দক্ষিণ এশিয়ার পানিবিরোধঃ চীনের ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি প্রত্যাহার প্রকল্প-শেষ পর্ব

সচল জাহিদ এর ছবি
লিখেছেন সচল জাহিদ (তারিখ: মঙ্গল, ২৪/১১/২০০৯ - ১:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছবি -৮ কৃত্রিম উপগ্রহের তোলা ছবিতে ব্রহ্মপুত্র নদীতে বাঁধ নির্মানের প্রমাণ

রাজনীতি ও ইয়ারলুং সাংপু প্রকল্পঃ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হিটলারের পতন ঘটিয়েছিল, সেই সাথে পৃথিবীকে নিয়ে গিয়েছিল বর্তমান মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দিকে। তবে এই দুইয়ের মাঝের সময়টাতে সমাজতন্ত্রবাদী আর পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্যমান স্নায়ুযুদ্ধ আমাদেরকে নিয়ে গিয়েছিল এক ভয়ঙ্কর প্রতিযোগীতার মাঝে। পৃথিবীর মানুষকে জিম্মি করে রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের সেই নিউক্লিয়ার প্রতিযোগীতার কুফল এই প্রজন্ম বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বয়ে বেড়াতে হবে আরো অনেক দিন।

'অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ন নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ' বা PNE এর মুখোশে যুক্তরাষ্ট্রের সেই 'অপারেশন প্লাউশেয়ার (Operation Plowshare)' ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের 'প্রোগ্রাম ৭ (Nuclear Explosions for the National Economy)' পৃথিবীকে যতটা শান্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দিতে পেরেছে তার থেকে অনেক অনেক গুন তেজস্ক্রিয়তার বিষবাষ্প ছড়িয়েছে।এক হিসেবমতে যুক্তরাষ্ট্র ‘অপারেশন প্লাউশেয়ারের’ মাধ্যমে ১৯৬১ থেকে ১৯৭৩ সালের মধ্যে ২৮ টি নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ চালায়, অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ‘প্রোগ্রাম ৭’ এর আওতায় ১১৫ টি নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ ঘটায় ১৯৬৫ থেকে ১৯৮৯ সালের মধ্যে। যদিও এই প্রকল্পগুলোর উদ্দেশ্য দেখানো হয় উন্নয়নের জন্য নিউক্লিয়ার গবেষনা কিন্তু আসলে এটি ছিল মূলত দুই পরাশক্তির একে অপরকে শক্তি প্রদর্শন।

পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি অপসারনের সাথে এই PNE এর আলোচনার সমঞ্জস্য কোথায়? যুক্তরাষ্ট ও সোভিয়েত ইউনিয়নের এই প্রকল্পগুলোর উদ্দেশ্যের মধ্যে কিছু ছিল পানিসম্পদ উন্নয়নের সাথে জড়িত যা চীনকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখাচ্ছেঃ

  • অপারেশন প্লাউশেয়ারের অধীনে সিডান টেষ্টের উদ্দেশ্য ছিল বড় ধরনের খনন কাজ যেমন খাল বা হারবার তৈরীর জন্য নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ পরীক্ষা করা।
  • প্রস্তাবিত টেনেজী/টম্বিগী ওয়াটারওয়ে (Tennessee/ Tombigee Waterway) প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল ২৫০ মাইল খাল কেটে টিনেজী ও টম্বিগী নদীকে যুক্ত করা।
  • প্রস্তাবিত ‘আন্তঃমহাসাগরীয় সমুদ্রতল খাল স্টাডি’ (Inter-oceanic Sea Level Canal Study) প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল পানামা খালকে সম্প্রসারন করা ।
  • প্রস্তাবিত এক্যুয়ারিস প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, বাঁধ নির্মান, ভূগর্ভস্থ পানি সঞ্চয় এবং ভূগর্ভস্থ জলাধার (Aquifer) পরিবর্তন করা।
  • প্রোগ্রাম ৭ এর অধীনে ৪ টি প্রকল্প কৃত্রিম খাল ও বাঁধ নির্মানের জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে নিউক্লিয়ার বিস্ফোরন ব্যবহার করা যার মধ্যে শ্যাগন টেষ্ট ও টাইগা টেষ্ট উল্লেখযোগ্য।

পূর্বে উল্লেখ করেছি ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে চীনের পিএনই এর মাধ্যমে হিমালয়ের মধ্য দিয়ে সুড়ংগ করে ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি প্রত্যাহারের পরিকল্পনা যখন সাইয়েন্টিফিক এমেরিকান ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় তখন রথী মহিরথীদের মধ্যে সাড়া পড়ে যায়।এই প্রকল্পকে “একেবারেই অগ্রহণযোগ্য” বলে US Arms Control and Disarmament Agency এর ক্যাথেরিন মাগ্রের সেই উক্তির যুক্তি ছিল,

‘যেকোন নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণই এটিকে সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে’[৮]

আরো ভাল করে বলতে গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভয় ছিল এই প্রকল্পের নাম করে চীন আবার তাদের নিউক্লিয়ার গবেষনা নির্বিঘ্নে চালিয়ে নিতে পারে কিনা।আশঙ্কার পেছনে কারন ছিল চীনের ‘Limited Test Ban Treaty (LTBT)’ তে স্বাক্ষর না করা, কারন এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলে চীন একমাত্র ভূগর্ভস্থ ছাড়া অন্য কোন নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ পরীক্ষা করতে পারবেনা। যদিও আমেরিকার ১০৩০ টি, রাশিয়ার ৭১৫ নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণের তুলনায় চীনের ৪৩ টি বিস্ফোরণ তুলনীয় নয় তবুও ইয়ারলুং সাংপু প্রকল্পের বাস্তবায়নের নেপথ্যে তাদের নিউক্লিয়ার গবেষণা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার যুক্তি অমুলক নয়।

এত গেল বিশ্ব রাজনীতির খবর, এবারে চোখ ফেরাই এশিয়ার দিকে। একুশ শতকের বিশ্বে সুপারপাওয়ার হিসেবে যাদের উত্থান হবার কথা তার তিনটি দেশই এশিয়াতেঃ রশিয়া, চীন ও ভারত। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই এই দেশগুলোর মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রতিযোগীতা বিরাজ করবে।

পাঠক একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে রাশিয়ার সাইবেরীয় নদীগুলোর পানি স্থানান্তর প্রকল্প (Northern River Reversal Project), চীনের দক্ষিন-উত্তর পানি স্থানান্তর প্রকল্প (South North Water Transfer Project) আর ভারতের রিভার লিঙ্কিং প্রকল্প (Indian Rivers Inter-link) কে কি এক সূতায় বাঁধা যায়না? এই তিনটি দেশের একটি সাধারণ সমস্যা হচ্ছে এক অংশে পানির প্রতুলতা আর অন্য অংশে অপ্রতুলতা। এই দেশগুলির উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে শক্তি উৎপাদন, শিল্পায়ন আর সেই সাথে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জন যার জন্য এদের প্রয়োজন পানির সমবন্টন।

এবার আসি প্রতিযোগীতার মাঠে, চীন খুব ভাল করে জানে ভারতের রিভারলিঙ্কিং প্রকল্পের বাস্তবায়ন অনেকাংশে নির্ভর করবে ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহের উপর কারন এই প্রকল্পের একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র থেকে পানিকে গঙ্গায় নিয়ে আসা। আর সেই সাথে রাশিয়ার প্রকল্পের সাথে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার জন্য চীনের এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন ঘটানো অসম্ভব কিছু নয়।ইতিহাস বলে চীনা সম্রাটেরা অসম্ভব সব প্রকল্প পরিকল্পনা করে এবং তার বাস্তবায়ন ঘটায় যুগ যুগ ধরে। আমরা চীনের গ্র্যান্ড ক্যানাল প্রকল্প, গ্রেট ওয়াল প্রকল্প বা সাম্প্রতিককালে থ্রী গর্জস ড্যাম প্রকল্পের বাস্তবায়নের ইতিহাস জানি। সুতরাং চীনের জন্য এই প্রায় অসম্ভব প্রকল্পকে বাস্তব রূপদান করা মোটেই আশ্চর্য্যের বিষয় হবেনা। কথিত আছে যে প্রকল্প একবার চীনের ড্রয়িং বোর্ডে আসে তার বাস্তবায়ন ছাড়া চীনা নেতাদের আর কিছুই করার থাকেনা তার ফলাফল যাই হোকনা কেন[১০]।

সাম্প্রতিক সর্বশেষ পরিস্থিতিঃ

একেবারে প্রথম পর্বে বলেছিলাম যে চীন ভারতকে কুটনৈতিক ভাবে আশ্বাষ দিয়েছে যে ব্রহ্মপুত্র নদে তারা কোন বাঁধ দিবেনা[৬]।নভেম্বরের শুরুর দিকে যে খবরটি সমগ্র ভারতে গনমাধ্যমে সাড়া জাগায় তা হচ্ছে,

“ভারতের জাতীয় রিমোট সেন্সিং এজেন্সী (NRSA, বর্তমান National Remote Sensing Center বা NRSC) এই মর্মে নিশ্চিত হয়েছে যে চীন ব্রহ্মপুত্র নদীতে বাঁধ নির্মান শুরু করে দিয়েছে”[১২]

NRSC প্রতিনিধি গন সচিব কমিটির সামনে এই নির্মান কাজের প্রমাণাদি, নির্মান এলাকায় ট্রাকের চলাচল ও মাটি খননের কাজের ছবি প্রদর্শন করেন। উপরের ছবিটিতে (ছবি -৮) সেই প্রমান রয়েছে।যদিও এই প্রসঙ্গে চীনের ব্যাখ্যা চাওয়া হলে চীনের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখোপাত্র এক সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখ করেন,

“চীন একটি দ্বায়িত্ত্বশীল দেশ এবং এমন কিছু করবেনা যা অন্যের ক্ষতিকর হবে”

অথচ সাম্প্রতিক কালেই চীন পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে প্রবাহিত ইন্দাস নদীর উপর বাঁধ নির্মান করেছে পাকিস্তানকে কিছু না জানিয়েই [১৩]।সুতরাং চীনের এই দ্বায়িত্ত্বশীলতার ভবিষ্যৎ কি সেকথা বলাই বাহুল্য।

শেষকথাঃ

প্রিয় পাঠক, চাহিদা আর যোগানের দ্বৈরথ আদী ও অকৃত্রিম। ইতিহাস বলে সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তন হয় যুগে যুগে। একুশ শতকের বিশ্বে আমরা কোন নতুন সাম্রাজ্যবাদের দেখা পাব সেই প্রশ্নেরও জবাব আমার জানা নেই, সেই সাম্রাজ্যবাদের উত্থানে কাদেরকে বলি হতে হবে সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সাহসও আমার নেই, আমার শুধু জানা আছে ব্রহ্মপুত্রে প্রবাহ কমে গেলে নদীমাতৃক আমার সেই প্রিয় দেশটার অনেক কিছুই যাবে। আমি জানিনা এভাবে একের পর এক পানিসংকটে পড়ে দরিদ্র দেশমাতা আর কতদিন তার সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখতে পারবে। তবে দেশের নাগরিক হিসেবে যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন এই সমস্যাগুলি নিয়ে মানুষের মাঝে কিছুটা হলেও সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করে যাব, যেন পরবর্তী প্রজন্ম তাদের সঙ্কটপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য আমাদেরকে একতরফা ভাবে দায়ী না করে।

(সমাপ্ত)

এই সিরিজের আগের পর্বগুলিঃ

দক্ষিণ এশিয়ার পানিবিরোধঃ চীনের ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি প্রত্যাহার প্রকল্প-পর্ব ১
দক্ষিণ এশিয়ার পানিবিরোধঃ চীনের ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি প্রত্যাহার প্রকল্প-পর্ব ২
দক্ষিণ এশিয়ার পানিবিরোধঃ চীনের ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি প্রত্যাহার প্রকল্প-পর্ব ৩
দক্ষিণ এশিয়ার পানিবিরোধঃ চীনের ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি প্রত্যাহার প্রকল্প-পর্ব ৪

তথ্যসুত্রঃ

কিছু ফাইল আমি আমার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে রেখে দিয়েছি যার লিঙ্ক নিচে দিলামঃ

[১] ‘Dams and Development: A New Framework for Decision Making’, World Commission on Large Dams.

[২] উইকিপিডিয়া

[৩] Lester R Brown and Brian H alweil, ‘China’s Water Shortage Could Shake World Food Security’, World Watch, July/August 1998.

[৪] দক্ষিণ-উত্তর পানি প্রত্যাহার প্রকল্পের ওয়েবসাইট

[৫] Tashi Tsering, ‘Hydro Logic: Water for Human Development, An Analysis of China’s Water Management and Politics’, Tibet Justice Center: 2002.

[৬] ‘No Chinese dam over Brahmaputra: PM assures Arunachal’, Hindustan Times 21 October 2009.

[৭] Ashis K. Biswas, 'A River Runs Through It', Outluk, 18 June 1997

[৮] John Horgan, 'Peaceful Nuclear Explosions (PNE)', Scientific Americans, June 1996.

[৯] Damien Mcelroy, 'China planning nuclear blasts to build giant hydro project', The Daily Telegraph, 22 October 2000.

[১০] Water War in South Asia? Brahmaputra: Dam & Diversion, October 2003

[১১] Historic Earthquakes, USGS
[১২] ‘RS agency spots China’s dam on Brahmaputra’, Zee News, 24 November, 2009

[১৩] ‘China builds dam on Indus in Tibet, keeps Pakistan uninformed’, The News, 19 March, 2009

ছবিসুত্রঃ www.indianexpress.com


মন্তব্য

গৌতম এর ছবি

ধন্যবাদ জাহিদ ভাই। আমি এই লাইনের মানুষ না, কিন্তু আপনার পোস্টগুলো পড়ে অনেক কিছু শিখলাম। হাসি

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ গৌতমদা আপনার মন্তব্যের জন্য। আসলে এই ইস্যুগুলিতে আমাদের সবারই ধারণা থাকা উচিৎ আর সেজন্যই আমার এই প্রয়াস।

----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ জাহিদ ভাই... আপনার এরকম গবেষণামূলক কাজগুলো পড়তে পেরে আনন্দিত।

আপনার ইবুকটার কতদূর? টিপাইমুখ নিয়ে?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ নজু ভাই। টিপাইমুখ নিয়ে ইবুকটার কাজ শেষ, এখন প্রকাশায়তন এর উদ্বোধন এর অপেক্ষায়।

----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

একটা সালাম না জানালেই নয় আপনাকে!
ধন্যবাদ!

সচল জাহিদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ লুৎফুল ভাই।

----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দিগন্ত এর ছবি

এখানে আপনি জল অপসারণের আরো একটি সামরিক ও রাজনৈতিক কারণ উপস্থাপন করলেন। এ বিষয়ে আপনাকে প্রশ্ন হল -
১) কোনটা মুখ্য কারণ হতে পারে বলে আপনার মনে হয়? জলাভাব না এই কারণগুলো?
২) জলাভাব যদি মুখ্য কারণ হয় তবে তা মেটানোর আর কি কি বিকল্প রাস্তা আছে চিনের হাতে?
৩) ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে এই জল অপসারণের প্রয়োজনীয়তা শেষ হওয়া সম্ভব? যেমন ধরুন, সমুদ্রের লবণাক্ত জল পরিশোধনের কোনো সস্তা ও সহজ পথ পাওয়া গেলে হয়ত আর কোনো রিভার লিঙ্কিং এর প্রয়োজন পড়বে না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সচল জাহিদ এর ছবি

দিগন্ত ধন্যবাদ আপনার প্রশ্নের জন্য। নিচে উত্তর দেবার চেষ্টা করলামঃ

১) কোনটা মুখ্য কারণ হতে পারে বলে আপনার মনে হয়? জলাভাব না এই কারণগুলো?

সত্যিকার বলতে গেলে যখন চীনের পানি সংকট নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করলে আমার কাছে জলাভাবকেই মুখ্য বলে মনে হয় কিন্তু পিএনই ইস্যুটি দ্বিতীয় কারণটিকে সামনে নিয়ে আসে। এশিয়ায় প্রাধান্য বিস্তার করতে হলে বর্তমান বিশ্বের আলোকে চীনকে নিউক্লিয়ার শক্তিতে উন্নত হতে হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে চীন যদি সেটা অর্জন করতে পারে তবে একই সাথে দুইটি লক্ষ্য অর্জিত হবে। সেই সাথে ভারতের নদীসংযোগ প্রকল্পকে একটি ধাক্কা দেয়াটাও চীনের জন্য জরুরী।

২) জলাভাব যদি মুখ্য কারণ হয় তবে তা মেটানোর আর কি কি বিকল্প রাস্তা আছে চিনের হাতে?

কঠিন প্রশ্ন, সমস্যাটা বুঝি কিন্তু সমাধানের পথ বের করার জন্য যতটুকু তথ্য আর উপাত্ত প্রয়োজন তা নেই। সমস্যাটা যেহেতু চাহিদা আর যোগানের অসামঞ্জস্যতা, সুতরাং যোগান না বাড়িয়ে চাহিদা কমানো গেলেও কিন্তু সমস্যা মিটে। পানির চাহিদা মূলত তিন ক্ষেত্রেঃ কৃষিতে, শিল্পে আর নগরে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা আর দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়ন এই সমস্যাকে আরো প্রকট করছে। সেক্ষেত্রে নিচের পদক্ষেপগুলি নেয়া যেতে পারেঃ

  • পানির সংরক্ষণ বা যথাযথ ব্যবহার ও পানি ব্যবস্থাপনাকে আরো উন্নত করা
  • কৃষিক্ষেত্রে পানির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা। সেচের সময় ব্যবহৃত পানির বিশাল অংশ স্বতঃবাষ্পীভূত হয়ে উড়ে যায়, সেচ ব্যবস্থাকে উন্নত করে এই অপচয় কমানো সম্ভব।
  • মরু এলাকায় বা যেখানে খড়া সমস্যা প্রকট সেখানে Drought-Resistant ফসলের আবাদ করা বা এর জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা করা।
  • শিল্পে ও নগরে ব্যবহারের জন্য পানির মূল্য বৃদ্ধি করা, এতে পানির অপচয় কম হবে ও দাহিদা কমে যাবে।
  • বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও তার ব্যবহার পানি সঙ্কট সমাধানে একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ।

৩) ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে এই জল অপসারণের প্রয়োজনীয়তা শেষ হওয়া সম্ভব? যেমন ধরুন, সমুদ্রের লবণাক্ত জল পরিশোধনের কোনো সস্তা ও সহজ পথ পাওয়া গেলে হয়ত আর কোনো রিভার লিঙ্কিং এর প্রয়োজন পড়বে না।

এখন পর্যন্ত নগরে গৃহস্থালী কাজে প্রয়োজনীয় পানির জন্য সমুদ্রের পানি ব্যবহার এর উদাহরণ আছে কিন্তু শিল্পায়ন ও কৃষিক্ষেত্রে এর ব্যবহার অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ভাবে সেতা কতটা ফিজিবল সেটা গবেষণার দাবী রাখে।

----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দিগন্ত এর ছবি

আমি আপনাকে চতুর্থ পর্ব নিয়ে আরো একটি প্রশ্ন করি -
এখানে আপনি বলেছেন PNE -এর পরবর্তী তেজস্ক্রিয়তার ভয়াভহতার কথা। আমার ধারণা চিন যদি কোনো নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণে তৈরী টানেলের মাধ্যমে জল অপসারণ করে ইয়াংসী নদীতে নিয়ে যায় তাহলে সমগ্র ইয়াংসী নদীর জলই তেজস্ক্রিয়তায় দূষিত হয়ে পড়তে পারে। চিন এ নিয়ে চিন্তা করবে না বলে কি আপনার মনে হচ্ছে?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সচল জাহিদ এর ছবি

খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ একটি মন্তব্য, আপনার ধারণা ও আশঙ্কা অমুলক নয়। চীন কি করছে সেটা জানিনা তবে এই ইস্যুটি নিয়ে চীনের অবশ্যই চিন্তাভাবনা করা উচিৎ।

----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

স্বাধীন এর ছবি

পানি সম্পদ নিয়ে তোমার এই লেখালেখি প্রশংসার যোগ্য। এই লেখাগুলো থেকে শুধু্মাত্র সাধারন পাঠকই যে লাভবান হবে তা নয়, যে কোন পানি সম্পদ প্রকৌশলের ছাত্রও জ্ঞান লাভ করতে পারবে। তোমার এই উদ্যম যেন কখনো চলে না যায় এই কামনা করি। আশা করি সচলের পাঠকগণ তোমার এই উদ্যম ধরে রাখার জন্য সব সময় তাঁদের অনুপ্রেরণা দিয়ে যাবে।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ স্বাধীন ভাই আপনার অনুপ্রেরণার জন্য। আপনার সহযোগীতা সবসময়ই আমার সাথে ছিল সেজন্য আবারো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।