টিপাইমুখ বাঁধ ও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট-৬

সচল জাহিদ এর ছবি
লিখেছেন সচল জাহিদ (তারিখ: বুধ, ০৫/০৮/২০০৯ - ২:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজকের পর্বে থাকছেঃ বাংলাদেশে টিপাইমুখ বাঁধের প্রভাবঃএকটি সমন্বিত বিশ্লেষন মূলক আলোচনা (শেষ অংশ)

অতি বর্ষা মৌসুমে কি হবে ?

অতি শুষ্ক মৌসুমের মত অতি বর্ষা মৌসুমও আমাদের চিন্তা করতে হবে। প্রত্যেক জলাধারের একটা ধারন ক্ষমতা থাকে, সেই ধারন ক্ষমতার চেয়ে বেশী পানি জলাধারে জমা হলে তা স্পিলওয়ে বা বিকল্প পথ দিয়ে ভাটিতে প্রবাহিত করা হয় যেমনটা আছে আমাদের কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। বরাক অববাহিকায় যদি পর পর কিছু অতি বর্ষা মৌসুম আসে সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাত্রা আগের মতই থাকলে এই অতিরিক্ত পানি বিকল্প পথে বের করে দিতে হবে।বাঁধ হবার পর ভাটিতে মানুষের জীবন যাত্রা পরিবর্তিত হবে অর্থাৎ মানুষ স্বাভবতই তাদের ঘরবাড়ি আগের মত উঁচু করে বানাবেনা, বন্যার প্রকোপ কমে যাওয়ায় অববাহিকার অধিক মানুষ বসবাস করবে। সেক্ষেত্রে এই জাতীয় অতি বর্ষা মৌসুমে বাঁধের নিরাপত্তার জন্য অধিক পানি ছেড়ে দিলে তা ভাটিতে অকষ্মাত বন্যার আশঙ্কা সৃষ্টি করতে পারে। এর উদাহরন কিন্তু ভারতেই আছে। সাধারনত যে অবস্থায় একটি বাঁধের "ওভারটপিং (উল্টে পড়া) " এর সম্ভাবনা দেখা যায় তখন সেটিকে রক্ষা করা হয় অধিক পানি ছেড়ে দিয়ে। ১৯৭৮ সালে ভকরা বাঁধ (Bhakra Dam) থেকে জরুরী ভিত্তিতে পানি অপসারনের কারনে পাঞ্জাবের প্রায় ৬৫,০০০ মানুষ গৃহহারা হয়েছিল। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল যে ভকরা বাঁধ প্রায় উল্টে পড়ার মত পরিস্থিতিতে গিয়েছিল এবং ঐ সময় পানি না ছাড়া হলে বাঁধ ভেঙ্গে পাঞ্জাবের প্রায় অর্ধেক এলাকা প্লাবিত হত[১২]।

ভুমিকম্পে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?

বাঁধ ভেঙ্গে গেলে তার পরিস্থিতি কি হবে তার কিছুটা FAP 6 এর রিপোর্টে দেখেছি, তবে এর সবকিছুই তাত্ত্বিক বিশ্লেষন। সত্যিকারে কি ভয়াবহ অবস্থা হবে তা চিন্তা করতেও ভয় লাগে। এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে ভারতীয় ও বার্মা প্লেটের মিথস্ক্রিয়ার ফলে ভারত ও বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল পৃথিবীর অন্যতম ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত।ভূতাত্ত্বিকভাবে টিপাইমুখ বাঁধ এলাকা এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চল আসলে অসংখ্য 'ফোল্ড ও ফল্ট' বিশিষ্ট [১৩]। দেখা গিয়েছে এই অঞ্চলে গত ১৫০ বছরে রিক্টার স্কেলে ৭ এর অধিক মাত্রার দু'টি ভূমিকম্প হয়েছে যার মধ্যে শেষটি ছিল ১৯৫৭ সালে যা কিনা টিপাইমুখ প্রকল্প থেকে পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে মাত্র ৭৫ কিমি দূরে[১৩]।

এছাড়া "জলাধার আবেশিত ভূমিকম্প" (Reservoir Induced Seismicity বা RIS) এর আশঙ্কাত আছেই। ভারতের টিপাইমুখ প্রকল্পের EIA রিপোর্ট [২]অনুযায়ী এই বাঁধের 'Full Reservoir Level' সমুদ্র সমতল থেকে ১৭৫ মিটার উঁচুতে আর এর তলদেশের গড় উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে ২২.৫ মিটার উচুতে, অর্থাৎ জলাধারের পানির গড় উচ্চতা ১৫২.৫ মিটার।গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে যেসব জলাধারের পানির উচ্চতা ১৫০ মিটারের বেশী তাদের ক্ষেত্রে এই RIS এর হার শতকরা ৩০ ভাগ[১৩], সেক্ষেত্রে টিপাইমুখ বাঁধও এই আশঙ্কাতে পড়ে।

অপ্রাকৃতিক পরিস্থিতিঃ

এই প্রাকৃতিক কারনগুলো ছাড়াও যদি কোন যান্ত্রিক কারনে বাঁধের টারবাইনগুলো অকার্যকর হয় অথবা গ্রীডের কোন সমস্যার কারনে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয় তখন কি হবে? যেহেতু এটি পানিবিদ্যুৎ বাঁধ সেক্ষেত্রে টারবাইন ছাড়া অন্য কোন পথ দিয়ে সেই সময়ে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা থাকবে কিনা বা থাকলেও তা কত লেভেলে ( সমুদ্র সমতল থেকে ) থাকবে সেটিও বিবেচ্য বিষয়।

ফুলেরতল ব্যারেজ হলে কি হবে ?

আগেই বলেছি টিপাইমুখ প্রকল্পে বাঁধ থেকে ১০০ কিমি ভাটিতে একটি সেচ প্রকল্পের প্রস্তাব আছে। আপাতত বলা হচ্ছে এক লক্ষ বিশ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের ব্যবস্থা রাখে হবে। এই প্রকল্প হলে কতটুকু পানি অপসারিত হবে তা হুট করে বলা যাবেনা। এটি নির্ভর কববে নিম্নোক্ত জিনিসের উপরঃ

  • কমান্ড এরিয়া কত অর্থৎ কতটুকু জমিতে সেচ দেয়া হবে ?
  • কি ধরনের সেচ ? সাপ্লিমেন্টারী নাকি ফুল
  • কতটুকু বৃষ্টিপাত হবে?
  • কি ধরনের ফসলে সেচ দেয়া হবে ?
  • মাটির আর্দ্রতা ও পানি ধারন ক্ষমতা কেমন ?
  • কি ধরনের মাটি?
  • সেচ খালের দৈর্ঘ ও ধরণ ( লাইন্ড নাকি আনলাইন্ড)
  • বায়ুর আর্দ্রতা
  • এবং আরো অনেক কিছু

কিছু সঙ্কট সিনারিও এর প্রতি গুরুত্ত্ব আরোপ করতে হবে, সেমনঃ

  • অতি শুষ্ক মৌসুমে কি হবে ?
  • নদীর স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র রক্ষার্থে ন্যুনতম প্রয়োজনীয় পানির পরিমান কত ( In-stream Flow Requirement) ?
  • ভবিষ্যতে কমান্ড এরিয়া কতটুকু বাড়বে ?
  • জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে উজানের প্রবাহ কিরূপে বা কতটুকু পরিবর্তিত হবে?

অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি পানি বন্টন নিয়ে মূল সমস্যাগুলো তৈরী হয় অতিশুষ্ক মৌসুম গুলিতে। একজন প্রকৌশলী যখন কোন কিছু ডিজাইন করে তাকে সবচেয়ে সঙ্কট সময় বিবেচনা করে তা করতে হয়। টিপাইমুখ বাঁধের ফলে অতিশুষ্ক মৌসুমে পানি কিভাবে কমে যেতে পারে তা আমি গত পর্বে ব্যাখ্যা করেছি। এর সাথে যদি ব্যারেজ দিয়ে পানি অপসারন করা হয় তাহলে তার প্রভাব কি হবে তা সহজেই অনুমেয়। ডঃ জহির উদ্দীন চৌধুরীও এই বিষয়টা উল্লেখ করেছেন তার সাক্ষাৎকারে[৩]। যদি পানি অপসারন আর অতিশুষ্ক মৌসুম এর প্রভাব একসাথে হয় সেক্ষেত্রে বরাক নদীর প্রবাহ আশঙ্কাজনক ভাবে কমে যেতে পারে বাংলাদেশে যার প্রভাব হবে আরেকটা ফারাক্কার মত। এই বিষয়টিকে আরো ভাবিয়ে তুলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি, কারন দেখা গিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে 'এক্সট্রিম ইভেন্ট' গুলি যেমন বন্যা, খরা আগের থেকে বেড়ে যায়। সেই বিচারে ভবিষ্যতে খরার ফলে বরাক নদীতে যখন প্রবাহ কমে যাবে তখন এই ফুলেরতল ব্যারেজ ভাটিতে আরো সমস্যার সৃষ্টি করবে।

আরো যে বিষয়টি গুরুত্ত্বপূর্ণ তা হলো বাঁধ ও ব্যারেজের উজানে দ্বৈত পলি সঞ্চয়। বাঁধের কারনে পলি জলাধারে সঞ্চয়ের কথা আমি বলেছি। এখন বাঁধের ১০০ কিমি ভাটিতে যদি আবার ব্যারেজ হয় তাহলে বাঁধের ভাটিতে নদীক্ষয়ের পর ব্যারেজের উজানে আবার পলি সঞ্চিত হবে। সুতরাং ব্যারেজের গেইট দিয়ে আবারও অপেক্ষাকৃত কম পরিমান পলি বিশিষ্ট পানি বের হবে যা কিনা আবার ভাটিতে নদীক্ষয় ও পরবর্তীতে সেই পলি সঞ্চয়ের কারন হয়ে দাঁড়াবে। শুধু বাঁধ হলে হয়ত ১০০-১৫০ কিমি এর মধ্যে নদীক্ষয় এর প্রভাব থাকত কিন্তু এখন বাঁধের ১০০ কিমি ভাটিতে ব্যারেজ হলে নদীক্ষয়ের প্রভাব বাংলাদেশেরও পরিলক্ষিত হবে।

টিপাইমুখ প্রকল্পের ইতিবাচক বনাম নেতিবাচক প্রভাবঃ

এই সিরিজের পঞ্চম ও ষষ্ঠ ( আজকের ) পর্বে আমি এই প্রকল্পের বিভিন্ন প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি চেষ্টা করেছি মূল সমস্যাগুলিকে সহজবোধ্য ভাবে পাঠকের কাছে তুলে ধরতে যেন একজন সাধারণ মানুষ এইটু বুঝতে পারে যে এই প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য কতটুকু কুফল বা সুফল বয়ে আনতে পারে। আমি পানিসম্পদ কৌশলের একজন ছাত্র ও গবেষক হিসেবে যতটুকু ধারনা করতে পারি তা হলো এই প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য ভাল কিছু বয়ে আনবেনা, যা আনবে তা হলো ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ কিছু সমস্যা যা আমি আমার আলোচনায় দেখিয়েছি। এছাড়াও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে এই অঞ্চলের জন্য ইতিমধ্যে গৃহীত অথবা পরিকল্পনাধীন বাংলাদেশের বেশ কিছু পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প।

একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে এই ইতিবাচক বনাম নেতিবাচক দ্বৈরথের ব্যাপারে যবনিকা টানতে পারে যৌথ গবেষণা তবে তার আগে আমাদের পরস্পর পরস্পরের প্রতি সমবেদনাশীল হতে হবে। এক কাপ্তাই বাঁধের ঘানি আজও বাংলাদেশ টেনে যাচ্ছে , মাত্র কয়েকশ মেগাওয়াট বিদ্যুতের বিনিময়ে প্রান হারিয়েছে হাজারো পাহাড়ী বাঙ্গালী। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি আমাদের পাহাড়ে কতটুকু শান্তির পরশ বুলাচ্ছে সেটা বিতর্কের অবকাশ রাখে কিন্তু আজকে ভারত যদি টিপাইমুখ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তাহলে এই দুই দেশের মধ্যে তা যে শুধু অশান্তিই বয়ে নিয়ে আসবে তা নিশ্চিত করে ভবিষ্যৎবাণী করা যায়।


( চলবে )

আগামী পর্বে থাকবেঃ এই মূহুর্তে আমাদের কি করনীয়

তথ্যসুত্রঃ
[১] উইকিপিডিয়া

[২]Environment Impact Assessment (EIA) of Tipaimukh HE(M) Project, submitted for North Eastern Electric Power Corporation Limited (NEEPCO)

[৩] ডঃ জ়হির উদ্দিন চৌধুরী, ১২ জুলাই ২০০৯, ‘বরাক নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করা হলে তা হবে বিপদ জনক’, প্রথম আলোকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকার।

[৪] ডঃ আইনুন নিশাত, ২৮ জুন ২০০৯, ‘দুই দেশেই টিপাইমুখ বাঁধের পরিবেশগত প্রভাবের জরিপ চালাতে হবে’, প্রথম আলোকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকার।

[৫] ডঃ আসিফ নজরুল, ৫ জুলাই ২০০৯, ‘পিনাক রঞ্জনের ছোট ভুল, আমাদের বড় ভুল’ প্রথম আলো।

[৬] এম এ কাসেম,৬ জুলাই ২০০৯, ‘টিপাইমুখঃ যে কথা কেউ বলছেনা’প্রথম আলো।

[৭] ডঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম, ‘টিপাইমুখ বাঁধঃ কিছু শর্ত মানলে কম ক্ষতিকর হতে পারে’ প্রথম আলো।

[৮] Dr.Sara Bennett, Mujib Huq and Dr. David Mclean,1994, ‘Initial Environmental Evaluation, Appendix to the Northeast RegionalWater Management Plan, Bangladesh Flood Action Plan 6 ( IEE NERP FAP 6)’,Final Version.

[৯] Ma A Matin, 7 February 2006, ‘Another Farakka ? No, Tipaimukh Dam is different’ The Daily Star.

[১০] The Ecology of Dams

[১১]মোঃ গোলাম্ কিববিয়া " ISSUE-GAINING PUBLIC ACCEPTANCE FOR LARGE DAMS ON INTERNATIONAL RIVERS: THE CASE OF TIPAIMUKH DAM IN INDIA AND CONCERNS IN LOWER RIPARIAN", সেপ্টেম্বর ২০০৫, United Nations Environment Programme (UNEP) কতৃক আয়োজিত Dams and Development Project শীর্ষক কর্মশালা, নাইরবি, কেনিয়া।

[১২] Dogra, B. 1992. The Debate on Large Dams. Centre for Science and Environment, New Delhi.

[১৩] R.K. Ranjan Singh, ‘Tipaimukh’ in The Ecologist Asia, Vol. 11 No. 1 January-March 2003


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনাকে স্যালুট করা উচিত... এই মূহুর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটা আপনি করছেন...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ নজু ভাই। আসলে এই লেখার পেছনে সচলের পাঠকদের অবদানই বেশী। পানিসম্পদ নিয়ে লিখি বলে তারা এই বিষয়ে লেখার জন্য আমাকে অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়েছে।আর হয়ত এক বা দুই পর্বেই শেষ করব।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

সাকিব [অতিথি] এর ছবি

স্যার, আই স্যালুট ইউ...

সব পর্ব পিডিএফ করে ফেললাম...

এই বিষয় টা নিয়ে কিছুই জানতাম না, জানার আগ্রহ ছিল অনেক, আপনার কল্যানে সেটা পূরন হল...

অ. টঃ স্যার, কেমন আছেন? আশা করি ভাল আছেন, দোয়া করি ভাল থাকবেন।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ সাকিব। আর এক দুটি পর্ব পরে শেষ করে একবারে পিডিএফটাই সচলে আপলোড করার ইচ্ছে আছে। তখন সেটা সংগ্রহে রাখতে পার।

আমার চলে যাচ্ছে ভালই। তোমাদের খবর জানিও।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

স্বাধীন এর ছবি

করণীয় পর্বটা তাড়াতাড়ি ছাড়ো। সময় চলে যাচ্ছে। সেটি আর দুই পর্বে যেওনা। পর্ব একটু বড় হলেও এক পর্বেই শেষ করলে সকলের মন্তব্য এক সাথে থাকবে। সমস্যাগুলো নিয়ে কম বেশি সকলেই বলেছেন, কিন্তু করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে কমই।

সচল জাহিদ এর ছবি

মোস্তফা ভাই চেষ্টা করব দুই দিনের মধ্যেই শেষ পর্বটা দিতে। আসলেই দুই পর্বে যাবনা। আমারো এই সিরিজটা শেষ হলে একটা বোঝা নেমে যায়।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

স্বাধীন এর ছবি

বোঝা বলো না। এটা নিঃসন্দেহে একটি অসাধারণ কাজ হয়েছে। এখন কাজ হচ্ছে, তোমার লেখাটি শেষ হলে, একটু সম্পাদনা করে পিডিফ করে, যতটা সম্ভব সবখানে ছড়িয়ে দেওয়া।

হিমু এর ছবি

এই ব্যাপারে একটা আইডিয়া ঘুরছে মাথায়। মেসেজ করে জানাচ্ছি।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

দিগন্ত এর ছবি

১৯৭৮ সালে ভকরা বাঁধ (Bhakra Dam) থেকে জরুরী ভিত্তিতে পানি অপসারনের কারনে পাঞ্জাবের প্রায় ৬৫,০০০ মানুষ গৃহহারা হয়েছিল।

WCD রিপোর্টে এর কারণ ব্যাখ্যা করা আছে।
"Numerous cases have been recorded of floods which have been made worse because
dam operators held back water while the reservoir was filling, and then, when the rains kept
on coming, had to open their spillways to maximum capacity to prevent their dam from being"

এইটা বহুমুখী বাঁধের একটা বড় সমস্যা। দ্বিতীয়বার এই ঘটনা হবার পরে বাঁধের অপারেশন নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে বন্যার কথা মাথায় রেখে। ১৯৯১ সালের পরে অপারেশনের মধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ অন্তর্ভুক্ত করার পরে বাঁধটির বন্যা নিয়ন্ত্রণ অনেক সফলভাবে করেছে। একই সাথে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ার পূর্ভাভাসও এখন অনেক ভাল দেওয়া হয়। টিপাইমুখের ক্ষেত্রে বন্যা নিয়ন্ত্রণ মুখ্য উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে একটি, তাই এখানে এরকম ঘটার সম্ভাবনা কম। তবে আপনি দেখতে পারেন এই এর পরেও পাঞ্জাবের মানুষ কিন্তু বাঁধটির বিরোধিতা করে নি। পাঞ্জাব এখনও মাথাপিছু আয়ের নিরিখে ভারতের ধনীতম রাজ্য ও তার পেছনে ভাকরার অবদান বিশাল।

আপনি এটা নিয়ে একটা হিসাব করতে পারবেন মোটামুটি কতটা জল ছাড়া হলে কিরকম বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে? যেমন পুরো বাঁধটা ভেঙে গেলে FAP রিপোর্ট অনুসারে ৫ মিটার (EIA অনুসারে আড়াই মিটার) জলের লেভেল বৃদ্ধি পাবে। এইভাবে, যদি হঠাৎ করে ১ বিলিয়ন কিউবিক মিটার জল ছাড়া হয় তাতে কতটা জলের লেভেল বৃদ্ধি পাবে ও কতটা অঞ্চল প্লাবিত হবে তার একটা হিসাব রাখা দরকার।

ভুমিকম্পে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?

ভূমিকম্প জাপানেও (এবং জাপানও চ্যূতির ওপর অবস্থিত) হয় অথচ জাপান হাজারখানেক বা তার বেশী বাঁধ বানিয়েছে। আমার ধারণা এখন ভূমিকম্পে ভেঙে না পড়ার মত বাঁধ তৈরী করা সম্ভব। তবে এটা কতটা মেনে চলা হবে সেটা সন্দেহ আছে। বাঁধের নকশা ভাল করে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সার্টিফাই করাতে হবে। একই কথা RIS এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সচল জাহিদ এর ছবি

এইটা বহুমুখী বাঁধের একটা বড় সমস্যা। দ্বিতীয়বার এই ঘটনা হবার পরে বাঁধের অপারেশন নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে বন্যার কথা মাথায় রেখে।

কথাটা সেখানেই দিগন্ত। একটি দূর্ঘটনা ঘটার পরেই টনক নড়ে। আমার কথা হচ্ছে আমরা কেন গিনিপিগ হব? টিপাইমুখ বাঁধ আমাদের জন্য এমন ভাল কিছু বয়ে আনবেনা যার জন্য আমাদের এত বড় একটা ঝুকির দিকে এগিয়ে যেতে হবে বা তাকে সমর্থন দিতে হবে।

পাঞ্জাব এখনও মাথাপিছু আয়ের নিরিখে ভারতের ধনীতম রাজ্য ও তার পেছনে ভাকরার অবদান বিশাল।

আপনার কথাকে সত্য বলে ধরে নিয়ে মেনে নিলাম পাঞ্জাবের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির জন্য ভাকরার অবদান আছে। এবার বলুন টিপাইমুখ আমাদের কয় টাকা মাথাপিছু আয় বাড়াবে ?

যেমন পুরো বাঁধটা ভেঙে গেলে FAP রিপোর্ট অনুসারে ৫ মিটার (EIA অনুসারে আড়াই মিটার) জলের লেভেল বৃদ্ধি পাবে।

এখানে আগেও বলেছি আবারো বলছি ড্যাম ব্রেক সিমুলেশন এখন পর্যন্তও তাত্ত্বিক পর্যায়ে আছে। ড্যাম ব্রেক হাইড্রোলিকস সিমুলেট করার মত গানিতিক মডেল সেট আপ করা খুব সহজবোধ্য নয়। FAP এর পুরো রিপোর্ট পড়ে দেখলে লক্ষ্য করবেন অসংখ্য ধারনার উপর এটি নির্ভরশীল। সুতরাং আসলে কি পরিমান ক্ষতি হবে সেটা নির্ণয়ের জন্য বিশদ গবেষণা দরকার। ড্যাম ব্রেকের ফলে উৎপন্ন ওয়েভ আর তার গতিবেগ এখানে গুরুত্ত্বপূর্ণ আর আত পরের বিষয় হচ্ছে বের হয়ে যাওয়া পানির কারনে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা যা কিনা মাসাধিক কাল স্থায়ো হতে পারে।


আমার ধারণা এখন ভূমিকম্পে ভেঙে না পড়ার মত বাঁধ তৈরী করা সম্ভব।

মানলাম কিন্তু বাংলাদেশ এই ঝুকি মানবে কেন ? আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সার্টিফাই করিয়েও বাংলাদেশে যমুনা সেতুতে ফাঁটল ধরেছে।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দিগন্ত এর ছবি

মানলাম কিন্তু বাংলাদেশ এই ঝুকি মানবে কেন ?

এইটা নিয়ে শেষে নিশ্চয় আলোচনা হবে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

খুব ভাল একটা কাজ হচ্ছে। এর সাথে আইন এবং রাজনীতির মাত্রাটি সতর্কতার সাথে সমন্বিত করুন। যতটুকু প্রয়োজন মনে করেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাজনৈতিক আলোচনার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া দরকার সেগুলোতে আলোকপাত করুন।

মনে হচ্ছে এখানে অনেক প্রভাবের ব্যপারেই উত্থাপিত ধারনাগুলোতে অনিশ্চয়তার মাত্রা রয়েছে যেজন্য এক পর্যায়ে আপনি গানিতিক মডেলের ব্যবহারের কথা বলেছেন। গানিতিক মডেলের সীমাবদ্ধতা অনেক আবার সুবিধাও অনেক। এই মুহূর্তে পরিপূর্ণ গানিতিক মডেলের মাধ্যমে আপনার সিদ্ধান্তগুলোকে জাস্টিফাই করার মত রিসোর্স আপনার কাছে নেই ধরে নিয়ে বলছি যেসব সিদ্ধান্তগুলো সাধারন ভাবে উল্লেখ করলেন সেগুলোর কোনটিতে কতটুকু অনিশ্চয়তা আছে সেটা কিছুটা তুলে ধরুন। তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছেঃ

  • সারমর্মতে সহজ ভাবে কিছু নিশ্চিত ফলাফলের ব্যপারে ব্যখ্যাসহ আপনার মন্তব্য তুলে ধরুন।
  • ফলাফলগুলোর আপেক্ষিক গুরুত্বের পাশাপাশি আপনার সিদ্ধান্তগুলিকে নিশ্চয়তা/অনিশ্চয়তার আপেক্ষিক একটা ক্রমও সম্ভব হলে তৈরি করুন। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব নিরূপনে সহযোগীতা করবে বলে মনে করি।
  • আশাবাদি মন বলে ভারত নিজের অসুবিধা করে বাংলাদেশের ক্ষতি করবেনা। আর নিজেদের ক্ষতি নাহলে অযথা হয়ত বাংলাদেশের স্বার্থ নষ্ট করবে না। সেদিক থেকে এমন কিছু ক্ষেত্র চিহ্নিত করুন যেখানে ভারত নিজেদের স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখেও কেবল প্রকল্প পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন এনে বাংলাদেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে দিতে পারে। তবে এটা হচ্ছে এই নেগোসিয়েশনে বাংলাদেশের শেষ উপায়। এর মধ্যেই গবেষনা/মডেলের জুজু দেখান শুরু হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে এই পয়েণ্টটা হয়ত শেষমেষ বাংলাদেশের কিছুটা কাজে আসতে পারে।
কোন এক পর্বে বলেছিলেন আইনগত দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। করেছেন কিনা ঠিক বুঝতে পারিনি।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ রিয়াজ। পরের পর্বে (শেষ) সব সংযুক্ত করেছি।আপনার উৎসাহের জন্য আবারো ধন্যবাদ।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

সচল জাহিদ এর ছবি

এই খবরটি দেখুন সবাইঃ রাশিয়াতে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছে। ঐ এলাকায় মানুষের বেচে থাকার আশঙ্কা কম।

আরো

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।