দক্ষিণ এশিয়ার পানিবিরোধঃ চীনের ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি প্রত্যাহার প্রকল্প-পর্ব ৩

সচল জাহিদ এর ছবি
লিখেছেন সচল জাহিদ (তারিখ: সোম, ০৯/১১/২০০৯ - ১১:৩৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত পর্বে আমি এই প্রকল্পের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেছি। আজকের পর্বে প্রকল্পের বিবরণ ও এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব।

কি থাকছে ইয়ারলুং সাংপু প্রকল্পেঃ

এই প্রকল্পের মূলত দুটি অংশ[৫],

  • ইয়ারলুং সাংপু গিরিখাতের স্থলে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন।
  • পানিকে ইয়ারলুং সাংপু নদী থেকে স্থানান্তর করে চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শিনজিয়াঙ ও গানসু (Xinjiang and Gansu) প্রদেশে নিয়ে যাওয়া।

প্রথমেই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রসঙ্গে আসি। গোড়ার দিকে পরিকল্পনা ছিল এই গিরিখাতের স্থলে ১১ টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে যা থেকে মোট ৭০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যৎ উৎপাদিত হবে [১০]। ১৯৮৬ সালে Global Infrastructure Fund এর আওতায় এই প্রকল্পটি আলাস্কায় একটি সভায় আলোচিত হয়[১০]। পরিকল্পনাটি সেইভাবে সমর্থন না পাওয়ায় পরবর্তীতে ৪০,০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি একক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প পরিকল্পনা করা হয় যা ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে বেইজিং এ চীনা প্রকৌশল পদার্থবিদ্যা একাডেমীতে (Chinese Academy of Engineering Physics) আলোচিত হয় [৮]।

প্রকল্পের মূল পরিকল্পনাকারী অধ্যাপক চ্যান চুয়ান্যু'এর (Professor Chen Chuanyu) সাক্ষাৎকার অনুযায়ী [১০] এই প্রকল্পে হিমালয়ের ভেতর দিয়ে শান্তিপূর্ণ নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণের (PNE) সাহায্যে ১৫ কিমি দীর্ঘ সুড়ংগ নির্মান করে পানিকে গিরিখাতের বাঁকের এক পাশ থেকে অন্য পাশে নেয়া হবে। সেক্ষেত্রে মাত্র ১৫ কিমি পথ যেতে পানি ৩,০০০ মিটার নিচে নামবে যা অতিক্ষমতা সম্পন্ন জলবিদ্যুৎ বিভব উৎপন্ন করবে। নিচের ছবিতে প্রকল্পটির একটি সহজ চিত্র উপস্থাপন করলাম ( একেবারেই আমার মস্তিষ্কজাত মূল চিত্রের সাথে মিল না থাকতেও পারে , যেহেতু মূল চিত্র কোথাও নেই তাই দিলাম)


plan_zahid

ছবি -৬ প্রকল্পের নকশার একটি ধারণা

আগের পর্বে বলেছিলাম যে ইয়ারলুং সাংপু থেকে পানিকে স্থানান্তর করে চীনের উত্তরাঞ্চলে নিয়ে যেতে হলে পানিকে নদীসমতল থেকে উঁচুতে তুলতে হবে। অধ্যাপক চুয়ান্যুর মতে এই ৪০০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ শক্তি দিয়ে ইয়ারলুং সাংপু থেকে পানিকে পাম্প করে এখান থেকে প্রায় ৮০০ কিমি দূরে চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব [১০]।

প্রকল্পের প্রভাবঃ

সচলায়তনে ইতিপূর্বে আমি সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে বাঁধের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছি , সেই সাথে সাম্প্রতিককালে আলোচিত টিপাইমুখ বাঁধের ভাটিতে বিশেষ করে বাংলাদেশে এর প্রভাবও বিস্তারিত আলোচনা করেছি টিপাইমুখ সিরিজে (বিস্তারিত দেখুন এই লেখাগুলিতে: পর্ব ৩ , পর্ব ৪ , পর্ব ৫, পর্ব ৬ )। আর নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করলে তার কি প্রভাব পড়ে ফারাক্কা তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। ফারাক্কার পানি প্রত্যাহারের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছিলাম আমার আন্তঃসীমান্ত নদী নিয়ে লেখা একটি প্রবন্ধে,সেই সাথে গঙ্গাচুক্তি সিরিজেও এটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখন যদি টিপাইমুখ এর প্রভাব আর ফারাক্কার প্রভাব যোগ করে ফেলা হয় তাহলে কি হবে একটু ভেবে দেখুন। আমার কাছে এর ফলাফল প্রকাশ করতে আঞ্চলিক ভাষার একটি প্রবাদই যথেষ্টঃ 'মড়ার উপর খাড়ার ঘা'। সহজ করে বলতে গেলে ইয়ারলুং সাংপু থেকে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করলে বাংলাদেশের নদীভিত্তিক পানিসম্পদের তিন উৎসের মধ্যে আরো একটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে ফারাক্কার কারনে বাকী দুই উৎসসের একটি আধমরা (গঙ্গা) আর অন্যটির (মেঘনা) জীবন যাই যাই করছে ভারতের টিপাইমুখ প্রকল্পের কারনে।তবে শুধু বাংলাদেশ নয় এই প্রকল্পের প্রভাব পড়বে মূলত তিব্বতে, আসামে ও বাংলাদেশে।

  • উজানে (তিব্বত) প্রভাবঃ

    বাঁধের উজানে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয় মূলত সৃষ্ট জলাধারের কারনে। ৪০,০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফলে যে বিশাল জলাধার সৃষ্টি হবে তা মূলত বিস্তৃত হবে ইয়ারলুং সাংপু গিরিখাত সহ তিব্বত মালভূমির এই নদী সংলগ্ন অববাহিকা জুড়ে। এই গিরিখাত অঞ্চল কিছুদিন আগ পর্যন্তও বাইরের বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত ছিলনা। নব্বইএর দশকের শুরুতে চীনা সরকার এটিকে পর্যটকদের কাছে উন্মুক্ত করে। সুতরাং এই পুরো এলাকা জলনিমজ্জিত হলে এখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের ঠিক কতটুকু ক্ষতি হবে তা নির্ণয় করা কঠিন। এক হিসেব মতে পুরো তিব্বত মালভূমির মোট জীবের শতকরা ৬০ ভাগ বাস করে এই গিরিখাত এলাকায় যার মধ্যে অনেক অনাবিষ্কৃত প্রজাতি থাকতে পারে[৫]। এই বাঁধ হলে এই বিপুল পরিমান স্থলজ বাস্তুসংস্থান সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হবে, সেই সাথে বিপন্ন হবে পরিবেশ।

    এই গিরিখাত এলাকায় মানুষের বসতি অপেক্ষাকৃত কম কিন্তু তার পরেও এই বাঁধের কারনে মানুষদেরকে নতুন স্থানে স্থানান্তর করতে হবে। ভাবার বিষয় হলো তিব্বতীয়রা কাছে এই স্থান ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে অতীব গুরুত্ত্বপূর্ণ। তিব্বতীয়রা বিশ্বাস করে এই গিরিখাত তাদের রক্ষাদেবী ভাজরাওগিনীর ( তিব্বতীয় ভাষায় দর্জি পাগমু বা Dorjee Pagmo) তীর্থস্থান। সুতরাং তিব্বতীয়দের কাছে এই স্থান ত্যাগ কোন কিছু দিয়েই পূরণ করা সম্ভব নয়।

  • ভাটিতে (বাংলাদেশ) প্রভাবঃ

    এই প্রকল্পের ভাটিতে প্রভাব নিয়ে আমার মূল আলোচনা থাকবে কারন বাংলাদেশ এই প্রকল্পের ভাটি অঞ্চলে অবস্থিত। ঠিক কতটুকু পানি অপসারণ করবে সেই তথ্য না জেনে এবং সঠিক গবেষণা ছাড়া এই প্রকল্পের প্রভাব নিয়ে বিশদ আলোচনা করার ধৃষ্টতা আমার নেই তবে নিজের অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন তথ্যসুত্র ধরে এর ভাটিতে প্রভাব নিয়ে একটি সাধারণ আলোচনা করা যেতে পারেঃ

    • পানিসম্পদের ঘাটতিঃ হিমালয়ের পাদদেশে বাংলাদেশ বা এর আশেপাশের এলাকার একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই অঞ্চলে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বছরের শতকরা ৮০ ভাগ বৃষ্টিপাত হয় জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আর বাকী আট মাসে মাত্র শতকরা ২০ ভাগ বৃষ্টিপাত হয়। তাই এই অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট সবসময়ই প্রকট। বাঁধের মূল কাজ হচ্ছে আর্দ্র মৌসুমে পানি জলাধারে জমিয়ে রেখে শুষ্ক মৌসুমে সেটি ব্যবহার করা। এখন বাঁধ হলে আর্দ্র মৌসুমে (জুন-সেপ্টেম্বর) জলাধারে পানি আটকে রাখা হবে সুতরাং সেই সময়ে আসাম ও বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্রে পানি প্রবাহ কমে যাবে। আবার যেহেতু পানিকে স্থানান্তর করে চীনের উত্তরাঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হবে তাই শুষ্ক মৌসুমেও এই নদীতে পানি প্রবাহ কমে যাবে বা বন্ধ হয়ে যাবে তবে তা নির্ভর করবে কি পরিমান পানি সরাবে তার উপর। অর্থাৎ বছরের সব সময়ই ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহ কমে যাবে ফলে এই নদীকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের কৃষি, মৎসসম্পদ, শিল্প, নৌচলাচল সর্বোপরি মানুষের জীবনযাত্রা ব্যহত হবে। এই প্রক্রিয়া অব্যহত থাকলে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার শাখানদীগুলো অদূর ভবিষ্যতে শুকিয়ে যাবে ফলে যেভাবে গঙ্গার পানি কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিনত হবার উপক্রম হয়েছে এর একই অবস্থা হবে দেশের উত্তর মধ্যাঞ্চলের।

(চলবে)

তথ্যসুত্রঃ

কিছু ফাইল আমি আমার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে রেখে দিয়েছি যার লিঙ্ক নিচে দিলামঃ

[১] ‘Dams and Development: A New Framework for Decision Making’, World Commission on Large Dams.

[২] উইকিপিডিয়া

[৩] Lester R Brown and Brian H alweil, ‘China’s Water Shortage Could Shake World Food Security’, World Watch, July/August 1998.

[৪] দক্ষিণ-উত্তর পানি প্রত্যাহার প্রকল্পের ওয়েবসাইট

[৫] Tashi Tsering, ‘Hydro Logic: Water for Human Development, An Analysis of China’s Water Management and Politics’, Tibet Justice Center: 2002.

[৬] ‘No Chinese dam over Brahmaputra: PM assures Arunachal’, Hindustan Times 21 October 2009.

[৭] Ashis K. Biswas, 'A River Runs Through It', Outluk, 18 June 1997

[৮] John Horgan, 'Peaceful Nuclear Explosions (PNE)', Scientific Americans, June 1996.

[৯] Damien Mcelroy, 'China planning nuclear blasts to build giant hydro project', The Daily Telegraph, 22 October 2000.

[১০] Water War in South Asia? Brahmaputra: Dam & Diversion, October 2003


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

চমৎকার! চালিয়ে যাও। শিনজিয়াঙ আর কানসু প্রদেশে পানি নিয়ে গেলে গোবি এলাকার পরিবেশ, Flora and Fauna-র উপর তার প্রভাব এগুলো নিয়েও একটু লিখ।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ পান্ডবদা। সমস্যা হচ্ছে আমি অনেক ঘাটাঘাটি করেও খুব বেশি নির্ভরযোগ্য তথ্যসুত্র পাচ্ছিনা, তাই লিখতেও সমস্যা হচ্ছে। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

চাইনিজ উচ্চারণ ইংরেজী থেকে করা দুষ্কর। শিনজিয়াঙ প্রদেশের উচ্চারণ ঠিক করে দেবার জন্য ধন্যবাদ।

----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ফাহিম এর ছবি

চমৎকার সিরিজ হচ্ছে। চলুক

=======================
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যাথা!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

সচল জাহিদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ ফাহিম।

----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

গৌতম এর ছবি

এই লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ি, কেবলই জানার জন্য, বুঝার জন্য, মন্তব্যের সামর্থ্য নাই। তাও মন্তব্য করলাম যে— পড়ছি নিয়মিত, সেটা জানানোর জন্য।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সচল জাহিদ এর ছবি

গৌতম দেশের এই গুরুত্ত্বপূর্ণ সমস্যাগুলিতে আমরা একসাথে থাকতে, ভাবতে পারছি সেটাই বড় কথা। অনেক ধন্যবাদ।

----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

নিবিড় এর ছবি

চলুক


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ নিবিড়।

----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ঋজুক এর ছবি

জনাব জাহিদ, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য।

পাশাপাশি আপনার মতামত পাব বলে একটা বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দিগন্ত সাহেব তার ব্লগে এ বিষয়ে একটা লেখা লিখেছেন: Dam on Brahmaputra : Consequence and Reality Check
http://horizonspeaks.wordpress.com/2009/06/28/dam-on-brahmaputra-consequence-and-reality-check/

মোটাদাগে লেখাটিতে দিগন্তের বক্তব্য হলো:

১) ইয়ারলাং বা ব্রহ্মপুত্র থেকে যদি পানিকে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের হোয়াংহো বা ইয়েলো রিভার অববাহিকার দিকে নিতে হয় তাহলে তাকে মাঝের তিনটি নদী যথাক্রমে: Salween, Mekong ও Ynagtze কে অতিক্রম করেই তারপর পানি নিতে হবে। অর্থাত ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি খালের মাধ্যমে প্রথমে সালুইন, তারপর মেকঙ এবং তারপর ইয়াংঝি তে নিয়ে তারপর হোয়াংহো তে নীতে হবে। ফরে এর মানে হলো সালুইন ও মেকঙ এর পানিও কার্যত প্রত্যাহার না করে তার পক্ষে ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রত্যাহার করে হোয়াংহো তে নেয়া সম্ভব না। আর যখনই সে এই কাযটি করতে যাবে তখনই আসিয়ান অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে তার গন্ডগোল লাগবে। ইত্যাদি নানান বিবেচনায় লেখক আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এই পানি প্রত্যাহারের কোন সম্ভাবনা দেখছেন না এবং তার কাছে এটা এখনও একটা স্রেফ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বা কনস্পিরেসি থিওরি হিসেবেই দেখছেন।

২) পানি প্রত্যাহার যদি না হয় তাহলে জলবিদ্যুত প্রকল্পটি ভাটির দেশগুলোর জন্য ক্ষতিকর কিছু নয়, যেহেতু এটি নন-কনসাম্পটিভ ভাবে পানির ব্যবহার করে । বরং শুকনা মৌসুমে সেচের পানি পাওয়া যাবে এবং বর্ষা মৌসুমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ হবে। কাজেই এক্ষেত্রেও আতংকিত হওয়ার কিছু নাই।

আমি এ দুটো বিষয়ে আপনার মতামত আশা করছি।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ ঋজুক আপনার মন্তব্য ও প্রশ্নের জন্য। দিগন্তের লেখাটি আমি আগেই পড়েছি।আমি আপনার প্রশ্নের আঙ্গিকেই দিগন্তের লেখার উপর মন্তব্য করিঃ

১)

ইয়ারলাং বা ব্রহ্মপুত্র থেকে যদি পানিকে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের হোয়াংহো বা ইয়েলো রিভার অববাহিকার দিকে নিতে হয় তাহলে তাকে মাঝের তিনটি নদী যথাক্রমে: Salween, Mekong ও Ynagtze কে অতিক্রম করেই তারপর পানি নিতে হবে। অর্থাত ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি খালের মাধ্যমে প্রথমে সালুইন, তারপর মেকঙ এবং তারপর ইয়াংঝি তে নিয়ে তারপর হোয়াংহো তে নীতে হবে।

পুরোপুরি সঠিক নয়। একটি নদী থেকে অন্য নদীতে পানি প্রত্যাহার করার সময় খালকে মাঝখানে অন্য কোন নদীর ভেতর দিয়ে নিয়ে যেতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। এক্ষেত্রে খালের তলদেশের উচ্চতা ও অতিক্রমকারী নদীর তলদেশের উচ্চতার উপর নির্ভর করে দুটি পথ থাকেঃ

  • সংযোগ খালকে একুইডাক্ট এর মত করে নদীর উপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া।
  • সংযোগ খালকে সাইফোনের মাধ্যমে নদীর নিচ নিয়ে প্রবাহিত করা।

আপনি চীনের নদী সংযোগ প্রকল্পের মধ্যপথ (Central Route) যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন সেখানে পানিকে ইয়েলো রিভার ( হোয়াংহো ) নদীর তলদেশ দিয়ে নিয়ে যাবার নকশা আছে। সুতরাং " সালুইন ও মেকঙ এর পানিও কার্যত প্রত্যাহার না করে বহ্মপুত্রের পানি প্রত্যাহার করে হোয়াংহো তে নেয়া সম্ভব না" এই কথায় আমি একমত নই।

২)


পানি প্রত্যাহার যদি না হয় তাহলে জলবিদ্যুত প্রকল্পটি ভাটির দেশগুলোর জন্য ক্ষতিকর কিছু নয়, যেহেতু এটি নন-কনসাম্পটিভ ভাবে পানির ব্যবহার করে

একেবারেই একমত নই এবং তথ্যটি সঠিক নয়। কেন সঠিক নয় সেটা জানার জন্য আপনাকে আমার টিপাইমুখ সিরিজটি পড়তে অনুরোধ করব। তবে সংক্ষেপে বললে এই ধরণের প্রকল্প ভাটি অঞ্চলের পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটাতে যথেষ্ট্য।

----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দিগন্ত এর ছবি

আপনার ১) নিয়ে -
আমার মনে হয় প্রথম বক্তব্যটা বুঝতে পারেন নি। আমার বক্তব্য ছিল চিনের উদ্দেশ্য হোয়াং হো তে জল আনা ও তার জন্য বর্তমানে ইয়াংসী থেকে জল অপসারণ করা হচ্ছে। কারণ ইয়াংসী থেকে জল পাঠানো তুলনামূলক ভাবে সহজ আর ভৌগোলিকভাবে এরা কাছাকাছি। এর পরে একে একে মেকং ও সালুইন থেকে জল পাঠানো হবে ও সবশেষে ব্রহ্মপুত্র। চিনের পরিকল্পকেরা কাছের নদী ছেড়ে দূরের নদী থেকে জল আনবে কেন, যেখানে মেকং এর ওপর চিনের অনেকগুলো বাঁধ এখনই আছে? তত্ত্বগতভাবে সম্ভব হলেও লাভটা কোথায়? চিন মেকং নদী কমিশনে যোগ দেয় নি বা মায়ানমারের সাথেও তার আলাদা চুক্তি নেই। তাই মেকং থেকে জল না সরানো অবধি আমারা কেন ভাবতে বসব?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সচল জাহিদ এর ছবি

দিগন্ত আমার লেখাতেই আপনার মন্তব্য আশা করেছিলাম।মনে হয় ইদানিং ব্যস্ত আছেন। যাই হোক যদিও জবাবটা আপনি ঋজুককে দিয়েছেন তার পরেও প্রতিমন্তব্য করলাম।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য আর তা হলো মেকং এর উপর চীন ও ভাটির দেশগুলোর বেশ কয়েকটি বাঁধ আছে। সুতরাং মেকং থেকে পানি প্রত্যাহারের চিন্তা চীন আপাতত করবেনা কারন তাতে নিজেদের বাঁধগুলো হুমকির মধ্যে পড়বে। চীনের নদী সংযোগ প্রকল্পের কোন পরিকল্পনায় এটা নেইও। তাহলে প্রশ্ন যেটা উঠেছে 'কেন ব্রহ্মপুত্র' সেটার জবাব দেই। আমি আমার লেখায় উল্লেখ করেছি এই অঞ্চলের নদী থেকে পানি চীনের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে নিতে গেলে একে নিচু উচ্চতা থেকে উচু উচ্চতায় তুলতে হবে। সেজন্য প্রয়োজন প্রচুর শক্তি। এই প্রকল্পের পরিকল্পনাকারীর মতে ইরারলুং সাংপুর ঐ গিরিখাতে যে ব্যাপক জলবিদ্যুৎ বিভব আছে সেটি দিয়ে পানিকে পাম্প করে উত্তরে নেয়া সম্ভব। আর সে কারনেই ইয়ারলুং এর প্রসংগ আসছে।

আর আমরা কেন ভাবতে বসত সেই প্রশ্নের উত্তর যদি ইতিমধ্যে না জেনে থাকেন তাহলে আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করুন। আমি পরের পর্বে বা শেষ পর্বে বিস্তারিত লেখব। শুধু এই টুকু বলি এর সাথে জড়িয়ে আছে রাজনীতি।

----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দিগন্ত এর ছবি

আগের পর্বগুলো পড়া হয়নি। পড়ে নিচ্ছি। আপনার যুক্তি মেনে ব্রহ্মপুত্রে অবশ্যই জলবিদ্যুত প্রকল্প করা সম্ভব ও সেই এনার্জি ব্যবহার করে একে একে মেকং ও সালুইন থেকেও জল অপসারণ সম্ভব। মেকং এ চিনের এখনও অসংখ্য বাঁধের পরিকল্পনা আছে।
auto


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ঋজুক এর ছবি

দিগন্ত, আপনার মূল লেখায় এ বিষয়ে লেখা বাক্যটি ছিল এরকম:

It is logical to believe that China cannot divert water from Yarlong (Brahmaputra) before it does so from Salween and Mekong.

এই cannot কি অসম্ভব্যতা অর্থে বোঝায় না? নাকি এখন যেমন দাবী করছেন যে, আসলে আপনি বোঝাতে চেয়েছেন - যেহেতু "তুলনামূলক ভাবে সহজ আর ভৌগোলিকভাবে এরা কাছাকাছি" তাই মেকং আর সালুইন থেকে পানি প্রত্যাহারের আগে ব্রম্মপুত্র থেকে পানি প্রত্যাহারের কারণ নেই- এই অর্থে? আপনি এই অর্থে ব্যবহার করলে তো cannot ব্যবহার না করে বরং will not বা will not be profitable ব্যবহার করাটাই স্বাভাবিক হতো, তাই না? তাছাড়া আপনি পরে বলেছেন:

Once it starts diversion of Mekong, a series of political conflict is expected – especially with ASEAN states – something that China could hardly afford. This could potentially delay the plan to add further water in the channel.

তার মানে কি এই বোঝাতে চাচ্ছিলেন না যে, যেহেতু মেকং থেকে পানি প্রত্যাহার করতে গেলে আসিয়ান দেশগুলোর সাথে ঝামেলা হবে এবং যেহেতু মেকং থেকে পানি প্রত্যাহার না করে ব্রম্মপুত্র থেকে পানি প্রত্যাহার করা যাবে না (cannot), কাজেই আগামী ৩০ বছরের আগে ব্রম্মপুত্র থেকে পানি প্রত্যাহারের কোন সম্ভাবনা নেই? তা না হলে তো মেকং এর প্রসংগ টানার কোন যুক্তি খুজে পাওয়া যাচ্ছে না! বরং মেকং এর প্রসংগ তো আপনার তোলা "কেন ব্রম্মপুত্র" প্রশ্নেরই উত্তর হিসেবে হাজির হচ্ছে, তাই না?

ভুল হলে কথা ঘুরিয়ে পিছলিয়ে না গিয়ে বরং সরাসরি স্বীকার করে নেয়াই ভালো!

গৌতম এর ছবি

বোকার মতো একটা প্রশ্ন করি (করাটা ঠিক কিনা বুঝতে পারছি না, তারপরও কৌতুহল সামলাতে না পেরে করেই ফেলছি)- এই যে পানি-বণ্টনের কথা বলা হয়, সেখানে কি দেশটা প্রাধান্য পায়, নাকি মানুষ প্রাধান্য পায়? ধরুন, কুমিল্লার গোমতি নদীর কথা। এটা ত্রিপুরা থেকে এসেছে। ত্রিপুরার যে এলাকা থেকে এসেছে সেখানে মূলত পাহাড়-পর্বত, মানুষজনের বসতি সেখানে খুবই কম। অন্যদিকে বাংলাদেশ অঞ্চলে নানা কাজে গোমতির ব্যবহার বেশি। অর্থাৎ দেশ হিসেবে গোমতির অধিকাংশ ভারতের সীমানায় পড়লেও মানুষের ব্যবহারের দিক দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ এই নদীটা বেশি ব্যবহার করে। যখন পানি-বণ্টন বা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, তখন এই বিষয়টা কি গুরুত্ব পায়?

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যনাদ গৌতম আপনার প্রশ্নের জন্য।

আসলে পানিবন্টনের ক্ষেত্রে আমার ধারণামতে দেশই প্রাধান্য পায়। আপনার উদাহরণের উত্তরেই যদি বলি, ধরেন ত্রিপুরা সরকার পরিকল্পনা করল যে গোমতী নদীর উপর বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে সেক্ষেত্রে এই নদীর উজানে মানে ত্রিপুরারে পানি ব্যবহারের লোক থাকুক বা না থাকুক দেশের প্রয়োজনে ভারত সরকার কিন্তু বাঁধ করার জন্য প্রস্তুতি নিতেই পারে। সেক্ষেত্রে এই ইস্যু নিয়ে কিন্তু ভারতের সাথে বাংলাদেশের মতানৈক্যে পৌঁছতে হবে।

আরেকটি উদাহরণ দেই, ফারাক্কা ব্যারেজ করার মূল কারণ ছিল কলকাতা বন্দরের নাব্যতা, সেখানে মানুষের প্রয়োজন থেকে বন্দরের কার্যক্রম তথা দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখাটা জরুরী ছিল। ফারাক্কা না হলে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কিন্তু মরে যেতনা কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু পানির অভাবে খাদ্য উৎপাদন করতে পারছেনা এই ফারাক্কার জন্য। সুতরাং আবারো এখানে দেশই কিন্তু প্রাধান্য পাচ্ছে।

বিদ্রঃ গৌতম কখনই কোন প্রশ্ন করতে ইতস্তত করবেননা, লেখক হিসেবে আমার দায়িত্ত্ব পাঠকদের সব কৌতুহল মেটানো এবং আমি তা আনন্দ নিয়েই করে থাকি।

----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

গৌতম এর ছবি

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ কৌতুহল মেটানোর জন্য। আমার আরেকটি প্রশ্ন ছিলো- যখন পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়, তখন ওই দেশের স্বার্থ প্রাধান্য পেলেও অন্য দেশের অনেক মানুষ যে এই নদীর ওপর নির্ভরশীল, সেটাকে বিবেচনা করা হয় কিনা? করলে কীভাবে, কতোটুকু বিবেচনা করা হয়?

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সচল জাহিদ এর ছবি

যতটা গঙ্গা পানি চুক্তি নিয়ে পড়াশুনা করে শিখেছি তা হলো পানিবন্টনের সময় সংশ্লিষ্ট দেশের বিশেষজ্ঞ ও আমলাদের নিয়ে যৌথ কমিশন গঠিত হয় যেমন ইন্দো বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন (Joint River Commission, JRC) , মেকং নদী কমিশন। যে কথা আন্তর্জাতিক পানি আইনে আছে তা হলো এই সব দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক চুক্তির ক্ষেত্রে সমতা ও কারো পক্ষের ক্ষতি সাধন না করা এই দুই জিনিসের উপর জোর দেয়া হয়। আর এই দুই পক্ষের সমতা রক্ষা করতে যেয়েই চুক্তি বিলম্বত হয় ( উদাহরণ গঙ্গা চুক্তি আলোচনা শুরু হয়েছিল সত্তর এর দশকে চুক্তি হয়েছে ৯৬ এ )। বলতে দ্বিধা নেই এই যে সময়ের জন্য কোন চুক্তি থাকেনা সেইসময় উজানের দেশে সুবিধা পেয়ে থাকে একতরফা ভাবে পানি প্রত্যাহার করে।

----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

গৌতম এর ছবি

আচ্ছা। পানি নিয়ে বাংলাদেশের মূল সমস্যা যেহেতু ভারতের সাথে, সেহেতু এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যদি একটু চালাকি করে তাহলে কেমন হয়? যেমন— বাংলাদেশে প্রবাহিত অধিকাংশ নদীরই উৎপত্তিস্থল নেপাল কিংবা চীনে। এখন নেপাল কিংবা চীনের সাথে বাংলাদেশ যদি সুসম্পর্ক গড়ে তোলে এবং চীন আর নেপালকে দিয়ে ভারতকে ঝাড়ি দেয় যে— ঠিকমতো পানিবণ্টন না হলে নেপাল বা চীন একতরফাভাবে তাদের নদীতে বাঁধ দিয়ে দিবে, যার অসুবিধা ভোগ করতে হবে ভারতকে। তখন কি ভারত অনিচ্ছাসত্ত্বেও সমবণ্টনে রাজি হবে না?

এমনটা কখনোই হবে না জানি— জাস্ট বিষয়টা জেনে রাখার জন্য প্রশ্নটা করলাম। এই এলাকায় নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য চীন যদি কখনও বাংলাদেশ ও নেপালের মিত্র হয়ে যায় এবং বাংলাদেশ তখন এই কাজটা করলে কোনো ফায়দা হবে কি?

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সচল জাহিদ এর ছবি

প্রথমত নেপাল দেশটাই অনেক কিছুর জন্য ভারতের উপর নির্ভরশীল তাই বাংলাদেশ ভারতকে ডিঙ্গিয়ে নেপালের সাথে এইসব ইস্যুতে ভাব জমাতে পারবেনা।

দ্বিতীয়ত বর্তমানে পানি সঙ্কটের সাথে বিশ্ব রাজনীতি বা আঞ্চলিক রাজনীতি যুক্ত হয়েছে। এই অঞ্চলে কতৃত্ত্ব নিয়ে ভবিষ্যতে ভারত ও চীনের মধ্যে প্রতিযোগীতা হবে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতই লাফানো ছাড়া আর কিছুই করার নেই। আমারত মনে হয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন ব্রহ্মপুত্র নদীতে বাঁধ প্রসঙ্গে চীনের সাথে আলোচনা করতে বাংলাদেশের বরং ভারতের সাথে একযোগে আন্তর্জাতিক পটভূমিতে এই বিষয়টি নিয়ে যেতে হবে।

সত্যিকার সমাধান হতে পারে আঞ্চলিক সহযোগীতা থেকে তবে সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা বলে উজানের দেশ সবসমই সুবিধে বেশী পাবে।

----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।