“মায়ের দোয়া”র শিকড় সন্ধানে : সপ্তম ও শেষ পর্ব

সোহেল ইমাম এর ছবি
লিখেছেন সোহেল ইমাম [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৩/০৮/২০১৮ - ৮:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জনমানসে মায়ের আশীর্বাদের দৈবী ক্ষমতায় বিশ্বাসটা যে কেবল অনুমান মাত্র নয় তা কিছু পরেই এর প্রকাশ থেকেই প্রমাণিত হয়। এই প্রকাশের বিষয়টিও মেয়েদের হাতেই হয়েছিলো। বহুকাল থেকেই বাড়ির মেয়েরাই কাঁথায়, কাপড়ে সেলাইয়ের ফোঁড়ে ছবি এঁকে এসেছে। সেই মেয়েরাই যখন শিক্ষিত হয়ে উঠতে শুরু করলো তখন বিভিন্ন ছবির সাথে সাথে তাদের সুঁই-সুতোর সেলাইয়ের মাধ্যমে কিছু কথা বা বাণীও লিখতে শুরু করলো । যেমন দেখি নীরদচন্দ্র বলছেন, কার্পেটের উপর পশমের ছবি রচনা করা গ্রাম অঞ্চলেও ধরা ব্যাপার, অর্থাৎ বিবাহযোগ্যা কুমারীর একটা বিশেষ যোগ্যতার পরিচায়ক হইয়া দাঁড়াইয়াছিল। তাই আমি অতি অজ পাড়াগাঁয়েও গিয়া, যেখানে হাতী-ঘোড়া, পাল্কী-নৌকা ভিন্ন যাওয়া সম্ভব ছিলনা সেখানেও গিয়া, দরমা বা চাটাই-এর বেড়ার উপর ফ্রেম করা পশমের কাজ টাঙানো দেখিয়াছি – তাহাতে বিলাতী ফুল বিকশিত হইত, বিলাতী কুকুর দাঁড়াইয়া থাকিত, এমন কি এ-বি-সি-ডি ইত্যাদি সমস্ত ইংরেজী বর্ণমালাও দেখা যাইত (নীরদ চৌধুরী: ১৯৯০; পৃ:৫৪)। ইহার পরবর্তী যুগেও সেলাই করা, বোনা ও কার্পেটের কাজ করা বাঙালী মেয়েরা ছাড়িয়া দেয় নাই, বরঞ্চ স্কুল-কলেজে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরাতন ‘অ্যাকমপ্লিশমেন্ট’গুলি রাখিবার চেষ্টা করিত। এখানে বলা প্রয়োজন, আমার বাল্যকাল পর্যন্ত যে বাঙালী মেয়ে এই সব হাতের কাজ করিত তাহাদের ‘অ্যাকমপ্লিশ্ড’ বলিয়া প্রশংসা করা হইত (নীরদ চৌধুরী: ১৯৯০; পৃ:৫৫)। এধারারই অনুসৃতি হিসেবে এক সময় বৈঠকখানায় কাঁচে বাঁধিয়ে রাখা কাপড়ের টুকরো দেখা যেতো যাতে সেলাই করে লেখা থাকতো - সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে, মায়ের আশীর্বাদ, মায়ের দোয়া কখনও বা শ্রেফ “মা”। মনে হয় মায়ের দোয়ার বিশ্বাসটার মূর্ত প্রকাশ প্রথমটা এভাবেই হয়েছিলো। হাতপাখার ওপর কাপড় লাগিয়ে তার ওপর “মা” শব্দটা লেখার চলনটা এখনও দেখা যায়। বালিশের আবরণীর ওপরেও সেলাই করে কিছু কথা লেখার চলও এক সময় বেশ ছিলো। আরো পরে ছাপানো ক্যালেন্ডার বা ঘর সাজানো পোস্টারেও এসব এসেছে। এইসব লেখা মেয়েদের হাতের সৃষ্টি হলেও বাড়ির পুরুষদের এসম্পর্কে দ্বিমত থাকলে প্রথাটা এভাবে সজীব থাকতে পারতোনা। আর এসূত্রেই বোঝা যায় এই লেখা গুলোর প্রতি সে সময়কার সমাজমানসের একটা প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিলোই। দোকানপাটের নামে, বা বানিজ্যিক জনপরিবহণে মায়েরদোয়া বা মায়ের আশীর্বাদ সংযুক্ত হওয়াটা মনে হয় আরো কিছু পরের ঘটনা।

আমাদের অনুসন্ধানের প্রারম্ভিক এবং মূল লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশের গণপরিবহণে ও ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে মায়েরদোয়া নামকরণের কারণটি এবং সেই সূত্রে এই বিশেষ বিশ্বাসটির উদ্ভবের প্রক্রিয়াটি নির্ণয় করা। বাংলাদেশ মুসলমান সম্প্রদায় প্রধান দেশ কিন্তু আমরা মায়েরদোয়ার বিশ্বাসের যে বিবর্তন ধারা অনুসরণ করেছি তা মূলতই হিন্দু সম্প্রদায়ের জীবন ও ইতিহাস ধরে। এর কারণ বাংলার সাধারণ মানুষের মধ্যে একেবারে আধুনিক যুগ আসবার আগে সম্প্রদায়গত বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা বিশেষ ছিলোনা বললেই হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু সামাজিক অনুষ্ঠানের প্রভাব এখন মুসলমান সম্প্রদায়ের সামাজিকতায় এমনভাবে চলে এসেছে যে তাকে অনৈসলামিক বলে দূরে ঠেলে রাখার উপায় নেই। বিয়ের সময় গায়েহলুদ অনুষ্ঠান এরকমই একটা উদাহরণ। এটা হতে পেরেছে কেননা বহু যুগ ধরেই এই দুই সম্প্রদায় একসমাজে একত্রেই বসবাস করে এসেছে। হিন্দু ধর্ম ভারতবর্ষের মাটি থেকে উত্থিত ধর্ম আর ইসলাম ধর্ম আরব থেকে কখনও সরাসরি, কখনও পারস্য সংস্কৃতির প্রভাবে মিশ্রিত হয়ে ভারতবর্ষে প্রচারিত হয়েছে। যারা প্রথম ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছেন তারা কেবল ইসলামের মূল সূত্র আর মূল অনুষ্ঠান গুলোই কেবল নওমুসলিমদের শেখাতেন। সন্তান জন্মের সময় কি প্রথা বা অনুষ্ঠান পালন করতে হবে, বিয়ের আগের দিনের অনুষ্ঠান কেমন হবে, বিয়ের তত্ত্ব পাঠাতে কি কি সাজিয়ে দিতে হবে, কারো মৃত্যুর পর কি আচারপালন করতে হবে এতো কিছু বিশদ অনুষ্ঠানের নির্দেশিকা সেকালের ধর্মপ্রচারকের কাছে থাকতোনা। ফলে নওমুসলিমরা কলেমা শিখে মুসলিম হতো এবং দুর্বোধ্য আরবী সুরা মুখস্ত করে নামাজ পড়তো বটে কিন্তু জীবনের ধাপে ধাপে এতোদিনকার হিন্দু সংস্কারের অনুসরণ করতেও দ্বিধা করতোনা। এ সম্পর্কে অতুল সুর বলছেন, বাঙলার মুসলমানরা যে হিন্দুসমাজ থেকেই ধর্মান্তরিত, তা তাদের আচার ব্যবহার থেকে বুঝতে পারা যায়। এসকল আচার-ব্যবহার বর্তমান শতাব্দীর গোড়া পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। প্রথমত, তারা ধর্মান্তরিত হবার পূর্বে হিন্দুসমাজে যে সকল কৌলিক বৃত্তি বা পেশা অনুসরণ করত, মুসলমান হবার পরেও তাই করত। দ্বিতীয়, এদের ভাষা ও সাহিত্য থেকেও তাই প্রকাশ পায়। তৃতীয়, তাদের নামকরণ থেকেও তাই বুঝতে পারা যায় – যেমন কালি শেখ, কালাচাঁদ শেখ, ব্রজ শেখ,গোপল মন্ডল, হারু শেখ ইত্যাদি। চতুর্থ, ধর্মান্তরিত হবার পরেও তারা হিন্দুর অনেক সংস্কার ও লৌকিক পূজাদি অনুসরণ করত। যেমন দুর্গাপূজার সময় তারা হিন্দুদের মতো নূতন কাপড়-জামা পরে পূজা-বাড়িতে প্রতিমা দর্শন করতে যেত। ছেলে-মেয়ের বিবাহের সময়ও তারা হিন্দু জ্যোতিষীর কাছে গিয়ে বিয়ের দিন ঠিক করত। দৈন্দিন জীবনেও তারা হিন্দুর বিধি-নিষেধ মানত ও হিন্দু পঞ্জিকা অনুসরণ করত। মহামারীর সময় শীতলা, রক্ষাকালী প্রভৃতির পূজা করত, ও শিশু ভূমিষ্ঠ হলে ষষ্ঠীপূজা করত। এমনকি অনেক জায়গায় বিবাহের পর মেয়েরা সিঁদুরও পরত। এসকল আচার-ব্যবহার সাম্প্রদায়িক আন্দোলন ও মোল্লাদের প্ররোচনায় ক্রমশ বর্জিত হয়েছে (অতুল সুর; ২০০৮; পৃ:১৯৪)। কিন্তু এই প্রক্রিয়াটা ছিলো দ্বিপাক্ষিক কেননা অতুল সুরের বর্ণনায় দেখি, হিন্দুরাও তেমনই মুসলমানদের মহরম ইত্যাদি পরবে যোগদান করত। আবার বসন্ত ও ওলাওঠা ইত্যাদির প্রকোপের সময় মুসলমানরা যেমন শীতলা ও ওলাদেবীর থানে এসে পূজা দিত, হিন্দুরাও তেমনই ছেলেদের নজর লাগলে মুসলমানদের দরগা থেকে জলপড়া এনে ছেলেদের পান করাত। এছাড়া ভূতে পেলে মুসলমান রোজাও ডাকা হত। এছাড়া যুক্ত সাধনার ক্ষেত্রে সত্যপীর, বনবিবি, গাজীসাহেব, ঘোড়া সাহেব ইত্যাদির পূজা করা বা তাদের আস্তানায় অর্ঘ্যদান করা হিন্দুসমাজে ঢুকে গিয়েছিল (অতুল সুর;২০০৮;পৃ:২০১)।

হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ও বলেছেন, পটুয়ারা ছিল না হিন্দু না মুসলমান। ইহারা ছেলের নাম রাখিত সুরেন্দ্র, কানাই, বলাই – মেয়ের নাম রাখিত রাধারাণী, কমলা, সাবিত্রী। উভয় সম্প্রদায়ের বাড়ীতেই যাইত। দুর্গা প্রতিমা, অন্নপূর্ণা প্রতিমা গড়িত। আবার মসজিদেও যাইত। পট দেখাইত কৃষ্ণলীলা, রামলীলা,গৌরাঙ্গলীলা। প্রতিপটের শেষে যমপট থাকিত। যমপুরীর দৃশ্য – পাপীর নরকভোগ, ভীষণ শাস্তি, পুণ্যবানের স্বর্গে গমন, বিষ্ণুদূত কর্ত্তৃক সম্মান দান। কোন পাপের কি শাস্তি – সুর করিয়া গান গাহিয়া বুঝাইয়া দিত। ইহার সুফল ছিল সুদূরপ্রসারী। নিম্নস্তর হইতে উর্ধ্বস্তর পর্যন্ত সকলেই দেখিত, শিখিত, আচরন করিবার চেষ্টা পাইত (হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, ১৯৯৯; পৃ: ৫৩-৫৪)। আবার পল্লব সেনগুপ্ত দেখাচ্ছেন, বাওলেরা কাঠ কাটতে, মাওলেরা মধু আহরণ করতে বনে ঢোকার আগে “মা বনবিবি তোমার বাল্লক এল বনে, এই কথাটি থাকে যেন মনে: - এই মন্ত্র বলে বনে ঢুকে আসছেন হয়ত বা সেই সময় থেকেই। মুসলিম ধর্মে মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ হলেও, এক্ষেত্রে কিন্তু কোন ধর্মীয় দ্বন্দ্ব সেযুগ থেকে আজ অবধি সঞ্জাত হয়নি। আর ভাটি অঞ্চলের হিন্দুরাও কয়েক শতাব্দী ধরে পরম ভক্তির সঙ্গে ভেবে আসছেন এই কথা : “মা বনবিবি মুসলমান ফকিরের মেয়ে, কিন্তু উনি হচ্ছেন আঠারো ভাটির সব মানুষের মা, তাই আমরা সবাই ওঁর পুজো করি” (পল্লব সেনগুপ্ত, ২০০১;পৃ:৮১)। হিন্দুর ছেলে দুখেকে যখন হিন্দুর দেবতা দক্ষিণ রায় খেতে আসছেন, তখন আবির্ভূত হয়ে তার প্রাণ বাঁচান মুসলমান ফকিরের মেয়ে ঐ বনবিবিই। তারপরে তাঁর বরে দুখে’র দিন সুখে কাটতে থাকে প্রচুর টাকা পয়সার মালিক হয়ে। একেবারে হিন্দু মঙ্গলকাব্য এবং ব্রতকথার ছকেই তৈরী এই লোককথা ওরফে কিংবদন্তী – যার স্রষ্টা হলেন কিন্তু বাদা অঞ্চলের মুসলিম পালাকাররাই। ট্র্যাডিশনটা সেখানে অনবিচ্ছিন্নই (পল্লব সেনগুপ্ত, ২০০১;পৃ:৮২)। নিম্নবর্গের মানুষ সে যে সম্প্রদায়েরই হোক তাদের জীবন ধারা যে একই ছন্দে প্রবাহিত হতো এসব উদ্ধৃতি তারই সাক্ষ্য দেয়। ভেদ রেখা যে ছিলোনা তা নয় কিন্তু মোটের উপর মানুষ গুলো তাদের পরিস্থিতির কারণেই বাস করতো একে অপরকে জড়িয়ে। ধর্মের দূরত্ব যতখানিই থাক মনের দূরত্ব বেড়ে ওঠবার খুব বেশি অবকাশ তখনও তৈরী হয়নি। মায়ের দোয়ায় বিশ্বাসের এই উত্তরাধিকার তাই হিন্দু সম্প্রদায়ে যেমন চারিয়ে গেছে, মুসলিম সম্প্রদায়েও তেমনই। পিতা-পিতামহের বিশ্বাসকেই সাধারণ মানুষ সম্মান শ্রদ্ধা করতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে আর সে কারণে মায়েরদোয়া’য় বিশ্বাসের বিষয়টিও মুসলিম সম্প্রদায়ে শুধু টিকেই থাকেনি বরং ধর্মীয় বিশ্বাসের আবরণ পেয়ে তাদের নিজেদেরই বিশ্বাস হয়ে ওঠে।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় স্বাধীনতা ও দেশবিভাগের পর পাকিস্তান থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন যখন বাধ্য হয়ে তাদের বাসভূমি পরিত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয় তখন তাদের রেখে যাওয়া শিবের থান ও প্রাচীন মন্দির গুলোর ধ্বংসাবশেষে কিছু কাল্পনিক মুসলিম পীরের মাজার গড়ে ওঠে কিন্তু এই মাজার গুলোয় যে লৌকিক আচার প্রচলিত থেকেছে তা থেকে স্পষ্টই প্রতীয়মাণ হয় এ আচার এক সময় শিব পূজার সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট ছিলো। পাকিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এরকমই একটি মাজারের বটগাছের ডালে সন্তানকামী মহিলারা শিবলিঙ্গের অনুকরণে কাঠের তৈরী লিঙ্গ ঝুলিয়ে দিয়ে আসতেন। তাদের বিশ্বাস এতেই মাজারের অধিষ্ঠাতা মৃত পীর সাহেব তাদের সন্তান দান করবে। এই মাজারে আবার সাপদের পবিত্র ভাবা হয় এবং আশেপাশের মানুষের বিশ্বাস এই সাপদের কোন ক্ষতি করলে মাজারে শায়িত পীর সাহেব ভয়ানক রুষ্ট হবেন।
আরেকটি মাজারে আবার এরকমই কিছু পাথর ও কাঠের তৈরী লিঙ্গ রেখে দেওয়া থাকতো যা সন্তানকামী মানত করতে আসা নারীদের পেটের ওপর বুলিয়ে দেওয়া হতো যাতে তারা সন্তানবতী হয়। ইসলামে কুকুরকে সব সময়ই অপবিত্র প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হয়। বলা হয় ঘরে কুকুর থাকলে সেখানে ফেরেস্তা আসেনা, নামাজ হয়না। কিন্তু পাকিস্তানের একটি পীরের মাজারে কুকুরদের সম্মানের চোখে দেখা হয় কেননা বেঁচে থাকতে নাকি এই পীর এই কুকুরদের ভালোবাসতেন। এক সময় মাজার প্রাঙ্গণেই এই কুকুরদের ঘোরাফেরা করার স্বাধীনতা ছিলো। এই কুকুরদের জন্য পীরের ভক্তরা খাবার নিয়ে আসে যাতে পীরের দয়ায় তাদের মনস্কামনা পূর্ণ হয়। শিবের ভৈরব রূপের বেশ কিছু মূর্তিতেও দেখা যায় ভৈরবের বাহন হিসেবে কুকুর রয়েছে। এসব ভৈরব মন্দিরে কুকুরদের সমীহ করে চলে ভক্তরা। “ইন সার্চ অব শিভা : এ স্টাডি অব ফোক রিলিজিয়াস প্রাকটিসেস ইন পাকিস্তান” বইয়ে লেখক হারুন খালিদ এরকমই আরো বহু উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন কিভাবে হিন্দু অর্থাৎ প্রাচীন ভারতীয় ধর্মের বিশ্বাস ও আচার ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের আচারে কিছু রূপান্তর নিয়ে ঢুকে পড়েছে (Haroon Khalid, 2015)। মায়েরদোয়া সংক্রান্ত দৈবী ক্ষমতা সম্পন্ন মাতার ধারণায় বিশ্বাস সম্ভবত এভাবেই ইসলাম ধর্মাবলম্বী বাংলাদেশীদের বিশ্বাসের মধ্যে ঢুকে পড়েছে এবং একটা ইসলাম ধর্মের পালিশও তার উপর পড়ে গেছে।

দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় যেমন বলেছেন, মানুষের ধ্যানধারণা আকাশ থেকে জন্মায় না; সেগুলির উৎসে রয়েছে মানুষের বাস্তব সমাজ-জীবন। তাই প্রাচীনদের দৃষ্টিকোণটা বোঝবার ব্যাপারে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পথনির্দেশ পাওয়া যাবে প্রাচীন সমাজ-জীবন সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা থেকেই (দেবীপ্রসাদ,১৩৬৩;পৃ:১৬৯)। প্রাচীনদের দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা সে যুগের উর্বরতাকেন্দ্রিক মাতৃশক্তিতে বিশ্বাসের চরিত্রটি বুঝতে চেষ্টা করেছি। দফায় দফায় আদিবাসী মানুষদের কখনও ধরে এনে কখনও আবার প্রলোভন দেখিয়ে শ্রম শক্তি হিসেবে নিয়োগ করা এবং তাদের দিয়েই বিপুল অনাবাদি জমিতে ফসল ফলিয়ে তোলা বা তাদের সৈনিক হিসেবে ব্যবহার করে পার্শ্ববর্তী রাজ্যের জমি দখল করা, তারপর ব্রাহ্মণ্য শাসন সংস্কৃতির কঠোর শাসনের আওতায় তাদের শ্রেণিভেদের ধর্মকথায় ভুলিয়ে বঞ্চিত শোষিত অবস্থাতেই রেখে দেওয়া এসবের একটা ফল ছিলো একটা মানব গোষ্ঠীর বিকাশকে রুদ্ধ করে রাখা। একজন মানুষের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশকে বাধা গ্রস্ত করলে সে যেমন প্রতিবন্ধীতে পরিণত হয়, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মানসিক বিকাশকে অর্জন করে উঠতে পারেনা, তেমনি কোন গোষ্ঠীকে সামাজিক ভাবে শাসনের মাধ্যমে এবং মানসিক ভাবে ধর্মীয় অনুশাসনের সাহায্যে শাসক শ্রেণির সুবিধার জন্য সেই একই অবস্থায় বন্দি করে রাখলে তাদের সমাজমানসের বিকাশও ব্যহত হতে বাধ্য।

জীবন মাত্রই বিকাশের অভিলাষী। কিন্তু আদিম কৌম সমাজের মানুষ গুলোর জীবনধারায় বিকাশ বলতে কিছুই ছিলোনা। ব্রাহ্মণ্য শাসনে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের মধ্যে এই মানুষ গুলো খাটতে খাটতেই লক্ষ্য করেছে সমাজের উচ্চবর্গের শ্রেণিগুলো কি বিপুল সম্ভোগের জীবন যাপন করছে। তাদের উদয়াস্ত হাড় ভাঙ্গা খাটুনির ফলেও সেই সাচ্ছন্দ্যটা তারা তাদের জীবৎকালে কোনক্রমেই অর্জন করে উঠতে পারবেনা, কেননা জন্মান্তরবাদ আর কর্মফলের হিসেব-নিকেশ অনুযায়ী পূর্বজন্মের কর্মফলেই তাদের এই দশা আবার এই জন্মে আজীবন উচ্চবর্গের সেবা করলেই যে পরের জন্মে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় বা বৈশ্য হয়ে জন্মানো সম্ভব সে সম্ভাবনাও কম। কম পক্ষে কয়েক জন্মের “সৃকৃতি”র ফলেই সে উচ্চবর্গের কোন একটা শ্রেণিতে হয়তোবা জন্ম নিয়ে একটু উন্নত জীবনধারার স্বাদ পেতে পারে। কিন্তু বাস্তবতাটা হলো এ জন্মে নিশ্চয়ই নয়, আর এ সত্যের অনুধাবনেই আশা করার মত কিছু আর বিশেষ থাকেনা। তবুও এ হলো বিশ্বাসের এখতিয়ারের ব্যাপার, এর বাইরেও কর্মপ্রয়াসের মাধ্যমে জীবনধারার মোড় ফেরাবার প্রচেষ্টা নিশ্চয়ই ছিলো কিন্তু উচ্চকোটির মানুষদের শোষনযন্ত্রের তলে নিস্পিষ্ট হয়ে সে সব কর্মপ্রচেষ্টাও বিশেষ পথ তৈরী করতে পারতোনা। পূর্ণ বিকাশের পথ না থাকায় আত্মবিশ্বাসও ক্ষয় পেতে থাকে এবং তার ফলশ্রুতিতেই দৈবীশক্তির ওপর নির্ভরতা বাড়ে। কিন্তু ব্রাহ্মণ্য সংস্কারের গন্ডীর ভেতরের দেবতারাই কর্মফল নির্ভর জন্মান্তরবাদ কায়েম করে ব্যবস্থাটা এতোখানিই সুচারু করে গড়ে তুলেছেন যে সেখানে প্রার্থনা জানানো নিস্ফল, কেননা তার নড়চড় নেই। আর সে কারণেই আদিম কৌম সমাজ থেকে উদ্ভুত দেবীরাই সন্তান বৎসলা মাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। সন্তান মাত্রেই মায়ের বুকেই নিজের ক্ষুধার নিবৃত্তি সন্ধান করেছে। স্তন্যপানের বয়সটা ছাড়িয়ে উঠলে সেই সুধার ধারাটি যেমন আর সরস থাকেনা তেমনি সন্তানকেও অনুভব করতে হয় যে মায়ের গোটা অস্তিত্ব তাকে সবরকম বিপদ আর ঝুটঝামেলা থেকে আগলে রাখতো তা আর যথেষ্ট নয়। কিন্তু এই প্রাপ্ত বয়স্কতার জ্ঞান অর্জনের পরও আকস্মিক বিপদে বা যন্ত্রণায় কতকটা অবশ্যম্ভাবী ভাবেই মানুষ মা বলেই কাতরে ওঠে। আগেই একবার বলেছি এই মায়ের কোলের আশ্রয় স্মরণ করেই মানুষ দয়ালু ঈশ্বরের কল্পনা করেছিলো। আমরা দেখেছি ভারতবর্ষের পুরুষ দেবতাদের প্রভু বলে কখনও বিশ্বজগতের স্রষ্টা, নিয়ন্ত্রণকারী, রাজাধিরাজ বলে সম্বোধন করলেও কখনওই পিতৃ সম্বোধনে ভক্তরা ডাকেনি, কিন্তু দেবীদের বেলায় সবাইকেই মা সম্বোধন করে এসেছে। উমা-পার্বতী হোক কিংবা চণ্ডী-মনসা বাঙ্গালি মা মা করেই পাগল হয়েছে। মানুষ গুলো পথ না পেয়েই মায়ের আঁচল ছায়া খুঁজেছে এবং বিশ্বাস করতে চেয়েছে সারা বিশ্বভূবনে এই হয়তোবা একমাত্র আশ্রয় যা তাদের জীবনধারাকে পাল্টে দিতে পারবে। দূর অতীতের মাতৃকাশক্তির প্রভাবটাও হয়তো একেবারে বিস্মৃতির গর্ভে হারিয়ে যায়নি। আদিম জীবনধারায় সে বিশ্বাসও নিশ্চয়ই কোন এক রূপে নিজেকে অস্তিত্ববান রাখতে পেরেছিলো। মঙ্গলকাব্যের দেবীরা তাই হিংস্র, প্রতিশোধপরায়ণা, ক্রোধপরায়ণা হলেও বরদানের বিষয়ে কার্পণ্য দেখাননি। নিজের পূজা প্রচারের জন্য হলেও এসে বলেছেন, “আজি হৈতে সম্পদের চিন”।

শুধু প্রাচীন বা মধ্যযুগেই নয় ইংরেজদের শাসনামলেও ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামো এই দেশের নিম্নবর্গের মানুষদের যারা ছিলো সম্পদ সৃষ্টির প্রধান হাতিয়ার তাদেরকে সেই একইভাবে প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই নিস্ক্রিয় করে রেখেছিলো তাতেও অবস্থাটা একই রকম থেকে গিয়েছে। ইংরেজদের মাধ্যমে পাশ্চাত্যের আধুনিকতার,প্রগতির, বিজ্ঞানের ভাবধারা এলেও অখণ্ড ভারতীয় সমাজ তার অনুসরণে যথার্থ অর্থে আধুনিক হয়ে উঠতে সক্ষম হলোনা। শাসন-শোষণের সুবিধার জন্য প্রাচীন ধর্মীয় বিশ্বাস, আচার অনুষ্ঠানকেও পবিত্রতার আবরণ দিয়ে আরো সুদৃঢ় করা হলো। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে যে জমিদারি প্রথা প্রবর্তিত হলো তাতে নিম্নবর্গের মানুষের অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। ইংরেজ শাসকদের শোষণের দোসর দালালদের শ্রেণির মধ্যে মুস্টিমেয় কিছু সংখ্যক মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো প্রবেশ করলেও দেশের খেটে খাওয়া মানুষের বিরাট একটি অংশ তা থেকে বঞ্চিতই থেকে যায়। ফলে এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ে যখন রাজনীতির প্রয়োজন পড়লো তখন এদের নিয়ন্ত্রণ করতে ধর্ম, অন্ধ বিশ্বাস, প্রাচীন লোকাচার এসবই প্রধান কলকাঠি হয়ে দাঁড়ায়। আর এর ফলেই এইসব অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কার গুলো দূর করার পরিবর্তে শিক্ষিত প্রভাবশালী শ্রেণিটি এসবকেই উৎসাহিত করে, পুষ্টি যোগায়। ব্রাহ্মণ্য শাসন আর ছিলোনা কিন্তু জনগোষ্ঠীর বিপুল একটা অংশকে অশিক্ষিত এবং মানসিক দিক থেকে শূদ্র আর অন্ত্যজ শ্রেণির অবস্থায় রেখে দেবার যে প্রয়োজনীয়তা এসময়কার শাসকশ্রেণি উপলব্ধি করে তাতে সেই মধ্যযুগীয় অবস্থাটাই নতুন চেহারায় ফিরে আসে। মধ্যযুগের বাংলার নিম্নবর্গের মানুষ যেমন নিজেদের উন্নতির পথ দেখতে না পেয়ে প্রতিবন্ধী মানসেই অলৌকিক বিশ্বাস আর ধর্মীয় অন্ধত্বের মধ্যেই আশ্রয় নেয়, অর্থাৎ সমাজ মানস সেই একই ডোবার সীমিত চৌহদ্দির মধ্যে সেই একইভাবে ঘুরপাক খেতে থাকে। ফলে মায়ের আঁচলতলা থেকে বের হবার মত সাবালকত্ব অর্জনের সুযোগটা ইংরেজ শাসনামলেও এই সব মানুষ পায়নি। ভারতবর্ষ ও বাংলা উনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর সোপানে উঠেও আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে অসমর্থ হলো এই বিপুল সংখ্যক পিছিয়ে পড়ে থাকা মানুষের জন্যই। ইউরোপীয় শিক্ষায় শিক্ষিত মোহনদাস গান্ধীকেও ভারতের বিপুল জনতাকে স্বাধীনতা সংগ্রামে টেনে আনবার জন্য রাম রাজ্যের স্বপ্ন দেখাতে হয়। নিজে পাশ্চাত্য শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত হলেও ধর্মকেন্দ্রিক আবেগকে ব্যবহার করে সমস্ত ভারতীয়দের সামনে নিজেকে প্রাচীন মুনি-ঋষিদের মত কৃচ্ছ্র সাধনার প্রতিমূর্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হয়। মুসলিমলীগের নেতাদেরও সেই একই ধর্মের জিগির তুলেই জনতাকে তাদের পেছনে সংগঠিত করতে হয়। দুই প্রস্থ স্বাধীনতা অর্জনের পরও অলৌকিকে বিশ্বাসকে উসাহিত করার ক্ষেত্রে যতটা প্রয়াস প্রচেষ্টা দেখা যায় সে তুলনায় বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে ও বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদী দৃষ্টিতে জগতকে দেখা ও বিচার করার জন্য মানুষকে শিক্ষিত করে তোলার বিষয়ে রাষ্ট্রের ও সমাজের ক্ষমতাবান শ্রেণির অনিহাই প্রমাণ করে আমাদের এই এখনকার দৃশ্যপটটা বাংলার মধ্যযুগ থেকে যে খুব কিছু বদলেছে এমন ভাববার অবকাশ কম। নইলে এখনকার সময়েও ব্যবসা বাণিজ্যের উদ্যোগ নেবার সময় মায়েরদোয়াকে রক্ষাবকচ করে অনিশ্চয়তার মোকাবিলা করবার প্রয়াসটাই বা রয়ে যাবে কেন।

(সমাপ্ত)

তথ্যসূত্রঃ

১. আত্মঘাতী বাঙালী : নীরদচন্দ্র চৌধুরী, ১৯৯০। মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স; কলকাতা। ৫ম মুদ্রণ।
২. বাঙলা ও বাঙালীর বিবর্তন : ড. অতুল সুর, ২০০৮। সাহিত্যলোক, কলকাতা; ৪র্থ সংস্করণ ।
৩. পূজা পার্বণের উৎসকথা : পল্লব সেনগুপ্ত, ২০০১। পুস্তক বিপনি; কলকাতা। তৃতীয় সংস্করণ ।
৪. গৌড়বঙ্গ সংস্কৃতি : হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, ১৯৯৯। পুস্তক বিপনি; রজতজয়ন্তী বর্ষ প্রকাশন। কলকাতা।
৫. লোকায়ত দর্শন : দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, ১৩৬৩ ব.। নিউ এজ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।
৬. In Search of Shiva: A study of folk religious practices in Pakistan, 2015 - Haroon Khalid. Rupa Publications. India.

“মায়ের দোয়া”র শিকড় সন্ধানে : প্রথম পর্ব
“মায়ের দোয়া”র শিকড় সন্ধানে : দ্বিতীয় পর্ব
“মায়ের দোয়া”র শিকড় সন্ধানে : তৃতীয় পর্ব
“মায়ের দোয়া”র শিকড় সন্ধানে : চতুর্থ পর্ব
“মায়ের দোয়া”র শিকড় সন্ধানে : পঞ্চম পর্ব
“মায়ের দোয়া”র শিকড় সন্ধানে : ষষ্ঠ পর্ব


মন্তব্য

সিরাজ এর ছবি

সোহেল সাহেব, আপনার সিরিজটা পড়লাম। অনেক কিছুই বুঝি নাই। এইটাই মনে হয় পড়ার সুফল:- বুঝার ও জানার অনেক কিছু যে বাকী আছে সেইটা টের পাওয়া। মায়ের দোয়ার শিকড় যে এত গভীরে আর এর যে এত শাখা প্রশাখা, সেইটা জানার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

লিখার অনেক জায়গায় আপনি রেফারেন্স থেকে সরাসরি টাইপ করে দিছেন, কোনটা সোহেল সাহেবের লিখা কোনটা দেবীপ্রসাদ সাহেবের লিখা সেইটা আলাদা করতে কষ্ট হয়। কোটেশনের মধ্যে দিলে বুঝতে সুবিধা হইত।

আপনার রেফারেন্সের লেখকরা মনে হয় সবাই হিন্দু। মুসলমান গবেষকরা কি এই বিষয় নিয়া কিছু লিখেন নাই বা ভাবেন নাই?

সোহেল ইমাম এর ছবি

আপনি যেভাবে বলছেন সেটা করতে পারলেই ভালো হতো করা যায়নি বা হয়নি মূলতঃ লেখাটা তাড়াতাড়ি শেষ করার অভিপ্রায়ে। ত্রুটিটা থেকে গেছে, হয়তো আরো কিছু থেকে গেছে। লেখাটা পড়েছেন দেখে ভালো লাগছে মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

হাতের কাছে যে বই গুলো পেয়েছি তাই ব্যবহার করেছি, মুসলমান লেখকরা বিশেষ করে কি লিখেছেন এদিকটা খেয়াল করা হয়নি। আমার পড়াশোনাটা খুব বেশি না ফলে সীমাবদ্ধতা থেকেই গেছে হয়তো।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

আয়নামতি এর ছবি

শ্রমসাধ্য আর পাঠকের চিন্তাকে খানিক উসকে দেবার মতো একখানা পোস্টের সুন্দর সমাপ্তির জন্য আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাই।মিস করা পর্ব সময় করে পড়বো নিশ্চয়ই। শুভকামনা।

সোহেল ইমাম এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ আয়নামতি, সব গুলো পর্বতেই উৎসাহ যুগিয়ে গিয়েছিলেন বলেই হয়তো লেখাটা কোনক্রমে শেষ করতে পারলাম। অশেষ কৃতজ্ঞতা। হাসি

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যদি নিজে পারেন তাহলে নিজে, আর না পারলে অন্য কারো সাহায্য নিয়ে এই সিরিজটা একটা ই-বুক বানিয়ে ফেলেন। তাহলে পাঠকেরা এক টানে পুরো লেখাটা পড়তে পেয়ে যাবেন। যেহেতু আপনার এই সিরিজের কমেন্ট সেকশনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে তাই সেগুলো ই-বুকের পরিশিষ্টতে দিয়ে দিতে পারেন।

সিরিজটা লেগে থেকে শেষ করার জন্য অভিনন্দন! আর এর জন্য যে পরিশ্রম করেছেন তার জন্য ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সোহেল ইমাম এর ছবি

পাণ্ডবদা, লেখাটার মন্তব্যের ঘরে করা আপনাদের দারুন সব মন্তব্য লেখাটার সঙ্গে যুক্ত করতে পারলে খুব ভালো হতো। আমার নিজের ডিজিটাল জ্ঞানগম্যি খুব বেশি না, তাই অন্য কারো সাহায্যই নিতে হবে মনে হচ্ছে।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

আয়নামতি এর ছবি

সিরিজটাকে ই-বুক বানানোর বিষয়ে পাণ্ডব'দার সাথে সহমত জানাচ্ছি।

এক লহমা এর ছবি

বেশ ভাল একটা ধারাবাহিক পড়া গেল। কি করে লিখে উঠতে পারলেন - আপনিই জানেন। সেটা পারার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

ই-বই বানিয়ে ফেললে বেশ হয় কিন্তু! আপনি এগোতে চাইলে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসার মানুষের অভাব ঘটবে না বল্যেই মনে হয়।

বই বানানোর সময় নিজের কথা আর অন্যের উদ্ধৃতিকে আলাদা করে দেখানোর জন্য যত্ন নেওয়ার অনুরোধ আরো একবার জানিয়ে রাখলাম (দাবীও বলতে পারেন। এত সুন্দর লেখার স্রষ্টার কাছে দাবী করব না ত কার কাছে করব!)

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সোহেল ইমাম এর ছবি

লেখাটা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ একলহমা। আপনার দেখানো ত্রুটি গুলোও সময় করে শুধরে নিতে হবে। এই দিকটায় দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য আপনার কাছে কৃতজ্ঞতা।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

হিমু এর ছবি

সোহেল ভাই, আপনার যদি সময় হয়, আমাদের দেশের প্রাচীন সাংস্কৃতিক ও কারুচর্চা (artisanry) নিয়ে একটা সিরিজ করবেন নাকি? আপনি চাইলে আমি পুরনো কিছু ইংরেজি প্রবন্ধ পাঠাতে পারি। কিন্তু আরও ভালো হয় যদি মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ যোগ করা যায়, রিকশার অলঙ্করণের মতো। আপাতদৃষ্টিতে খুব সাধারণ কিছু জিনিসের মাঝেও সূক্ষ্ম এবং পরম্পরাবাহিত কৌশল থাকে, সেগুলো নতুনের চাপে অলিখিত রয়ে গিয়েই হারিয়ে যায়। ভোক্তার নিস্পৃহতা একটা বড় কারণ। ব্যক্তিগত উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি, আমি ছাত্রাবস্থায় বান্দরবান ও রাঙামাটির পাহাড়ি গ্রামগুলোয় বেশ কয়েকবার গিয়েছি, প্রতিবারই গ্রামের নিজস্ব তাঁত থেকে বা কাছের বাজার থেকে চাদর কিনে ফিরেছি। কিন্তু এ কৌতূহলটা কখনও জাগেনি, ত্রিপুরা, বম বা মারমা জনেরা তাঁদের সুতো কী দিয়ে রঞ্জন করেন বা করতেন। সম্প্রতি মধ্যযুগীয় রঞ্জন শিল্প নিয়ে কয়েকটা বই পড়ার পর এ প্রশ্নটা আবার মাথায় ঘুরছে। এ ধরনের অনেক শিল্পপণ্য আছে, যার পেছনের শিল্পটাকে দেখার চোখ হয়তো আমাদের এখনও ফোটেনি। এগুলো নিয়ে কিছু লিখবেন নাকি?

সোহেল ইমাম এর ছবি

হিমুভাই দেশের প্রাচীন সংস্কৃতি নিয়ে আগ্রহটা আমার সাংঘাতিক কিন্তু সম্প্রতি সময়টা ঠিকমত বের করতে পারছিনা। পেশাগত কারণে নিজ শহরের চৌহদ্দির মধ্যেই বেশ কিছুদিন ধরে বন্দি হয়ে আছি তাছাড়া আমরা দুই শিম্পাঞ্জি এখন আমাদের সদ্য আগত তৃতীয় শিম্পাঞ্জি নিয়ে হিমসিম খাচ্ছি, এই ঝামেলায় ইদানীং পড়ার সময়টাই বের করা মুশকিল হয়ে উঠছে। ইচ্ছে আছে, পড়ার, জানার, সব ঝামেলা সত্ত্বেও একসময় হয়তো ঠিক ম্যানেজ করে ফেলবো । কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে আরামকেদারা অভিযাত্রী হওয়া ছাড়া গতি দেখছিনা। তবে পড়তে আপত্তি নাই, পড়ার জিনিস পেতেও আপত্তি নাই।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

চিন্তা নেই, শিম্পাঞ্জিরা দ্রুতই হোমো স্যাপিয়েন্স হয়ে যায়। আপনি বরং কাজের পরিকল্পনা করুন। হিমুর কাছ থেকে বইপত্র নিয়ে পড়ুন। হোমওয়ার্ক করুন। দেখবেন অচিরেই কাজে লেগে পড়ার অবস্থায় পৌঁছে যাবেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সোহেল ইমাম এর ছবি

হাসি

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

সত্যপীর এর ছবি

তাছাড়া আমরা দুই শিম্পাঞ্জি এখন আমাদের সদ্য আগত তৃতীয় শিম্পাঞ্জি নিয়ে হিমসিম খাচ্ছি

..................................................................
#Banshibir.

সোহেল ইমাম এর ছবি

হাসি

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শুধু প্রাচীন কেন, বিদ্যমান লোকশিল্পের পেছনের যে প্রযুক্তি, কৌশল ও কাঁচামাল ব্যবহৃত হয় সেগুলোর ব্যাপারে আমাদের অজ্ঞতা আছে এবং সেগুলো লিপিবদ্ধও করা হয় না। এক জায়গাতে শুনেছিলাম সেখানে কর্মকাররা দা-বটি-ছুরিতে ফাইনাল হিট ট্রিটমেন্ট দিতেন কুল কাঠের আগুন দিয়ে। কেন? সেটা আমি বা অন্য কেউ খোঁজ করিনি। সারা বাংলাদেশে ছানা দিয়ে মিষ্টি বানানো হয়। কিন্তু ছানা কাটানো এবং কাটা ছানা দিয়ে মিষ্টি বানানোর পদ্ধতি সারা দেশে এক নয়। আমরা কি ভেবে দেখেছি কেন কোন রান্নায় ফোড়ন আর কোন রান্নায় বাগার দিতে হয়? কোথায় সর্ষে দিয়ে, কোথায় কালিজিরা দিয়ে, কোথায় জিরা দিয়ে, কোথায় তেজপাতা দিয়ে, কোথায় শুকনো লঙ্কা দিয়ে, আর কোথায় পেঁয়াজ-রশুন দিয়ে ফোড়ন দিতে হয়? এগুলোর পেছনে রান্নায় সুবাস আনা ছাড়া কি অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই! আপনি যে তন্তুরঞ্জনের কথা বললেন সেখানে মূল রঞ্জকগুলো, রঙ পাকা করার অনুঘটকগুলো (রি-এজেন্ট অর্থে, বাংলাটা ঠিক হলো না), এসবের যোগান; রঞ্জনের পর্যায়গুলো, রোদ-বাতাস-শিশির-কুয়াশার ব্যবহার এগুলো নিয়ে আমরা ভাবি না।
এভাবে অসংখ্য স্থানীয় প্রযুক্তি হারিয়ে গেছে অথবা নতুন করে চাকা আবিষ্কার করতে হয়েছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু এর ছবি

রং পাকা করার রাসায়নিককে (মরড্যান্ট) রংস্থাপক লিখতে দেখেছি কয়েক জায়গায়।

আংরেজ চুরিদারি করতে এসে গেরস্তের ঘরে কোথায় কী আছে সেগুলো বেশ খুঁটিয়ে লিখে গেছে বলে বেশ কিছু জিনিস নিয়ে খোঁজ এখনও পাওয়া সম্ভব। কিন্তু চোরের টীকা আর গেরস্তের টীকায় ফারাক থাকে, চোরে চোরেও টীকার কিসিমে ফারাক থাকে। সিন্ধু আর বাংলা-বিহারে রঞ্জনশিল্পের চর্চা (শুধু তন্তু নয়, চামড়া আর কাঠও আছে) নিয়ে দুই সায়েবের দু'খান বই পেলাম, দু'জনের নজর দুই বোঁচকার দিকে বলে বইয়ের মান-পরিমাণে বহু ফারাক।

এগুলো নিয়ে তো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গবেষণার বিপুল অবকাশ আছে। হয়তো হচ্ছে, আমরা জানি না। (যদি কোনো সদাশয় পাঠক এ ধরনের গবেষণার সাথে যুক্ত থাকেন, দয়া করে সচলায়তনে এ নিয়ে টুকিটাকি লিখুন।)

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

mordant = 'রঙস্থাপক' ঠিক আছে, কিন্তু reagent = কী হয়? কর্ম বিচারে 'অনুঘটক' বলা খুব একটা ভুল হয় না। অনেকে catalyst = 'অনুঘটক' বলতে চান। তবে catalyst-কে বাংলায় 'প্রভাবক' বলাটা বহুল প্রচলিত। সেক্ষেত্রে ভালো বিকল্প না পাওয়া পর্যন্ত reagent = 'অনুঘটক' চালাতে চাই।

চোরের বয়ান, ব্যাখ্যা আর টীকা সম্পর্কে আমি সতর্ক আছি। তবে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো সায়েবদের লেখা কিছু পেলে সেটার বয়ান, ব্যাখ্যা আর টীকাকে আসমানী কিতাবের মতো অভ্রান্ত মনে করে। যে সায়েব যেটা নিয়ে লিখেছে সেটা তার সীমাবদ্ধ জ্ঞান ও পূর্বধারণার প্রভাবে কতোটা সত্যবিচ্যুত সেটা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দেখতে অনিচ্ছুক। তাছাড়া সর্ববিদ্যাবিশারদ সিবিল সার্বেন্টদের লেখা গেজেট বা ব্যক্তিগত বয়ানগুলো প্রায়ই ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য দ্বারা প্রভাবিত, যার কথা আপনিও বলেছেন। এতো কিছু বিবেচনা করে ওসব বয়ান পড়তে গেলে বাদ দিতে দিতে হাতে কেবল পেনসিল থাকবে। তবে গ্রস একটা ধারণা নেবার জন্য এই প্রকার বইগুলো মন্দ না।

হয়তো হচ্ছে, আমরা জানি না

- থাকলে তো জানবেন! অতি অল্প ব্যতিক্রম ছাড়া দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্নাতকোত্তর পর্যায়ের গবেষণার নামে কী চলে সেটা ঐ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে বুঝবেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু এর ছবি

আমরা মনে হয় পাঠ্যবইতে রিএজেন্ট = বিকারক আর রিঅ্যাকট্যান্ট = বিক্রিয়ক পড়েছিলাম, পরিষ্কার মনে নেই।

সিভিল সার্ভেন্ট (অর্থাৎ আমরা সিভিলরা যাঁদেঁর সার্ভেন্ট [ডবল চন্দ্রবিন্দু না দিলে সম্মানটা ঠিকমতো জানানোও মুশকিল]) প্রসঙ্গে আকবর আলী খান সাহেবের "পরার্থপরতার অর্থনীতি" বইটার কথা মনে পড়ে গেলো। খাঁসাহাব বিচক্ষণ মানুষ, লেখার হাতও ভালো, কিন্তু গোটা বইটাই তিনি লিখেছেন এক বিশেষ ঢঙে। নানা আলাপ, নানা যুক্তি, নানা তক্কোর পর শেষদিকে গিয়ে "অমুক সায়েব যথার্থই বলেছেন" লিখে সায়েবদের কাছে শেখা একটা বুলি, যেটা অনেক সময়ই আগের আলাপ-যুক্তি-তক্কোর ধার ধারে না, ঝেড়ে দিয়েছেন। তাছাড়া সব অর্থনীতির মারপ্যাঁচ বদমাশ রাজনীতিক আর দুষ্ট জনতার ক্ষেত্রে খাটে, আমলাদের জন্য অর্থনীতির কোনো সূত্রফুত্র নেই। এ কারণে আমরা জানতে পারি, কেন ত্রাণে পচা গম দিলে জনতার উপকার করা হয়, কারণ ভালো গম দিলে স্থানীয় পাণ্ডারা সেটা ঝেড়ে দেবে, এটাই অর্থনীতির অলঙ্ঘ্য নিয়ম। কিন্তু স্থানীয় আমলা কেন সেটা ঠেকাতে পারবে না, বা ঠেকাতে না পারলে সে ঐ চাকরি কী ফেলে আঁটি বাঁধার জন্য করে, সেটা নিয়ে অর্থনীতি নিশ্চুপ। সায়েবদের লেখা শ'দেড়েক বা শ'খানেক বছরের পুরনো বইগুলো পড়লে বোঝা যায়, বর্তমান বা সদ্যসাবেক আমলারা এই মেজাজ কোত্থেকে পেয়েছেন। সায়েবদের কথার ওপর কথা বলা মানে নিজের সাহেবয়েড হওয়ার পথে হাগু করা, গবেষকরা সেটা করবেনই বা কেন?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

রিএজেন্ট = বিকারক আর রিঅ্যাকট্যান্ট = বিক্রিয়ক - ঠিক! এদুটো শব্দ মাথা থেকে একেবারে নাই হয়ে গিয়েছিল। তাহলে প্রভাবক আর অনুঘটক শব্দদুটো ক্যাটালিস্টের জন্য থাকুক।

স্যারদের সাথে ফরমাল বা ইনফরমাল উভয় প্রকার আলাপের সময় বোঝা যায় - সাভারের স্যারেরা < ওয়ালটনের স্যারেরা < অক্সব্রীজের স্যারেরা - এমন একটা ছাঁচ তাদের মাথার ভেতরে খোদাই করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং তাদের পক্ষে শ্রেষ্ঠত্বের এই সিলসিলা ভেঙে অন্য কিছু বলতে যাওয়া মানে ব্লাসফেমির পর্যায়ের কিছু।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু এর ছবি

চুনিলাল বসু ১৮৯৫ সালে লেখা রসায়নের বইতে রিএজেন্টের বাংলা করেছিলেন পরিচায়ক। জৈবরসায়নে রিএজেন্ট শব্দটা বিকারক অর্থে ব্যবহৃত হয় (যে রাসায়নিক যোগ করে জৈব পদার্থের কাঙ্খিত রূপান্তর ঘটানো হয়), বিশ্লেষণী রসায়নে আবার ব্যবহৃত হয় পরিচায়ক অর্থে (যে রাসায়নিক যোগ করে কোনো দ্রবণে নির্দিষ্ট অপর কোনো রাসায়নিকের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়)। এক্ষেত্রে দ্ব্যর্থক ইংরেজির চেয়ে বাংলা বিকল্প দুটো বরং অনেক স্পষ্ট।

মন মাঝি এর ছবি

আপনি লিখেছেন,

এ সম্পর্কে অতুল সুর বলছেন, বাঙলার মুসলমানরা যে হিন্দুসমাজ থেকেই ধর্মান্তরিত, তা তাদের আচার ব্যবহার থেকে বুঝতে পারা যায়।

সংখ্যাগরিষ্ঠ বর্তমান বাঙালী মুসলমান যে প্রধানত বাঙালী হিন্দুসমাজ থেকেই ধর্মান্তরিতদের উত্তরসূরী (এবং মুঘল রাজা-বাদশাহ বা মধ্যপ্রাচ্যাগত পাঠান-সৈয়দ-শেখদের বংশধর না! হো হো হো ), এই দৃশ্যমান-জ্বাজ্বল্যমান বাস্তবতাটা বাঙালী মুসলমানকে ইতিহাসবিদ আর নৃত্ত্ববিদদের রেফারেন্স দিয়ে সবসময় বলতে হয় কেন? তারা কি চোখে দেখতে পায় না কিছু? তাহলে তো আম গাছে আম হয়, জাম গাছে জাম, এসব কথাও বোটানিস্টদের রেফারেন্স দিয়ে বলা উচিৎ!

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক দেরি করে হলেও শেষ পর্যন্ত আপনার এই সিরিজটি পড়ে শেষ করলাম সোহেল ইমাম। বাপরে! এই রকম একটা সিরিজ লেখা তো দূরের কথা, কল্পনা করাও দারুণ দুঃসাধ্য। ই-বুকের কথা বলেছেন কয়েকজন, সেটা হলে ভালোই হয়। কিন্তু হাতে নিয়ে পাতার পর পাতা উল্টে যাবার আনন্দ কই সেখানে? বাংলাদেশের প্রকাশনা জগৎ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। প্রবন্ধের বই বাজারে কেমন বিকোয় সেটাও জানি না। সচলায়তনের এতো এতো সদস্যদের মধ্যে কেউ কি নেই যিনি আপনাকে মলাটে বাঁধার একটা চেষ্টা করতে পারেন?

হিমুর প্রস্তাবটিও ভেবে দেখার মতো।

---মোখলেস হোসেন

সোহেল ইমাম এর ছবি

লেখাটা আপনি পড়েছেন দেখে ভালো লাগছে মোখলেস ভাই। হাসি

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

সোহেল ইমাম এর ছবি

হিমু ভাই পাণ্ডবদা দু’জনের কাছেই জানতে চাইছি, একসময় আমাদের দেশে বৃষ্টি ঠেকাতে বা আনার জন্য শেরালি বা এই জাতীয় কিছু মানুষ থাকতো বলে শুনেছি। এরা নাকি মন্ত্রতন্ত্র জানতো। আবার গুণীন বলেও কিছু মানুষ থাকতো। এদের সম্পর্কে কোথায় ভালো জানা যায়। এদের ওপর কারো লেখা আছে কি? আমাদের এপার বা ওপার বাংলায়?

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

হিমু এর ছবি

শিলারি (শিলের শত্রু) থেকে এদের নাম হয়েছিলো শিরালি/হিরালি। হাওর অঞ্চলের কৃষক সমাজে এদের দেখা মিলতো আনুমানিক শ'দেড়েক বছর আগ পর্যন্ত। শরৎচন্দ্র মিত্রের চমৎকার একটা প্রবন্ধ আছে শিরালিদের ওপর (তবে তিনি পুরোটাই শোনা কথার ওপর সাজিয়েছেন, সরজমিন যাচাই করেননি)। শিরালিদের চরিত্র হিসেবে রেখে দুর্ধর্ষ সব ফ্যান্টাসি গল্প লেখা সম্ভব।

সোহেল ইমাম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ হিমুভাই। হাসি

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

সত্যপীর এর ছবি

খালি ধন্যবাদ দিলে তো চৈলত ন। শিরালি গুইলা খাওয়ার পর ফ্যান্টাসি গপ ছাড়েন। ছয় মাস সুমায় দিলাম...

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

কিন্তু আপনি হঠাৎ আমগো ছাইরা-ছুইরা কৈ গেলেন গা? তাত্তারি কৈতর ফারুকরে লইয়া হাক্ক মাওলা কইয়া কিছু একটা ছারেন! ছয় দিন সুমায় দিলাম...

****************************************

সত্যপীর এর ছবি

হইবনে তাড়া কী।

..................................................................
#Banshibir.

সোহেল ইমাম এর ছবি

পীরসাহেব গল্প লিখাতো খুবই কঠিন কাজ।আপনার লেখা পাইনা বহুদিন।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

সত্যপীর এর ছবি

শুরু কইরা দেখেন বেশি কঠিন কিনা। আমিও ব্যাপক কঠিন মনে করছিলাম।

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে বছর চল্লিশেক আগেও শিরালীরা বহাল তবিয়তে ছিল। এই ব্যাপারে আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ শুনেছি। স্কুল পর্যায়ে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম শিরালীদের কর্মকাণ্ড দেখার আশায় ১৯৭৭/১৯৭৮ সালে তাঁদের বাড়ির একজন রাখালের সাথে কিশোরগঞ্জে তার দেশের বাড়ি বেড়াতে যান। সময়কালটা ধান পাকার মৌসুম, এবং শিলাবৃষ্টির মৌসুমও বটে। দিন সাতেক সেই গ্রামে অপেক্ষা করার পর শিলাবৃষ্টি নামে। স্যার টোকা মাথায় দিয়ে শিরালীর কর্মকাণ্ড দেখতে যান। দেখা যায় বিচিত্র পোশাক পরা একজন লোক হাতে একটা লাঠি (লাঠিতে রঙিন কাপড়ের অনেক ন্যাতা জড়ানো) নিয়ে নাচতে নাচতে দুর্বোধ্য মন্ত্র উচ্চারণ করছে এবং তার অশ্লীল সব শব্দ সহযোগে বিশেষ এক সুরে গান গাইছে। এর ফলে ধান ক্ষেতে যে শিলা পড়েনি তা নয়, তবে কেন কারো কারো ক্ষেতে শিলা পড়লো সে ব্যাপারে শিরালীর ব্যাখ্যাও ছিল।

এখনো নিশ্চয়ই শিরালীদের কেউ কেউ টিকে আছে। শিরালীদের গান ভাদু, টুসু গানের মতো লোকগানের একটা প্রকরণ। সেটা হারিয়ে গেছে। শিরালীদের ওপর কোন লেখা পড়তে পাইনি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সোহেল ইমাম এর ছবি

এই তথ্যগুলোও কম নয়। একেবারে কিছু না পাবার চেয়ে কিছু সূত্রতো অন্তত পাওয়া গেলো।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক দিন হয়ে গেলো সোহেল ইমাম। দয়া করে লেখালেখি শুরু করুন।

---মোখলেস হোসেন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।