টিপাইমুখ বাঁধ ও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট-২

সচল জাহিদ এর ছবি
লিখেছেন সচল জাহিদ (তারিখ: সোম, ২০/০৭/২০০৯ - ৩:৩০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজকের পর্বে মূলত যা থাকছেঃ সাধারন দৃষ্টিকোণ থেকে বাঁধ ও ব্যারেজের প্রভাব।

শুধু বাঁধ নাকি বাঁধ ও ব্যারেজ ?

[justify]লেখার শুরুতেই আমি বাঁধ ও ব্যারেজের পার্থক্য ব্যাখ্যা করেছি। টিপাইমুখ প্রকল্পের প্রভাব নিয়ে মূল আলোচনা করার পূর্বেই একটি প্রশ্ন সবার সামনে আসে যা ইতিমধ্যে ঘুরে ফিরে আমাদের বিশেষজ্ঞরাও রেখেছেন ([৩],[৪],[৫],[৬],[৭])আর তা হলো শুধু বাঁধ নাকি বাঁধ ও ব্যারেজ।আমার আলোচনাতে আমি এই দুটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব। এখন পর্যন্ত ভারতের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে [২] টিপাইমুখ প্রকল্পের উদ্দেশ্যের মধ্যে এই বাঁধ থেকে ৯৫ কিমি ভাটিতে একটি ব্যারেজের প্রস্তাব রয়েছে যাতে আপাতত ১,২০০,০০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা আছে । বাঁধের প্রভাব, উজান নাকি ভাটি ? প্রকৃতির একটি নিজস্ব ছন্দ আছে আর আমরা যখন সেই ছন্দকে পরিবর্তিত করি প্রকৃতি তার শোধ নেয় তার নিজের মত করে। আজ থেকে এক দুই দশক আগেও আমরা পরিবেশ নিয়ে আগে এতটা উৎসুক ছিলামনা যতটা আজকে আছি। আগে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রয়োজন দেখা হত আর এখন মানুষই শুধু না সেই সাথে জীববৈচিত্রের ভালমন্দ দেখভাল করার দায়িত্ত্বও আমাদের কারন আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি আমাদের বেঁচে থাকা আসলে নির্ভরশীল একটি পরিপূর্ন বাস্তুসংস্থানের উপর। সেই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে এই সব কিছু সম্পর্কিত, আর তাই আমরা আজ পরিবেশ নিয়ে অনেক সচেতন । একটি বাঁধের মূলত দুই দিকেই প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, প্রথমতঃ বাঁধের উজানে আর দ্বিতীয়তঃ বাঁধের ভাটিতে।যেকোন বাঁধই তার উজানে একটি কৃত্রিম জলাধার তৈরী করে এবং এই জলাধারকে কেন্দ্র করেই কিন্তু উজানে বাঁধের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে ভাটিতে মূল সমস্যা সৃষ্টি করে বাঁধের কারনে সৃষ্ট নিয়ন্ত্রিত প্রবাহ। অর্থ্যৎ ভাটিতে আগে যেখানে প্রাকৃতিক ভাবে নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হতো সেখানে বাঁধের কারনে প্রবাহের পরিমান কৃত্রিম ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে । এই প্রবাহের মান ও বছরের বিভিন্ন সময়ে তার বন্টনের পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হবে তার উপর নির্ভরশীল জীব বৈচিত্র এবং পরিবেশ। একথা অনস্বীকার্য যে বাংলাদেশ টিপাইমুখের ভাটিতে থাকায় বাংলাদেশে তার প্রভাব পরবে দ্বিতীয় ভাবে।আমি প্রথমে সাধারন আঙ্গিকে বাঁধের প্রভাব আলোচনা করব এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের FAP 6 রিপোর্ট ও ভারতের টিপাইমুখ প্রকল্পের EIA এর আঙ্গিকে বাংলাদেশর উপর এই বাঁধের প্রভাব কি কি পড়বে তা নিয়ে গুরুত্ত্ব আরোপ করব।

বাঁধের উজানে প্রভাবঃ

খুব সাধারণ ভাবে দেখলে একটি বাঁধের কারনে এর উজানে নিম্নরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়ঃ

  • সৃষ্ট কৃত্রিম জলাধার বিপুল পরিমান এলাকাকে পানির নিচে নিমজ্জিত করে, ফলে আগে যেখানে শুষ্ক এলাকা ছিল তা জলাভূমিতে পরিনত হয়।এর ফলে অনেক মানুষের ঘরবাড়ি আবাদী জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। সেই সাথে বিপূল পরিমান বনভূমি ও অন্যন্য উদ্ভিদ পানির নিচে তলিয়ে যায়। এই সব উদ্ভিদ পচে গিয়ে বিপূল পরিমান কার্বন পরিবেশে নিঃসরণ করে যা কিনা প্রকারান্তরে বায়ুমন্ডলে গ্রীন হাউস গ্যাস বাড়ায়।
  • আগে যেখানে ছিল নদী সেখানে আজ জলাধার, ফলে পানির উপরিতলের ক্ষেত্রফল বেড়ে যায় অনেক গুনে। আমরা জানি পানির উপরিতলের ক্ষেত্রফল যত বাড়ে এর স্বতঃ বাষ্পীভবন(ইভ্যাপরেশন) এর হার তত বাড়ে। সুতরাং আগে নদী থেকে যে পরিমান পানি বাষ্প উপরে উঠে যেত এখন তার থেকে অনেক বেশী পরিমান স্বতঃবাষ্পীভূত হবে। এর পরিমান নেহায়েত কম নয়, এক হিসেব মতে আমেরিকার হোভার ড্যামের কারনে সৃষ্ট লেক মেড থেকে বাৎসরিক ৩৫০ বিলিয়ন গ্যালন পানি কমে যায় এবং এটি প্রকারান্তরে নদীর পানির প্রবাহকে কমিয়ে দেয়।
  • বাঁধের বোধকরি সবচাইতে বড় প্রভাব হল বাস্তুসংস্থান বিপর্যয়। বাঁধের উজানে স্বাভাবিক ভাবেই একটি স্থলজ বাস্তু সংস্থান ছিল। সেটি সম্পূর্ণ ভাবে বিনষ্ট হয়ে আমরা কৃত্রিম ভাবে একটি জলজ বাস্তুসংস্থান তৈরী করছি। এতে করে অনেক প্রজাতির স্থলজ প্রানী বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
  • অনেক প্রজাতির মাছ আছে যারা বছরের একটি বিশেষ সময়ে ভাটি থেকে উজানে চলে যায়। বাঁধের কারনে মাছের এই অভিভাসন সম্পূর্ণ রূপে বিনষ্ট হয় ফলে প্রকারান্তরে এর উৎপাদন কমে যায় বা নিঃশেষ হয়ে যায়।
  • নদীর প্রবাহে শুধু পানি থাকেনা, বরং এটি বয়ে নিয়ে চলে বিপূল পরিমান পলি।বাঁধ হলে এর উজানে নদীর গতিবের প্রায় শুন্য হয়ে যায়। ফলে নদীর পানির পক্ষে এই পলিকে আর ধরে রাখা সম্ভব হয়না বরং অভিকর্ষের প্রভাবে তা ধীরে ধীরে নিচে পড়ে যায় এবং জলাধারের বুকে জমতে থাকে।এটি প্রকারান্তরে জলাধারের নিচের স্তরের উচ্চতা বাড়িয়ে দেয়।

ভাটিতে বাঁধের প্রভাবঃ

 

  • সাধারনত বাঁধ নির্মানের পূর্বে নদীর যে স্থানে বাঁধ হবে তার উজানে থেকে বিকল্প পথে পানিকে ভাটিতে স্থানান্ত্রর করা হয় যাতে নির্মান কাজ করা যেতে পারে। এখন নির্মানের পর প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে আসে তা হলো বাঁধ যখন নির্মান শেষ হবে তখন সেটি কত সময় ধরে উজানের জলাধারকে পরিপূর্ন করবে। এটি যদি দ্রুত পরিপূর্ন করা হয় তাহলে প্রায় সিংহভাগ পানি অপসারিত হবে, ভাটিতে যার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব হবে ভয়াবহ[৩]।
  • আগেই বলেছি বাঁধের কারনে উজানে নদী তার সমস্ত পলি জলাধারের নিচে সঞ্চিত করে ফেলে। পানিবিদ্যুৎ টারবাইনের মধ্যে দিয়ে যে পরিমান পানি বের হয় সেটিই মূলত ভাটিতে পরিবাহিত হয়। এই প্রবাহ সম্পূর্নরূপে পলিমূক্ত আর তাই তার পলি ধারন ক্ষমতা সর্বোচ্চ। ফলে তা ভাটিতে প্রবাহিত হবার সময় নদীর বুক আর পাড় থেকে মাটি নিয়ে যায় আর তাই নদী ক্ষয়ের পরিমান বিপূলাংশে বেড়ে যায়।
  • পানি বিদ্যুৎ বাধেঁর কারনে স্বভাবতই বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ কমে যায়, ফলে ভাটি অঞ্চলের স্বাভাবিক জলজ বাস্তুসংস্থান ব্যহত হয়। অনেক জলজ প্রানীর প্রজননের সাথে বাৎসরিক বন্যা সম্পর্কযুক্ত। বর্ষা মৌসুমে পানি কমে যাওয়ায় এই সব প্রানীর স্বাভাবিক প্রজনন ব্যহত হয়। এছাড়া বন্যার সময় আশে পাশের স্থলাভূমি থেকে জলজ প্রানীর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য দ্রব্য নদীতে আশে সুতরাং একটি নদীর স্বাভাবিক বন্যা যখন ব্যহত হয় তখন এই প্রক্রিয়াটিও বাধগ্রস্থ হয়। নদীর দুই ধারে নদীকে কেন্দ্র করে এক ধরনের উদ্ভিদ জন্মায় যাকে আমরা ‘রাইপেরিয়ান ভেজিটেশন’ বলে থাকি। এই উদ্ভিদ গুলো আসলে স্বাভাবিক বন্যা চক্রের সাথে অভিযোজিত। সুতরাং যখন বাঁধের কারনে ভাটিতে স্বাভাবিক বন্যা ব্যহত হয় তখন আস্তে আস্তে এই অভিযোজন প্রক্রিয়া ব্যহত হয় এবং ফলশ্রুতিতে এদের বিলুপ্তি ঘটে।
  • নদীর সব গভীরতায় পানির বেগ একরকম নয়। সাধারণত নদীর তলদেশে বেগ কম থাকে আর উপরিতলের ঠিক আগে বেগ সর্বোচ্চ থাকে। উলম্ব তল বরাবর পানির এই বেগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মিল রেখে নদীর বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন ধরনের মাছ অভিযোজিত হয়। বাঁধের কারনে যখন নদীর স্বাভাবিক এই বেগ পরিবর্তিত হয় তখন মাছের স্বাভাবিক এই অভিযোজন বিনষ্ট হয় এবং তাদের আর বেঁচে থাকা সম্ভব হয়না।
  • সাধারনত সমতল ভূমির বৈশিষ্ট হলো এর নিম্নাঞ্চল। প্রাকৃতিক নিয়মে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি উপচে গিয়ে এই সব জলাভূমি গুলো পানি পূর্ন হয় এবং সারা বছর জলজ প্রানীর একটি অভয়াশ্রমে পরিনত হয় (উদাহরণ সরূপ বাংলাদেশের হাওড় গুলি) এছাড়াও এই নিম্নাঞ্চগুলি শুষ্ক মৌসুমে পানির মজুদ হিসেবে কাজ করে যা থেকে ছোট ছোট নদী বা খালগুলি বেইজ ফ্লো হিসেবে পানির যোগান পায়।। বাঁধের কারনে স্বাভাবিক বন্য ব্যহত হলে এই নিম্নাঞ্চগুলি সঠিক সময়ে পানি পাবেনা এবং এদের স্বাভাবিক মরফোলজি ব্যহত হবে আর সেই সাথে এর উপর নির্ভরশীল ছোট ছোট নদীগুলো শুকিয়ে যাবে।
  • সাধারনত নদীর পানির গভীরতা কম বলে এতে পানির তাপমাত্রা প্রায় ধ্রুব থাকে।কিন্তু বাধেঁর কারনে উজানে সে জলাধার সৃষ্টি হয় তা বেশ গভীর হয়। এই জলাধারের উপরিতল সূর্যের আলোর সংস্পর্শে থাকে বলে তাপমাত্রা বেশী হয় অন্যদিকে নিচের দিকে নিম্ন তাপমাত্রার পানি থাকে। পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের টারবাইনগুলি থাকে জলাধারে তলদেশে, আর তাই অপেক্ষাকৃত নিম্ন তাপমাত্রার পানি টারবাইনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হতে ভাটির নদীতে গিয়ে পড়ে। অনেক জলজ অনূজীব আছে যারা পানির তাপমাত্রার একটি বাৎসরিক চক্রের উপর নির্ভরশীল[১০]। খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমরা যখন এই চক্রকে পরিবর্তিত করি আমরা তাদের বেঁচে থাকাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলি।
  • আগেই বলেছি প্রজননের সময় মাছ সাধারনত ভাটি থেকে উজানে যায়। বাঁধের কারনে মাছের এই স্বাভাবিক অভিবাসন সম্পূর্ন রূপে ব্যহত হয় আর তাই প্রকারান্তরে আমরা একটি নদীতে বাঁধ দিয়ে তার ভাটির মৎসসম্পদ প্রায় ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাই।
  • বাঁধের কারনে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ বেড়ে যাবে।ভাটির অঞ্চলে সাধারনত এই সময়ে চাষাবাদ শুরু হয়।এই বর্ধিত পানির ফলে স্বাভাবিক কৃষি আবাদ প্রক্রিয়া ব্যহত হবে।
  • ভাটি অঞ্চলে বাঁধের সবচেয়ে ভয়াবহ একটি প্রভাব হচ্ছে ‘ড্যাম ব্রেক’। যদি কোন কারনে বাঁধ ভেঙ্গে যায় তাহলে সে উচ্চতা ও ফ্রিকোয়েন্সিত ঢেউ তৈরী হবে তা ভাটি অঞ্চলকে নিশ্চিন্ন করে দেবে।

উজান ভাটির উপর সাধারন প্রভাবঃ

  • বাঁধের যে প্রভাবটি উজান ভাটি দুই অঞ্চল এমনকি স্বয়ং বাঁধের উপরও প্রাভাব ফেলতে পারে তা হলো এর বিপূল পরিমান পানির ওজন মাটির অভ্যন্তরে চাপ বৃদ্ধি করতে পারে ([৪],[৭])।এই বর্ধিত চাপ অনেক সময় ভূমিকম্পের কারন হয়ে দাঁড়ায়, যদিও এটি নিয়ে যথেষ্ট মতপার্থক্য আছে তবুও এটিকে একেবারে অমূলক বলা যায়না।
  • আমি আগেই বলেছি বাঁধের কারনে সৃষ্ট জলাধারের উপরিতলের ক্ষেত্রফল নদীর উপরিতলের চেয়ে অনেক অনেক গুন বেশী। ফলে এই অঞ্চলের স্বতঃ বাষ্পীভবন বেড়ে যাবে। আমরা জানি স্বতোবাষ্পীভব বৃষ্টিপাতকে প্রভাবিত করে। ফলে বাঁধের অঞ্চলের জলবায়ু কিছুটা হলেও পরিবর্তিত হবে।
ব্যারেজের প্রভাবঃ ব্যারেজের প্রভাব সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যেই যথেষ্ট পরিমানে ওয়াকিবহল। ফারাক্কা আমাদের দেখিয়েছে উজানের ব্যারেজ কিভাবে ভাটিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম আমার আন্তঃসীমান্ত নদী নিয়ে লেখা একটি প্রবন্ধে। খুব সংক্ষপে বলতে ব্যারেজের উজানে প্রভাবের চেয়ে ভাটিতে প্রভাব অনেক অনেক গুন বেশী।ব্যারেজ যেহেতু মূলত পানির অপসারন ঘটায় তাই ভাটিতে পানির পরিমান কমে যায় এবং শুষ্ক মৌসুমে এটি আরো প্রকট হয়ে দাঁড়ায়। এই পানি অপসারনের পরিমান নির্ভর করে ব্যারেজের প্রয়োজনের উপর।অন্যদিকে উজানে ব্যারেজের প্রভাব স্বাভাবিক ভাবেই কম কারন ব্যারেজের কারনে সৃষ্ট এফ্লাক্স ( বর্ধিত পানিত উচ্চতা)তুলনামূলক ভাবে কম।
( চলবে )
পরবর্তী পর্বে থাকবেঃ বাংলাদেশে টিপাইমুখ বাঁধের সম্ভাব্য প্রভাব তথ্যসুত্রঃ [১] উইকিপিডিয়া [২]Environment Impact Assessment (EIA) of Tipaimukh HE(M) Project, submitted for North Eastern Electric Power Corporation Limited (NEEPCO) [৩] ডঃ জ়হির উদ্দিন চৌধুরী, ১২ জুলাই ২০০৯, ‘বরাক নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করা হলে তা হবে বিপদ জনক’, প্রথম আলোকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকার। [৪] ডঃ আইনুন নিশাত, ২৮ জুন ২০০৯, ‘দুই দেশেই টিপাইমুখ বাঁধের পরিবেশগত প্রভাবের জরিপ চালাতে হবে’, প্রথম আলোকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকার। [৫] ডঃ আসিফ নজরুল, ৫ জুলাই ২০০৯, ‘পিনাক রঞ্জনের ছোট ভুল, আমাদের বড় ভুল’ প্রথম আলো। [৬] এম এ কাসেম,৬ জুলাই ২০০৯, ‘টিপাইমুখঃ যে কথা কেউ বলছেনা’প্রথম আলো। [৭] ডঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম, ‘টিপাইমুখ বাঁধঃ কিছু শর্ত মানলে কম ক্ষতিকর হতে পারে’ প্রথম আলো। [৮] Dr.Sara Bennett, Mujib Huq and Dr. David Mclean,1994, ‘Initial Environmental Evaluation, Appendix to the Northeast RegionalWater Management Plan, Bangladesh Flood Action Plan 6 ( IEE NERP FAP 6)’,Final Version. [৯] Ma A Matin, 7 February 2006, ‘Another Farakka ? No, Tipaimukh Dam is different’ The Daily Star. [১০] The Ecology of Dams


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

চলুকচলুক

একটা জিনিস আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। বাঁধের কারণে বলা হয় শুষ্ক মৌসুমে পানি বেড়ে যাবে, আর বর্ষা মৌসুমে পানি কমে যাবে। ধরি টারবাইন এফ্লুয়েন্টের পরিমাণ ক ঘনমিটার/সেকেন্ড, শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহ খ ঘনমিটার/সেকেন্ড আর বর্ষা মৌসুমে পানিপ্রবাহ গ ঘনমিটার/সেকেন্ড। স্বাভাবিকভাবেই গ > খ। এখন যদি খ < ক হয়, তাহলেই কেবল শুষ্ক মৌসুমে পানি বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু টারবাইন এফ্লুয়েন্টের পরিমাণ কি এই শুষ্ক মৌসুমের পানিপ্রবাহের সাথে ম্যাচ করানো যায় না? পাশাপাশি বাঁধে কি কোন কন্ট্রোল্ড ফ্লো নিশ্চিত করা সম্ভব, যার ফলে বর্ষা মৌসুমে কিছু অতিরিক্ত পানিপ্রবাহের মাধ্যমে জলাভূমিতে পানি পৌঁছানো নিশ্চিত করা যায়?

যদি ধরেও নেয়া হয়, যে ব্যারেজ তৈরি করা হবে না, এবং বাঁধের রুল কার্ভ ভাটি অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করে তৈরি করা হবে, তারপরও তো যখন রিজারভয়ারে পানি ধরে রাখা শুরু হবে, সেই সময়টায় মেঘনা নদীতে পানিপ্রবাহ ব্যাহত হয়ে লোনাপানির সীমানা উত্তরে সরে আসবে। এতে করে আমাদের দক্ষিণাঞ্চল, যেখানে মূলত ধানচাষ করা হয়, সেখানকার মাটি দীর্ঘদিনের জন্যে নষ্ট হবে।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

দিগন্ত এর ছবি

কিন্তু টারবাইন এফ্লুয়েন্টের পরিমাণ কি এই শুষ্ক মৌসুমের পানিপ্রবাহের সাথে ম্যাচ করানো যায় না?

-- এই ধরণের জলবিদ্যুত উৎপাদন প্রণালীকে বলা হয় run of the river জলবিদ্যুত প্রকল্প। নদীর যে অংশে স্রোত বেশী থাকে বা ঢাল বেশী সেই অংশ স্বাভাবিক প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে সারাবছর একই হারে বিদ্যুত উৎপাদন করা যায়। আমার জানা দুই উপায়ে run of the river প্রকল্প চলে - প্রথমত একটি টানেল কেটে কিছু জল আলাদা করে নিয়ে গিয়ে তাকে আবার নদীতে ফিরিয়ে দেওয়া। আরেকটি হল একটা বাঁধ দিয়ে তার নিচের টানেল দিয়ে জলকে বের করে আনা - দ্বিতীয়ক্ষেত্রে ছোটো জলাধারও ব্যবহার হয়, কিন্তু যতটা ইনফ্লো থাকে ততটাই (বা কাছাকাছি) আউটফ্লো রাখা হয়। এটি পরিবেশ-বান্ধব কারণ নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে পরিবর্তন করে না। আমার বাবা মৎসবিজ্ঞানী ও তীব্র বাঁধবিরোধী। উনি সর্বত্র এই ধরণের প্রকল্পের প্রস্তাব করে থাকেন কারন ভাটিতে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মৎসসম্পদ।

এর সমস্যা হল সারাবছর যেহেতু নদীর প্রবাহ একই রকমের থাকে না তাই কার্যত বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ অনেক কম। যেমন ধরুন টিপাইমুখে যদি একটি run of the river প্রকল্প করা হয় তাহলে তার বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১০০-১৫০ মেগাওয়াট (আমার নিজের অনুমান)। আবার অন্যদিকে সুবিধা হল নদীতে পরপর কয়েকটি run of the river প্রকল্প চালানো সম্ভব। সিকিমে তিস্তার ওপর আর অরুণাচলে কয়েকটি run of the river প্রকল্প আছে। সিন্ধু উপত্যকায় কয়েকটি run of the river প্রকল্প আছে।

টিপাইমুখের ক্ষেত্রে বন্যা নিয়ন্ত্রণ হল মূল লক্ষ্য - বিদ্যুত উৎপাদন নয়। তাই জলাধার তৈরী করার কথা হয়েছে। টিপাইমুখ প্রকল্পের পরিকল্পক ব্রহ্মপুত্র বোর্ড - যাদের কাজ হল ব্রহ্মপুত্র ও বরাক উপত্যকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সচল জাহিদ এর ছবি


টিপাইমুখের ক্ষেত্রে বন্যা নিয়ন্ত্রণ হল মূল লক্ষ্য - বিদ্যুত উৎপাদন নয়।

দিগন্ত এই বিষয়টিতে আমি আপনার সাথে একমত হতে পারছিনা। পরিকল্পনা যেই করুক এটি বাস্তবায়ন করছে কিন্তু North Eastern Electric Power Corporation Limited (NEEPCO)। আর এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য যদি বন্যা নিয়ন্ত্রন হতো তাহলে এই নাম হতো Tipaimukh Flood Control Project কিন্তু তা না হয়ে এর নাম হয়েছে Tipaimukh Hydroelectric Project।

শুধু তাই নয় আপনি টিপাইমুখের EIA রিপোর্টের প্রথম চ্যাপ্টার (Introduction) এ দেখুন আর্টিকেল 1.5 Necessity of the Project and Benefits এর প্রথম পয়েন্টই হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন।


-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দিগন্ত এর ছবি

autoএইখানে আপনাকে কিছু রাজনীতির কথা বলি। টিপাইমুখ প্রকল্প হল একটি আন্তঃরাজ্য প্রকল্প যেখানে সব রাজ্যগুলো equitable share of benefit পায়। যেহেতু প্রকল্পের লোকসান মিজোরাম ও মণিপুরও নিচ্ছে (এদের জমি জলের তলায় যাবে) তাই তাদের equitable share of benefit হিসাবে উৎপন্ন বিদ্যুতের ভাগ দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুত উৎপাদন না হলে মণিপুর আর মিজোরামের কোনো benefit পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। টিপাইমুখ প্রকল্পের EIA এর মধ্যেই পেয়ে যাবেন টিপাইমুখ প্রকল্পের পরিকল্পনাকারী ব্রহ্মপুত্র বোর্ড। বাংলাদেশের FAP 6 এও এই প্রকল্পকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ/সেচ প্রকল্প হিসাবেই দেখানো আছে। তাদের চার্টারে বিদ্যুত উৎপাদনের কথা লেখা নেই - তবে বন্যা নিয়ন্ত্রক সব বাঁধেই বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব কারণ উভয়ের হাইড্রোগ্রাফ একই রকমের। আমি ছবিতে বন্যা নিয়ন্ত্রক বাঁধের হাইড্রোগ্রাফ দিলাম।

এবার আপনি বলতেই পারেন আর্থিক দিক থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের পরিমাণ বন্যা নিয়ন্ত্রণের লাভের থেকে অনেক বেশী। সেই কারণে প্রোজেক্টের পরিকল্পনা ব্রহ্মপুত্র বোর্ড করলেও বিদ্যুত উৎপাদন করছে নিপকো। কিন্তু প্রোজেক্টের সমর্থক আর বিরোধী গ্রুপ দেখলেই বুঝবেন কাদের ইচ্ছায় প্রজেক্ট হচ্ছে। ভাটিতে বরাক উপত্যকার মানুষ বহুকাল ধরেই এই বাঁধের দাবীতে সরকারকে চাপ দিচ্ছে - অপরদিকে মনিপুর সরকার কিছুদিন আগে পর্যন্ত বাঁধের বিরোধিতায় ছিলেন (১৯৯৭ সালে বাঁধের বিরোধে মণিপুর বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ হয়েছিল)। আরেকভাবে দেখলে উত্তর-পূর্ব ভারতে বিদ্যুত উৎপাদনের অনেক বিকল্প আছে - ব্রহ্মপুত্রের উপনদীগুলোর অনেকগুলোতেই নদীর স্বাভাবিক জলপ্রবাহ প্রায় অপরিবর্তিত রেখেই বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব। সুতরাং এই প্রকল্পের কোনো exclusivity আসে না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সচল জাহিদ এর ছবি

বাংলাদেশের FAP 6 এও এই প্রকল্পকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ/সেচ প্রকল্প হিসাবেই দেখানো আছে

কথাটি পুরোপুরি সঠিক নয়। FAP 6 এর রিপোর্টে এটিকে দেখানো হয়েছে " Tipaimukh Dam/ Cachar Irrigation Project in India" হিসেবে।

এছাড়া নিচের লাইনটি দেখুনঃ

India has recognized the potential for constructing a major dam on the Barak River at Tipaimukh gorge for many years. In recent years a proposal has been advanced for a multi-purpose project that would provide hydro-power and flood control (see Regional Plan, Chapter 4, for project data)[Article 8.3.1 FAP 6 Report]

এখানেও কিন্তু আগে বিদ্যুৎ পরে বন্যা নিয়ন্ত্রন এর কথা বলা হয়েছে।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দিগন্ত এর ছবি

এখানেও কিন্তু আগে বিদ্যুৎ পরে বন্যা নিয়ন্ত্রন এর কথা বলা হয়েছে।

আমার মনে হয় আমি আপনাকে বক্তব্য বোঝাতে পারিনি। একই বাঁধ থেকে একই ডিজাইনে (মাল্টিপারপাস ড্যাম) যদি বিদ্যুত উৎপাদন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা (আরো একটি - ভাটিতে নাব্যতা বৃদ্ধি) সম্ভব হয় তাহলে এই তিনটিকে আলাদা করে দেখার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর্থিক গুরুত্ব হিসাবে যেটা বেশী সেটার নাম আগে আসে, কিন্তু একটা অন্যের সাথে একসূত্রে জড়িত। এরা আলাদা হলে বাঁধের ফিসেবিলিটি স্টাডিতে এই তিনটি বিকল্প নিয়ে আলোচনা থাকত। যেমন ধরুন শুধু বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধ হলে কি কি হবে, শুধু জলবিদ্যুতের জন্য হলে কি কি হবে ইত্যাদি বলে আলাদ কিছু হয় না। সুতরাং বাঁধের উদ্দেশ্য তিনটিকে একসাথে নিয়েই দেখতে হবে, আলাদা করে কোনটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ সেটা দেখার জন্য বাঁধের ইতিহাস দেখা দরকার।

আলাদা একটা প্রশ্ন করি। ধরি বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল লক্ষ্য ও তার জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হল। তাতে কোনো বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে না। এতে বাঁধের মূল চরিত্রে কি কি পার্থক্য আসতে পারে যা বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষেত্রে হবে না?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সচল জাহিদ এর ছবি

আলাদা একটা প্রশ্ন করি। ধরি বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল লক্ষ্য ও তার জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হল। তাতে কোনো বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে না। এতে বাঁধের মূল চরিত্রে কি কি পার্থক্য আসতে পারে যা বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষেত্রে হবে না?

বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ দিয়ে দুই ভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রন করা যায়ঃ

প্রথমতঃ বাঁধের নিচে একটা সুড়ংগ (স্লুইস ওয়ে) থাকবে যার ধারন ক্ষমতা হবে ভাটির নদীর সর্বোচ্চ পরিবহন ক্ষমতার সমান। ফলে স্বাভাবিক ভাবে বাঁধের উজানে ততটুকু পানিই জমবে যতটুকু পানি ভাটির নদীর পরিবহন ক্ষমতার থেকে বেশী। এক্ষেত্রে মোটামুটি ভাটির নদীর স্বাভাবিক হাইডোগ্রাফ একই রকম থাকে শুধু মাত্র পিক প্রবাহ বন্যার সময় সেটি দ্রুবক হয়ে যায়।

দ্বিতীয়তঃ বাঁধের সাথে গেইটেড স্পিলওয়ে/স্লুইস গেইট থাকবে যা দিয়ে ভাটিতে কতটুকু পানি যাবে তা নির্ধারণ করা যায়। এক্ষেত্রে বর্ষা মৌসুমে পানি সঞ্চয় করা হবে এবং তা দিয়ে সারাবছর একটি মোটামুটি গড় প্রবাহ সরবরাহ করা হয়।

প্রথম প্রকারের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যহত হবে কারন এক্ষেত্রে পানির প্রবাহ আসলে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে আসলে ভাটির অঞ্চলের পরিবহন ক্ষমতার দ্বারা কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে তা নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিৎ আসলে উৎপন্ন বিদ্যুতের পরিমানের দ্বারা কারন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন নিরবিচ্ছিন বা ধ্রুব প্রবাহ।

দ্বিতীয় প্রকারের বাঁধের ক্ষেত্র আসলে বিদুৎ উৎপাদনের জন্য আদর্শ।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দিগন্ত এর ছবি

যদি ধরেও নেয়া হয়, যে ব্যারেজ তৈরি করা হবে না

- আমি EIA দেখার পরে নিশ্চিত যে হবেই - তাই ব্যারেজ হবে ধরেই আলোচনা করা ভাল। তবে ব্যারেজ হলেও শুখা মরসুমে জল বেশীই আসবে। কারণ বাঁধের ধরে রাখা জল শুখা মরসুমে ছেড়ে দিতেই হবে যাতে বিদ্যুত উৎপাদন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। কিন্তু বরাক উপত্যকায় বাড়তি জল নিয়ে নেবার মত চাষের জমি নেই। ভৌগোলিকভাবে জল অন্য বেসিনে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। তাই প্রবাহ বাড়বেই।

এবং বাঁধের রুল কার্ভ ভাটি অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করে তৈরি করা হবে

- এইটাও অসম্ভব। জাহিদের লেখা পড়ে দেখুন বাঁধের প্রভাবগুলোর মধ্যে সবথেকে বড় বাস্তব হল বাস্তুতন্ত্র ক্ষতি কারণ স্বাভাবিক প্রবাহ বাঁধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে run of the river প্রকল্প হলে ব্যাপার অন্য।

যখন রিজারভয়ারে পানি ধরে রাখা শুরু হবে

- রিজার্ভারে সাধারণত বর্ষায় জল ভরা হয়। পরপর কয়েকটি বর্ষায় রিজার্ভারে জল ভরা হবে। তবে বর্ষায় জল কমলে salinity intrusion হয় না (ভেবে ব্যাখ্যা বের করুন কেন হাসি )। ফারাক্কার ফলে শুখা মরসুমে জল কমে যায় তাই salinity intrusion বাড়ে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আমি EIA দেখার পরে নিশ্চিত যে হবেই - তাই ব্যারেজ হবে ধরেই আলোচনা করা ভাল। তবে ব্যারেজ হলেও শুখা মরসুমে জল বেশীই আসবে। কারণ বাঁধের ধরে রাখা জল শুখা মরসুমে ছেড়ে দিতেই হবে যাতে বিদ্যুত উৎপাদন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। কিন্তু বরাক উপত্যকায় বাড়তি জল নিয়ে নেবার মত চাষের জমি নেই। ভৌগোলিকভাবে জল অন্য বেসিনে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। তাই প্রবাহ বাড়বেই।

এ প্রসঙ্গে একটা আনাড়ী প্রশ্ন:
শুকনো মওসুমে ড্যামের ছেড়ে দেয়া জল যদি ভাটিতে ছেড়ে দিতেই হয়, মানে বরাক উপত্যকা বা আশেপাশের অন্য এলাকায় যদি বাইপাস করে পানি প্রবাহিত করার দরকার নাই থাকে, তবে ব্যারাজের প্রয়োজনটা কি বুঝছিনা। কারণ ভেজা মওসুমে তো ড্যামের রিজার্ভার পানি সরিয়ে নিয়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ করবে, সেখানেও তো কমে যাওয়া পানি প্রবাহ ব্যারাজ আটকাচ্ছেনা, তাইনা?
মোটকথা ফুলেরতল ব্যারাজের কাজটা তাহলে কি হবে?

আরেকটা ব্যাপার, যতটুকু জানি ভারতের নিউক্লিয়ার পাওয়ারপ্ল্যান্ট তৈরী করার মতো নিজস্ব প্রযুক্তি আছে, যেটা বেশ কস্ট-ইফেক্টিভ। তো, এই অঞ্চলে সেরকম প্ল্যান্ট না বসিয়ে পানিবিদ্যুতের হ্যাসলে যাবার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা ভাবছিলাম। আপনার উপরের কমেন্টে মনে হলো বন্যা-নিয়ন্ত্রণটাই মূখ্য উদ্দেশ্য। সেক্ষেত্রে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কি আর কোন ইকোফ্রেন্ডলি উপায় নেই কিনা সেটা ভাবছি।

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

দিগন্ত এর ছবি

ব্যারেজের পাশে থাকে সেচের খাল। সেখান থেকে চাষের জমিতে জল সরবরাহ করা হয়। ফুলেরতালেও একই ব্যাপার। শুকনো মরসুমে জলটাকে আটকে দিয়ে তার কিছু অংশ ডাইভার্ট করা হবে সেচের জমিতে।

বিদ্যুত উৎপাদনের অসংখ্য উপায় আছে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের কথা যখন বললেনই তখন বলি - ভারত যদি বাংলাদেশের ত্রিসীমায় কখনও নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রস্তাব রাখে সেটার ব্রেক স্টাডিতে কিন্তু বাংলাদেশের জন্য বাঁধের থেকেও দশগুণ ভয়ানক চিত্র থাকবে। উল্টোটাও সত্যি - বাংলাদেশের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্রেক স্টাডিও একই ব্যাপার করবে।

বন্যা-নিয়ন্ত্রণের সোজা কথায় কোনো ইকো-ফ্রেন্ডলি উপায় থাকার কথা না কারণ বন্যা নিজেই ইকোসিস্টেমের বড় অংশ। জাহিদভাইয়ের লেখায় পড়তে পারেন বন্যার ইকোসিস্টেমে জলাভূমি, গাছপালা ও জলজ প্রাণী সবই অন্তর্ভুক্ত। বন্যার সবথেকে ইকো-ফ্রেন্ডলি উপায় হল বন্যার সাথে মানিয়ে নেওয়া :)। দুভাবে এটা করা সম্ভব - মাইক্রো-ইনফ্রাট্রাকচার তৈরী করে বন্যার্তরা যাতে বেঁচে থাকতে পারে সেটা নিশ্চিত করা আর আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম তৈরী করে সবাইকে বন্যার আগেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া। হিমু কিছুদিন আগে এরকম মাইক্রো-ইনফ্রাট্রাকচারের একটা উদাহরণ দিয়েছিল।

আমি যে স্টেটে থাকি (ওয়াশিংটন), সেখানে কিছুদিন আগে একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণকারী বাঁধ ভেঙে ফেলা হয়েছে কারণ বাঁধটি স্যামন মাছের উজানে পাড়ি দেওয়ায় বাধা দিচ্ছিল। ভারতে দামোদর আর বাংলাদেশে কর্ণফুলীতে অনুরূপ কারণে গাঙ্গেয় শুশুক বিলুপ্তির পথে। কিন্তু ভারতে বা বাংলাদেশে তা নিয়ে কারও মাথাব্যাথা নেই।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আপনি এই থ্রেডের প্রথম মন্তব্যে লিখলেন,

কিন্তু বরাক উপত্যকায় বাড়তি জল নিয়ে নেবার মত চাষের জমি নেই। ভৌগোলিকভাবে জল অন্য বেসিনে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। তাই প্রবাহ বাড়বেই।

অথচ এখন বলছেন,
ব্যারেজের পাশে থাকে সেচের খাল। সেখান থেকে চাষের জমিতে জল সরবরাহ করা হয়। ফুলেরতালেও একই ব্যাপার। শুকনো মরসুমে জলটাকে আটকে দিয়ে তার কিছু অংশ ডাইভার্ট করা হবে সেচের জমিতে।

আসলে কোনটা হবে? সেচের পানি ডাইভার্ট করা হবে? নাকি হবেনা?

প্লাস, উপরে "তার কিছু অংশ" বলতে আসলে কতটুকু?

এরকম একটা ধোঁয়াটে বিবরণ ফারাক্কার সময়ও দেয়া হয়েছিলো, কোনরকম ক্ষতির সম্ভাবনা নেই সেরকম "বটিকা" গেলানো হয়েছিলো আমাদের। তারপর আমাদের "বিশেষজ্ঞ" আর "দেশপ্রেমিক" নেতারা ভারতের সাথে বৈঠকের পর বৈঠক করে পানির হিস্যা নির্ধারণ করে ভাব দেখিয়েছিলেন যে কোন সমস্যা হবেনা ... অথচ আজ পদ্মা নদীর কি অবস্থা তা নিশ্চয়ই রেফারেন্স দিয়ে বলার দরকার নেই, তাইনা?
দেখা যাচ্ছে ফুলেরতাল ব্যারাজ দিয়েও শুকনো মওসুমে পানি ডাইভার্ট করা হবে, বস্তুতঃ তা না করা হলে তো ব্যারাজেরই দরকার হয়না, তাইনা? কাজেই এই পানির পরিমাণ কখনও যদি বাড়ানোর দরকার হয়, তখন একইসাথে আমাদের ভাটিতে মরুভূমির জন্মেরও দরকার হচ্ছে, তাইনা?

নিউক্লিয়ার পাওয়ারপ্লান্টের ব্যাপারে, প্রথমতঃ, ভারতকে কেউ বাংলাদেশের ত্রিসীমানার ভেতরে এসে বানাতে বলছেনা ... দ্বিতীয়তঃ ভারতে অলরেডী এই টেকনোলজী বেশ ভালো, এবং এতে আগে ভারতের নিজের নিরাপত্তার নিশ্চিতকরণ লাগে ... বাংলাদেশের লোকও সেটা বোঝে ... তাই এতে কেউ ক্ষেপার কথা না ...কাজেই "বাংলাদেশের আন্দোলন বাড়বে" এরকম কোন কারণ কোনভাবেই নিউক্লিয়ার পাওয়ারপ্লান্ট স্থাপনের প্রতিবন্ধকতা হতে পারেনা

সে হিসেবে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে যে, এত এফিশিয়েন্ট পাওয়ার প্রোডাকশন টেকনোলজী থাকতেও কেন এত ঝামেলা করে জলবিদ্যুৎই উৎপাদন করতে হবে ... "এটার পেছনে কি রিভার লিংকেজ মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়নটা মূল কারণ নয়?" -- প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে

বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে আমারও মনে হয় ইকোফ্রেন্ডলি "খাপ খাইয়ে নেয়ার" পদ্ধতিটিই বেটার ... একে তো প্রকৃতিতে হস্তক্ষেপ, তার ওপর পাহাড় এবং নদী দুটোকে ঘিরেই এই হস্তক্ষেপ, ভারতের সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজনের জন্যও ব্যাপারটা ভয়াবহ হতে পারে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

দিগন্ত এর ছবি

ফারাক্কার সাথে এই প্রকল্পের তুলনা হয় না। ফারাক্কায় জল ভাগাভাগি হয়। এখানে জল সঞ্চয় করে তারপরে ভাগাভাগি। সঞ্চয়িকৃত অতিরিক্ত জলের থেকে নেওয়া ভাগের পরিমাণ কম হলে ভাটিতে জলের ভাগ বাড়তে বাধ্য। এরকম ভাবতে পারেন - ধরা যাক প্রকল্পের দাবীমত শুখা মরসুমে গড়ে ২০০ (১৭০-২৫০ কিউমেক - বাংলাদেশ FAP 6) কিউমেকের জায়গায় ৫০০ কিউমেক (একই রিপোর্টের দাবী) আসবে। তার থেকে ৫০ কিউমেক জল ব্যারেজ ডাইভার্ট করলেও ৪৫০ কিউমেক জল পড়ে থাকে। তাহলে আগের তুলনায় এখনও ২৫০ কিউমেক জল শুখা মরসুমে বেশীই থাকল।
ফারাক্কার সময় বাংলাদেশ সরকার জানত এতে কি কি সমস্যা হবে। সেইজন্য নেপালে জলাধার তৈরীর প্রস্তাব দিয়েছিল। বর্ষার জল সঞ্চয় করে সেই জল ভাগাভাগি করলে ফারাক্কাতেও সমস্যা থাকত না।
লক্ষ্যণীয় যে আমি কখনই বলিনি টিপাইমুখের ফলে বাংলাদেশের ক্ষতি হবেনা। হাসি এরকমটা সম্পূর্ণ অসম্ভব।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সচল জাহিদ এর ছবি

হিমু ধন্যবাদ তোমার প্রশ্নের জন্য। উত্তরগুলি নিচে দেবার চেষ্টা করেছি।

কিন্তু টারবাইন এফ্লুয়েন্টের পরিমাণ কি এই শুষ্ক মৌসুমের পানিপ্রবাহের সাথে ম্যাচ করানো যায় না?

dam1

উপরের চিত্রটির আলোকে এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। নীল লাইনটি একটি নদীর বৎসরের বিভিন্ন সময়ের সাথে এর প্রবাহের একটি সাধারণ লেখচিত্র বা হাইড্রোগ্রাফ। আমরা দেখতে পাচ্ছি বর্ষা মৌসুমে অতি দ্রুত এর প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। একটি বাঁধের মূলনীতি হলো এই বর্ষা মৌসুমের পানিকে জলাধারে সঞ্চিত করা। এই কৃত্রিম নিয়ন্ত্রনের ফলে নদীর হাইড্রোগ্রাফ পরিবর্তিত হয় যা এখানে মেরুন রঙের লাইন দিয়ে দেখানো হয়েছে। এখন A অংশ হচ্ছে বাঁধ যতটুকু পানি বর্ষাকালে সঞ্চয় করছে। আমরা জলাধারের ক্ষেত্রে পানিসম্পদের খুব বেসিক একটি তত্ত্ব যদি প্রয়োগ করি তাহলে দাঁড়ায়,

সময়ের সাথে জলাধারের পানির বৃদ্ধির হার=বের হয়ে যাওয়া প্রবাহ- আগত প্রবাহ

এখন এক বছর সময় আমরা যদি বিবেচনা করি তাহলে এই সময়ে আমাদের জলাধারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির হার অবশ্যই শুন্য হতে হবে তা না হলে ক্রমে ক্রমে এর উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে এবং একসময় বাঁধ উপচে পড়বে। এই বৃদ্ধির হারকে শুন্য রাখতে হলে এক বছরে যততুকু পানি সঞ্চিত হয়েছে তা বের করে দিতে হবে। অর্থ্যাৎ উপরের চিত্রে B পরিমান পানি জলাধার থেকে বের করে দিতে হবে যেন A = B হয়। সুতরাং এখন বিষয়টি পরিষ্কার হচ্ছে যে কেন বাঁধের ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পায় আর বর্ষা মৌসুমে কমে যায়।

পাশাপাশি বাঁধে কি কোন কন্ট্রোল্ড ফ্লো নিশ্চিত করা সম্ভব, যার ফলে বর্ষা মৌসুমে কিছু অতিরিক্ত পানিপ্রবাহের মাধ্যমে জলাভূমিতে পানি পৌঁছানো নিশ্চিত করা যায়?

স্পিল ওয়ে ব্যবহার করে পানির উচ্চতা একটি নির্দীষ্ট উচ্চতায় রেখে অবশ্যই বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি ভাটিতে প্রবাহ করা যায় কিন্তু তাতে বাঁধের মূলনীতি অর্থ্যাৎ বর্ষা মৌসুমে পানি সঞ্চয় করা ব্যহত হবে এবং ফলশ্রুতিতে শুষ্ক মৌসুমে টারবাইনের জন্য প্রয়োজনীয় পানি থাকবেনা।

বাঁধের রুল কার্ভ ভাটি অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করে তৈরি করা হবে, তারপরও তো যখন রিজারভয়ারে পানি ধরে রাখা শুরু হবে, সেই সময়টায় মেঘনা নদীতে পানিপ্রবাহ ব্যাহত হয়ে লোনাপানির সীমানা উত্তরে সরে আসবে।

প্রথমত ভাটি অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করে বাস্তবিক ভাবে বাঁধ তৈরী সম্ভব নয়।

টিপাইমুখ রিজার্ভারে পানি ধরে রাখা শুরু হবে বর্ষায়। বাংলাদেশের পদ্মা, উপরের মেঘনা আর যমুনার মিলিত প্রবাহ হচ্ছে নিচের মেঘনা। সমুদ্রের নোনা পানির সাথে এই নিচের মেঘনা সরাসরি যুক্ত। বর্ষা মৌসুমে যমুনা এবং পদ্মা দুই নদীই বিপূল পরিমান পানি বহন করে নিয়ে আসে এবং তিন নদীর এই মিলিত প্রবাহের সিংহ ভাগ আসে পদ্মা ও যমুনা থেকে। তাই আমার ধারনা মতে টিপাইমুখে রিজার্ভারের কারনে লবনাক্ততা বাড়ার কোন আশঙ্কা নেই, তবে এই বিষয়ে গবেষণা প্রয়োজন।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বাহ বাহ, আজকে পার্থক্যটা ভাল বুঝতে পারলাম। সিরিজ চমৎকার হচ্ছে। চলুক

Rashed [অতিথি] এর ছবি

To Himu,
The electricity generation in a turbine depends on the flow rate through turbine and water level upstream of the dam. Hence, reducing flow-rate should reduce power generation. Probably for the same reason, in high-flow season, the tendency is to raise water level. Excess water is drained through spillways.

হিমু এর ছবি

১.
এখানে দেখুন।

২.
ধন্যবাদ। আমি যা জানি, তা হচ্ছে টারবাইনের পাওয়ার = পানির ঘনত্ব × জলস্তম্ভের উচ্চতা × ফ্লো রেট × অভিকর্ষজ ত্বরণ। মানে, শেষ পর্যন্ত পাওয়ার = একটা ধ্রুবক × জলস্তম্ভের উচ্চতা × ফ্লো রেট। ধরি একটা বাঁধে দশটা ইউনিট আছে। এখন দশটা ইউনিট চালু রাখলে মোট ফ্লো রেট বেশি থাকলেও জলস্তম্ভের উচ্চতা দ্রুত হ্রাস পাবে (যদিও এটা রিজারভয়ারের সাইজের ওপর নির্ভর করে), যেহেতু শুষ্ক মৌসুমে পানির ইনফ্লাক্স কম। সেক্ষেত্রে অল্প সংখ্যক ইউনিটকে (দশের কম) অপারেশনে রাখলে কম ফ্লো রেট কিন্তু বেশি হেডে প্ল্যান্ট চালানো যাবে, উৎপন্ন পাওয়ার খানিকটা কম হবে। এতে করে শুষ্ক মৌসুমের পানিপ্রবাহ বজায় রাখা যাবে, তখন আর ভাটি অঞ্চলের ধানচাষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আমার সীমিত জ্ঞানে ভুল থাকলে ধরিয়ে দেবেন।

যদি সম্ভব হয়, হাইড্রোইলেকট্রিক প্ল্যান্টের অপারেশন নিয়ে লিখতে পারেন। আমার মনে হয় এ ব্যাপারে আমাদের সবারই পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

দিগন্ত এর ছবি

হিমুভাই আপনি বাঁধের টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো বোঝার জন্য আমার মত টেক্সটবুক পড়ুন। আমি আই-আই-টি দিল্লীর একটা ২৯ পাতার Introduction to Dams পড়েছি। আপনি আর কোনো ভাল টেক্সটবুক পেলে আমাকে জানাবেন।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হিমু এর ছবি

ধন্যবাদ।

এখানে দেখলাম বাঁধের গঠন নিয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অপারেশনের ওপর কিছু পেলে জানাবো আপনাকে।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

শামীম এর ছবি

ধারাবাহিক লেখা ভাল হচ্ছে .... চলুক

ভাটিতে বাঁধের প্রভাবের ২ নং পয়েন্টে উল্লেখিত ব্যাপারটা জানা ছিল না ... (পলি ধারণ ক্ষমতার ব্যাপারটা)
যা জানতাম: ভূমি ক্ষয়ের ব্যাপারটা জলস্রোতের বেগের উপর নির্ভরশীল। এজন্য কোনো কোনো এলাকায় নদীর ভাঙ্গন রোধকল্পে অর্ধভেদ্য স্পার দিয়ে প্রবাহের গতিবেগ কমিয়ে দেয়া হয়; স্পার/গ্রোয়েন ইত্যাদি দিয়ে মূল স্রোতের প্রবাহটাকে তীর থেকে নদীর মাঝের দিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়।

বেশ কয়েক বছর আগে ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্য (যিনি বিবাহসূত্রে আমার একরকম আত্মীয়) টিপাইমুখ বাঁধের সিমুলেশন মডেল স্টাডি করেছিলেন। সিমুলেশনের শর্তগুলো কী ছিল জানি না ... তবে ফলাফল ছিল বাংলাদেশ ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হওয়া ------ এই ধরণের কোনো রিপোর্ট কি কেউ কখনো কোনো সূত্রে দেখেছেন? (এগুলো প্রকাশ হওয়ার আগেই গায়েব হওয়ায় বেশ দক্ষ!)

আর হ্যাঁ: হিমু যেমন উল্লেখ করেছেন .... ভাটির নদীতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির (Salinity intrusion) ব্যাপারটা বাদ পড়ে গেছে। ইতিমধ্যেই গঙ্গার পানি অপসারনের ফলে এই ঘটনা ঘটছে। গড়াই নদী পূণর্বাসন প্রকল্পে এজন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সিমুলেশনের শর্তগুলো কী ছিল জানি না ... তবে ফলাফল ছিল বাংলাদেশ ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হওয়া

আমাদের জন্য এখন এই রকম বাস্তবতা ধরেই নিয়েই প্ল্যান-সি/ডি/এফ তৈরি করা বুদ্ধিমানের কাজ। মরুভূমিতে খেজুর গাছ ফলাবো, আফগান/আরব কায়দায় উটে চড়ে বেড়াবো। তেল তো নেই, তাই বড় বড় ক্যাসিনো বসিয়ে সেখান থেকে রাজস্ব আদায় করবো। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই ছোট বেলা থেকেই পশ্চাৎ উদাম করে ঘুরে বেড়ানো শিখবো। সুলভে োদ মেরে যাবে সবাই এসে।

ব্রিটিশ রাজের সাথে ভারতীয় নেতাদের কী চুক্তি হয়েছিলো, তা জানতে ইচ্ছা করে খুব। ভারতবর্ষ ভাগ হলো ঠিকই, কিন্তু সব পানির বখরা ভারতকে দিয়ে। প্রতিবেশী প্রতিটা দেশের উপর একটা ছাদের মত ভারত আছেই। অনুযোগ-অভিযোগ-আন্দোলন করে লাভ নেই। বাঁধ এরা দেবেই। এভাবে ভাবতে/বলতে চাই না, কিন্তু ভারতের মত জঘন্য প্রতিবেশী কমই পাওয়া যায়। গঙ্গার পানি দফায় দফায় আটকালে বাংলাদেশের কী হবে, তা না বোঝার মতো নির্বোধ ভারত না। তবুও উত্তরবঙ্গকে মরুভূমি করেছে। টিপাইমুখ নিয়েও সেটাই করবে। মহাজনের কৃপা ছাড়া আমাদের কোনো পরিত্রাণ নেই। হাসি

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ শামীম ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য।

আর হ্যাঁ: হিমু যেমন উল্লেখ করেছেন .... ভাটির নদীতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির (Salinity intrusion) ব্যাপারটা বাদ পড়ে গেছে।

টিপাইমুখ বাঁধের ফলে বর্ষা মৌসুমে কেন লবনাক্ততা বাড়বেনা সেই সম্পর্কিত আমার ব্যখ্যা উপরে হিমুর উত্তরে দিয়েছি। বাকী রইল শুষ্ক মৌসুমের কথা, যেহেতু বাঁধের ফলে শুষ্ক মৌসুমে উপরের মেঘনার ( সুরমা ও কুশিয়ারার মিলিত প্রাবাহ) প্রবাহ আগের থেকে বাড়বে তাই শুষ্ক মৌসুমেও লবনাক্ততা বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই ( যদি ধরে নেই পদ্মা ও যমুনা তাদের স্ব স্ব প্রবাহ অক্ষুন্ন রাখবে)।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

শামীম এর ছবি

লবণাক্ততা প্রসঙ্গে: শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ বাড়বে --- এটা তো থিওরিটিকাল কথাবার্তা। মনে রাখতে হবে, এটা করছে ভারত নামক অতি বুদ্ধিমান(!) একটা দেশ। অতীত রেকর্ড থেকে জানি, মুখে ধমকের সুরে সুন্দর সুন্দর কথাবার্তা বললেও কাজের সময় উপকার করতে না পারুক, ক্ষতি করতে ছাড়বে না ... সেটা নিজের নাক কেটে হলেও।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

৩য় পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ নজু ভাই। তাড়াতাড়ি দেবের চেষ্টা করব।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

চমৎকার। চলুক


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ বিপ্লব ভাই।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দিগন্ত এর ছবি

আপনি উজানের ও ভাটির ওপর একটা প্রভাব বাদ দিয়ে গেছেন, আমি আগে সেটা সম্পূর্ণ করে দিই। আমার ব্যক্তিগত মতে বাঁধের সবথেকে কুপ্রভাব হল উজানে জলাধার তৈরীর জন্য সেই অঞ্চলের মানুষকে জোর করে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া। এটা আজকাল মিডিয়ার সামনে আসছে বলে গুরুত্ব পাচ্ছে - কিন্তু ভাটিতেও একই প্রভাব পড়ে। ভাটিতে বহু লোকে জীবিকা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় - যা মোটেও সহজ হয় না।

autoধরে নেওয়া গেল আপনার বাঁধের প্রভাব সম্পর্কে আপনার বক্তব্য সঠিক। পৃথিবীতে সবথেকে বেশী (বড়) বাঁধ আছে চিনে (২২,০০০ - পৃথিবীর মোট বড় বাঁধের অর্ধেক)। এই বাঁধগুলোর ৯০%এরও বেশীর উজান ও ভাটি অংশ প্রায় সবই চিনে অবস্থিত। আপনার বক্তব্য অনুসারে এইগুলো যদি বাঁধের প্রভাব হয় তাহলে চিনের কৃষি ও মৎসসম্পদ বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবার কথা। কিন্তু তথ্য থেকে দেখছি তার উল্টোটাই ঘটেছে। এর কারণ কি? (একই ঘটনা আমেরিকা, ভারত আর জাপানের ক্ষেত্রেও দেখছি - চিনের সাথে এই তিন দেশ মেলালে পৃথিবীর ৭৫% বড় বাঁধের হিসাব হয়ে যায়)


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সচল জাহিদ এর ছবি

আপনি উজানের ও ভাটির ওপর একটা প্রভাব বাদ দিয়ে গেছেন, আমি আগে সেটা সম্পূর্ণ করে দিই।

ঠিক বাদ দিয়ে যাইনি, উল্লেখ করেছি এই ভাবে,

সৃষ্ট কৃত্রিম জলাধার বিপুল পরিমান এলাকাকে পানির নিচে নিমজ্জিত করে, ফলে আগে যেখানে শুষ্ক এলাকা ছিল তা জলাভূমিতে পরিনত হয়।এর ফলে অনেক মানুষের ঘরবাড়ি আবাদী জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়

ধরেই নেয়া যায় মানুষের ঘরবাড়ি বিলীন হলে তারা ঐ এলাকা থেকে এক কথায় বিতাড়িত হবে।


আপনার বক্তব্য অনুসারে এইগুলো যদি বাঁধের প্রভাব হয় তাহলে চিনের কৃষি ও মৎসসম্পদ বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবার কথা। কিন্তু তথ্য থেকে দেখছি তার উল্টোটাই ঘটেছে।

প্রথমত ঠিক কি তথ্যের ভিত্তিতে উল্টোটা ঘটছে তার ব্যাখা বা রেফারেন্স দিলে ভাল হয়।

দ্বিতীয়তঃ বাঁধের ফলেও কিন্তু কৃষি ও মৎস সম্পদ বৃদ্ধি পেতে পারে। একটু ব্যাখ্যা করিঃ

ধরে নেই এমন এলাকায় বাঁধ হলো তার উজানে কোন বসতি ও আবাদী জমি ছিলনা এবং ভাটিতে সমতল ভূমি। এখন যদি বাঁধ দেই তাহলে উজানে জলাধার হবে আর তাতে কৃত্রিম মৎস চাষ করা হবে আর ভাটিতে ব্যারেজ করে চাষাবাদের জন্য পানি নিয়ে যাওয়া হবে তাহলে কিন্তু দুটিই বাড়ছে। এখন এই উজান আর ভাটি একই দেশে হলে লাভ ও ক্ষতি দুটিই একই দেশের। আর টিপাইমুখের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ও ভারত পাবে, মাছও ভারত পাবে, সেচ দিয়ে ধানও ভারত পাবে আর আমরা কি পাব ??? আমরা পাব আমাদের হাওড়ের বাস্তুসংস্থান বিলুপ্তি, একমাত্র ফসল বোরো ধানের বিপর্যয়, নদী ভাঙন আর সেই সাথে বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে যাবার আতঙ্ক।

হোভার ড্যামের কারনে যেমন বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক প্রজাতির মাছ আবার তার কারনেই সৃষ্ট মেড লেকের কল্যানেই কিন্তু এককালের মরুভুমি নেভাডার লাস ভেগাসের ক্যাসিনোগুলিতে আজ মানুষের ঢল নামে।নারী আর মদ ত দূরের কথা এক ফোঁটা পানিও পেতনা সেখানকার মানুষ যদি এই ড্যাম না হতো। হোভার ড্যামের বিদ্যুৎ ভোগ করে এরিজোনা, নেভাডা আর ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষ। সম্প্রীতি আসলে এমন একটি জিনিস যা মানুষকে মানুষ হতে শেখায়।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দিগন্ত এর ছবি

প্রথমত ঠিক কি তথ্যের ভিত্তিতে উল্টোটা ঘটছে তার ব্যাখা বা রেফারেন্স দিলে ভাল হয়।
- ভারতে খাদ্যশস্য উৎপাদন স্বাধীনতার পরে চারগুণ হয়েছে। এই বৃদ্ধির কত শতাংশ বাঁধের কারণে তা নিয়ে মতবিরোধ আছে। এর সবথেকে Conservative রেফারেন্স হল WCD রিপোর্ট। তাদের ব্যাখ্যা অনুসারে ভারতে কৃষির ২০% বৃদ্ধি হয়েছে শুধুমাত্র বাঁধজনিত কারণে - বাকি কারণ হল উচ্চফলনশীল শস্য আর বর্ধিত হারে ভৌমজল ব্যবহার করায়। এদের বিরোধী সংস্থা ICOLD (দুই সংস্থাকেই বিশ্বব্যাঙ্ক আর্থিক সাহায্য করে) -এর দাবী উচ্চফলনশীল শস্য (High yield variety) ব্যবহার করার জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হয় অনেক জায়গায় আর বাঁধের কারণে জলাধার নির্মাণের ফলে ভৌমজলস্তর ওপরে উঠে আসে অনেক জায়গায় (বিশেষত শুখা জায়গায়, এই অঞ্চলে ভৌমজলস্তর থেকে সেচ করা হয়) - তাই তাদের হিসাবে এর মান দাঁড়ায় ৮৪%। দুটোর মাঝামাঝি ধরলে ভারতের খাদ্যশস্য উৎপাদনের বৃদ্ধির প্রায় অর্ধেক আসে বাঁধের কারণে। এবার এই একই উৎপাদন যদি বাঁধ ছাড়া করতে হত তাহলে ৫০% জমি বেশী ব্যবহার হত - যার ফলে দেশের জলাভূমি ও বনের ওপর চাপ অনেক বাড়ত - আরো বেশী বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হত। চিন সংক্রান্ত একইধরণের রিপোর্টও আছে কিন্তু আমার পড়ে দেখার সময় হয়নি। (সূত্র WCD reportICOLD report)

আপনার মতে বাঁধের সুফল ও কুফলগুলো যদি equitably ভাগাভাগি করা যায় তাহলে বাঁধ ব্যাপারটা খারাপ হয় না সবসময়। এই প্রশ্নে আমি আপনাকে সর্বোতোভাবে সমর্থন জানাই। বাঁধ (ও ব্যারেজ) তৈরীর খরচা যেহেতু ভারতের তাই সেই আর্থিক সুবিধাটা বাদ রেখে বাকিটা দুদেশের মধ্যেই ভাগাভাগি করে নেওয়া উচিত। এর জন্য লাভ ও ক্ষতির একটা objective analysis করতে হবে সবার আগে। এর পরে দরাদরি - প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় আরবিট্রেশন। নেপালে কোশি হাই ড্যাম বানাবার কথা হয়েছে ভারত-নেপাল-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে। সেখানেও একই মডেল মেনে চলার কথা। সমস্যাটা যদি বাঁধে না হয়ে benefit distribution নিয়ে হয় সেক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানে সম্পূর্ণ অন্যভাবে এগোতে হবে।

আপনি পরের পর্বে বাংলাদেশের ওপর প্রভাবগুলো নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন - তখন এগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। তবে সেচের কথা নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে জানাই যেহেতু বাংলাদেশের দিকে শুখা মরসুমে জলপ্রবাহ বাড়বেই তাই সেচের সুবিধা বাংলাদেশও পেতে পারে। ভারত যেমন ফুলেরতালে ব্যারেজ বানাবে, তেমন আরো ভাটিতে বাংলাদেশও ব্যারেজ বানিয়ে শুখা মরসুমে এই অতিরিক্ত জল চাষের জমিতে ডাইভার্ট করতে পারে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রাফি এর ছবি

লেখাটা মিস্‌ করতে বসেছিলাম!!!!!

আজ থেকে নিয়মিত পাঠক হলাম,স্যার। অনেক গোছানো লেখা। তবে মূল অংশ এখনো আসেনি বোধহয়; অপেক্ষায় রইলাম।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

সচল জাহিদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। অনেক দিন পরে তোমাকে সচলে দেখে ভাল লাগছে রাফি।শীঘ্রই লেখা চাই তোমার কাছ থেকে।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

হিমু এর ছবি

জাহিদ ভাই, আমার মনে হয় কয়েকটা সচিত্র সিনারিও তৈরি করে উজান আর ভাটিতে টিপাইমুখ বাঁধ আর ফুলেরতল ব্যারাজের প্রভাব ব্যাখ্যা করতে পারেন সামনের পর্বগুলিতে। ডায়াগ্রাম যোগ করলে খুব ভালো হয়।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

সচল জাহিদ এর ছবি

আগামী পর্বে বেশ কিছু সিনারিও এর ফলাফল নিয়ে আলোচনা করব যা আগে বাংলাদেশ কতৃক করা হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে এই রিপোর্টের সচিত্র কিছু নেই। আসলে সবই গানিতিক মডেলের ফলাফল, আমি যদিও চেষ্টা চালাচ্ছি আরো কিছু যোগাড় করার। দেখা যাক কি হয়।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

রণদীপম বসু এর ছবি

যথারীতি গুরুত্বপূর্ণ, আকর্ষণীয় ও গুছানো লেখা। জানার মধ্যে যে ঘাটতিগুলো ছিলো তা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টায় আছি। ফাইভস্টার।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সচল জাহিদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ রনদা ।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

নৈষাদ এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ চলতি একটা গুরুত্বপুর্ন বিষয়ের উপর চমৎকার এই সিরিজটার জন্য। ‘বাংলাদেশে টিপাইমুখ বাঁধের সম্ভাব্য প্রভাব’এর অপেক্ষায় থাকলাম।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ সুমন ।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

এই সিরিজটা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। পড়ছি আর হতাশা বাড়ছে। উজানে যা-কিছু হচ্ছে, তার কারণে ভাটিতে আমাদের ক্ষয়-ক্ষতিগুলো আদৌ আমল পায়নি তেমন একটা। সামনেও যে পাবে, তার কোনো লক্ষণ দেখি না। পুরোটাই বৃহত্তর রাষ্ট্রের মর্জি। এই সিরিজে বর্ণিত প্রযুক্তিগত ব্যাপারের পাশাপাশি সম্ভাব্য কূটনৈতিক হিসাব-নিকাশ নিয়েও একটা লেখা পেলে ভালো হতো। কেউ কি আছেন? জাহিদ ভাই, কোনো পর্বে আপনিই আলোকপাত করবেন পারলে? কিছু মতামত ছিলো সেই ব্যাপারে। সেখানেই দিতাম।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ ইশতি। কূটনৈতিক হিসাব নিকাশ নিয়ে আমি কিছুটা আলোক পাত করব এবং সিরিজ শেষে শুধুমাত্র সবার মতামত প্রদানের জন্য একটা পোষ্ট দেব, যেখানে সবাই পুরো লেখাটা পড়ে সবাই একটি সাধারন মতামত প্রকাশ করতে পারে।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

বাংলাদেশ ভারতকে বরাবর মিত্ররাষ্ট্র হিসেবে দেখেছে, পরষ্পরের স্বার্থরক্ষায় কাজ করেছে। বিনিময়ে ভারতের কাছ থেকে এই ধরনের কার্যকলাপ দুঃখজনক। খুব, খুব দুঃখজনক।

শত্রুরাষ্ট্র হয়েও বরং পাকিস্তান ভারতের কাছ থেকে অনেক বিবেচনা পেয়ে থাকে এসব ব্যাপারে। তবে কি যুদ্ধ/ক্ষতির হুমকিটাই সব? বন্ধুত্বের প্রতিদান কি গঙ্গায় বাঁধের পর বাঁধ দিয়ে পদ্মাকে মরুভূমি বানানো? টিপাইমুখেও বাঁধ দিয়ে বাকি পানি শুষে নেওয়া? এ-নিয়ে কিছু বলতে গেলে বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের "তথাকথিত" বলে গালি দেওয়া?

এসব দেখে মনে হয়, ভারতকে কিছুটা "রিয়্যালিটি চেক" দেওয়া প্রয়োজন। ভৌগোলিক অবস্থান বিচারে বাংলাদেশ খুব একটা খারাপ জায়গায় নেই। কারবালা যখন করবেই, আমরাও নাহয় মার্কিনিদের অনুমতি দেই বাংলাদেশে তাদের যুদ্ধবিমান নামাবার। একই সাথে রাশিয়া-চীন-ভারতের উপর নজরদারির এই সুযোগ তো ফেলনা নয়।

এভাবে পানি আটকে দিলে ক্রমে ভারতবিরোধী ক্ষোভ বাড়বে বাংলাদেশে। পানিও দেবে না, দেশেও অরাজকতা সৃষ্টির পেছনে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের কী ঠেকা পড়েছে পানির ন্যায্য দাবিতে ক'দিন পর পথে নামা জনগণের উপর রায়ট পুলিশ লেলিয়ে দেওয়ার? যাক না, নিজের খুশি মতো তারা যা করে করুক! গণতান্ত্রিক ভাবেই তখন ভারতবিরোধী কট্টরেরা ক্ষমতায় আসবে। আকারে যত বড়ই হোক না কেন, ১৫ কোটি মানুষের বিক্ষোভ সামলানো মুখের কথা না। ইরাক আক্রমণের পর আমেরিকার পরিণতি থেকে এটুকু অন্তত শেখা উচিত।

সরাসরি ভারতকে প্রশ্ন করা উচিত, এই ঝুঁকির দাম কত মেগাওয়াট বিদ্যুতের সমান। পুতুপুতু করে লাভ নেই।

স্বাধীন এর ছবি

আমার মত অনেকটাই তোমার মতই। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সব সময় ইন্ডিয়াকে সাপোর্ট করেই এসেছে। সময় এসেছে তাদেরকেও বাস্তবতা বুঝানোর। সেটা কি কি ভাবে করা যায় তার জন্য দরকার ছিল দেশের স্বার্থে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর একত্রে বসার। ইন্ডিয়া শুধু আমাদের বিদ্যমান রাজনৈতিক কোন্দলের সুযোগই নিচ্ছে। আর দলগুলোও ক্ষমতার লোভে দেশকে বার বার বিদেশী শক্তিগুলোর কাছে তুলে দিচ্ছে বলাৎকারের জন্য।

বাঁধের ফলে কি হবে সে সম্পর্কে ভাল ধারণা সবারই আছে। আমি যতটুকু জানি IWM (Institute of Water Modelling) কে দিয়ে বাংলাদেশ সরকার অনেক আগেই একটি গাণিতিক মডেল চালিয়েছে প্রাপ্ত তথ্যের ভিক্তিতে। এবং তার ফলাফল তাঁদের কাছে আছে। সরকার সেই রিপোর্ট জনসাধারনের জন্য উম্মুক্ত করেনি। সরকারের নিজেরই উচিৎ ছিল টিপাইমুখ বাঁধের কারণে কি হবে এবং তাঁরা এ ব্যাপারে কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে তা জনগণকে জানানো। তা না করে তাঁরা জনগণকে বিভক্তির মাঝে রাখছে এবং সুযোগ দিচ্ছে বিরোধী শক্তিগুলোকে ধংসাত্বক কিছু করার। আমি বুঝিনা আমাদের রাজনীতিবিদ গুলো কেন এ রকম মেরুদন্ডহীন।

আমাদের যেটা বুঝতে হবে এই দেশ একদিন মরুভূমিতে পরিণত হবেই, যদি এভাবে চলতে থাকে। তখন দূর্ভিক্ষে না খেয়ে আমাদের একদিন মরতেই হবে। তাই আমাদেরই ঠিক করতে হবে আমরা কি করবো। কূটনৈতিক সমাধাণ আছে বলে মনে হয় না। ইন্ডিয়া আমাদের গ্রাহ্য করে বলে আমার মনে হয় না।

শামীম এর ছবি

আমার মাথায়ও যেটা ঘুরঘুর করছিলো সেটা হল IWM এর মডেল। ওখানে কিছুদিন চাকুরী করার সুবাদে আমি নিশ্চিতভাবেই জানি যে মডেল আছে এবং সিমুলেশন করে দেখা যায়।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সচল জাহিদ এর ছবি

সেপ্টেম্বর ২০০৫ এ কেনিয়ার নাইরবি তে United Nations Environment Programme (UNEP) কতৃক আয়োজিত Dams and Development Project শীর্ষক কর্মশালায় বাংলাদেশের মোঃ গোলাম্ কিববিয়া " ISSUE-GAINING PUBLIC ACCEPTANCE FOR LARGE DAMS ON INTERNATIONAL RIVERS: THE CASE OF TIPAIMUKH DAM IN INDIA AND CONCERNS IN LOWER RIPARIAN" শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যেখানে IWM এর টিপাইমুখ এর উপর একটি অপ্রকাশিত স্টাডি রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আমি আমার পরবর্তী পর্বগুলোতে এগুলো সংযোজিত করব।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

স্বপ্নহারা এর ছবি

আসলেই ভাল লিখছেন ভাইয়া। মনোযোগ দিয়ে কমেন্টগুলোও পড়ছি। জানছি। বাকী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
------------------------------------
হতাশাবাদীর হতাশাব্যঞ্জক হতশ্বাস!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

সচল জাহিদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ উৎসাহ দেবার জন্য।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় একটা বিষয় বলি। যতদূর বুঝি, ভারতের ভিতরে এই বাঁধের মূল সুফলটা ভোগ করবে বরাক উপত্যকার মানুষ। আরো ভালো করে বললে বেশির ভাগ সুবিধা পাবে অসমের বাসিন্দারা। জমি ও বাস্তু হারানোর ধাক্কাটা বেশির ভাগ যাবে মনিপুরের উপর দিয়ে। মনিপুর সম্পর্কে জানি যে সেখানে "[url=http://en.wikipedia.org/wiki/Armed_Forces_(Special_Powers)_Act,_1958]সশস্ত্র বাহিনী (বিশেষ ক্ষমতা) বিধি - ১৯৫৮[/url]"-এর নামে অঘোষিত সামরিক শাসন চলছে বহু বহু বৎসর ধরে। এই কথা ভারত সরকার বা ভারতের বেশির ভাগ মিডিয়া স্বীকার করে না। যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত সামরিক শাসনের কথা বাংলাদেশের কোন সরকার বা মিডিয়া স্বীকার করে না। মনিপুর রাজ্যে এই বিশেষ পুলিশি তৎপরতার কাজটা করা হয় মূলত অসম রাইফেলস কে দিয়ে। কয়েক বৎসর আগে সেখানে অসম রাইফেলস কর্তৃক ধর্ষন ও হত্যাজনিত কারণে মনিপুর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মনিপুরে অসম রাইফেলসকে ব্যবহারের কারণ বোধগম্য। বোঝাই যাচ্ছে ব্রিটিশ ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি এখনো কার্যকর অস্ত্র। টিপাইমুখ বাঁধ এই আগুনে আরেকটু তেল ঢালবে বলে মনে হচ্ছে। কাপ্তাই বাঁধ দেবার ফলে সৃষ্ট শান্তিবাহিনী সমস্যার কথা ভারত সরকার খুব ভালোভাবেই জানে। অশান্ত মনিপুর নিয়ে তাহলে এমন একটা ঝুঁকিপূর্ণ খেলার পরিকল্পনা কেন হচ্ছে? ইরম ছানু শর্মিলাদের কথা ভারত সরকার কখনোই বিশেষ পাত্তা দেয়নি। এখন আরো দশটা-একশোটা শর্মিলা অনশনে বসে গেলেও তাতে সরকার গঠণে সক্ষম বড় রাজনৈতিক দল/জোটগুলোর কিছু যায় আসে না। ছোট মনিপুরকে বিসর্জন দিয়ে বড় অসমকে হাত করতে পারলে ভোটের বাক্স আরেকটু ভরে ওঠে যে!



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সচল জাহিদ এর ছবি

আরিফ ভাই ধন্যবাদ এই তথ্যগুলোর জন্য। আপনি এই বিষয়ে আরো কিছু তথ্যসুত্র পেলে জানাবেন।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

চমৎকার সিরিজ ... আপনার লেখাটির লিংক শেয়ার করার ব্যাপারে কোন বাধ্যবাধকতা থাকলে জানাবেন
পরের পর্বের অপেক্ষায়
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ জিনের বাদশা। আপনি অবশ্যই এই লেখার লিঙ্ক শেয়ার করতে পারেন। আমার উদ্দেশ্য হলো একটি নিরপেক্ষ এবং তথ্যনির্ভর ও সহজ বোধ্য লেখা সবার কাছে পৌছে দিতে যেন সবাই দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি নিয়ে জানতে পারে।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অমিত এর ছবি

চমৎকার সিরিজ ...

নদীর দুই ধারে নদীকে কেন্দ্র করে এক ধরনের উদ্ভিদ জন্মায় যাকে আমরা ‘রিপ্রাপিয়ান ভেজিটেশন’ বলে থাকি।

এটা কি রাইপেরিয়ান ভেজিটেশন হবে ?

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ, আপনি সঠিক। আমি ঠিক করে দিচ্ছি।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ভিন্নি চিন্তা এর ছবি

এক বাক্য অসাধারণ।
আমি কিছু নতুন পয়েন্ট যোগ করতে চাই।
বাঁধের উজানে প্রভাবঃ
১।উজান এলাকায় সৃষ্ট জলবদ্ধতা মশা সহ নানা রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর অরগানিজমের বিপুল বংশ বিস্তারে কারণ হয়ে দাড়ায়।ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ছড়িয়ে পরে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুর মত মারাত্ময়ক ব্যাধি। কম্বোডিয়ার এ সংক্রান্ত গবেষনা রিপোর্ট জ্ঞাতার্থে তুলে দিলাম।
“After dam construction, there is an immediate drop in water quality that destroys useful fish populations and poses a threat to livestock and humans,” says Lanza, an aquatic biologist and microbiologist who consults for the environmental organization International Rivers. “Converting river systems into lakes also creates more habitat for the snails and mosquitoes that carry malaria, dengue fever and schistosomiasis, leading to an increase in the number of cases of these diseases.”
২। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতে জলাধারে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে গুল্ম লতা পানিতে তলিয়ে দ্রুত পঁচে পারি দুষিত হয়।দুষিত পানিতে শুধু জলজ প্রাণী বা মাছই মরে পঁচে উঠে না, নদীর পাণির উপর গৃহঃস্থলি কর্মে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠি ডাইয়েরিয়া, কলেরায় আক্রান্ত হয়।
৩।এ পচন প্রক্রিয়ার আরও বিরূপ প্রভাব আছে। উদ্ভিদ পচন পানিতে বসবাসকারী মাইক্রো অরগানিজম (প্লানকটুন ) কে বিপুল পুষ্টি সরবরাহ করে ; ফলে বিপুল বংশ বিস্তার ঘটে।এ সময় পানি হয়ে উঠে গাঢ় সবুজ। এই মাইক্রো অরগানিজম পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন ব্যাবহার করে , ফলে পানি দ্রুত অক্সিজেন শূণ্য হয়ে পরে।পানির তলদেশ থেকে অসহায় মাছগুলো ভসে উঠে একঠু শ্বাস নেবের আশায়। জলাধারের তল দেশে এ সময় শুরু হয় নতুন ধ্বংস প্রক্রিয়া। মাইক্রো অরগানিজম এবার অক্সিজেনের অবর্তমানে তার 'উপচিতি' প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে আর উৎপাদন করে মিথেল । এ সময় মাইক্রো অরগানিজমে সঞ্চিত হতে থাকে 'মারকারী' । প্রথমে মাছের খাদ্য হিসাবে মাছের দেহে এবং পরবর্তীতে মানব দেহে প্রবেশ করে।
৪। বাষ্পীভবন জনিত পানি হারানোর কথা আগেই বলা হয়েছে। জলাধারের তলদেশ দিয়ে চলা ' সিপেজ লস'ও কম হয় না। ফলে জলাধারের সংলগ্ন বিশাল এলাকার মাটির নিচের 'ওয়াটার লেভেল' উপরে উঠে আশে। ভুগভৃস্থ পানি স্তর উপরে উঠে আষার ফলে শত সহস্র বছর ধরে সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠা অভিযোজিত উদ্ভিদ জগৎ ও তার সাথে আত্শার বন্ধনে আবদ্ধ প্রাণী জগতে এর প্রভাব বিপুল পরে।

দক্ষিণ আমেরিকার অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে যে , পূর্বে যেখানে শুষ্ক মৌসুমে পানি চাহিদা ভারসাম্য রক্ষায় বৎসের এই সময় গাছ পাতা ঝরিয়ে ফেলতো। নিবির বনভুমির মাটিতে এই সময় সূর্য্যালোক পৌছে এবং বছরে এই সংক্ষিপ্ত সময় সেখানে পাতা শূণ্য বৃহৎ গাছের নিচে ক্ষ্রদ্র পানিকূলে প্রাণ চাঞ্ছল্য শুরু হয়।
এই অঞ্চলে জল বিদ্যুৎ প্রকল্পের জলধারের প্রভাবে মাটির নিচের পানির স্তর উপরে উঠে আসায় সার বছর গাছগুলো সবুজ থাকে। মাটিতে আলো না পৌছায় ক্ষুদ্র প্রাণি জগতের একটা অংশ এক দিকে যেমন ধ্বংস হযেছে ; অপর দিকে উঁইয়ের মত অন্ধকার পিপাসুদের ঘটেছে বিপুল বংশ বিস্তার। এই উঁই হযে দাড়াছে বৃহৎউদ্ভিদের মৃত্যুর কারণ।

Hydropower: Not As Clean as You Think শীষৃক ভিঢিও চিত্র দেখুন।
http://www.youtube.com/watch?v=izgmMi5RsHs&eurl=http%3A%2F%2Fwww.somewhereinblog.net%2Fblog%2FDifferent_thought%2F28972635&feature=player_embedded

ভিন্ন চিন্তা এর ছবি

ভাটিতে বাঁধের প্রভাবঃ ( আগে উজান দেশে বাঁধের প্রভাব বিষয়ে জাহিদের পয়েন্টগুলোতে কিছু যোগ করেছি। এবার ভাটি দেশের বিষয়ে)

১। ভাটি অঞ্চলে প্রধান প্রভাব টি মনে হয় বাদ পরে গিয়েছে।
জল বিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধের ফলে শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহের তারতম্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মৌসুমী জল প্রবাহের এই নতুন বিন্যাস হয়তো কৃষি ব্যবস্থার সাথে নানা কম্পেনসেশনের মাধ্যমে কিছু বছরের মাঝে স্থিতি অবস্থায় আনা যায়।(অবশ্যই মৎস বা বাকি জীব জগৎ নয়।)

কিন্তু নদীতে বাঁধ নির্মাণের ফলে দৈন্দিন প্রবাহ চিত্র এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পরে যায়। কেননা , বাঁধ অতিক্রম করে কখন কতটুকু পানি ভাটি দেশে আসবে তা নির্ভর করবে দিনের কোন সময় উৎপাদকের বিদ্যুৎ চাহিদা কত হবে তার উপর।বিদ্যুৎ এমন পণ্য নয় যে কখনও প্রয়োজন অতিরিক্ত উৎপাদন হলে গুদাম জাত করে রাখা হবে। উদহারন দিলে বিষয়টা স্বচ্ছ হবে।
অতি সকালে বিদ্যুতের স্বাভাবিক চাহিদা যখন কম থাকবে তখন কম পানি বাঁধ অতিক্রম করে আসতে দেওয়া হবে। এ রকম প্রবাহের মাত্রা উঠানামা করবে সারাদিন।সুরমা- কুশিয়ার তীরে কোন কৃষক যদি বিকালে শুষ্ক জমি দেখে ধানের বীজ ছড়িয়ে যায় , তবে পরের সকাল নাগাদ তার জমি পানির নিচে চলে যাবে না এ কথা বলা যায় না।
হলি ডে গুলোতে চাহিদার তারতম্য হয়। তারতম্য হয় বিকল্প বিদ্যুৎ কেন্দ্র গূলোর কর্ম ক্ষমতা উপর।প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ বিদ্যুৎ প্রকল্পের এর বিশাল ব্যবধানের বিদ্যুৎ উৎপাদন সীমা কথা চিন্তা করা যেতে পারে।

২। জলাধারের তল দেশে নদী প্রবাহিত পলি জমার কথা বলা হয়েছে । কঠিন পাহাড়ের বুক চিড়ে বেড়িয়ে আসা অসংখ্য স্রোত ধারা মিলেই সৃষ্টি বিশাল নদী। এই দীর্ঘ প্রবাহ পথে নানা স্থান হতে পলি হিসাবে সংগ্রহ করে আনে না মূল্যবান জৈব-অজৈব উপাদান। যা উর্বর করে প্লাবন অবাহিকা কে। সুতরাং, বাঁধ পশ্চাতে পলি সঞ্চিত হওয়ায় ভাটি অঞ্চল বঞ্চিত হয় স্বাভাবিক পুষ্টি থেকে। এই পুষ্টি পুরন করে স্বাভাবিক কৃষকে বাঁচিযে রাখতে নির্ভরতা বাড়ে রাসায়নিক সারের উপর, সেই স্থাথে বাড়ে সার জনিত পরিবেশ বিপর্যয়।প্রকৃষ্ট উদাহরণ নিশ্চয়ই নীল নদের বাঁধের ফলে মিশরের কৃষি জমির উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস।

৩। জাহিদ তাঁর মূল লেখায় বাঁধ অতিক্রম করে বেড়িয়ে আসা পলি হীন পানির ভুমি ক্ষয়ের কথা উল্লেখ করেছে; একে বলা হয় ' হাংরি ওয়াটা'। এই ধাবমান পালি হীন পানি ক্ষুধা নিবারণ করে দুই অবাহিকার ভুমি ক্ষয় আর নদীর তলদেশ থেকে।নদীর তলদেশ ক্ষেত্র বিশেষে ১০ মিটার পর্যন্ত গভির হয়ে যাওয়া উদাহরণ পৃথিবীতে আছে। নদীর গভিরতা বৃদ্ধিতে নদী অববাহিকার স্বাভাবিক পানিস্তর নিচে নেমে যায়। পানি অভাবে দুই পার শুষ্ক মরুময় হয।
অর্থাৎ ভাটিতে এসে নদী নতুন করে বিপুর উদ্যোমে পলি সংগ্রহ করে । কিন্তু, এই পলি সেই পলি নয় , যা কৃষকের অতি প্রিয়।
পলি থিতিয়ে পরা শুধু পানির প্রবাহ মাত্রার সাথে নির্ভর করে না। নির্ভর করে পলির দানার ভরের সাথে। ভাটি অঞ্চলের দুই কূল ক্ষয় করে সংগৃহীত পলি দানা ভারি হওয়ার কারনে পানি প্রবাহের গতি হ্রাসের সাথে সাথে ধ্রুত দুকূলে পলি জমতে থাকে।

৪।বাঁধের ফাঁক দিযে পানি যখন বেড়িযে আসে প্রচন্ড গতিতে তখন স্পির ওয়ে গুলো কাজ করে দকষ বায়ু মিশ্রক হিসাবে।বাতাসের মূল উপাদান নাইট্রোজেন (৭৮%) পানিতে এ সময় দ্রবীভুত হয় এবং পানিকে বিষাক্ত করে ফেলে।বিরূপ প্রভাব পরে ভাটি এলাকার জল জগতে।

সচল জাহিদ এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ বেশ কিছু ভাল তথ্য যোগ করার জন্য। আমি এই সিরিজ লেখা শেষে সবকিছুকে সমন্বয় করব তখন আপনার অনুমতি পেলে এগুলোর সংক্ষেপিত অংশ যোগ করতে চাচ্ছি।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ভিন্ন চিন্তা এর ছবি

সুদূর কানাডায় বসে লেখাপড়ার প্রচন্ড চাপের মাঝেও এ ধরণের গভীর বিশ্লেষণ মূলক লেখা জন্য ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না। আমার তথ্যগুলো কাঝে লাগলে খুশি হব, তবে সঠিকতা একটু যাচাই করা প্রয়োজন।

আমি টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পকে আর সামগ্রিক বাবে দেখতে চাই। নিচের লেখাটিতে আমার বক্তব্যের ধারা সম্পর্কে কিছু ধারনা পাওয়া যাবে।

টিপাইমুখ জল বিদ্যুত প্রকল্প ও Global Warming
http://www.somewhereinblog.net/blog/Different_thought/28972635

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।