চতুর্থ দিন (১০ ডিসেম্বর ২০০৯)
তৃতীয় দিনে সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ ডেনমার্কের তৈরী করা খসড়া কোপেনহেগেন চুক্তির ফাস হয়ে যাবার পরের দিনের চমক হচ্ছে চীন, ভারত, দক্ষিন আফ্রিকা ও ব্রাজিলের তৈরী আরো একটা খসড়া চুক্তির খবর বের হওয়া। 'কোপেনহেগেন একর্ড' নামের এই চুক্তির একটি নমুনা ফ্রান্সের দৈনিক পত্রিকা 'লা মন্ডে (Le Monde)' প্রকাশিত হয়।
এএফপি'র রিপোর্ট অনুযায়ী প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় নভেম্বরে বেইজিং এ এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ভারত, চীন, দক্ষিন আফ্রিকা ও ব্রাজিল ১১ পৃষ্ঠার এই খসড়া রিপোর্ট প্রনয়ন করে যা মূলত কিয়োটো প্রটোকলের সংশোধনী। এতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ ১৯৯০ সালের মাত্রার শতকরা ৪০ ভাগে কমিয়ে আনার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার শান্তিতে নোবেল প্রাইজ পাওয়ার অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের উত্তরে কোপ ১৫ সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে তার দেশের নিরাপত্তার সম্পর্ক রয়েছে অন্তত তার দেশের সামরিক নেতারা তাই মনে করেন।
যদিও আইপিসিসি তাপমাত্রা বৃদ্ধির উর্দ্ধসীমা ২ ডিগ্রি নির্দীষ্ট করে দিয়েছে কিন্তু ক্ষুদ্রদ্বীপ রাষ্ট্রসমুহের জোট AOSIS এর নেতা ডেসিমা উইলিয়ামস এই সীমাকে ১.৫ ডিগ্রি করার দাবী জানায় জাতিসংঘের কাছে।যদিও এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে উন্নত দেশগুলিকে তাদের কার্বন নিঃসরণ ২০২০ সালের মধ্যে ১৯৯০ সালের শতকরা ৪৫ ভাগ কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
এদিকে G 77 এর পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে কিয়োটো প্রটোকলে যোগদান করার জন্য এবং কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে এনেক্স-১ দেশগুলোর সমতুল্য অঙ্গীকার করার আহবান জানানো হয়।
সুইডেন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কাটিয়ে উঠার জন্য ৮০০ মিলিয়ন ইউরো প্রদানের প্রতিশ্রুতি করে।
পঞ্চম দিন (১১ ডিসেম্বর ২০০৯)
দিনের সূচনা হয় G 77 এর প্রধান মধ্যস্থতাকারী লুমুম্বার জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সাথে এক বৈঠক করার সময় রেগে ওয়াক আউট করা দিয়ে। স্থানীয় এক টিভি চ্যানেলকে তিনি জানান যে,
'সবকিছু ভাল যাচ্ছেনা, কিছু মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে এই সম্মেলন বানচালের চেষ্টা করছে'
এদিকে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাকযুদ্ধ অব্যহত থাকে। মূলত এই বিতর্কের তীব্রতা বাড়ে টড স্টার্নের একটি উক্তি ধরে যে,
'যদিও চীন উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে জোটকৃত তবুও দরিদ্র দেশগুলোকে সাহায্যের প্রশ্ন আসলে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে বিবেচনা করবেনা।'
টডের এই বিবৃতির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হি ইয়াফি বলেন,
'মার্কিন প্রতিনিধির হয় সাধারণ ইন্দ্রিয় জ্ঞানের অভাব আছে অথবা সে দ্বায়িত্ত্বহীনের মত কথা বলছে। চীন কখনই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অনুদান আশা করেনা। চীনের যথেষ্ট গতিশীল অর্থনীতি আছে এবং সাহায্যের দাবীবার হিসেবে চীন কখনই প্রথমে আসবেনা।'
রশিয়া কিয়োটো প্রটোকল ঠিকমত মেনে চলছে বলে তার প্রতিদান আশা করে। তাদের তথ্যমতে সোভিয়েত পরবর্তী রাশিয়ার শিল্পায়ন বিঘ্নিত হওয়ায় তারা এ পর্যন্ত ১৯৯০ সালের মাত্রার শতকরা ৩৪ ভাগ কম কার্বন নিঃসরণ করছে। সুতরাং রাশিয়া ভবিষ্যতে কার্বন নিঃসরনের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দাবী করে।
সম্মেলনের প্রথম দিনই বেসরকারী তথ্যমতে জানা যাচ্ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১ থেকে ৩ বিলিয়ন ইউরো অনুদান দেবে, তবে তাদের চুড়ান্ত অঙ্কটা জানা গেল পঞ্চম দিনে। এইদিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ টি দেশ একমত হয়ে জানায় যে তারা ২০১২ সাল পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ২.৪ বিলিয়ন ইউরো বা ৩.৬ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেবে।
তবে সব কিছু ছাপিয়ে নিঃসন্দেহে এইদিনে বেশী গুরুত্ত্ব পায় প্রথম বারের মত সম্মেলনের চুক্তির খসড়া অফিসিয়ালি প্রকাশ পাওয়া। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংস্থা UNFCC এর এক কার্যকরী দলের মাধ্যমে ছয় পৃষ্ঠার এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এই রিপোর্টে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে ১৯৯০ সালের মাত্রার শতকরা ৫০ ভাগে কমিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়। যদিও ইতিমধ্যেই সমালোচকেরা এই খসড়ার বেশ কিছু দূর্বল দিক খূঁজে পেয়েছেন যার মধ্যে রয়েছে কে কত সাহায্য দিবে তার কোন কিছু লিপিবদ্ধ না থাকা এবং চুক্তি মানার কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত না করা।
ষষ্ঠ দিন (১২ ডিসেম্বর ২০০৯)
প্রায় পঞ্চাশটির মত দেশ নিয়ে আফ্রিকান গ্রুপ সম্মেলনে একটি খসড়া প্রস্তাব করে যার মধ্যে রয়েছে,
আফ্রিকান গ্রুপের এই প্রস্তাবকে উচ্চাভিলাষী বলে অভিমত প্রকাশ করা হয় কারন শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেরই জিডিপির শতকরা পাঁচ ভাগ গিয়ে দাঁড়ায় ৭২২ বিলিয়ন ডলারে।
G 77 এর প্রতিনিধিরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন কতৃক প্রস্তাবিত ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য মোট ৭.২ বিলিয়ন ইউরো সমপরিমান অনুদানকে অপর্যাপ্ত বলে দাবী করেন।
মেক্সিকো তার নিজ উদ্যোগে কার্বন নিঃসরন ২০২০ সালের মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগে কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করে।
তবে এই দিনের মূল আলোচনায় চলে আসে ভারতের 'পিকিং ইয়ার' ইস্যুর বিরুদ্ধে তার অবস্থান জানিয়ে দেয়া। ' পিকিং ইয়ার' হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি নির্দীষ্ট সাল যার পর থেকে ঐ দেশটি বাধ্য হবে তার কার্বন নিঃসরন কমাতে।ড্যানিশ খসড়া চুক্তি অনুযায়ী এই সালটি নির্দীষ্ট করে দেয়া হয় ২০২৫। ভারতের পরিবেশমন্ত্রী জয়রাম রমেশ উল্লেখ করেন তার দেশের উন্নয়নের জন্য বিশেষ করে পল্লী এলাকায় বিদ্যুতায়নের জন্য তাদেরকে আরো কার্বন নিঃসরণ করতে হবে।
এত হতাশার মধ্যেও আশার বাণী শোনান কোপ ১৫ এর প্রেসিডেন্ট কনি হেডগার্ড। তার মতে এই এক সপ্তাহে সম্মেলনে বেশ কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে বিশেষ করে কিভাবে সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তির ব্যবহার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিতরণ করা যায়।
এদিকে সম্মেলন উপলক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পরিবেশ আন্দোলনকারীরা এসে জড়ো হয় কোপেনহেগেনে।
সপ্তম দিন (১৩ ডিসেম্বর ২০০৯)
সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ত্বকারী বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হাসান মাহমুদ আবারো জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে বাংলাদেশের জন্য সাহায্য দাবী করেন।প্রতিনিধি দলের সদস্য ডঃ আইনুন নিশাত বিশ্বব্যাঙ্ককে অনুদানের অর্থ ব্যবস্থাপনা করার আহবান জানান যাতে করে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে উন্নত দেশগুলোর নির্ধারণ করে দেয়া শর্তগুলো সঠিকভাবে পালত হয়।
তবে কোপেনহেগেন সম্মেলনের এই দিনটির মূল খবর জুড়ে থাকে পরিবেশ আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ ও তা প্রতিহতের ঘটনা। এইদিন সকালে প্রায় দশ হাজার পরিবেশ কর্মীরা শান্ত মিছিল নিয়ে সম্মেলন কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। কিন্তু মুখোশ পরিহিত কিছু কর্মী রাস্তা থেকে পাশের স্টক একচেঞ্জ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয় ভবনের দিকে পাথর ছুড়ে মারে যাতে কয়েকজন পুলিশ আহত হয়। পুলিশ ফলশ্রুতিতে প্রায় ৯৬৮ জন প্রতিবাদকারীকে রাস্তায় আটকে রাখে। পরে সেখান থেকে ১৩ জনকে আটক করা হয়।
এদিকে প্রতিবাদকারীদের একটি দলকে আটক করা হয় যারা ট্রাকে করে বিক্ষোভের সারঞ্জাম নিয়ে যাচ্ছিল।সেখান থেকে প্রায় ২০০ জনকে আটক করা হয় বিশৃঙ্খলা (রায়ট) সংঘটনের প্রস্তুতির অভিযোগে। যদিও এমিনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের মুখোপাত্র উল্লেখ করেন যে প্রায় ১০০০ জনকে আটক করা হয়েছে এবং এদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কিছুই করেনি।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
কোপ ১৫ (COP 15) খ্যাত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনের প্রতিদিনের ঘটে যাওয়া গুরুত্ত্বপূর্ন খবর দিয়ে সাজানো হয়েছে এই সিরিজ।মূলত কোপ ১৫ এর নিউজ ওয়েবসাইট থেকে সংবাদগুলো সংগৃহীত ও অনূদিত।পাঠককে বিস্তারিত খবরের জন্য উল্লেখিত ওয়েবপেইজে যাবার অনুরোধ রইল।
ছবিসুত্রঃ
কোপ ১৫ এর ওয়েবসাইট
কোপ ১৫ এর তথ্যের জন্য নিচের নিবন্ধ পড়তে পারেনঃ
মন্তব্য
খবরগুলো জানা ছিলো, তবুও চুম্বকাংশ আরেকবার রিভাইজ দিয়ে নিলাম।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ বন্যরানা ।
----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
কৃতজ্ঞতা জানবেন, এত সুন্দর কষ্টসাধ্য লেখার জন্য।
- বুদ্ধু
ধন্যবাদ বুদ্ধু।
----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
জাহিদ ভাই পড়লাম লেখাটা । এইখানে আমার একটা অনুরোধ আছে, ভবিষ্যতে এই বিষয় নিয়ে লেখার সময় খসড়া চুক্তি গুলো ফাঁস হয়ে যাওয়ার বির্তক নিয়ে আশা করি আর বিস্তারিত লিখবেন
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ধন্যবাদ নিবিড়। সমস্যা হচ্ছে সঠিক তথ্যসুত্র ছাড়া লেখা কঠিন বিশেষ করে এই গুরুত্ত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে। আমি চেষ্টা করব আরো বিস্তারিত লেখতে।
----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
চালিয়ে যাও। অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর কষ্টসাধ্য লেখা সচলের পাঠকদের দেওয়ার জন্য।
ধন্যবাদ স্বাধীন ভাই।
----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
যথারীতি সচল জাহিদ স্পেশাল... অনেক ধন্যবাদ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ বন্ধু।
----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
চমৎকার হচ্ছে লেখা...
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ধন্যবাদ রণদা।
----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
জাহিদ ভাই,
আপনার পরিশ্রমী উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবীদার
ধন্যবাদ সাফি।
----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
নতুন মন্তব্য করুন