২০০০ সালে জাতিসংঘের মিলেনিয়াম সামিত শেষ হয়েছিল ২০১৫ সালের মধ্যে ৮ টি লক্ষ্যমাত্রার বাস্তবায়নকে সামনে রেখে।বাংলাদেশ নিজেও এই মিলেনিয়াম ডিক্লেয়ারেশনে স্বাক্ষর করেছে। এই আটটি গোল বা লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে দু’টির বাস্তবায়ন নির্ভর করছে সরাসরি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরনের মাধ্যমে। লক্ষ্যমাত্রা দু’টি হলোঃ শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসকরণ ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা। বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার এক তথ্যমতে নিরাপদ পানির অভাবে প্রতি বছর ৪ বিলিয়ন মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় যার মধ্যে ১.৭ মিলিয়ন মারা এবং এর সিংহভাগই ৫ বছরের কমবয়সী শিশু। মিলেনিয়াম গোলের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার লক্ষ্যমাত্রাতে উল্লেখ করা আছে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিস্কাশনের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা। একথা নিশ্চিত যে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নির্ভর করে পানি দূষনের হার কমানোর মাধ্যমে সুতরাং যুগোপযোগী পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এক্ষেত্রে অনস্বীকার্য।
এবারে আসি বাংলাদেশ প্রসংগে। ২০১৫ সালের মিলেনিয়াম গোলকে সামনে রেখে কোন দেশ কতটুকু অগ্রগতি করল তার বিবরন ইউএনডিপির ওয়েবসাইটে দেয়া আছে। সেখানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আশান্বিত হবার মত কিছু পাওয়া যায়নি এই দুটি বিষয়ে। অথচ ঢাকা কেন্দ্রিক বাংলাদেশে এই সমস্যা কতটা প্রকট সেকথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। পৃথিবীর বড় বড় শহরগুলি যেমন নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে ঠিক তেমনি বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করে একটু একটু করে গড়ে উঠেছে ঢাকা। উন্নত বিশ্বের শহরগুলিতে সাধারনত শহরের উজান থেকে পানি সংগ্রহ করে তা শোধন করে নগরবাসীদের পানি সরবরাহ করা হয় আর পয়ঃকে সংগ্রহ করে তা পরিশোধন করে উদ্বৃত্ত পানি আবার শহরের ভাটিতে নদীতে ফেলে দেয়া হয়। বৃষ্টির কারনে জমা হওয়া পানি শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নিষ্কাশন নালা বা প্রাকৃতিক খাল দিয়ে নদীতে ফেলে দেয়া হয়।এটি একটি ভারসাম্য প্রক্রিয়া যার একটি নষ্ট হলে অন্যটির উপরে তার প্রভাব পড়ে। অপরিকল্পিত শিল্প বর্জ্য আর অশোধিত পয়ঃ দিয়ে বুড়িগঙ্গার পানিকে আমরা দুষিত করেছি সেই সাথে পানির মূল উৎসকেও গলা টিপে হত্যা করেছি। এখন তার কাজ চালানো হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে যা কিনা আদতে ঢাকা শহরের পানির স্তরকে হুমকীর সম্মুখীন করেছে। বুড়িগঙ্গা ছেড়ে এখন নজর দেয়া হচ্ছে শীতলক্ষ্যা বা মেঘনার দিকে। কিন্তু যে পর্যন্ত দূষন কমানো না হবে বা পর্যাপ্ত পরিশোধন ব্যবস্থা গড়ে তোলা না হবে সে পর্যন্ত পানির উৎসের এই ঢাকা বিমুখী রথ থামবেনা।
একথা অমেঘ সত্য যে ‘পানি পরিশোধনের চেয়ে পানির দূষন রোধ অধিক সাশ্রয়ী’। ঢাকাতে পানি দূষনের উৎসগুলো চোখে আঙ্গুল তুলে দেখানোর কিছু নেই, সেটি দিবা সূর্য্যের মতই দৃশ্যমান সরকার কিংবা জনগনের কাছে। অথচ আমরা দিনের পর দিন সেই প্রক্রিয়া চলতে দিচ্ছি। হ্যা একথা সত্য একটা সময় পর্যন্ত এই পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ে আমরা জাতি হিসেবে ততটা সচেতন ছিলামনা কিন্তু যখন থেকে সচেতনতা এসেছে তখন থেকে কি আমরা এর দিকে নজর দিয়েছি? পানি শোধন বা পয়ঃশোধন প্রকল্পে বাস্তবায়নে যা বরাদ্ধ হয়েছে তার কিঞ্চিৎ পরিমানও কি দূষন রোধে ব্যায় হয়েছে কিংবা সেরকম কোন গণআন্দোলন কি সরকারের পক্ষ থেকে গড়ে উঠেছে। গানে গানে বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন মুখ ধুবড়ে পড়েছে দূষনকারীদের দাপটে। বর্তমান সরকারের গৃহীত বুড়িগঙ্গা শোধন প্রকল্পও কতটা সফল হবে সেই আশঙ্কা তাই রয়েই যাচ্ছে।
একটি কথা প্রায়ই শোনা যায় যে বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশে মূল সমস্যা এই সব প্রকল্পের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের যোগান। আমার ধারনা সমস্যাটি অর্থের নয় বরং কোনটিকে বেশি গুরুত্ত্ব দেব সেই বোধের অভাব। আজ থেকে কয়েক বছর আগে শুধু ঢাকা শহরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের নমুনার চাক্ষুস সাক্ষী আমরা। যে শহরের বুক দিয়ে গল গল করে বয়ে চলে দুর্গন্ধযুক্ত খাল, সন্ধ্যায় বুড়িগঙ্গার তীরে প্রকৃতির নির্মল বাতাসের বদলে উটকো গন্ধ ভেসে আসে সেই শহরের নাকি আবার রাস্তার মাঝে দ্বীপ বানিয়ে আর গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্য্য চর্চা। এ যেন না খেতে পেরে শীর্নকায় বৃদ্ধাকে দুবেলা খাবার না দিয়ে মসলিন শাড়ি পড়িয়ে বসিয়ে রাখার মত।
সমস্যায় ভরাক্রান্ত দেশটির নাগরিক হিসেবে সরকারকে অনুরোধ করি তারা যেন প্রথমে তাদের মূল সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে। বাংলাদেশের জন্য আজ পরিষ্কার পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন প্রথম সারির একটি সমস্যা। এর সমাধানকল্পে সরকারকে আরো অধিক মনোযোগী হওয়া উচিৎ। আজকে পানিদিবসে অন্তত এই অঙ্গীকারটুকু আমাদেরকে দিন।
ছবিসুত্রঃ জাতিসংঘ
মন্তব্য
আজকের এই দিনে [বিশ্ব পানি দিবস] 'সচলায়তন'-এ আপনার কাছ থেকে এমন একটা লেখার-ই প্রত্যাশায় ছিলাম ! ধন্যবাদ
"মুক্ত বিহঙ্গ" [অতিথি লেখক]
মোঃ জিয়াউর রহমান ববি
ধন্যবাদ ববি, কতটুকু প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছি জানিনা তবে এই দিনটিকে প্রচারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি কত দুই সপ্তাহ ধরে।
----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
আপনার সাথে একমত
আপনাকেও ধন্যবাদ ঘুম পরী
----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
অঙ্গীকার দেয়ার তো অভাব নেই, কেবল পালনের অভাব।
সেটাই। অঙ্গীকারের অভাব নেই, কেবল পালনের অভাব।
বিশ্ব পানি দিবসের আগের দিনের, অর্থাৎগতকালের ডেইলি স্টারের লীড নিউজদেখুন ।
খবরটি পড়েছি আগেই, হতাশা প্রকাশ ছাড়া কিছু করার নেই। সরকারের সদিচ্ছাই এর সমাধানের জন্য যথেষ্ট শুধু এইটুকু বলতে পারি। আপনাকে ধন্যবাদ।
----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
খাঁটি কথা শিমুল ভাই।
----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
--এই দাবী আমারও।
দরকারী পোস্ট জাহিদ। অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ মামুন ভাই। এটি আসলেই আমাদের সবার দাবী।
----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
চমৎকার পোস্ট। এ বিষয়ে আরেকটি লেখা দিতে পারেন যেখানে ব্যক্তিপর্যায় কিংবা ছোটখাট সামষ্টিক পর্যায়ে (বাড়ি, অফিস, সংঘ ইত্যাদিতে) কীভাবে পানিদূষণরোধ করা যায় বা পানির অপচয়রোধ সম্ভব সেসব বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকবে। সরকারি বা বড় (ম্যাসিভ অর্থে) বড় পর্যায়ে অনেক কিছু ইমপ্লিমেন্ট করা সহসা হয়তো সম্ভব হয় না, কিন্তু ছোট ছোট পর্যায়ে সেগুলো হয়তো সহজেই করা সম্ভব। তাছাড়া এসব কাজে বড় পর্যায়ে শামিল হওয়ার মতো সুযোগ আমাদের যাদের নেই, তারা ব্যক্তিগত চর্চার মাধ্যমেও এই দূষণরোধে শামিল হতে পারি।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ধন্যবাদ গৌতম চমৎকার মন্তব্যের জন্য। আপনার পরামর্শ মাথায় থাকবে, চেষ্টা করব এই নিয়ে একটি নতুন পোষ্ট দিতে।
----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
বছর দশেক আগে ঢাকায় সার্কভুক্ত কিশোর কিশোরীদের নিয়ে দু দিন ব্যাপী এক কর্মশালা হয়েছিলো পানিসম্পদ সংরক্ষণ বিষয়ে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পানিসম্পদ যে হুমকির সম্মুখীন সেটা নিয়ে আলোচনা করে টাটকা মাথাগুলোকে সচেতন করাই ছিলো লক্ষ্য। প্রতিবার দাঁত মাজতে গিয়ে, হাত ধুতে গিয়ে, গোসল করতে গিয়ে ওটা মনে হয়। অহেতুক কল ছেড়ে রাখি না। যেটুকু পানি আমি অপচয় করলাম ততটুকু পানি থেকে বঞ্চিত হলো অন্য কেউ। ব্যক্তি পর্যায়ে এই ছোট ছোট বিষয়গুলো মাথায় রাখলে খানিকটা উপকার তো হয় বটেই।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
একটি ভাল প্রসংগ এনেছেন, আসলেই আমরা শিশু কিশোরদের এই বিষয়ে যদি আরো সচেতন করে তুলি তাহলে হয়ত সামাজিক পর্যায়ে পানি দূষন ও পানির অপচয়ই দুটোই কমানো সম্ভব।
----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
- এটা নিঃসন্দেহে একটা ভালো অনুশীলন। এই অনুশীলনের চাপে আমার মুখ ধোয়ার কলের হাতল নড়বড়ে হয়ে গেছে যদিও তাও ভালো লাগে এটা ভাবলে যে কিছু পানি তো অন্তত বাঁচাতে পারছি প্রতিদিন!
আর এখানে স্টেশনে, রাস্তায় বড়, সুবিশাল বিলবোর্ডে দেখি আফ্রিকার কয়েকটি শিশুর ছবি দিয়ে পানি, রুটির যোগানের কথা বলা থাকে। ওগুলো দেখলে এমনিতেই আর বেহুদা পানি খরচ করতে ইচ্ছে করে না।
আচ্ছা, আগে বিটিভিতে কিছু বিজ্ঞাপন প্রচারিত হতো না এইসব বিষয়ে! পানির কল বন্ধ রাখুন, গ্যাসের চুলা বন্ধ করুন ইত্যাদি। ঢাকা শহরে তো অনেক বিলবোর্ড আছে। সেদিন দেখলাম বেশকিছু অবৈধ বিলবোর্ড নাকি উচ্ছেদও করা হচ্ছে। এরকম কিছু বিলবোর্ড পানি উন্নয়ন বোর্ড দখল করে নিয়ে পানি সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরীতে কাজে লাগাতে পারে না!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন