হত্যার প্রতিশোধের মতই মৃতের জন্য শোক প্রকাশ করাটাও আদিবাসীরা খুব জরুরি বলে মনে করে। অসুস্থ হবার সময় থেকে শুরু করে মৃত্যুর পর তার জন্য যথেষ্ট শোক প্রকাশ করা না হলে মৃতের আত্মা ভাবে তার আত্মীয় স্বজন তাকে যথেষ্ট ভালোবাসতোনা সুতরাং ক্ষুব্ধ আত্মা তখন তার জীবিত আত্মীয়-স্বজনদের জীবনে নানান ধরণের দুর্বিপাকের সৃষ্টি করে। অসুখ বিসুখে শিশুরা মারা যায়, পর্যাপ্ত শিকার মেলেনা, মাছধরায় ভাগ্য মন্দ যায়। সুতরাং কারো মৃত্যু হলোতো বটেই এমনকি মৃত্যুর আগেও মরনাপন্ন মানুষটিকে দেখতে আসাটা আশেপাশের সবার জন্য অবশ্য কর্তব্য হয়ে যায়। আমাদের সময়েও অসুস্থ মানুষকে দেখতে যাওয়া, মরনাপন্ন মানুষের কাছে শেষ দেখা করে ক্ষমা চেয়ে আসার প্রথাটা কিন্তু এখনও রয়েই গেছে। আদিবাসীদের মধ্যে মৃত আত্মার ক্রোধ ছাড়াও শোক প্রকাশে সবাই অতি আগ্রহী হয়ে ওঠে আরেকটা কারণে আর তা হলো কেউ যাতে ভেবে না বসে যে এই মৃত্যুটার পেছনে তাদের কোন হাত আছে। বিশেষতঃ বেশির ভাগ মৃত্যুই যেহেতু যাদুবিদ্যা বা মন্ত্র-তন্ত্রের সাহায্যে সংঘটিত হয় বলে তাদের ধারণা সুতরাং যে কাউকেই সন্দেহ হলেই হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে ফেলা যায়। আর তাই কোন মৃত্যু মাত্রই শোকাবেগ যে মাত্রাতেই অনুভূত হোক শোক প্রকাশে কোন ধরণের কার্পণ্য দেখানোরই সুযোগ নেই।
অস্ট্রেলিয়ার একটি আদিবাসী পরিবার
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার নারিনিয়েরি ট্রাইবের লোকেরা মৃতের জন্য শোক প্রকাশের সময় মাথার চুল কেটে ফেলে, সারা শরীরের তেল আর গুড়ো কয়লা মাখে। মেয়েরা ধুলোবালি আর রাজ্যের যত ময়লা শরীরের মেখে উচ্চস্বরে বিলাপ করতে থাকে। মৃতদেহকে সামনে রেখে এভাবে বিলাপ করবার সময় অনেকে নিজের শরীরে আঘাত করতে থাকে, ক্ষতও তৈরী করে ফেলে অনেকে। শরীরের এখানে ওখানে কেটে রক্তপাতের মাধ্যমে শোক জানায় তারা। এই শোকের প্রকাশ যতনা মৃতের প্রতি সমবেদনায় তার চেয়ে বেশি মৃতের বিদেহী আত্মাকে সন্তুষ্ট করার প্রয়াসেই করা হয়। অনেক সময়ই দেখা যায় মৃতের কোন স্ত্রী উচ্চস্বরে বিলাপ করতে করতে মাটিতে গড়াগড়ি খাবার কিছুক্ষণ পরই সেখান থেকে উঠে অন্য কোথাও বসে বেশ খোশ মেজাজে কোন আত্মীয়ার সাথে গল্প গুজবে মেতে গেছে। এই প্রচেষ্টাটা সবার মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। সবাই তটস্থ থাকে যেন মৃতের আত্মা এমনটা মনে না করে যে তার মৃত্যুতে তার সমাজের কোন একজন মোটেও দুঃখ পায়নি। ফলে সবাই প্রকট ভাবেই তাদের শোক প্রকাশ করে (ফ্রেজার-ক: ১৩৫)।
অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মধ্যে মৃতের জন্য শোক প্রকাশের ধরণকে এক ধরণের উন্মত্ততা বললেও কম বলা হয়। ভিক্টোরিয়ার আদিবাসী মহিলারা তাদের মৃত স্বামীর জন্য শোক প্রকাশ করার সময় বিলাপ করতে করতেই জ্বলন্ত কাঠের টুকরো নিয়ে নিজের শরীরের একাধিক স্থানেই ঠেসে ধরে, মাটিতে গড়াগড়ি খায়, চুলা থেকে ছাই নিয়ে উন্মত্তের মত মুখে মাখে। ভিক্টোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাংশের কুর্নাইদের মধ্যে দেখা যায় ধারালো পাথরের টুকরো কখনও টমাহক (পাথরের হাত-কুড়াল) দিয়ে দেহের এখানে ওখানে কেটে রক্ত ঝরিয়ে শোক প্রকাশ করে। মুকজারাউইন্ট ট্রাইবের লোকেরাও একই ভাবে শোকপ্রকাশ করে। নিজ শরীরে মৃতের সম্মানে ক্ষত তৈরী করা, রক্তপাত করা চলতে থাকে সপ্তাহ ব্যাপি। মারে ও ডার্লিং নদীর আদিবাসিরাও শোক প্রকাশের উদ্দেশ্যে হাতে, পিঠে এমনকি মুখেও এভাবে ক্ষত সৃষ্টি করে। মেয়েরা শামুকের খোল, চকমকি পাথরের ধারালো টুকরো দিয়ে হাতে, উরুতে পোঁচ দেয়। কুইন্সল্যান্ডের মেয়েরাও কাঁচের টুকরো দিয়ে উরুর বাইরে এবং ভেতরের অংশে গভীর ক্ষত তৈরী করে শোকের মাতম করে। অরুন্টা ট্রাইবের মধ্যে শ্বশুরের মৃত্যুতে জামাইকে অবশ্যই কম করে হলেও কাঁধে কিছু ক্ষত তৈরী করতেই হবে। এটা না করলে সামাজিক ভাবেই তাকে নিন্দার মুখে পড়তে হবে। অরুন্টা ট্রাইবের অনেকের কাঁধের কাছেই এই রকম শুকিয়ে যাওয়া কাটা দাগের বহর দেখে বোঝা যায় এরা শ্বশুরের মৃত্যুতে এভাবেই শোক প্রকাশ করেছিলো (ফ্রেজার-ক: ১৫৪-১৫৫)।
সেন্ট্রাল অস্ট্রেলিয়ার ওয়ারামুঙ্গা ট্রাইবে এই ভয়ঙ্কর শোক প্রকাশের উন্মত্ত মাতম কিন্তু শুরু হয়ে যায় মুমূর্ষুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগেই। যখনই এরা নিশ্চিত হয় লোকটা মারা যাচ্ছে তখন থেকেই বাড়ির মেয়ে মহলের সবটা অংশই উচ্চস্বরে বিলাপের সাথে সাথেই মুমূর্ষু শরীরটার উপর আছড়ে পড়ে কাঁদতে থাকে। আশেপাশের মহিলারাও সেই বিলাপে অংশ নেয় আর তাদের মিষ্টিআলু খুঁড়ে তোলার ছোট লাঠিটার তীক্ষ্ণ দিকটা দিয়ে কপালের পাশে আঘাত করতে করতে নিজেদের রক্তাক্ত করে। সম্প্রদায়ের পুরুষরাও খবর পাওয়া মাত্রই ছুটে আসে এবং তারাও সবাই সেই মরমর লোকটার শরীরের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। অবস্থা এমন হয় যে মুমূর্ষু লোকটাকে আর দেখা যায়না এক দঙ্গল উপুড় হয়ে পড়া অসংখ্য শরীরের তালগোল পাকানো ঢিবিটা দেখলে কেউ বলবেনা এর তলে একটা অসুস্থ মানুষ রয়েছে যে কিনা মারা যেতে বসেছে। কিন্তু উপায় নেই, আত্মীয় পরিজন থেকে শুরু করে সামাজিক বন্ধুবান্ধবদের এই মৃত্যু মুহূর্তে আসতেই হবে এবং শোক প্রকাশের প্রচণ্ডতা অবশ্যই প্রকটভাবে প্রদর্শন করতেই হবে। এটা এই জন্য জরুরী যে মরনাপন্ন লোকটি যেন জানতে পারে তার মৃত্যুর সম্ভাবনা জানতে পেরে তার বন্ধু-বান্ধবেরা যথার্থ অর্থেই দুঃখিত, ব্যথিত হয়েছে নইলে মৃত্যুর পর তার বিদেহী আত্মা ভুত হয়ে তাদের জীবনেই অনর্থ নিয়ে আসবে যারা তার মৃত্যুর সময় ভালো মত শোক প্রকাশ করেনি। ওয়ারামুঙ্গা ট্রাইবেতো বটেই অস্ট্রেলিয়া ও তার আশে পাশের অসংখ্য দ্বীপপুঞ্জের আরো অনেক জন সম্প্রদায়ের মধ্যেই এই বিশ্বাস যে অশান্তচিত্ত বিদেহী আত্মারা তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ে যখন দেখা দিতে শুরু করে তখন ঘরে ঘরে অসুখ-বিসুখ, গাছে ফলের আকাল, শিকারের অভাব প্রভৃতি দেখা দেয়। আর সে কারণেই মরনাপন্ন লোককেতো বটেই, মৃত আত্মাও মৃত্যুর পর যতক্ষণ আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে ততক্ষণ তার আত্মীয় স্বজন শোক প্রকাশের মাতমে কোন ত্রুটি রাখতে চায়না। মৃত্যুর কয় মুহূর্ত আগে এবং পরেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজেদের শরীর ফালাফালা করে চিরে রক্ত ঝরানো, পাথরের বা গাছের ডালের মুগুর দিয়ে পরস্পরের মাথা ফাটিয়ে শোক প্রকাশ করে তারা জানাতে চায় মৃতের এই বিদায় তাদের কতখানি বিহ্বল করেছে, কতখানি উন্মত্ত করে দিয়েছে। অবশেষে বিলাপ এবং এই প্রচণ্ড ধাঁচের শোক প্রকাশ করতে করতে কোন মাচার ওপর কিংবা কোন গাছের শাখার ওপর লাশটা গাছের বাকলে জড়িয়ে রেখে দেওয়া হয়। এরকম গাছ-দাফন অনেক ট্রাইবের মধ্যেই প্রচলিত। এই আত্যন্তিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর যদি ওয়ারামুঙ্গাদের গ্রামে যাওয়া যায় তাহলে দেখা যাবে দুদিন আগে যেখানে তাদের বসতি ছিলো সেখানটা বিরান পড়ে আছে। আর কেউই সেখানে বাস করেনা। তারা তাদের গোটা গ্রামটাই তুলে অন্য জায়গায় নিয়ে ফের বসত পেতেছে। কারণটা হলো সদ্য মৃতের বিদেহী আত্মাটা যেন ফিরে এসে তার আত্মীয় পরিজনের জীবনে বিপর্যয় না সৃষ্টি করতে পারে। অন্য ট্রাইবের মতই তারাও বিদেহী আত্মা সম্পর্কে এক ধরণের আতঙ্ক বোধ করে। বিশেষ করে সদ্যমৃত আত্মাদের অশুভ শক্তি সম্পর্কে তারা ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল (ফ্রেজার-ক: ১৫৬-১৫৭)।
সেন্ট্রাল অস্ট্রেলিয়ার কাইটিশ সম্প্রদায়ের লোক মনে করে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী যদি সব সময়ের জন্য চুলোর ছাই সারা গায়ে না মেখে থাকে তবে তার মৃত স্বামীর আত্মা সর্বক্ষণ তার পিছু নেবে, তাকে হত্যা করবে এমনকি নৃশংসভাবে মেয়েটির শরীর থেকে মাংস পর্যন্ত খুলে নেবে। অরুন্টারাও এভাবে সারা দেহে সাদাছাই মেখে মৃত আত্মাকে জানাতে চায় তার মৃত্যুতে তারা যথার্থই শোকাভিভূত হয়ে আছে (ফ্রেজার-ক: ১৫৮)। নিউগিনির হুড উপদ্বীপের আদিবাসীরা মনে করে ভালো আত্মাও কিছু আছে তবে ক্ষতিকারক আত্মার প্রাধান্য যে বেশি তাতে তাদের বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। অসুস্থতা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মৃত্যুও নিয়ে আসে এই আত্মা গুলো। বিদেহী আত্মাদের এই জন্যই ভয়ের চোখেই দেখা হয়। জীবিত আত্মীয় স্বজনের জীবনে অশান্তি আনতে এদের জুড়ি নেই। যে কোন মৃত্যুকে এরা ভাবে হয় কোন বিদেহী আত্মার কারসাজি কিংবা কোন শামানের মন্ত্র-তন্ত্রের কাজ। কারো মৃত্যুর সময় তাই সব আত্মীয় স্বজন ভিড় করে আসে তারে সাথে দেখা করার জন্য। মৃত্যুর পর যাতে এই লোকটার আত্মা যেন ভেবে না বসে যে তার মৃত্যুতে বা অসুস্থতার সময়ে যথাযোগ্য সহানুভূতি কেউ দেখায়নি। কেননা এরকম সময়ে দেখা না করার মানে সদ্যমৃত আত্মার শত্রুতা অর্জন করে বসা। আর এর ফল হবে সীমাহীন দুর্ভোগ। মৃত্যুর পর শোক প্রকাশের মত্ততা যেমন আবশ্যক তেমনি আবশ্যক মৃত্যুর পূর্বেই মুমূর্ষুর সাথে দু’টো সহানুভূতির কথা বলে আসা (ফ্রেজার-ক: ২০৩)।
এই এতো শোক প্রকাশের ঘটা করেও কখনও কখনও সদ্যমৃতের আত্মাকে তার বাড়ির আশপাশ থেকে, তার গ্রাম থেকে, পরিচিত লোকালয় থেকে সরানো যায়না। ভুতটা নাছোড়বান্দা হয়ে থেকেই যায়। আর এটা বোঝা যায় যখন কোন মৃত্যুর পর পরই একটু বেশি হারেই শিশুরা অসুখে পড়ে, শিকার মেলেনা অন্য আরো সব ঝামেলা দেখা দেয়। ফলে মৃতের আত্মীয় স্বজনকে তখন একটু কঠোরই হতে হয়।
উত্তর অস্ট্রেলিয়ার মেলভিল দ্বীপের আদিবাসীরা কারো মৃত্যুর পর পরই বর্শা, লাঠি-সোটা নিয়ে বাতাসে অদৃশ্য আত্মাকে তাড়া করতে করতে কবর পর্যন্ত গিয়ে ক্ষান্ত হয়। মনে করা হয় মৃতের আত্মা তার নিজ আবাসের কাছেই ঘুর ঘুর করে এবং সেখান থেকে যেতে চায়না। তাই এই আদিবাসীরা আত্মাকে রীতিমত তাড়া করে কবর পর্যন্ত নিয়ে যায় ও সেখানেই রেখে আসে। সেন্ট্রাল অস্ট্রেলিয়ার অরুন্টারা বিশ্বাস করে মৃতকে কবর দেবার পরও একবছর থেকে আঠারো মাস পর্যন্ত বিদেহী আত্মাটা তার পরিচিত লোকালয়েই ঘোরাঘুরি করতে পছন্ত করে। কিন্তু এই সময়টা পার হলে অরুন্টা ট্রাইবের মানুষেরা ভাবে এভাবে জীবিতদের মাঝে ঘোরাঘুরি না করে এখন তার কবরে স্থায়ী ভাবে বাস করার সময় হয়েছে। প্রথমে নারী-পুরুষ এক জায়গায় জড়ো হয়ে নাচ গানের আসর বসায় তারপর অদৃশ্য আত্মাটা সেখানে এই উৎসবে সামিল হতে উপস্থিত হলে সকলে একসাথে চিৎকার করতে করতে বর্শা আর লাঠি-সোটা দিয়ে বাতাসে আঘাত করতে থাকে। আর এভাবেই অদৃশ্য আত্মাটাকে তারা তাড়িয়ে নিয়ে চলে কবর পর্যন্ত। তারপর অনেকটা বাতাস করার ভঙ্গিতে আত্মাটাকে কবরে নামিয়ে সেই কবরের মাটির ওপর দাপাদাপি করে তাকে সেখানেই চিরস্থায়ী ভাবে গেঁথে ফেলে যাতে সে আবার লোকালয়ে ফিরে না আসে। নিউসাউথওয়েলসের কামিলারয় ট্রাইবেও এভাবেই মৃতের আত্মাকে লোকালয় থেকে বিদায় দেওয়া হয়।ব্যাঙ্কস আইল্যান্ডের আদিবাসিরাও মনে করে মৃতের আত্মা দশ দিনের বেশি লোকালয়ে থাকা ঠিক না। তারাও এভাবেই বিদেহী আত্মাকে বাধ্য করে লোকালয় ত্যাগ করতে ( ফ্রেজার-খ: ৬-৭)।
প্রশান্ত মহাসাগরের গিলবার্ট আইল্যান্ডে কেউ মারা গেলে কান্না আর বিলাপের রোল ওঠে সে বাড়ি ঘিরে। শোকের মাতম চলে তিন দিন ধরে। কিন্তু তৃতীয় দিনটা পেরিয়ে গেলেই সবাই সারিবদ্ধ ভাবে পাশাপাশি চলতে শুরু করে উত্তর দিক লক্ষ্য করে। সবার হাতেই থাকে লাঠি বা কাঠের টুকরো জাতীয় কিছু। কেউ পানদানুস গাছের মোটা ডাল কিংবা কাঠের টুকরো নেয়, কারো হাতে আবার দেখা যায় নারকেল গাছের শাখার গোড়ার দিকের মোটা টুকরো। এই দিয়েই তারা এক সাথে মাটিতে, আশেপাশের ঝোপঝাড়ে, ছোট গাছ গুলোয় বাড়ি মারতে মারতে একসঙ্গে এগোতে থাকে। এই অনুষ্ঠানটার নাম বো-মাকি। এর মাধ্যমেই মৃতের আত্মাকে লোকালয় থেকে বের করে দেয়া হয়। আত্মাটা অবশ্য নাছোড়বান্দার মত দেহটাকে আঁকড়ে থাকতে চায় কিন্তু তাকে বিদায় করাটা এদের কাছে অত্যন্ত জরুরি। আর এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অন্য বদ আত্মাকেও বিতাড়িত করা হয় যারা কিনা মৃতদেহ দেখে প্রলুব্ধ হয়ে চলে আসে সেই শূণ্য দেহটা এই সুযোগে দখল করতে। এই দ্বীপেরই অন্য আদিবাসিদের মধ্যে আবার দেখা যায় অন্তত তিন তিনবার বো-মাকি পালনের পর চতুর্থ দিন মৃতদেহকে কবরস্থ করা হয় (ফ্রেজার-খ: ১২)।
সলোমন আইল্যান্ডের সানক্রিস্টোভালে যখন কোন মৃতকে সমাহিত করা হচ্ছে তখন একজন মৃতের বাড়ি গিয়ে তার আত্মাকে ধরার চেষ্টা করে। মনে করা হয় মৃতের আত্মা নিজের বাড়ি ছেড়ে স্বভাবতই নড়তে চায়না সুতরাং তাকে ধরার জন্য বিচিত্র এক পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়। মাছ ধরার ছিপে শুপারি ঝুলিয়ে লোকটা মৃতের বাড়ি থেকে তার আত্মাকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ পরই শুপারির লোভে আত্মাটা শুপারির সাথে আটকে গেলে শুপারি সহ সেই অদৃশ্য আত্মাটাকে একটা থলেতে ভরে ফেলা হয়। তারপর সেই থলেটা নিয়ে গিয়ে মৃতদেহের সাথেই সমাহিত করা হয়। আত্মাকে এভাবেই তার দেহাবশেষের সাথেই তার বাড়ি থেকে সরিয়ে আনা হয় (ফ্রেজার-খ: ৯)।
প্রশান্ত মহাসাগরের মারকুয়েসাস আইল্যান্ডস এর আদিবাসীদের ধারণা মৃত্যুর পরও দুই দিন যাবত আত্মাটা মৃতদেহের সাথেই লেগে থাকে। তৃতীয় দিন পুরোহিত মৃতের বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে মৃত আত্মাকে তার মরদেহ এবং বাড়িটাও পরিত্যাগ করে বেরিয়ে আসার জন্য অনুনয় করতে থাকে। আর এই অনুনয়কে আরো জোরদার করার জন্যই একদল লোক বর্শা, মুগুর প্রভৃতি অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে বাড়িটার ভেতর ঢুকে চিৎকারের সাথে সাথে দেয়ালে, মাটিতে, খড়ের চালে বাড়ি মেরে তুমুল গোলমালের সৃষ্টি করে। এই গোলমালের এক পর্যায়ে যখন আশেপাশের কুকুর গুলো পর্যন্ত চিৎকার শুরু করে তখন পুরোহিত ঘোষণা করে আত্মাটা মরদেহ আর বাড়িটা পরিত্যাগ করে অবশেষে বেরিয়ে এসেছে (ফ্রেজার-খ: ১১-১২)।
ব্রিটিশ নিউগিনির পুরারি ব-দ্বীপের আদিবাসীরা মৃতদেহের ওপর নারকেল গাছের শাখা মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে দুলিয়ে মরদেহর কাছ থেকে আত্মাকে সরিয়ে তবেই দাফনের জন্য লাশটা বাড়ি থেকে বের করে। ব্রিটিশ নিউগিনির হুডবে আর পোর্ট মরেসবিতে কেউ মারা গেলে ধারণা করা হয় মৃতব্যক্তির আত্মাকে সাথে নিয়ে যেতে বহু বিদেহী আত্মা গ্রামে এসে হাজির হয়। এরা শুধু মৃতব্যক্তির আত্মাই নয় অনেক সময় জীবিত ব্যক্তির আত্মাও ছিনতাই করার তালে থাকে। একারণেই কারো মৃত্যু হলে গাঁয়ের ছেলেরা সারা রাত জোরে জোরে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে খারাপ আত্মা গুলোকে দুরে রাখার চেষ্টা করে। পরে সবাই একসাথে লাঠি-সোটা নিয়ে মাটিতে, ঝোপঝাড়ে একসাথে বাড়ি মারতে মারতে মৃতব্যক্তির আত্মাকে গ্রাম ছাড়া করে (ফ্রেজার-খ: ১৪)।
ব্রিটিশ নিউগিনির রোরো ভাষী আদিবাসীদের কেউ মারা গেলে বিশেষ গাছের পাতাসহ শাখা গুচ্ছ দিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঝাড়ু দিতে থাকে। এভাবে মৃতের শরীরের সাথে লেগে থাকা আত্মাকে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। ইয়ুল আইল্যান্ডেও এভাবেই বিশেষ পাতার গুচ্ছ দিয়ে লাশের আপাদমাথা ঝাড়ু দেওয়া হয়, সেই একই উদ্দেশ্যে। এইভাবে দেহ থেকে আত্মাকে বিচ্ছিন্ন করেই সবাই চিৎকার গোলযোগ করতে করতে জ্বলন্ত মশাল, লাঠি, বর্শা নিয়ে অদৃশ্য আত্মাকে তাড়া করে গ্রামের প্রান্ত পর্যন্ত ঠেলে নিয়ে যায়। ডাচ নিউগিনির গিলভনিকবের পোপুয়ানরা মৃতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান শেষে এভাবেই মৃতের আত্মাকে গ্রামের বাইরে তাড়িয়ে রেখে আসে (ফ্রেজার-খ: ১৫)।
সাইবেরিয়ার টারকি ট্রাইবের আদিবাসীরা বিশ্বাস করে চল্লিশ দিন পর্যন্ত মৃতের আত্মা তার আত্মীয় পরিজনদের মধ্যেই ঘোরাঘুরি করে। এই চল্লিশ দিন পার হওয়া মাত্র সেই সম্প্রদায়ের শামানদের উপর দায়িত্ব পড়ে সেই দেহহীন আত্মাকে যাদুশক্তির প্রকোপ দেখিয়ে জোর করে মরলোকে পাঠিয়ে দিতে (ফ্রেজার-খ: ১৫-১৬)। এই বিশ্বাসের সাথে আমাদের সময়কার চল্লিশা প্রথাটিরও কোন সম্পর্ক থাকতে পারে বলে মনে হয়।
সুদানের বারি ট্রাইবের আদিবাসীরা তাদের যে ওঝা বা শামান বৃষ্টি নামানোর ক্ষমতা রাখে তার মৃত্যুতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে। মৃত্যুর পর পরই মৃত ওঝার শরীরের সমস্ত ছিদ্র বন্ধ করে দেওয়া হয় যাতে যাদুশক্তি সম্পন্ন বিপজ্জনক ওঝার আত্মাটি কিছুতেই মৃতদেহের বাইরে বেরিয়ে স্বাধীন না হয়ে যেতে পারে। নাকের ফুটো, কানের ফুটো, মুখ, চোখ পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া হয়। মরদেহের শেষকৃত্য পর্যন্ত যেন কোনক্রমেই আত্মাটি মুক্ত হতে না পারে সেদিকে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখা হয় (ফ্রেজার-খ: ১০৯)। আমরাও কিন্তু এভাবেই মৃতের চোখ বুঁজিয়ে দিই, নাকের ফুটোয় তুলো গুঁজে দিই, মুখটা খোলা অবস্থায় থাকলে গামছা বা কোন কিছু দিয়ে চোয়ালটা টেনে বেঁধে মুখটা বন্ধ করার চেষ্টা করি।
গ্রিসের এ্যালিস্ট্রাটির একটা গ্রামের (সেরেস ও ড্রামার মাঝামাঝি স্থানে) অধিবাসীরা যদি বোঝে মৃতদেহ অশান্ত হয়ে উঠছে এবং রাতের বেলা কবর ছেড়ে বেরিয়ে আসছে তাহলে সেই কবরের ওপর মিলেট (এক ধরণের দানা শস্য) ছড়িয়ে দিয়ে আসা হয়। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস আত্মাটি এই মিলেট দেখে একটা একটা করে কুড়াতে থাকবে আর ততক্ষণে সকাল হয়ে যাবে এবং মোরগ ডেকে উঠবে। আর একবার সকালের মোরগ ডেকে উঠলে কিছুতেই কবরের ভেতর ফের নেমে যাওয়া ছাড়া তার আর কোন উপায় থাকবেনা (ফ্রেজার-খ: ৮৭)। এই মিলেট কিন্তু আমাদের মসুরের ডালের দানার মতই ক্ষুদ্রাকার একটা শস্যদানা। কবর দেবার পর পরই সেই নতুন কবরের মাটির ওপর আমরা যে মসুরের ডাল ছড়িয়ে দিয়ে আসি এর পেছনে এরকমই কোন কারণ এক সময় ছিলো কি?
আমার মনে হয় এ সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলবার জন্য আরো তথ্য আরো গবেষণার প্রয়োজন। আমাদের সমাজে এখনও অনেক প্রথা, আচার প্রচলিত আছে যার আধুনিক ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও সে সব ব্যাখ্যা যেন ঠিক মেলেনা। ছোট বেলায় দেখতাম মেয়েরা চিরুনি দিয়ে চুল আচড়াবার পর চিরুনিতে লেগে থাকা চুল গুলো আঙুলে পেঁচিয়ে তাতে থুতু দিয়ে বাইরে ফেলে দিতো। মাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে বলেছিলেন বাতাসে যাতে চুলের দলাটা উড়ে অন্য কোথাও না পড়ে এ জন্যই থুতুটা দিতে হয়। অথচ আমার নানি বলেছিলেন থুতুটা এই জন্য দিতে হয় যাতে অন্য কেউ ঐ চুলটা নিয়ে গুণ-যাদু না করতে পারে। আমার ছোটবেলায় অনেকেরই বিশ্বাস ছিলো কাউকে গুণ-যাদু করে অর্থাৎ তন্ত্র-মন্ত্র করে কারো ক্ষতি করতে চাইলে অবশ্যই তার শরীরের কিছুনা কিছু উপাদান যেমন, চুল, নখ ইত্যাদি লাগবেই।
আসলে বলার কথাটা হলো একটা আচারের প্রাচীন আর আধুনিক দুটো ব্যাখ্যাই এই চুলের ঘটনায় আমি পেয়েছিলাম। অনেক সময়ই প্রাচীন ব্যাখ্যাটা নীরব হয়ে গেলে আধুনিক ব্যাখ্যাটাকেই আমরা একমাত্র ব্যাখ্যা হিসেবে গ্রহণ করে ফেলি আর সেখানেই আদিম কালের সাথে চলে আসা আমাদের সম্পর্কের সুতোটা যায় ছিঁড়ে। এখন যেমন আমার নানি বেঁচে নেই তাই আগের ব্যাখ্যাটা আর শোনা যাবেনা, আমার মা বেঁচে আছেন তিনি তার ব্যাখ্যাটাই হয়তো তার নাতি-নাতনিদের মধ্যে সঞ্চারিত করে যাবেন আর সেক্ষেত্রে সেই প্রজন্মের কাছে চুলের দলায় থুতু দেওয়াটার সাথে অলৌকিক যাদুবিশ্বাসের কোনই সম্পর্কই থাকবেনা। অথচ প্রশ্ন জাগাটা জরুরি। প্রশ্ন না জাগলে উত্তর পাওয়া যায়না। ধর্মীয় আচার প্রথার মূল খুঁজতে চাইলে তাই প্রশ্ন করতে হয়, কৌতুহলি হয়ে উঠতেই হয়।
আমাদের পূর্বরুষ যারা ছিলেন তাদের চিন্তা-চেতনা, কল্পনা, মানসগঠন অনেক খানি এই আদিবাসীদের মতই যে ছিলো তার প্রমাণ কেবল নৃবিজ্ঞানীদের সাক্ষ্যেই নয় আমাদের দিনানুদৈনিক নানা প্রথা আচারের মধ্যেও থেকে গেছে। মৃত্যু, মৃতদেহ, সদ্যমৃতের আত্মা সম্পর্কে ভীতি, আতঙ্ক এখনও আমাদের সমাজ সংস্কৃতির মধ্যেই ধরা আছে। বিভিন্ন গল্পের আর কাহিনির আকারে তা পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চার করে দেবার ব্যাপারটাও আছে। এখন জীবনের ধারাটা দারুন ভাবে পাল্টে যাচ্ছে বলে পুরনো সংস্কার সবটা হয়তো আগের মত শক্তিশালী নেই কিন্তু আমাদের শৈশবের সমাজটায় তার যথেষ্টই প্রভাব ছিলো। আদিবাসীদের প্রথা গুলোয় যেমন দেখেছি মৃত্যু সংক্রান্ত প্রথা আচারে মৃতের আত্মার সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার একটা প্রয়াস আছে। এই প্রয়াসটা ছিলো কেননা মৃত্যুর জগতের অশুচি প্রভাবটা মৃতের আত্মার সাথে এসে জীবিতের জগতে সংক্রমণ ঘটাবে এই ভীতির জন্যই। এখনকার হিন্দু সম্প্রদায় তাই মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধ অবধি এখনও অশৌচ পালন করে। মৃত্যুর সময় আগের রান্না করা খাবার এই মৃত্যুর অশুচি স্পর্শের জন্যই তাই আর খাওয়ার যোগ্য ভাবা হয়না। মৃতআত্মার লোকালয়ে ফিরে আসা ও তার পেছন পেছন অসুখ-বিসুখ, আর একগুচ্ছ দৈব-দুর্বিপাকের আগমনও সেই মৃত্যুর সংক্রমণেরই চিহ্ন। মৃত্যুর সংস্পর্শ তাই এড়িয়ে চলার আত্যন্তিক তাগিদেই এই সব প্রথার জন্ম।
কিন্তু একটু আগেই যা বলেছিলাম আরো অনেক গবেষণার প্রয়োজন। এই ক’টা বিচিত্র তথ্যে শুধু কৌতুহল উদ্রেকের প্রয়াসটাই এই লেখার মুখ্য উদ্দেশ্য। আমরা জানিনা মৃতের শেষ গোসলের পানি গরম করার সময় কেনই বা নয়টা পাতা দিতে হয়। সুনিশ্চিত করে বলবার উপায় নেই কোন একটা প্রথার মূল উদ্ভবের সময় এর চেহারাটা কি ছিলো বা কোন ধারণার বশে এর জন্ম। কবরের উপর মসুরের ডাল ছড়িয়ে দেবার মূল উদ্দেশ্যটা আসলেই কি ছিলো? এমনতর হাজার প্রথা, সংস্কারের শেকড় কোন আদিম বিশ্বাসের মূল শেকড়ে গিয়ে ঠেকেছে তার উত্তর অন্তত এই স্বল্প পরিসর, অগভীর লেখার আয়ত্বের মধ্যে নেই। আমরা শুধু ধারণা করতে পারি এই সব প্রথার পেছনে কোন অলৌকিক কারণ ছিলোনা, বা এসবের মধ্যে এমন কিছু নেই যার রহস্য ভেদ করা যায়না। এই সব সংস্কার আর প্রথার উদ্ভব প্রচণ্ড ভাবেই লৌকিক ঘটনা এবং যুক্তি সঙ্গত ভাবে পা ফেললে রহস্যের কুয়াশা সরে গিয়ে এসবের পেছনের পার্থিব চেহারাটা চোখে পড়বেই।
মিলেটের দানা
তথ্যসূত্র ও সহায়ক গ্রন্থাবলি:
ফ্রেজার-ক : The Belief in Immortality and the Worship of the Dead : J. G. Frazer
The Gifford Lectures, St Andrews (1911-1912)
Macmillan & Co., Limited, St Martin’s Street, London, 1913
ফ্রেজার-খ : The Fear of The Dead in Primitive Religion. Vol-II.
Sir James George Frazer
Lectures delivered on The William Wyse Foundation at Trinity College, Cambridge.
Macmillan & Co., Limited, St Martin’s Street, London, 1934
আগের পর্বের লিংক :
মরার বাড়ি - মৃত্যু নিয়ে কিছু আদিম বিশ্বাস : প্রথম পর্ব
মরার বাড়ি - মৃত্যু নিয়ে কিছু আদিম বিশ্বাস : দ্বিতীয় পর্ব
মন্তব্য
চমৎকার।
উপমহাদেশের আদিবাসীদের বিষয়েও কিছু লিখুন।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই। চেষ্টা করছি উপমহাদেশের আদিবাসীদের নিয়ে আরো কিছু জানার।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
বাপরে! এমন মন খারাপের একটা বিষয় নিয়ে এতো ঠাণ্ডা মাথায় লিখলেন কেমন করে? শুধু কি লেখা! এই যে এতো এতো পড়তে হয়েছে তার জন্যও সাধুবাদ জানাই।
---মোখলেস হোসেন
অনেক ধন্যবাদ মোখলেস ভাই। আপনার প্রত্যেকটা সাধুবাদই অনেক অনেক অনুপ্রাণিত করে।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
বাপরে, মইরাও দেখি শান্তি নাই। পাবলিকের ধোলাই খাইতে হয়। সাত জন্মের ভাগ্য যে ওইসব জায়গায় জন্মাই নাই।
লেখার বিষয়বস্তু বরাবরের মতই ইন্টেরেস্টিং। পড়তে বেশ লাগছে। শুভেচ্ছা রইলো।
-ইকরাম ফরিদ চৌধুরী
হ্যা ওই সব জায়গায় এবং ওইসব সময়েও, আমাদের পূর্বপুরুষরাও যে অমন ছিলেননা তা জোর দিয়ে বলা যায়না। লেখাটা আগ্রহ নিয়ে পড়েছেন দেখে ভালো লাগছে। অনেক ধন্যবাদ ইকরাম ভাই।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
না ভাই,মসুর ডাল দেওয়ার অন্য কারন।
গ্রামের দিকে শিয়াল কবর খুড়ে লাশ যাতে খেতে না পারে তাই এই ব্যবস্থা,,
আমি এখানে আসলে খুঁজতে চাইছি এসব প্রথার একেবারে শুরুর দিকে আদিম কারণটা কি থাকতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে আদিম কারণটা অনেক কাল আগেই মানুষ ভুলে গেছে তারপর কোন একটা প্রজন্ম নতুন করে একটা ব্যাখ্যা তৈরী করে নিয়েছে। আমার বাড়ির কাছাকাছিই একটা গোরস্তান আছে সেখানে প্রায় প্রতিটিা নতুন কবরেই মসুরের ডাল ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং কারণ হিসেবে বলা হয় শেয়াল কুকুরে যাতে কবরের মাটি খুঁড়ে লাশ টেনে না বের করতে পারে সে জন্যই এটা দেওয়া, কিন্তু প্রায়ই শেয়ালে এসব কবর খুঁড়ে ফেলতো। বোঝাই যাচ্ছে মসুরের ডাল অন্তত কোনভাবেই শেয়ালকে ঠেকাতে পারতোনা। সঙ্গত কারণেই মনে হয়েছে এই প্রথাটা আদিম কালে যারা সৃষ্টি করেছিলো তারা ঠিক শেয়ালের কথা ভেবে এটা তৈরী করেননি। আপনি মন দিয়ে লেখাটা পড়লে বুঝবেন এটাই এই লেখার বক্তব্য। এখানে শুধু কারণ গুলো খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। মসুরের ডালের আরো কোন তাৎপর্য থাকতে পারে।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
নতুন মন্তব্য করুন