সিরিজের আগের দুটি পর্বে এই চুক্তি নিয়ে দীর্ঘ ৪৫ বছরের আলোচনার সার সংক্ষেপ উল্লেখ করেছি। ১৯৯৬ সালে দুই সরকার চুক্তির বিষয়ে একমত প্রদর্শন করলে ঐ বছরের ১২ ডিসেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেব গৌড়ার মধ্যে ঐতিহাসিক গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কি ছিল সেই চুক্তিতে তা আমাদের অনেকেরই অজানা, তাই এই পর্বে পুরো চুক্তিটিরই অনুবাদ দিলাম। ইংরেজীতে মুল চুক্তিটি [৪]পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
প্রথম পর্ব-প্রারম্ভিক তথ্য ও চুক্তিপূর্ব ইতিহাস(১৯৫১-১৯৭৬)
দ্বিতীয় পর্ব-চুক্তিপূর্ব ইতিহাস(১৯৭৭-১৯৯৬)
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকার নিম্নমত সমুহে মতৈক্য প্রকাশ করছেঃ
অনুচ্ছেদ ১
ভারত বাংলাদেশকে চুক্তিতে যে পরিমান পানির প্রদানের বিষয়ে মতৈক্য উপনীত হয়েছে তা নির্ভর করবে ‘ফারাক্কায় পানির প্রবাহের উপর’।
অনুচ্ছেদ ২
অনুচ্ছেদ ৬
যুক্ত-কমিটি উভয় সরকারের কাছে সংগৃহীত উপাত্ত এবং একটি বাৎসরিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উভয় সরকার যথাযথ পর্যায়ে মিলিত হয়ে প্রয়োজনীয় পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করবে।
অনুচ্ছেদ ৭
যুক্ত-কমিটি চুক্তিতে উল্লেখিত সমঝোতা সমুহের বাস্তবায়ন এবং চুক্তির বাস্তবায়নে বা ফারাক্কা ব্যারেজের কার্যক্রমে উদ্ভুত প্রতিবন্ধকতা সমুহ পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। এই ক্ষেত্রে উদ্ভুত কোন মতপার্থক্য বা বিতর্ক যুক্ত-কমিটি সমাধান করতে না পারলে তা ‘ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনে’ হস্তান্তর করা হবে। তার পরেও মতপার্থক্য বা বিতর্ক অমীমাংসিত থাকলে দুই দেশের সরকার পর্যায়ে ব্যাপারটি তোলা হবে এবং এর সমাধানের জন্য দুই পক্ষই জরূরী ভিত্তিতে যথাযথ পর্যায়ে পারস্পরিক আলোচনার জন্য উপবিষ্ট হবে।
অনুচ্ছেদ ৮
শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গায় পানি বৃদ্ধির দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাটির একটি সমাধানের ক্ষেত্রে দুই সরকারই একে অপরকে সহযোগীতার প্রয়োজনীয়তাটিকে স্বীকৃতি দেবে।
অনুচ্ছেদ ৯
পক্ষপাত বিহীন ও সাম্যতা প্রসুত এবং কোন পক্ষেরই ক্ষতি না করে দুই সরকারই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বহমান অন্যান্য আন্তসীমান্ত নদীসমুহের চুক্তির ব্যাপারে একক সিদ্ধান্তে উপনীত হবার ব্যাপারে একমত।
অনুচ্ছেদ ১০
প্রতি পাঁচ বছর পর পর (বা যেকোন পক্ষের প্রয়োজন হলে বা কোন উপযোজন করতে হলে তার আগেই)চুক্তির সমঝোতাগুলি দুই দেশের সরকার পুনর্নিরীক্ষন করবে এবং তা হবে পক্ষপাত বিহীন, সাম্যতা প্রসুত এবং কোন পক্ষেরই ক্ষতির কারন না হয় এমন। যেকোন পক্ষই দু’বছর পরে চুক্তির প্রভাব এবং কার্য্যকারীতা নিরূপন করার জন্য প্রথম পুনর্নিরীক্ষন করতে পারবে।
অনুচ্ছেদ ১১
চুক্তি সময়কালীন অনুচ্ছেদ ১০ এ উল্লেখিত পুনর্নিরীক্ষন দ্বারা প্রয়োজনীয় উপযোজনের (এডজাস্টমেন্ট) ক্ষেত্রে যদি দুই দেশ একমত না হয় তবে পরবর্তী মতৈক্যে পৌছানোর আগ পর্যন্ত ভারত ফারাক্কার ভাটিতে ‘অনুচ্ছেদ ২’ এ উল্লেখিত সমীকরন অনুসারে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যার ন্যুনতম শতকরা ৯০ ভাগ পানি ছেড়ে দেবে।
অনুচ্ছেদ ১২
দুই পক্ষের স্বাক্ষরের ভিত্তিতে এই চুক্তি বাধ্যবাধকতায় যাবে ও তা বলবৎ থাকবে ত্রিশ বছর পর্যন্ত, এবং পারস্পরিক প্রচেষ্টায় তা নবায়ন যোগ্য।
তথ্যসুত্রঃ
[৪] ডঃ আইনুন নিশাত ও এমএফকে পাশা কতৃক লিখিত প্রবন্ধঃ “A Review of the Ganges Treaty of 1996” যা ২০০১ সালে “Globalization and Water Resources Management: The Changing Value of Water” শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থাপিত হয়।
ছবিঃ আন্তর্জাল
সংযুক্তি ১ ও ২ (বড় করে দেখার জন্য ক্লিক করুন)
মন্তব্য
অনেক কিছু জানলাম
ভাসা-ভাসা অনেক আইডিয়া ক্লিয়ার হলো ... হয় আগে পত্রিকা ঠিকমতো পড়িনি, অথবা পত্রিকার রিপোর্টাররা শর্টকাটে মেরে দিয়েছিলেন
সংযুক্তি থেকে ধারনা করে নিচ্ছি যে বাংলাদেশের জন্য মোটামুটি ৩৫ হাজার আর ভারতের জন্য মোটামুটি ৪০ হাজার কিউসেক হলে প্রয়োজন মিটে যায়।
যেহেতু ৭৫ হাজারের বেশী প্রবাহিত হলে ৪০ হাজার রেখে ভারত বাকীটুকু বাংলাদেশের জন্য ছেড়ে দিচ্ছে, তাই আর্দ্র মৌসুমে যখন বাংলাদেশে গড় প্রয়োজন ৩৫ হাজার কিউসেকের বেশী পানি প্রবাহিত হবে, তখন সেই বাড়তি পানি থেকে প্রয়োজনমতো একটা অংশকে কোনভাবে রিজার্ভ করে রাখা যায় কিনা? রাখা গেলে সেটা করা হচ্ছে কিনা?করা না হলে সেটা কেন হচ্ছেনা? -- এই আলোচনাগুলোও পড়তে চাই।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
দুঃখিত দেরীর জন্য। ক্যালগ্যারী গিয়েছিলাম বংগসম্মেলনে। আসলে আর্দ্রমৌসুমে গঙ্গার পানিকে ব্যাবহার করার চিন্তা ভাবনা বাংলাদেশের অনেক আগে। সেই ১৯৬১ সালে তৎকালীন EPWAPDA (East Pakistan Water and Power Development Authority) যা বর্তমানে BWDB (Bangladesh Water Development Board) এর পরিকল্পনায় গঙ্গায় একটি ব্যারেজ নির্মানের কথা উল্লেখ ছিল। সেই আঙ্গিকেই ২০০৫ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি সরকার এর ফিজিবিলিটি স্টাডি অনুমোদন করেছে এখন এই সমীক্ষা শেষ হলেই বলা যাবে আসলে এই প্রকল্প আমাদের কতটুকু সুফল বয়ে আনবে।
-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
রিজার্ভ করার কোনো সিস্টেম তো আমাদের দেশে নেই। একটা সময় শুনেছিলাম, গঙ্গা-পদ্মার পানি আশেপাশের নদীগুলোতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেটাও অনেক অনেকদিন আগেকার কথা। এর মধ্যে প্রায় সব নদীর অব্স্থা এমন যে সেখানে পানি নিতে গেলেও নদীগুলোর সংস্কার করতে হবে সবার আগে।
তারপরও চুক্তি অনুযায়ী ভারত এই পানি ছাড়বে কিনা, সেটা কিন্তু অনেক বড় প্রশ্ন। সময়মত পানি না ছাড়ার যে উদাহরণ ভারত সৃষ্টি করেছে, সেটি নিয়েই কাজ করা উচিত আগে।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
আসলে বাংলাদেশ সমতল ভুমির দেশ হওয়াতে এখানে পরিপূর্ন বাঁধ দিয়ে পানি সঞ্চয় করা আসলে সম্ভব নয়। যেটা সম্ভব তা হলো ব্যারেজ নির্মান করে কিছুটা পানি সঞ্চয়। সেই আঙ্গিকেই শুকিয়ে যাওয়া নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা ও গঙ্গা নির্ভর এলাকায় কৃষি ও পরিবেশ উন্নয়নের জন্যই গঙ্গা ব্যারেজের সমীক্ষা শুরু হয়েছে সম্প্রতি। দেখা যাক এই সমীক্ষায় কি ফলাফল দাঁড়ায়।
চুক্তি অনুযায়ী ভারত পানি ছাড়বে কিনা সেই প্রশ্ন সবসময়ই থেকে যায় তবে একটা কথা বলে রাখা ভাল যে এখন ভারতের পানি না ছাড়ার বিষয়টি কিন্তু একটি আইনগত বাধ্যবাধকতা চুক্তির আগে সেটা ছিলনা।
-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
চুক্তির সারসংক্ষেপ, কিছু পর্যালোচনা এবং বহুল জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করেছি পরবর্তী পর্বে। পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
নতুন মন্তব্য করুন