বিডিআর বিদ্রোহ, সাধারন ক্ষমা ঘোষনা এবং অবরুদ্ধ মানবিকতা

সচল জাহিদ এর ছবি
লিখেছেন সচল জাহিদ (তারিখ: বুধ, ২৫/০২/২০০৯ - ১১:৪২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কাল রাতে ১০ টার (মাউন্টেইন সময় কানাডা ২৪ ফেব্রুয়ারী, ঢাকায় ২৫ ফেব্রুয়ারী সকাল ১১ টা) একটু পরে সচলায়তনেই নজরুল ভাইয়ের ‘ঢাকার অবস্থা’ শিরোনামের লেখাটিতে প্রথম জানতে পারি বিডিআর বিদ্রোহের খবর। মুহুর্তের মধ্যে প্রথম আলো, ডেইলী স্টার, সিএনএন, বিবিসি, আল জাজিরাতে তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকি দেশের খবর।আমরা যারা দেশের বাইরে থাকি তারা একে অপরকে ফোন করে জানার চেষ্টা করতে থাকি আসলে কি ঘটেছে, দেশে ফোন করার চেষ্টা করি, বাসার ফোনগুলিতে যাও কিছুক্ষণ চেষ্টায় সংযোগ পাওয়া যায় কিন্তু মুঠোফোনে সেই আশায় গুড়েবালি। দূচিন্তা হয় ঢাকার আত্মীয় সজনদের আর বন্ধু বান্ধবদের জন্য। পিলখানা এলাকা বুয়েটের খুব কাছে তাই বেশী শঙ্কিত হই বুয়েট, মেডিক্যাল, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য। কিছুক্ষন পর পরই সচলায়তন ফেইসবুক দেখতে থাকি নতুন কোন খবরের জন্য, দেশে আমার কিছু ছাত্রকে অনলাইনে দেখে মেসেঞ্জারে খবর নেবার চেষ্টা করি। একটু পরে পরেই সচলদের সর্বশেষ সংবাদে বিচলিত হই, কি ঘটছে ঢাকাতে! আস্তে আস্তে রাত গভীর হয়, বাংলাভিশনের খবর দেখে কিছুটা ধারনা জন্ম নেয় ঘটনা সম্পর্কে, কমলা রঙ্গের কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা বিডিআর জওয়ানদের সাংবাদিকদের দেওয়া বক্তব্যে আমার, আমাদের শঙ্কা আরো ঘনীভুত হয়।

খবর আসে, বিডিআর গেটের কাছে নিথর হয়ে পড়ে আছে একটি শিশু, এলোপাথারি গুলিতে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছে একজন রিকশা চালক, গুলিবিদ্ধ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীসহ অনেকে। আস্তে আস্তে টিভি সম্প্রচার ওয়েবসাইট গুলিতেও ঠোকাঠুকির মাত্রা এত বেড়ে যায় যে আর কোন খবরই পাইনা। আমি বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকি, কিছুটা তন্দ্রাও এসে যায় দু’চোখে, কিন্তু ঘুম হয়না অথবা কিছুটা হলেও দুঃস্বপ্নে তা ভেঙ্গে যায়। আবার ঘুম থেকে উঠে ব্লগ পড়ি সর্বশেষ কিছু জানার জন্য, ফেইসবুক খুলে বসে থাকি কোন দৃষ্টি আকর্ষনমুলক খবরের জন্য। এভাবেই আধো ঘুম আধো জাগরণে ভোর হয়, এত সকালে আমি সচারচর উঠিনা , কিন্তু আজ (২৫ ফেব্রুয়ায়ী ২০০৯) বসে থাকি বাংলাদেশের সকাল সন্ধ্যে সাতটার ( কানাডায় সকাল সাড়ে ছয়টা) খবরের জন্য। খবরে শুনি প্রধান মন্ত্রীর সাথে বিডিআর জওয়ানদের আলোচনা চলছে, প্রধানমন্ত্রী তাদের সাধারন ক্ষমা ঘোষণা করেছেন, তাদের দাবী দাওয়াও পর্যায়ক্রমে পূরণের আশ্বাষ দিয়েছেন, কিন্তু পরিস্থিতি শান্ত হয়না তেমন, তাই দুঃশ্চিন্তাও কমেনা। আজকে যে নিরীহ মানুষগুলি মারা গেছে তারা কেউ আমার ভাই, বোন, বাবা, মা কিংবা বন্ধু বান্ধব বা নিকটাত্মীয় হতে পারত, তার চেয়েও বড় কথা তারাত কোন না কোন পরিবারের মানুষ। সেই মানুষগুলির কথা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে যায়, কিছু প্রশ্নও জাগে মনেঃ

১) সবার মন্তব্য পড়ে, খবর দেখে, এবং বিডিআর জওয়ানদের বক্তব্যে এতটুকু নিশ্চিত যে কালকের এই ঘটনাটি একদিনের ক্ষোভ থেকে হয়নি অথবা একদিনের কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার ফসল না বরং পুঞ্জীভুত ক্ষোভের বহিপ্রকাশ। বিডিআর জওয়ানদের এত বড় একটি সঙ্ঘবদ্ধ এবং দূঃসাহসিক আক্রমন পুর্বপরিকল্পনা ব্যাতিরেকে সম্ভব না। সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর অথবা বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা তার কোন আঁচ পেলনা কেন?

২) বিডিআর জওয়ানদের বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে তারা বহুদিন ধরে তাদের দাবিদাওয়া করে আসছেন, তাহলে কতৃপক্ষ কেন তা কখনই আমলে নেয়নি? এখন এই পরিস্থিতি যদি অন্যদিকে মোড় নেয় তার দায়ভার কে নেবে?

৩) একটি সফল সামরিক বা আধাসামরিক বাহিনীর মূল চাবিকাঠি হলো তার নিয়মানুবর্তিতা এবং ‘চেইন অফ কমান্ড’। বিডিআর এর ক্ষেত্রে এই দুটোই এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তাহলে ভবিষ্যতে এই বাহিনীর উপরে জনগন তথা সরকারের কতটুকু আস্থা থাকবে? অথচ অতীতে এই বিডিআর জওয়ানরা আমাদের সীমানা রক্ষায় আসীম সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছে ( উদাহরণসরূপ রৌমারী সীমান্তের ঘটনার কথা বলা যেতে পারে)।

৪) প্রধানমন্ত্রী বিডিআরকে গতকালকের ঘটনার জন্য তাদের দাবী অনুযায়ী সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করেছেন। এই বিষয়ে বোদ্ধারা আমাদের থেকে ভাল জানবেন তবে তাৎক্ষনিক ভাবে মনে হয়েছে সিদ্ধান্তটি হয়ত কার্যকরী, কিন্তু যে পরিবারটি তার প্রিয়জনকে হারিয়েছে তারা কি ক্ষমা করতে পারবে কাউকে? যে রিকশাচালক নিহত হয়েছেন তার পরিবারে হয়ত সেই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি, হয়ত পূরো পরিবারিটিকে পথে নেমে যেতে হবে কাল থেকে, তার দায়ভার কি এই সমাজ বা সরকার নেবে? যে শিশুটি মারা গেছে তার বাবা মা কি কখনো ভুলতে পারবে সেই ব্যাথা?

৫) অতীতে বাঙালী জাতি রাজাকারদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করেছে, তার পরে তারা দেশের সিংহাসনে বসেছে, আজ তারা সবকিছু অস্বীকার করে; ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ এর সময় অসংখ্য নিরপরাথ মানুষ অবিচারের স্বীকার হয়েছে, হঠাৎ করে হৃদরোগের (!!) প্রাদুর্ভাব বেড়ে গিয়েছিল সেইসময়, কিন্তু সবকিছু হালাল হয়ে গেছে ‘দায়মুক্তি অধ্যাদেশের মাধ্যমে’ কিন্তু সবসময় মুল্য দিতে হয়েছে এই সাধারন খেটে খাওয়া মানুষকে। রাজা যায় রাজা আসে কিন্তু সাধারন মানুষ তার সেই আগের জায়গাতেই থেকে যায়।

৬)খবরের মাধ্যমে যতটুকু জেনেছি, বিডিআর জওয়ানদের দাবীগুলোর মধ্যে প্রধান একটি হচ্ছে তাদেরকে সেনাবাহিনীর কমান্ড থেকে মুক্ত করা। এই দাবীটি পুরন বেশ সময় সাপেক্ষ বলে আমার ধারনা, কারন আমি যতটুকু জানি বিডিআর এর সব কর্মকর্তাই সেনাবাহিনীর। সেক্ষেত্রে এই মুহুর্তে অথবা নিকট ভবিষ্যতেও এই দাবী মানা কতটুকি বাস্তবসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। যদিও বিডিআর জওয়ানরা আন্দোলনের পাশাপাশি তাদের দাবী পুরণের পথও বাতলে দিচ্ছে( বিসিএস বিডিআর) কিন্তু সেটাওত যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সেক্ষেত্রে সরকারের সব দাবী মেনে নেবের সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত তা আমার পক্ষে বোঝা দুরুহ।

৭) আমার কাছে সব চাইতে ভয়াবহ ব্যাপার যেটি মনে হয়েছে সেটি হচ্ছে এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে সেনাবাহিনীর ভিতরকার দূর্নীতির ব্যাওয়ারটি আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এবং তাতে সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জাতি। কারন এখন পর্যন্ত এই একটি প্রতিষ্ঠানে প্রতি মানুষের কিছুটা হলেও আস্থা আছে, সেটা বন্দুকের নলের কারনেই হোক আর তাদের দেশপ্রেম , নিয়মানুবর্তীতার কারনেই হোক। এজন্য অতীতে যখন সেনাবাহিনীকে দিয়ে ট্রাফিক পুলিশের কাজও করানো হয়েছে তখন তার বিপক্ষে অনেক লেখালেখি হয়েছে এই যুক্তিতে যে সেনাবাহিনীকে জনগন থেকে দূরে রাখা শ্রেয় কারন তাতে তাদের ভাবমুর্তি রক্ষা পাবে। কিন্তু এই ঘটনার মধ্য দিয়ে জনগন একটি বাহিনীর সৈন্যদের কাছ থেকে অন্য বাহিনীর দুর্নীতির খবর জেনে যাচ্ছে সেটি কোন মতেই জাতির জন্য শুভকর কিছু বয়ে আনবেনা।

৮) পরিশেষে সে বিষয়টি নিয়ে আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে তা হল, বিডিআর জওয়ানদের সব দাবীদাওয়াকে কোন বাছ বিচার ব্যাতিরেকে মেনে নেওয়াটাকে সেনাবাহিনী কিভাবে নিচ্ছে? তাদের মধ্যেও যদি আবার বিদ্রোহ শুরু হয়ে যায় সেটেকে সরকার কিভাবে সামাল দেবে? সরকার যদি মনে করে মুখের কথা দিয়ে সব দাবী মেনে নিয়ে পরে কাজের বেলাতে অন্য কিছু করবে, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এধরনের আরো বিদ্রোহের জন্ম নেবার আশঙ্কাকে উড়িতে দেয়া যাবেনা।

একটি গল্প দিয়ে শেষ করি আজ। আমি তখন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছি। সমন্বিত পানিসম্পদ শীর্ষক একটি স্বল্পসময়ের প্রশিক্ষনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন জনৈকা সহকারী প্রকৌশলী তার একটি বাস্তব অভিঞ্জতার কথা বলেছিলেন। ভদ্রমহিলা তখন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মান কাজ তদারকিতে কোন এক গ্রামে গেছেন, এমন সময় কিছু লোক এসে কাজ বন্ধ করতে বললেন। তাদের মধ্যে যিনি বয়জোষ্ঠ ছিলেন তিনি সম্ভবত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বা মেম্বার গোছের কেউ হবে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে ঠিকাদার সিমেন্ট কম দিয়েছে সুতরাং আরো কয়েক বস্তা সিমেন্ট ঢালতে হবে। যাদের পুরকৌশল সম্পর্কে কিছুটা ধারনা আছে তারা জানেন যে সিমেন্ট বেশী বা কম কোনটিই নির্মান কাজের জন্য শুভকর নয়, যা প্রয়োজন তা হল পরিমানমত। ভদ্রমহিলা অবশ্য দারুনভাবে সেটি নিয়ন্ত্রন করেছিলেন বয়জোষ্ঠ মানুষটির সাথে কথা হলে। তার ব্যাখ্যা ছিল এই রকমঃ

‘চাচামিয়া বাড়িতে রান্না বান্না কে করে আপনি নাকি চাচী?’
‘কেন আপনের চাচী’
‘আচ্ছা তরকারীতে লবল কম বা বেশী কোনটাই কি ভাল?’
‘না পরিমানমত ভাল’
‘তাইলে এইবার কনত, রান্নার সময় লবন কতটুকু লাগবে তা কি আপনি জানেন নাকি চাচী ভাল জানে?’
‘এইডাত আপনের চাচীই ভাল জানে’
‘এখন তাইলে বলেন সিমেন্ট কতটুকু লাগবে তা কি ইঞ্জনিয়ার ভাল জানবে নাকি আপনি ভাল জানবেন?’

এই বারে বয়জোষ্ঠ মানুষটি তার ভুল বুঝতে পারে। পরবর্তীতে ওই প্রকৌশলী যতদিন সেখানে ছিলেন কোন কাজে তার কোন সমস্যা হয়নি। অথচ ওই লোকের ভয়ে তিনি যদি বেশি সিমেন্ট দিয়ে স্কুলটির ছাদ ঢালাই করতেন ভবিষ্যতে যেকোন সময় ঘটতে পারত দুর্ঘটনা। তাই কোন বাছ বিচার না করে সব দাবী সবসময় মেনে নেওয়া কতটা বাস্তব সম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

পুনশ্চঃ ছবিটি 'ডেইলী স্টার' থেকে নেয়ে


মন্তব্য

গৃহান্তরী এর ছবি

কিন্তু এই ঘটনার মধ্য দিয়ে জনগন একটি বাহিনীর সৈন্যদের কাছ থেকে অন্য বাহিনীর দুর্নীতির খবর জেনে যাচ্ছে সেটি কোন মতেই জাতির জন্য শুভকর কিছু বয়ে আনবেনা।

হ ঠিকই, ঘুমাইতে হইলে তো চোখ বন্ধ কইরাই ঘুমান লাগে। কি কও জাহিদ?

সচল জাহিদ এর ছবি

প্রিয় গৃহান্তরী

আপনার কথা ঠিক আছে ,কিন্তু যে মুহুর্তে আমলা, আর রাজনৈতিক নেতাদের একের পর এক দুর্নীতির খবরে দেশের মানুষের নাভিশ্বাষ উঠে যাবার মত অবস্থা সেখানে এই সশস্র, সীমান্ত আর শান্তিরক্ষা বাহিনীর এসব দূর্নীতির খবরে একেবারেই হতাশ হয়ে যাইযে !!!!

আসলেই কি দুর্ভাগা জাতি আমরা।
_____________________
জাহিদুল ইসলাম
এডমনটন, আলবার্টা, কানাডা
http://www.ualberta.ca/~mdzahidu/


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অমিত এর ছবি

এই ধরণের প্রতিষ্ঠান গুলোর চেইন অফ কমান্ড ভেঙ্গে গেলে আসলে বাকি আর কিছুই থাকে না।
বিশেষ করে ৫ নম্বর পয়েন্টে উত্তম জাঝা

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ অমিত
মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে এই অবস্থা দেখে। সবে মাত্র জরুরী অবস্থার লেবাস ছেড়ে গনতন্ত্রের দিকে যাবার পথের সময়টাতে এই লজ্জা কিভাবে ঢাকবে বাংলাদেশ !!
_____________________
জাহিদুল ইসলাম
এডমনটন, আলবার্টা, কানাডা
http://www.ualberta.ca/~mdzahidu/


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ভাঙ্গা মানুষ [অতিথি] এর ছবি

জাহিদ ভাই, আপনার বিশ্লেষন ও আশঙ্কা সবই যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে। বিভিন্ন চ্যানেলের বিশ্লেষনেও তা উঠে আসছে; বিশেষ করে ১নং পয়েন্টটা...
বিডিআররা অনেকদিনের ক্ষোভ এভাবে প্রকাশ করেছে, যদিও প্রকাশভঙ্গীটা অগ্রহনযোগ্য। কিন্তু আমরা সবাই জানি, অস্ত্র হাতে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকেনা, তার ওপর এরা আর্মিরই ট্রেনিংপ্রাপ্ত। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বিডিআররা যথেষ্ট সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছে (নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই বলছি)।

আর্মি আর বিডিআরের সাবেক চিফের বক্তব্য শুনলাম। নিজ নিজ দিক থেকে নানা যুক্তি বললেও কয়েকটা ব্যাপারে তারা একমত -

১) আর্মি ও বিডিআরের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক কমে গিয়েছে এবং উর্ধ্বতনরা (আর্মি) তাদের অধস্তনদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলোনা

২) দাবী-দাওয়া মানার আগে এগুলো নিয়ে তদন্ত করা উচিত

৩) বিডিআর, নিয়মানুযায়ী আর্মিরই অধীন; সুতরাং আর্মির কমান্ড থেকে বিডিআর আলাদা করা ঠিক হবে না

এর মধ্যে বিডিআর সাবেক চিফ ফজলুর রহমান, আর্মির দুর্নীতির কথা প্রকারান্তরে করে তার তদন্ত করার কথা বলেছেন...

দেখা যাক

সচল জাহিদ এর ছবি

প্রিয় ভাঙ্গা মানুষ

ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। আমিও সকালে বিবিসি তে জেনারেল রহমান ( সাবেক মহাপরিচালক বিডিআর) এবং কিছু বিডিআর সদস্যের সাক্ষাৎকার শুনছিলাম।একটা ব্যাপারে মনে হয় সবাই একমত তা হলো সেনাবাহিনীর দ্বারা বিডিআর সদস্যরা নানা ভাবে বৈষম্যের স্বীকার হয়েছেন এবং আরো ভাল করে বলতে গেলে হয়ে আসছেন। এই বিষয়ে জেনারেল রহমানও বলেছনে যে তিনি থাকতেও বিডিআর সদস্যদের কিছু দাবিদাওয়া তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্থাপন করেছেন। সুতরাং দাবীদাওয়ার ব্যাপারটি নতুন নয়। কিন্তু আমার ব্যাক্তিগত অভিমত অনেক দিনের এই বৈষম্য (বিডিআর সদস্যদের ভাষ্যমতে যেহেতু আমার নিজের এই ব্যাপারে কোন তথ্য নেই ) কেবল এই বিদ্রোহের কারন নয়। জনৈক বিডিআর সদস্যের সাক্ষাৎকারে এটা স্পষ্ট যে গত দু'বছরের কিছু ঘটনা এই বিদ্রোহের আগুনে ভাল রকমই ইন্ধন জুগিয়েছে, বিশেষ করে বিডিআর সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত নিত্যপ্রয়োজনীর পন্যের বাজার এবং তা থেকে সেনাসদস্যদের মুনাফা (!!) অর্জন এবং তার 'ন্যায্য' অথবা 'অন্যায্য' হিস্যা কিংবা 'বখরা' থেকে বঞ্চিত হওয়া। যেহেতু বিডিআর সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত ওই বাজার সম্মন্ধে সমালোচনার অংশীধার হয়েছেন তারা, কিন্তু পুরো মুনাফা ঢুকেছে সেনাসদস্যদের পকেটে ( আবারো বলছি এটা বিডিআর সদস্যদের ভাস্যমতে) তাই ব্যাপারটি তাদের পুঞ্জীভূত আন্দোলনকে আরো বেগবান করেছে।

তবে যেকোন কারনেই হোক সমস্যাটি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। আমরা এখন কেউই জানিনা পিলখানার মধ্যে কতজন সেনা কর্মকর্তা মারা গেছেন ( এটা আশঙ্কা, সত্যি নাও হতে পারে), এবং সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনী ব্যাপারটি কি সহজে মেনে নিতে পারবে ?

অপরদিকে বিডিআর সদস্যরা ভাবছে, সাধারন ক্ষমার কথা বলে পরে যদি শাস্তি হয় তাহলে কি হবে ? আর এই জাতির ইতিহাসে তো অনেক কোর্ট মার্শাল এর উদাহরণ আছে।

যাই হোক একমাত্র সহনশীলতাই পারে এটা সমাধান করতে সেই সাথে এটাও মনে রাখতে হবে মানুষের প্রাপ্য শাস্তি তাকে দিতে হবে তা না হলে ইতিহাসত একদিন তার শোধ নিবে তাইনা ?

_____________________
জাহিদুল ইসলাম
এডমনটন, আলবার্টা, কানাডা
http://www.ualberta.ca/~mdzahidu/


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ভাঙ্গা মানুষ [অতিথি] এর ছবি

প্রিয় জাহিদ ভাই,

অন্য পোস্টগুলোতে আলোচনায় আর্মির অসন্তোষের কথা বারবার উঠে আসছে। সুতরাং তাদের সহনশীলতা কতদিন থাকে, দেখার ব্যাপার বটে!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।