আমি ইউনিভার্সিটি অফ আলবার্টাতে স্নাতকোত্তর পড়াশুনা করছি। কয়েকদিন আগে এখানকার ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার থেকে একটি ইমেইল পেলাম, বিভিন্ন ভাষার প্রতিনিধিদের নিয়ে তারা স্পীডচ্যাট আয়োজন করছে, যাতে বিভিন্ন ভাষা প্রতিনিধিত্ত্ব করার জন্য ভলান্টিয়ার দরকার। মূলত অনুজপ্রতীম তানিজের উৎসাহে আমরা দু'জন ভলান্টিয়ারদের একটি সভায় যোগদান করি। বলতে দ্বিধা নেই স্পীড চ্যাট কি সেটি সম্পর্কে কোন ধারনা না থাকায় আসলে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ঠিক কি করতে যাচ্ছে তা বুঝতে পারছিলামনা। শুরুতেই সভার আয়োজক রেমন্ড স্পীডচ্যাটের বিষয়টি সবাইকে বুঝিয়ে বলল যা কিছুটা এরকমঃ
ধরুন একটি ভাষার উৎসব, যেখানে দশটি ভাষার প্রতিনিধি আছে। একটি রুমে দশটি টেবিলে সেই দশজন বসবেন, অর্থাৎ প্রতিটি টেবিল আসলে একটি ভাষাকে প্রতিনিধিত্ত্ব করবে। তাদের কাছে থাকবে সেই ভাষায় প্রাত্যাহিক কুশল বিনিময়ের একটি তালিকা যা লেখা থাকবে ইংরেজী রোমান হফরে। যেমন বাংলার প্রতিনিধিত্ত্ব করা টেবিলে লেখা থাকবে,
Hello! —
“Ki khobor”
How are you? (or common greeting) —
”Kemon acho?”
I'm fine - well - good (or common response) —
“Ami bhalo achi!”
.........
.........
এখন সেই উৎসবে আসা বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষেরা একেকটি টেবিলে যাবে এবং ঐ রোমান হরফে লেখা কাগজ দেখে দেখে ঐ ভাষার প্রতিনিধিদের সাথে কিছু সময়ের জন্য কথা বলবে ঐ ভাষাতে । এভাবে স্বল্প সময়ে বেশ কয়েকটি ভাষায় প্রাত্যাহিক কুশল বিনিময় জানতে পারবে উৎসবে আসা বিভিন্ন ভাষার মানুষেরা।
আমার কাছে চমৎকার লাগল ভাবনাটা। এর গুরুত্ত্ব প্রবাসে অন্যরকম। আমার পেরু থেকে আসা গ্রুপ মেট আদ্রিয়ানা যখন বাংলায় বলে, 'জাহিদ কেমন আছ?' আমার অসাধারণ লাগে। একজন ভিন্ন ভাষীর কাছে নিজের মাতৃভাষা শোনার অনুভূতির কোন তুলনা হয়না। আরো জানলাম এই স্পীডচ্যাটটি হবে ফেব্রুয়ারীর ২৫ তারিখে। আমি রেমন্ডকে বললাম তোমরা এই অনুষ্ঠানটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের অংশ হিসেবে নিয়ে নাও। রেমন্ড বা অন্যরা যারা ছিল তারা এই বিশেষ দিনটির কথা জানতনা। আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকত হয়ে আসলেও এখনও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হবার ব্যপ্তি খুব বেশি বাড়েনি। রেমন্ড ও অন্যরা আনন্দের সাথেই এই প্রস্তাব সমর্থন করল। আমি বললাম বাংলা ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে যে আত্মাহুতি দিয়েছিল আমার দেশের মানুষেররা তারই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে এই দিবস আজ বিশ্বজুড়ে পালন করা হয়। নিজের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেবার জন্য একজন বাংলাভাষী হয়ে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছিল আমাদের।
রেমন্ড আরেকটি প্রস্তাব করল। বিভিন্ন ভাষাভাষীর প্রতিনিধিরা একটি বিশেষ বাক্য তদের নিজেদের ভাষায় বলবে যা ভিডিও সম্পাদনা করে এই উৎসবের প্রচার উপলক্ষে ছড়িয়ে দেয়া হবে। কিন্তু কি হতে পারে সেই বাক্য? আমি প্রস্তাব করলাম, 'আমি আমার মাতৃভাষাকে ভালবাসি'। আরো কিছু প্রস্তাব আসল, যেমন, 'আমি আমার দেশকে ভালবাসি', ' ...... আমার দেশ'। অবশেষে সবাই মিলে ঠিক করা হলো, সবাই তার নিজের ভাষায় বলবে, '[ভাষার নাম] আমার মাতৃভাষা'। উদাহরন সরূপ আমরা বলব, 'বাংলা আমার মাতৃভাষা'।
ভিডিওটি ধারন করা হলো, সম্পাদনা করে ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে। এখানে সবার সাথে শেয়ার করলামঃ
ভিডিওটির লিঙ্ক ফেইসবুকে শেয়ার করার পর আরো একটি লিঙ্ক পেলাম অনুজপ্রতীম সাকিবের কাছ থেকে, ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলম্বিয়া (ওকানাগান) আয়োজিত। সেটিও নিজে দিলাম সবার সাথে শেয়ার করার জন্যঃ
মাঝে মাঝে নিজেদের ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপও নিজের দেশ আর ভাষাকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। আসুন আমরা এইভাবে বিশ্বের সব জায়গায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উৎযাপনকে ছড়িয়ে দেই।
মন্তব্য
বিষয়টি অভাবনীয় চমৎকার। একমাত্র মানুষই পারে মানুষে মানুষে ব্যবধান কমিয়ে আনতে। শুনেছি বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজারেরও বেশী ভাষা নাকি আজ বিলুপ্তির পথে। সেসবের উজ্জ্বল উদ্ধার কিভাবে হবে ভেবে ভেবে বুকের ভেতর সহস্র কন্ঠের একটা বোবা হাহাকার শুনতে পাই, কষ্টই বারে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ রোমেল ভাই।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
আপনাদের ইউনিভার্সিটির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আর দ্বিতীয় ভিডিওর প্রথম অংশ দেখে চোখে পানি এসে গেল। সকল উদ্যোক্তাদের আমার আন্তরিক অভিনন্দন।
ধন্যবাদ পিপিদা।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
চমৎকার লাগলো জাহিদ। পিপিদার সাথে একমত দ্বিতীয় ভিডিওর প্রথম অংশটা চোখে পানি আনার মতই।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ তাসনীম ভাই।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
চমৎকার উদ্যোগ। সাধুবাদ।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ধন্যবাদ রতন
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
কী চমৎকার উদ্যোগ! অনেক ভালো লাগলো জেনে। ভিডিও দুটো শেয়ার করলাম।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ধন্যবাদ যাযাবর।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
আমাদের ইউনিভার্সিটির (কুইন্স, কিংস্টোন, কানাডা) ভিন্নভাষাভাষীদের
ভিডিও
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
ধন্যবাদ রিক্তা। আপনার ভিডিওটি দেখতে পাচ্ছিনা। ইউটিউবের কোন লিঙ্ক থাকলে শেয়ার করবেন।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
-অতীত
ধন্যবাদ অতীত
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
দারুণ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ নজু।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
ধীর গতির নেটের জন্য ভিডিও আপাতত পুরোটা দেখতে পারলাম না। তবে লেখা থেকে ব্যাপারটা জেনে চমৎকার লাগলো!
ধন্যবাদ বইখাতা।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
চমৎকার উদ্যোগ, জাহিদ ভাই, খুব ভাল লাগল।
নতুন মন্তব্য করুন