সুখের পাখি, মরা পাখি, তোকে খুঁজি না
জ্বর দুদিন ধরে, সারাদিন নাক দিয়ে পানি পড়ে টপটপ করে, টিস্যু নষ্ট করি সারাদিন। সেই সাথে আছে দুইএক মিনিট পরপর হাঁচি-কাশি।
অসুখে পড়ে থাকলে যে জীবনের প্রতিদিনকার রুটিন বদলে ফেলবো, তা নয় অবশ্য। ঠিকই সকালে উঠি, ল্যাবে যাই, খুব একটা কিছু কাজ করতে ইচ্ছে করে না অবশ্য। সন্ধ্যেয় বাড়িতে ফিরে আসি, হালকা রান্না করি, খাই।
আজ খুব ভাত খেতে ইচ্ছে করছিলো, তাই একেবারে ডাল রেঁধে বেগুন ভাজি করে গরম ডাল-ভাতে কনুই ডুবিয়ে পেট ভরে ভাত খেয়ে নিলাম। মাঝেমাঝেই এরকম হয়, দু-তিনদিন পর হঠাৎ ভাত খাওয়ার ইচ্ছেটা খুব পোড়ায়, মনে হতে থাকে শরীরের কোথায় যেন ছোটখাটো একটা ভেতো বাঙালি লুকিয়ে থাকে, মাঝেমাঝেই সেটা চাষার মতো জেগে ওঠে।
শরীর খারাপ হলে আরেকটা বড় ঝামেলা হয় ঘুম নিয়ে। রাত করে ঘুমোনো অভ্যাস, তাই বেশি তাত্তাড়ি শুয়ে পড়লে ঘুম ভেঙে যায় বেশ কয়েকবার। মাঝরাতে উঠে পড়ি, টিভি ছেড়ে দিই। রান্নার ছুরি, ফ্রাইং প্যান, হাড়িপাতিল, হাইস্পেক এর ভ্যাকুয়াম ক্লীনার, মেয়েদের কাপড়চোপড় বেচার জন্যে রাত করে বসে থাকেন টেলিশপিং এর খালা আর চাচুরা। বিনোদন হিসেবে নিলে এইসব অনুষ্ঠানও অনেক সময় বেশ মজার বোধ হতে থাকে। লোহা কাটাকুটি করে টুকরো টুকরো বানিয়ে ভ্যাকুয়াম ক্লীনার দিয়ে গেলানোর পরে পণ্যের গুণ ব্যাখ্যা করে যাওয়া লোকটিকে দেখে মনে হয়, এই ভাঁড়টা হাসির অনুষ্ঠান করলে আরো ভালো আয় করতে পারতো সম্ভবত।
এমনি করে মাঝরাতে উঠে আজ নিজের গল্প লিখতে বসলাম অনেকদিন পর। বাইরে বৃষ্টি। সন্ধ্যে থেকে ঘুমিয়ে ক্লান্ত। ঘুমটা কাটানোর জন্যে কিছু একটা টিভি প্রোগ্রামে মন বসাতে চাইলাম। মাঝরাতে দেখানো আম্রিকান দ্য হিলস নামের টিভি সিরিয়ালটিতে কথায় কথায় চুমু খাওয়ার দৃশ্য বিরক্তিকর ঠেকে, তাই NHK তে জীবন্ত জীবাশ্ম মাছদের উপরে শিক্ষামূলক ডকুমেন্টরি দেখে মাথাটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করি।
সুড়ঙ্গ শেষের আলো, হালকা স্বস্তি
চেরি ফুটে ঝরে গেছে গত দুদিনের ঝড়ো বৃষ্টিতে। ইন্দোনেশিয়ার আশপাশের প্রশান্ত মহাসাগরে লা-নিনা প্রপঞ্চের প্রভাবে নাকি এ বৃষ্টি, প্রবল বাতাস আর ঝড়। সন্ধ্যেতে এক আবহাওয়াবিদকে দেখলাম, বেশ উত্তেজিত স্বরে বর্ণনার চেষ্টা করছেন।
গত মাস তিনেক বেশ ভালো রকম মানসিক অস্বস্তির উপরে ছিলাম। পড়াশুনা শেষের এখনো বছর খানেক বাকি আছে যদিও, প্রথাগত কারণে গ্রাজুয়েটদের জন্যে নিয়োগের মৌসুম এই বসন্তেই পড়ে। তাই দৌড়ুচ্ছিলাম কর্পোরেটের দরজায় গলায় দড়ি বেঁধে অনেকদিন। শেষ পর্যন্ত ইউরোপভিত্তিক এক বিনিয়োগ ও কর্পোরেট ব্যাংকে দস্তখত করেছি আগামী বছর এপ্রিল থেকে দাসত্ব করবো বলে।
সচলায়তনে ভারী লেখা, হালকা পাঠক
সচলায়তনে হালকা লেখা লিখতে কি সবাই ভয় পান? ইদানিং বেশ ভারী ভারী লেখা আর সাহিত্য বেশি চোখে পড়ে। আমার মতো হালকা পাঠকেরা খুব কষ্টে পড়ে যায়। মাথার আয়তন আমার খুব ছোট, তিনটে গল্প পড়লে একটা মিলার গান শুনতে ইচ্ছা করে। তাই আরেকটা উইন্ডোতে ইউটিউবে মিলা কে খুলে রাখি। সচলায়তন পড়তে পড়তে মিলার গান শুনি।
(আমি নিজেই অনেকদিন অনিয়মিত ছিলাম। তাই মায়ের কাছে মামাবাড়ির গল্প হয়ে গেলে ক্ষমা প্রার্থনা করি।)
হালকা চানাচুর ধরনের লেখা সচলায়তনে পোস্টের ব্যাপারে কোন বিধিনিষেধ আছে বলে আমার মনে পড়ছে না।
কাজেই, যারা ভালো চানাচুর-মুড়ি মাখাতে পারেন, তারা আমাদের বঞ্চিত করবেন না আশা করি।
--
NHK জাপানের রাষ্ট্রীয় প্রচার সংস্থা
দ্য হিলস, The Hills MTVর রিয়ালিটি টিভি সিরিজ
মন্তব্য
- গুটে বেসারুং আমিগো। সর্দি।নাক দিয়ে ঝরঝর এবং জ্বর, খুবই বিরক্তিকর আর বিষাদ!
চেরী ফুলের ঝরে যাওয়া মনে কষ্ট দিলো, কিন্তু সেটা ঠিক যেভাবে পাওয়ার কথা ছিলো সেভাবে পেলাম না। কিন্তু মানব-মানবীর অন্তরঙ্গ কর্মে মন না লাগিয়ে জীবন্ত জীবাশ্ম নিয়ে পড়ার হেতু কী জনাব! এই ঘটনাতো সুবিধার মনে হয় না।
জনগণ মুড়ি চানাচুর মাখাতে মনে হয় ইদানিং ডরায়। সবাই খালি চেষ্টায় আছে কী করে অণুপরমাণু লেখালেখির হাম্বলদিস্তায় ডলে বোম্বা বানানো যায়। এমতাবস্থায় যদি বিষণ্ণবালক এসে হাল না ধরে তাহলে তো চানাচুর ভর্তি টাইটানিক টুপ করে ডুবে যাবে মুড়ির সাগরে। তখন হয়তো জাহাজের নাবিক মুড়ি খাওয়া রেখে বিশেষ কর্মে মনোনিবেশ করবে। জনসংখ্যার ওপর বিশাল এক চাপ সৃষ্টি হবে, দুম করে সেটা ছাড়িয়ে যাবে আড়াই কোটি! উফঃ আমি আর বেশি চিন্তাই করতে পারতাছিনা, তবে লিখতে পারতাছি। কিন্তু কথা হলো, লিখতে পারলেই লিখবো কেন?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
অন্তরঙ্গ কর্ম আর কতো দেখবো বলেন?
এই সিরিয়ালটা দেইখেন। এদের দেখে মনে হয়, পীরিতি আর ছাড়াছাড়ি ছাড়া মনে হয় জগতে আর কোন কাম-কাজ নাই।
চানাচুর মাখানোয় আপনারে ওস্তাদ মানি।
এর উপরে কোন কথা আছে?
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
হের ধূ. গো. দেখি শুধু চানাচুর মার্কা মন্তব্য করেই খালাস। অনেক দিন তার মুচমুচে পোস্ট পড়ি না!
আপনার দ্রুত আরোগ্য কামনা @ সৌরভ।
আমিও আপনার দলের একজন চানাচুর পাঠক।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
সুস্থ হয়ে উঠুন।
ভারী ভারী লেখা আমারও হজম হয় না (হালকা চরিত্রের মানুষ তো!)। ব্লগে বড়ো বড়ো লেখা পড়ার ধৈর্য্যও আমার কেন জানি হয় না।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কী যে করি! আবার ফোন করেছিল মাদাম ত্যুসোর মিউজিয়াম থেকে...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
থ্যাংকু।
আমি সময় পেলে সবই পড়ি। কিন্তু চানাচুর খুঁজে বেড়াই সবখানে। সন্ন্যাসীর লেখার মতো পেঁয়াজসমৃদ্ধ মুড়িচানাচুর হলে তো কথাই নেই।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
সুস্থতা কাম্য । তবে মাঝরাতে লেখালেখি করছেন যেহেতু , অসুস্থতাও কাম্য হতে পারে পাঠকের ।
মাঝরাতে তো জেগে থাকিই।
এ আর এমন কী।
লিখতে পারলে তো হতো, যা ছাইপাশ আসে তাই টাইপ করে যাই।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
অনেকদিন পর সৌরভের একটা লেখা পাওয়া গেলো যেখানে বিষাদের উৎপাত তেমন নেই! অসুস্থতা তাহলে দুটো কাজ করলো - বিষাদ হরণ এবং একটি উৎকৃষ্ট রচনায় উদ্বুদ্ধকরণ। সাধু!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
ভালৈছে।
এই রকম দিনলিপি লিখতে যে পারে, এই রকম আমেজের একটা গল্প লেখায় কেন সে হাত দেয় না?
সুস্থ হয়ে ওঠো।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
গল্প?
সে কি আমায় দিয়ে হবে?
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
ভাল ভাল ... তা কোথায় জয়েন করছেন? দেশে ফিরছেন কি?
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
দেশে তো ফিরতেই চাই, সে কি আর হয়ে উঠবে এ জীবনে?
আপাতত "ডয়েচ ব্যাংক" এ দাসত্ব করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
গেট ওয়েল সুন সৌরভ ভাই
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
মর্মাহত।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
জাঝা
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
আপনি রাত জেগে এতো কিছু দেখেন বলে বলছি। জার্মানীতে রাত ১২ টা বাজলেই হলো। শুরু হয়ে যায় সব শিক্ষামূলক (?!!) অনুষ্ঠান। আমরা তো ডরমে থাকাকালীন কিচেনে বসে থাকতাম কখন ১২টা বাজবে
কিচেনে কেউ না থাকলেই হইছে ... ...
আপনার কথা ঠিক না। অনেক হাল্কা লেখা আসে সচলে। আমি তো সবসময় হালকাই লিখি। ভারী লিখতে চাইলেও সেটা হালকা হয়ে যায়। স্মৃতি বিপর্যয়ের নতুন কতিস্তি দিছি, আপনি হয়তো পড়েন নাই।
লেখাটা মন ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছে।
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
ভাইয়া, আমি কয়েকটা লেখা দিয়েছি- সব হাল্কা- ওজনে ১০ মিলিগ্রামও হবে না- পড়ে দেখবেন- সচল হলে আরো ভালো ভালো লেখা দিবো- ইনশাআল্লাহ-
আপনি খুব ভাল লেখেন- রেটিং ৫ তারকা দিতাম,তবে দেয়ার উপায় নাই;(
নায়েফ
সুস্থ হয়ে ওঠেন।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
এই লোকটা যা লিখে, তা-ই আমার ভালো লাগে।
মন খারাপ
জ্বর
শরীর ম্যাজম্যাজ
কান্না পাইতেছে -
সহ
যাবতীয় বিষয়ে অসাধারণ শব্দবুনন।
শুভকামনা।
চানাচুরের কথা মনে করাইয়া দিলো।
যে দুইটা জিনিস বেশি মিস করি, তার একটা চানাচুর।
প্রবাসী জীবনে অসুস্থতার মধ্যে আসলে তেমন রোমান্টিকতা নেই। প্রবাস জীবনের এইদিকটা একটু বেশি কাঠখোট্টা। ভালো থাকার প্রধান শর্ত সুস্থ থাকা।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
অনেক ভালো লাগলো। দোয়া করি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠেন ।
-নিরিবিলি
NHK চ্যালেনটার নাম শুনেছি জাপানীজ একটা এনিমেতে। সেখানে অবশ্য ব্যাটারে অনেক পঁচাইছে।
কারণটা হলো, টিভি দেখে দেখে অনেক জাপানীজ এখন একটা রোগে আক্রান্ত। রোগটার নাম মনে পড়ছেনা। তবে সিনড্রম হলো এই মানুষেরা বাইরে খুব বের হয়। কারও সাথে কথা বলেনা...মূল কথা হলো নিজেকে ছাড়া দুনিয়ার আর সবাইকে তাদের অসহ্য মনে হয়। বেশীরভাগ সময় হেলুসিনেশন হয়।
এই রোগীর সংখ্যা এখন এতো বেশী যে জাপানে তাদের নিয়ে আলাদা একটা মন্ত্রনালয় আছে।
সচলে আমিও হালকা হালকা লেখা খুঁজে বেড়াই...
---------------------------------
এভাবেই কেটে যাক কিছু সময়, যাক না!
নতুন মন্তব্য করুন