শুকনো ঠান্ডা দিনের আরেকটি বিক্ষিপ্ত কড়চা

সৌরভ এর ছবি
লিখেছেন সৌরভ (তারিখ: সোম, ২৮/০১/২০০৮ - ১০:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
কাল রাত ২টা পার করে, আমার সাথে ল্যাবে থাকা সহপাঠীটির সাথে যখন বাড়ি ফেরার জন্যে পা বাড়াই, খেয়াল করি, হাত-পা জমে যাচ্ছে আর অবিন্যস্ত চুলগুলো উড়ে যাচ্ছে বাতাসে। শূন্য বা মাইনাস দুই-তিন হয়তো তাপমাত্রা হিসেবে সারা শীত বরফ জমে থাকা কোন জায়গার জন্যে আহামরি গোছের ব্যাপার নয়, কিন্তু, টোকিওর মতো গরম-ঠান্ডা মিলিয়ে মোটামুটি মাঝারি জলবায়ুর শহরের জন্যে খুব ভয়াবহ ঠান্ডা সেটা। সাথে যোগ হয়েছে গায়ে কেটে বসে যাওয়া আর্দ্রতাহীন বাতাস।

জীবনের চারভাগের একভাগ পার করে ফেলা এই শহরের আবহাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে পড়া নিজের কাছেও ভয়ানক শীত বোধ হতে থাকে। সাথে থাকা সহপাঠীটি হঠাৎ আবিষ্কার করে, সকালের দিকে হয়ে যাওয়া বৃষ্টি তে রাস্তায় জমে থাকা পানি শক্ত বরফ হয়ে গেছে। দুজনেই কেন যেনো ব্যাপারটি আবিষ্কার করে হোহো করে হেসে উঠি। সারাদিনে জমে থাকা ক্লান্তিটুকু অল্প হলেও মুছে যায়।

২.
ইদানিংকালে লেখা হয়না কোথাও। এমন কিছু ব্যস্ত নই যে, লেখার জন্যে সময় হয় না। তবে কেনো? - উত্তরটা দেবো। আসলে মানসিক জটিলতার খুব অদ্ভূত মিশ্র এক অনুভূতিতে আক্রান্ত এই সময়ে, কিছু লিখতে গেলে সেইটে খুব বড় হয়ে দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা। খুব চেষ্টা করি নিজের অনুভূতির সবটুকুই তুলে আনি, নিজের যেমন ইচ্ছে লেখার এই ব্লগখাতায়।
কিন্তু, সেটা কি আর সম্ভব? অথবা উচিত?

কেন বেঁচে আছি
- সেই প্রশ্নের সাথে নিজের বোঝাপড়ার যুদ্ধ নিয়ে যে জীবন, সে জীবনের অন্ধকারময় গল্প লিখে আপনি, সম্মানিত পাঠকের সময় নষ্ট করতে চাই না।
আর আমি গল্প লিখতে পারিনা, কিংবা যুক্তি আর নতুন দর্শনে পূর্ণ কোন ভাবনাকে ছবিতে প্রকাশ করা আমার হয়ে ওঠেনা।

সেইসব মিলিয়েই ইদানিংকালে অনিয়মিত ব্লগ লেখায়। তবে আর কিছু করতে না পারি, অন্য সচলদের লেখা পড়ায় আছি।

৩.
আজকাল ফোন করা যায় এরকম বন্ধুর সংখ্যা কমে গেছে। কিংবা অন্যভাবে বললে আমিই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি সবকিছুর থেকে। আগে সবাইকে ফোন করতাম। এখন কথা ফুরিয়ে গেছে। এখন বন্ধুরা সংসারী, তাদের মাথায় বাজারের দামের চিন্তাটা খুব বড়ো। তাই কথা এগোয়না।
পৌনপুনিক জীবনে কাছাকাছি প্রিয়জনের সংখ্যা কমছে। দিনদিন শেকড়গুলো আলগা হয়ে যাচ্ছে অথবা যাচ্ছে ছিঁড়ে। নিজের এই ছন্নছাড়া জীবনে আধুনিক অসহ্য একাকিত্বের দহন হাসিমুখে গ্রহণ করার সামর্থ্য বাড়ছে বোধহয়। ভালোইতো!

৪.
বিশ্ব অর্থনীতি বেশ লেজেগোবড়ে। অর্থনীতি নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো বুঝবুদ্ধি বা অবস্থা কোনকালেই ছিলোনা। কিন্তু যখন নিউজে শিরোনাম হয়, টোকিও র শেয়ারবাজার নিক্কেই একদিনেই ৫০০ পয়েন্ট পড়ে গেছে, তখন একটু খবর নেড়েচেড়ে দেখতেই তো হয়। জাপানের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ বলতে হবে।
কারণ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে জাপান এখন পরিত্যক্ত এক বাজার, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মন্দায়, এমনিতেই ধুঁকে চলা রপ্তানিনির্ভর জাপানের আগামি সময়গুলো কেমন হবে - সে প্রশ্নে কেউই আশাব্যঞ্জক উত্তর দিতে পারছেন না।

এই ব্যাপারটা বেশ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে ইদানিং। অন্তত আমার কাছে এই সময়ে, যখন পড়াশোনা শেষ করার আগে একটা চাকুরি খুঁজে বের করায় সময় দিতে হচ্ছে অনেক।

আর গ্যাসোলিনের দাম বাড়া কিংবা সেইসব ঘটনাচক্রের প্রভাব বেশ প্রকাশ্যই দেখা যাচ্ছে এখনই। বিদ্যুত ও গ্যাসের সর্বনিম্ন চার্জ ১৫০ ইয়েনের (প্রায় ১.৫ ডলারের সমতুল্য) মতো বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সেবাপ্রদানকারী সংস্থাগুলো। সর্বনিম্ন চার্জ ২৫০০ ইয়েনের কাছে ১৫০ ইয়েন হয়তোবা খুব বেশি কিছু নয়, তবুও মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারটা অর্থবহ। বাজারে, পানীয় দুধের দামও বেড়েছে কিছুটা। আর যেসব জিনিষের দাম ওঠানামা করে, সেগুলো তো বাড়ার দিকেই আছে।
মন্দা অর্থনীতিতে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে গেলে সেটা অবশ্যই খারাপ লক্ষণ।

৫.
অর্থনীতি যেদিকে যায়, যাক। নিজে খেয়েপরে বেঁচে থাকলেই হলো।
জীবন চলুক কোনওভাবে।
কেন বেঁচে আছি - নিজের মাঝে অমীমাংসিত এই প্রশ্নকে আপাতত অনেক কষ্টে হলেও চাপা দিয়ে রাখা যাক। শুকনো ঠান্ডা দিনগুলো যাক, বসন্ত আসুক - তারপর নাহয় সেই প্রশ্নের বোঝাপড়াটা করা যাবে।

-
জানুয়ারি ২৫, '০৮


মন্তব্য

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

পৃথিবীময় যে মন্দা চলছে বা আরো ঘোরতর মন্দা আসবে বলে শোনা যাচ্ছে তার ভুক্তভোগী আমরা সবাই হবো। সুতরাং নিজেকে একা ভেবে এতো দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে লাভ কী?

বলেছেন ব্যস্ততা এমন কিছু নেই। তাহলে লেখালেখিতে একটু সময় দিন, কাজের কাজ হবে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সুজন চৌধুরী এর ছবি

জুবায়ের ভাইয়ের সাথে ১মত।
লেখালেখিতে সময় দেন।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......

সৌরভ এর ছবি

হুমম। ভাবিনা এইসব নিয়ে যদিও।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

রাজশ্রী তোমার জন্য - - -

রাজশ্রী
রাজশ্রী
রাজশ্রী

কত সহস্র স্বপ্নের ফুল - - -

---- অস্তিত্বের সংকটে রাজশ্রী ।

সৌরভ এর ছবি

অস্তিত্বের পরিচয় নিয়ে জটিলতা।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

s-s এর ছবি

প্রিয় সৌরভঃ

একাকীত্ব নাগরিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে ধরে নিন। আসলে মনে হয় দরকার একা থাকাটা উপভোগ করার একটা প্র্যাকটিস,যেটা আমাদের পূর্বদেশের লোকজনের চর্চায় একদমই নেই। আমারও প্রথমে খুব অসুবিধে হতো,এখন খুব অবাক হয়ে দেখি নিঃসঙ্গতা খুবই উপভোগ করি,সব সময় নয়,কিন্তু মোস্ট অফ দ্য টাইম। আপনার মত আমারও লেখায় খরা যাচ্ছে ওই সমস্ত জটিল মিশ্র অনুভূতির কারণেই,কিন্তু শুনুন,জীবনকে উপভোগ করতে ভুলবেননা। একা মানে "নেগেটিভ" কিছু এরকম একদম নয় কিন্তু - এটা মনে রাখবেন। টাকা পয়সা ক্যারিয়ার খুবই প্রাসঙ্গিক চিন্তা বিশেষতঃ এই সাবপ্রাইম ক্রাইসিসের সময়,কিন্তু মোটামুটি মানুষের খাওয়া পরার চিন্তা মিটলে,মনন মেধা মনীষার ক্ষুধাই মনে হয় সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দেয়- তাই না?ভালো একটা কবিতা লেখার পরিতৃপ্তি অনেক টাকা বোনাস পাওয়ার থেকে বেশি খুশি করে না কোনো কোনো সময়?হাসি

আপনার লেখাটার বিষণ্ণতার সুরের সাথে কিছুটা মিল খুঁজে পেয়েই লেখা,ভালো থাকবেন,আর মন ভালো করুন।

শুভকামনায়।

ss

সৌরভ এর ছবি

আসলে মনে হয় দরকার একা থাকাটা উপভোগ করার একটা প্র্যাকটিস,যেটা আমাদের পূর্বদেশের লোকজনের চর্চায় একদমই নেই।

সত্যি, খুব সত্যি।
একেবারেই নেই। অন্তত নিজের মাঝে।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

রাবাব এর ছবি

আমিও এক মত হইলাম!

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

দেশ থেকে ফিরে এসে দেখি এখানেও (জার্মানিতে) প্রত্যেকটা জিনিসের দাম খুব করে চোখে পড়ার মতই বেড়েছে। নতুন বছরের নতুন বাঁশ!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

বিপ্লব রহমান এর ছবি

কেন বেঁচে আছি - নিজের মাঝে অমীমাংসিত এই প্রশ্নকে আপাতত অনেক কষ্টে হলেও চাপা দিয়ে রাখা যাক।

অথবা, এই জীবন লইয়া কী করিবো?... গুরুতর দার্শনিক প্রশ্ন বটে। রামকৃষ্ণ পরম হংসের মতে, কর্মই ধর্ম। আপনি কী বলেন? @ সৌরভ।

আপনার বিষন্নতাটুকু হৃদয়ছুঁয়ে গেলো। আন্তরিক শুভেচ্ছা--


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

সবজান্তা এর ছবি

সৌরভ ভাই, আপনার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের সাথে খুব বেশি মাত্রায় একমত।

নিজের সংকটময় সময়ের কথা কি কলমে সেভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় না সেটা উচিত ?

এ প্রশ্নের উত্তর আমি অনেক খুঁজতে চেষ্টা করেছি। এর মধ্যে যে নিজের অনুভূতিগুলো নিয়ে লেখিনি তা নয়, কিন্তু যে লেখাগুলি আলোর মুখ দেখেছে, তার থেকে বেশি হারিয়ে গিয়েছে পৃথিবীর বুক থেকে।

হয়ত আপনার কথাই ঠিক, নিজের অন্ধকারে নিজেরই থাকা উচিত। চাঁদের আলোতে ঝলমল করা পৃথিবীকে কি দরকার নিজের অন্ধকার দিয়ে বিব্রত করবার ?

অনেক দিন পর আপনার লেখা পড়ে ভালো লাগলো। আরো পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

ভালো থাকবেন।

-------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

নিঘাত তিথি এর ছবি

বেঁচে থাকাটা বোধ করি তেমন অর্থপূর্ণ কিছু নয়...কেবলই বেঁচে থাকা, বা সময়ের পর সময় পার করে দেয়া। আমাদের নিজেদের উদ্দেশ্যগুলো খুব অমূলক জীবনের নিজস্ব গন্তব্যর কাছে। সেটা একটাই - মৃত্যু।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

কারুবাসনা এর ছবি

ভাল থাকার মানে নেই।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।