প্রতিক্রিয়া- "টিপাইমুখ: যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক আলোচনার অনুরোধ"

সচল জাহিদ এর ছবি
লিখেছেন সচল জাহিদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৫/১২/২০১১ - ১২:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ডঃ গওহর রিজভী সম্প্রতি The Daily Star এ "Tipaimukh: A plea for rational and scientific discussion" শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। তার এই নিবন্ধ দৈনিক প্রথম আলোতে "টিপাইমুখঃ যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক আলোচনার অনুরোধ" শিরোনামে বাংলায় অনূদিত হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে ডঃ রিজভীর এই নিবন্ধ তার সম্প্রতি ভারত সফরের অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা।উল্লেখ্য যে, টিপাইমুখ নিয়ে সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক আলোচনার নিমিত্তে ডঃ গওহর রিজভী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আরেক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান দিল্লী সফর করেন। সেখান থেকে ফিরে এসে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেন যে, বরাক নদীর ওপর টিপাইমুখে বাঁধ হলেও তাতে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে না এবং তিনি মনে করেন যে টিপাইমুখে বাঁধের কারণে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে বলে যে কথাগুলো উঠেছে, তার সবই ভিত্তিহীন। বলতে দ্বিধা নেই ডঃ রিজভীর এই নিবন্ধ সেই সাংবাদিক সম্মেলনে তার মতামতেরই আনুষ্ঠানিক রূপ। এখানে বলে নেয়া ভাল যে তার এই নিবন্ধের অনেক অংশেই আমার দ্বিমত রয়েছে। শুধু তাই নয় তিনি এই নিবন্ধে পানিসম্পদ কৌশলগত দিক থেকে কিছু ভুল তথ্য দিয়েছেন। আমার এই নিবন্ধে তার লেখার কিছু অসংগতি এবং যেসব বিষয়ে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী মতামত রয়েছে তার ব্যবচ্ছেদ থাকবে।

নিবন্ধের শুরুতে তিনি কিছু বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে নিয়েছেনঃ

১) তিনি টিপাইমুখ বাঁধ প্রসংগে যথেষ্ট সচেতন এবং জাতীয় স্বার্থ অক্ষুন্ন রাখার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে দাবী করেন।

২) টিপাইমুখ বাঁধে যাতে বাংলাদেশের পরিবেশগত ও বাস্তুতান্ত্রিক কোন ক্ষতি না হয়, বর্ষায় যাতে বন্যা না বাড়ে, এবং বরাক নদ থেকে যেন পানি প্রত্যাহার না হয় এসব বিষয়ে তিনি আপসহীন কারন এগুলো জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন।

৩) তিনি মনে করছেন যে সাম্প্রতিক কালে টিপাইমুখ নিয়ে গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের চেয়ে রাজনীতিবিদরা অধিক সক্রিয় যারা মূলত অন্তঃসারশূন্য আলোচনা দিয়ে মানুষকে উত্তেজিত করছেন।

৪) দিল্লি যাওয়ার আগে টিপাইমুখ প্রকল্পের প্রভাব বিষয়ে তিনি বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবিজ্ঞানী, নীতিপ্রণেতা এবং ভিন্ন মত ও দলের রাজনীতিবিদের সঙ্গে কথা বলে এই ইস্যুতে বাংলাদেশের সমস্যাগুলো বুঝে নিয়েছেন এবং কোন কোন বিষয়ে ভারতের কাছ থেকে কূটনৈতিকগত ব্যাখ্যা ও নিশ্চয়তা পাওয়া প্রয়োজন সেটি জেনে নিয়েছেন।

৫) তিনি তার দিল্লী সফরে ভারতের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তপ্রণেতা মুখ্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের উদ্বেগের দিকগুলো উল্লেখ করেছেন।

তার নিবন্ধের প্রাথমিক অংশের এই পাঁচটি পয়েন্টের মধ্যে চারটিতেই (১, ২, ৪, ৫) তার অবস্থানের সাথে সহমত জ্ঞাপণ করছি, আশা করছি পাঠকও এই ক্ষেত্রে একমত হবেন। অর্থাৎ ডঃ রিজভীত মত আমরাও টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে সচেতন; বাংলাদেশে পরিবেশ ও পানিসম্পদগত বিষয়ে আপসহীন। একজন কূটনৈতিক দূত হিসেবে ভারত সফরের আগে টিপাইমুখ ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সাথে কথা বলে সমস্যা ও উদ্বেগ জেনে নিয়ে ভারত সরকারের কাছে সেই আলোকে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরাকেও আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু টিপাইমুখ নিয়ে গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের নিশ্চুপ থাকার বিষয়টির (৩ নং পয়েন্ট) সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করছি। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে ২০০৯ সাল থেকে আলোচনা শুরু হবার সময় থেকেই বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা এই প্রকল্পে বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে অধ্যাপক জহির উদ্দীন চৌধুরী [১], অধ্যাপক আইনুন নিশাত [২, ১২], জনাব এম এ কাসেম [৩], ডঃ আসিফ নজরুল [৪, ১৪], ডঃ আকবর আলি খান [৫ (ক,খ,গ)], ডঃ সিরাজুল ইসলাম [৬], ম. ইনামুক হক [১৩] প্রমুখ ব্যাক্তিবর্গের লেখা বা সাক্ষাৎকার সমূহ। পানিসম্পদ কৌশল নিয়ে বিগত এক যুগের অধিক সময় ধরে পড়াশুনা ও গবেষনার আলোকে টিপাইমুখ বাঁধের বাংলাদেশে সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আমার নিজেরও বেশ কিছু লেখালেখি করার অভিজ্ঞতা রয়েছে [৭,৮,৯,১০, ১১]। সুতরাং ঢালাও ভাবে 'টিপাইমুখ ইস্যুতে শুধুমাত্র রাজনীতিবিদরাই মাঠ গরম করছে' বা 'বাংলাদেশের প্রভাব সম্পর্কিত ব্যাখ্যায় বিশেষজ্ঞদের মতামতের মেরুকরণ হচ্ছে' এই জাতীয় মন্তব্য বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে টেকেনা।

প্রাথমিক আলোচনার পর ডঃ রিজভী টিপাইমুখ প্রকল্প সম্পর্কে সবচেয়ে ভুল ও বিভ্রান্তিমূলক একটি তথ্য দিলেন তার লেখাতে। তিনি উল্লেখ করলেন যে, বিজ্ঞানী ও পানিবিশারদদের মতে, টিপাইমুখ প্রকল্প একটি গতিশীল জলপ্রবাহ (run-of-the-river) জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এক্ষেত্রে পাঠকদের সুবিধার্থে আমি গতানুগতিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প আর গতিশীল জলপ্রবাহ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পর্কে একটি মৌলিক ধারনা দেবার চেষ্টা করছি।

গতানুগতিক পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পঃ এই প্রকল্পের মূল স্থাপনা হলো একটি বাঁধ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কাপ্তাই বাঁধকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। সাধারনত একটি খরোস্রোতা নদীর প্রবাহকে একটি বাঁধ দিয়ে আটকে এর উজানে জলাধার তৈরী করে পানির উচ্চতা বাড়ানো হয়। আমরা যারা সাধারন বিজ্ঞান পড়েছি তারা জানি এতে পানির স্থিতিশক্তি বেড়ে যাবে যা কিনা উচ্চতার সমানুপাতিক। পানিকে শুধু আটকে রাখলেই হবেনা, একটি নির্দীষ্ট উচ্চতায় যাবার পড়ে জলাধারের নিম্ন দিয়ে সুড়ঙ্গের মাধ্যমে এই পানিকে প্রবাহিত করতে হবে, হলে স্থিতিশক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হবে এবং প্রচন্ড বেগে পানি প্রবাহিত হবে। পানির সেই বেগকে কাজে লাগিয়ে আমরা টারবাইন ঘোরালে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। সুতরাং বিদ্যুৎ উৎপাদন যত বাড়ানো হবে তত জলাধার থেকে ছেড়ে দেয়া পানির পরিমান তত বাড়বে। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পনির প্রবাহ বাড়লে তা জলাধারে আটকে রাখা হবে সুতরাং বাঁধের পরে ভাটি অঞ্চলে পানির প্রবাহ কমে যাবে, আরো ভাল করে বললে ঠিক তততুকুই পানি যাবে যা টারবাইনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হবে। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে উজান থেকে পানি কম আসলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করার তাগিদে জলাধার থেকে নিয়মিত ভাবে পানি ছাড়তে হবে ফলে বাঁধের ভাটিতে পানির প্রবাহ আগের থেকে বাড়বে। বাঁধের ভাটিতে পানির এই বাড়া বা কমার পরিমান নির্ভর করবে মূলত উৎপন্ন বিদ্যুতের পরিমানের উপর।

এই জাতীয় প্রকল্পের সুবিধে হচ্ছে উজানে বিশাল জলাধার থাকায় সারা বছর একটি মোটামুটি স্থির মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার সবচাইতে দুর্বল দিক হচ্ছে উজানের জলাধার নির্মাণের ফলে সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয় আর ভাটি অঞ্চলের নদীতে বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রবাহের কোন তারতম্য না হওয়া যা কিনা নদীর ঐ অংশের জলজ বাস্তুসংস্থান নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।সেই সাথে ভাটিতে নদী ক্ষয় এবং সেই ক্ষয়িত পলির আরো ভাটিতে পরিবাহিত হওয়াও এর মধ্যে পড়ে।

গতিশীল জলপ্রবাহ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পঃ এই পদ্ধতিতেও নদীতে আড়াআড়ি বরাবর বাঁধ দেয়া হয় তবে এক্ষেত্রে উজানে কোন জলাধার নির্মান করা হয়না অথবা খুব ছোট আকারের জলাধার থাকে। বাঁধ দেবার পর নদীর প্রায় সম্পূর্ন প্রবাহকে (অধিকাংশ ক্ষেতে শতকরা ৯৫ ভাগ প্রবাহ) ঢালু টানেলে (Penstock) করে ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়া হয় তার পর সেই ঢালু টানেলের উচ্চতার ব্যবধানকে কাজে লাগিয়ে তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

এই পদ্ধতির সুবিধে হিসেবে বলা হয়ে থাকে উজানে পানি ধরে রাখার দরকার নেই ফলে এটি অধিক পরিবেশবান্ধব। আর যেহেতু ভাটিতে নদীর প্রবাহের উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন হয়না তাই এর পরিবেশগত ও বাস্তুতান্ত্রিক প্রভাব গতানুগতিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের চেয়ে অনেকাংশেই কম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যেহেতু বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে প্রাকৃতিক প্রবাহের কারণে তাই উৎপাদনে হার পরিবর্তনশীল এবং অপেক্ষাকৃত কম।

আবারে আসি টিপাইমুখ বাঁধ প্রসঙ্গে। টিপাইমুখ প্রকল্পে নদীর প্রবাহকে প্রায় ১৬৩ মিটার উঁচু গ্রানুলার (দানাদার) মাটি দিয়ে ভরাট করা হবে এবং পানির প্রবাহকে এক বা একাধিক পানি অভেদ্য স্তর দিয়ে রোধ করা হবে এবং বাঁধের কারনে সৃষ্ট জলাধারের ফলে প্লাবিত এলাকা প্রায় ৩০০ বর্গকিলোমিটার যাত প্রায় শতকরা ৯৫ ভাগই মনিপূর রাজ্যের আর বাকী ৫ ভাগ মিজোরাম রাজ্যের। সুতরাং একথা বলার অপেক্ষ রাখেনা যে টিপাইমুখ প্রকল্প একটি 'গতানুগতিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প', 'গতিশীল জলপ্রবাহ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প' নয়।

এর পরে তিনি উল্লেখ করলেন যে টিপাইমুখ প্রকল্প শুধুমাত্র তখনই ভাটি অঞ্চলে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে যখন সেখান থেকে সেচ ও অন্যান্য প্রয়োজনে পানি প্রত্যাহার করা হবে এবং যেহেতু ভারত সরকার বলছে যে তারা এই প্রকল্পে কোন ব্যারেজ নির্মান করবেনা সেক্ষাত্রে বাংলাদেশে বরাক নদের দুটি শাখা সুরমা ও কুশিয়ারার পানিপ্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা নয় বরং শুষ্ক মৌসুমে নদীর প্রবাহ বাড়বে আর আর বর্ষায় পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করবে।

এখানে উল্লেখ্য যে ডঃ রিজভী সহ বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের বক্তব্যে এমনটি মনে হচ্ছে যে তারা মনে করেন যে এই প্রকল্পে সেচের জন্য ব্যারেজ নির্মান না করে শুধু বাঁধ হলে তা তেমন ক্ষতি হবেনা বরং তা ইতিবাচক হবে বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু এটি একটি ভ্রান্ত ও অযৌক্তিক মতামত। সেচের জন্য পানি প্রত্যাহার না করলেও এই বাঁধ বাংলাদেশের জন্য নেতিবাচক হবে। বরাক নদীর ভাটির দিকের অঞ্চল সিলেটের হাওড় এলাকায় বর্ষার শুরুতে আগাম বন্যা হয় আবার বর্ষার শেষের দিকে পানি কমে আসে।টিপাইমুখ বাঁধ নির্মানের পর বর্ষার শুরুতে রিজার্ভারে পানি ধরে রাখার প্রয়োজন পড়বে আবার বর্ষার শেষের দিকে পানি ছেড়ে দেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। এর ফলে বর্ষার শুরুতে বন্যা কমে আসতে পারে আবার বর্ষার শেষে বন্যার প্রকোপ বাড়তে পারে।এর প্রভাব বাংলাদেশের উপরেও পড়বে । অর্থাৎ বন্যা মুক্ত হবার যে কথা বলা হচ্ছে তা পুরোপুরি সঠিক নয়, যেটি হতে পারে তা হলো বন্যার স্বাভাবিক সময় পরিবর্তিত হতে পারে। এছাড়া বাঁধের কারনে এর উজানে জলাধারে সব পলি সঞ্চিত হবে, ফলে যে পানি ভাটিতে আসবে তাকে এক কথায় বলা যায় "রাক্ষুসী পানি"। এই পানি পলিমুক্ত বলে এর পলিধারন ক্ষমতা অনেক বেশী আর তাই এটি বাঁধের ভাটিতে ১০০ থেকে ১৫০ কিমি ব্যাপী ব্যাপক নদী ক্ষয়ের সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশ বাঁধের ২০০ কিমি ভাটিতে থাকায় এই বিপুল পরিমান পলি বরাক নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। কিন্তু পানির প্রবাহ তুলনামূলক ভাবে কমে যাওয়ায় পলি বহন করার ক্ষমতা কমে যাবে, এবং তা সুরমা ও কুশিয়ারার বুকে জমা হবে। এতে নদীর নাব্যতা ও গভীরতা হ্রাস পাবে। সেক্ষেত্রে আগে যেটা স্বাভাবিক বর্ষাকালীন প্রবাহ ছিল প্রকারান্তরে তা বন্যা আকারে আসতে পারে এই এলাকায়।

আর যদি ধরেই নেই যে বাঁধের ফলে সিলেট আর মৌলভীবাজার এলাকা বন্যামুক্ত হবে সেখানেও প্রশ্ন আসে, এই তথাকথিত বন্যামুক্ত হওয়া কতটা ইতিবাচক। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের একটি অনন্য বৌশিষ্ট্য রয়েছে। এখানে রয়েছে বিশাল জলাভুমি ও অসংখ্য হাওড়। এর একটি নিজস্ব বাস্তুসংস্থান রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে এখানে বর্ষার সময় পানি বাড়বে, বন্যা হবে ও শুষ্ক মৌসুমে অনেক এলাকা শুকিয়ে যাবে, এর উপর ভিত্তি করেই সেখানকার বাস্তুসংস্থান গড়ে উঠেছে। ফলে বন্যার পানি কমা বা শুষ্ক মৌসুমে পানি বেশী পাওয়ার যে আশ্বাস ভারত দিচ্ছে তা এই এলাকার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের হাওড়গুলি শুষ্ক মৌসুমে যখন শুকিয়ে যায় তখন কৃষকরা সেখানে বোরো ধান বপন করে যা এই অঞ্চলের একমাত্র ফসল। এই ধান বর্ষা আসার আগেই ঘরে উঠে যা এই লোক গুলির বছরের একমাত্র শর্করার যোগান দেয়।বাঁধের কারনে শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ বেড়ে গেলে এই এলাকার চাষাবাদ ব্যহত হবার আশঙ্কা আছে। আর যদি ধরেও নেই যে এই বর্ধিত প্রবাহ চাষাবাদের জমিকে খুব বেশী প্লাবিত করবেনা সেক্ষেত্রেও প্রশ্ন থেকে যায়। এই জমিগুলো বন্যার সময় প্লাবিত হওয়ায় বিপুল পরিমান পলি জমে। এখন বর্ষা মৌসুমে পানি কমে যাওয়ায় তা আগের মত আর প্লাবিত হবেনা ফলে জমিগুলো তাদের উর্বরতা হারাবে। সুতরাং ফুলেরতল ব্যারেজ না হলেই টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক এই যুক্তি অসাড় ও বিভ্রান্তিমূলক।

পরবর্তীতে তিনি টিপাইমুখ প্রকল্পের ক্ষেত্রে ভাটির রাজ্য আসাম ও নাগাল্যান্ড এর আপত্তি না থাকার কথা উল্লেখ করে এই প্রকল্পে বাংলাদেশেরো আপত্তি থাকা উচিৎ নয় এরকম একটি ইঙ্গিত দেবার চেষ্টা করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে বারাক নদী থেকে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারনা আসে মূলত বন্যা নিয়ন্ত্রনের চাহিদা থেকেই। অনেক আগে সেই ১৯৩০ সালের দিকে যখন আসামের কাছাড় উপত্যকায় এক ভয়াবহ বন্যা সংঘটিত হয় তার পর থেকেই মূলত একটি দীর্ঘমেয়াদী বন্যা নিয়ন্ত্রন পরিকল্পনা করা হয় যার অংশ হিসেবে ১৯৫৪ সালে ভারতের Central Water Commission (CWC) একটি বহুমুখী জলাধারের জন্য সমীক্ষার কাজ হাতে নেয়। একথা সত্য যে এই প্রকল্পের ঠিক ভাটির রাজ্য আসাম এক্ষেত্রে বন্যার প্রকোপ কমে যাবার সুবিধে পাবে যেমনটা পাচ্ছে কাপ্তাই বাঁধ হবার পর চট্রগ্রামের অধিবাসীরা। কিন্তু টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় ২০০ কিমি দূরে। বাঁধের ঠিক ভাটিতে নদী ক্ষয় হয় যেহেতু পলি সব উজানে জমে থাকে। সেই পলি আরো ভাটিতে এসে নদীতে জমে। ধারনা করা হয় টিপাইমুখ বাঁধের ক্ষেত্রে প্রথম ১৫০ কিমি (এটি নির্ভর করে বাঁধের উচ্চতা, নদীর মাটির প্রকৃতি সহ আরো বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর) পর্যন্ত নদী ক্ষয় হবে আর তার পরে সেই পলি সঞ্চিত হবে ভাটিতে।এছাড়া বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের যে বিস্তীর্ন হাওড় অঞ্চলের বাস্তুসংস্থান ও জীববৈচিত্র আছে সেটি পরিপূর্ন ভাবে বিনষ্ট হবে এই বাঁধের জন্য । সুতরাং এই প্রকল্পে আসামের আপত্তি থাকার কোন কারন নেই। ফলে আসামের উদাহরন টেনে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই বাঁধের ইতিবাচকতা টেনে আনা অযৌক্তিক।

তিনি আরো উল্লেখ করলেন যে ভারত সরকার তাদের আন্তরাজ্য সম্পর্কের বিষয়টি বোঝে এবং যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়। কিন্তু কৌশলে তিনি মনিপুর রাজ্যের কথা এড়িয়ে গেলেন। এই বাঁধের কারনে সৃষ্ট জলাধারের ফলে প্লাবিত এলাকা প্রায় ৩০০ বর্গকিলোমিটার যাত প্রায় শতকরা ৯৫ ভাগই মনিপূর রাজ্যের আর বাকী ৫ ভাগ মিজোরাম রাজ্যের। ঠিক এ কারনেই এই বাঁধ নিয়ে মনিপুর রাজ্যের সাধারন মানুষ ও পরিবেশবাদীদের আন্দোলন চলছে। ভারত সত্যিই তাদের আন্তরাজ্য সম্পর্কের বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিলে এই জলাধারের ফলে মনিপুর রাজ্যে পরিবেশগত যে বিরূপ প্রভাব পড়বে সেটি মাথায় রাখত।

এর পর তিনি উল্লেখ করলেন যে টিপাইমুখ প্রকল্পটি বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ১৪০ মাইল দূরে এবং এর ফলে সকল পরিবেশগত প্রভাব ঘটলে তা ঘটবে প্রধানত ভারতের ভূখণ্ডের মধ্যে এবং এ ক্ষেত্রে দূরত্বের কারণে বাংলাদেশের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তিনি এখানেও ভুল তথ্য দিলেন। এই প্রকল্পের ভারতের পরিবেশগত প্রভাব যাচাই রিপোর্ট অনুসারেই টিপাইমুখ বাঁধের প্রস্তাবিত স্থানটি বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ২০০ কিমি উজানে। আর দূরত্বের কারনে বাংলাদেশে পরিবেশগত প্রভাব কম হবার যে হাইপোথিসিস তিনি দিলেন সেটি সম্ভবত তার মস্তিষ্কজাত বা আরোপিত। এই লেখাতেই এই নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে কিভাবে টিপাইমুখ প্রকল্প বাংলাদেশে পরিবেশগত বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

এই প্রকল্পের ভূমিকম্পের ঝুকির কথা উল্লেখ করে তিনি সিদ্ধান্ত দিলেন ভারতের সরকার পর্যাপ্ত অনুসন্ধান এবং পর্যালোচনা ছাড়া মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও আসামে তাদের নিজেদের নাগরিকদের জীবন ও বসতিকে বিপন্ন করে ঝুঁকি নিতে চাইবেনা। আর যেহেতু বাংলাদেশ টিপাইমুখ প্রকল্প থেকে অনেক দূরে সেক্ষেত্রে আমাদের ঝুঁকি অনেক কম। এটি হাস্যকর যুক্তি। ভূমিকম্পের কারনে বাঁধ ভেঙ্গে গেলে ৩০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার জলাধারের পানি সুরমা কুশিয়ারা দিয়েই বঙ্গোপসাগরে যাবে, বিকল্প কোন পথ এক্ষেত্রে নেই। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের FAP 6 রিপোর্ট মতে টিপাইমুখ প্রকল্পে বাঁধ ভাঙ্গার কারনে বাঁধের স্থলে যে ঢেউ উৎপন্ন হবে তা সাধারনত ঘন্টায় ১০ থেকে ৩০ কিলোমিটার বেগে ভাটির দিকে ধাবিত হবে, যদিও এই বেগ দূরত্ত্বের সাথে হ্রাস পাবে। বাঁধ স্থল থেকে অমলসিদের ( বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে ) দূরত্ত্বকে ২০০ কিলোমিটার ধরলে এই ঢেউ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে সময় লাগবে ২৪ ঘন্টা। বাংলাদেশে প্রবেশের সময় এই ঢেউয়ের উচ্চতা হবে ৫ মিটার। টিপাইমুখ বাঁধের জলাধারের ধারন ক্ষমতা ১৫,০০০ মিলিয়ন ঘনমিটার। এই বিপুল প্রবাহ ১০ দিন ধরে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং সমস্ত বন্যার্ত এলাকা থেকে পানি সরে যেতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যাবে। সুতরাং বাংলাদেশে কম ক্ষতিগ্রস্থ হবার যুক্তি অসাড়।

তিনি উল্লেখ করেছেন যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন যে টিপাইমুখ প্রকল্পে ভারত এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না যাতে বাংলাদেশের স্বার্থের ক্ষতি হয় এবং এই আশ্বাসকে নির্ভরযোগ্য করতে তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস সেই রাষ্ট্রের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার পাওয়ার শামিল এবং একে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। কিন্তু আমরা সম্প্রতি লক্ষ্য করেছি যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে নীতিগত সবকিছু চুড়ান্ত হবার পরও শুধু পশ্চিমবংগ রাজ্য সরকারের আপত্তির কারনে তা বাস্তবায়িত হয়নি। ভবিষ্যতেও যে টিপাইমুখ প্রকল্পে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কোন পদক্ষেপ মনিপুর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত হবেনা সেটি তাই এক্ষেত্রে হলফ করে বলা যাবেনা। আর যেখানে বর্তমান প্রস্তাবিত প্রকল্পই বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী সেখানে এই জাতীয় আশ্বাসের কোন ভিত্তি নেই।

তিনি আরো উল্লেখ করেছেন যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী টিপাইমুখ প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব পর্যালোচনা, প্রকল্পের নকশা ও অন্যান্য বিষয়ে বাংলাদেশকে তথ্য প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন এবং বাংলাদেশ ভবিষ্যতে যেকোনো প্রতিনিধিদল কিংবা সমীক্ষাদল পাঠালে তিনি তাদেরও স্বাগত জানাবেন। এখানে উল্লেখ্য যে টিপাইমুখ প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব পর্যালোচনা রিপোর্ট সেই ২০০৯ সাল থেকেই অনলাইনে নেপকোর (NEEPCO) ওয়েবসাইটে রয়েছে (যদিও বর্তমানে লিঙ্ক কাজ করছেনা)। তবে প্রকল্পের নকশা ও বাংলাদেশের সমীক্ষাদলকে স্বাগতমের অঙ্গীকার নিঃসন্দেহে ইতিবাচক সাড়া। তিনি মন্তব্য করেছেন যে, বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ ও বিজ্ঞানীদের উচিত এই আমন্ত্রণের সুযোগ নিয়ে গভীর সমীক্ষা চালানো, যাতে আমরা নিজস্ব একটা সিদ্ধান্ত বা উপসংহারে পৌঁছাতে পারি। তার এই মন্তব্যের সাথে আমি সহমত জ্ঞাপণ করছি তবে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহের পদক্ষেপ সরকারের পক্ষ থেকেই নিতে হবে এবং তা করার আগে এই প্রকল্পের কি কি তথ্যাবলী ও উপাত্ত লাগবে সেটি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জেনে নিয়ে হবে।

তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী টিপাইমুখ প্রকল্পের সমতাভিত্তিক অংশীদার হওয়া এবং সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের ভাগ নেওয়ার আমন্ত্রণ পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং মন্তব্য করেছেন যে, এর ফলে প্রকল্পটির সকল পর্যায়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ থাকবে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় স্থান করে নেওয়া নিশ্চিত হবে। এখানে বলে রাখা ভাল যে, ভারতের এই আমন্ত্রন মেনে নেয়া মানে হচ্ছে টিপাইমুখ প্রকল্পে বাংলাদেশের স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে সেটিকে অস্বীকার করা। আমাদের আগে প্রয়োজন এই প্রকল্পের নিজস্ব বা যৌথ সমীক্ষা করে জেনে নেয়া বাংলাদেশের কতটুকু ক্ষতি হচ্ছে। তার পর এই প্রকল্পে বাঁধের কারনে বাংলাদেশে সম্ভাব্য ক্ষতি ন্যুনতম পর্যায়ে আনা আদৌ সম্ভব হবে কিনা সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। যদি বাঁধের ফলে সম্ভাব্য ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য এর ডিজাইনে কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন সম্ভব থাকে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞদলের পরামর্শ অনুযায়ী যদি বাঁধের ডিজাইন পরিবর্তন করা হয় যাতে করে এর ভাটিতে প্রভাব ন্যুনতম পর্যায়ে আসবে তাহলে সেই পরবর্তিত ডিজাইন নিয়ে বিশেষজ্ঞ দল আরেক দফা গবেষণা করবে।এর পরেই শুধুমাত্র সমতাভিত্তিক অংশীদার হওয়া এবং সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের ভাগ নেওয়ার প্রসংগ আসতে পারে। আর তা না হলে, অর্থাৎ বিশেষজ্ঞ দল যদি মনে করে এই ক্ষতি সহনীয় মাত্রায় আনা সম্ভব নয় তাহলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার প্রস্তাব ভারতের কাছে উত্থাপন করতে হবে।

তিনি উল্লেখ করেছেন যে সংগৃহীত তথ্য এবং ভারতের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া আশ্বাসের ভিত্তিতে আমাদের উচিত টিপাইমুখ প্রকল্পকে আবেগ ও রাজনীতির ক্ষেত্র থেকে বিযুক্ত করে বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিশীলতার আলোকে বিবেচনা করা। তার এই মন্তব্যের সাথেও আমি একমত তবে শুধুমাত্র ভারত সরকারের মৌখিক আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে নিশ্চয়তার ঢেকুর তোলার পক্ষপাতি নই। টিপাইমুখ বাঁধ একটি জাতীয় সমস্যা যার সাথে জড়িয়ে আছে আন্তর্জাতিক কিছু বিষয়। আর যেহেতু এটি দুই দেশের মধ্যকার সমস্যা তাই আমাদেরকে খুবই সাবধানতা ও দক্ষতা আর সেই সাথে কুটনৈতিক ভাবে এগোতে হবে। আমি বিশ্বাস করি যে এই ইস্যুটি নিয়ে আমাদের মধ্যে আবেগ কাজ করবে কিন্তু সমস্যাটি সমাধান করতে আবেগের চেয়ে তথ্য ও যুক্তির প্রয়োগ বেশী প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। এক্ষেত্রে যাদের একসাথে কাজ করতে হবে তারা হলোঃ সরকার, বিশেষজ্ঞ, রাজনীতিবিদ, গণ ও প্রচার মাধ্যম, প্রভাবিত এলাকার বিভিন্ন পেশার জনগণ, এবং দেশের সাধারণ জনগণ। এই বিষয়টি যেহেতু দু'টি দেশের মধ্যে বিদ্যমান তাই যেকোন যোগাযোগ রক্ষার কাজটি সরকারের কূটনৈতিক পর্যায় থেকে হতে হবে। কিন্তু যেহেতু বিষয়টা পুরোপুরি কারিগরী তাই কুটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা কি হবে সেটি ঠিক করে দেবে আমাদের বিশেষজ্ঞরা। সরকার এই কাজটি সঠিকমত করছে কিনা তার গঠনমূলক তদারকি করবে রাজনীতিবিদেরা । জনগণকে এই বিষয়ে সাম্যক জ্ঞান দিয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে গণ আর প্রচার মাধ্যমগুলো আর সচেতন জনগণ দেশের প্রয়োজনে যেকোন প্রকার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করবে।

তিনি আলোচনা শেষ করেছেন এই প্রকল্প নিয়ে নিজস্ব বৈজ্ঞানিক সমীক্ষাও চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে। আমারও বক্তব্য সেটাই। তবে এক্ষেত্রে ঠিক এই মূহুর্তে বাংলাদেশের যা করা উচিৎ তা পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করছিঃ

প্রথমতঃ সংসদীয় দলের ২০০৯ সালে ভারত সফরের মধ্য দিয়ে একটি আলোচনার সুত্রপাত হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের ভারত সফরের সময় সেই আলোচনাকে কূটনৈতিক ও কারিগরী ভিত্তিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সুতরাং সরকারের এই মূহুর্তেই উচিৎ টিপাইমুখ নিয়ে একটি সমন্বিত বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা। এই বিশেষজ্ঞ দলে যেসব অনুষদ থেকে লোক থাকবেন তা হলোঃ পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশল-ভূতত্ত্ববিদ, পরিবেশবিদ, বাস্তুতন্ত্রবিদ(উদ্ভিজ ও প্রাণিজ), জীববিশেষজ্ঞ, কৃষিবিদ, নৃবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ ও আইনবিদ। কারা এই দলে থাকবে সেটি নির্ণয়ের দায়িত্ত্ব সরকারের তবে অনুরোধ থাকবে বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাদেরকেই রাখতে যাদের তাদের স্ব স্ব বিষয়ে বিস্তর গবেষণা ও কাজের অভিজ্ঞতা আছে, সেই সাথে এই জাতীয় ইস্যু নিয়ে অতীতে যারা কাজ করেছেন তাদের অভিজ্ঞতার মূল্য দেওয়াটাকেও বাঞ্ছনীয় বলে মনে করি।

দ্বিতীয়তঃ গঠিত বিশেষজ্ঞ দল সরকারের কাছে রিপোর্ট প্রদান করবে যে টিপাইমুখ বাঁধ বা ফুলেরতল ব্যারেজের ফলে বাংলাদেশে কি কি নেতিবাচিক প্রভাব পড়বে তা গবেষণার জন্য তাদের কি পরিমান তথ্য প্রয়োজন ?

তৃতীয়তঃ সমন্বিত বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে দু'টি বিষয়ে প্রস্তাব পাঠাবেঃ

  • বাংলাদেশের গবেষণা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভারত টিপাইমুখ প্রকলের কোন কাজ শুরু করতে পারবেনা।
  • ভারত বাংলাদেশকে আমাদের বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শ অনুযায়ী জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় উপাত্ত প্রদান করবে।

চতুর্থতঃ তৃতীয় ধাপ সফল হলে বিশেষজ্ঞ দল সকল উপাত্ত নিয়ে টিপাইমুখ বাঁধের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে গবেষণা শুরু করবে। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য থাকবেঃ

  • বাঁধের ও ব্যারেজের কারনে প্রবাহের কি পরিবর্তন হবে ?
  • এই প্রবাহ হ্রাস ও জলাধারে পলিহ্রাসের প্রভাবে বাঁধের ভাটিতে ব্যাপক নদীক্ষয়ের কি প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে ?
  • প্রবাহ পরিবর্তনের ফলে সিলেট ও মৌলভীবাজার অঞ্চলের হাওড় গুলির বাস্তুতন্ত্রে কি পরিবর্তন আসব ?
  • এই এলাকার সাথে মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর তার কি প্রভাব পড়বে ?

বস্তুত এই সবকিছু নিয়ে সমীক্ষার পরই জানা যাবে এই বাঁধ হলে বাংলাদেশের কি পরিমান ক্ষতি হবে।

পঞ্চমতঃ এই পর্যায়ে বাঁধের কারনে বাংলাদেশে সম্ভাব্য ক্ষতি ন্যুনতম পর্যায়ে আনা আদৌ সম্ভব হবে কিনা সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। এক্ষেত্রে যৌথ গবেষণার প্রস্তাব আসতে পারে।

ষষ্ঠতঃ এই সব রিপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে বা ভারতে সরকার পর্যায়ে বৈঠক করতে হবে যেখানে বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞ দল তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। যদি বাঁধের ফলে সম্ভাব্য ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য এর ডিজাইনে কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন সম্ভব থাকে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞদলের পরামর্শ অনুযায়ী যদি বাঁধের ডিজাইন পরিবর্তন করা হয় যাতে করে এর ভাটিতে প্রভাব ন্যুনতম পর্যায়ে আসবে তাহলে সেই পরবর্তিত ডিজাইন নিয়ে বিশেষজ্ঞ দল আরেক দফা গবেষণা করবে।

আর তা না হলে, অর্থাৎ বিশেষজ্ঞ দল যদি মনে করে এই ক্ষতি সহনীয় মাত্রায় আনা সম্ভব নয় তাহলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার প্রস্তাব ভারতের কাছে উত্থাপন করতে হবে।

সপ্তমতঃ প্রকল্প বন্ধ করার বাংলাদেশের প্রস্তাব কুটনৈতিক ভাবে ভারত প্রত্যাখ্যান করলে জাতিসংঘের মাধ্যমে আইনগতভাবে কিভাবে আমরা প্রচেষ্টা চালাতে পারি তারো খসড়া প্রনয়ন করতে হবে। বিশেষজ্ঞ দলের আইনবিদেরা এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন।

অষ্টমতঃ ভারতের সাথে আইনগত ভাবে এই সমস্যা মোকাবেলা করার সময় দেশের রাজনীতিবিদ, সংবাদ মাধ্যম, সাধারণ জনগণকে দেশের প্রেক্ষাপটে এক থাকতে হবে। জাতিগত ভাবে আমাদের সমস্যা আমরা অনেক সময়ই না বুঝে বা ভবিষ্যৎ আঁচ না করে সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন বিবৃতি দিয়ে থাকি যা কখনই দেশের জন্য ভাল কিছু বয়ে আনেনা।

পরিশেষে, একজন নাগরিক হিসেবে চাইব বাংলাদেশ সরকার যেন ভারত সরকারের এই আমন্ত্রনে সাড়া দিয়ে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়, সেই সাথে যৌথ গবেষণা বা নিদেনপক্ষে নিজের অর্থায়নে হলেও এই প্রকল্পের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে গবেষণা করে তার পরে এই প্রকল্পের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে।

তথ্যসুত্র

[১] ডঃ জ়হির উদ্দিন চৌধুরী, ১২ জুলাই ২০০৯, ‘বরাক নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করা হলে তা হবে বিপদ জনক’, প্রথম আলোকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকার।
[২] ডঃ আইনুন নিশাত, ২৮ জুন ২০০৯, ‘দুই দেশেই টিপাইমুখ বাঁধের পরিবেশগত প্রভাবের জরিপ চালাতে হবে’, প্রথম আলোকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকার।
[৩] এম এ কাসেম,৬ জুলাই ২০০৯, ‘টিপাইমুখঃ যে কথা কেউ বলছেনা’প্রথম আলো।
[৪] ডঃ আসিফ নজরুল, ৫ জুলাই ২০০৯, ‘পিনাক রঞ্জনের ছোট ভুল, আমাদের বড় ভুল’ প্রথম আলো।

[৫ ক] প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধঃভারত ও বাংলাদেশের শাশ্বত ও চিরস্থায়ী জাতীয় স্বার্থের অন্বেষণ, ডঃ আকবর আলী খান। দৈনিক প্রথম আলো, ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯।
[৫ খ] প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধঃ ভারতে সরকার ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের স্বার্থ , ডঃ আকবর আলী খান। দৈনিক প্রথম আলো, ৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯।
[৫ গ] প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধঃ টিপাইমুখ বাঁধ ও বাংলাদেশের স্বার্থ, , ডঃ আকবর আলী খান। দৈনিক প্রথম আলো, ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯।
[৬] ডঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম, ‘টিপাইমুখ বাঁধঃ কিছু শর্ত মানলে কম ক্ষতিকর হতে পারে’ প্রথম আলো।

[৭] 'টিপাইমুখ বাঁধ ও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট', জাহিদুল ইসলাম। সচলায়তন প্রকাশনা।
[৮] টিপাইমুখ বাঁধঃ বাংলাদেশের জন্য বিবেচ্য বিষয়গুলি, জাহিদুল ইসলাম। প্রথম আলো, ২১ আগষ্ট ২০০৯।
[৯] টিপাইমুখ বাঁধ ও বাংলাদেশ, জাহিদুল ইসলাম। বিডিনিউজ২৪ ডট কম, ২৪ নভেম্বর ২০১১।
[১০] বিপর্যয়ের আভাস, জাহিদুল ইসলাম। দৈনিক কালের কন্ঠ, ২৭ নভেম্বর, ২০১১।
[১১] টিপাইমুখ বাঁধ কোনোভাবেই বাংলাদেশের উপকারে আসবে না, জাহিদুল ইসলাম। দৈনিক কালের কন্ঠ, ২৯ নভেম্বর ২০১১।
[১২] টিপাইমুখ নিয়ে অন্ধকারে সরকার, ডঃ আইনুন নিশাত। দৈনিক কালের কন্ঠ, ২৯ নভেম্বর ২০১১
[১৩] টিপাইমুখ বাঁধ দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির নজির, ম ইনামুল হক। দৈনিক কালের কন্ঠ, ২৯ নভেম্বর ২০১১
[১৪] একতরফাভাবে টিপাইমুখের মতো প্রকল্প গ্রহণের অধিকার ভারতের নেই, ডঃ আসিফ নজরুল। দৈনিক কালের কন্ঠ, ২৯ নভেম্বর ২০১১


মন্তব্য

গৃহবাসী বাঊল এর ছবি

চলুক

সচল জাহিদ এর ছবি

ধইন্যা পাতা বাঊল ভাইডি।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

হিমু এর ছবি

গুরু গুরু

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ হিমু। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি বিষয়টি নজরে আনার জন্য।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দ্যা রিডার এর ছবি

চলুক গুরু গুরু

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

তাপস শর্মা এর ছবি

চলুক চলুক চলুক জাহিদ ভাই ................................ . গুরু গুরু ...... গুরু গুরু ..... গুরু গুরু ..........।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ তাপস দা।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গুরু গুরু
প্রথম আলোতে মেইল করে দাও

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ নজু।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

rabbani এর ছবি

চলুক লেখা ভালো লাগলো,
মনে হচ্ছে গওহর রিজভী স্বপ্নে অনেক বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলেন

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

চলুক
ড: গওহর রিজভীর ফেসবুকে একটা পেজ আছে । সেখানে শেয়ার করে এলাম !

(মন্তব্যটা ভুল জায়গায় প্রকাশিত হলো (হয়ত আমার ভুলের কারণেই)! মূল লেখার প্রেক্ষিতে করেছিলাম মন্তব্যটা-- এই মন্তব্যের প্রতিমন্তব্য হিসেবে নয় ।)

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

সচল জাহিদ এর ছবি

হুম দেখলাম।ধন্যবাদ। কিন্তু এটি কি ওনার অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

সম্ভবত

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

obi এর ছবি

প্রথম আলোতে প্রকাশিত হলে নীতি নির্ধারক এবং সংশ্লিষ্ট সকলে উপকৃত হবেন।

সচল জাহিদ এর ছবি

চেষ্টা থাকবে প্রকাশের। ধন্যবাদ।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

সাফি এর ছবি

জাহিদ ভাই, গৌতম ভাইয়ের প্রথম আলোতে চেনাশোনা আছে, ওখানে লেখাটা ছাপানো গেলে ভাল হত

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ সাফি।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অন্যকেউ এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

স্বাধীন এর ছবি

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো গোনায় ধরা হয়নি, তা হচ্ছে রিজার্ভারে যে পলি জমবে সেগুলোকে তারা কি করবে? সাধারণত সেই পলিগুলোকে কয়েক বছর পর পর ভাটিতেই ছেড়ে দেওয়া হয়, এবং যার ফলাফল হবে আরো ভয়াবহ। এমনিতে বাঁধের কারণে ভাঁটিতে মুলত ক্ষয় হলেও, যদি উজানের জমাকৃত পলি ছেড়ে দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে ভাটিতে চর পড়া নিশ্চিত।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ স্বাধীন ভাই। আপনার লেখার জন্য অপেক্ষা করছি।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

নতুন পাঠক এর ছবি

পরিচ্ছন্ন যুক্তি ও তথ্যবহুল একটি লিখা। বহুল প্রচারিত কোন পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা নিলে অনেকেই জানতে, পড়তে ও বুঝতে পারবে।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ নতুন পাঠক।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

কাজী মাহবুব হাসান এর ছবি

ধন্যবাদ সচল জাহিদ, ব্যপারটা বেশ স্পষ্ট এখন... চলুক ;

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ মাহবুব ভাই।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ফারুক হাসান এর ছবি

এই লেখাটিও ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ ফারুক।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

রিপন, টিপাইমুখ নিয়ে তোমার এই পর্যন্ত লেখা-আলোচনাগুলোকে প্রশ্নোত্তরের আকারে সাজিয়ে গ্রাফিকেল প্রেজেন্টেশনসহ একটা ভিডিও ফাইল, আর রেডিওর উপযুক্ত একটা অডিও ফাইল তৈরি করো। জিনিসটাকে সাক্ষাতকার আকারেও বানানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে মোস্তাফা বা তার মতো যারা তোমার কাছে আছেন তাদের সাহায্য নিতে পারো। এই অডিও-ভিডিওগুলো আমরা ইন্টারনেটে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিতে পারি, আমাদের মধ্যে যাদের যোগাযোগ আছে তারা রেডিও-টিভিতে ছড়িয়ে দিতে পারি। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে এই ব্যাপারে সচেতন করতে অডিও-ভিডিও'র বিকল্প নাই।

অফটপিক মন্তব্যঃ

১। রাজনৈতিক পৌত্তলিকতা হচ্ছে এমন একটা বিষয় যেখানে - "নেতা/নেতৃত্ব অভ্রান্ত। তার/তাদের মতই চূড়ান্ত। তার/তাদের প্রতিটি কথা-কাজই আমাদের মঙ্গলের জন্য। তিনি/তারা আমাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তিনি/তাদের কোন ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা যাবে না।" এমন কথা বিশ্বাস করা হয়। রাজনৈতিক পৌত্তলিকতার অনেকগুলো বিপদজনক ব্যাপারের কয়েকটি হচ্ছে - এটি দলে লুকিয়ে থাকা দুর্বৃত্তকে ইনডেমনিটি দেয়, তাকে নির্বিঘ্নে দেশ-জাতির স্বার্থবিরোধী কাজ করার সুযোগ করে দেয়, দলকে গণমানুষের দল থেকে ক্রমাগত গণবিরোধী দলে পরিণত করে। বৃহৎ বা জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোতে স্বার্থান্বেষী দুর্বৃত্তের দল যখন একত্রিত হতে থাকে তখন তারা রাজনৈতিক পৌত্তলিকতাকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়। ছোট নেতাদের বানানো পোস্টার দেখলে বা তাদের বক্তব্য শুনলে সেখানে রাজনৈতিক পৌত্তলিকতার ক্রম ইতিহাস আর অর্ডার অভ প্রিসিডেন্সটা বোঝা যায়।

২। এক কালে সিভিল প্রশাসন উস্কানী দিত, আর সামরিক বাহিনী সরাসরি দেশের ক্ষমতা দখল করে বসতো। সামরিক আমলে জেনারেলদেরকে সামনে রেখে সিভিল আমলারা দেশকে খেয়ে ছিবড়ে বানিয়ে ফেলতো। দোষ যা হতো জেনারেলদের - সেক্রেটারী সাহেবেরা আলোচনা বা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকতেন। এখন ব্যাপারগুলো একটু পালটে গেছে। সিভিকো-মিলিটারী প্রেশার গ্রুপ এখন রাজনৈতিক শক্তিকে চাপ দিতে শিখে গেছে। রাজনৈতিক দলেরা আন্দোলন-সংগ্রাম-জনসংযোগ-নির্বাচন করে ক্ষমতায় যখন অধিষ্ঠিত হয় তখন সিভিকো-মিলিটারী প্রেসার গ্রুপ এসে ক্ষমতার ভাগ দাবী করে বসে এবং তা নিয়েও নেয়। এই গ্রুপকে ক্ষমতায় যেতে যেমন কোন ত্যাগ স্বীকার করতে হয় না, তেমন নির্বাচন করা বা জনগণের কাছে জবাবদিহী করার মত কোন ব্যাপার নেই বলে গণবিরোধী কাজ করতে বা স্বীয় (বা নিজ গ্রুপের) স্বার্থে দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতেও এদের বাঁধে না।

৩। রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত, সিভিকো-মিলিটারী প্রেশার গ্রুপ আর দেশটাকে ভাগ-জোক করে খাবার মতো একটা জিনিস মনে করে অমন ব্যবসায়ীর দল যখন রাজনৈতিক নেতৃত্বকে গ্রাস করে তখন সেই দল ক্ষমতায় থাকুক আর বিরোধী দলে থাকুক তারা ক্রমাগত দেশবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে যেতেই থাকবে। মিডিয়া এখন শক্তিশালী বার্গেইনিং গ্রুপ বা ক্ষমতার ভাগীদার হয়ে যাওয়ায় তাদের একাংশও এখন এই গণবিরোধী কার্যক্রমের অংশ হয়ে গেছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

অফটপিকের বিষয়টা নিয়ে আরো বিস্ত্রিত অবয়বে আলোচনার আবদার জানালাম।
বানংলাদেশের আমলান্ত্রের প্রক্রিতি, বিশেষ করে স্বআধীনতার পরে পাকিস্তানফেরত আমলাদের বানানো আব্য়্ন্তরীন ঔপনিবেশিকতা নিয়ে কথা আরো বেশী বলা প্রয়োজন।

সচল জাহিদ এর ছবি

পান্ডব দা, আজকে মোস্তফা ভাই এর সাথে আলাপ হলো। একটি পদক্ষেপ নেব সামনে একটি প্রেজেন্টেশন তৈরী করতে।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

শামীম এর ছবি

প্রবাহমাত্রা এবং ধরণ পরিবর্তনের ফলে জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তবে নতুন ধরণের প্রবাহের সাথে অভিযোজন করে কী ধরণের সাম্যাবস্থা এবং জীববৈচিত্র তৈরী হবে সেটা অনুমান করা গেলে ভাল হত। পৃথিবীতে বাঁধ আরো আছে, তাদের ভাটির জীববৈচিত্র ও পরিবর্তনের তথ্য সমৃদ্ধ কোনো বই পুস্তক বা গবেষণা আছে কি? নতুন সাম্যাবস্থা বর্তমানের সাম্যাবস্থার চেয়ে কম লাভজনক হলে এই পয়েন্টে প্রতিবাদ করা জরুরী।

পলির ব্যাপারে একটু ব্যাপার জানতে চাচ্ছিলাম। অমলসিদ পয়েন্টে ধরি বর্তমানে পলির প্রবাহ x মিগ্রা/ঘনমিটার। এই মাত্রা কেন x+dx কিংবা x-dx নয়? এই প্রবাহ মাত্রায় x কি পানিতে পলির পরিমানের সাম্যাবস্থা?

উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে আরেকটা সম্পুরক প্রশ্ন আছে: যদি x সাম্যাবস্থার মাত্রা হয়, তাহলে একই প্রবাহ মাত্রায় কোনক্রমেই এই মাত্রা বেড়ে y হতে পারে না (?)। এখন টিপাইমুখ পয়েন্টে যদি z মিগ্রা/ঘনমিটার পলি থাকে, তা প্রবাহের সময়ে আরো পলি যুক্ত হয়ে অমলসিদ পয়েন্টে x হয়ে যাচ্ছে; কিন্তু বাঁধ দেয়া হলে পরবর্তীতে z এর পরিবর্তে ঐ পয়েন্টের ঠিক ভাটিতে 0 মিগ্রা/ঘনমিটার পলি থাকবে। ফলে সেটা অনেক বেশি ক্ষয়কারক হবে। z থেকে বেড়ে x এ পৌছাতে এখন যে পরিমান ক্ষয় হয়, নিঃসন্দেহে 0 থেকে বৃদ্ধি পেয়ে x এ পৌঁছাতে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষয় হবে। কিন্তু এই ক্ষয় করার ফলে পানিতে পলি বাড়তে বাড়তে সেটা কি অমলসিদ পয়েন্টে x কে ছাড়িয়ে যাবে? x সাম্যাবস্থা হলে এর বেশি কোনক্রমেই বাড়বে না। এটা x ছাড়িয়ে না গেলে পলিজনিত ভাল বা মন্দ কোন প্রভাবই বাংলাদেশে আসবে না বলে ধরে নেয়া যায়। অন্যথা হলে পলি জিনিষটাও একটা বড় ফ্যাক্টর।

প্রবাহ মাত্রা পরিবর্তনের ফলে এই পলির পরিমান x এর স্থলে হয়তো m হবে। যেটা আগের লজিক ঠিক হলে উজানে ক্ষয় হউক বা না হউক তার সাথে সম্পর্কিত নয়।

বিপুল পানি জমা করার ফলে অতিরিক্ত ওজন ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এই পয়েন্টটা কি এই লেখায় বাদ পড়ে গেল? তাছাড়া আগের ই-বইয়ে লেখা বাষ্পীভবনে হারানো পানির পরিমান এবং স্থানীয় আবহাওয়ায় এর প্রভাব সম্পর্কে লিখেছিলে বলে মনে পড়ছে।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সচল জাহিদ এর ছবি

শামীম ভাই পলি নিয়ে আরো কিছু পড়াশুনা করা হচ্ছে। মূলত মোস্তফা ভাই করছেন। শীঘ্রই একটি বিস্তারিত লেখা আসছে এটি নিয়ে।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

শামীম এর ছবি

চলুক
পারলে মডেল রান দিয়েন।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সচল জাহিদ এর ছবি

শামীম ভাই, উপাত্ত নাইতো। তবে এর আগে IWM মডেল রান দিয়েই কিছু ফলাফল পেয়েছিল। রিপোর্টটি আর প্রকাশিত হয়নি। তবে ঐ অপ্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে একটি কনফারেন্স পেপার আছে যার ফলাফল আমি আমার সিরিজে উল্লেখ করেছিলাম। আপনার ইমেইলটা দিলে পেপারটা পাঠাতে পারি।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

স্বাধীন এর ছবি

শামীম ভাই, আপনার বিশ্লেষণে ভুল নেই। পলি বিহীন পানি কিছু দূর যাওয়ার পর সাম্যবস্থায় চলে আসবে, তাই আপাত দৃষ্টিতে সেটি বাংলাদেশের ভুখন্ডে নদীর খুব বেশি পরিবর্তন আনবে না। তবে, প্রবাহ কমে যাওয়ায়, নদীর সার্বিক প্ল্যান ফর্ম বদলাতে পারে। নদী হয়তো ব্রেইডেড নদীতে পরিণত হতে পারে।

অতিথিঃ অতীত এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

স্যার, আমার যা মনে হয়, যেহেতু এইটা মোটামুটি অনেক বিশাল ধরনের একটা প্রকল্প এবং এতে পরিবেশগতভাবে ভারতের দুই অঙ্গরাজ্য জড়িত; সুতরাং নিশ্চয়ই ভারতে আড়ালে কিংবা লুকোচুপি করে হলেও প্রকল্পের প্রথম প্রস্তাবনার সময় থেকে বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবার অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের মধ্যেই পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ, জরিপ এবং গবেষণা হয়েছে। এবং নিশ্চয়ই ভারতের কাছে সেই তথ্যগুলো আছে। যৌথ গবেষণার প্রেক্ষিতে সেইগুলো বাংলাদেশ পেয়েছে কিংবা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা আমার জানা নেই। থাকলে সেইগুলো এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আরও সম্ভাব্য এবং প্রযোজ্য বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা দরকার। আর না থাকলে, সেইগুলো সংগ্রহ এবং তা আশু গবেষণার ব্যবস্থা না করে কেন বারবার ভারতের মতামতের ভিত্তিতে আমাদের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য দিচ্ছেন মাথায় আসছে না। এতে তাদের স্বার্থই বা কী?

যাইহোক, সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের কাছে আপনার এই লেখাটা প্রবাহচিত্র আকারে পাঠিয়ে দিতে পারলে অনেক ভালো হতো। কীভাবে তারা এই বিষয়টি নিয়ে এগুবে, অন্তত চোখে আঙ্গুল না দিয়েও বোঝানো যেতো তাইলে।

-অতীত

সচল জাহিদ এর ছবি

আমি ভারতের পুরো পরিবেশগত প্রভাব রিপোর্ট (EIA) দেখেছি। সেখানে ভারতে প্রভাব নিয়ে বিশদ আলোচনা এবং তার সম্ভাব্য ব্যবস্থাপনা বা মিটিগেশন নিয়ে অনেক সুপারিশ রয়েছে। এমনকি প্রকল্পের বাস্তবায়নের সময় সেখানে শ্রমিকদের মলমুত্র কি পরিমান হবে, সেটি কিভাবে ব্যবস্থাপনা করা হবে তাও আছে। শুধু সেখানে উপেক্ষিত হয়েছে ভাটি এবং বিশেষত বাংলাদেশ। চার পাঁচ লাইনের একটি প্যারাগ্রাফ দিয়েই তা শেষ করে দেয়া হয়েছে।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে আবেগসমৃদ্ধ অনেক লেখাই পড়েছি, কিন্তু যুক্তিসহ পূর্ণ লেখা ওতটা পাইনি। চমৎকার পোস্ট। চলুক

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ দয়ীন।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দুর্দান্ত এর ছবি

আপনার প্রস্তাবের সাথে সহমত। তবে আমার মতে আইন ও জনসনংযোগ (আপনার দেখানো সপ্তম ও অষ্টম) এই দুটি পদক্ষেপ এক্ষুনি জাতীয় পরযায়ে শুরু করতে হবে। এর জন্য় প্রকলপের কারিগরি প্রক্রিতি বিস্তারিত জানা পরয্ন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না। আওয়ামী লীগ প্রকারান্তরে নিজেদের অবস্থান থেকে এই প্রচেষ্টা শুরু করেছে, এবনং এখানেও সীমিত রাজনোইতিক স্বআরথের বাইরে ভাবার কোন উতসাহ তারা পায়নি। বি এন পি ক্ষমতায় থাকলেও বিষয়টা অন্য় কিছু হত বলে মনে হয়না। তবে এই বিভক্ত জনমতের ফলে জাতীয় কোন লাভ হবে না।

আজকের আইন অনুযায়ী গওহর রিজভী প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। তার উপদেশে ভিত্তিতে দেশের প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রীসভা বা সনংসদে সুস্পষ্ট প্রস্তাব করলে সেটা নিয়ে সনংসদে তুমুল আলোচনা-বিতররক হওয়ার কথা ছিল। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের তাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে জনসনংযোগ করার কথা। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব নিয়ে মিডিয়ায় আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু আমরা দেখছি গওহরকে নিজেই সরাসরি গণসনংযোগ করছে। একজন উপদেষ্টাকে, হাসিনা তাকে মন্ত্রীর সমান খোরপোষ দিলেও, এই আকারের একটি আন্তরজাতিক স্পরশকাতর বিষয়ে গণসনংযোগ করার ক্ষমতা রাষ্ট্র দেয়নি।

আমাদের আইন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের কোন সিদ্ধান্তক্ষমতা (ম্য়ান্ডেট) দেয়নি। এই বাঁধ নিয়ে ভারতের সাথে চুক্তি যদিও কোনদিন হয়, এই উপদেষ্টাকে কোন কাগজে সেদিন সই করতে হবে না। তাই সেই চুক্তিতে যদি দেশের স্বআরথবিরোধী কিছু হয়, সেদিন আইনের চোখেও এই উপদেষ্টাকে অভিযুক্ত করা যাবেনা।

এই পরিস্থিতিতে মিডিয়া ও জনগণ গওহর রিজভীর কথাবারতাকে সিরিয়াসলি নিয়েই তার যে ক্ষমতাটি থাকার কথা নয়, সেটাকেই স্বঈকার করছে। এর বদলে গণ মাধ্য়মে এই উপদেষ্টার নিজস্ব অবস্থান (কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট) নিয়েও আলোচনা হওয়া উচিত। বাঁধ নিয়ে আরেকটি শব্দ উচ্চারণ করার আগে তিনি বিভিন্ন দেশের সাথে সকল উপদেষ্টা চুক্তিগুলো (আমেরিকা, বানংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তান) প্রকাশ করে দিন।

দেশের মানুষ এই বড় বিষয়টি নিয়ে একজন খোলা মনের উপদেষ্টার কথা শুনুক।

সচল জাহিদ এর ছবি

চলুক


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

শমশের এর ছবি

চমৎকার যুক্তিপূর্ণ লেখা। গুরু গুরু
ধন্যবাদ জাহিদ ভাই।
লেখা শেয়ার করলাম।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ শমশের ভাই।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দীপ্ত এর ছবি

এই বিষয়ে কোন পড়াশোনা না থাকলেও এত সহজ করে বলেছেন যে বুঝতে কষ্ট হয় নি। এ বিষয়ে বেশ কিছু লেখা দেখেছি, কিন্তু যুক্তির জায়গা থেকে সরে গিয়ে ভারতবিদ্বেষ বা অন্য কোন অপ্রয়োজনীয় আঙ্গিকে চলে গেছিল বেশির ভাগই। এটা কি আরও বেশি মানুষের মাঝে কোনভাবে ছড়িয়ে দেয়া যায়, যারা ব্লগ পড়েন না তাদের মাঝেও? যদি বেশি মানুষের সঠিক তথ্য জানা থাকে, তাহলে সরকারের হাবিজাবি বুঝ দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। আর সাধারণ মানুষের বোধগম্য করে লেখা যেহেতু কম, তাই অনেকেরই জ্ঞান আমার মত ভাসাভাসা বলেই মনে হয়। উপরে অনেকেই বলেছেন, কোন জনপ্রিয় পত্রিকায় যদি ছাপান যেতো, তাহলে আরও বেশি মানুষ বুঝতে পারত। সে বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেবেন কি?

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ দীপ্ত। লেখাটি প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রথম আলোতে ছাপানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে যেহেতু মূল লেখাটি সেখানেই প্রকাশিত হয়েছে। বলতে পারছিনা প্রকাশিত হবে কিনা। তবে চেষ্টা থাকবে।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

উচ্ছলা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এই জরুরী বিষয়ে আবারও আলোকপাত করার জন্য।
লেখাটি শেয়ার করছি এক্ষুনি।

সচল জাহিদ এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ উচ্ছলা। এই কার্টুনটির মূল লিঙ্ক দিতে পারেন ? চমৎকার লেগেছে।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

উচ্ছলা এর ছবি

Mehedi Haque যিনি উন্মাদের এ্যাসোশিয়েট এডিটর (http://www.mehedihaque.blogspot.com), তার ফেইসবুকে "ANTI TIPAIMUKH DAM CARTOON PROTEST" এ্যালবামে এটা সহ আরও চমৎকার সব কার্টুন পাবেন।

কিছু জরুরী তথ্য আছে এই লিঙ্কেঃ http://www.internationalrivers.org/taxonomy/term/940

ধন্যবাদ।

হিমু এর ছবি

কার্টুনগুলো কি ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত? কার্টুন দিলে সূত্রটিও উল্লেখ করে দিলে ভালো হয়।

উচ্ছলা এর ছবি

ঠিকই বলেছেন। আমার সূত্র উল্লেখ করা উচিত ছিল। তবে কার্টুনিস্টের সবগুলো এ্যালবাম দেখলাম সবার জন্য এ্যাক্সেসিবল এবং ডাউনলোডেবল। তাই খুশির ঠ্যালায় সূত্র না দেয়ার মতো ভুল করে ফেলেছি হাসি

তারেক অণু এর ছবি

দারুণ গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করছেন, কুম্ভকর্ণের ঘুম কি ভাঙ্গবে!

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চলুক
এই বিষয়টা নিয়ে শুরু থেকেই আপনি যে কাজ করে যাচ্ছেন, তার জন্য শুধু প্রশংসাই না, অনেক কৃতজ্ঞতাও রইলো।
দেখা যাক আমাদের ক্ষমতাবানদের ঘুম ভাঙে কি না!

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

অনেকটা সময় নিয়ে পড়লাম ভাইয়া, শেয়ার দিচ্ছি।

Saurav Shome এর ছবি

অসাধারণ তথ্যবহুল লেখা | অনেকদিন পর বাংলায় এই বিষয়ে কোনো লেখা পরলাম | আজকাল দেশের সরকার পরিবেশের কথা ভাবেনা | ভাবেনা মানুষের কথা | ভাবে শুধু পুঁজিবাদী দালালদের নিয়ে | আজ সাধারণ মানুষ বিপন্য | এই ধরনের তথ্যবহুল লেখা মানুষের কাছে পৌছে দিলে হয়ত মানুষ জাগবে | Knowledge is power | ধন্যবাদ লেখক কে |

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।