আমারে তুমি অশেষ করেছ এমনি লীলা তব

ছোট্ট একটা ছেলে, তার দৃস্টি আকাশের পানে।সেখানে উড়ে বেড়াচ্ছে অসংখ্য ঘুড়ি, নানা রঙের, ছোট-বড় লেজওআলা-লেজছাড়া, নানা রকমের।ছেলেটার মনে আজ বড়ো আনন্দ কারন আজ ঐ অসংখ্য ঘুড়ির ভিড়ে তার নিজেরটাকেও সে খুঁজে পাবে। সেই আনন্দে সকাল থেকে তার খাওয়া দাওয়া বন্ধ। আজ বন্ধের দিন সুতরাং স্কুল নেই, বাবারও অফিস নেই তাই সকাল থেকে বাপ ছেলেতে মিলে চলছে ঘুড়ি বানানোর কাজ।সেত আর কম ঝক্কির কাজ নয়, প্রথমে কাগজ দিয়ে ঘুড়ি তৈরী করা, তাতে লেজ লাগানো, এবং সেই সাথে অনেক লম্বা সুতা এবং তাতে মাঞ্জা দেয়া।বাসার সামনে থেকে রাস্তার ধার দিয়ে ছোট ছোট খুটি গেড়ে লম্বা সূতা নিয়ে যাওয়া হয়েছে একেবারে সাগরদীঘির পাড় পর্যন্ত।আর তাতে প্রথমে মোম এর প্রলেপ দিয়ে পরে কাচেঁর গুড়া আর আঠা মিশিয়ে মাঞ্জা দেয়া হচ্ছে।বিকেলের সোনা রোদে সেই ঘুড়ি উড়ল নীল আকাশে সেই সাথে কুড়িয়ে আনল ছেলেটার জন্য অনাবিল আনন্দ আর উচ্ছ্বাস। [/i]

ছেলেবেলার অজস্র স্মৃতির মধ্যে কেন জানি ঐ একটি ঘটনাই আজ বড্ড বেশী মনে পড়ছে, কারন আজ ৬ জুন, আমার জন্মদিন।

আমার জন্ম টাঙ্গাইলের একটি গ্রামে যেখানে কোন একদিন আমার বাবারও জন্ম হয়েছিল।মার কাছে শুনেছি আমার জন্ম কোন আধুনিক বা সেকেলে হাসপাতালে নয় হয়েছিল একজন দাঈ এর কাছে। আমার এই ছোট্ট জীবনটা অনেক বৈচিত্রে ভরা।মানুষের ভালবাসা পেয়ে আর মানুষকে ভালবেসে বড় হয়েছি এই দেশের আর দশটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের মত।সাধ আর সাধ্যের সেই চিরাচরিত টানাটানির সংসারে আভিজাত্যের কোন ছোঁয়া ছিলনা, তাই ঘটা করে জন্মদিন পালন করা হয়নি কখনো।সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে নিজের জন্মদিনটা যে বিশেষ কিছু সেটা প্রথম বুঝতে শিখলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে। বুয়েট জীবনের সেই সময়গুলিতে প্রতিবছর এই দিনটাকে ঘিরে বন্ধুদের উচ্ছ্বাস, আনন্দ, আড্ডা দেখে কখন যে মনের অজান্তেই ৬ জুন একটি বিশেষ দিন হয়ে গেছে তা জানিনা।

আজকাল ফেইসবুকের কল্যানে জন্মদিনটা প্রিয়মানুষ আর বন্ধু বান্ধবের বৃত্ত পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে অনেকের মাঝে। সবার ভালবাসায় সিক্ত হতে কার না মন চায়। তাই ইদানিং জন্মদিন এলেই ফেইসবুকের শুভেচ্ছা বার্তাগুলি এক এক করে পড়ি, কত মানুষ আছে যাদের কখনো দেখিনি তারাও জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানায়, কেউ অগ্রিম আবার কেউবা পরে।মানুষের এই আন্তরিকতা দেখে নিজেকে তাদেরই একজন মনে হয় অন্তত এইদিনটাতে।

প্রতিটি জন্মদিন ঘিরেই আমার একই ধরনের অনুভুতি কাজ করে। জন্মদিনের ভোরে মনে হয় আবার নতুন করে সব কিছু শুরু করি, কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনা কখনো। সকালের প্রত্যাশা সারাদিনের প্রাপ্তিতে মুছে যায়, আমি রয়ে যাই সেই আগের মত, শতভাগ আবেগপ্রবণ একজন মানুষ।আবেগ আর যুক্তির দ্বন্দে আমি প্রতিনিয়ত বিদ্ধ হই কিন্তু দিনশেষে আবেগটাই বড্ড বেশী জিতে যায়। নিজের সবচেয়ে ভাল বা খারাপ দিক আমার এই আবেগই।তাই মানুষের ভালবাসা পেয়ে বা মানুষকে ভালবেসে নিজেকে যতটা ভাগ্যবান মনে হয় মানুষের কুৎসিত দিকগুলি দেখেও ততটাই হতাশ হয়ে যাই, তারপরেও মানুষ হিসেবে আমাদের সামনের দিকে যেতে হয় প্রতিনিয়ত, আর আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আজ জন্মদিনে তাই রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে ধার করে নিজেকে নিজেই উপহার দেই নিচের লাইনগুলিঃ

৬ জুন ২০০৯