প্রিয় শহর, আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম

সৌরভ এর ছবি
লিখেছেন সৌরভ (তারিখ: মঙ্গল, ৩০/১২/২০০৮ - ১:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তারপর আমি এই শহরে আবার ফিরে আসি। অনেক দূর পথ পেরিয়ে। ততোদিনে আমি ক্লান্ত। আমার শহর প্রবীণ মহাকায় বৃদ্ধ। আমাকে আলিঙ্গনের জন্যে কোন বাহুল্য করার মতোন সুযোগ তার নেই। আমার শেকড় অবশিষ্ট নেই খুব বেশি। অলস সন্ধ্যেতে আমি এই শহরে ঠাণ্ডা পায়ে হেঁটে যাই, পরিচিত মুখ খুঁজি। ভাবি, হৃদ্যতার বোধে কেউ হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলবে, আরে তুই..

অনুভব করি, আমার স্মৃতিবইয়ের পৃষ্ঠা গুলোতে ততোদিনে অনেক জায়গায় অস্পষ্টতার রেশ বড্ড তীব্র। আমার মনে পড়ে যায়, এই শহরে আমি প্রথম সাইকেলে চড়তে শিখেছিলাম, বন্ধুর সাইকেলের ক্যারিয়ার থেকে মুখ থুবড়ে পড়েছিলাম শহরের মোড়ে। এন্টিবায়োটিক গিলতাম অনেকদিন। নির্বিকার ধূলোমাখা বাতাস আমাকে মনে করিয়ে দেয়, এই শহরে আমি জীবনে একবারের জন্যে সিগ্রেট মুখে দিয়ে ভেবেছিলাম, ধুরো এই জিনিষ খায় নাকি মানুষে। প্রথম প্রেমপত্র পেয়েছিলাম কারও কাছে। লিখেছিলামও দুয়েকটা।

আমি হেঁটে চলি। এইসব স্মৃতির রেশ ধরে ডিসেম্বরের কুয়াশা-ভরা অন্ধকারে শহরের মূল সড়কগুলোর সোডিয়াম লাইট আমাকে যেন বিদ্রুপ করে। নির্বাচনের হৈচৈ এ দোকানপাট বন্ধ থাকা সড়কের সড়কবাতিগুলোকে বড্ড বেমানান মনে হয়। আমি ভুলে যাই, আমার বন্ধুদের কেউ একজন রওনক হয়তো নব্য টেলেকম বেনিয়াদের সুইচরুমে রাত কাটায় অথবা চিকিৎসাবিদ্যার পড়াশুনা শেষ করে কী করবে ভেবে পায় না অজয় হয়তো রাজধানীর কোন হাসপাতাল-ক্লিনিকে ক্ষ্যাপ দেয় টানা ৪৮ ঘন্টা। আমি ভাবি, আমি তো বড্ড ভালো আছি। হোক না, রাত বারোটায় বাড়ি ফিরি। ফিরে গরম জলের স্নান নিয়ে গরম ঘরে নিরাপদ ঘুমে নিমগ্ন তো হতে পারি।

অথবা আনুষ্ঠানিক বিয়ের জন্যে প্রেমিকার মায়ের কাছে কয়েকটা মাস সময় চেয়ে নেয়া বন্ধুটি, যার কোন চাকুরি নেই, নেই কোন অবলম্বন, তার সময় ফুরিয়ে যাবার গল্প শুনে আমি তাকে সান্ত্বনা দিতে পারি না। আমি তার পাশে বসে থাকি অনেকক্ষণ। যে মেয়েটি একসময়ে আমাকে কথা দিয়েছিলো সে আমার সাথে থাকবে, অথচ আমি তাকে ধরে রাখতে পারি নি নিজের ব্যর্থতায়, তার কাছে শুনি, সেও রোজ দৌড়োয়। রাজধানীতে নতুন স্বপ্নের পেছনে সেও ছুটে যায়।

সেই একই সময়ে আমি কোন অকারণে নিজের শহরে নিঃসঙ্গ হাঁটতে থাকি। আমি বড্ড-চেনা পথে হেঁটে গিয়ে ম্যাচ বাক্সের মতোন শাদা দালান দেখি, শহরের পুকুরগুলো ভরাট করে তৈরি করা ঘিঞ্জি মানববসতি দেখি। নক্ষত্রহীন আকাশ দেখি। আবিষ্কার করি, এ আসলে আমারই ভালোবেসে ফেলা আকাশ। আমি নিজেই বদলে গেছি।

তাই বড্ড অচেনা মনে হয় এই নগর, এই আকাশ, এই জীবন। নগরের নিস্তব্ধতা ও উপেক্ষা আমাকে তীরবিদ্ধ করে যায়।
আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, প্রিয় জীবন, প্রিয় শহর, আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম।


মন্তব্য

নজমুল আলবাব এর ছবি

এ জীবন দোয়েলের, ফড়িং এর...

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

সৌরভ এর ছবি

কাল রাতে - ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হলো তার সাধ।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আমার এরকম কোনো শহর নেই, আছে মন উদাস করা এক গ্রাম, আর সে গ্রামে অহর্নিশ বয়ে চলা তাঁতের অবিরাম খটরখট। মনে পড়ছে কতোশত স্মৃতির ধুলিপড়া পাঠ। যতিচিহ্নেবাক্যে এর সবই আজ পাস্ট।
লেখা ভালো লাগলো সৌরভ দা'।

সৌরভ এর ছবি

যে গ্রামে ফড়িং ওড়ে মুক্ত ঘাসে, পাতায় শুকনো ডাঁটে ভাসে কুয়াশা। ঘুঘুর ডাকে ভেঙে যায় খা খা দুপুরের নীরবতা। সেই গ্রাম?


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

নারে ভাই, সবুজ ধান ক্ষেতের মৌন-মুখরতা নেই, আছে সদা কর্মব্যস্ত তাঁতীদের তাঁত বুনানোর খটরখট। যেখানে দিনের শব্দ সন্ত্রাস শেষে নিশ্চুপ রাত নামে ইলেকট্রিক আলোয় মাথা মুড়িয়ে।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

"এ শহরে এসছো তুমি, কবে কোন রাজ্য থেকে?"

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

সৌরভ এর ছবি

এ শহরে এসছো তুমি, কবে কোন রাজ্য থেকে। তোমাদের দেশে বুঝি সব মানুষই বাঁশি শেখে?

কবে ভুলে গেছি সেই সুর।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

মায়ার দুনিয়া। এখন আর ভাবি না, ভাবতে পারি না। সময় পালটে যায়, পালটে যায় চিরচেনা অস্তিত্বের স্বপ্ন, পালটে যাই আমিও। কখনো সখনো উঁকি দেয়া কষ্টগুলোকে মেনে নিলেই যে ল্যাঠা চুকে যায়!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সৌরভ এর ছবি

পালটে যায় সব কিছু। মেনে নিতে কষ্ট হয়।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অমিত আহমেদ এর ছবি

সামনেই তাকাই। সামনেই চলি।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

সৌরভ এর ছবি

হুমম।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

সৌরভ এর ছবি

হ, ভাইজান যা বলেন।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

তারেক এর ছবি

মরুভূমি আছে বলেই তো আমরা মরুদ্যানের স্বপ্ন দেখি। আমার শহরই সই, নিজের একটা ছোট্ট দেশের ছোট্ট শহর-গ্রাম-বাড়ি-চিলতে উঠোন। আমার ফেরার জায়গা...
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

এনকিদু এর ছবি

আপনিও কি ঢাকা শহরে "ফরেনার" ? ফরেনার হয়েও শহরে থাকতে থাকতে শহরের পোলাপাইনের চেয়েও শহরের প্রতি মায়া বেশি হয়ে গিয়েছে ?


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

মুস্তাফিজ এর ছবি

ঢাকা শহরে "ফরেনার"

হা হা হা

...........................
Every Picture Tells a Story

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

মনে পড়ে গেল আমার ফেলে আসা শহরটাকে। আর হয়ত ফেরা হবে না সেখানে, হয়ত আর কখনোই হাঁটা হবে না সেই চেনা পথগুলো দিয়ে, কেনা হবে না কয়েক টাকায় নানান রঙের স্বপ্ন, দেখা হবে না আপন মুখগুলো, ছোঁয়া হবে না প্রিয় বন্ধুর প্রতিশ্রুতিভরা হাত, শোনা হবে না অভিমানভরা কোন অভিযোগ...

আসলে আমরা হয়ত কখনোই ফিরতে পারি না, কখন যেন না-ফেরাদের দলে আটকা পড়ে গেছি নিজেরই অজান্তে! তবুও মাঝে মাঝে খুব বেশি মনে পড়ে যায় সেসব স্মৃতি। এখন যেমন পড়ছে, আপনার লেখা পড়ে।


হারিয়ে গিয়েছি, এই তো জরুরি খবর...

রানা মেহের এর ছবি

কোন স্মৃতির কাছেই আসলে ফিরে যাওয়া উচিত না।
স্মৃতি অথবা মানুষ কেউ কাউকে চিনতে পারেনা
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

...বলেছেন, রানা মেহের। বাণী চিরন্তনী। চলুক

নজমুল আলবাব এর ছবি

এভাবে বলা ঠিক না রানা মেহের।
আমি তোমারে যথেষ্ঠ সময় দিছি,
লাস্ট যখন আসলা, একবার সাথে
নিয়া ভাতও খাইছি। খাইনাই?

রানা মেহের এর ছবি

আমাকে আপনি ধন্য করেছেন
এমনি লীলা তব চোখ টিপি
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ভাত কিংবা আলুর চপ, কেবলই গপ্প, কেবলই ছবি;

ঐ যে ঠোঙ্গায় বাদাম ভাজা, তুমি কী তাদের মতো সত্য নও, নও ছবি...

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

সেই গ্রেট মাইগ্রেশনের সময় থেকেই কেবলই চলে যাচ্ছি, চেনা থেকে অচেনায়, কাছ থেকে দূরে, খালি চলেই যাচ্ছি, চলেই যাচ্ছি, ফিরিনি আর কখনো। জিনে লেখা হয়ে গেছে চরৈবেতি চরৈবেতি। আসলে ফেরা হয় না কোথাও, ফিরতে চাইলেও। ফেরার কথা কি ছিলো কোথাও? শুধু দুই পাখি-স্মৃতি আর বেদনা-কানের কাছে কিচিমিচি করে যায় চিরদিন।
কোথায় যাচ্ছি আমরা? কারুর জানা নেই। আছে কি কোনো নীলছায়া? কোনো স্নিগ্ধ নদীতীর? কোনো ভরভরন্ত ফসলমাঠ? দীপজ্বলা সন্ধ্যায় সাতভাই চম্পার গল্প? শ্যামলী ধবলী কপিলা?কেজানে!

সৌরভ এর ছবি

কর্সিলেন? পোকায় খাইতারে।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

ওডিন এর ছবি

এই লোকটাও আজকাল লেখালেখি করেনা।

খুব খারাপ। মন খারাপ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।