এখানে এখন সবুজের ছড়াছড়ি, যেদিকে তাকাই দিগন্ত জোড়া সবুজ আর সবুজ, দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। এই সবুজ শীতের আগমনে হলদে হয়ে ঝড়ে যাবে, মনটা বিষন্ন হবে কিন্তু একটা আশা থেকে যাবে এই ভাবে যে আবার সামনের বসন্তে সবুজে সবুজে ভরে যাবে। কিন্তু আমি আজ এমন একটি সবুজের কথা বলব যে সবুজ হলদে হয়ে ঝড়ে গেছে, আর হয়ত কোনদিনই তাকে আর সজীব হতে দেখবনা।
প্রবাসে থাকলেও মনটা পড়ে থাকে সবসময় বাংলাদেশে। এই কানাডাই আড়াই বছর ধরে থাকলেও এখানকার খবরের কাগজ কদাচিৎ পড়ি অথচ দেশের অনলাইন সংবাদপত্র গুলি গোগ্রাসে গিলে ফেলি নিমিষেই। কিন্তু কোনভাবেই এই খবরটির জন্য প্রস্তুত ছিলামনা: ‘এমরানুল হক রাজিব’ জেএমবির আইটি শাখার প্রধান। মেলাতে পারছিনা কোন মতেই, কিভাবে একটা সবুজ হলদে রোগে আক্রান্ত হলো, ঝড়ে গেল নিরবে সেই ইতিহাস খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
বুয়েটের পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের ছাত্র হওয়ার সুবাদে ছেলেটিকে চিনতাম, আমাদের জুনিয়র ব্যাচের। ছেলেটি ভাল অভিনয় করত, আবৃত্তি করত, ভাল গান গেত, সব মিলিয়ে মেধাবী একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবেই ওকে আমরা জানতাম। আমি বিভাগে শিক্ষক থাকাকালীন সময়ে ২০০৪ সালে ‘পানিসম্পদ ডে’ আয়োজন করা হয়। আমার যতদূর মনে পড়ে সেই সময় আমরা একটি প্রকাশনা বের করি ‘ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারস প্রোফাইল’ নামে। প্রকাশনাটির গ্রাফিক্স ডিজাইনেও ছেলেটি কাজ করেছিল।পাশ করার পর সে বিভাগেই একটি প্রকল্পে গবেষনা সহকারী হিসেবে কাজ করত।
ভাবতে অবাক লাগছে যে ছেলেটি একদিন ভরাট কন্ঠে রোমান্টিক সব কবিতা আবৃত্তি করত, নাটকের ডায়ালগ দিত, মঞ্চে গান গাইত , রাত জেগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কাজ করত সেই ছেলেটি আজ নিরীহ মানুষ মারার কৌশল অর্জনে রপ্ত, একদিন যার হাত দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চসজ্জা হত, আজ তার হাত দিয়ে বোমা তৈরীর কৌশল বের হয়। যে সংগঠনটি (জেএমবি)ধর্মের নামে আমাদের দেশকে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে, নিরীহ মানুষ মেরে ইসলাম প্রচার করার ব্যবসায় নেমেছে, দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশকে ধ্বংস করে দেবার জন্য আমাদের বাঙালীর উৎসবকে বোমা মেরে গুড়িয়ে দিচ্ছে সেই সংগঠনের হয়ে কাজ করছে একজন সাংস্কৃতিক কর্মী !! কিভাবে এই সবুজ ছেলেগুলো হলদে হয়ে যাচ্ছে ? কারা ওদেরকে হিমাগারে নিয়ে গিয়ে ঝড়িয়ে ফেলছে ? এভাবে আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষিত ছেলেগুলিকে কিসের যাদুমায়ার ওরা ভুলিয়ে ফেলছে ? ইসলামত শান্তির ধর্ম, সেখানেত কোন সহিংসা নেই , এই অতি সাধারণ কথাটা কি ওরা বুঝতে পারেনা ?
আমাদের সবাইকে এক হয়ে আমাদের সবুজদের এই হলদে রোগ দূর করতেই হবে। ওরা যদি বেহেশত দোজখের ভয় দেখিয়ে এদেরকে বিপথে নিতে পারে আমরা শান্তির কথা বলে কেন ওদেরকে ফেরাতে পারবনা। আমি জোর দাবী জানাই যেন বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে শিক্ষকরা ছাত্র ছাত্রীদের এই বিষয়গুলি সম্মন্ধে পরিস্কার ধারনা দেয়। ছাত্রছাত্রীদের বেশী করে পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধূলা আর সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে রাখতে হবে। দরকার হলে এইসব জঙ্গী সংগঠনগুলোতে জড়িয়ে পড়ার কূফল গুলো ওদেরকে আগে থেকে জানাতে হবে, বোঝাতে হবে তা না হলে এইরকম আরো অনেকে হারিয়ে যাবে সুন্দর জীবন থেকে, তার চেয়ে বড় কথা এইসব ছেলেরা আমাদের নতুন প্রজন্মকে একটি ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেবে।আমরাকি আমাদের সন্তানদের সেই কুৎসিত ভবিষ্যতের পানে নিয়ে যাব ? আমাদের উত্তর যদি না হয় আসুন আমরা সবাই মিলে সবুজের এই হলদে রোগকে প্রতিরোধ করি।
মন্তব্য
সকালে এই খবরটা পড়ার পর থেকেই বেশ স্তম্ভিত আমি। জানি না কী বলবো। আমিও "পানিসম্পদ" দেখে ভাবছিলাম আপনি চিনবেন হয়তো।
আমরা বলি যে উচ্চশিক্ষা এবং সংস্কৃতির ছোঁয়া পেলে মন উগ্রপন্থার বিষে বিষাক্ত হয় না। সেই উপায় আর রইলো না। সকাল থেকে আফসোস করছিলাম এত লেখাপড়া করেও একটা মানুষ এমন হওয়া নিয়ে। এখন রাতটুকু আফসোস করবো এতটা সংস্কৃতিচর্চার পরও একজন মানুষ বিপথে যাওয়া নিয়ে।
আসলেই জানি না কী বলবো। লেখাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ ইশতি। আসলেই কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এইরকম উচ্চশিক্ষিত, প্রযুক্তিবিদ মানুষরা জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়লে তা আমাদের জন্য এক ভয়াবহ ভবিষ্যত বয়ে নিয়ে আসবে।
-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
আসলেই! একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে এটা কোনভাবেই মেলাতে পারছিনা।
আমিও হতবাক হয়েছি।
অবাক হয়েছি। তবে এগুলো মনে হয় বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
কী আশ্চর্য!
এরকম কীভাবে হয়?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
রাজিবকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি না। তবে বুয়েটে আমার পরের ব্যচের একজন ছাত্র হিসাবে তার এই ব্যপারটিতে মর্মাহত হয়েছি। তবে বিন্দুমাত্র অবাক হইনি। সবচেয়ে বড় ব্যপার হচ্ছে এদের চিন্তা ভাবনাকে আমরা অনেক সময় গুরুত্ব দিয়ে শনিনা। আমরা কিছু শব্দ ব্যবহার করি (যেমন জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ ইত্যাদি) এবং ধর্ম আর রাষ্ট্র ব্যবস্থার পৃথকিকরনের ক্ষেত্রে পারস্পরিক ঘৃনার পরিবেশ তৈরি করেছি। কেউ যদি বিশ্বাস করে ধর্ম আর রাজনীতি আলাদা নয় তাহলে তাকে এখন আউটল হতে হচ্ছে। এই পরিবর্তনটি কিছুটা দৃষ্টির অন্তরালে হচ্ছে।
একটা বিষয় লক্ষ্য করা দরকার এরা যা করছে তা ন্যায় সঙ্গত বলে মনে করছে। এদের নামে মাত্র ঘৃনা করার পশ্চিমা প্রেস্ক্রিপশন একটু পাশে রেখে কি আমরা আমাদের এই ভাইদের ফাসি না চেয়ে এদের সাথে সহানুভুতিশিল হতে পারিনা? বাংলা ভাইদের ফাঁসি দিয়ে শেষ করা যাবে না। আস্তে আস্তে আবার রাজিব হয়ে ফিরে আসবে।
রিচার্ড ডকিন্সের অনুসারি না হয়েও মানুষের পক্ষে সংবেদনশিল হওয়া সম্ভব। এই ডেমনাইজেশন প্রজেক্টের উৎসটি রাজনৈতিক তবে এর ফলে আমাদের সমাজে যে পোলারাইজেশন হচ্ছে তার খেসারত এর মধ্যেই আমাদের দিতে হয়েছে এবং হবে।
আমি জানি এই সময়ে এই মন্তব্য একন্তই খাপছারা শোনাবে। আর বিষয়টি আরো গুছিয়ে লেখা দরকার ছিল। এখন যতটুকু ভাবতে পারলাম বললাম।
জাহিদ ভাই, খুবই সময়োপোযোগী লেখা। শুধু আফসোস যাদের পড়া দরকার তারা পড়বে না, তারা ব্যস্ত বোমা বানানোতে।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
ধন্যবাদ তানবীরাপু ।
-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
নতুন মন্তব্য করুন