের সম্মতি নেই। এইটাও একটা বিরাট দুখের বিষয় আমার জন্যে। তার পরেও তারা আমার দিকে চেয়ে রাজী হয়েছেন অনিচ্ছা সত্ত্বেও। সব ঠিকঠাক। এর মাঝে প্রেমিকা জানালেন--যে তিনিও আর সম্পর্কটা টেনে নিয়ে যেতে রাজী না!
ইংরেজীতে একটা কথা আছে -- রক বটম! আমি সেইটার মর্মার্থ হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। ক্ষোভে দুখে হতাশায় আমি জমে কঠিন হয়ে গেলাম। এর চেয়ে খারাপ কিছু ঐ সময় আমার জন্যে হওয়া সম্ভব না।
আমি নিজেকে বাঁচানোর শেষ আশ্রয় হিসেবে গেলাম ইউনিভার্সিটির কাউন্সিলিং সেন্টারে। আমি জীবনে এই মানুষ গুলোর অবদান ভুলব না। এরা অতি দ্রুত বুঝলেন আমার অবস্থা। আমার মনে আছে আমি যখন আমার কথা গুলো বলছিলাম আমার কাউন্সিলারের কাছে--তার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছিল। যাই হোক তারা আমার জন্যে কিছু ঔষধের ব্যবস্থা করলেন। সেই সাথে চলল কাউন্সিলিং। বিষন্নতা কিছু বশে আসল--কিন্তু বাড়ি থেকে সম্পূর্ণ দূর হল না। ক্ষুধার্ত হায়েনার মত বাড়ির উঠানে বসে রইল মুখ ব্যাদান করে। যেন সুযোগ পেলেই তারা আমার উপরে ঝাপিয়ে পড়বে।
ঔষধ আর কাউন্সিলিং মিলিয়ে আমি বেশ নিজেকে টেনে তুললাম খাদের কিনার থেকে। যে পি এইচ ডি করতে ৫/৬ বছরের বেশি লাগার কথা না--সেইটে শেষ করলাম ৮ বছরে!! কিন্তু শেষ করলাম!
যেদিন পি এইচ ডি শেষ হল সেদিন নিজে একটা বেঞ্চিতে বসে ভাবছিলাম আমার ফেলে আসা দিন গুলোর কথা এবং মনে হচ্ছিল নিজেই নিজেকে পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলতে---সাবাস ব্যাটা, ঘাড় ত্যাড়ামি করে শেষ পর্যন্ত ডিগ্রীটা শেষ করে ফেললি??!!
অনেক অনেক বক বক করা হল। শুধু নিজের দুঃখগাঁথা ফলাও করে বলাটা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার বলার উদ্দেশ্য তাদের জন্যে--যারা নিজের অজান্তে অথবা জেনে বুঝেই বিষন্নতায় আছেন। তাদের জন্যে আমার বলার কথা হল---দেরী করবেন না। একজন মনোবিজ্ঞানীর এবং সাইক্রিয়াটিস্টের শরণাপন্ন হউন। অনেকে হয়ত আমার চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছেন। আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে পারি---আপনারা উপকৃত হবেন।
আমার বিষন্নতা যায় নি--সেরে ওঠে নি এখনো। ডাক্তারদের ধারণা যত দিন বাঁচব আমাকে এইটে সাথে করে নিয়েই বাঁচতে হবে। এখনো বাড়ির উঠানে সেই লকলকে জিভ বের করা হায়েনাটা বসে রয়েছে। তফাত হল এই যে, এখন আমিও মাঝে মাঝে তাকে জিভ বের করে ভেঙ্গাই। সুযোগ পেলেই সে আমাকে কামড়ে খুবলে দেয় এখনো--কিন্তু সে জানে, আমি ঘাড় ত্যাড়া। আমি এত সহজে এই উঠোন ছেড়ে যাব না।
আর যারা আজকের এই লেখাটা পড়ছেন--আপনারা যারা বিষন্নতার করাল থাবা এড়াতে পেরেছেন--তারা জানেন না আপনারা আসলে কী পরিমান ভাগ্যবান! কাজেই বিষন্ন একজন মানুষ দেখলে সমানুভূতি প্রকাশে কার্পন্য করবেন না যেন। আপনার মত দেখতে-চলতে-ফিরতে ঘুরে বেড়ানো মানুষটি ঘাড়ে কত বড় সিন্দাবাদের ভূত নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে --আপনার বিন্দু মাত্র ধারণাই নেই। আপনার যে কাজগুলো করতে কোন রকম প্রয়াস দিতে হয় না---সেই প্রতিদিনকার দৈনন্দিন কাজ গুলোই করা তার জন্যে দুরূহ। বাকী গুলোর কথা বাদই দিলাম।
লড়াকু এই মানুষগুলো আপনার সমানুভূতি না পেলেও তাদের ঠাট্টা করে নিজেকে জানোয়ার প্রমান করা থেকে বিরত থাকুন।
কিছুদিন আগে সমপ্রেমীদের অধিকার আদায়ের বিরাট সাফল্যের দিনে আমি আমার ফেসবুকের ওয়ালে লিখেছিলাম যে আমার খুব ভাল লাগছে আজকে এত গুলো মানুষ এক সময় কোন ঠাসা হয়ে পড়ে থাকা মানুষদের সহানুভূতি/সমানুভূতি জানাতে এগিয়ে এসেছেন। আশা করি এক সময় বিষন্নতায় ভোগা মানুষ গুলোও এই রকম একটা বিজয় পাবে--স্বীকৃতি পাবে। আমার এই স্ট্যাটাসের উত্তরে আমার এক ডাক্তার বন্ধু মন্তব্য করেন যে আজ থেকে ২০ বছর আগেই নাকি বিষন্নতা নিয়ে সচেতনার আন্দোলনের বাস এসে ঘুরে গেছে। আমি নাকি লেট। আমি মৃদু হেসে মনে মনে বলেছিলাম---২০ বছর আগে যে বাস ঘুরে গেছে, সে বাস অনেকেই মিস করে গেছেন, আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি।
সকলে ভাল থাকুন--
লড়াই অব্যাহত থাকুক!
(বিশাল মন্তব্যের জন্যে সবজান্তা ও বাকী সবার কাছে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি)
অনিকেত দা, আপনার মন্তব্য পড়ে আমার চোখের কোণে জল। দুঃখ গুলো মিলে গেলো। আমি আবার ঘাড় ত্যাড়া নই, অল্পতেই নুয়ে পড়ি। জানিনা সামনে কি আছে....
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
নুয়ে পড়বেন না বস! লড়াই চলুক---
এ ছাড়া আর কিইবা আছে!
শুভেচ্ছা নিরন্তর
আলাদা কোনো পোস্টে শেয়ার করার আহবান রইলো আপনার লড়াই করে ফিরে আসার গল্প। স্যালুট।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
অনিকেতদা, দুঃখ প্রকাশ করার তো কিছু নাই। বরং আমি আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাতে চাই যে, আপনি নিঃসংকোচে নিজের অভিজ্ঞতার কথাটুকু বললেন। নিজের এই দিকটাকে সবার সামনে প্রকাশ করাটা অনেক সাহসের ব্যাপার। আমি চাচ্ছিলাম যে, যারা ডিপ্রেশনে ভুগছেন, ভুগেছেন, তারা সবাই কথা বলুক। ডিপ্রেশন সম্পর্কে আমাদের সমাজে নিথর নিরবতা আছে, সেটা ভাঙ্গাটা সবচে জরুরী।
আপনার মতোই অভিজ্ঞতার কথা অন্যান্য ডিপ্রেশন আক্রান্ত মানুষের লেখায় পড়েছি। আমি সেই কষ্ট পুরোটা বুঝতে পারি, এমন দাবি করা অবান্তর- তবে কিছুটা আন্দাজ পাই যে, নিজের ইচ্ছা বিরুদ্ধে কতোটা কষ্ট করে আপনি আজ এতোদূরে এসেছেন। বিশেষত আমেরিকাতে পদার্থবিদ্যার মতো সাবজেক্টে (যার কোয়ালিফাইং এক্সামের বাঁশের কথা জগদ্বিখ্যাত) পিএইচডি করেছেন- আপনি নিঃসন্দেহে ডিপ্রেশনে যারা ভুগছেন, তাদের জন্য বিরাট অনুপ্রেরণা। আমার মনে হয় আপনার কথায় একজন ডিপ্রেসড মানুষ অনেক ভরসা পাবেন।
অলমিতি বিস্তারেণ
দীর্ঘদিন ধরে বিষন্নতায় ভুগছি। দেশের বাইরে আসার পর ইউনির কাউন্সিলিং সেন্টারে কয়েকটা সেশন নিয়েছিলাম। খানিকটা উপকার হয়েছিলো সে সময়ে, এখন আবার যে কে সেই।
অনিদাকে স্যালুট।
আপনি পেরেছেন, সবাই পারে না!
লেখায় পাঁচ তারা!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
তিথীডোর,
কাউন্সেলিং চালিয়ে যান, বন্ধ করবেন না। দরকার হলে সাইকিয়াট্রিস্টের সাথেও কথা বলে দেখতে পারেন। আর্লি স্টেজে ট্রিটমেন্ট শুরু করলে ব্যাপারটা তুলনামূলকভাবে সহজ হয়।
আর সম্ভব হলে কাছের কোনো বন্ধু-আত্মীয় বা অন্য কারো সাথে নিজের অনুভূতির কথা শেয়ার করুন, যে আপনাকে জাজ না করে, আপনার কথা মন দিয়ে শুনবে। শুভকামনা রইলো
অলমিতি বিস্তারেণ
লড়াই অব্যাহত থাকুক! ভাল থেকো, ভালো রেখো।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
লড়াই অব্যাহত থাকুক অনিকেতভাই। হাসিমুখের আড়ালে যে কত বিষন্নতা জমা ছিল, জানতেও চাইনাই
অফটপিক, তাই বলে ফেবুতে খোঁচানি বন্ধ হবেনা, এমব্রেস ইউরসেল্ফ।
ঔষধের বাইরে কাউন্সেলররা কি মিষ্টি-মিষ্টি কিছু উৎসাহব্যাঞ্জক কথা বলা ছাড়া আর কিছু করতে পারেন?
****************************************
কাউন্সেলিং কিন্তু নিতান্তই কিছু মিষ্টি-মিষ্টি উৎসাহব্যাঞ্জক কথা বলা নয়। প্রতিটি মানুষের অবস্থা বুঝে, বিভিন্ন ধরণের আলোচনা দরকার পড়ে। মনে রাখা ভাল, বড় মাপের বিষণ্ণতায় (সিভিয়ার ডিপ্রেশন-এ) শুধু কাউন্সেলিং-এ কাজ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আমারও সেই রকমই একটা কিছু ধারণা ছিল।
কিন্তু কয়েক বছর আগে একজন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টের কাছে গিয়েছিলাম নিজের প্রয়োজনে। তাঁর কথিত ও অকথিত মূল বক্তব্য যেটা বুঝতে পেরেছিলাম তা হলো আমার ডিপ্রেশনের বাস্তব কারনগুলি নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই যেহেতু তা বাস্তব জীবনে আশু সমাধানযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না, বরং আমার সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিজের পজিটিভ বিষয়েই ফোকাস করা উচিৎ। এটা খুব প্র্যাক্টিকাল কথা বটে - কিন্তু এর জন্য কি পয়সা দিয়ে একজন পেশাদার কাউন্সেলরকে দেখানো লাগে? এতো আমি আগেই জানতাম। তার চেয়েও বড় কথা, এটা জেনেও তো পারছিলাম না - তাইতো তাঁর কাছে যাওয়া। কিন্তু কিভাবে এটা করা যাবে সে বিষয়ে কোন কনভিন্সিং দিশা তাঁর কাছ থেকে পেলাম না। কিম্বা তিনি ডিপ্রেশনের কারনগুলিকে মানসিক ও আচরণগতভাবে কিভাবে মোকাবেলা বা হ্যাণ্ডল করা যায় যাতে তা ডিপ্রেশনের সৃষ্টি না করে - সে বিষয়ে তেমন কিছুই বললেন না। আলোচনাই করতে চাইলেন না বলে মনে হলো। উলটো পেলাম অনেক মিষ্টি-মিষ্টি স্তুতি, প্রশংসা আর উৎসাহব্যঞ্জক কথাবার্তা। বুঝতে পারছিলাম এগুলি আমাকে পজিটিভ বিষয়ে ফোকাস করানোর বা সে বিষয়ে উৎসাহিত করানোর চেষ্টা। কিন্তু এটা এতই ছেলেভোলানো মনে হচ্ছিল (এমনকি তাঁর কণ্ঠস্বরটা পর্যন্ত), যে বিরক্ত হয়ে ঐ প্রথম সেশনের পরে আর দ্বিতীয়বার যাইনি। অন্য কারও কাছে যাওয়ার ব্যাপারেও উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলাম একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশংকায়। এছাড়া একমাত্র যে থেরাপির কথা তিনি বলেছিলেন তা মনে হয় কোন ধরণের "ব্রিদিং এক্সারসাইজ"। এটাও আমার কাছে প্রমিসিং কিছু মনে হয়নি। এ বিষয়ে এইটুকুই আমার অভিজ্ঞতা। এই জন্যই আমার উপরের মন্তব্যের প্রশ্নটা করা।
****************************************
কাউনসিলর এরকম মিষ্টি কথা বলবে জানাই ছিল। তবে মন খুলে কথা বলতে পেরে আমি নিজেই সমাধান দেখতে পেয়েছি। নিজেকে উলটে পালটে দেখার এই ফুরসঅতটাও তো আমাদের ব্যস্ত জীবনে মেলে না। আমি নিজে একা যখন করতে গেছি, এলোমেলো লেগে গেছে।কাউনসিলর জায়গা মতো প্রশ্ন করে চিন্তা ট্র্যাকে ধরে রাখতে সাহায্য করেছে, আমার মনে হয়েছে
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
সব পেশার সবাই তো আর সমান স্কিলড নন। হয়তো আপনি যার কাছে গিয়েছিলেন, তিনি আপনার প্রয়োজন মেটানোর মতো স্কিলড নন। একই অভিযোগ, লেখাতে বর্ণিত আমার সেই বন্ধুও করেছিলেন। তিনি ছিলেন অজ্ঞেয়বাদী- আর কাউন্সেলর তাকে শুধু একই ঘ্যান ঘ্যান করে আল্লা-খোদায় বিশ্বাস করতে বলতো। ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে আমার বন্ধু সেই কাউন্সেলরের কাছেই যাওয়ার বন্ধ করে দিয়েছিলো। কাজেই আপনার বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেন, এমন কমপ্যাটিয়েবল ইনটেলেক্টের কাউন্সেলর না হলে আপনার কাজ হবে বলে মনে হয় না।
অলমিতি বিস্তারেণ
আপনার জীবনের ঘটনা একদম হৃদয় ছুঁয়ে গেল অনিকেত দা! ভালো থাকুন সবসময়।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
অনেক ধন্যবাদ স্পর্শ --
শুভেচ্ছা রইল!
অনিকেত ভাই
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
আপনার লড়াইয়ের জন্য সাধুবাদ জানাই। এই বিষয়ের উপর আপনি লেখা দিলে খুব ভালো হয় অনিকেত দা।
আমি একজনকে খুব ভালবাসি, খুব। গত একবছর ধরে চিঠি দিয়ে যাচ্ছি। একটি নয়, দুটো নয়, অসংখ্য চিঠি! তবু সে কোন জবাব দেয় না। হয়ত সে চিঠিটি খুলেও দেখে না। এতটাই ঘৃনা করে সে আমাকে!
তবু আমি প্রতিদিন নিয়ম করে চিঠি দেই, কি করব, চিঠি না দিলে যা আমার আরও বেশী করে শূন্য শূন্য লাগে, চিঠি দিলে তাও আমি পরদিন পর্যন্ত আশাটুকু বাঁচিয়ে রাখতে পারি।
সবগুলো সংকেত, ইঙ্গিত বলে দিচ্ছে সে কখনই চিঠির বাক্স খুলবে না। আমার চিঠি আর কখনই সে পড়বে না বা কখনই মিলবে না সাড়া। তবু সব জেনেশুনে আমি চিঠি দিয়েই যাচ্ছি, পাগলের মত!
আমি যা করছি, তা নিশ্চয়ই কোন মনস্তাত্তিক অসুখ, হয়ত আপনার উল্লেখিত ডিপ্রেসন।
আমি অনেক চেষ্টা করেছি ভুলে যেতে, কিন্তু পারছি না। আমি কি করে মুক্তি পাব এই ডিপ্রেশন থেকে, বলতে পারেন সবজান্তা ভাই?
।।।।।।।।।।।।।
একজন মানসিক রোগী
আপনি ডিপ্রেশনে পড়েননি। প্রেমে পড়েছেন। দুইটা আলাদা রোগ।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
বিষণ্ণতা চিরটাকাল লেগে রইল আমার সাথে। আজ প্রায় নয় বছরের উপর সে আমার সাথে আছে, একেবারে ছায়ার মত। কেবল আমিই জানি এক নাগাড়ে কোনকিছু করে যাওয়া আমার জন্য কতটা কঠিন, তা সে পড়ালেখা, ম্যুভি দেখা, আড্ডা দেয়া বা আমার অবসরের প্রিয় কাজ রান্না, যাই হোক না কেন। মাথায় এত অদ্ভুত সব চিন্তা ঘুরতে থাকে সবটা সময়। চাকুরি, স্কলারশিপ কোনটা নিয়ে আজ পর্যন্ত সিরিয়াস হওয়া হল না আর, কোন কালেই হওয়া সম্ভব নয় জানি। আমার সবচে' কাছের মানুষদের ভোগাই কারণে অকারণে-ওরা জানে আমার সাথে খাপ খাওয়ানো কতটা কষ্টকর... অবশ্য মনে মনে আমি এটাও বেশ বুঝে গেছি, ডিপ্রেশনকে আমি ভীষণ ভালবেসে ফেলেছি এতদিনে।
দেবদ্যুতি
লেখাতে যেমনটা বলেছি, ডিপ্রেশন আর মন খারাপের কিছুটা ভিন্ন ব্যাপার। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া নিজেকে ডিপ্রেশনের পেশেন্ট ভাবা ঠিক হবে না। জানি না আপনি কোনো মেডিক্যাল হেল্প নিয়েছেন কিনা, না নিয়ে থাকলে ভেবে দেখতে পারেন।
ডিপ্রেশনকে ভালোবেসে ফেলার কথা বলছেন- এতে একটু অবাক হলাম। দীর্ঘদিন ধরে যারা ডিপ্রেশনে ভুগছেন, তাদের কেউ ডিপ্রেশনকে ভালোবেসে ফেলেছে, এমন কথা শুনিনি বা পড়িনি। অবশ্যই আমার স্যাম্পলস্পেস সীমিত্, তাই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছি না। মোদ্দা কথা, বিশেষজ্ঞের মতামত ছাড়া নিজেকে ডিপ্রেসড ভাবতে শুরু করবেন না।
অলমিতি বিস্তারেণ
মেডিক্যাল ট্রিটমেন্টের ব্যাপারে আর দশটা জিনিসের চেয়েও বেশি অনীহা আমার, শরীর প্রায় ক্ষান্ত দিলে যখন অন্যেরা জোর করে নিয়ে যায় তখন ছাড়া ডাক্তারের কাছে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার নেই। এ কারণেই কখনও যাওয়া হয়নি এ ব্যাপারটা নিয়ে চিকিৎসা নিতে, অনেকবারই যেতে চেয়েছি কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি। আচ্ছা, একটা কথা জানতে চাওয়ার ছিল-তীব্র মন খারাপ কি ক্রনিক হয়? মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর? মানে আমার সমস্যা যদি মন খারাপের হয় তাহলে তা চলছে আজ নয় বছরেরও বেশি সময় ধরে। আমি কখনও টানা একটা দিন ভালো কাটাতে পারি না, প্রেসার নিতে পারি না কোনোকিছুর। প্রচণ্ড রকম এক সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি নিয়ে বেঁচে থাকি বারোটা মাস…
ডিপ্রেশন ভালোবেসে ফেলার ব্যাপারটা আলাদা। সেসব কিছুতে মন বেশি খারাপ লাগে, অস্থির আর অসহায় বোধ করি সবচে’ বেশি, কী এক অদ্ভুত কারণে সেই কাজগুলোই বারবার করতে থাকি আমি। এর সাথে আছে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন দু’মিনিটের জন্য অফিসের বাস মিস করা, গত বছর থেকে কেনা বইগুলো না পড়ে বিছানায় নিয়ে ঘুমানো আরও অনেক কিছু… বন্ধুরা বলে আমি নাকি ভালো কাউন্সেলর অথচ আমি জানি আমি নিজে থেকে সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিতে পারি না, নিজের কাছে আমি পৃথিবীর অসহায়তম মানুষ, প্রচণ্ড বিষণ্ন এক অস্তিত্ব।
দেবদ্যুতি
কে আসলেই ডিপ্রেশনে আক্রান্ত আর কার তীব্র মন খারাপ, কোনটা আদরে-শাসনে ঠিক হবার আর কোনটা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া ভালো হবে না এটা বোঝাটা বেশ কঠিন। পরিচিত একজন আত্মহত্যার হুমকি দিতো প্রায়ই, এখনো ভালোভাবেই বেঁচেবর্তে আছে। আরেকজন বেশ হাসিখুশি, দেখে বোঝবার উপায় নেই ভেতরে তার কতটা যন্ত্রণা, চলে গেলো না ফেরার দেশে।
কেউ একজন তার সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়েও কাজটা করতে পারছে না তার জন্যে সহানুভূতি থাকবে, কিন্তু নিতান্তই আলসেমি যারা করছে তাদের তো গুঁতিয়ে কাজ করানো ছাড়া উপায় নেই।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
আলসেমি মাপবেন কীভাবে? একজনকে কাজ না করতে দেখলে? এমনও কিন্তু হতে পারে যে, প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকা সত্বেও ডিপ্রেসড একজন মানুষ কাজটা শুরুই করতে পারছেন না। তার ইচ্ছার কমতি নেই, কিন্তু দৃশ্যমান কোনো প্রচেষ্টাও নেই।
বিশেষজ্ঞ ছাড়া অন্য কেউ চট করেই ডিপ্রেশন ধরে ফেলতে পারবেন, এমন সম্ভাবনা কিন্তু অনেক কম।
অলমিতি বিস্তারেণ
ডিপ্রেশন অনেক সময় রোগীকে মানসিকভাবে প্যারালাইজ করে দেয় - যা বাইরে থেকে অন্যের চোখে "নিতান্তই আলসেমি" মনে হুওয়ার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞ ছাড়া অন্য কারও এবিষয়ে চট করে জাজমেন্টাল হওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ - প্রকৃত রোগীর ক্ষেত্রে যা ক্ষতিকর হতে পারে।
****************************************
আমি যে প্রবল বিষন্নতায় ভুগছি এটা টের পাই আমার জীবনের সবচেয়ে সৌভাগ্যপূর্ণ সময়ে। বৃহস্পতি এখন আমার তুঙ্গে টাইপ অবস্থা, কিন্তু সবকিছু খালি হাহাকার মনে হতো। গাড়ি চালিয়ে কাজে যেতে যেতে মনে হতো হাইওয়ে র্যাম্প থেকে গাড়ি নিয়ে পড়ে যাই, স্লো মোশনে পড়তে পড়তে চোখের সামনে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু থাকলে ভেসে উঠবে তখন তাহলে। আমি এমনকি একবার একদম ফাস্ট ফিউরিয়াস স্টাইলের একটা এক্সিডেন্টও করেছি, এবং ভাঙ্গা গাড়ি থেকে নির্বিকার মুখে বের হয়ে এসেছি। কিছুই নাড়া দিতে পারত না আমাকে।
বিষন্নতার সাথে লড়াইটা আজীবনই আমাকে করে যেতে হবে। তবে নিজে অনেক পড়াশোনা করার ফলে অন্তত ধরতে পারি, কখন বিষন্নতার জালে জড়িয়ে যাচ্ছি, তাই আগেই জাল কাটাবার চেষ্টা করতে পারি। বিষন্নতা নিয়ে জীবন অনেকটা বিশাল সমুদ্রে খড়কুটো আঁকড়ে ভেসে থাকবার মতন। You just gotta keep swimming, swimming. Because if you stop you will just drown to bottom and never rise up for air.
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আপনার উদাহরণটাই কিন্তু স্টেরিওটাইপের এগেইন্সটে একটা দারুণ জবাব। পরিচিত অনেককেই বলতে শুনি যে, এতো ভালো চাকরি করে, এতো সুন্দর সংসার- এর মধ্যে আবার ডিপ্রেশন কী? ওইসব ভং। মানুষ বুঝতে চায় না যে, ডিপ্রেশন শুধু না পাওয়া থেকে আসে না। জেনেটিকস, কেমিক্যাল ইমব্যালেন্সের মতো মানুষের আয়ত্বের বাইরের ট্রিগার থেকেও হতে পারে।
ডিপ্রেশনের রিকভারিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যেটা, সাপোর্টিভ অ্যাটমসফিয়ার, সেটা আপনি পাচ্ছেন। এইদিক থেকে আপনি অনেক লাকি। আপনার মতো যারা ডিপ্রেশনকে অনেকটা বুঝতে পেরেছে, তাদের কিন্তু আরেকটু এগিয়ে আসা উচিত। যারা সিভিয়ারলি অ্যাটাকড, তাদেরকে সাহস দেওয়ার জন্য, পরামর্শ দেওয়ার জন্য। তাদেরকে কোপিং মেকানিজমের ব্যাপারেও বলতে পারেন।
অলমিতি বিস্তারেণ
সত্যি বলতে কি সাপোর্টিভ এটমস্ফিয়ার নিজেকে তৈরি করে নিতে হয়। নিজে ঢোল পিটিয়ে বলেছি যে আমি ডিপ্রেশনে ভুগছি, ব্রেইনে হরমোন/ কেমিক্যাল ইমব্যালান্স হয়ে গেছে, ওষুধ খেয়ে ঠিক করছি, ডাকতার দেখাচ্ছি, হেনা তেনা।আমি নিজে সিরিয়াসলি নিচ্ছি দেখে অন্যে ঘাটাইতে সাহস পায় না। কারণ অবভিয়াসলি তারা এই সমন্ধে মেডিক্যাল ইনফো আমার থেকে কম জানে। জ্ঞান দিতে আসলে উলটা দাবড়ানি দেয়া লাগে। দাবড়ানি দেয়াও কোপিং মেকানিজম এবং থেরাপির অংশ।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আমার মনে হয় কী, এইটা আসলে পার্সন টু পার্সন ভ্যারি করে। সবার স্ট্রেংথ একরকম থাকে না। আপনি নিশ্চিত জানতেন যে, আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষগুলি আপনাকে আপনার ডিপ্রেশন দিয়ে জাজ করবে না। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে এমন না। খুব আপনজনদের কাছে জাজড হওয়ার ভয়েই অনেকে ডিপ্রেশনের কথা প্রকাশ্যে বলতে সাহস পায় না। তাদের জন্য আশেপাশের মানুষদেরই সাপোর্টিভ এনভায়রনমেন্ট বানানোর দায়িত্ব নিতে হবে।
অলমিতি বিস্তারেণ
অতিমাত্রায় জরুরী একটা লেখা। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে এক সময় ডিপ্রেশনে ছিলাম, এর ভয়াবহতা শুধুমাত্র যে ভুগেছে সে-ই জানে।লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনি চাইলে আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, কিংবা কোনো পরামর্শ থাকলে এখানে জানাতে পারেন। যারা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি, তারা হয়তো সাহায্য পাবে।
অলমিতি বিস্তারেণ
এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলা চালিয়ে যেতে হবে। রোগ সনাক্ত করা বিশেষজ্ঞের কাজ। কিন্তু আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে যেন এই কথা বলা চলতে থাকে। আপনার বিষণ্ণ বন্ধুটির জন্যে সুযোগ খোলা রাখুন। তাকে তার কথা বলতে দিন। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। বিষণ্ণতাকে অবহেলা করে কেবল তার ক্ষতির পরিমাণই বাড়ানো সম্ভব।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
একজ্যাক্টলি।
সঠিক ডাক্তারের কাছে যেয়ে চিকিৎসা শুরু করাটা যেমন জরুরী, তেমনি আশেপাশের মানুষদের এগিয়ে আসাটাও জরুরী। একজন ডিপ্রেসড মানুষকে যেন লুকিয়ে না থাকতে হয়। এজন্যে যারা ডিপ্রেসড নন, তাদের এগিয়ে আসাটা জরুরী। তাদেরকে সবার আগে রোগের স্বরূপটা বুঝতে হবে, ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে হবে।
অলমিতি বিস্তারেণ
কতোদিন পরে লিখলে জাতীয় কথা বললাম না। যে দোষে আমি নিজে দোষী সেই ব্যাপারে আর অনুযোগ করি কীভাবে! তবে যা লিখেছো সেটা ভালো, গোছানো এসবের বাইরে মমতাপূর্ণ হয়েছে। গোটা লেখায় ডিপ্রেশনে আক্রান্তদের প্রতি লেখকের সমানুভূতি ফুটে উঠেছে। এমনটাই হবার কথা, এক কালে কবিতা লিখতে যে!
বাংলাদেশে psychologist এবং psychiatrist উভয়ের ঘাটতি আছে। প্রায় নেই বললেই চলে। খুব অল্প কয়েকজন psychiatrist-এর নাম শোনা যায়। এবং যাদের নাম শোনা যায় তাদের নামের সাথে কিছু ভয়াবহ গল্পও শোনা যায়। এই গল্পগুলির সবই বানোয়াট নয়। আমি নিজে এমন ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। এক নিকটাত্মীয়ের চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু দিন ধরে কাউকে খুঁজছি, কিন্তু ভরসা করার মতো কোন নাম জানতে পারিনি। এদেশে counsellor নেই এবং এই চর্চা নেই বলে পীর-ফকির-সাধু-সন্ত-পাগল ইত্যাদির কাছে লোকজন যায়। ফসলের চাষ করা না হলে ক্ষেত আগাছায় ভরে উঠবে।
ডিপ্রেশন ভাইরাস, ব্যাক্টিরিয়া, ফাঙ্গাস বাহিত রোগ না। কিন্তু দীর্ঘকাল ডিপ্রেশনের রোগীর সাথে থাকতে থাকতে তার সাথের জনের মনের ওপর যে চাপ পড়বে না এমনটা কেউ বলতে পারে না। বরং চাপ পড়াটাই স্বাভাবিক। এভাবে অবহেলায় অজ্ঞতায় অক্ষমতায় ডিপ্রেশন আপাত সুস্থ সবল মানুষগুলোকে গ্রাস করতে থাকবে।
ডিপ্রেশনের ফল হিসেবে মাদকাসক্তি ঘটা খুব স্বাভাবিক। দেশে মাদকাসক্তের হার ভয়াবহ হারে বাড়ার পরও যদি এর অন্যতম একটি কারণের ব্যাপারে আমরা উদাসীন থাকি তাহলে হাজারো পুলিশী অভিযান চালিয়েও মাদক ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমি এবং আমার গামাই এক সংগে ডিপ্রেশনে পড়েছিলাম। আমাকে সাপোর্ট দিতে গিয়ে সেও মানসিক ভারাক্রান্ত হয়ে গেছিল।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
পাণ্ডবদা, আপনার বিশদ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আমার বার দুয়েক সাইকিয়াট্রিস্টের চেম্বারে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। এবং সেই অভিজ্ঞতা অত্যন্ত বিচিত্র। শুধু ডিপ্রেশন না, কত ধরনের মানসিক সমস্যা নিয়ে মানুষ আসে। সব বয়সের, সব শ্রেনীর মানুষ। আমি সে সময় ভেবেছিলাম একটা ব্লগ লিখবো এই অভিজ্ঞতা নিয়ে। যথারীতি আলস্যের কারণে আর লেখা হয়নি। এখন তো আর সব ডিটেইলসও মনে নেই।
তবে একটা অবজারভেশন এখনো মনে আছে- সম্ভবত খুব ভীতিকর মনে হয়েছিলো দেখেই। সাইকিয়াট্রিস্টের চেম্বারে আমি দুইবারই বেশ কিছু বালক/বালিকা, কিশোর/কিশোরী দেখেছি। ইন্টারেস্টিংলি, তাদের অধিকাংশের সমস্যা কাছাকাছিই, এবং তার প্রধান উৎস কম্পিউটার, মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য গেজেট। অভিভাবকেরা নিজেদের সময়ের অভাবে বাচ্চাকে গেজেট দিয়ে ভুলিয়ে রাখতে চান। বাচ্চারা যা চায়,তাই দেন। তারা লক্ষ্যও করেন না যে, তাদের অজান্তেই তাদের ছেলে-মেয়েরা অসম্ভবরকমের অন্তর্মুখী, একরোখা, অসামাজিক হয়ে যাচ্ছে। অনেকে রীতিমতো তাদের ভাইবোনকে পর্যন্ত সহ্য করতে পারে না। আমি জানি না এই অবজারভেশনটা কতোজনের হয়েছে, কিংবা কয়জন জানেন যে এটা আদৌ একটা সমস্যা! আমাদের দেশের মানসিক স্বাস্থ্য সেক্টরে অনেক অনেক বেশি কাজ করার আছে। আশা করি কোনো একদিন শুরু হবে।
অলমিতি বিস্তারেণ
বাংলাদেশে যে মনোবিজ্ঞানী এবং মনোচিকিৎসকের সংখ্যা খবই অপ্রতুল তা সত্য। পেশাদার কাউন্সেলরের সংখ্যা আরোও কম। তবে একেবারেই যে নেই তা নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি, এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি নামে দুটি বিভাগ রয়েছে, যেখান থেকে পেশাদার ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, এডুকেশনাল সাইকোলজিস্ট এবং কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট তৈরি হচ্ছে। তবে সংখ্যাটা খুব কম। সব মিলিয়ে বড়জোর ৫০ জন।
ডিপ্রেশন নিয়ে লেখাটা চমৎকার হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে ডিপ্রেশন সহ যেকোন মানসিক সেবা পাবার কিছু ঠিকানা এই লেখায় আছে।
ভাল লেখা। দামী লেখা। ভিডিওটি অসাধারণ।
প্রায় দেড় দশক আগে যখন বিষণ্ণতা নিয়ে কাজ করতাম তখন এম-আর এন এ ডিফারেন্সিয়াল ডিসপ্লে পদ্ধতি গবেষণার নূতন দিগন্ত খুলতে শুরু করেছে। আমাদের গবেষণাগারে একটা সম্ভাবনার খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল যে পিটিএক্স-৩ জিন বিষণ্ণতার সাথে যুক্ত থাকতে পারে। এই জিনটির পরিচিতি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরী কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে। আমাদের মনে হয়েছিল বিষণ্ণতা সংক্রান্ত গবেষণায় একটা নূতন দিগন্ত খুলতে যাচ্ছে। সেই সময়ই আমার বস অবসর নিয়ে নেওয়ায় সেই গবেষণাগারে আমার নটেগাছ মুড়িয়ে গেল। ঐ কাজে আর ফেরা হয়নি। পরে অনেকদিন এই ধারায় ততটা অগ্রসরতা চোখে পড়েনি। হালে আবার পিটিএক্স-৩ জিন-এর মানসিক অসুস্থতার সাথে যুক্ত থাকার সূত্ররা উঠে আসতে শুরু করেছে। যাই হোক, বলবার কথা এইটাই যে বিষণ্ণতা একটি অসুস্থতা যার চিকিৎসা নিয়ে নানাভাবে কাজ চলছে এবং এই অসুস্থতার উপশমের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ আবিষ্কারের নূতন দিগন্তরা ক্রমাগত উন্মোচিত হয়ে চলেছে।
মানুষের উপরে পরিপার্শ্বর প্রভাবে তার মগজে যে সাড়া জাগে তার বড় একটা অংশ জুড়ে থাকে নানারকম জৈবরাসায়নিকের এদিক-ওদিক চলাচল। কাউন্সেলিং অসুস্থ মানুষটির মনোজগতে যে আবেদন রাখে, তাতে হয়ত নিরাময়ের জন্য প্রয়োজনীয় চলাচলগুলি ঘটতে সাহায্য হয়। বিষণ্ণতার চিকিৎসায় পেশাদার মানুষের সাহায্য নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। ওষুধ এবং কাউন্সেলিং দুই-ই জরুরী।
বিষণ্ণতা নিয়ে গবেষণার সময় আমার ওয়েবপাতায় আমার কাজের পটভূমি হিসাবে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত মানুষের মানসিক অবস্থা নিয়ে একটা কবিতা লিখে রেখেছিলাম। এই পোস্টের মন্তব্য লিখতে বসে সেটির বাংলা অনুবাদটা করে নিলাম।
বিষণ্ণতা
এখানে ওড়াউড়ি নেই পাখীর ডানায়
প্রণয় সংকল্পে নেয় হত্যার প্রস্তুতি
আয়নারা ক্রমাগত ছলনা বিছায়
আমার মনন জুড়ে নিঃসাড় অনুভূতি।।
মিষ্টি মধুর ঘুম ছেড়েছে আমায়
নিঃশব্দ চিৎকারে চরাচর ঘেরা
অতলান্ত কূপের নিঃসীম তমসায়
পাল তুলবেনা আর কোনদিন স্বপ্নেরা ।।
এই প্রহসন তবে কেন ধরে রাখা
ধারালো ছুরিতে নিই চুম্বন-সুখ
ফুরাই নৃশংস দিন অভিশাপমাখা
অন্তহীন জীবনের মুক্তি আসুক।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
দাদা, অনেক ভাল লাগল কবিতাটা---
শুভেচ্ছা নিরন্তর
অনেক ধন্যবাদ, অনিকেত!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
চমৎকার। আপনার মন্তব্যটা পড়ে খুব ভালো লাগলো।
আমার তো আসলে অ্যাকাডেমিক কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড নেই এই ফিল্ডে। নিজের আগ্রহে ইন্টারনেট ঘেঁটে যতোটা পারা যায়, পড়ি, জানি। কিন্তু এভাবে আসলে অনেক কিছুই পার্শিয়ালি জানা হয়। খুব ভাল হয় যদি টেকনিক্যাল ডিটেইলগুলি নিয়ে আপনি কোনো লেখা দেন।
পড়া এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
অলমিতি বিস্তারেণ
এটা পড়লাম সেদিন। কথাটা এতো সত্য সেটা নিজের জীবন দিয়ে না বুঝলে হয়তো ঐভাবে অনুভব করতাম না।
''It’s the same with people who say, ‘Whatever doesn’t kill you makes you stronger.’ Even people who say this must realize that the exact opposite is true. What doesn’t kill you maims you, cripples you, leaves you weak, makes you whiny and full of yourself at the same time. The more pain, the more pompous you get. Whatever doesn’t kill you makes you incredibly annoying.''
নিজেকে নিজের কাছেই অ্যানোয়িং লাগে মাঝে মাঝে, আবার একই সাথে এটাও মনে হয়- সবাইকে বিরক্ত করছি না তো? ডিপ্রেশন এমনই এক ব্যাপার যেটা কাউকে মনে হয় বলে বোঝানো যায় না। নিজেকেই নিজের সাথে ডিল করতে হয়। তবে কেউ সাপোর্টিভ হলে, ডিপ্রেসড মানুষটার কষ্টটা তার মতন করে অনুভব না করলেও পুরো ব্যাপারটা ডিল করা কিঞ্চিত সহজ হয় হয়তো।
এই লেখা পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিল আমার মনের কথাগুলোই আপনি তুলে এনেছেন। ডিপ্রেশন থেকে বাঁচার কোন উপায় আছে নাকি জানি না। তবে ইচ্ছাশক্তি অনেক বড় একটা ব্যাপার, আর তার জন্য সবচাইতে বেশি দরকার আশে পাশের মানুষের সাহায্য। খুব কম ভাগ্যবান মানুষই মনে হয় এই সাহায্য পায়। প্রচন্ড ডিপ্রেসড হয়ে যখন আক্ষরিক অর্থেই হাত-পা নাড়ানোর অক্ষমতা অনুভব করেছি তখনো একবারও মনে হয় নি নিজেকে আঘাত করি কিংবা আত্মহত্যা করি। কিন্তু কাছ থেকে ২ জন মানুষকে দেখেছি যারা এটা ডিল করতে না পেরে এমন কিছু করলেও করে বসতে পারতো। শেষ পর্যন্ত তারাও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যদিও এই ঘুরে দাঁড়ানো আসলে কতটা ফলপ্রসু জানি না। ডিপ্রেশনের সবচাইতে খারাপ দিকটা হচ্ছে এটার রিল্যাপস। এই রিল্যাপসটা ডিল করতে পারাটা সবচাইতে কঠিন। আমি এইখানে এসে হোঁচট খাচ্ছি বার বার।
ডিপ্রেশন এর এই ব্যাপারটা আসলে সাগরের ঢেউ এর মতন মনে হয় আমার। এটা মনে হয় সারাক্ষণই থাকে। খালি যখন তীরে এসে আছড়ে পড়ে সেই সময় বুকের মধ্যে সুঁই গেঁথে দেওয়ার মতন একটা ব্যথা হয়, এরপর এর ইন্টেনসিটি ধীরে ধীরে কমে যায়। এরপর আরেকটা ঢেউ আছড়ে পড়ে। এই দুই ঢেউ এর মাঝের সময়টা মনে হয় 'বড্ড ভালো আছি হয়তো!'
প্রচন্ড কষ্টে (সেটা আমার নিজের ডিপ্রেশন থেকে কিংবা যাদের আমি ভালোবাসি তাদের ডিপ্রেসন দেখেও) নিজেকে কখনো আঘাত করতে ইচ্ছা হয় নি হয়তো, তবে এই মানসিক ব্যথার যে প্রচন্ড ফিজিওলজিকাল আউটপুট আছে সেটাও অস্বীকার করা যাবে না। আমি এমনেই হালকা পাতলা, এই ডিপ্রেশনের ফাঁদে পড়ে আমার ফট করে ওজন কমে যায় ৭ কেজি। আমার জন্য এটা হিউজ ওয়েট লস ছিল। আমি আক্ষরিক অর্থেই কিছু খেতে পারতাম না, কিন্তু প্রচন্ড ক্ষুধায় ঘুমাতেও পারতাম না।
During that time what scared me most was I could feel my body was deteriorating and I could not help myself. I think I will never forget that scary-awkward feeling of chest pain that originated from the mental pain. I was trying my best to make myself believe- above all my life is the only thing that I have to embrace first, ceteris paribus! That was the day (or night) I actually started eating again. I spent my most of earnings just to eat whatever I felt savory. I don’t know how it works for others, but for me it worked well! I gained my lost weight within 6 months! But there were other things, like supports and counseling from some very nice people. However, it’s not the end. It comes and goes, like the seasons, I guess.
ঐ সময়ে জীবনের সবচাইতে ভালো সময়টুকু ছিল মনে হয় ঘুমের মধ্যকার সময়টুকু। ঘুম ভাঙ্গা মাত্র হু হু করে ডিপ্রেশন এসে ভর করতো। আমার মনে হয় আমি অনেক লাকি, আমি হয়তো হস্পিটালাইজড-ই হয়ে যেতাম যদি না আমার খুব প্রিয় কিছু মানুষ আমাকে কাউনসিলিং না করতো। এদের কাছে আমি চির ঋনী। ঐ মুহূর্তে এটার খুব দরকার ছিল। সাথে আমার নিজের ইচ্ছাশক্তিও ছিল এটা থেকে বের হয়ে আসতে। আমি নিজের মনের সাথে প্রচন্ড যুদ্ধ করেছি, একটা সময়ে নিজেই নিজেকে কাউইন্সিলিং করেছি, নিজেকে টাস্ক দিয়েছি- এটা করলে ওটা হবে। সম্ভবত এই কারণেই আমি ভয়ংকর কিছু করে বসি নি।
কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে সেই ঢেউ এর মতন! যতই মনে হয় বের হয়েছি আসলে কী যেন হঠাত চেপে ধরে। জানি না আসলে এই ডিপ্রেশনের কোন স্থায়ী সমাধান আছে নাকি। তবে আমি আশে পাশে কারো মধ্যে ডিপ্রেশন দেখলে এটুকু চেষ্টা করি তাদের সাথে এম্প্যাথি দেখাতে। আমার প্রায়ই নিজেকে খুব সেলফিস মনে হয়। মনে হয় নিজের এই হতাশাটাকে আসলে এতো বড় করে না দেখি, সবাই-ই কম বেশি এই বিষন্নতায় আছে। তাদের কথা চিন্তা করলে, তাদের সাথে সময় কাটালে নিজের কিছু জিনিস মনে হয় পর্দার আড়ালে চলে যায়, সেটা এক ধরণের শান্তি না দিলেও স্বস্তি দেয়। আর কাউকে নিজের একই প্রব্লেমে দেখে এম্প্যাথি দেখাতে গেলে নিজের কিছুটা কনফিডেন্টও গ্রো করে হয়তো, অপরপক্ষও হয়তো ব্যাপারটা আরেকটু ভিন্ন আঙ্গিকে দেখতে শুরু করে।
আর সিম্প্যাথি জিনিস্টা মারাত্মক একটা বাজে জিনিস। একজন ডিপ্রেসড ব্যক্তি নিজেকে যখন সামলাতে পারছে না কিংবা কিছুটা হলেও সামলে নিয়েছে, তখন এইসব সিম্প্যাথাটিক কথা বার্তা প্রচন্ড আঘাত করে বলে আমার মনে হয়। মনে হয় যেই জায়গাটা থেকে অনেক দূর উঠে আসা গেছে সেইখানেই আবার কেউ টেনে নিচ্ছে।
এই ভিডিওটা দেখছিলাম সেদিন, শেয়ার করলাম।
https://www.youtube.com/watch?v=1Evwgu369Jw
আর এইটা নিয়ে লেখার জন্য উত্তম জাঝা!
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
তারানা আপনার অনেক উপলব্ধির সাথে আমার উপলব্ধি মিলে গেল--হয়ত একই ট্রেনের যাত্রী বলেই।
বেশি কিছু না বলে শুধু বলে যাই---লড়াই চলতে থাকুক!
শুভেচ্ছা নিরন্তর!
আপনার কমেন্টটা না পড়েই এইখানে কমেন্ট করেছিলাম। পথের পথিক তাহলে একলা নহে।
লড়াই করবো নাকি লড়াই উপভোগ করবো?
বলার অনেক কিছুই আছে, কিন্তু ডিপ্রেশন নিয়ে লিখতে বসলে আরো খারাপ লাগতে শুরু করে। তাই শুধু এটাই বলি- ভালো থাকুক।
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
বিশদ মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ তারানা।
আপনাদের এই অভিজ্ঞতাগুলি অন্যদের জন্য দরকারি, গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ডিপ্রেসড মানুষের থেকেই শুনেছি, তারা যখন বুঝতে পারেন যে তারা একা নন, আরো বহু মানুষ তাদের মতোই কষ্ট পান, তারা একধরনের মানসিক শক্তি পান।
আমার যে বন্ধুর কথা লেখাতে বলেছি, সে একবার আমাকে বলেছিলো যে ডিপ্রেসড স্টেটে তার সবচে খারাপ লাগার সময় ছিলো সকাল ঘুম ভেঙ্গে উঠার সময়টা। তার শুধুই মনে হতো, আরেকটা দিন আমাকে বেঁচে থাকতে হবে। কেন ঘুমের মাঝে মারা গেলাম না। অভিজ্ঞতাটা শুনে আমার ভয়াবহ মন খারাপ হয়েছিলো।
ডিপ্রেশনের বিরুদ্ধে আপনার যুদ্ধ জারি থাকুক। শুভকামনা
অলমিতি বিস্তারেণ
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
এটা কমন পয়েন্ট। বেশিরভাগ সময়েই হয়, হপ্তায় অন্তত পাঁচদিন।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
খুবই জরুরী লেখা।
নিজে বিষণ্ণয় আক্রান্ত হবার আগে বিষন্নতাগ্রস্থ মানুষকে ব্যাপক হেলাফেলা করছি। সেই জন্য অপরাধবোধে ভুগি।
আমার মনে হয় বিষণ্ণতা নিজেই রোগ না বরং গভীরতর অন্য কোনো সমস্যার উপসর্গ। ঠিক যেমন জ্বর একটা উপসর্গ। বিষণ্ণতার নানাবিধ কারণ থাকতে পারে। এই কারণে একজন যে পদ্ধতিতে বিষণ্ণতার সাথে লড়তে পারেন, অন্য আরেকজন হয়তো সেই একই পদ্ধতি অনুসরণ করে ফল পান না।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ডিপ্রেশন বোধহয় ঠিক উপসর্গ না। আমি আসলে এক্সপার্ট না- কাজেই আমার কথা ল্যাজমুড়া বাদ দিয়ে নেওয়াই ভালো।
তবে একটা জিনিস জানি- ডিপ্রেশনকে অনেকেই ডিজিজ না বলে, ডিজঅর্ডার বলে। ডেফিনিশন ঘটিত টেকনিক্যাল একটা প্যাঁচ আছে কী যেন।
রোগ হোক বা উপসর্গ হোক, এটা খুবই কমন। আর এই কারণেই জনসচেতনতা বাড়ানোর আসলে বিকল্প নাই। ব্লগ-ইন্টারনেটে আর কয়জনের অ্যাকসেস আছে। সবার কাছে পৌছাতে হলে নিজেদেরকেই "আপনি আচরি" জগতকে শিখাতে হবে।
অলমিতি বিস্তারেণ
আমার জীবনে সবচেয়ে মোক্ষম সময়ে মোক্ষম লেখা। ধন্যবাদ।
একজন ভাল কাউন্সিলরের রেফারেন্স দিতে পারবেন? আমার খুব দরকার
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
একটু বিপদে ফেললেন। আমি তো জানি না ভালো কাউন্সেলর কে আছেন... মেহতাব খানমের নাম তো অনেক শুনেছি। উনি হয়তো ভালো- খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। সাইকিয়াট্রিস্ট হিসাবে একজনের কথা শুনেছিলাম, একজন বয়স্ক ভদ্রমহিলা, ল্যাব এইডে বসতেন। নামটা ঠিক মনে নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।
দুঃখিত আপনাকে তেমন সাহায্য করতে পারলাম না।
অলমিতি বিস্তারেণ
আমি নিজের ডিপ্রেশনের শিকার। প্রায় ৩ বছরের বেশি সময় ধরে এই জিনিসটার সাথে লড়াই চলছিল আমার। কেউ বুঝতেও পারে নি যে কি পরিমাণ কষ্টের ভিতর আমি ছিলাম। আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলাম কয়েকবার। কিন্তু কয়েকদিন আগে আমার এক বন্ধু চাপাচাপি শুরু করে আমার কি হয়েছে বলার জন্য। তার পীড়াপীড়িতে আমি সব খুলে বলি। সে একবার আমাকে জাজ করার চেষ্টা করে নি। একবারও বলে নি অন্য সবার মত মানিয়ে নিতে। সে শুধু সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছিল। শেষে বলেছিল "তো লাইফকে আরেকটা চান্স দে।" শুধু এই কথাটার জন্যই আমার মনে পরিবর্তন আসে। তাই এখন যারা আমার পূর্বাবৎ অবস্থায় আছেন তাদেরকে বলব শুধু আপনার মনে কথাগুলা অন্য লোকার সাথে শেয়ার করুন। পরিচিত-অপরিচিত যেই হোক শুধু একবার শেয়ার করুন। Truse me, it helps.
বারো বছর বয়স থেকেই বিষন্নতায় ভুগি। কখনো কারণে, কখনো অকারনে। কারো সাথে শেয়ার করলে কমে। আবার নিজেই বেড়ে যায় মাঝে মধ্যে।
এখন ডিপ্রেশন নিয়েই চলতে শিখে গেছি।
আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ শুভেন্দু!
বিশ্বাস করুন, আপনি যে কাজটা করেছেন, সেটা অত্যন্ত সাহসের কাজ। তীব্র ডিপ্রেশনের মুখে খুব কম মানুষই জীবনকে আরেকটা সুযোগ দেওয়ার কথা ভেবে দেখতে পারে। আপনি সেটা করে দেখিয়েছেন। অসংখ্য অভিনন্দন আপনাকে, এই নতুন জীবনে।
অলমিতি বিস্তারেণ
ধন্যবাদ।
সচলে এত মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে অথবা ভাবছে যে সে ভুগছে, বুঝতে পারিনি।
লড়াই চলতে থাকুক এই কামনা করছি।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
লেখার উদ্দেশ্য এইটাই ছিলো- টু ব্রেক দ্য সাইলেন্স। আপনি শুধু একটু ভেবে দেখেন, এই ছোটো স্যাম্পলস্পেসেই কতো মানুষ, ডিপ্রেশনে ভুগেছেন, ভুগছেন। কেউ মাইল্ড, কেউ সিভিয়ার। এবার শুধু ভাবুন- আপনার চেনা মানুষের স্যাম্পলের মধ্যে সে সংখ্যাটা কতো হতে পারে, যাদের হয়তো ডায়গনোসিসই হয় নি। সচেতনতা দরকার এজন্যেই।
অলমিতি বিস্তারেণ
২০১২র দিকে একটা ব্যক্তিগত ব্যার্থতার কারনে ভীষণ ডিপ্রেসড হয়ে পড়ি আমি। তখন এ বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করি। আমি সহধর্মিনী আমাকে বলেন, জাস্ট স্ন্যাপ আউট অফ ইট। অথচ চাইলেই সেটা পারা যায় না। ডাক্তার বিউপ্রোপায়ন খেতে বলে। তাতে বেশ ভালো বোধ করি। কিন্তু ১৫ দিনের মাথায় প্যানিক এটাক হয় সাইড এফেক্ট হিসেবে। আরো পনের দিন খাবার পর দ্বিতীয় প্যানিক এটাক হতে পারে বুঝতে পেরে বন্ধ করি। পাশাপাশি মাইন্ডফুলনেস এক্সারসাইজ করে খানিকটা লাভ হয়। দীর্ঘদিন ভোগার পর আস্তে আস্তে সুস্থ হতে পারি আমি।
২০১৪তে যখন আমার স্ত্রীর ডিপ্রেশন শুরু হয় তখন আমি প্যাটার্ণটা ধরতে পারি শুরুতেই এবং দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাবার পরামর্শ দেই। ওষুধ এবং সাইকোলজিস্টের সাথে কনসালটেশনের পর ধীরে ধীরে সে ভালো হয়।
ঔষুধ এবং মেডিটেশন - দুইই দরকার এটা মনে হয়েছে আমার অভিজ্ঞতা থেকে। এ বিষয়ের বিভিন্ন অ্যাসপেক্ট নিয়ে আরো লেখা চাই।
মুর্শেদ ভাই, অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভাবীর মতো অনেকের মনেই এই ভুল ধারণাটা থাকে যে, ডিপ্রেশন শুধু মনের জোর দিয়েই মোকাবেলা করা যায়। শুধু চাইলেই কেউ ডিপ্রেশন থেকে বের হয়ে আসতে পারে না। প্রোপার সাপোর্ট সিস্টেম, চিকিৎসা, কাউন্সেলিং সবই দরকার।
আপনি ভাগ্যবান যে আমেরিকাতে থাকার কারণে অনেক বেশি স্কিলড হেল্প পেয়েছেন। দেশে যারা আছেন ডিপ্রেশনে ভুগছেন, তারা অনেকেই জানিয়েছেন যে, দেশে ভালো কাউন্সেলর এবং সাইকিয়াট্রিস্টের অভাব আছে। সাইকিয়াট্রিস্টরা অধিকাংশই শুধু গাদা গাদা অষুধ ধরিয়ে দেন, কাউন্সেলিং এ মনোযোগ কম থাকে।
এই লেখার ফীডব্যাক দেখে মনে হচ্ছে আরো লেখা আসা উচিত। ব্যাপারটা খুব সিরিয়াস- আশা করবো আরো অনেকেই লিখতে শুরু করবেন তাদের অভিজ্ঞতা কিংবা চিন্তাগুলি নিয়ে। সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই হয়তো আমরা একটা জনসচেতনতা তৈরি করতে পারবো।
অলমিতি বিস্তারেণ
খুব মন দিয়ে পুরো লেখাটা পড়লাম।বারবার একটা চিন্তাই মাথায় আসছিলো আমি ডিপ্রেসড্ কিনা।আমার ভোরে বিছানা ছাড়তে অনেক কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় --- দূর এসব কিছু ছেড়ে ছুড়ে মরে গেলেই ভালো হয়।তবে কর্মস্থল ভালোবাসি, ভালোবাসি বাচ্চাদের, ভালোবাসি সংসার, বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতেও মন্দ লাগেনা। এতসব কিছুর পরেও কখনও কখনও মনে হয় আমি আসলে একা।এটা কি ডিপ্রেশন?
Jaraahzabin
Jaraahzabin,
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনি সত্যিকারের অর্থেই ক্লিনিকালি ডিপ্রেসড কিনা, সেটা নিশ্চিত করতে পারবেন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার (psychologist/psychiatrist).
অনলাইনে কিছু ভালো রিসোর্স আছে- অনেকটা সেলফ ডায়গনোসিস টুল টাইপ। ওইগুলি ট্রাই করে দেখতে পারেন। শতভাগ নিশ্চয়তা না দিলেও, অনেকটা আইডিয়া পাবেন। আমি কিছু লিঙ্ক দিলাম, ট্রাই করে দেখতে পারেন-
১) http://depressionhurts.ca/en/checklist/
২) http://www.agencymeddirectors.wa.gov/Files/depressionform.pdf
৩) https://www.save.org/index.cfm?fuseaction=home.viewPage&page_id=70266B3E-DBB1-7794-E3F80C591EB875F5&r=1&CFID=1339536&CFTOKEN=3ebb62cf61ea4bc9-1C10C744-5056-8A47-CEAFD211D4D1431E
অলমিতি বিস্তারেণ
অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে. অনেক কিছু জানতে পারলাম সবার মন্তব্য পড়ে. এদেশে ভালো কাউন্সেলর এবং সাইকিয়াট্রিস্টের অভাব আছে একথা আসলেই সত্য. আমি আমার ডিপ্রেশন এর জন্য (চট্রগ্রামে)একজন সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে যাই. তিনি আমাকে মিস্টি মিস্টি কথা দুএকটি শুনিয়ে দিয়েছিলেন এবং কিছু মেডিসিন ধরিয়ে দিলেন. তাছাড়া উনি যেসব কথা বলেছিলেন সেগুলো আমি নিজেও জানতাম. আমার খুব কাছের একজন ফ্রেন্ড যখন ডিপ্রেশনে থাকতো তাকে আমি যেসব কথা বলেছিলাম তিনিও আমাকে ওসব ই বললেন. এরপর উনি কাউন্সেলিং এর জন্য অন্য একজন কাউন্সেলারের নাম সাজেস্ট করেছিলেন যাকে আমি এফোর্ড করতে পারিনি. আমি আর আমার ফ্রেন্ডটি এখনো ডিপ্রেশনে আক্রান্ত. কি করবো বুঝতে পারছিনা.
চট্টগ্রামের মতো এতো বড় শহরে মাত্র এক-দুজন সাইকিয়াট্রিস্ট/কাউন্সেলার থাকবে, এমনটা হওয়ার চান্স কম। দুঃখিত আমি আপনাকে খুব একটা সাহা্য্য করতে পারছি না স্পেসিফিক ইনফরমেশনের অভাবে।
আপনাদের ভালো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। পরিচিত মানুষদের জানান সমস্যার ব্যাপারে, তারা হয়তো সাইকিয়াট্রিস্টের ব্যাপারে আপনাদের সাহায্য করতে পারবেন।
অলমিতি বিস্তারেণ
ব্যক্তিগত জীবনে একটা বিশাল ওলট -পালট হবার পর অনেক কষ্ট করে নিজেকে হতাশার বিশাল গর্ত থেকে বের করে এনেছিলাম। বেশকিছুদিন আগে, মাথার উপর একটা ডেডলাইন ঝুলছে এমন সময় হঠাৎ করে মনে হল – এই কাজটা না করলে কি হয়? আর পাঁচটা মিনিট সময় দিলে যে কাজটা শেষ হয়ে যেত দুই ঘন্টায়ও সেই কাজটা শেষ করতে পারলামনা। বসের ঝাড়ি খেয়ে নিজের টেবিলে এসেও কিছু মনে হচ্ছিল না, শূন্য একটা অনুভূতি। অনেক সকালেই ঘুম থেকে উঠে মনে হয় আজ অফিস গিয়ে কি করব? দায়িত্ববান কর্মীর চরিত্রে অভিনয়? করে কি লাভ? আমি না থাকলেই কি ক্ষতি?
সমানুভূতি ধারনাটার সাথে আগে পরিচয় ছিলনা। কিন্তু খুব খারাপ লাগলে আমার কাছের এক বন্ধুকে অনেকবার বলেছি –তুই শুধু আমার পাশে চুপ করে কিছুক্ষণ বসে থাক।
আপনার এই লেখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আর অনেক বার এই লেখাটা পড়তে আসব।
আমি তোমাদের কেউ নই -> আতোকেন
চমৎকার লিখেছো।
কঠিনভাবে আক্রান্ত হয়েছি। লম্বা সময় ট্রিটমেন্ট হয়েছে একবার!
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আপনার অর্জিত অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা (যদি সম্ভব হয়) এখানে শেয়ার করতে পারেন। যারা সাফার করছেন এখনো, তারা জানুক কীভাবে সামাল দিতে হয়। এবং এই আশ্বাসটাও পাক যে, কোথাও আশা আছে।
অলমিতি বিস্তারেণ
ঔষধ ছিলো। পরিচিত ডাক্তার, বিশাল হেল্প করেছেন। টাকা ছাড়া দিনের পর দিন সময় দিয়েছেন। আমার দুই বাচ্চার বড় ভূমিকা ছিলো। মা-বাবা বিস্তর সহ্য করেছেন। একটা মাঝারিমানের হিন্দি সিনেমার ভালো ভূমিকা ছিলো। কর্পোরেট নাম। আমাদের কথাকলি, সচলায়তন। তুলি অনেক হেল্প করেছে। ও চাইলে পাগল ঘোষণা দিয়ে দিতে পারতো, দেয়নি। আর আমার বন্ধুরা
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
খুবই দরকারী লেখা। কয়েক জায়াগায় পুরান আমিকে চিনতে পারলাম, কিছু বর্তমান আমির সাথে মিলে গেল দেখে ভয় পেলাম। মাত্রা কম, কিন্তু এগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে।
খুব সুন্দর করে লিখেছিস, দেশে আসলে ট্রিট পাবি যা।
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
থেংকু কম্রেড। আপনাদের ভালো লাগাই আগামীদিনের পাথেয়
তবে সিরিয়াসলি, যদি ফীল করেন আপনি ডিপ্রেসড হয়ে যাচ্ছেন কাউনেসলিং এর সাহায্য নিতে পারেন। আমার ধারণা মাইল্ড স্টেজে শুধু কাউনেসেলিং অনেক বেশী সাহায্য করবে আপনাকে।
খাওয়ার ব্যাপারটা মাথায় থাকলো
অলমিতি বিস্তারেণ
সবজান্তা,
আমার একজন আত্মীয় লেখাটা পড়ে জানিয়েছেন।
অর্থাৎ সমানুভুতি এবং সহমর্মিতা শব্দদ্বয় সমার্থক কিনা জানতে চাইছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে সমার্থক। আপনার মতামত কি?
একটু কনফিউজড হয়ে গেলাম মুর্শেদ ভাই।
ইন্টারনেট থেকে সহমর্মিতার ইংরেজি sympathy আর empathy দুই-ই পেলাম। তবে আমার মনে হয় সহমর্মী যদি এম্প্যাথি নাও হয়, কাছাকাছিই কিছু একটা হবে। সম্ভবত Sympathy -> সমব্যথা , Empathy -> সহমর্মিতা হতে পারে। তবে আমি এম্প্যাথির বাংলা হিসেবে সমানুভূতিই শুনেছি বিভিন্ন সোর্স থেকে।
পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য আপনার আত্মীয়কে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাবেন।
অলমিতি বিস্তারেণ
-
****************************************
খুব সুন্দর এবং সহজ করে ডিপ্রেশন নিয়ে লিখেছেন। লেখাটা পড়ে অনেকেরই ডিপ্রেশন নিয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরী হবে এগে এই বিষয়টিকে নিয়ে যে ভাবে তাচ্ছিল্য করতেন তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন। আপনাকে সাধুবাদ না জানিয়ে উপায় নেই।
ডিপ্রেশন সাধারণতঃ দুই ধরণের হয়ে থাকে মাইল্ড এবং মেজর। কেন হয়, সে সম্পর্কে তো বলেছেনই।
তবে ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠার জন্য একটা পদ্ধতি বেশ কার্যকর। কেউ চাইলেই চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
যে কোন খারাপ পরিস্থিতিতে আমাদের মাথায় নানান ধরণের চিন্তা আসে। এগুলোকে আমরা বলি অটোমেটিক থট। এগুলো সাধারনতঃ নেতিবাচক হয়। যেমনঃ কোন কাজে অকৃতকার্য হলে, আমরা ভাবি-”আমাকে দিয়ে আর কিছু হবে না।” “অনেক তো চেষ্টা করলাম, আর কি হবে এসব করে?” এই চিন্তাগুলো আমাদের মুড/ফিলিংকে নিয়ন্ত্রণ করে। তখন তিন ধরণের ফিলিং হয়, ডিপ্রেশন,(যত রকমের দুঃখবোধ আছে) anxiety,(বুক ধড়ফড় করা, অস্থিরতা, কোন কাজ স্থির ভাবে করতে না পারা, নানা ধরণের শারীরিক সমস্যা) anger. আর এইসব ফিলিং আমাদের কাজকর্ম/আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। কেউ কেউ বিছানা ছেড়েই উঠতে পারেননা। কেউ কারো সাথে মিশতে পারেন না। নানান ধরণের আচরণ আমরা করি।
এই অটোমেটিক থট বা নেতিবাচক চিন্তাটাকে পাল্টে আমরা যদি কোন বিকল্প বা বাস্তব চিন্তা করি তবে ধীরে ধীরে ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
মানুষ সাধারণতঃ কমপক্ষে বারো ধরণের নেতিবাচক চিন্তা করে যাকে আমরা unhelpful thinking habit বলি।
Mental filter (চারপাশে ভালো যা ঘটছে, সেগুলোকে না দেখে, নিজের নেতিবাচক চিন্তার সাথে মিলে যায়, সেগুলোকে ছেঁকে তোলা), mind reading (মন পড়তে পারা- আমি জানি ও আমার সম্পর্কে কি ভাবছে), future telling (আমি জানি, হাজার পরীক্ষা দিলেও আমি পাশ করতে পারব না), judgements (ঘটনাকে নিজের মত করে বিচার করা), emotional reasoning(নিজেরেআবেগ দিয়ে সব কিছুকে দেখা, আমার মন কু ডাকছে তার মানে নিশ্চই আমার জন্য খারাপ কিছু অপেক্ষা করে আছে), mountain and molehills (দুশ্চিন্তার পাহাড় বানিয়ে ফেলা), compair and dispair(অন্যের ভালো সাথে নিজের খারাপ কিছুর তুলনা করা। ও এত কম পড়ে ভালো করল আর আমি এত বেশী পড়েও কিছু করতে পারলাম না), critical self(সব আমারই দোষ, সব কিছুর জন্য আমিই দায়ী), should and must (আমার এটা অবশ্যই করা উচিৎ ছিল, এটা আমার করা উচিৎ হয় নাই), catastrophising(খারাপ কিছু ঘটবেই এরকম বিশ্বাস করা), black and white thinking(ঘটনাকে খুব সাধারণীকরণ করে দেখা), memories(আরেক খারাপ স্মৃতির সাথে বর্তমান খারাপ ঘটনাকে মেলানো)
এই unhelpful thinking habit গুলোকে বাদ দিতে পারলে সহজেই ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
আমি একজন ক্রনিক ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষ। গত ১২ বছর ধরে এই অসুখটা আমার ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভূতের মত চেপে বসে আছে। এই অসুখের কারণে সমাজভীতি তৈরি হয়েছে আমার ভেতর, মনে হয় বাইপোলার ডিসঅর্ডারের দিকে অসুখটা মোড় নিচ্ছে। প্রচণ্ড রকমের আত্মহত্যা প্রবণতা ছিল একসময়, এখন কিছুটা কম। মাঝে মাঝে চারপাশের মানুষের আচরণে নিজেকে মনে হয় সেই ছেলেখেলার শিকার ব্যাঙ এর মত। অন্যদের কাছে এটা বিনোদন, আমার জন্য মরনের সমান।
আপনার কষ্টের, সংগ্রামের জন্য আমার সহমর্মিতা রইলো।
১২ বছর ধরে ডিপ্রেশনের সঙ্গে যুদ্ধ করে যাওয়া যে কত বড় অর্জন, তা সম্ভবত আমাদের অনেকে কল্পনাও করতে পারবেন না। এই দীর্ঘসময় ধরে যখন যুদ্ধটা চালিয়ে যাচ্ছেন, আপনি হারবেন না। এই বিশ্বাস আমার আছে। আশা করি, আপনি নিয়মিত ডাক্তার দেখাচ্ছেন, অষুধ খাচ্ছেন।
আরেকটা অনুরোধ, আমি জানি অনেকের জন্যেই কাজটা কঠিন- তবুও সম্ভব হলে এমন সঙ্গ ত্যাগ করুন, যারা আপনার উপর চাপ সৃষ্টি করে, যাদের সঙ্গ আপনাকে ডিপ্রেশনের দিকে ঠেলে দেয় বার বার। এই পৃথিবী এতো বিশাল, এই পৃথিবীতে ইনসেনসেটিভ মানুষের পাশাপাশি এতো চমৎকার ভালো মানুষ আছেন, আপনি একটু খুঁজলেই এমন কাউকে আপনার পাশে পাবেন। নিজের অনুভূতিগুলি শেয়ার করুন তার সঙ্গে।
আপনার জন্য শুভকামনা। আমি নিশ্চিত জানি, আপনি হার মানবেন না
অলমিতি বিস্তারেণ
বেশ কয়েকমাস যাবৎ আমার সবকিছু অর্থহীন মনে হয়। কোথা্ও শান্তি পাইনা। কোন কাজে উদ্যম পাইনা, মনে হয় কি লাভ? মাঝে মাঝে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করে। তবুও দিনযাপনের স্বারথে দিনাতিপাত করি। আমার হাতে কোন কাজও নেই। আগামী মাসের মাঝামাঝি আমার স্কলারশীপ নিয়ে (অর্থনীতিতে মাস্টার্স করতে) জাপান যাওয়ার কথা। ছোট মেয়েটোকে ফেলে, পরিবার পরিজন ফেলে এখন আর যেতে ইচ্ছে করছেনা। তার উপর মনে হচ্ছে, আমার এই উদ্যমহীনতার কারণে আমি যদি ওখানে গিয়ে আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ি! ওখানে যেতে খুব ভয় হচ্ছে। আমার এখন কি করা উচিৎ? স্কলারশীপ ড্রপ (যদিও এতে জাপানিজ সরকার, আমাদের মিনিস্ট্রি অনেক ঝামেলা করবে। শেষ মুহূর্তে স্কলারশীপ ক্যানসেল করলে ওরা কোন পরিবর্তকও নিতে পারবেনা) করবো? আমার এই অবস্থাকে কি ডিপ্রেশন বলে? সব মিলিয়ে আমার কী করা উচিৎ?
যদিও পরামর্শ দেবার মত কোয়ালিফাইড নই, তবুও যতটুকু পারি বলছি।
সম্ভব হলে মেয়েকে নিয়ে (এবং আপনার সঙ্গী/নী কেও) যান। একেকজনের মনোজগৎ একেকরকম।
আমার দু'জন খালার কথা বলছি।
একজন সরকারিভাবে বিদেশে নার্সিংয়ে পোস্টিং (বা পড়ার সুযোগ) পেয়েছিলেন; সম্মানজনক কাজ করে, অনেক টাকা আয় করে ফেরার সুযোগ এসে দাঁড়িয়েছিল তাঁর সামনে। কিন্তু, মেয়েকে রেখে যেতে হবে। যেটা তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। শেষমেষ, না যাবার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন কর্তৃপক্ষকে। আবার, পরিবারের কারণে এমন সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছিলেন না। উনি পরিবার ছেড়ে যাননি ঠিকই, কিন্তু না যেতে পারার ক্ষোভে তাঁর মানসিক ভারসাম্য ভেঙে পড়ে। বাংলাদেশের চাকরিটা থেকেও দীর্ঘদিন ছুটি নিতে হয়, গাদ গাদা ওষুধ খেয়ে প্রায় ৩ মাস পরে কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসেন তিনি।
অপরজন, পড়ার জন্য ৬মাসের একটা কোর্সে ছেলেকে ফেলে দূরে ছিলেন। তাঁর সাথে স্কাইপে কথা হয়েছিল। উনি বারবার বলছিলেন যে, ছেলেকে ফেলে আসায় তার একদমই ভালো লাগছে না। বারবার মনে হচ্ছে কেন আসলাম, কেন আসলাম। উনি ৬ মাস পার করে ছেলের কাছে ফিরে গিয়েছিলেন।
আপনি যদি মনে করেন এই ডিগ্রিটা আপনার ভবিষ্যৎ (এবং একই সাথে আপনার সন্তানের ভবিষ্যত) -এর জন্য ভালো তাহলে কষ্টটা সহ্য করে নিন। আমি জানি না আপনার প্রোগ্রাম কতদিনের, যতটুকু শুনেছি জাপানের পড়াশোনা খুব দ্রুতগতিতে এগোয়। আপনি যদি সুযোগটা হাতছাড়া করেন, পরবর্তীতে আপনি এটা নিয়ে আক্ষেপ করবেন কী?
আপনার পরিস্থিতিটা ডিপ্রেশন নয়, আপনি সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে স্ট্রেস এ পড়েছেন। সবার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিন। যদিও দূরে থাকাটা কষ্টের, তারপরও এযুগের স্কাইপ, ভাইবারের কল্যাণে কাছাকাছি আসার কিছু সুযোগ পাওয়া যায়।
শুভেচ্ছা
নিজের সাথে মিলে গেলো ।। মাঝে মাঝে নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় ।। দিনের পর দিন শুধু চলেই যাচ্ছে পড়ালেখাও প্রায় শেষ কিন্তু কিছুই হচ্ছেনা ,কিন্তু আমাকে দিয়ে কিছু হওয়ার কথা ছিলো অবশ্যই ।।
বাইরের রুপ দেখে মানুষ আমাকে জিনিয়াস ভাবে কিন্তু ভিতরে ভিতরে কুকড়ে ধুমড়ে মুচড়ে গেছি সেটা কাউকে বুঝতে দেইনা ।।
শারীরিক ভাবে প্রচন্ড অস্হিরতা ফিল করি মনোযোগ একেবারেই দিতে পারিনা এজন্য পড়াশুনায় একেবারে নিচের লেভেলে আছি ,আজব সব চিন্তা ভাবনা সবসময় ঘিরে রাখে একা থাকতে ভালো লাগে ।।।।প্রতিদিনকার নিয়মিত কাজগুলোও করতে প্রচন্ড আলসামী লাগে frown emoticon
মাঝে মাঝে খুব আনন্দ লাগে মাঝে মাঝে খুব বিষন্ন ।।
খুব ঝামেলায় আছিরে ভাই frown emoticon
স্যরি, আপনার মন্তব্যের উত্তর দিতে একটু দেরি হয়ে গেলো।
আপনার স্ট্রাগলটা অনুমান করতে পারছি। হাল ছাড়বেন না, প্লিজ। আপনি যদি কোনো মেডিক্যাল/কাউন্সেইলিং সাপোর্ট না নিয়ে থাকেন এর মধ্যে, নেওয়ার কথা ভেবে দেখতে পারেন। খুব ঘনিষ্ঠ কোনো বন্ধু বা আত্মীয়ের সঙ্গে আপনার সমস্যার কথা শেয়ার করে দেখতে পারেন। আমি জানি যে, সবারই শুরুতে একটা ইনহিবিশন থাকে, মনে হয় যদি আমার সম্পর্কে নেগেটিভ ভাবতে শুরু করে। যদি আমার ডিপ্রেশনের কথা শুনে সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে অনীহা দেখায়। বিশ্বাস করুন, এই চিন্তা করে নিজেকে গুটিয়ে রাখার মধ্যে কোনো সমাধান নেই। আপনাকে সাহায্য চাইতে হবে মানুষের কাছে। যদি কেউ আপনাকে জাজ করে সম্পর্কছেদ করতে চায়, তবে মনে করুন, এই সম্পর্ক ভাঙ্গারই ছিলো। কিন্তু একজন মানুষও যদি আপনার সাপোর্টে এগিয়ে আসে, সবকিছু অনেকখানি বদলে যাবে।
আশা করি আপনি দ্রুতই এই অবস্থা কাটিয়ে উঠবেন। শুভকামনা।
অলমিতি বিস্তারেণ
প্রিয় রক ব্যান্ড Alice in Chains এর গায়ক Layne Staley ডিপ্রেশনের দরুণ মাদকাসক্তিতে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ইউটিউবে বিভিন্ন গানের মন্তব্য ঘরে মানুষের ট্রলিং আর গালাগালি থাকলেও এলিস ইন চেইন্সের গানগুলোর কমেন্ট সেকশনে মানুষের কৃতজ্ঞতাবোধ থাকতো; বিষন্নতার সঙ্গী হওয়ার জন্য লেইন স্টেইলিকে সবাই ধন্যবাদ জানাতো। সেই লেইন স্টেইলি এতো মানুষকে বিষন্নতা থেকে টেনে তুলে নিজেই বিষণ্ণতায় বিলীন হয়ে গিয়েছিলেন।
https://www.youtube.com/watch?v=J1pgagZcHdE
এলিস ইন চেইন্সের অনেক গানের মতো এই গানটাও যেন বিষণ্নতারই তরঙ্গধ্বনি।
"What I see is unreal
I've written my own part
Eat of the apple, so young
I'm crawling back to start"
Big Brother is watching you.
Goodreads shelf
আমার অবশ্য অন্য একটা ব্যান্ডের গান শুনলে সিমিলার একটা অনুভূতি হয়, রেডিওহেড। অবশ্য ডিপ্রেসড স্টেটের সাথে তাদের গানের সম্পর্ক নিয়ে ইন্টারনেটে প্রচুর লেখালেখি আছে।
অলমিতি বিস্তারেণ
আজকেই একটা আর্টিকেল চোখে পড়ল ডিপ্রেশন বিষয়ক। যা দেখলাম তাতে আরো বিষন্ন হয়ে পড়া ছাড়া কিছুই নেই--
আমিও একটু আগে IFL Science এর পেইজ থেকে লেখাটা পড়লাম। ভাবতেসিলাম এইখানে লিঙ্কটা রেখে যাবো।
অলমিতি বিস্তারেণ
অসাধারণ লেখা সবজান্তা।
প্রথম দিনেই পড়েছিলাম, মন্তব্য করা হয়নি।
ডিপ্রেশনের আরেকটা সমস্যা আছে।
মানুষ বুঝতে চায়না অনেক শক্ত, দায়িত্ববান ডিপ্রেশন সম্পর্কে সব জানেনন এরকম লোকেরো
ডিপ্রেশন হতে পারে। শক্ত হওয়া মানেই রোগপ্রতিরোধক হওয়া না।
এই কারণে আমরা যাদের শক্ত বলে জানি তারা ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হলেও অন্যের কাছে
এমনকী নিজের কাছেও স্বীকার করতে চান না। এতে সমস্যা বাড়েই, কমে না।
এই নিয়ে লেখালেখি জারি থাকুক।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
রানা আপু, আপনার অবজারভেশন ঠিকাছে।
শুধু ডিপ্রেশন না, যেকোনো ধরনের শারীরিক রোগের ক্ষেত্রেও- যাদের শক্ত, সমর্থ, দায়িত্ববান বলা হয়, কিংবা যারা নিজেরা এমনটা ভাবেন - তারা নিজেদের অসুখ নিয়ে এক ধরনের ডিনায়ালে থাকেন। তারা যেটা বুঝতে পারেন না- পরিমিত খাদ্যাভাস, ব্যায়াম, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ইত্যাদি ভালো অভ্যাস অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায়, কিন্তু একদম শূন্য করতে পারে না। যে কেউই যে কোনো সময় যে কোনো রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কাজেই নিজের অসুস্থতা স্বীকার করে নেওয়ার মধ্যে লজ্জার কিছু নেই।
পড়া আর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
অলমিতি বিস্তারেণ
ডিপ্রেশনের জন্য হিপ্নোথেরাপিঃ https://www.youtube.com/watch?v=rEXlScN9AO0
কমেন্ট সেকশনে দেখছি অনেকেই উপকার পেয়েছেন বলে উচ্চ-প্রশংসা করছেন! ট্রাই করে দেখতে পারেন।
****************************************
খুব কাছে থেকে দেখা ডিপ্রেসড মানুষ—আমার বাবা। ভরা পরিবার কিভাবে খালি হয়ে যায়, তা পরিবারের কর্তা অসুস্থ থাকলে বোঝা যায়। ১৯৯৭ থেকে ২০০৭। মারা যাবার আগ পর্যন্ত তিনি ডিপ্রেসড ছিলেন।
ডিপ্রেসনের ফলে তার হ্যালুসিনেশন হতো। অসুস্থ হবার পর, যাদেরকে বন্ধু বলতেন অথবা যাদের সাথে সারাক্ষণ ছিলেন, তাদের কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। যাদের মধ্যে পরিবারের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত। শেষের দিকে অনেক কান্নাকাটি করতেন, ফেলে আসা সময় নিয়ে। আমরা দুই ভাই বোন অনেক কিছুই বুঝতাম না। তার পাশে সবসময় যিনি ছিলেন তিনি হলেন আমার মা।
খুব কাছে থেকে দেখা ডাক্তার—ঢাকার সব বড় বড় হাসপাতালের মনোবিশেষজ্ঞ। অপদার্থের দল।
অলস সময়
এই লাইনটা পড়ার পর আবার কমেন্ট করার জন্য লগ-ইন না করে পারলাম না। ১. রোগীর বক্তব্য পুরো না শোনার প্রবণতা ২. রোগী সম্পর্কে স্বকল্পিত পূর্বধারণা নিয়ে সাজেশন দেয়া ৩. দুর্ব্যবহার ৪. সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের রুচি-অভ্যাস-আচরণ-পছন্দ-অপছন্দ-বিশ্বাস পালটে যাওয়ার ব্যাপারে অজ্ঞতা এবং অবহেলা ৫. অবজেকটিভ জাজমেন্ট ৬. সীমিত ফর্মুলাভিত্তিক সাজেশন ৭. নিয়মিত পড়াশোনা না করা ৮. অস্বাস্থকর পরিবেশ ৯. অশিক্ষিত সহকারী ১০. সমানুভূতি না থাকা। লিস্টটা আরো বড় করা যেতো কিন্তু করে কী লাভ! সৃষ্টির আদিকাল থেকে এই অবস্থা চলে আসছে, আরো জিলিয়ন জিলিয়ন বছর পরেও অবস্থা এমনই থাকবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার পরিবারের জন্য নিশ্চয়ই খুব কঠিন একটা সময় ছিলো...
শুধু ডিপ্রেসড মানুষেরা নন, তাদের ঘনিষ্ঠ, পরিবারের সদস্যদের জন্যেও মানুষের এম্প্যাথেটিক ব্যবহার খুব জরুরি। বিদেশে কিন্তু ডিপ্রেশন কিংবা অন্য কোনো ধরনের সাইকোলজিক্যাল অসুখ বা ডিজঅর্ডারে যারা ভুগছে, তাদের ফ্যামিলির জন্যেও সাপোর্ট গ্রুপ আছে। হয়তো কোনো একদিন আমাদের দেশেও হবে।
অলমিতি বিস্তারেণ
এত ভালো লেখো তুমি!
চেনা একজনের ধারাবাহিক বিপন্নতা দেখে অনুমান করছি তিনি ডিপ্রেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। আশেপাশের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত সুজনেরাও জাজ করতে ছাড়ছে না। জনে জনে বুঝাতে না গিয়ে এমন একটা গোছানো লেখা পড়তে দেওয়াটা বরং কাজে দেবে।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
হে হে... কমপ্লিমেন্টের জন্য ধন্যবাদ!
পরিচিত কেউ যদি ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের সিম্পটমগুলি মোটামুটিভাবে দেখায়, তবে আসলে তাকে জরুরী ভিত্তিতে কাউন্সেলরের কাছে নিয়ে যাওয়াই ভালো। আর্লি স্টেজে গেলে ফাইট করাটা অনেক সহজ হয়।
অলমিতি বিস্তারেণ
ওহ, আরেকটা জিনিস যোগ করতে ভুলে গেছিলাম।
বানান ভুল এবং টাইপোগুলি শুধরে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। মূল লেখাতে বানানগুলি ঠিক করে দিয়েছি।
অলমিতি বিস্তারেণ
আমি এক উলটা টাইপ মানুষ, যার মন খারাপও খুব বেশিক্ষন টিকে না, মাগার কারো প্রতি 'রাগ' জিনিশটা আজীবনেও যায় না। জীবনে অনেক ভাংচুরের কবলে পড়েও তাই এক কোণায় খিঁচ মেরে থেকে সার্ভাইভ করে গিয়েছি। অনেক চড়াই-উৎরাইয়েও 'ডিপ্রেসড' হইনি কখনও, জানিনা কেনো!
কিন্তু আপনার লেখাটা এক নিঃশ্বাসে পড়ে মনে হলো, আমি যা ফেইস করিনি কোনোদিন, তা নিয়ে স্বস্তি পেতেই পারি কিন্তু অন্যকাউকে সেই অবস্থায় দেখে অবশ্যই উচিৎ হবে এগিয়ে যাওয়া। 'জাজম্যান্টাল' না হয়ে বরং 'এম্পেথ্যাটিক' হয়ে সেই মানুষটার পাশে সাপোর্ট হিসেবে থাকাটাই অনেক বড় একটা করণীয়। আপনার লেখাটা ভেতরের একটা চোখ খুলে দিলো। ধন্যবাদ।
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
পড়া এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
অলমিতি বিস্তারেণ
ভয়াবহ ডিপ্রেশন এ ভোগা কিছু মানুষকে আমি কাছ থেকে দেখেছি। তাদের বুকের ভেতরে সীমাহীন হাহাকার, গভীর শূন্যতা আমাকে স্তব্ধ করে দেয়।
আমার খুব কাছের একজন বন্ধু, আর অল্প পরিচিত একজন এই ডিপ্রেশন এ ভুগে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু কষ্টের ব্যাপার হল, ডিপ্রেশনকে অনেকেই বড়লোকের শৌখিন ন্যাকামি মনে করেন। বিশেষ করে আমাদের বাবা-মাদের বয়সী মানুষজনের কাছে এটা "এযুগের বেশী বুঝা ছেলে-মেয়ে" দের একধরনের ঢং। বুকের ভেতরের গোপন ব্যাথাটা তাঁরা অনুভব করতেই পারেন না।
আমার সীমিত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যারা নিজেরা ডিপ্রেশনে ভুগেছেন, কিংবা খুব কাছের কেউ এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছে, তারাই খুব ভালো এম্প্যাথাইজ করতে পারেন। সম্ভবত নিজেদের সাথে রিলেট করতে পারার কারণেই।
ডিপ্রেশনের সাথে জেনারেশনের সম্পর্ক আছে কিনা, সেটা একটা আলোচিত টপিক। এই প্রশ্ন আমার মনেও এসেছিলো, তাই একসময় উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম। তখন আবিষ্কার করেছি, এই প্রশ্নের কোনো হ্যাঁ কিংবা না-তে উত্তর নেই। ব্যক্তি হিসেবে একজন মানুষ এখন আরো অনেক বেশি স্ট্রেসের সম্মুখীন, এ কথা যেমন সত্যি, তেমনি আগেকার দিনে মানুষের সচেতনতার অভাব, উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবও অনেককে ডিপ্রেশন চিহ্নিত করতে দেয়নি। আগ্রহীরা এই ব্লগটা পড়ে দেখতে পারেন।
অলমিতি বিস্তারেণ
Depression হল এক ধরনের sickness . এখন কাহিনী হল , sickness
ব্যাপারটা কেউ ইচ্ছে করে আনে না ...
অসুখ তো আর কেউ ইচ্ছে করে আনে না
হয়ে যায় ...
তাই Depression কাটানোর জন্য কেউ যদি বলে " তোমার Depression টা দূর করে ফেওলো তাহলেই সব শেষ হয়ে যাবে "
তার মানে হল , সে রোগীকে বলতেছে তোমার অসুখটা সারিয়ে ফেলো সব ঠিক হয়ে যাবে । অসুস্থ ব্যক্তিটি তো জানে যে, অসুখ নিরাময় করলে সব তো এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে ।
কিন্তু এই কথাটা বলে কি অসুস্থ ব্যক্তিটিকে অসুখ নিরাময় করতে কোন সাহায্য করা হয় ?
একদম না ... বরং বারবার তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় সে অসুস্থ । তার অসুখ নিরাময় হলে সে ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতো । কিন্তু সেটা হচ্ছে না ...
কারন , নিজে নিজে তো ইচ্ছে করে অসুখ সারানো যায় না ...
তাই সে অসুখ সারানোর কোন way খুঁজে পাচ্ছে না। এ হীনমন্যতা তাকে আর ও বেশী Depressed বানিয়ে ফেলে ।
যাই হোক , পোস্ট টি সুন্দর ছিল
লেখাটা ভাল হয়েছে তবে কিছু ভুল ধারনা আছে। প্রথমত ডিপ্রেসন একটি অসুখ (ডিজিজ) নয়, অক্ষমতা (ডিসঅর্ডার)। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডিপ্রেশন একটি সিম্পটম। তুলনা করা যায় জ্বরের সাথে। যেমন জ্বর অনেক রোগের সিম্পটম যদিও কদাচ দুএকটি ক্ষেত্রে জ্বর একটি সিনড্রোম (বার বার আসা সিম্পটম)।
ডিপ্রেসন বড়লোকের রোগ এই জাতীয় পর্যবেক্ষণকে এখনে হেয় করা হয়েছে, আসলে কথাটা মিথ্যা নয়। ডিপ্রেশনের নানা শরীবৃত্তীয় কারন থাকলেও এটি অনেক ব্যক্তিত্বের সমস্যার সিম্পটম্প। ব্যক্তিত্বের সমস্যা বা পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার মানুষের অভ্যাস, সুযোগ আর বাস্তবতার সাথে সম্পর্কহীন বেড়ে ওঠার ওপর নির্ভর করে। মা বাবার অতিরিক্ত মনযোগ, প্রচেষ্টা ছাড়াই আরাম আয়েশের বা একমুখী জীবন (শুধু পড়াশোনা করা), বড়দের কথা অতিরিক্ত মেনে নেওয়ার প্রবণতা এরকম অনেক বড়লোকি লাইফস্টাইল অনেক রকম ব্যক্তিত্বের সমস্যা তৈরী করে যাদের সিম্পটম হচ্ছে ডিপ্রেশন।
আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি আমার ক্ষেত্রে ডিপ্রেশন মূলত স্ট্রেস থেকে আসে। ভাল ঘুম হলে অনেক সময়েই সেটা কেটে যায়। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে ডিপ্রেশন কাটাতে ভাল ঘুমের আর বিশ্রামের বিকল্প নেই। সমস্যা হল কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের যুগে বিশ্রামের সময় পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। ডিপ্রেশন আর কয়েক দশকে মহামারী হিসাবে দেখা যাবে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
খুব ভালো লিখাটা। আপনার লেখাটা পড়ে আমি আরো নিশ্চিত হলাম যে আসলেই আমি সাঙ্ঘাতিক পর্যায়ের ডিপ্রেশনে আছি। আপনার বলা কথাগুলো প্রায় সবই আমার সাথে মিলে যাচ্ছে। আল্লাহ রাক্ষা করো।
নতুন মন্তব্য করুন