হালের গরু বিকিয়ে গেছে, হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে ধান ফলাবার এক টুকরো জমিটাও। শত্রুসৈন্যের হাতে পড়বে এই ভয়ে জেলেদের নৌকা গুলো পর্যন্ত নিয়ে নেওয়া হয়েছে। গ্রামে কাজ নেই, ভাতও নেই। ভিটে মাটিটা পর্যন্ত বিক্রি করেও চাল জোটানো দুস্কর। গেরস্থালীর বিগ্রহ গুলো পর্যন্ত অভুক্ত, দেবতার ভোগে দেবার মতও কিছু নেই। বাজারে চালের দাম চড়ে যাচ্ছে। উধাও হয়ে যাচ্ছে ধানের সঞ্চয়। কেউ বলছে সরকার সরিয়ে নিয়েছে জাপানীদের হাতে পড়বে বলে, কেউ বলছে চালের আড়তদাররা লুকিয়ে ফেলছে সব। সরকার চালের দাম বেঁধে দিয়ে ঠেকাতে চাইছে চালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি আর সেই কারনেই বাজার থেকে লোপাট হয়ে যাচ্ছে খাদ্যশস্য। বেঁধে দেওয়া দামে মুনাফা নেই, ব্যবসায়ীরা বিক্রির চেয়ে মজুতে উৎসাহী। ক্ষুধার প্রকোপ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে। ভাত নেই। অন্নহীন জঠরাগ্নিতে পুড়ে যাচ্ছে মানবিক সমস্ত বোধ। দিবানিশি পেটের জ্বালায় দিগ্বিদিক ছুটছে মানুষ গুলো। আজন্ম পরিচিত গাঁয়ের মায়া কাটিয়ে উঠে আসছে অচেনা শহরে। পথে পথে রেখে আসছে অনাহারে ঢলে পড়ে যাওয়া ক্ষুধার্ত শরীর গুলো। শকুন শেয়ালে টানাটানি করছে মৃতদেহ গুলো। পঞ্চাশের মন্বন্তরের বর্ণনা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। অজস্র বর্ণনা আছে, আছে জয়নুল আবেদীনের আঁকা ছবি গুলোও। তবুও ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে এখনও আলোচনা ওঠে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, সরকারের দায়, চাল ব্যবসায়ীদের কীর্তি, সেই সাথে উইনস্টন চার্চিলকে নিয়েও ইতিহাসের হিসেবের খাতা খোলেন কেউ কেউ। হিসেবটা চলতেই থাকে।
পঞ্চাশের মন্বন্তর বাঙ্গালীর স্মৃতিতে একটা অমোচনীয় দাগ রেখে গেছে। এই দুর্ভিক্ষ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। গবেষনা আগেও যেমন হয়েছে এখনও হচ্ছে, হয়তো ভবিষ্যতেও আরো অনেক জিজ্ঞাসার উদয় হবে। ১৯৪৩-৪৪ সালের দুর্ভিক্ষ যে ভয়াবহতা নিয়ে এসেছিল তার আলোচনা হয়তো হুট করেই শেষ হয়ে যাবার নয়। এই দুর্ভিক্ষের প্রধান দিকটা ছিল এই যে এটা মানুষের তৈরী করা দুর্ভিক্ষ। সাধারনত খরার বছরে ফসল নষ্ট হবার কারনে যে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এই দুর্ভিক্ষের প্রসঙ্গে তা বলবার উপায় নেই। এমন নয় যে পর্যাপ্ত শস্য মজুত ছিলনা। ফসলের উৎপাদনও ১৯৪২ সালে ঠিক কম হয়ে ছিল বলে শোনা যায়না। এসম্পর্কে হয়তো মতভিন্নতা আছে। তবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে মানুষের বা কিছু শ্রেণীর মানুষের সিদ্ধান্তই এই দুর্ভিক্ষ ডেকে এনেছিল এ ব্যাপারে সকলেই মোটামুটি নিশ্চিত।প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরিস্থিতি, সেই সূত্রে জাপানের আগ্রাসন আর এই ঘটনাকে ঘিরে যে আতঙ্ক বা সর্তকতামূলক ব্যবস্থা সেই সাথে তৎকালীন শাসক ব্রিটিশ সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত, খাদ্যশস্য ব্যবসায়ীদের মুনাফার লালসা ও আরো বেশ কিছু মানব রচিত নিয়ামকই দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহতার দিকে ঠেলে দিয়েছিল। যার ফলে প্রায় সমস্ত বাংলা প্রদেশেই দুর্ভিক্ষের হাহাকার ছড়িয়ে পড়ে। কৃষক ও গ্রামের অন্য পেশাজীবিরাও জীবিকার উপকরন সহ জীবনধারনের সমস্ত সহায় সম্বল বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছিলেন। ১৯৪৩ সালে শুরু হলেও এর জের চলতে থাকে প্রায় ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত। এ সময়ে দুর্ভিক্ষ ও তার ফলে সৃষ্ট মহামারীতে ৩৮ লক্ষ লোক মৃত্যুবরন করেন।
শহরাঞ্চলে বিশেষ করে কোলকাতায় তখন দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের ভিড় কেবলই বাড়ছিল। সরকারী লঙ্গরখানা গুলোতে যে খাবার বিতরন করা হতো তা কতখানি স্বাস্থ্য সম্মত তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ অনেকেই উত্থাপন করেছেন এবং এই সন্দেহও নেহাত অমূলক ছিলনা। তারপরও এই সব লঙ্গরখানার ভিড় কখনওই কমেনি। কারন মানুষের তখন উপায় ছিলনা। সে সময় শহরের পথে ঘাটে ক্ষুধার্ত মানুষের নিস্প্রাণ দেহও যত্র তত্র পড়ে থাকতে দেখা যেত। দুর্ভিক্ষের উৎপত্তি এবং আনুষাঙ্গিক বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। এ সংক্রান্ত প্রকাশনাও কম নেই। এমনকি সাম্প্রতিক সময়েও কেউ কেউ পঞ্চাশের মন্বন্তর (বাংলা ১৩৫০) অর্থাৎ ১৯৪৩-৪৪ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে লিখেছেন। ১৯৮১ সালে প্রকাশিত হয় অমর্ত্য সেনের Poverty and Famines আর ১৯৮২ সালেই প্রকাশিত হয় পল আর. গ্রিনোর Prosperity And Misery In Modern Bengal : The Famine of 1943-1944 বই দু’টি। আগেই বলেছি এই দুর্ভিক্ষ নিয়ে লেখালেখি কম হয়নি। এ বিষয়ের গ্রন্থপঞ্জী তৈরী করলে তা যথেষ্টই দীর্ঘ হয়ে দাঁড়াবে তাতেও সন্দেহ নেই। কিন্তু বিশেষ কারনেই এই উল্লেখিত বই দু’টোর মধ্যে শেষোক্তটি নিয়েই কিছু কথা চলে আসবে। এই বইটিরও সামগ্রিক আলোচনায় না গিয়ে কেবল দুর্ভিক্ষ নিয়ে সে সময়ের দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত একটি দিকই আমাদের লক্ষ্য। এই দুর্ভিক্ষ প্রসঙ্গে আলোচনায় যে দিকটি অনেককেই বিস্মিত করেছে তা হলো এই ভয়াবহ দুর্যোগটি মানুষ যেন অনেক খানিই মাথা পেতে মেনে নিয়েছিল। বাঙ্গালীর নিস্ক্রিয়তা, উদ্যোগহীনতা নিয়ে যে অভিযোগ গুলো ওঠে তা শুধু সে কালেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। আবার শুধু যে ব্রিটিশ বা ইউরোপীয়দের এ দৃষ্টিভঙ্গী ছিল তা নয়, অনেক ভারতীয় লেখকই এদিকটা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি।
কোলকাতার দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের ভিড়, আহাজারী আর চরম দুরবস্থার মধ্যেও নৃতত্ত্ববিদ টি.সি.দাস লক্ষ্য করেছেন,
We did not hear of any organised attempt at robbery by the destitutes.......Food of all sorts lay before their eyes, arranged in heaps, in shops all over the city. But no one attempted to seize it by force, though we definitely know that men and women were dying of starvation on those very streets. The attitude of the people themselves was that of complete resignation : they attributed their misery to fate or karma alone, which afforded poor consolation to them in their miserable plight.
জীবন মরনের সন্ধিক্ষণেও যেন বাঙ্গালী উন্মত্ত হতে জানেনা। এমন নয় যে কোথাও খাদ্যশস্য নেই। শহরেই বিভিন্ন গুদামে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ ছিল। দোকানেও ধান চালের কমতি ছিলনা। অন্ততঃ যে দোকান গুলো তখনও খোলা ছিল। অথচ মানুষ না খেতে পেয়ে রাস্তার উপর মারা যাচ্ছিল সে সময়। এ সময়টায় বিশেষ করে খাদ্য গুদাম বা চালের আড়ৎ লুঠ হবার কথা। হয়তো হচ্ছিলও কোথাও কোথাও, কিন্তু উল্লেখযোগ্য হারে নয় বলেই এই বিস্ময়। দুর্ভিক্ষ কমিশনের সামনে ইংরেজ মেডিকেল অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল ই. কটারের মন্তব্যও সেই একই সুরের। তিনি বলছেন,
....What I felt in Bengal was that if such a state of affairs had arisen in the United Provinces or in the Punjab, you would have had terrible riots. The husbands and brothers would have had those food shops opened, but in Bengal they died in front of bulging food shops.
Q: Bulging with grain?
A: Yes, they died in the streets in front of shops bulging with grain.
Q: Because they could not buy?
A: Yes, and it was due to the passive, fatalistic attitude of those people that there were no riots and they were dying.
তবে কি বাঙ্গালীর অদৃষ্টবাদই তাদের নিস্ক্রিয় করে রেখেছিল? মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও তারা মুখের খাবারটাও ছিনিয়ে নিতে পারেনি, অদৃষ্টবাদ কি এতখানিই নিস্ক্রিয় করে তোলে মানুষকে? পঞ্চাশের মন্বন্তর থেকে পিছিয়ে যাওয়া যাক ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে। বাংলা ১১৭৬ সালে (১৭৭০খ্রীঃ) আরেকটি বড় দুর্ভিক্ষের ঘটনা তখনও অনেকের স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায়নি। শোনা যায় এই দুর্ভিক্ষের সময় সেই বছরই প্রায় দশ মিলিয়ন লোক অনাহারে আর মহামারীতে মারা যায়। এক ইউরোপীয় প্রত্যক্ষদর্শী অ্যাবি রায়নালের জবানীতে শুনি,
But it is still remarkable........ that amidst this distress, such a multitude of human creatures, pressed by the most urgent of all necessities, remained in absolute inactivity, and made no attempts whatever for their self preservation. All the Europeans, especially the English, were possessed of magazines (i.e. stores for grain). These were ever respected, as well as private houses; no revolt, no massacre, not the least violence prevailed. The unhappy Indians, resigned to despair, confined themselves to the request of succour they did not obtain, and peaceably awaited the release of death. Let us now represent to ourselves any part of Europe afflicted by a similar calamity. What disorder! What fury! What atrocious acts! What crimes would ensue! How should we have seen among us Europeans, some contending for their food with their dagger in their hand, some pursuing, some flying, and without remorse massacring each other! How should we have seen (them) at last turn their rage on themselves, tearing and devouring their own limbs, and in the blindness of despair, trampling underfoot all authority, as well as every sentiment of nature and reason!
ক্ষুধার প্রকোপে উচিত-অনুচিত জ্ঞান থাকবেনা এটাই স্বাভাবিক কিন্তু বাংলায় তা হয়নি। ক্ষুধার জ্বালায় চুরি, লুঠতরাজ একেবারেই হয়নি তা নয় কিন্তু সরকারী, বা প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, জমিদার শ্রেণীর খাদ্যশস্যের মজুতের উপর মানুষ সে হারে ঝাপিয়ে পড়েনি। মুখে খাবার তুলে দিতে না পেরে কোলের সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার মতও ঘটনা ঘটেছে, স্বামী স্ত্রী এবং পরিবার পরিজনদের ত্যাগ করে চলে গেছে কিন্তু বিদ্রোহের দেখা পাওয়া যায়নি। সে সময়ের সমাজতন্ত্রীরা মানুষকে উত্তেজিত করার কম চেষ্ট করেননি কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি। পেটে ক্ষুধার আগুন বিপ্লবের জন্ম দেয় বলে যে কথাটা প্রচলিত তাই যেন মিথ্যে প্রমানিত করেছে ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে মানুষের আচরন। কোলকাতা রিলিফ কমিটির কর্মকর্তা জ্ঞানাঞ্জন নিয়োগী বলছেন,
From our boyhood we have been told repeatedly that hunger breeds revolution. But that aphorism proved false in the case of this tragic Bengal famine. It is really difficult to say anything conclusively why there was no rising worth the name nor any sensational looting or the rush of hunger-marchers like a northwester (spring storm) making for their target a government store or private stock or any mobile foodstuff transportation. Indeed, it is most amazing and surprising to observe how millions of people struggled and died in abject docility. The lessons and evidence of history have been nullified by the (severe?) fatalism of a people who have been kept for decades in a state of chronic poverty and helplessness under fettered conditions.......
কমিউনিস্ট পার্টির প্রাদেশিক কমিটির সাধারন সম্পাদক ভাবানী সেনের জবানীতেও সেই একই বিস্ময়ই ধ্বনিত হতে শুনি যখন তিনি বলেন,
had this vast army started looting, then in one moment the whole of Bengal would have been turned into a jungle infested with ferocious beasts. It was not that there was nothing to loot in the country – rather the rich have enriched themselves in this very period. But these destitutes came from the villages, saturated with the love of peace and honesty, characteristic of rural society. They are the inheritors of a great and ancient civilisation, and standing even in the queue of death, they kept up within themselves the last streak of civilisation; the unbounded fortitude of our village civilisation kept them away from the path of looting.
সতিই কি তাই? ভাবানী সেন যাকে বলছেন গ্রামীন সততা, সরলতা আর শান্তিপ্রিয়তা যার শিক্ষায় মৃত্যুর মুখোমুখি মানুষ মুখের গ্রাস কেড়ে নেবার জন্য হিংস্র হয়ে উঠতে পারেনা এই বস্তু কোথায় ছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়। সেই ইতিহাসও এই দুর্ভিক্ষের ঘটনা থেকে খুব দূরে নয়। great and ancient civilisation এর উত্তরাধিকারীরাও নারী শিশুদের পর্যন্ত খুন করতে পিছ পা হয়নি। লুণ্ঠন চলেছে, চলেছে অকল্পনীয় নৃশংসতাও। ধর্মের নামে পশুর চেয়েও হিংস্র হয়ে উঠেছিল এই ভারতীয় মানুষ গুলোই, বাঙ্গালীরাও বাদ যাবেনা। ভারতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য আর তার উত্তরাধিকার নিয়ে বাগাড়ম্বর করাই যায় কিন্তু হিংস্রতায় এই ভারতীয়রাও তাদের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে কার্পন্য করেনি। আর এখানেই হিসাব মেলেনা। যে মানুষ গুলো খাদ্যশস্য ভর্তি গুদামের সামনেই অনাহারে মরে পড়ে থাকে। নিজের জীবন বাঁচাতে সেই গুদামের তালাটা পর্যন্ত ভাঙ্গতে যায়নি। তারাই আবার ধর্মের মত বায়বীয় বিষয়ে ফুঁসে ওঠে অবর্ণনীয় নৃশংসতায়।
দিল্লীর স্কুল অব ইকোনমিক্স এর ওঙ্কার গোস্বামী বুক রিভিউয়ে পল গ্রিনোর Prosperity And Misery In Modern Bengal বইটির ভূয়সী প্রশংসা করলেও নিস্ক্রিয় অদৃষ্টবাদের এবং দুস্থ মানুষদের জড়ত্বের বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। তিনি মনে করেন পল গ্রিনো তার গবেষনা কর্মে কঠোর শ্রম দিলেও সে সময়ের ভারতীয় দৈনিক পত্রিকা গুলো ভালোভাবে পর্যালোচনা করেননি। বিশেষ করে সে সময়ের হিন্দু-স্ট্যাণ্ডার্ড, অমৃতবাজার পত্রিকা, দৈনিক বসুমতি, আনন্দবাজার পত্রিকা গুলো আরো মন দিয়ে দেখলে দুর্ভিক্ষের সময়ের লুঠতরাজ ও আনুষাঙ্গিক বিশৃঙ্খলার চিত্র আরো ভালো ভাবে পেতেন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষয়টির ওপর ওঙ্কার গোস্বামীও দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেছেন যে প্রদেশে তাজিয়া মিছিলের সময় একটা উস্কানীমূলক গান অথবা মসজিদের সামনে শুকর শাবক ছেড়ে দিলেই রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়ে যায় সে প্রদেশের লোকজনকে এতখানি জড়ভরত ভাববার নিশ্চয়ই কোন কারন নেই। ১৯৩০ আর ১৯৪০ এর দশকের কোলকাতাতো বটেই ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, রংপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, বরিশালও সাক্ষ্মী আছে এই সব সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কি নৃশংস আর ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। পল গ্রিনো তার বইটিতে অ্যাবি রায়নাল, টি.সি.দাস, ই. কটার প্রমুখদের বক্তব্য উদ্ধৃত করলেও এটা মেনে নিতে পারেননি যে ক্ষুধা মানুষকে হিংস্র করে তুলতে পারে এর পেছনে অদৃষ্টবাদের হাত আছে এটাও তিনি সমর্থন করতে পারেননি। বলেছেন কাউকে আঘাত বা আক্রমন করবার থেকে অনাহারী মানুষের শরীরের অবস্থাই তার প্রধান প্রতিবন্ধকতা। নিস্তেজ শরীরে বিদ্রোহও অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে যে ধাপে এসে এরকম অবস্থার সৃষ্টি হয় তার আগেই ক্ষুধার জ্বালায় মানুষ অনেকখানিই হিংস্র হয়ে উঠতেই পারে। এক্ষেত্রে তা হয়নি।
আপাতদৃষ্টিতে হিসেব মেলেনা।যে জনগোষ্ঠী নিজের জীবন বাঁচাতে মরীয়া উঠতে জানেনা আবার সেই জনগোষ্ঠীই ধর্ম সম্প্রদায়ের মান ইজ্জত নিয়ে উত্তেজিত হয়ে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের গলায় ছুঁরি চালাতেও দ্বিধা করেনা। যে জনগোষ্ঠীর সারল্য, সততা আর কোমলমতির কথা বারংবার উচ্চারিত হয়েছে সেই মানুষ গুলোই অন্য সম্প্রদায়ের নারী, পুরুষ, শিশুকে বাছ বিচারহীন ভাবে হত্যা করতে কুণ্ঠিত হয়নি। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় বাড়িঘর, দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ সহ লুটপাটও কম হয়নি। এই সময় কিন্তু অদৃষ্টবাদ সৃজিত নিস্ক্রিয়তার দেখা পাওয়া যায়নি। এই দু’টো বাস্তবতাই ইতিহাস সমর্থিত, সুতরাং অস্বীকার করার উপায় নেই। সেই জন্যই বলছিলাম হিসেব মেলেনা। কিন্তু যৌক্তিক দৃষ্টিতে ভাবতে গেলে কোথাও হিসেব মিলতেই হবে। না মিললে চলবেনা।
সমাজের অলিখিত কিছু বিধান থাকেই, আর সে বিধান অনুযায়ীই সমাজ তার সদস্যদের আচরন ও মানসিকতাকে গড়েও তোলে। সমাজের টিকে থাকাটা এই বিধান আর তা সদস্যদের মনে কতখানি সুচারু ভাবে প্রোথিত করা হয়েছে তার উপরই নির্ভর করে। পল্লী সমাজই বাংলার সে সময়ের সিংহাভাগ জুড়ে ছিল। কৃষিভিত্তিক উৎপাদন নির্ভর এই সব গ্রামের সমাজ কাঠামো জমিদার বা অধিক আবাদী ভূমির মালিককে ঘিরেই পরিচালিত হতো। ভূমিমালিক শ্রেণী ও ভূমিহীন দুই ধরনের অধিবাসী নিয়েই গ্রামীন সমাজ। এর মধ্যে ভূমিহীন শ্রেনীও আবার দু’ভাগে বিভক্ত। এক শ্রেণীর ভূমি না থাকলেও কৃষিতে বিনিয়োগের জন্য কিছুটা হলেও পুঁজি ছিল যার ফলে এরা অপরের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করতো। আবার অপর ভাগটার সেই পুঁজিটুকুও ছিলনা বলে প্রায়শই তাদের পরের ক্ষেতে কামলা খেটে বা কেবল শ্রমের ওপর নির্ভর করেই চলতে হতো। এই শেষোক্ত ভাগটাই ছিল গ্রামীন সমাজের সিংহভাগ অংশ। একধরনের সামম্তবাদী কাঠামোর মধ্যেই সমাজটাকে সজীব রাখা হতো, আর এজন্য তার সহায়ক সংস্কৃতিও বহমান ছিল। ভূমিমালিক যাতে নির্বিঘ্নে গ্রামের শ্রম শক্তি ব্যবহার করে তাদের ভূমি থেকে ফসল উৎপাদন করে যেতে পারে ব্যবস্থাটা এমনভাবেই গড়ে তোলা হয়েছিল। যে কারনে ধর্মীয় বিভিন্ন আচারের সাথেই লগ্ন হয়েছিল অলিখিত কিছু প্রথামূলক বিধান। যে বিধানে ভূমি মালিক শ্রেণীকে একটা বিশেষ প্রায় দৈব অবস্থান দেওয়া হয়েছিল যাদের অনুগ্রহে ভূমিহীন ও বিত্তহীন শ্রেণী তাদের অন্ন সংস্থান করে। এই শ্রম শক্তিটিই যে কৃষির মূল চালিকা শক্তি এটা ভাবতে দেওয়া হয়নি কখনওই। বরং একটা অনুগ্রহের সংস্কৃতিকে প্রচার ও লালন করা হয়েছিল যাতে জমিদার বা ভূমিমালিক এক বিশাল পরিবারের পিতা বা কর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতো। বাকীরা পোষ্য হিসেবে অনুগ্রহের গ্রাহক মাত্র। এভাবেই একটা বিশাল শ্রেণীকে আনুগত্যের বাধনে বেঁধে ফেলা হয়েছিল। ফলে সংস্কৃতিটার মূল বিষয়টিই হয়ে দাঁড়ায় সমাজের সদস্যদের (ভূমিহীন ও বিত্তহীন) মোটামুটি শাসক শ্রেণীর কাছে অনুগত থাকতে হবে। যে কোন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেই যেন এই ব্যবস্থাটা বিচলিত না হয়ে ওঠে সে জন্যই সংস্কৃতিটা সমাজের অলঙ্ঘনীয় নিয়ম বা বিধানের মত দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এবং এই সংস্কৃতিকে সজীব রাখতে শাসক শ্রেণীও যথেষ্টই সচেষ্ট ও সজাগ থাকতো। গ্রামের পুরোহিত শ্রেণীও এই ব্যবস্থার দেখভালের জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করতো।
এই অনুগ্রহের ব্যবস্থার ভিত্তিতেই বিত্তশালী বা জমিদার পরিবার গুলোয় প্রয়োজনের অতিরিক্ত মানুষকে পোষন করবার প্রথা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। খরার সময় ফসল না হলে বা যে সময়টায় কৃষিকাজ বন্ধ থাকে সে সময়ে কৃষিতে নিযুক্ত শ্রমিককেও এই ব্যবস্থার মাধ্যমেই প্রতিপালন করা হতো। দুর্ভিক্ষের আগের যুগে যে সোনার বাংলার অস্তিত্ব ছিল বলে সাধারন মানুষের বক্তব্য এবং পরে যে সোনার বাংলা আর ছিলনা বলে আক্ষেপ তার পেছনেও কাজ করছিল এই ব্যবস্থাটারই স্মৃতি। এমন ছিলনা সোনার বাংলা যুগে সবারই নিজস্ব জমি ছিল এবং সবাই অর্থনৈতিক সাচ্ছন্দ্য নিয়েই জীবন যাপন করতো। গোলাভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ অবশ্য ছিলই কিন্তু তার মালিকানা গ্রামের সিংহভাগ অধিবাসীরই হাতে ছিলনা। যা ছিল তা অনুগ্রহের অধিকার। আনুগত্যের হেরফের ঘটলে তা থেকে বঞ্চিতও হতে হতো। তাই অলিখিত গ্রামীন সামাজিক বিধি-বিধান গুলোয় এই আনুগত্যকে প্রতিষ্ঠা রাখার সব সময়ই সজ্ঞান একটা প্রচেষ্টা ছিল। ভূমিমালিক শ্রেণীকে অন্নদাতার অবস্থানে রেখে শ্রদ্ধা ও সম্মানের বিষয়টিও ছিল সামাজিক শিক্ষারই অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই আনুগত্যকে ঠিক রাখতে পারলে দৈনন্দিন গ্রাসাচ্ছদনের আর চিন্তা থাকতোনা। উর্বর ভূমির কারনে, এবং বাংলার প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক সুবিধার করনেই খরার চেয়ে বন্যার প্রকোপই ছিল বেশি। ফলে বন্যায় সাময়িকভাবে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা পরবর্তী ফসলের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠতো। পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য থাকতোই আর অনুগ্রহের এই ব্যাবস্থাটার ফলে শ্রেফ অনুগত থাকার বিনিময়েই সক্রিয় শ্রমশক্তির বাইরে অবস্থানকারী সদস্যকেও অভুক্ত থাকতে হতোনা। ফলে এই সমাজের বিধানে শাসক শ্রেণীকে যেমন কখনওই অশ্রদ্ধা, অবজ্ঞা করা যাবেনা তেমনি কোন অবস্থাতেই তাদের প্রতিকুলতা বা প্রতিবাদ, প্রতিরোধের মত কোন উদ্যোগকেও পরিহার করে চলতে হবে। গ্রামীন সমাজের সদস্যরা এই শিক্ষা নিয়েই বড় হয়ে উঠতো এবং ধর্মীয় আচারের মত এর প্রভাবেই তাদের মানসিক গঠনও নির্ধারিত হতো। এদের চিন্তা ধারায় এবং মননেও এই বিধান প্রচলিত সংস্কৃতির দ্বারাই দৃঢ়ভাবে প্রোথিত হয়ে যেত। উদ্যোগ বা শ্রম নয় আনুগত্যই অনুগ্রহ লাভের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা আর অনুগ্রহ ভিন্ন কেউই স্বাধীনভাবে কিছু করবার বা পাবার ক্ষমতা রাখেনা – এই সত্যটাই তাদের মনে আমূল গাঁথা থাকতো। কোন কারনে শাসক শ্রেণীর প্রতি উদ্ধত বা অশ্রদ্ধামূলক আচরনের জন্য সাময়িকভাবে অনুগ্রহের ধারা বন্ধ থাকলেও পরবর্তী আচরনের মাধ্যমে তার প্রতিবিধান করে আবার সে অনুগ্রহ পাওয়াও অসম্ভব ছিলনা। ফলে সাময়িক দুঃখ কষ্টের সময় ও কঠোর বঞ্চনার মুখোমুখি হলেও গ্রাম সমাজের সদস্যদের ধৈর্য্য ধরে অনুগ্রহের জন্য অপেক্ষা করাই একমাত্র কর্তব্য হিসেবে ধরা হতো।
১৯৪৩-৪৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে গ্রাম থেকে শহরে আসা দুর্ভিক্ষ পীড়িত দুস্থদের আচরনে এই মানসিকতারই চিত্র আমরা দেখেছি। গ্রামীন সমাজের যে শিক্ষা তাদের মনে অমোচনীয় ভাবে খোদিত করে দেওয়া হয়েছিল তা থেকে সিংহভাগ মানুষই বেরিয়ে আসতে পারেননি। দুর্ভিক্ষের প্রচণ্ডতার কারনেই অনেক ক্ষেত্রেই সামন্ত শাসক ও ভূমিমালিকদের অন্নদাতার দৈব ভূমিকাটি আর রক্ষা করে চলা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকারের উদ্বেগ ও বিভিন্ন হঠকারী অদূরদর্শী পদক্ষেপ, সেই সঙ্গে প্রদেশের চালের বাজারে বিশৃঙ্খলা, মুনাফা হাতছাড়া হবার আশঙ্কায় চাল ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া পুরো পরিস্থিতিকেই এতখানি সঙ্গীন করে তুলেছিল যে এসময় সামন্ত কাঠামোর গ্রামীন সমাজের মাথারা আর পোষ্যদের সামনে অন্নদাতা হয়ে দাঁড়াতে পারলেননা। ফলে সাধারন মানুষ গুলো অসহায় ও দিশেহারা হয়ে পড়ে। খাদ্যের অভাবে নিজের ভিটেমাটি, নিজের গ্রাম ছেড়ে সহায় সম্বলহীন মানুষ গুলোকে ভিক্ষার জন্য ভিড় করতে হয়েছে শহরে। দেখতে হয়েছে আশে পাশে কেবলই মৃত্যুর হানা। পরিবার পরিজনদের মায়া কাটিয়ে অনেকেই নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল। কোলের সন্তানকে, স্ত্রীকে পর্যন্ত ত্যাগ করে যাচ্ছিল তারা। কিন্তু কোন অবস্থাতেই ক্ষমতাবান শ্রেণীর বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠার মত পর্যাপ্ত জ্বালানী তাদের মনে ছিলনা। তাদের মনে তখনও সক্রিয় ছিল সেই গ্রামীন সামাজিক শিক্ষার ধারা। যেখানে সক্রিয় উদ্যোগ নয় অনুগ্রহের জন্য বিনীত হয়ে অপেক্ষাই বরাবর প্রশংসতি হয়েছে এবং এটাকেই একমাত্র উচিত কাজ বলে তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে এসেছে। বর্তমান দুর্বিপাককে সেই শিক্ষার প্রভাবেই অদৃষ্টের লিখন বলেই স্বীকার করে নিয়ে অপেক্ষা করেছে সেই অনুগ্রহের যার ছোঁয়ায় আবার সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এই অপেক্ষাও একদিন অবশ্য শেষ হয়েছিল কিন্তু বহু মানুষের জন্য তখন অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল। অন্ততঃ ৩৮ লাখ লোক এই অপেক্ষা নিয়েই মৃত্যু বরন করেছিল তাদের জন্য কোন অনুগ্রহ আসেনি। শস্য ভর্তি দোকানের সামনের রাস্তায় অনাহারে মানুষ মৃত্যু বরন করছিল কিন্তু দোকানটা সমবেত হয়ে লুঠ করবার কথা ভাবেনি। চাল ব্যবসায়ী, জোতদার, জমিদারদের ও সরকারী গুদামের মজুতের দিকেও সে হারে উল্লেখ করার মত আক্রমন চালানো হয়নি। সামাজিক শিক্ষায় জীবনের কঠোর অবস্থাটা অদৃষ্টের অলঙ্ঘনীয় লিখন বলেই কি তারা মেনে নিয়েছিল? সেই অলঙ্ঘনীয় বিধানে আঘাত করা সম্ভব সেটা ভেবে দেখার মত মানসিক স্বাধীনতা টুকুও কি তাদের ছিলনা? এই দুর্ভিক্ষের সমসাময়িক কালেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা ইউনিভার্সিটির প্রাঙ্গনে চলছিল এরই উত্তর খোঁজার পালা। তারা ঠিক বাংলার দুর্ভিক্ষ নিয়ে হয়তো ভাবছিলেননা, কিন্তু বিশ্বযুদ্ধ ইউরোপের অসংখ্য মানুষকেও তখন ঠেলে দিচ্ছিল মৃত্যুর দিকে। কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের হাজার হাজার বন্দিরাও অনাহারে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছিল।
তথ্যসূত্র ও সহায়ক গ্রন্থ :
1. Prosperity And Misery in Modern Bengal : The Famine of 1943-1944
Paul R. Greenough. Oxford University Press. 1982. New York, Oxford.
2. T.C. Das : Bengal Famine (1943)
3. Testimony of Lt. Col. E. Cotter, IMS, Public Health Commissioner, Government of India, Nanavati Papers.
4. Jnananjan Niyogi : Memorandum of the Calcutta Relief Committee, Nanavati Papers.
5. Abbé Guillaume Raynal, A Philosophical and Political History of the Settlement and Trade of the Europeans in the East and West Indies (1798), trans. J. Justamond, 2nd ed. New York. Negro Universities Press, 1969. 1: 437-38. While dacoits and bands or raiders were a menace during and after the 1770 famine, there is no evidence that peasants engaged in retaliatory violence against landlords nor in rebellion against officers of government.
6. Bhowani Sen : Rural Bengal in Ruins
(দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্ত)
মন্তব্য
অদৃষ্টবাদ এবং গ্রামাঞ্চলের প্যাটরন-ক্লায়েন্ট সংস্কৃতির প্রভাবে দুর্ভিক্ষপীড়িত জনগণ রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হতে পারেনি - এই প্রেমিসের ভিত্তিতে কি বাংলায় বিভিন্ন সময়ে যে কৃষক বিদ্রোহ হয়েছে, সেগুলিকে ব্যাখ্যা করা যায়? এই জনগণকে সংগঠিত করার জন্য সেই সময় কোন রাজনৈতিক দল সক্রিয় ছিল কি? কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে হয়ত সম্ভব ছিল; কিন্তু ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র বিধায় তারা ব্রিটিশ সরকারের বিরোধিতা করেনি। আশা করি পরের পর্বে আপনি রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা আলোচনা করবেন।
রাজনীতির খুব বেশি হয়তো গভীরে যাওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। নিশ্চয় জানিও কম। একটা জিজ্ঞাসা থেকেই লেখাটার উৎপত্তি। আশায় আছি যা লিখলাম তার চেয়ে বেশি আপনাদের কাছ থেকেই জানবো। লেখাটা পড়েছেন বলে অসংখ্য ধন্যবাদ।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
বেশ তথ্যসমৃদ্ধ লেখা! চমৎকার এবং সুপাঠ্য
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
ধন্যবাদ ঈয়াসীন ভাই
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
বাংলার দুর্ভিক্ষ নিয়ে অমর্ত্য সেনের বইটা ছাড়া আর কিছুই পড়া হয়নি। অবশ্য বাজারের ফর্দ আর মাস শেষের বিলগুলো বাদ দিলে কীই বা এমন পড়েছি জীবনে! ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলি। ধর্মীয় দাঙ্গা আর চর দখলের ফ্যাসাদ, আমার মতে, ক্ষমতাবান লোকেদের উৎসাহ থেকেই শুরু হয়, অন্তত বাংলায়। আর আন্দোলন-সংগ্রামের উৎপত্তি মধ্যবিত্তের বঞ্চনা এবং বহুদিনের জমানো ক্ষোভ থেকে, যেমন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। এর বাইরে নীল আন্দোলন ছাড়া নিম্নবিত্তের অভ্যুথ্যান আর কোথায়? নীল আন্দোলন যে আবার কেবল নিম্নবিত্তেরই তা বলি কী করে? কত সচ্ছল কৃষকের জমিই তো গিয়েছিলো নীলের থাবায়।
আপনার লেখাটি জমতে জমতে কেমন যেন খেই হারিয়ে ফেললো! বেশ একটা চরিত্র দাঁড়াচ্ছিল, কিন্তু শেষটায় খানিকটা তথ্য এবং কয়েকটি প্রশ্ন ছাড়া খুব একটা কিছু পেলাম না সোহেল ইমাম। সম্ভবত বেশ বড়সড় একটা কাজের খসড়া এটি। প্রতীক্ষায় রইলাম।
---মোখলেস হোসেন।
ধন্যবাদ মোখলেস ভাই। এইটা প্রথম অংশ, দ্বিতীয় অংশেই শেষ। আমি এই দুর্ভিক্ষের একটু অন্য দিকটা নিয়ে একটু ভাবতে চাইছিলাম। আশা করি দ্বিতীয় পর্বটা পড়ে আমার জিজ্ঞাসায় আপনিও অনেকখানি আলোকপাত করতে পারবেন।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
"জীবন বাঁচাতে মরীয়া হয়ে উঠতে জানে না", এই কথাটি বোধ হয় পুরোপুরি সঠিক নয়। জীবনের প্রয়োজনে ব্রিটিশ আমলেই বাংলায় অনেকগুলো প্রাণঘাতী কৃষক আন্দোলন হয়েছে, শ্রমিক আন্দোলনও কম হয় নি। কিন্তু দুর্ভিক্ষের ব্যাপারটা বোধ হয় একটু অন্য রকম। বহু যুগ ধরেই মানুষ এর সঙ্গে পরিচিত, এবং সভ্যতার শুরু থেকেই এর দায় নিয়তির। তবু ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে মানুষ ডাকাতি করে বাঁচার চেষ্টা করেছে(বঙ্কিমের আনন্দমঠ দ্রষ্টব্য), কিন্তু পঞ্চাশের মন্বন্তরে সে প্রচেষ্টাও তেমন একটা দেখা যায় নি। ডাকাতি কিংবা ছিনিয়ে না নিয়েও বিভিন্ন বিকল্প উপায় অনুসন্ধান করা যেত, যেমন অপ্রচলিত খাবারের সন্ধান করা। বাংলায় গরু ছাগল কুকুর বিড়াল শিয়াল সাপ গুইসাপ ব্যাঙ পোকা মাকড় যথেষ্টই ছিল, সে আমলে বন জঙ্গলও অনেক ছিল এবং সেখানে জংলা ফল মুলেরও প্রাপ্তি না থাকার কথা নয়। কিন্তু এসব উদ্যোগের জন্য যে উদ্যমের প্রয়োজন, সেটারই ছিল অভাব। সম্ভবত দীর্ঘদিনের পরাধীনতায় বাঙ্গালীর অন্তর্নিহিত উদ্ভাবনী শক্তিটার অপমৃত্যু ঘটেছিল।
আর অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের গলায় ছুরি চালানোর মানুষেরা ভিন্ন গোত্রের, তারা বাংলার সাধারন জনতা নয়। দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে এই ধরনের মানুষ উৎপাদন করতে হয়।
ঠিকই বলেছেন গলায় ছুঁরি চালানো মানুষ গুলো ভিন্ন প্রকৃতির। এইখানে সরলীকরন করা হয়ে গেছে বোধহয়। আসলে সামাজিক অনুশাসন আর সংস্কৃতির মাধ্যমে মেনে নেবার মানসিকতাকে পুষ্টি দেওয়া হচ্ছে কিনা এটাই খুঁজে বের করার একটা প্রয়াস, এই জন্যই লেখাটা। বিপরীত ধারার ভাবনা আরো ভালোভাবে আলোকপাত করুক এই আশায় লেখাটা। পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ আব্দুল্লাহ ভাই।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
ভালো লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
সাইয়িদ রফিকুল হক
আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগছে। লেখাটা পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
মিতা চার্বাক
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
নতুন মন্তব্য করুন