খুব বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে। নাহ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিনা, একেবারে ঝুম ঝুম বৃষ্টি।বৃষ্টির শব্দে কেমন যেন একটা মাদকতা আছে, আচ্ছন্ন করে রাখে মন। বৃষ্টির কথা মনে হলেই আমার দেশের কথা মনে পড়ে। ইচ্ছে করে বাসায় বসে কাথা মুড়ি দিয়ে আদা চা আর চানাচুর মুড়ি খাই, সেই সাথে জম্পেশ আড্ডা।সবথেকে ভাল হয় আষাঢ়ে গল্প। গল্প করতে করতে একসময় দুপূর হবে, মা হয়ত ডেকে বলবে, ‘এই খেতে আয়’, গিয়ে দেখব ভূনা খিচুড়ী আর সরষে ইলিশ তৈরী, আস সাথে গরুর মাংস হলেত কথাই নেই। খাওয়া শেষে কাথা মুড়ি দিয়ে একটা লম্বা ঘুম।
ভাবনাগুলি অবশ্য বয়সের সাথে পরিবর্তিত হয়। খুব ছোটবেলায় বৃষ্টি দেখলেই ইচ্ছে করত যেখানেই একটু পানি জমে আছে সেখানেই কাগজের নৌকা বানিয়ে খেলা করা, কখনোবা কলাগাছের খোল দিয়ে বড়সড় নৌকা বানিয়ে তা ভাসিয়ে দেয়া। আমার ছোট বেলা কেটেছে টাঙাইলের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে, সাগরদীঘিতে। আমাদের বাসাটার চারদিকে ছিল ইটের দেয়াল ফলে একটু বৃষ্টিতেই পানি জমে যেত। অপেক্ষা করতাম বাবা কখন অফিসে যায়, বাস সাথে সাথেই কাগজের নৌকা নিয়ে পানিতে নেমে পড়া। বাবা একবার মাঝে হুট করে অফিস থেকে বাসায় চলে আসাতে বিপদ হলো, আমি তখন আপন আমনে মায়ের বকুনি হজম করে পানিতে নেমে খেলা করছি, হঠাৎ করে বাবাকে দেখে বিষ্মিত এবং বিব্রত। বাবা ছিল খুবই কড়া স্বভাবের তাই রাগ সামলাতে না পেরে একটা বাশের খুটির সাথে বেধে রাখল, উদ্দেশ্য দেখি কত পার আজকে খেল বৃষ্টিতে। আমিত আনন্দে আত্মহারা , এই নাহলে আর শাস্তি। যাই হোক পরে ঠান্ডা লাগার ভয়ে মা আমাকে রক্ষা করলেন।
আরেকটু যখন বড় হলাম, মানে যখন হাইস্কুলে যাওয়ার সময়, বৃষ্টি দেখলেই ইচ্ছে করত মাঠে গিয়ে ফূটবল খেলতে। খেলাধুলাতে কখনই ভাল কেন, নুন্যতম যোগ্যতাও ছিলনা কিন্তু স্কুলজীবনের বৃষ্টি মানেই যেন ছিল ফূটবল, কখনো স্কুলের মাঠে আর কখনো পাড়ার মাঠে। খেলা শেষ করে কাক ভেজা হয়ে, কাদা মাখিয়ে বাসায় ফিরে মায়ের বকুনিও ছিল অমৃতের মত। আর ফেরার পথে পাড়ার মোড়ের দোকানের গরম গরম সিঙাড়া আর সাথে চা ছিল নৈমত্তিক বিষয়।
কলেজে পড়ার সময় থেকেই ঢাকায় থাকা শুরু। ঢাকার বৃষ্টি মানেই নর্দমার কালো নোংরা পানি, তবে আনন্দের বহিপ্রকাশের ধরণটা কিন্তু খুব বেশি আলাদা নয়। আমি তখন নটরডেম কলেজে পড়ি, থাকি শাহজাহানপুরে। একদিন কলেজ থেকে ফিরতে যেয়ে দেখি পুরো আরামবাগ, ফকিরেরপুল থেকে শুরু করে শাহজাহানপুর অবধি সমুদ্র। তিন ঠ্যাঙ্গের টেম্পুগুলিও চলছেনা, অগত্যা কি আর করা বন্ধুরা মিলে সেই বৃষ্টির মধ্যেই কালোপানির সাগর পেরিয়ে বাসায় ফেরা, সে কি আনন্দ আমাদের।আর একপশলা বৃষ্টি হলেই শান্তিনগরের শান্তি যে কই যেত সেত সবারই জানা। আশে পাশে ভিকারুননেসা কলেজ থাকায় শান্তিনগর জায়গাটা আমাদের, মানে ছেলেদের কাছে বিশেষ কিছু বহন করত সবসময়। ঝুম ঝুম বৃষ্টির মধ্যে বেইলীরোডের আড্ডা গুলি সেই বেড়ে উঠা বয়সের দিনগুলিকে মনে করিয়ে দেয় সবসময়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়গুলিতে বৃষ্টির দিনে ক্যাফেতে বসে গরম গরম চা আর সিগেরেটের সাথে জমজমাট আড্ডাটাকেই একসময় জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় বলে মনে হত। ঘন্টার পর ঘন্টা অলস সময় কাটিয়ে দিতাম সবাই মিলে। বকশী বাজার এলাকাটা নিচু বলেই কিনা, এক পশলা বৃষ্টি হলেই পানি জমে যেত আর ঝুম ঝুম বৃষ্টি হলেত কথাই নেই। একবারত হল থেকে বুয়েটের গেট পর্যন্ত নৌকা চলা শুরু করল।
বৃষ্টির সাথে কেন জানি সংগীতের একটা সম্পর্ক আছে, বৃষ্টির শব্দকে আমার পৃথিবীর বিশুদ্ধ আর আদীম সংগীত বলে মনে হয় সবসময়। তাই মন্ত্রমুগ্ধের মত আমি বৃষ্টির শব্দ শুনি।কেন জানি বৃষ্টির সাথে কদম ফুলের একটা বন্ধুত্ব থাকে সবসময়, হয়তবা কদম বর্ষাতে ফোটে সেজন্যই।আমার মন খুব বেশী খারাপ হলে তাই চোখবন্ধ করে কল্পনা করিঃ
ঝুম ঝুম বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে আমি একটা কদমবাগানের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি, চারদিক থেকে কদম ফুলের সুবাস এসে আমাকে মোহাচ্ছন্ন করে দিয়ে যাচ্ছে, দূরে কোথায় থেকে যেন একটা মিষ্টি সুর ভেসে আসছে, এটা কি বৃষ্টির নিজস্ব কোন সুর!!
|
মন্তব্য
মন খারাপ হলে কুয়াশা হয়
উদাস হলে বৃষ্টি..
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
হুম কেন জানি বৃষ্টির সাথে বিষন্নতার একটি সম্পর্ক আছে
-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
ভাল্লাগলো।
বৃষ্টির মধ্যে আমার ছাতা নিয়ে হেঁটে বেড়াতে ইচ্ছে করতো। এখনো করে।
ছোটবেলায় গ্রামে গেলে বৃষ্টির দিনে কচুপাতার ছাতা বানিয়ে ঘুড়ে বেড়াতাম ।
-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
আহ্! নটরডেমের দিনগুলো মনে করিয়ে অফিসের মধ্যেই নস্টালজিক করে দিলেন।
আপনি কোন ব্যাচ কোন গ্রুপ? আমি '৯৬ এইচএসসি গ্রুপ ২।
-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
হাহাহাহা, আমি '০১ এইচএসসি গ্রুপ সি (কমার্স)।
সুন্দর একটি লেখার সাথে আমার অতি প্রিও একটি গান উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ...
ধন্যবাদ পুনম, গানটা আমারো খুব প্রিয়।
-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
ইয়ে মানে মুড়ি চানাচুরের কথা পড়ার পর
আর বৃষ্টি টিষ্টি মাথায় থাকেনি
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
তারপর কি মুড়ি চানাচুর খাওয়া শুরু করলেন নাকি ? আমাদের ভাগ কই ?
-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
বৃষ্টি আমার খুব প্রিয়। ভালো লাগে বৃষ্টি নিয়ে লেখাগুলোও। এখানেও তার ব্যতিক্রম ঘটল না।
- কদম ফুলের ঘ্রাণটা ঠিক কেমন? ভুলে গেছি মনে হচ্ছে। অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু আসল ঘ্রাণটা মনেহয় নিউরণ আউটপুট দিচ্ছে না!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধুগোদা
চোখ বন্ধ করে একমনে আমার লেখার লিঙ্কের গানটা শুনেনত আর মনে মনে ভাবুন আপনি সোহরোওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যে দিয়ে বৃষ্টির মধ্যে হাঁটছেন, দেখবেন ঠিক কদম ফুলের ঘ্রান পাচ্ছে।
-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
এই গানটায়যে কতোবার নেচেছি, বৈশাখী অনুষ্ঠান কিংবা রবীন্দ্র জয়ন্তী, চলুক নবধারা জলে।
আমরা বৃষ্টির দিনে লুডু খেলতাম, আহা দিন গুলি মোর সোনার খাচায় রইলো না রইলো না সেই যে আমার নানা রঙের দিন গুলি ...........................।।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
তানবীরাপু
দিলেনত মনটা আবার বিষন্ন করে।
-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
নতুন মন্তব্য করুন