আগামী ২১ শে ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা ৬ টা ৩০ এ, টেক্সাস থেকে মুহম্মদ জুবায়েরের স্মরণে একটি সভা আয়োজন করা হয়েছে। এটি আয়োজিত হবে আরভিং আর্টস সেন্টার, টেক্সাসে। এ সময় মুহম্মদ জুবায়েরের সাহিত্য কর্ম এবং তার জীবনি নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
সচলায়তন মুহম্মদ জুবায়েরের জন্য গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করছে।
আপডেট: আপনি এই সভায় কিছু জানাতে চাইলে মন্তব্যের ঘরে লিখতে পারেন। এম এম আর জালাল আমাদের হয়ে সেটা পৌছে দেবার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।
মন্তব্য
ধরে নিচ্ছি অনুষ্ঠান ওপেন ফর অল। পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব সহ যেতে চাই।
অফটপিকঃ ইরভিং না, আরভিং।
থ্যাঙ্কস
জানিয়ে দেবেন- এই না দেখাটা মানুষটাকে আমরা ভালোবাসতাম ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
জুবায়ের ভাইকে আমরা ভুলবো না কোনোদিন।
রক্তের সম্পর্কে সম্পর্কিত না হয়েও কিছু মানুষ আত্মার অধিকারে অভিভাবক হয়ে ওঠেন। জুবায়ের ভাই ছিলেন আমাদের জন্য তেমনই একজন মানুষ। প্রাত্যহিক ব্লগীয় জীবন একটু এলোমেলো হলেই জুবায়ের ভাইয়ের অভাব বোধ করি আজও।
আশা করি ভাল আছে জুবায়ের ভাই। আশা করি তাঁকে আশাহত করবো না আমরা।
আমি এখনও মেনে নিতে পারিনা জুবায়ের ভাই নেই। আমরা যখন সচলায়তনে ইন্টারভিউ নেয়ার ব্যাপারটা চালু করলাম তখন প্রতিটা স্ক্রীপ্ট জুবায়ের ভাইকে দেখিয়ে নিতাম। একটা ভরসা পেতাম তখন। এখনও যখন মেইল লিখতে গিয়ে জুবায়ের ভাইয়ের এড্রেসটা ভেসে উঠে, মনটা খারাপ হয়ে যায়।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আমার সেল ফোনে এখনও একটা এন্ট্রি আছে -- "Md. Zubair Sachal Dallas"
জানি না আদৌ কোনদিন এটি মুছে ফেলার মত মনের জোর পাবো কিনা।
ইশতির মতই। নতুন ফোনে কিছু নাম্বার কপি করছিলাম। ওনার পুরানো নাম্বার দুটা ফোনে রেখে দিলাম। না রাখার কোন কারন পেলাম না।
এখনো পুরান লেখাগুলো খুললে দেখি প্রতিটা লেখাতেই ওনার একেকটা চমৎকার কমেন্ট। সচলে আমার প্রথম লেখা থেকে।
ওনার সাথে ঘন্টা দুইয়ের জন্যে দেখা হয়েছিল, উনি চলে যাবার কয়েক মাস আগে। অনেক ভাগ্যবান লাগে নিজেকে। একটা বই নিয়ে গিয়েছিলাম উপহার হিসাবে। সেটা তিনি পড়ার সময় পেয়েছিলেন কি না, জানি না।
ভাবী আর বাচ্চা দুটো কেমন আছে, প্রায়ই চিন্তা হয়। তাঁদের আপডেট কেউ পারলে জানাবেন দয়া করে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
এ পোস্টে বার কয়েক এসে ঘুরে গেছি। কী লিখব বুঝতে পারছি না।
এখানে আমি বোধহয় একমাত্র দুর্ভাগা সচল যে জুবায়ের ভাইয়ের জানাযা পড়েছি। অথচ জালাল ভাইয়ের কথায় যখন সচলে জুবায়ের ভাইয়ের অসুস্থতার আপডেট দেয়া শুরু করি, এমন কিছু হতে পারে ঘুণাক্ষরেও ভাবি নি। বরং ভাবছিলাম জুবায়ের ভাই যখন সুস্থ হয়ে এই পোস্ট দেখবেন, তখন আমাকে নির্ঘাত ঝাড়ি খেতে হবে কেন এ পোস্ট দিয়েছি। ভীষণ প্রচারবিমুখ ছিলেন মানুষটা। মাস কয়েক আগে আমি ডালাস থেকে ফিরে একটা পোস্টে তাঁর কথা লিখেছিলাম। লেখার পরে দেখি জুবায়ের ভাইয়ের কোন সাড়া-শব্দ নাই। যে মানুষটা সচলে সারাক্ষণ লগড-ইন হয়ে থাকত, তাঁর কোন খোঁজ নাই, পোস্টে কোন কমেন্টও দেয় না। অবেশেষে দু’তিনদিন পর পোস্টে বড় বড় ফন্টে লিখলেন ‘সর্বনাশ’, তারপরেই বাসায় ফোন- ‘তুমি পোস্টে আমার কথা লিখসো ক্যান, এখন আমি তো লজ্জায় সচলেই ঢুকতে পারতেসি না’। আরে লোকটা বলে কী! জুবায়ের ভাইকে বিব্রত করে আমি নিজেও ভীষণ বিব্রত। খুব অভিমানও হল। যে কাজটা কখনো করি না, তাই করলাম। পোস্ট সম্পাদনা করে জুবায়ের ভাইকে নিয়ে কথা সব মুছে দিলাম। এরপর জুবায়ের ভাইয়ের মেসেজ পেলাম - ‘তুমি মনে হয় একটু পাগল আছো। আমি কিন্তু ঠিক অভিযোগ করিনি। তোমার লেখাটা বদলাতে হলো কেন বুঝলাম না'। ‘আমার সামান্য অনুযোগ-সম্বলিত 'লজ্জিত' বোধ করার ফল হিসেবে তুমি লেখাটা এভাবে বদলে দেবে, সত্যিই ভাবতে পারিনি। লেখাটা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রকাশিত হলে কি তুমি এই কাজটা করার সুযোগ পেতে? পাঠকের প্রতিক্রিয়ায় অথবা যাকে/যাদের নিয়ে লেখা - তাদের প্রতিক্রিয়ায় লেখা বদলানো চলে না। উচিত নয়। সেই বিবেচনা থেকেই অনুরোধ করি, সম্ভব হলে লেখাটার আগের চেহারা ফিরিয়ে দাও।'
অভিমান এতই তীব্র হয়ে বেজেছিল আমি সেই পোস্ট অনেকদিন ঠিক করি নি। জুবায়ের ভাইয়ের অসুস্থ হবার খবর শুনে সেটা তাড়াতাড়ি করে ঠিক করে রেখেছিলাম যেন সুস্থ হলে জানাতে পারি। কিন্তু জুবায়ের ভাই সে সু্যোগ তো দিলেন না। সেপ্টেম্বরে আমিও নানা ঘটনাপ্রবাহে আবার ডালাস গেলাম। সেপ্টেম্বর ২০০৮। এ মাসটার কথা আমার সবসময় মনে থাকবে। মনে থাকবে ১২, ১৭, ২৪ তারিখগুলোর কথা। সতের তারিখ জুবায়ের ভাইকে শেষ হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। জেগেই ছিলেন। মুখে মাস্ক, শরীরে অনেক নল, যন্ত্রপাতি। আমাকে দেখে খুব খুশি হয়ে মুখের মাস্ক ফেলে অস্পষ্ট স্বরে কথা বলা শুরু করলেন। মনে হল জানতে চাইলেন কেমন আছি। আমি জানালাম সচলায়তনের সবাই খুব উদ্বিগ্ন আপনার জন্য। হো হো করে হেসে উঠলেন। ওটা কি মৃত্যুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হাসি ছিল! জানি না। তবে সেদিন জুবায়ের ভাইকে দেখে মনে হয়েছিল খুব শিঘ্রী সুস্থ হয়ে উঠবেন। যা ভাবি তা কেন যেন হয় না কখনো।
জুবায়ের ভাইয়ের লেখা নিয়ে কোন মন্তব্য করার মত স্পর্ধা, সাহস বা যোগ্যতা আমার নেই। এমনিতেই গল্প, উপন্যাস বিষয়ে আমি ক-অক্ষর গো-মাংস। যেটা সবচেয়ে ভাল লাগত, তার পরিমিতবোধ। মনে আছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলেন উনি। তখন আমি সচলায়তনে নতুন, জুবায়ের ভাইকে ভালো করে চিনি না। বংগবন্ধু বা রাজনীতি বিষয়ক পোস্টগুলো সাধারণত যা দেখি, তা আমার কাছে একপেশে মনে হয়। কিন্তু জুবায়ের ভাইয়ের পোস্ট পড়ে চমৎকৃত হয়েছিলাম। আমি মন্তব্য করেছিলাম- ‘লেখাটা খুব ব্যালান্সড। এ জাতীয় লেখাগুলো সাধারণত খুব চরম বিদ্বেষ বা চরম স্তুতিপূর্ণ হয়’। ওনার দেয়া জবাবটাও আমার সবসময় মনে থাকবে- ‘চরম বিদ্বেষ বা চরম স্তুতিপূর্ণ লেখা তখনই সম্ভব হয়, যখন কোন দলের কাছে মাথা বন্ধক দেয়া থাকে, আমার সে যোগ্যতাই নেই’। কথাটা বোধহয় আমাদের সবার জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। জবাব প্রসঙ্গে মনে পড়ল, তিনি খুব ধৈর্য্য নিয়ে তাঁর পোস্টে করা ছোট-বড় সবার মন্তব্যের জবাব দিতেন। বড় মনের মানুষদেরই বোধহয় এমন গুণ থাকে। অনেকের পোস্টে তিনি নিয়মিত কমেন্ট করতেন। আমার অগা-মগা পোস্টগুলিতেও সবসময় তাঁর কমেন্ট পড়ত।
মন্তব্যটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। জুবায়ের ভাই আমেরিকায় থাকলেও লোকটার মন পড়েছিল বাংলাদেশে। সচলায়তন ছিল সেই এক টুকরো বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। আমাদের যাদের মন সবসময় বাংলাদেশে পড়ে থাকে, কিন্তু ভাগ্যের অন্বেষণে দেশ ছাড়া হতে হয়, দেশ কি কখনো সেই কষ্ট বুঝতে পারে?
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ যারা পাচ্ছেন তাদের কাছে অনুরোধ-- একটা আপডেট দিয়েন।
যেহেতু এটা একটা বড় অডিয়েন্সের কাছে উপস্থাপিত হচ্ছে তাই সচলায়তনের পক্ষ থেকে সবাইকে মন্তব্য করার অনুরোধ করছি। আমি জানি সবাই কিছু বলার মত পাচ্ছেন না। তবু একটা দুটো লাইন করে মন্তব্য করে জুবায়ের ভাইয়ের প্রতি আমাদের ভালোবাসা এবং সম্মানটা একটা ব্রডার অডিয়েন্সে কাছে জানাই।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
জুবায়ের ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা। আর তাঁর সন্তানদের প্রতি অনুরোধ আপনারা আপনাদের বাবার জন্য বেশি বেশি দোয়া করুন। সন্তানদের দোয়া আল্লাহ নিশ্চই কবুল করেন।
মুহম্মদ জুবায়ের এর লেখা পড়তাম সবসময়েই। উপন্যাস "চুপকথা" পড়েছিলাম একটি ক্লিনিকের ওয়েটিংরুমে বসে। আমার চোখে জল দেখে আশপাশের লোকেরা ভেবেছিল যে আমি বোধহয় শরীরের যন্ত্রনায় কষ্ট পাচ্ছি। সে কথাটি মন্তব্যের আকারে জানি্য়েছিলামও তাকে। তিনি মজা পেয়েছিলেন।
তার লেখা এবং অন্যান্য তথ্য থেকে মনে হয়েছে যে আমি বয়সে তার কাছাকাছিই হবো হয়তো। জানি তিনি টেক্সাসে থাকতেন। মনেমনে প্ল্যান করেছিলাম যে যদি কোনদিন ওখানে যাই, তাহলে নিশ্চয়ই তার সাথে দেখা করবো। আমাদের অনেক কিছুই আলাপ করার জিনিস আছে।
গতবছরের সামারের কথা। আমরা ক্যালিফোর্নিয়াতে বেড়াতে যাবো। বাক্স-পেঁটরা বাঁধাবাঁধি করছি। এমন সময়ে তিনি সচলায়তনে তার শেষ পোস্ট টি দিলেন। বিষয়বস্তু, তার মেয়ে কলেজে পড়তে চলে যাচ্ছে। বড় বিষন্ন পোস্ট, বড় চোখে জল আনা পোস্ট। সবাই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে মন্তব্য করছে।
আমার ভিতরে কেমন যেন করে উঠলো। আমি জানি কেমন এই অনুভূতিটি। গেল বছরে আমারও হয়েছিল এমনতরো অভিজ্ঞতা। সেই ব্যস্ততার মাঝেও দ্রুত একটি লেখা পোস্ট করলাম সচলে। লেখাটির শিরোনামে মুহম্মদ জুবায়ের এর নামোল্লেখ করা ছিল। লেখাটি পড়ে তিনি একটি মন্তব্যও করেছিলেন।
সেইই বোধহয় তাঁর শেষ মন্তব্য, তারপরই তো চলে গেলেন হাসপাতালে। আমরা প্রতীক্ষায় রইলুম, প্রতীক্ষায় রইলুম।
বড় কষ্ট হচ্ছে। ভীষণ কাছের মানুষ ভাবতাম তাকে। ভাইয়ের মতো, বন্ধুর মতো, শিক্ষকের মতো। অথচ তার সাথে কোনদিন দেখা হয়নি, কথা হয়নি। ক্ষ্ট হচ্ছে আপনার মেয়েটির জন্যে, কষ্ট হচ্ছে আপনার স্ত্রীর জন্যে, আপনার ছেলেটির জন্যে।
মুহ্ম্মদ জুবায়ের- এ আপনি কি করলেন? আপনার বুকে ছিল ভালবাসার অথই সাগর। এতখানি ভালবাসা ধারণ করতে পারার মতো মানুষ কি আর আমরা কোথাও পাবো?
(উপরের কথাগুলো লিখেছিলাম তার মৃত্যু সংবাদ পাবার পর। সেদিনটির কথা আজো মনে পড়ে। সেদিন কাজের টেবিলে বসে বারবার চোখ ভিজে উঠেছিল। যাঁকে কোনদিন দেখিনি, যাঁর সাথে কোনদিন কথা হয়নি, এমন একজন মানুষের জন্য কেঁদেছি। অথচ একবারের জন্যও অবাক হইনি। তিনি যথার্থই আমাদের সবার কাছের মানুষ ছিলেন, প্রাণের মানুষ ছিলেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা আর তাঁর পরিবারের প্রতি শুভকামনা জানাচ্ছি।)
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
আমি জুবায়ের ভাইয়ের "সিকি-আধুলি গদ্যগুলি" বইয়ের ভূমিকাংশ উদ্ধৃত করি শুধু।
২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ এ মুহম্মদ জুবায়ের মারা গেছেন। কিন্তু সচলায়তনকে খনন করে প্রায় প্রতিটি লেখাতেই তাঁকে পাওয়া যায়। প্রায় প্রতিটি পোস্টেই চোখে পড়ে অশ্মীভূত ফুলের মতো তাঁর মন্তব্যগুলি।
মুহম্মদ জুবায়েরের তাই মৃত্যু আছে, লুপ্তি নেই।
হাঁটুপানির জলদস্যু
পোস্টার জুড়ে দিলাম।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
উদ্যোক্তাদের স্মরণসভা আয়োজনের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। তবে বানান বিষয়ে সদা সচেতন মুহম্মদ জুবায়েরের পোস্টারে ভুল বানানগুলো দৃষ্টিকটু লাগল।
প্রোজ্জল-> প্রোজ্জ্বল
দূর্লভ-> দুর্লভ
কথা-শিল্প -> কথাশিল্প
শেকড়-বিহীন-> শেকড়বিহীন
গুনী-> গুণী
সর্বোপরী -> সর্বোপরি
জীবনদশায়-> জীবদ্দশায়
গীতি নাট্য -> গীতিনাট্য
নতুন মন্তব্য করুন