*স্মৃতিপোকাদের সাথে বসবাস*
অনেকদিন লিখিনা। লিখতে ইচ্ছে করেনা।
মাঝেমাঝে এইরকম বন্ধ্যা সময় আসে।
মাঝেমাঝে এইরকম অনুভূতিহীনতায় আক্রান্ত হই। আমার অনুভূতিরা চুরি হয়ে যায়, আমার মস্তিষ্ক কুরে কুরে খেয়ে ফেলে অনর্থক অহেতুক সব বাস্তবতা এবং ক্লান্তি। অবিন্যস্ততা যার জীবনের অংশ, তার মস্তিষ্কে বার্ধক্যের সংকেত দিয়ে যায় শরীর অথবা মন। উপেক্ষা করবার মতোন সাহস জোটে না। এই অদ্ভূত সময়ে ছেলেবেলার স্মৃতিপোকারা এসে আমার সাথে লুকোচুরি খেলতে বসে।
পুরো ছেলেবেলা ভেবে গেছি, আরেকটু বড় হয়ে নিই, ফেলে আসা শৈশবের করতোয়া নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আবার হিমালয় দেখবো একদিন। তারপর বড় হয়ে গেছি, দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে, আর হাড়ে-চর্বিতে, শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে চর্বির ভাগটাই বেশি হয়তো। ফেরা হয়ে ওঠেনি, শৈশবে চিনিকলের গাড়ির পেছন থেকে আখ চুরি করে খাওয়ার স্মৃতিমাখানো সেই মফস্বলে।
এইরকম সময়গুলোতে আমার রুপমের কথা মনে পড়ে যায় ভীষণ। অথবা সূচী। কিন্তু আজ রুপমের মুখটা মনে করতে পারছি না। আর সূচীরটা, করতে চাইছি না। ঘুমোতে থাকা কষ্টকে খুঁড়ে জাগাবার চেষ্টা করতে চাইবে কে?
রুপম আর আমি খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। আমার দুষ্টুমির জন্যে আমাকে নীলডাউন করিয়ে রাখা হলে, কিছু একটা দুষ্টুমি করে ও আমার সাথে দাড়িয়ে পড়তো। শাস্তির কাতারে। আমি নির্লজ্জ্বের মতোন ওই স্কুলটা ছেড়ে চলে এসেছিলাম, অন্য একটা ভালো স্কুলে পড়ার জন্যে। রুপমকে কিছুই জানাইনি। আমাদের দেখা হয়েছিলো অনেক বছর পরে, রুপম ওর ছোট বোনকে আমাদের কোচিং সেন্টারে ভর্তি করাতে এসেছিলো। সেই শেষ।
আজ অনেকদিন পর রুপমের সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছে? কেমন আছিস রে?
অনেক অনেক দিন পর, আজ এক পুরনো বন্ধুর মেইল পেলাম, আতাউর। স্কুলের হোস্টেলে ওর রুমে গিয়ে আমি পড়ে থাকতাম বহুদিন। স্কুল ছাড়বার পর আমাদের আর কখনো দেখা হয় নি।
পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। অথবা আমাদেরই হেঁটে চলা পরিমন্ডলের পরিধি বাড়ছে।
*অচেনা মানুষের ভালোবাসা*
কাল সকালে আমার বাসার তিনতলা থেকে নেমে পোস্টে একটা উঁকি মেরে দেখি, একটা পার্সেল এসেছে।
ঢাকা থেকে। বাংলাদেশ থেকে। আধা যুগ হয়ে গেলো, দেশ ছেড়েছি। দেশ থেকে চিঠি, পার্সেল এইসব এখন বছরে একবারও ঘটে না এরকম বিরল ব্যাপার হয়ে গেছে আমার জীবনে।
খুলে দেখি, আমার প্রিয় দুজন লেখকের দুটো বই। এবারের বইমেলায় বের হওয়া।
নজমুল আলবাব এর "বউ বাটা বলসাবান" আর আরিফ জেবতিক এর "তাকে ডেকেছিল ধূলিমাখা চাঁদ"
দুটোই একেবারে লেখকদের অটোগ্রাফসহ। আলবাব ভাই লিখেছেন, প্রিয় মানুষ সৌরভ কে।
এই মানুষটা আর প্রিয় বলবার মতোন লোক পেলোনা।
রায়হান ভাই পাঠিয়েছেন বইদুটো। এই মানুষটাকে আমি কখনো দেখিনি, ভার্চুয়াল পরিচয়। খুব ভালো লাগলো। খুব। শুধু বলি, থ্যাংকস। এইসব ভালোবাসা, এইসব টুকরো অনুভূতি, আমাকে ঋণী করে দেয়।
*ঘরে ফেরার তাড়া*
ঘরে ফেরার গান এখন আর কাঁদায় না। যার ঘর নেই, তার ঘরে ফেরার তাড়া নেই - উপলব্ধিটা খুব দারুণ মনে হয় মাঝেমাঝে। মানুষের সাথে অদৃশ্য সূতোয় যেসব বন্ধন, সেগুলো মাঝেমাঝে ভীষণ ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। আপনি হয়তো বলে বসতে পারেন, অচেনা মানুষের ভালোবাসাও যাকে ঋণী করে, সে কীভাবে ঘরে ফেরার তাড়া এড়িয়ে চলে।
উত্তরটা আমিও খুঁজছি।
[প্রিয় পাঠক, যিনি কষ্ট করে এইসব নীল লেখা পড়ছেন, আপাতত ঘরে বসে না থেকে বাইরে একটা চক্কর দিয়ে আসুন, এই অন্ধকার মানুষটির অন্য সব নীল লেখার মতো এটিও ভুলে যান, এই প্রত্যাশা করি]
মার্চ ২১, ২০০৮
মন্তব্য
আমি এইসব লেখা সচলায়তনে তুলে দিতে ভীষন অস্বস্তি বোধ করি।
কিন্তু, অনেকদিন না লিখলে সচলত্ব নাকচ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে একজন শ্রদ্ধেয় সতর্ক করে দেওয়ায় নিরুপায় অবলম্বন।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
এতো কষ্ট কেন রে ভাই। যান আপ্নেও একটু ঘুরে আসেন। কামন ম্যান...
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...
কীসের এতো দুঃখ? মন খারাপ?
এই লেখা না পড়ার পরামর্শ পাওয়া গেলো পড়ে শেষ করার পর! এখন উপায়?
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
জীবনের ছোট ছোট ভালোলাগার অনুভূতিগুলো মনের আনাচে কানাচে কখনো উঁকি দেয় না?
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
সত্যি কথা বলতে কি সৌরভ ভাই, আপনার লেখা পড়তে আমার বেশ ভালো লাগে। বিষণ্ণতা নিয়ে অনেকেই লেখেন, ( এমনকি এই অধমও কিছু লিখেছিলাম ), কিন্তু খুব কম লেখাই আপনার লেখাগুলির মত স্পর্শ করতে পারে। আর বিষণ্ণতাই বা মন্দ কি ? কষ্টবিলাস অনেক চড়া মূল্যের হলেও তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক গোপন সুখ, তাকে হয়ত আমরা সবাই স্বাগত জানাতে পারি না।
ভালো লাগলো লেখাটা। আর রায়হান আবীরের মত আমিও বলি, একটু বাইরের থেকে ঘুরে আসেন
------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
এমন একটা লেখা যেখানকার প্রায় বাক্যই 'কষ্ট' নামক একটা ডায়েরীতে কয়েক ফোঁটা চোখের জলের সাথে রেখে দেওয়া যায়।
একজন মন খারাপের কথা লিখলে অন্য একজনের মন খারাপ হয়ে যায়।।।।
এই কারণেই হয়ত আমরা মানুষ!
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
দেশে আসেন।
- হ, আমিও কই আগে দেশে আসেন, তারপর বুঝবেন ডলা কারে কয়! যন্তরমন্তরডলা না খাইলে লাইনে আইবেন না আপনে।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আরে আপনাদের সবার মনে এত কষ্ট কেন?কামনা করি সুখে থাকুক সবাই।
-নিরিবিলি
সচলায়তনে বিষণ্ণতার প্রধান এজেন্টকে (সোল এজেন্ট বলা যাচ্ছে না আরও বেশ কিছু বিষণ্ণতাবিলাসী সচলের কারণে) বহুদিন পর সক্রিয় হতে দেখে ভালো লাগছে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
সৌরভ ভাই, আমার যে অনেক কিছুই মনে পড়ে না। শৈশব, পুরনো বন্ধুদের কথা আমি ভীষণ স্বার্থপরের মত ভুলে যাচ্ছি একে একে... পড়ে মন খারাপ হল খুব।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
প্রশ্নগুলো সহজ , আর উত্তর জানা নেই ।
খবর পাইলাম, ইদানিং লাল শার্ট পরে কোন এক বিষন্ন বালক ঘোরাঘুরি করে । দেখি, এ ব্যাপারে ঘটক আলবাব কী বলেন ।
আমোদ নিয়ে অপেক্ষায় রইলাম পরবর্তি কাহিনীর জন্য।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
এইসব কষ্টবিলাসই লিখো নাহয় মাঝে সাঝে।
তবু...লিখো।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
তিথী লিখেছেন "এইসব কষ্টবিলাসই লিখো নাহয় মাঝে সাঝে..."
আমি বলি কি
" কষ্ট আমার মনের মানুষ জানলো না তো কেউ
ছলাত ছলাত লোহিত সাগর লাল কমলের ঢেউ...''
আমার কাছে 'কষ্টবিলাস' শব্দটা যুক্তি সঙ্গত মনে হয় না । কষ্টের মধ্য আবার বিলাসিতা বলে কিছহু আছে নাকি ...
নো মোর প্রলাপ!! অন্য কিছু লেখা চাই।
আহারে, b-a করার পরে এই লোক এমন লেখা আর লিখলোই না ।
নতুন মন্তব্য করুন