প্রায় প্রতি শুক্রবার বা শনিবার রাতে আমাদের বাসায় ফ্যামিলি মুভি দেখা হয়। সেরকম একটি রাতে আমরা তিনজন মিলে 'Little Red Wagon' মুভিটা দেখলাম। এক কথায় অসাধারণ একটি মুভি, সহজেই যা বাচ্চাদের মাথায় গেঁথে যায়। মুভির প্রধান চরিত্র একটি সাত বছরের ছেলে যে তার মা আর বোনের সাথে ফ্লোরিডার টেম্পা বে তে থাকে। সময়টা ২০০৪, হারিকেন চার্লি আঘাত হানে সেখানে। নিজের চোখে এই হারিকেনের ভয়াবহতা দেখে ছোট্ট জ্যাক (Zach) এগিয়ে আসে তার নিজের ছোট্ট লাল রঙের ওয়াগন নিয়ে। পড়শিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সে উৎবাস্তুদের সাহায্যের জন্য কাপড় চোপড়, পানি, কম্বল ইত্যাদি সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। ধীরে ধীরে সেই সংগ্রহ বাড়তে থাকে, এক এলাকা থেকে অন্য এলাকা থেকেও জ্যাক সংগ্রহ করতে থাকে সাহায্যের জন্য অনেক কিছু। সেই শুরু, জ্যাক এর পরে শুরু করে দুস্থ শিশুদের জন্য সাহায্য সংগ্রহে। তার সাথে এগিয়ে আসে তার মা, বোন, সমাজের অনেক মানুষ।
যাক ...পুরো গল্পটা বলছিনা, বরং রেখে দিচ্ছি আপনাদের জন্য, সময় করে দেখে নেবেন। তবে আগেই বলেছি, মুভিটা এমন যে সহজের বাচ্চাদের মনে গেঁথে যায়। আমার ছেলে নির্ঝরের মনেও সেটা গেঁথে থাকল। আমরা যখন কোথাও ঘুরতে যেতাম দুস্থ কাউকে দেখলে সে তাকে সাহায্য করার জন্য আমাদের কাছ থেকে টাকা নিত। অন্য সব বাচ্চাদের মত নির্ঝরেরও একটা ছোট্ট টাকার ব্যাগ আছে যেখানে সে ঈদের সেলামি আর মাঝে মাঝে বেচে যাওয়া কয়েন জমায়। প্রায়শই সে আমাদের কাছে খুচড়া টাকা না থাকলে তার সেই ছোট্ট টাকার ব্যাগ থেকে দুস্থ মানুষের সাহায্যের জন্য টাকা দিতে চেত।
২)
একদিন অফিস থেকে ফিরে ফেইসবুকে ঘোরাঘুরি করছিলাম, নির্ঝর আরেক রুমে হোমওয়ার্ক করছিল। 'লাইট ই নাইট' নামে একটি ইভেন্ট দেখে আমি একটু ঘাটাঘাটি শুরু করলাম। আমি এই ইভেন্টের সাথে ঠিক পরিচিত ছিলামনা, যা জানা গেল এটি আসলে ব্লাড ক্যানসার রোগীদের সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহের একটি মুভমেন্ট। জানা গেল আমরা যে শহরে থাকি (এডমন্টন) সেখানেও এরকম একটি অর্থসংগ্রহ কার্যক্রম চলছে। ২৬ শে সেপ্টেম্বর গোধূলী লগ্নে সবাই এখানকার একটি খুব জনপ্রিয় পার্কে গিয়ে হাতে মশাল নিয়ে ৫ কিলোমিটার পথ হাটবে। তিন ধরনের মশাল থাকবে, লাল হচ্ছে সমর্থকদের জন্য, সাদা হচ্ছে যারা ব্লাড ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করছে তাদের জন্য, আর সোনালী হচ্ছে যারা ব্লাড ক্যানসারে তাদের আপনজন হারিয়েছে তাদের জন্য। যারা সমর্থক তারা একটি লাল মশাল পাবে যদি তারা অনলাইনে ন্যুনতম ১০০ ডলার সাহায্য তুলতে পারে।
নির্ঝরে ডেকে এনে দেখালাম, সে খুবই আগ্রহ প্রকাশ করল। আমি, নির্ঝর আর মিতু মিলে ওর জন্য অনলাইনে একটা একাউন্ট খুললাম। ওকে উইকিপিডিয়া ঘেটে দেখালাম প্রতি বছর ব্লাড ক্যানসারে কত মানুষ মারা যায় আর তাদের চিকিৎসার জন্য কত টাকা প্রয়োজন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ওকে দিয়ে ছোট্ট একটি ভিডিও বানালাম সাহায্যের আবেদন করে:
ওর ভিডিওতে বলা কথাগুলোকে আরেকটি সাজিয়ে ওয়েবসাইতে দেয়া হলো। সব শেষ করে আমরা ফান্ড রেইজিং এর লিঙ্কটা ফেইসবুকে পোষ্ট করে দিলাম। সেই সাথে বন্ধু বান্ধব, সহকর্মীদের অনেককেই লিঙ্কটা পাঠালাম।
সবার কাছ থেকে অভাবনীয় সাড়া পেল নির্ঝর, শুরুতে একটা ডিফল্ট ফান্ডরেইজিং গোল ছিল ৪০০ ডলার সেটা মাত্র দুই/দিন দিনেই উঠে গেল। সবার এই দারুণ সাড়া পেয়ে নির্ঝর অসম্ভব প্রেরণা পেল। সে তার বন্ধুদের কাছেও এটা নিয়ে অনেক গল্প করলো। যাই হোক আজ পর্যন্ত তার সংগৃহীত সাহায্যের পরিমান প্রায় ৯০০ কানাডিয়ান ডলার, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫৪,০০০ টাকা। "লাইট দি নাইট" প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী নির্ঝর ইতিমধ্যেই একজন "লাইফ সেভার" যেহেতু সে ৫০০ ডলার অনুদান তুলেছে।
নির্ঝরের স্বপ্ন সে একজন "ব্রাইট লাইট" হতে চায়। ন্যুনতম ১০০০ ডলার তুললে সে তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে। সেই সাথে সে আমাদের নিয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ৫ কিলোমিটার হাটবে হাতে মশাল নিয়ে, আলোকিত করবে অন্ধকার রাতকে। আপনারা যদি ওকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে সাথী হতে চান এই লিঙ্কে গিয়ে ওর এই ফান্ড রেইজিংকে সমর্থন করতে পারেন।
১ | লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১৫/০৯/২০১৫ - ১০:৫৮অপরাহ্ন)
আমরা অনেকেই অনেক মহৎ কথা বলি, দেশ ও দশের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলি, মানবিকতার আগাপাছতলা উন্মোচন করি, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করি না। কিন্তু নির্ঝর ইসলাম করে দেখিয়েছে। তাই আমরা ওর চেয়ে অনেক বড় হয়েও ওর কাছ থেকে শিখতে পারি, অনুপ্রেরণা নিতে পারি।
রাজশাহীতে একটা স্কুল গড়ে উঠেছে ভাগ্যবিড়ম্বিত শিশুদের জন্য, নাম হার্টবিট স্কুল। রাজশাহীর কিছু তরুণ ছাত্র গড়ে তুলেছে এই প্রতিষ্ঠান যা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্বপ্নকে যুগিয়ে যাচ্ছে হৃদস্পন্দন!
৩ | লিখেছেন আয়নামতি [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ১৬/০৯/২০১৫ - ৬:৩৯পূর্বাহ্ন)
আমাদের নেইবার হুডেও এরকম এক পিচ্চি আছে। সে নেপালের ভূমিকম্প, রিফিউজিদের(যেহেতু আমি এ দুটোতে তার সাথে ছিলাম তাই জানতে পারি)। জন্য ফাণ্ড তোলার ব্যাপারে কী যে কষ্ট করেছে! নির্ঝরের জন্য গর্ব হচ্ছে সত্যি। নিশ্চয়ই ও 'ব্রাইট লাইট' হবে। নির্ঝরের জন্য অনেক শুভকামনা থাকলো।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------ “We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
১৪ | লিখেছেন মেঘলা মানুষ [অতিথি] (তারিখ: শনি, ১৯/০৯/২০১৫ - ২:৩৮পূর্বাহ্ন)
অনেকদিন পর ব্লগে এসে এরকম একটা লেখা দেখে ভালো লাগলো। আমরা যারা পৃথিবীটাকে নির্লিপ্তভাবে দেখেছি, পাশ কাটিয়ে গেছি -তাদের পরের প্রজন্ম হোক সহমর্মী, হোক আলোকিত!
মন্তব্য
আমরা অনেকেই অনেক মহৎ কথা বলি, দেশ ও দশের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলি, মানবিকতার আগাপাছতলা উন্মোচন করি, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করি না। কিন্তু নির্ঝর ইসলাম করে দেখিয়েছে। তাই আমরা ওর চেয়ে অনেক বড় হয়েও ওর কাছ থেকে শিখতে পারি, অনুপ্রেরণা নিতে পারি।
রাজশাহীতে একটা স্কুল গড়ে উঠেছে ভাগ্যবিড়ম্বিত শিশুদের জন্য, নাম হার্টবিট স্কুল। রাজশাহীর কিছু তরুণ ছাত্র গড়ে তুলেছে এই প্রতিষ্ঠান যা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্বপ্নকে যুগিয়ে যাচ্ছে হৃদস্পন্দন!
।।।।।।।।।।
অনিত্র
অনেক ধন্যবাদ অনিত্র। হার্টবিট স্কুল সম্পর্কে জেনে খুব ভাল লাগল।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
আমাদের নেইবার হুডেও এরকম এক পিচ্চি আছে। সে নেপালের ভূমিকম্প, রিফিউজিদের(যেহেতু আমি এ দুটোতে তার সাথে ছিলাম তাই জানতে পারি)। জন্য ফাণ্ড তোলার ব্যাপারে কী যে কষ্ট করেছে! নির্ঝরের জন্য গর্ব হচ্ছে সত্যি। নিশ্চয়ই ও 'ব্রাইট লাইট' হবে। নির্ঝরের জন্য অনেক শুভকামনা থাকলো।
অনেক ধন্যবাদ আয়নামতি। নির্ঝর ব্রাইট লাইট হতে পেরেছে এই খবরটা আপনাকেই প্রথম দিচ্ছি।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
আই'ম হাইলি অনার্ড ভাইয়া! অনেক অনেক শুভকামনা থাকলো নির্ঝরের জন্য।
নির্ঝরের জন্য অনেক শুভকামনা
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
অনেক ধন্যবাদ।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
হয়ে যাবে ম্যান।
...........................
Every Picture Tells a Story
ধন্যবাদ মুস্তাফিজ ভাই।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
অনেক ধন্যবাদ সাক্ষী সত্যানন্দ।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
প্রাউড অব নির্ঝর। আমার ভালবাসা ওর জন্য।
অনেক ধন্যবাদ নীলকমলিনী।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
অনেকদিন পর ব্লগে এসে এরকম একটা লেখা দেখে ভালো লাগলো। আমরা যারা পৃথিবীটাকে নির্লিপ্তভাবে দেখেছি, পাশ কাটিয়ে গেছি -তাদের পরের প্রজন্ম হোক সহমর্মী, হোক আলোকিত!
শুভেচ্ছা আর শাবাস -দু'টোই নির্ঝরের জন্য!
অনেক ধন্যবাদ মেঘলা মানুষ।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
নতুন মন্তব্য করুন