• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

তিস্তা চুক্তিতে বাংলাদেশের লক্ষণীয় বিষয়গুলো

সচল জাহিদ এর ছবি
লিখেছেন সচল জাহিদ (তারিখ: বুধ, ১৭/০৩/২০১০ - ৩:৩৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তিস্তা চুক্তি নিয়ে আমার এই লেখাটি ১৭ মার্চ ২০১০ তারিখে দৈনিক কালের কন্ঠের রাজকূট ফিচার পাতায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে তথ্যসুত্র হিসেবে কাজে লাগতে পারে বলে এটিকে নিজের ব্লগে রেখে দিলাম। যেহেতু সচলায়তনের নীতিমালা মেনে লেখাটিকে প্রথম পাতায় প্রকাশ করিনি তাই পোষ্টে রেটিং বা মন্তব্য নিরুৎসাহিত করছি।
===================================

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো শুধু পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেশি প্রকৌশলীরাই যে প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ নকশা প্রণয়ন ও নির্মাণ কাজে যুক্ত ছিলেন, সেটি হচ্ছে তিস্তা প্রকল্প। কিন্তু তিস্তা নদী নিয়ে কোনো পানি বণ্টন চুক্তি না থাকায়, প্রকৌশলীদের এই গর্ব শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ ছিল, বাস্তবে তৃপ্তির জায়গাটুকু ছিল কম।

প্রধানমন্ত্রীর ২০০৯-এর জানুয়ারিতে ভারত সফরের সময় এটি নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়েছে । আমরা ইদানীং মিডিয়া মারফত জানতে পারছি, ভারত তিস্তা চুক্তির বিষয়ে একটি মতৈক্যে পৌঁছানোর কথা মৌখিকভাবে উল্লেখ করেছে। আশা করব, দীর্ঘমেয়াদি এই চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দিকগুলো যথাযথভাবে লক্ষ্য রাখা হবে।

তিস্তা চুক্তির প্রয়োজনীয়তা : ভারত ও বাংলাদেশের আন্তসীমান্ত নদীগুলোর মধ্যে তিস্তাই মনে হয় সবচাইতে কাটাছেঁড়ার সম্মুখীন হয়েছে। তিস্তার ওপরে ভারতে নির্মিত হয়েছে একটি ব্যারাজ, দুইটি জলবিদ্যুৎ বাঁধ আর বাংলাদেশে নির্মিত হয়েছে তিস্তা ব্যারাজ। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণ কাজ ১৯৮৩ সালে শুরু হয়ে ১৯৯০ সালে শেষ হয়। প্রায় সমসাময়িককালে, ১৯৮৩ সালে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবাতেও আরো একটি ব্যারাজ নির্মাণ শুরু হয় এবং বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণ শেষ হওয়ার অনেক আগেই ভারত সেই ব্যারাজের নির্মাণ শেষ করে। বাংলাদেশের নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই ভারত তার ব্যারাজ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার শুরু করায় তিস্তা ব্যারাজ থেকে বাংলাদেশ যে লাভ আশা করেছিল, সেই লাভ পায়নি।

ব্যারাজের মূল কাজ যেহেতু পানি সরানো তাই বাংলাদেশ তিস্তা ব্যারাজের জায়গায় যতটুকু প্রবাহ আশা করেছিল, ভারতের প্রত্যাহারের কারণে তা অনেক কমে গেছে।

ব্যারাজ নির্মাণের শুরুর দিকে এই সমস্যা প্রকট না হলেও ইদানীং তিস্তায় পানিপ্রবাহের অবস্থা খুবই নাজুক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রাপ্ত তথ্যমতে তিস্তা ব্যারাজের স্থলে পানির নূ্যনতম প্রবাহ ১৯৮০, ১৯৯০, ২০০০ ও ২০০৫ সালে রেকর্ড করা হয়েছে যথাক্রমে ৪৪৯৪, ৪৭৩২, ৫২৯ ও ৮ কিউসেক (এক সেকেন্ডে এক ঘনমিটার প্রবাহ=১ কিউসেক)। এই উপাত্তই প্রমাণ করে সময়ের সঙ্গে তিস্তাতে শুষ্ককালীন প্রবাহ কী হারে কমছে। তিস্তা ব্যারাজ বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে এক সময় অনেক আশার সঞ্চার করেছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান অধিদপ্তরের ২০০১ সালের তথ্যমতে, এই দেশের মোট জনসংখ্যার ৮.৫ শতাংশের আবাসস্থল তিস্তা অববাহিকায় রয়েছে মোট আবাদি জমির শতকরা ১৪ ভাগ। এই অববাহিকার শতকরা ৬৩ ভাগ আবাদি জমি সেচের আওতাধীন, যেখানে দেশের গড় সেচ-আবাদি জমির শতকরা হার ৪২। সেচের পানির প্রাপ্যতা এই অঞ্চলে বছরে দুটি ফসল ঘরে তোলার সুযোগ করে দিয়েছিল। কৃষিতে উন্নতি এই অঞ্চলের কৃষক-শ্রমিকের জীবনযাত্রার মানে প্রভাব পড়েছিল।

প্রাপ্ত তথ্যমতে এই প্রকল্প এলাকায় শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ। কিন্তু তিস্তায় পানির প্রবাহ ধীরে ধীরে হ্রাস পাওয়ায় এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উত্তরবঙ্গের মানুষ। শুরুতে পরিকল্পনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের দুটি ফেইজ ছিল; যার মধ্যে ফেইজ-১ সম্পন্ন হয়েছে। যা মূলত রংপুর ও নীলফামারী জেলায় সেচের সুবিধা দিচ্ছে। দ্বিতীয় ফেইজে পরিকল্পনা ছিল দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও জয়পুরহাটকে অন্তর্ভুক্ত করা। কিন্তু তিস্তায় পানির প্রবাহ কমে যাওয়াতে সেই পরিকল্পনা এখন হুমকির সম্মুখীন।

তিস্তা চুক্তি আলোচনার ইতিহাস : তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির আলোচনার ইতিহাস অনেক পুরনো। ১৯৭২ সাল থেকে এই বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়, ১৯৮৩ সালে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারত একটি এডহক চুক্তির বিষয়ে একমত হলেও কোথায় কী পদ্ধতিতে পানি বণ্টন হবে সেটি নিয়ে দ্বিমতের কারণে শেষ পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক দলিল হয়নি। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিস্তাসহ অন্যান্য অভিন্ন নদ-নদীর বিষয়ে আলোচনা বেগবান হয় মূলত ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গাচুক্তির পর থেকে। গঙ্গাচুক্তির অনুচ্ছেদ ৯ অনুযায়ী, 'পক্ষপাতবিহীন ও সাম্যতাপ্রসূত এবং কোনো পক্ষেরই ক্ষতি না করে দুই সরকারই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বহমান অন্যান্য আন্তসীমান্ত নদীসমূহের চুক্তির ব্যাপারে একক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার ব্যাপারে একমত'। অর্থাৎ গঙ্গাচুক্তি মেনে নিলে এই ধারা অনুযায়ী অন্য নদীগুলো নিয়ে আলোচনার বাধ্যবাধকতা দুই দেশের ওপরেই চলে আসে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সচিবপর্যায়ের বৈঠকে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয় এবং যৌথ নদী কমিশনের নির্দেশক্রমে এই কমিটির কাজ ছিল মূলত তিস্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে অন্যান্য অভিন্ন নদীর ক্ষেত্র স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি পানি বণ্টন ফর্মুলা প্রণয়ন করা। বিশেষজ্ঞ কমিটি ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এই বিষয়ে গবেষণা, আলোচনা, পরিদর্শন ও পর্যালোচনা করে এলেও এখনো তিস্তাচুক্তি সম্পন্ন হয়নি; কারণ বাংলাদেশ ও ভারত পানি বণ্টন নিয়ে একটি একক ফর্মুলায় একমত হতে পারেনি।

এই সুদীর্ঘ সময়ে যৌথ বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন তিস্তা ছাড়াও ইছামতি, ফেনী, মাতামুহুরী, মনু, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বণ্টন নিয়েও আলোচনা করেছে। প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ ভারত সফরে যুক্ত নদী কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইছামতি ও ফেনী নদী নিয়ে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে মতৈক্যে পেঁৗছেছে। ইছামতি নদীতে পলির কারণে উজানে, বিশেষ করে ভারতীয় অংশে, সৃষ্ট বন্যা সমস্যা ও শুষ্ক মৌসুমে প্রবাহ কমে যাওয়ার সমস্যা সমাধানকল্পে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদোগে ইছমতি নদী খনন করবে। ফলে ভারতে বন্যা সমস্যা দূর হবে, সেই সঙ্গে ফেনী নদী থেকে ভারত ১.৮ কিউসেক পানি উত্তোলন করবে খাবার পানি প্রকল্পের জন্য। সুতরাং সহজ করে বলতে গেলে সর্বশেষ যুক্ত নদী কমিশনের বৈঠক থেকে বাংলাদেশের জন্য কিছুই আসেনি। যদিও প্রায় এক যুগ ধরে চলা আপস আলোচনায় ইছামতি ও ফেনী নদীর পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সব সময় ছিল যে, 'একমাত্র তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারত সম্মত হলেই এই দুই নদীর বিষয়ে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে মতৈক্যে পৌঁছবে।' বাস্তবে তা হয়নি, বাংলাদেশের মঙ্গাপীড়িত উত্তরবঙ্গের জন্য প্রয়োজনীয় তিস্তা আগের মতোই শুষ্ক রয়েছে, হুমকির মুখে পড়ে রয়েছে বাংলাদেশের গৌরব তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প।

কেন এই মতবিরোধ : প্রশ্ন উঠতে পারে, তিস্তা নিয়ে কেন এই মতবিরোধ। এর উত্তরের জন্য তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার, বিশেষ করে প্রস্তাবিত পানি বণ্টনের ফর্মুলার দিকে একটু আলোকপাত করা উচিত। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তিস্তার পানি বণ্টন (প্রতিবছর ১ অক্টোবর থেকে পরবর্তী বছরের ৩০ এপ্রিল) নিয়ে তিনটি প্রস্তাব আলোচিত হয়েছে।

প্রস্তাব ১ : ভারতের গজলডোবায় লব্ধ পানির শতকরা ২০ ভাগ নদীখাত সংরক্ষণের জন্য বরাদ্দ থাকবে, আর বাকি শতকরা ৮০ ভাগ পানি বাংলাদেশ ও ভারত সমভাবে ভাগ করে নেবে।

প্রস্তাব ২ : ভারতের গজলডোবায় লব্ধ পানির শতকরা ২০ ভাগ নদীখাত সংরক্ষণের জন্য বরাদ্দ থাকবে, আর বাকি শতকরা ৮০ ভাগ পানি ১৯৮৩ সালে প্রস্তাবিত এডহক চুক্তি অনুযায়ী ৩৬:৩৯ অনুপাতে বাংলাদেশ ও ভারত ভাগ করে নেবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ পাবে ৩৮ শতাংশ আর ভারত পাবে ৪২ শতাংশ।

প্রস্তাব ৩ : ভারতের গজলডোবায় লব্ধ পানির শতকরা ১০ ভাগ নদীখাত সংরক্ষণের জন্য বরাদ্দ থাকবে, আর বাকি শতকরা ৯০ ভাগ পানি ১৯৮৩ সালের এডহক চুক্তি অনুযায়ী ৩৬:৩৯ অনুপাতে বাংলাদেশ ও ভারত ভাগ করে নেবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ পাবে ৪৩ শতাংশ আর ভারত পাবে ৪৭ শতাংশ।

উপরোক্ত তিনটি প্রস্তাবের মধ্যে প্রথমটি ছিল বাংলাদেশের মূল প্রস্তাব আর বাকি দুটি ছিল বিকল্প। সুতরাং অধিক আলোচনা হয়েছে প্রথমটি নিয়েই। এর বিপরীতে ভারতের প্রস্তাব ছিল অতিমাত্রায় একপেশে; যাতে উল্লেখ করা হয়, শতকরা ১০ ভাগ পানি নদীর জন্য রেখে ভারতের গজলডোবা ও বাংলাদেশের দোয়ানীতে সেচ প্রকল্পের কমান্ড এরিয়ার অনুপাতে পানি বণ্টন করা হবে। গজলডোবায় সেচ প্রকল্পের কমান্ড এরিয়া ৫.৪৬ লাখ হেক্টর আর দোয়ানীতে ১.১১ লাখ হেক্টর_সেই বিচারে ১০ শতাংশ পানি নদীর জন্য রেখে বাকি ৯০ শতাংশ পানি ৫:১ অনুপাতে বণ্টন করার প্রস্তাব করে ভারত, যাতে বাংলাদশের ভাগে জুটবে মাত্র ১৫ শতাংশ আর ভারতের ভাগে ৭৫ শতাংশ।

আসন্ন তিস্তা চুক্তিতে বাংলাদেশ অবস্থান যা হওয়া উচিত : বাংলাদেশের মঙ্গাপীড়িত উত্তরবঙ্গের জন্য তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প যেমন প্রয়োজনীয়, ভারতের গজলডোবার ব্যারাজ প্রকল্প বা আরো উজানে জলবিদ্যুৎ বাঁধ প্রকল্প হয়তো তাদের জন্য প্রয়োজনীয়। প্রযুক্তির ছাত্র হিসেবে আমি আবেগের থেকে যুক্তিকে অগ্রাধিকার দিই এই ইস্যুগুলোতে। সুতরাং বাংলাদেশ এই আপস আলোচনায় যে যুক্তিগুলো তুলে ধরতে পারে তা হলোঃ

১. গঙ্গাচুক্তির অনুচ্ছেদ ৯-এ 'পক্ষপাতবিহীন ও সাম্যতাপ্রসূত এবং কোনো পক্ষেরই ক্ষতি না করে' কথাটি উল্লেখ আছে, সেক্ষেত্রে ভারতের ৭৫:১৫ অনুপাতের বণ্টনের যুক্তি ভিত্তিহীন এবং প্রকারান্তরে তা গঙ্গাচুক্তি লঙ্ঘনের শামিল।

২. গজলডোবায় সেচ প্রকল্প ভারতে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত শেষ প্রকল্প; অর্থাৎ এর ভাটিতে ভারতে তিস্তা নদীর পানি ব্যবহারের কোনো অবকাশ নেই, অন্যদিকে বাংলাদেশে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প তিস্তা নদী বাংলাদেশে প্রবেশের পর পরই অবস্থিত এবং এর ভাটিতে তিস্তার পানির আরো প্রয়োজনীয়তা ও বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে।

৩. বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ইছামতি ও ফেনী নদীর ক্ষেত্রে ভারতকে একতরফাভাবে ছাড় দিয়েছে; সে ক্ষেত্রে ভারতেরও তিস্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ছাড় দেয়া উচিত।

৪. গঙ্গাচুক্তির ক্ষেত্রে যা দেখা গেছে তা হলো, চুক্তিতে উলি্লখিত পরিমাণ প্রবাহ সব সময় না পাওয়া। সে ক্ষেত্রে তিস্তা চুক্তিতে মতৈক্য অনুযায়ী প্রবাহ নিশ্চিতকরণের একটি ধারা সংযোজন করা যেতে পারে।

শেষ করি একটি ব্যক্তিগত অনুভূতি দিয়ে। আমার আড়াই বছরের ছেলেসন্তানটি যখন আমার কাছে আহ্লাদ করে ক্যান্ডি আবদার করে তখন আমার অবস্থান থাকে, 'বাবা আগে দুধ খাও পরে দেব'। আমি কিন্তু আবেগতাড়িত হয়ে তাকে ততক্ষণ পর্যন্ত ক্যান্ডি দিই না যতক্ষণ পর্যন্ত সে দুধটুকু খেয়ে না শেষ করে, তার মানে কি আমি আমার সন্তানকে ভালোবাসি না? প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে তবে অবশ্যই তা নিজের স্বার্থকে সংরক্ষণ করে। আমি বলছি না, বাংলাদেশের জন্য ভারতের সঙ্গে ইছামতি ও ফেনী নদীর বিষয়ে সমঝোতায় আসার সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে, তবে তা যদি হতো তিস্তার পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে একটি মতৈক্যে পৌঁছানোর পর তাহলে আজকে বাংলাদেশকে এই ক্ষেত্রে ভারতের ওপর আরেকটু কম নির্ভরশীল হতে হতো। এ ব্যাপারে কূটনীতিতে আমাদের কিছু দৌর্বল্য প্রকাশ পেয়েছে। আশা করি, বাংলাদেশ তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে উপনীত হবে, রক্ষা পাবে আমাদের গর্ব তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প আর সেইসঙ্গে আশার আলো দেখবে তিস্তার ওপর নির্ভরশীল উত্তরবঙ্গের মঙ্গাপীড়িত মানুষ।

লেখক পরিচিতি : জাহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের সাবেক শিক্ষক। তিনি এখন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টাতে পিএইচডির গবেষক হিসেবে কাজ করছেন।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।